3 of 3

১২৩. বনু আমেরের প্রতিনিধি আমের ইবনে তুফাইল ও আরবাদ ইবনে কায়েসের ঘটনা

বনু আমেরের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল এল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। তারা হলো আমের ইবনে তুফাইল, আরবাদ ইবনে কায়েস ও জাব্বার ইবনে সালামী। এরা ছিল গোত্রের সবচেয়ে কুচক্রী সরদার। আমের ইবনে তুফা।ীল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে এক মারাত্মক চক্রান্ত এঁটে এসেছিল। ইতিপূর্বে তাঁর গোত্রের লোকজন- দেশের অধিকাংশ লোকে ইসলাম গ্রহণ করছে- এই যুক্তি দেখিয়ে তাকেও মুসলমান হবার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সে বলে, “আমি শপথ নিয়েছি। সমগ্র আরব জাতি আমার নেতৃত্ব মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমি থামবো না। আজ কিনা কুরাইশ গোত্রের এই তরুণের নেতৃত্ব আমি মেনে নেব।” আমের আরবাদকে বললো, “আমরা দু’জনে যখন মুহাম্মাদের সাথে দেখা করতে যাবো তখন দু’জনে দু’দিকে বসবো। মুহাম্মাদ যখন আমার সাথে কথা বলতে আমার দিকে মুখ ফেরাবে ঠিক তখনই তুমি তাঁকে তরবারী দিয়ে আঘাত করবে।”

অতঃপর প্রতিনিধিদ্বয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করলো। আমের বলতে লাগলো, “হে মুহাম্মাদ, আমাকে একটু নির্জনে কথা বরার সুযোগ দাও।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি যতক্ষণ এক আল্লাহর ওপর ঈমান না আনবে ততক্ষণ সে সুযোগ দেব না।” আমের আরবাদকে সুযোগ দেয়ার জন্য বার বার ঐ একই কথা বলতে লাগলো। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিচুতেই তার সাথে নির্জনে কথা বলতে রাজী হলেন না তখন সে প্রতিনিধিদল নিয়ে সটকান দিল। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে গেল, “দেখে নিও, আমি বিরাট এক বাহিনী নিয়ে তোমার ওপর হামলা চালাবো।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে আমের ইবনে তুফাইল থেকে রক্ষা কর।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমের আরবাদকে বললো, “হে আরবাদ, ধিক্ তোমাকে, যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তার কি করলে? আল্লাহর কসম, প্রথিবীতে আমি তোমাকেই সবচেয়ে বীর পুরুষ মনে করতাম এবং তোমাকেই সবচেয়ে বেশী ভয় করে চলতাম। আজ থেকে আর তোমাকে ভয় করােবা না।” আরবাদ বললো, “তোর সর্বনাশ হোক! তাড়াহুড়া করিসনে। আমাকে যা করতে বলেছিলি তা করতে উদ্যত হয়েই দেখি, আমার সামনে তুই ছাড়া আর কেউ নেই। সে অবস্থায় কোপ দিলে তো ঘাড়েই পড়তো। শেষ পর্যন্ত তোকেই আমি কোপ দেব নাকি?”

অতঃপর তারা নিজ নিজ বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলো। পথিমধ্যে আল্লাহ আমের ইবনে তুফাইলের ঘাড়ে প্লেগ দিলেন। বনু সালুলেল এক মহিলার বাড়ীতে গিয়ে সে ঐ প্লেগেই মারা গেল। মৃত্যুকালে সে বিলাপ করে বলতে লাগলো, “হে বনু আমের। আমাকে কি শেষ পর্যন্ত উটের গলগন্ডতেই ঘরলো আর তাও বনু সালুলের এক মহিলার বাড়িতে?” [৯১. বনু সালুল আরবদের মধ্যে অত্যন্ত কাপুরুষ ও হীনমনা গোত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কবি সামাওয়াল বলেন, “আমরা এমন এক গোষ্ঠী যারা হত্যাকে বনু আমের ও বনু সালুলেল মত লজ্জাকর মনে করি না।”] আমেরকে সমাধিস্থ করে তার সঙ্গীরা বনু আমেরের বসতিতে দুটো ছাগল নিয়ে হাজির হলো। প্রতিনিধিদের গোত্রের লোকেরা আরবাদকে বললো, “হে আরবাদ! তোমরা কি করে এলে?” সে বললো, “কিছুই না। সে (মুহাম্মাদ) আমাদেরকে এমন এক সত্তার ইবাদাত করার আহ্বান জানিয়েছে যাকে নাগালে পেলে আমি তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করতাম।” এ কথা বলার এক বা দুই দিন পর আরবাদ তার উট নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। সহসা আল্লাহ তার ওপর আকাশ থেকে বজ্র নিক্ষেপ করে উট সহ আরবাদকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিলেন। আরবাদ ছিল কবি লাবীদের ভাই। সে আরবাদের মৃত্যুতে নিম্নরূপ শোকগাথা রচনা করে:

“মৃত্যু কাউকেই ছেড়ে দেয়না, স্নেময় পিতাকেও না।

আরবাদের ওপর একমাত্র মৃত্যুরই আশংকা করতাম- আকাশ থেকে কোন দুর্যোগ কিংবা সিংহের আক্রমণের আশংকা করতাম না।

অতএব, হে চক্ষু, আরবাদের জন্য অশ্রুবর্ষণ করোনা কেন?

যখন আমরা নারী পুরুষ সকলেই কঠিন দুঃখ কষ্টের ভেতররে কাল কাটাচ্ছিলাম তখন তারা সবাই যদি চিৎকার করতো আরবাদ তার পরোয়া করতো না।

আর তারা যদি ভারসাম্য রক্ষা করে চলতো তবে সেক্ষেত্রেও আরবাদ মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতো।

সে একজন মিষ্টভাষী বুদ্ধিমান এবং ন¤্র হৃদয় মানুষ।

সেই সাথে তার মধ্যে তিক্ততাও ছিল।

বৃক্ষরাজি যখন শীতকালে উজাড় হয়ে যায়, এবং পুনরায় তা যখন ফলাদায়ক ও তরতাজা হয় এবং অবশিষ্ট আশাপ্রদ জিনিসগুলো দেখা দেয়,
(অর্থাৎ দেশে যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং পরে আবার দেশে ফসল উৎপন্ন হওয়ার অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়।) তখন সে (আরবাদ) জঙ্গলের হিংস্র সিংহের চেয়েও বরিত্ব এবং অভ্যস্ত সূক্ষদর্শিতা পরিচয় দিত)।

তার শোকে আহত মাতমকারিনীরা মাতম করছে, যেন তরুণ হরিণীরা ঊষর মরুভূমিতে (নিষ্ফল রোদন করছে।) দুর্যোগের দিনটাতে সেই বীর অশ্বারোহীর বজ্রঘাতে মৃত্যু আমাকে মর্মাহত করেছে।

সে ছিনতাই করতো আবার লুণ্ঠিত ব্যক্তি যদি তার কাছে আসতো তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিত, ইচ্ছা হলে (লুণ্ঠিত জিনিস) ফিরিয়ে দিত।

তার অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও উদ্ভিদ উৎপাদন করে থাকে।

প্রস্তরময় অঞ্চলের অধিবাসীরা মাত্রই ভাগ্যাহত তা তাদের জনসংখ্যা যতই বেশী হোক না কেন।

কখনো তারা একটু সমৃদ্ধশালী হলেও পরক্ষণেই আবার তাদের কপালে নেমে আসে দারিদ্র। তারা সংখ্যায় অধিক হলেও ধ্বংস ও বিনাশের কবলে পড়ার জন্যই হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *