3 of 3

১২০. নবম হিজরীর রমযান মাসে বনু সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমন ও ইসলাম গ্রহণ

ইবনে ইসহাক বলেন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে তাবুক থেকে মদীনায় ফিরে আসেন এবং সেই মাসেই তাঁর কাছে বনু সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধিদল আসে। এই প্রতিনিধিদল আগমনের পটভূমি এই যে, ইতিপূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তায়েফ থেকে ফিরে আসেন তখন উরওয়া ইবনে মাকউদ সাকাফী তাঁর পিছু পিছু আসেন। মদীনায় পৌছারআগেই তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হন এবং ইসলাম গ্রহন করেন। অতঃপর তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে নিজ গোত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ওরা তোমাকে হত্যা করবে।” তিনি বনু সাকীফ গোত্রের গোঁয়ার্তুমি ও একগুয়েমীর কথা জানতেন। তিনি এও জানতেন যে, তারা নিজস্ব কোন লোকের দাওয়াত অগ্রাহ্য করতেই অভ্যস্ত। কিন্তু উরওয়া বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাদের কাছে নবজাতক শিশুর চেয়েও প্রিয়।”

তিনি প্রকৃতই তাদের কাছে অনুরূপ প্রিয় ও মান্যগণ্য ছিলেন। অনন্তর তিনি নিজ গোত্রের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানালেন। তাঁর আশা ছিল গোত্রের মধ্যে তাঁর যতখালিন মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে তাতে কেউ হয়তো তাঁর বিরোধিতা করবে না। তিনি নিজ গোত্রের ছাদের ওপর থেকে গোত্রের লোকদেরকে যথাযথভাবে দাওয়াত দিয়ে ও নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা জানিয়ে যখন তাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন, তখন চারদিক থেকে তাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করা হয়। একটি তীর তাকে আঘাত করে এবং তাতেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

বনু মালিকের মতে তাকে হত্যা করে বনু সালেম ইবনে মালিকের আওস ইবনে আওফ এবং তার মিত্রদের মতে তাকে হত্যা করে বনু আত্তাব ইবনে মালিকের ওয়াহাব ইবনে জাবের। (বনু সালেম ও বনু আত্তাব বনু সাকীফের শাখা বনু মালিকভুক্ত পরিবার)। উরওয়া আহত হওয়ার পর তাকে বলা হয়, “আপনার হত্যা সম্পর্কে আপনার মতামত কি?” তিনি বলেন, “এটা আল্লাহর তরফ থেকে আমার জন্য এক পরম সম্মান ও গৌরব। আল্লাহ নিজেই আমাকে শাহাদাতের এই গৌরবে ভূষিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের এই স্থান থেকে ফিরে যাওয়অর আগে তাঁর সাথে আগত যেসব মুজাহিদ শাহাদাত লাভ করেছেন, তাদের থেকে আমার মর্যাদা মোটেই বেশী নয়। কাজেই আমাকে তোমরা তাদের কাছেই দাফন করো।”

কথিত আছে যে, উরওয়াহ ইবনে মাসউদের শাহাদাতের খবর শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তব্য করেন, “সূরা ইয়াসীনে যে মুজাহিদের শাহাদাতের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে উরওয়া তার সাথে তুলনীয়।”

উরওয়াকে হত্যা করার পর এক মাস বনু সাকীফ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলো, তারপর তারা একটি পরামর্শ বৈঠকে মিলিত হলো। তারা স্থির কররো যে,, চারপাশের গোটা আরব জাতি যেখানে ইসলাম গ্রহণ করেছে সেখানে বনু সাকীফ একাকী তাদের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে সক্ষম নয়। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তারা স্থির করলো যে, পূর্বে যেমন তারা উরওয়াকে পাঠিয়েছিল তেমনি এবার আর একজনকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা উরওয়অ ইবনে মাসউদের সমবয়সী জনৈক আবদ ইয়ালীল ইবনে আমরের সাথে আলাপ করলো এবং তাকে বনু সাকীফের প্রতিনিধি হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে ফিরে আসবে তখন বনু সাকীফ উরওয়ারর সাথে যে আচরণ করেছে তার সাথেও অনুরূপ আচরণ করবে। সে বললো, “আমার সাথে যদি আরো কয়েকজন লোক পাঠাও তাহলে আমি রাজী আছি, অন্যথায় নয়।” অবশেষে তারা ঠিক করলো যে, আব্দ ইয়ালীদের সাথে মিত্র গোত্রগুলো থেকে দু’জন এবং বনু মালিক থেকে তিনজন- সর্বমোট ছয়জনকে পাঠাবে। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে তারা আব্দ ইয়ালীলের সাথে বনু মুয়াত্তাব পরিবারের হাকাম ইবনে আমর ও শুরাহবীল ইবনে গাইলানকে এবং বনু মালিক গোত্র থেকে বনু ইয়াসার পরিবারের উসমান ইবনে আবুল আসকে, বনু সালেম পরিবার থেকে আওস ইবনে আওফকে এবং বনু হারেস পরিবারের নুমায়ের ইবনে খারাশকে পাঠালো। আবদ ইয়ালীল দলনেতা হিসেবে তাদের নিয়ে রওনা হলো। সে উরওয়া বিন মাসমউদের ভাগ্য বরণের ঝুঁকি মুক্ত হবার অভিপ্রায়েই এই লোকদের সাথে নিল যাতে প্রত্যেকে তায়েফে ফিরে নিজ নিজ গোষ্ঠীকে এতে জড়িত করতে পারে।

প্রতিনিধিদল মদীনার নিকটবর্তী হলে একটি ঝর্ণার পাশে সাহাবাগণের কেউ কেউ উট চরানো সময় মুগীরা ইবনে শু’বাকে (রা) দেখতে পেলো। ঐ উটগুলো পালাক্রমে চরানোর দায়িত্ব সাহাবীদের মধ্যেই ভাগ করা ছিল এবং ঐ সময়কার পালা ছিল মুগীরার। তাদের সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর মুগীরা উটগুলোকে বনু সাকীফের প্রতিনিধিদের কাছে রেখেই ছুটে গেলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের আগমনের সুসংবাদ শোনানোর জন্য। মুগীরা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করার আগে আবু বাক্র সিদ্দীকের (রা) সাথে দেখা হেরা। তিনি তাকে জানালেন যে, বনু সাকীফের প্রতিনিধিরা ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছে। তবে তারা চাফ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তাদেরকে কিছু সুযোগ সুবিধা দেন এবং তাদের ধন-সম্পদ, জমিজমা ও অধিবাসীদের নিরাপত্তা চিশ্চিত করে একটা অঙ্গীকারপত্র লিখে দেন। আবু বকর (রা) মুগীরাকে (রা) বলরেন, “আমি তোমাকে আল্লাহর নামে অনুরোধ করছি, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে না গিয়ে আমাকে আগে যেতে দাও এবং এ বিষয়ে তাঁর সাথে আমাকে আলোচনা করতে দাও।” মুগীরা (রা) এতে সম্মত হলেন। আবু বাক্র (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলেন এবং তাঁকে ঐ প্রতিনিধি দলের কথা জানারৈন। তারপর মুগীরা (রা) স্বগোত্রীয় বন্ধুদের কাছে ফিরে গেলেন। [উল্লেখ্য যে, মুগীরা (রা) বনু সাকীফ বংশোদ্ভুত ছিলেন]। দুপুর বেলা তিনি তাদের সাথে বিশ্রাম করেই কাটিয়ে দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামী অভিবাদন জানানোর রীতি শিখিয়ে দিলেন। কিন্তু সাক্ষাতের সময় তারা জাহিলী রীতি অনুসারেই অভিবাদন জানালো।

প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির হলে মসজিদে নববীর এক পাশে তাদের অবস্থানের জন্য একটি ঘর ঠিক করে দেয়া হয়। বনু সাকীফের জন্য একটি অঙ্গীকার পত্র লোকানো পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও প্রতিনিধিদলের মধ্যে মত বিনিময় হয় খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আসের মাধ্যমে এবং এই খারিদই অঙ্গীকার পত্র লিখে দেন। এই সময়ে অঙ্গীকার পত্র লেখানো ও প্রতিনিধিদলের ইসলাম গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে আসা খাদ্যদ্রব্যও প্রথমে খারিদ না খেলে প্রতিনিধিদলের লোকজন খায়েনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তারা যেসব সুযোগ সুবিধা দাবী করে তার মধ্যে একটি ছিল, ‘তগিয়া’ অর্থাৎ লাভের পূজা অব্যাহত রাখতে দিতে হবে এবং তিন বছরের মধ্যে তা ভাঙ্গা চলবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দাবী প্রত্যাখ্যান করেন। পরে তারা মেয়াদ কমিয়ে এক বছর করে। তাও প্রত্যাখ্যান করা হলে তারা কমাতে কমাতে এক মাসে নামিয়ে আনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাও প্রত্যাখ্যান করেন। প্রতিনিধিদল এই দাবীর যে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তাছিল এই যে, তারা তাদের গোত্রের অর্বাচীন শ্রেনী, তরুণ বংশধর ও নারীদের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে চান এবং গোত্রের লোকেরা ইসলামে দীক্ষা নেওয়ার আগে মূর্তি ধ্বংস করার শাদ্যমে তাদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি কার তাদের মনঃপূত ছিল না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুতেই এ দাবী মানলেন না। তিনি বরং জোর দিয়ে বললেন যে, তিনি অবিলম্বে ঐ মূর্তি ভাঙ্গার জন্য আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও মুগীরা ইবনে শু’বাকে (রা) পাঠাবেন। তারা এ দাবীও করেছিল যে, তিনি যেন তাদে নামায পড়তে এবং মূর্তিগুলোকে তাদের নিজ হাতে ভাঙ্গতে বাধ্য না করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফ সাফ বলে দিলেন যে,, নামায ছাড়া ইসলাম হতে পারে না তবে তোমাদের হাত দিয়ে মূর্তি ভাঙ্গতে বাধ্য করে হবে না। প্রতিনিধিদল নামাযকে মেনে নেয় ‘অবমাননাকর’ বলে মন্তব্য করেও তা মেনে নিতে সম্মত হলো।

অতঃপর তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করলো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য অঙ্গীকারনামা লিখে দিলেন। তারপর তাদের আমীর নিযুক্ত করলেন উসমান ইবনে আসকে। তিনি ছিলেন দলের কনিষ্ঠতম সদস্য এবং কুরআন ও ইসলাম শিখতে অপেক্ষাকৃত বেশী আগ্রহী ছিলেন। আবু বাক্র (রা) তার সম্পর্কে এই বলে মন্তব্য করেন যে, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার কাছে উসমানই ইসলাম বুঝতে ও কুরআন শিখতে অধিকতর মনে হয়েছে।”

দায়িত্ব সমাপনান্তে প্রতিনিধিদল যখন তায়েফ অভিমুখে রওনা হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও মুগীরা ইবনে শু’বাকে (রা) মূর্তি ভাঙ্গার দায়িত্ব অর্পণ করে তাদের সাথেই পাঠিয়ে দিলেন। তারা উভয়ে প্রতিনিধিদলের সাথে রওনা হয়ে গেলেন। তায়েফের উপকণ্ঠে পৌছে মুগীরা (রা) আবু সুফিয়ানকে (রা) আগে পাঠাতে চাইলেন। আবু সুফিয়ান তা অস্বীকার করে বললেন, “তুমি তোমার গোত্রের লোকদের সাথে আগে গিয়ে দেখা কর।” আবু সুফিয়ান ‘যুল হুদুম’ নামক জলাশয়ের কাছে থেকে গেলেন আর মুগীরা শহরে প্রবেশ করেই কোদাল নিয়ে লাভ ও অন্যান্য মূর্তি ভাঙ্গার জন্য তাদের ওপর চড়াও হলেন। মুগীরার (রা) গোতও বনু মুয়াত্তাব তাকে সহায়তা করলো এবং তা এই আশংকায় যে, তার পরিণতি যেন উরওয়া ইবনে মাসউদের মত না হয়। ওদিকে বনু সাকীফের মহিলারা মূর্তির জন্য মাতমকরতে করতে রাস্তায় বেরিয়ে এল। তারা বলতে লাগলো,

“রক্ষকের জন্য তোমরা কাঁদ [৮৮.মুশরিকরা লাতকে ‘দাফফা’ অর্থাৎ রক্ষক নামে অভিহি করতো। কেননা তারা বিশ্বাস করতো যে, লাত তাদেরকে শত্রু ও আপদ থেকে রক্ষা করে।] নিমকহারামেরা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। [৮৯.অর্থাৎ বনু সাকীফের লোকেরা তাদের রক্ষকের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে গেছে এবং তাকে ধ্বংস হওয়ার জন্য মগীরার হাতে সোপর্দ করে চলে গেছে।]

তারা এর জন্য ভালো করে যুদ্ধও করলো না।” [৯০. অর্থাৎ রক্ষককে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে আসা উচিত ছিল। কিন্তু কেউ সেজন্য এগিয়ে এলো না।]

অতঃপর মুগীরা যখন লাতকে কুঠার দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন তখন আবু সুফিয়ান “আহা! আহা!” করতে লাগলেন।

লাতকে ধ্বংস করার পর মুগীরা মন্দিরের সমস্ত ধনরত্ন সংগ্রহ করে আবু সুফিয়ানের কাছে পাঠালেন। এই ধনরতেœর মধ্যে ছিল বিপুল পরিমাণ সোনা ও রেশমী দ্রব্যাদি।

উরওয়া ইবনে মাসউদ শহীদ হওয়ার পর তার ছেলে আবু মুলাইহ ও ভ্রাতুষ্পুত্র কারেব ইবনে আসওয়াদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করে এবং বনু সাকীফের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে চিরতরে ত্যাগ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। এটা হচ্ছে ইয়ালীল প্রতিনিধিদলের আগমনেরও আগের ঘটনা। আবু মুলাইহ ও কারেব ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, “তোমরা যাকে খুশী অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ কর।” তারা বললেন, “আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করলাম।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বললেন, তোমাদের মামা আবু সুফিয়ানকেও?” তারা বললেন, ‘হা’। পরে তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুগীরা ও আবু সুফিয়ানকে লাভ ধ্বংস করতে পাঠালে আবু মুলাইহ বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, লাতর মন্দির থেকে যে ধনরত্ন উদ্ধার করা হবে তা থেকে আমার পিতার ঋণ শেঅধ করে দিন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মত হলে কারেব বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার পিতা আসওয়াদের ঋণও শোধ করে দিন।”উল্লেখ্য যে, উরওয়া ও আসওয়াদ আপন ভাই ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আসওয়াদ মুশরিক অবস্থায় মারা গেছে।”কারেব বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি একজন মুসরিম আত্মীয়কে অর্থাৎ আমাকে সাহায্য করুন। কেননা ঋণ আমার ঘাড়েই চেপে আছে এবং আমিই সাহায্য চাইছি।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মত হলেন এবং আবু সুফিয়ানকে বলে দিলেন, “লাভের ধনরত্ন থেকে উরওয়া ও আসওয়অদের ঋণ শোধ করে দিও।” মুগীরা ধনরত্ন আবু সুফিয়ানের কাছে দেয়ার সময় তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওাসাল্লামের নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দিলেন। আবু সুফিয়ান উরওয়া ও আসওয়াদের ঋণ শোধ করে দিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু সাকীফের জন্য যে অংগীকারনামা লিখে দিলেন তা নিম্নরুপঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে মু’মিনদের প্রতি। ওয়াজ্জের (তায়েফের একটি জায়গা) কষ্টময় বৃক্ষরাজি কাটা নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি এ আদেশ লংঘন করবে তাকে বেত্রাঘাত করা হবে। যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে তাকে পাকড়াও করে নবী মুহাম্মাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। এটা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের নির্দেশ। এ ঘোষণাপত্র আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহর নির্দেশে খালিদ ইবনে সাঈদ কর্তৃক লিখিত। কেউ যেন এ ঘোষণাপত্র লংঘন না করে। লংঘন করলে তা নিজের জন্য শাস্তি ডেকে আনারই নামান্তর হবে। কেননা এটা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের নির্দেশেই লিখিত।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *