ঋগ্বেদ ০৮।০৬০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৬০
অগ্নি দেবতা। প্রগাধের পুত্র ভর্গ ঋষি।
১। হে অগ্নি! অগ্নিগণের সহিত আগমন কর, তোমায় হোতা বলিয়া বরণ করিতেছি; ধৃতব্রতা হবিষ্মতী কুশে উপবেশন করাইয়া তোমাকে অলঙ্কৃত করুক।
২। হে বলের পুত্র অঙ্গিরা! স্রুক সকল যজ্ঞে তোমাকে লাভ করিবার জন্য গমন করিতেছে। বলের পুত্র প্রদীপ্ত জ্বালাযুক্ত, পুরাতন অগ্নিকে আমরা যজ্ঞে স্তব করি।
৩। হে অগ্নি! তুমি কবি, তুমি ফলের বিধাতা। হে পাবক! তুমি হোতা ও যাগযোগ্য। হে শুক্র! তুমি আমোদযোগ্য, তুমি সৰ্ব্বাপেক্ষা যাগযোগ্য, যজ্ঞে বিপ্রগণ মননমন্ত্রদ্বারা তোমার স্তুতি করে।
৪। হে যুবতম, নিত্য অগ্নি! আমি দ্রোহরহিত, দেবগন আমায় কামনা করেন, তাহাদিগকে আনয়ন কর। হে বাসপ্রদ অগ্নি! সুনিহিত অন্নের সমীপে গমন কর, স্তুতিদ্বারা নিহিত হইয়া আনন্দিত হও।
৫। হে অগ্নি! তুমি রক্ষক, সত্যস্বরূপ, তুমি কবি, তুমিই সৰ্ব্বতঃ বিস্তৃত। হে সমিদ্যমান, দীপ্ত অগ্নি! বিপ্র স্তোতাগণ তোমার পরিচর্য্যা করিতেছে।
৬। হে অত্যন্ত শুচিকারী অগ্নি! দীপ্ত হও ও দীপ্ত কর। প্রজাগণের জন্য ও স্তোতার জন্য সুখ প্রদান কর। তুমি মহান! আমার স্তোতাগণ দেবদত্ত সুখ প্ৰাপ্ত হউক। তাহারা শত্রু পরাভব কর ও সুঅগ্নিবিশিষ্ট হউক।
৭। হে অগ্নি! পৃথিবীস্থ শুষ্ককাষ্ঠ যে প্রকারে দগ্ধ কর, হে মিত্রগণের পূজক! আমাদের দ্রোহকারীকে এবং যে আমাদের মন্দ করিতে চায় তাহাকে সেই রকম করিয়া দগ্ধ কর।
৮। হে অগ্নি! আমাদিগকে হিংসাকারী বলবান মনুষ্যের বশীভূত করিও না। যে মন্দ কথা কয়, তাহার বশীভুত করিও না। হে যুবতম! তোমরা রক্ষা কাৰ্য্য হিংসা শূন্য আপদ হইতে উদ্ধারকারী ও সুখকর। উহা দ্বারা আমাদিগকে রক্ষা কর।
৯। হে অগ্নি! আমাদিগকে এক ঋকের দ্বারা রক্ষা কর, দ্বিতীয় ঋকের দ্বারা রক্ষা কর। হে বলপতি! তিন বাক্যের দ্বারা পালন কর। হে বাসপ্রদ! চার বাক্যের দ্বারা পালন কর।
১০। সমস্ত রাক্ষস ও দানশূন্য লোক হইতে আমাদিগকে রক্ষা কর। সংগ্রামে আমাদিগকে রক্ষা কর। তুমি নিকটবর্তী ও বন্ধুস্বরূপ; যজ্ঞের জন্য ও সমৃদ্ধির জন্য তোমায় প্রাপ্ত হইব।
১১। হে পাবক অগ্নি! আমাদিগকে অন্নবৰ্দ্ধক, প্রশংসনীয় ধন প্রদান কর। হে সমীপবৰ্ত্তী ধনদাতা! আমাদিগকে সুনীতি দ্বারা অনেকের স্পৃহণীয় অত্যন্ত কীৰ্ত্তিযুক্ত ধন দান কর।
১২। যে ধনদ্বারা আমরা যুদ্ধে ত্বরাবান শত্রু ও অস্ত্রক্ষেপকদিগের হস্ত হইতে উদ্ধার হইয়া তাহাদিগকে হিংসা করিব, তাহা প্রদান কর, তুমি প্রজ্ঞাবলে বাসপ্রদ, তুমি আমাদিগকে বর্দ্ধিত কর। অন্নদ্বারা বৰ্দ্ধিত কর; আমাদিগের ধনপ্রদ কৰ্ম্মসকল সুসম্পন্ন কর।
১৩। বৃষভের ন্যায় শৃঙ্গ তীক্ষ্ণ করতঃ অগ্নি মস্তক কম্পিত করিতেছেন। অগ্নির হনুসকল তীক্ষ্ণ, কেহ উহা নিবারণ করিতে পারে না। অগ্নির দন্ত উত্তম, তিনি বলের পুত্র।
১৪। হে বৃষ্টিপ্রদ অগ্নি! যেহেতু তুমি বর্দ্ধিত হও, অতএব তোমার দন্ত কেহ নিবারণ করিতে পারে না। হে অগ্নি! তুমি হোতা, তুমি আমাদের হব্য উত্তমরূপে হোম কর, আমাদিগকে বরণীয় বহু ধন দান কর।
১৫। হে অগ্নি! মাতৃভূত বনে বর্তমান অরণিদ্বয়ে নিদ্রা যাইতেছ। মনুষ্যগণ তোমাকে সম্যক বৰ্দ্ধিত করে, পশ্চাৎ তুমি অনলস হইয়া হব্যদায়ীর হব্য দেবগণের নিকট বহন কর। অনন্তর দেবগণের মধ্যে শোভা পাও।
১৬। হে অগ্নি! সেই তোমাকেই সপ্ত হোতা স্তব করে। তুমি দানশীল ও অক্ষীণ। তুমি তাপপ্রদ তেজোবলে মেঘকে ভেদ কর। হে অগ্নি! আমাদিগকে অতিক্রম করিয়া অগ্ৰে গমন কর।
১৭। হে স্তোতাগণ! তোমাদের জন্য অগ্নিকেই আহ্বান করি। আমায় বর্হি ছিন্ন করিয়াছি ও হব্য নিধান করিয়াছি, অগ্নি কৰ্ম্মধারী বহুলোকে বর্তমান ও সমস্তলোকের হতা।
১৮। হে অগ্নি! উত্তম সামযুক্ত গৃহে যজমান প্রজ্ঞাবলে প্রজ্ঞাবান লোকের সহিত তোমার স্তব করিতেছে। হে অগ্নি! আমাদের রক্ষার্থ আপন ইচ্ছায় নিকটবৰ্ত্তী নানা রূপধারী অন্ন আহরণ কর।
১৯। হে অগ্নি! হে দেব! গে স্তুত্য! তুমি প্রজাগণের পালক, রাক্ষসগণের সন্তাপপ্রদ। তুমি যজমানের গৃহপালক, উহা কখন ত্যাগ কর না, তুমি মহান, তুমি দ্যুলোকের পাতা, যজমান গৃহে সৰ্ব্বদা বৰ্ত্তমান।
২০। হে দীপ্তধন অগ্নি! রাক্ষসাদি আমাদিগের মধ্যে প্রবিষ্ট না হউক, জাতুধানগণের পীড়া যেন প্রবিষ্ট না হয়। দারিদ্র্য, হিংসাকারী ও বলবান রাক্ষসগণকে বহুদূরে পরিহার কর।