3 of 3

১৩৯. রাজা বাদশাহদের কাছে রাসূলুল্লাহর (সা) দূত প্রেরণ

ইবনে হিশাম বলেন:

ইতিপূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সাহাবীকে বিভিন্ন দেশের রাজা বাদশাহর কাছে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। তাদের নিকট তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি পাঠান।

ইবনে হিশাম বলেনঃ আবু বাক্র হুযালী থেকে একজন বিশ্বস্ত লোক আমাকে জানিয়েছে যে, হুদাইবিয়ার দিন উমরা করতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তাঁর সাহাবীদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “যে জনতা, আল্লাহ আমাকে সকল মানুষের নিকট রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। কাজেই ঈসার (আ) সহচরগণ যেমন তাঁর বিরুদ্ধাচরণ চরেছিল তোমরা সেভাবে আমার বিরুদ্ধাচারণ করো না।” সাহাবীগণ বললেন, “হে, আল্লাহর রাসূল, ঈসার (আ) সহচরবৃন্দ কিভাবে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল?” তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে যেসব কাজ করতে বলি তিনিও তাদের সেইসব কাজ করতে বলতেন। কিন্তু তিনি যখন কাউকে নিকটবর্তী কোথাও পাঠাতে চাইতেন তখন সে মুখ তার ও গড়িমসি করতো। ঈসা (আ) আল্লাহর নিকট এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন। ফলে গড়িমসিকারীদের প্রত্যেকের এমন পরিণতি হলো যে, যাকে যে জাতির পাঠানো হলো সে সেই জাতির ভাষাভাষী হয়ে গেল।”

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের মধ্য থেকে কিছু লোককে দূত বানিয়ে বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহদের নিকট ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত চিঠি পাঠালেন। রোম সম্রাটের কাছে পাঠালেন দেহইয়া ইবনে খলীফা কালবীকে, আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফঅ সাহমীকে পারস্য সম্রাটের নিকট, আমর ইবনে উমাইয়া দামরীকে আবিসিনিয়ার নাজাশীর নিকট, হাতিব ইবনে আমরকে ইয়ামামার দুই বাদশাহ সুমামা ইবনে উছাল ও হাওযা ইবনে আলীর নিকট, আলা ইবনে হাদরামীকে বাহরাইনের বাদশাহ মুনযির ইবনে সাওয়ার নিকট এবং শুজা ইবনে ওয়াহাব আসাদীকে সিরীয় সীমান্ত রাজ্যের রাজা হারিস ইবনে আবু শামর গাসসানীর নিকট।

ইবনে হিশাম বলেনঃ আমার জানামতে সালীতকে সুমামা, হাওযা ও মুনযিরের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল।

ইবনে ইসহাক বলেন: ইয়াযীদ ইবনে আবু হাবীব মিসরী আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি একটি বইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আরব ও আজমের বাদশাহদের নিকট এবং বিভিন্ন দেশে প্রেরিত দূতদের নাম দেখেছেন। তিনি সাহাবীদেরকে প্রেরণের সময় কি কি উপদেশ দিতেন তারও উল্লেখ ঐ বইতে রয়েছে। ইয়াযীদ ঐ বইখানা প্রখ্যাত পন্ডিত মুহাম্মাদ ইবনে শিহাব যুহরীর নিকট পাঠান। যুহরী বইখানাকে নির্ভরযোগ্য বলে স্বীকৃতি দেন। ঐ বইতে বলা হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিকট এসে বললেন, “আল্লাহ আমাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। অতএব তোমরা আমার তর থেকে দাওয়াত পৌছিয়ে দাও। আল্লাহ তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করবেন। ঈসার (আ) সহচরদের মত তোমরা আমার বিরুদ্ধাচরণ করো না।” সাহাবীগণ বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, তারা কিভাবে বিরুদ্ধাচরণ করতো?” তিনি বললেন, ‘আমি যেরূপ তোমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে তিনিও তাদেরকে সেরূপ বিভিন্ন জায়গায় দাওয়াত পৌছানের দায়িত্ব দিতেন। যে ব্যক্তিকে তিনি নিকটবর্তী জায়গায় পাঠাতেন। সে খুশী হতো ও পছন্দ করতো। আর যাকে দূরে পাঠাতে চাইতেন সে অসন্তুষ্ট হতো ও অস্বীকার করতো। ঈসা (আ) এ বিষয়ে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করলেন। ফলে তাদের যাকে যে দেশে পাঠানো হতো সে সেই দেশের ভাষাভাষী হয়ে যেত।”

ইবনে ইসহাক বলেন: ‘ঈসা (আ) তাঁর যেসব সহচরকে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন এবং তাঁর যেসব অনুগামী পরবর্তীকালে প্রেরত হ৮ন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সহচর পিটার্স ও তার অনুগামী পলস। পলস হাওয়ারী বা ঈসার (আ) সহচর ছিলেন না। এদেরকে পাঠানো হয় রোমানদের কাছে আন্দ্রায়েস ও মানতাকে এমন এক এলাকায় পাঠান যেখানকার অধিবাসীরা মানুষ খেত। টমাসকে পাঠান প্রাচ্যের ব্যবিলনে, ফিলিপসকে পাঠান আফ্রিকার কারতাজান্না বা আফ্রিকায়। ইয়াহান্নাকে পাঠান আসহাবুল কাহাফের জনপদ আফসুস নগরে। ইয়াকুবকে পাঠান আরবের হিজাযে, সাইমনকে পাঠান বারবারদের অঞ্চলে এবং ইাহুদকে পাঠান জোড়দের স্থানে। ইয়াহুদ ঈসার (আ) সহচর ছিল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *