ঋগ্বেদ ০৮।০৯২

ঋগ্বেদ ০৮।০৯২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৯২
ইন্দ্র দেবতা। শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ ঋষি।

১। হে ঋত্বিকগণ! তোমাদের সোমপানকারী ইন্দ্রকে বিশেষ রূপে স্তব কর । তিনি সকলের অভিভকারী, শতক্রতু এবং মনুষ্যদিগকে সর্বাপেক্ষা অধিক ধন দান করেন।

২। তোমরা সকলের আহূত, সকলের স্তুত, গাথাযোগ্য এবং সনাতন বলিয়া প্রসিদ্ধ দেবতাকে ইন্দ্র বলিইয়া সম্বোধন কর।

৩। ইন্দ্রই আমাদের মহাধনের দাতা, মহা অন্নের দাতা, তিনিই নর্তনকারী। মহান ইন্দ্র, আমাদিগের অভিমুখে আগত ধন আমাদিগকে প্রদান করুন।

৪। সুন্দর শিরস্ত্রাণযুক্ত ইন্দ্র, হোমকারী সুদক্ষ ঋষির যবমিশ্রিত ক্ষরণশীল সোম প্রকৃষ্টরূপে পান করিয়াছিলেন।

৫। সোমপানার্থ ইন্দ্রকেই তোমরা বিশিষ্টরূপে অর্চনা কর। সোমই ইন্দ্রকে বর্ধিত করেন।

৬। দ্যোতমান ইন্দ্র সোমের মদকর রস পান করিয়া বলদ্বারা সমস্ত ভুবন অভিভব করেন।

৭। সকলের অভিভবকারী এবং তোমাদের সমস্ত স্তোত্রে বিস্তৃত ইন্দ্রকেই রক্ষাৰ্থ অভিমুখে আগমন করাও।

৮। তিনি শত্ৰুদিগের সম্প্রহারক, সৎ, অন্যকর্তৃক অনভিগত, অহিংসিত, সোমপানকারী ও সকলের নেতা। ইহার কৰ্ম্ম কেহ নিবারণ করিতে পারে না।

৯। হে স্তুতিদ্বারা সম্বোধনযোগ্য ইন্দ্র! তুমি বিদ্বান্, তুমি শত্রুদিগের নিকট হইতে আমাদিগকে প্রভূত ধন দান কর, শত্ৰুদিগের ধনদ্বারা আমাদিগকে রক্ষা কর।

১০। হে ইন্দ্র! এই দ্যুলোক হইতেই শতবলযুক্ত ও সহস্রবলযুক্ত অন্নদ্বারাযুক্ত হইয়া আমাদের নিকট আগমন কর।

১১। হে সমর্থ ইন্দ্র! আমরা কর্মবান, আমরা কর্ম করিব। হে পর্বতবিদারক, বজ্রবান ইন্দ্র! সংগ্রামে অশ্বের দ্বারা জয় লাভ করিব।

১২। গোপাল যেরূপ তৃণদ্বারা গাভীগণকে সন্তুষ্ট করে, যে শতক্রতু! তোমাকে সকল দিক হইতে উকথস্তোত্রে সেইরূপ সন্তুষ্ট করিব।।

১৩। হে শতক্রতু! সমন্ত বিশ্বই অভীষ্টযুক্ত। হে বজ্রবান! আমরা অশংসনীয় অভীষ্ট যে লাভ করি।

১৪। হে বলপুত্র! অভীষ্ট কাতর শব্দযুক্ত মনুষ্যগণ তোমাতেই অবস্থান করে; অতএব হে ইন্দ্র! কোনও দেবতাই তোমাকে অতিক্রম করিতে পারে না।

১৫। হে অভিলাষপ্রদ ইন্দ্র! তুমি সর্বাপেক্ষা ধনপ্রদ, ভয়ঙ্কর শত্ৰুদূরকারী ও অনেকের ধারণ সমৰ্থ, তুমি কর্মদ্বারা আমাদিগকে চালিত কর।

১৬। হে শতক্রতু! যে সর্বাপেক্ষা যশস্বী সোম পূৰ্ব্বকালে তোমার জন্য আমরা অভিষব করিয়াছি, তদ্বারা প্রমত্ত হইয়া ইদানীং আমাদিগকে প্রমত্ত কর।

১৭। হে ইন্দ্র! তোমার প্রমত্ততা সর্বাপেক্ষা নানাবিধ কীর্তিযুক্ত, সর্বাপেক্ষা পাপহন্তা এবং সৰ্ব্বাপেক্ষা বলদাতা।

১৮। হে বজ্ৰবান, যথার্থকৰ্ম্মা, সোমপা, দর্শনীয় ইন্দ্র! সমস্ত মনুষ্যের মধ্যে তোমার দত্ত যে ধন আছে, তাহাই আমরা জানিব।

১৯। মত্ততাযুক্ত ইন্দ্রের উদ্দেশে আমাদের স্তুতিবাক্য সকল অভিযুত সোমকে স্তব করুক; স্তুতিকারীগণ অর্চনীয় সোমকে পূজা করুন।

২০। সমস্ত শ্রী যে ইন্দ্রে অধিষ্ঠিত, সপ্তসংখ্যক হোত্ৰকগণ যাহাতে প্রীত হন, সোম অভিযুত হইলে সেই ইন্দ্রকে আহ্বান করিতেছি।

২১। হে দেবগণ! তোমরা ত্ৰিকদ্রুকে জ্ঞানসাধন যজ্ঞ বিস্তার করিয়াছিলে। আমাদের স্তুতিবাক্য সেই যজ্ঞকেই বর্ধিত করুক।

২২। সিন্ধুসকল যেরূপ সমুদ্রে প্রবেশ করে, সেইরূপ সোমসকল তোমাতে প্রবিষ্ট হউক। হে ইন্দ্র! তোমায় কেহ অতিক্রম করিতে পারে না।

২৩। হে অভিলাষপ্রদ, জাগরণশীল ইন্দ্র! তুমি স্বমহিমায় সোম পানে ব্যাপ্ত হইয়াছ। উহা তোমার জঠরে প্রবেশ করিতেছে।

২৪। হে বৃত্রহা ইন্দ্র! সোম তোমার কুক্ষির পক্ষে পৰ্য্যাপ্ত হউক, ক্ষরণশীল সোম তোমার শরীরে পর্যাপ্ত হউক।

২৫। এই শ্রুতকক্ষ ঋষি অশ্বলাভের জন্য অত্যন্ত গান করিতেছে, গো লাভের জন্য অত্যন্ত গান করিতেছে, ইন্দ্রের গৃহাৰ্থ অত্যন্ত গান করিতেছে।

২৬। হে ইন্দ্র! সোম অভিযুত হইলে, তুমি তাহাদের পানার্থ পৰ্যাপ্ত হও। হে সমৰ্থ ইন্দ্র! তুমিই ধন দাতা, সোম তোমার জন্য পর্যাপ্ত হউক।

২৭। হে বজ্ৰবান ইন্দ্র! আমাদের স্তুতিবাক্য অতিদূর হইতেও তোমায় ব্যাপ্ত করুক। আমরা স্তোতা, তোমার নিকট হইতে প্রচুর ধন লাভ করিব।

২৮। হে ইন্দ্র! তুমি বীরগণকেই কামনা কর, তুমি শূর, তুমি ধৈৰ্যবান, তোমার মন সকলের আরাধনীয়।

২৯। হে বহু ধনবান্ ইন্দ্র! সমস্ত যজমান তোমার দান ধারণ করে, হে ইন্দ্র! আমার সহায় হও।

৩০। হে অন্নপতি ইন্দ্র! তন্দ্রাযুক্ত স্তোতার ন্যায় হইও না, অভিযুত গব্যযুক্ত সোম পানে হৃষ্ট হও।

৩১। হে ইন্দ্র! আয়ুধক্ষেপী শূর সকল রাত্রিকালে আমাদের নিযন্ত্রণা হউক। আমরা তোমার সহায়তায় তাহাদিগকে বিনাশ করিব।

৩২। হে ইন্দ্র! তোমার সহায়তা লাভ করিয়া, আমরা শত্রুদিগকে নিরাকৃত করিব, তুমি আমাদিগের এবং আমরা তোমার।

৩৩। হে ইন্দ্র! তোমাকে কামনা করিয়া পুনঃ পুনঃ তোমার স্তুতি করিয়া, তোমার সখারূপ স্তোতা সকল তোমারই পরিচৰ্য্যা করিতেছে।