ঋগ্বেদ ০৮।০৯৬

ঋগ্বেদ ০৮।০৯৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৯৬
ইন্দ্র দেবতা। মরুৎগণের পুত্র দ্যুতান ঋষি, অথবা তিরশ্চী ঋষি।

১। উষা সকল এই ইন্দ্রের ভয়ে আপনাদের গতি বর্ধিত করিতেছেন। রাত্রি সকল ইন্দ্রের জন্য অপর রাত্রে সুন্দর বাক্যবিশিষ্ট হন। এই ইন্দ্রের জন্য সর্বতোব্যাপ্ত মাতৃস্থানীয় সপ্তসিন্ধু (১) মনুষ্যদের তরণার্থ সুখে পারযোগ্য হন।

২। অসহায় অস্ত্রের দ্বারা একত্রিত একবিংশতি সংখ্যক পর্বত সানুসমূহ বিদ্ধ হইয়াছিল। অভিলাষ প্রদ, প্রবৃদ্ধ ইন্দ্র যাহা করিয়াছেন, মর্ত্য অথবা দেব তাহা করিতে পারে না।

৩। ইন্দ্রের বজ্র অয়োনিৰ্মিত, উহা তাহার হস্তে সম্বদ্ধ; তাহার হস্তে বহুতর বল আছে। যুদ্ধগমনকালে ইন্দ্রের মস্তকে শিরস্ত্রাণ প্রভৃতি থাকে(২)। তাঁহার আজ্ঞা শ্রবণার্থ সকলে তার সমীপে আগমন করে।

৪। হে ইন্দ্র! তোমাকে যজ্ঞার্হদিগের মধ্যেও যজ্ঞার্হ মনে করি, অচ্যুত পদার্থের চ্যুতিকারী মনে করি, তোমাকে সৈন্যদিগের কেতু বলিয়া মনে করি, মনুষ্যগণের অভিমত ফলবর্ষক বলিয়া মনে করি।

৫। হে ইন্দ্র! তুমি যখন বাহুদ্বয়ে শত্ৰুদিগের গৰ্ব চূর্ণ কর, বজু, অহির হননার্থ ধারণ কর, যখন মেঘ সকল শব্দ করে, যখন জলসমূহ শব্দ করে, তখন চারিদিক হইতে অভিগমন করতঃ স্তুতিকারিগণ ইন্দ্রের পরিচর্যা করে।

৬। যিনি এই সমস্ত ভূতগণকে সৃষ্ট করিয়াছেন, সমস্ত বস্তুজাত যাহার পরে উৎপন্ন হইয়াছে, আমরা স্তুতিদ্বারা সেই মিত্র ইন্দ্রের মিত্র হইব, নমস্কার যারা অভিলাষপ্রদ ইন্দ্রকে আমাদের অভিমুখীন করিব।

৭। হে ইন্দ্র! যে বিশ্বদেবগণ তোমার সখা হইয়াছিলেন, তাহারা বৃত্রের নিশ্বাস হইতে ভীত হইয়া পলায়ন করতঃ তোমায় ত্যাগ করিয়া গেলেন। মরুৎগণের সহিততোমর সখ্য হইল। পরে তুমি সমস্ত শত্রুসেনা জয় করিলে।

৮। হে ইন্দ্র! ত্রিষষ্ঠিসংখ্যক মরুৎগণ (৩) একত্রীভূত গোসমূহের ন্যায় তোমায় বর্ধিত করিয়াছিলেন বলিয়া যজ্ঞার্হ হইয়াছেন; আমরা সেই ইন্দ্রের নিকট গমন করিব। আমাদের ভজনীয় ধন দান কর, তোমার উদ্দেশে শক্ত শোষক বলবিধান করিব।

৯। হে ইন্দ্র! তোমার তীক্ষ আয়ুধ, তোমার মরুৎ সৈন্য, তোমার বজ্রের কে প্রতিকুলতা করিতে পারে? হে ঋজীষী! তুমি চক্রের দ্বারা আয়ুধ রহিত, দেবদ্রোহী অসুরদিগকে(৪) দূর করিয়া দাও। ১০। পশু লাভের জন্য মহান, উগ্র, প্রবৃদ্ধ কল্যাণতম, ইন্দ্রের উদ্দেশে সুন্দর স্তুতি প্রেরণ কর। স্তুতিভাক ইন্দ্রের উদ্দেশে বহুতর স্তুতি বিধান কর, ইন্দ্র পুত্রের জন্য বহু ধন প্রেরণ করুন।

১১। উকথ বাহিত, মহান্ ইন্দ্রের উদ্দেশে নদী পারকারী নৌকার ন্যায় স্তুত উচ্চারণ কর। বহু বিস্তৃত, প্রীতিপ্রদ ইন্দ্ৰ ধন প্রেরণ করুন, পুত্রের জন্য বহুধন প্রেরণ করুন।

১২। ইন্দ্র যাহা স্বীকার করেন তাহা কর, সুন্দর স্তুতি উচ্চারণ কর, স্তোত্ৰদ্বারা ইন্দ্রের পরিচর্যা কর। হে স্তোতা! অলঙ্কৃত হও, রোদন করিও না, বাক্য শ্রবণ করাও, ইন্দ্র বহুধন প্রদান করিবেন।

১৩। দশসহস্র(৫) সৈন্যের সহিত দ্রুতগমনকারী কৃষ্ণ অংশুমতী নদীতীরে অবস্থান করিতেছিলেন, ইন্দ্র প্রজ্ঞাদ্বারা সেই শব্দকারীকে প্রাপ্ত হইলেন। মনুষ্যদিগের হিতাভিপ্রায়ে হিংসাকারিণী সেনাদিগকে বধ করিলেন।

১৪। ইন্দ্র বলিলেন, দ্রুতগামী কৃষ্ণকে দেখিতে পাইলাম, সে অংশুমতী নদীর গৃঢ়স্থানে বিস্তৃত প্রদেশে বিচরণ করিতেছে ও সূর্যের ন্যায় অবস্থিতি করিতেছে। হে অভিলাষপ্রদ মরুৎগণ! আমি ইচ্ছা করি, তোমরা যুদ্ধ কর এবং যুদ্ধে তাহাকে সংহার কর।

১৫। দ্রুতগামী কৃষ্ণ অংশুমতী নদীর সমীপে দীপ্তিমান হইয়া শরীর ধারণ করিতেছে। ইন্দ্র বৃহস্পতিকে সহায় লাভ করিয়া দেবশূন্য আগমনশীল সেনাগণকে বধ করিলেন।

১৬। হে ইন্দ্র! তুমিই সেই কৰ্ম্ম করিয়াছ, তুমিই জন্মিবামাত্রেই শত্রু শূন্য সপ্তশত্রুর শত্রু হইয়াছ, অন্ধকারাবৃত দ্যাবাপৃথিবীকে প্রাপ্ত হইয়াছ, মহৎযুক্ত ভূবনসমুহের উদ্দেশে আনন্দ ধারণ করিয়াছ।

১৭। হে ইন্দ্র! তুমি সেই কাৰ্য্য করিয়াছ। হে বজ্রী! তুমিই কুশল হইয়া অনুপম বল বজ্রের দ্বারা নষ্ট করিয়াছ, তুমিই আয়ুধের দ্বারা শুষ্মকে নিম্নমুখ করিয়া বধ করিয়াছ, তুমি আপনার কাৰ্য্যদ্বারা গোলাভ করিয়াছ।

১৮। হে ইন্দ্র! তুমিই সেই কাৰ্য্য করিয়াছ, হে অভিলাষ প্রদ! তুমি মনুষ্যদিগের উপদ্রবের হন্তা, অতএব প্রবৃদ্ধ হইয়াছিলে, তুমি স্তম্ভমান সিন্ধুগণকে গমনার্থ ছাড়িয়াদিয়াছিলে, পরে দাসগণের অধিকৃত জল জয় করিয়াছিলে।

১৯। সেই ইন্দ্র শোভন প্রজ্ঞাবিশিষ্ট ও অভিযুত সোম পানাথ আনন্দিত। তাহার ক্রোধ কেহ সহ্য করিতে পারে না, তিনি দিবসের ন্যায় ধনবান্, তিনি একাকীইমনুষ্যের কর্মকর্তা, তিনি বৃত্ৰহা, তিনি সকল শত্রুসৈন্য বিনাশ করেন।

২০। সে ইন্দ্র বৃত্রহা, তিন মনুষ্যগণের পোষক, তিনি আহ্বানযোগ্য, তাহাকে স্তুতিদ্বারা হোম করিব, তিনি আমাদের বিশেষ রক্ষক ও ধনবান, তিনি কীর্তিপ্রদ, অন্নের দাতা, তিনি আদরপূৰ্ব্বক কথা বলিয়া থাকেন।

২১। সেই বৃত্ৰহা ইন্দ্র মহান্, তিনি জাতমাত্রেই তৎক্ষণাৎ আহ্বানযোগ্য হইয়াছিলেন। মনুষ্যগণের হিতকর বহুকাৰ্য্য করতঃ পীত সোমের ন্যায় সখাগণের আহ্বানযোগ্য হইয়াছিলেন।

————

(১) ১০।৭৫।৫ ঋকের টীকা দেখ।

(২) মূলে “ক্রতব” আছে। সায়ণ অর্থ করিয়াছিলেন “শিরস্ত্রাণ প্রভৃতীনি”।

(৩) মূলে “ত্রিঃ ষষ্টি মরুৎ” আছে। অন্যান্য স্থানে সাতজন মরুতের উল্লেখ আছে, এখানে তাঁহার নয় গুণ অর্থাৎ ৬৩ মরুতের উল্লেখ দেখা যায়।

(৪) মূলে “অনাযুধাস, অসুরা, অদেবা” আছে। অর্থ আয়ুধশূন্য, শ্রদ্ধাশূন্য, বলবান শত্রুগণ। বোধহয় অনার্য্যদিগের উল্লেখ, ১৩, ১৪ ও ১৫ ঋক দেখ।

(৫) ইন্দ্রকর্তৃক কৃষ্ণ নামক অনার্য্য যোদ্ধা ও তাঁহার সৈন্যের বিনাশের কথা আমরা পূর্বেই পাইয়াছি।