স্বাধীনতা দিবসের সকালে মনমেজাজ বেশ ফুরফুরে থাকে টুপুরের। ঘুম ভাঙে প্রভাতফেরির আওয়াজে, ড্রাম বাজাতে বাজাতে পাড়া পরিক্রমা করে ক্লাবের ছেলেমেয়েরা। কানে আসে দেশাত্মবোধক সংগীতের সুর, সমবেত গানের মূৰ্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। টুপুরও বেরিয়ে পড়ে চটপট। পাড়ায় জাতীয়পতাকা উত্তোলনের পর সোজা স্কুল। সেখানে একটা – অনুষ্ঠান হয় ফি বছর। গান, নাচ, আবৃত্তি, নাটক। ফাংশন শেষে লুচি-বোঁদের প্যাকেট সাবাড় করতে করতে হল্লাগুল্লার আনন্দও নেহাত কম নয়।
তা এ বছর তো টুপুর মাসির বাড়িতে। রুটিনটাও তাই অন্যরকম। ভোরবেলা ফিটফাট হয়ে বুমবুমদের স্কুলে গেল টুপুর। ভাইয়ের খুদে গাৰ্জেন বনে। সাড়ে দশটা নাগাদ ফিরে দেখল, পার্থমেসো নেই। আরতিদি যথারীতি কাজে ব্যস্ত, আর অস্বাভাবিক গম্ভীর মিতিনমাসি সোফায় আসীন।
টুপুর চোখ নাচিয়ে বলল, কী গো, ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে-তে প্যাঁচার মতো মুখ কেন?
ভারী গলায় মিতিন বলল, কেসটা বড্ড তাড়াতাড়ি পেকে গেল রে।
মানে?
মীনধ্বজবাবুর ফোন এসেছিল। কাল রাতে ও বাড়িতে আবার একটা ইন্সিডেন্ট ঘটেছে।
কীরকম?
রাত তিনটে নাগাদ মীনধ্বজবাবু বাথরুম যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন। তখনই হঠাৎ শব্দ পেয়ে জানলা দিয়ে দেখেন, পিছনের গেট টপকে জনাপাঁচেক লোক ঢুকছে বাড়িতে। জানলা থেকেই চেঁচিয়ে ওঠেন মীনধ্বজবাবু, লোকগুলোও তৎক্ষণাৎ সটকান দেয়। চটপট চাতালে নেমে মীনধ্বজ দেখেন, একটা স্পিডবোড বিকট শব্দ তুলে বেরিয়ে গেল বাঁয়ে, মানে ডায়মন্ডহারবারের দিকটায়।
টুপুর স্তব্ধ হয়ে শুনছিল। বিড়বিড় করে বলল, কী সাংঘাতিক কাণ্ড!
হুম।
লোকগুলো ডাকাতটাকাত নাকি? গুপ্তধনের খবর পেয়ে চড়াও হয়েছিল?
অনেকটা সেরকমই লাগছে বটে। তবে…। মিতিন একটুক্ষণ চুপ থেকে বলল, যদি ডাকাতই হয় তো দুদ্দাড়িয়ে পালাবে কেন? ওই নির্জন জায়গায় মীনধ্বজবাবু গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও কেউ শুনতে পাবে না। আর একটা ছেষট্টি বছরের লোককে মেরেধরে উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে চলে যাওয়া ডাকাতদের পক্ষে কী এমন কঠিন?
তা হলে কি ওরা চোরটোরই…?
চোর-ছ্যাঁচোড় কি দলবেঁধে আসে রে? তাও আবার স্পিডবোট নিয়ে?
ডাকাতও নয়, চোরও নয়, লোকগুলো তা হলে কী? নিশ্চয়ই ওরা রাত তিনটেয় নিনহোর চাতালে আড্ডা জমাতে আসেনি?
হু, ওদের উদ্দেশ্যটাই তো ভাবছি।
আমি কিন্তু একটা ব্যাপার কিছুতেই মানতে পারছি না মিতিনমাসি।
কী?
কেন যে মীনধ্বজবাবু জেদ করে একা-একা আছেন? সন্দীপনবাবু বাড়িতে থাকলে কত সুবিধে হয়। বলেই টুপুর একটু দম নিল, অবশ্য দলবেঁধে এলে ওঁরা দুজনেই বা কী করবেন?
বটেই তো। তবে মীনধ্বজবাবু এবার খুব ঘাবড়েছেন। সকাল হতে না-হতেই ডেকেছিলেন সন্দীপনকে। শুনে-টুনে সন্দীপনও নাকি ভীষণ উদ্বিগ্ন। সে নাকি বলেছে, আর কোনও ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। যত শিগগির সম্ভব সে গেটেবন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করছে। সামনে-পিছনে, দুদিকেই।
মীনধ্বজবাবু রাজি তো?
মনে তো হল পরামর্শটা এবার শুনবেন। আমাকেও জিজ্ঞেস করছিলেন, কী করা উচিত?
তুমি কী বললে?
সিকিউরিটির বন্দোবস্ত তো যখন-তখন করা যায়। তবে আমি এক্ষুনি-এক্ষুনি তাড়াহুড়ো করতে বারণ করেছি।
কিন্তু এর পর যদি মারাত্মক কিছু ঘটে যায়?
উঁহু, ঘটবে না। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে…।
মিতিন ঝুপ করে থেমে গেল। তার ষষ্ঠ ইন্দ্ৰিয় ঠিক কী বলছে আর জানা হল না টুপুরের। ঠোঁটে কুলুপ আঁটলে মাসির পেট থেকে কথা বের করা শিবেরও অসাধ্য। তবে ভাবনাচিন্তার একটা জটিল প্রক্রিয়া যে মিতিনমাসির মস্তিষ্কে চালু হয়ে গিয়েছে, তাতে টুপুরের সন্দেহ নেই।
অগত্যা টুপুরের আর কাজ কী, ভ্যাবলার মতো বসে থাকা ছাড়া?
সময় কাটাতে টিভি চালাল টুপুর। ঘুরছে এ চ্যানেল, ও চ্যানেল। বেশিরভাগ চ্যানেলেই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ঘটা এখন। কোথাও দেশপ্রেমের সিনেমা দেখাচ্ছে, কোথাও গান, কোথাও কুইজ। দূরদর্শনে চলছে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ। জঙ্গি হানার আশঙ্কায় দেশের সর্বত্রই এখন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুচার হাত অন্তর-অন্তর কমান্ডের প্রহরা। তাদের সতর্ক চোখ ঘুরছে এদিক-ওদিক।
অনুষ্ঠানটার মাঝেই পার্থমেসো ফিরে এসেছে। ঢুকেই টুপুরকে বলল, তোর মাসিকে আমার ফিজ রেডি করতে বল।
কীসের?
একটা সকালের মধ্যে এত কিছু ইনফর্মেশন জোগাড় করলাম, তার মূল্য দিতে হবে না?
মিতিন প্রায় ধ্যানস্থই ছিল এতক্ষণ। হঠাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, আগে শুনি তো। দেখি কতটুকু কী কাজে লাগে।
ব্যবহার করতে পারবে কি না সেটা তোমার সমস্যা। তবে তথ্যগুলো দারুণ ইন্টারেস্টিং। ধপাস করে সোফায় বসে একখানা সিগারেট ধরাল পার্থ। পোড়া কাঠি অ্যাশট্রেতে গুঁজে বলল, নুরপুর ছিল এক পিকিউলিয়ার জায়গা। একদিকে ডায়মন্ডহারবারে ব্রিটিশদের ফোর্ট, এক সময় যার নাম ছিল চিংড়িখালি গড়। অন্যদিকে ফলতায় ডাচদের দুর্গ, সিরাজদ্দৌলার হাতে মার খেয়ে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। অবশ্য তার আগেই ডাচরা ওই দুর্গ থেকে পাতোড়ি গুটিয়েছে। এই দুই দুর্গের মাঝে নুরপুর ছিল হার্মাদদের ঠেক। হার্মাদ মানে জানিস তো টুপুর?
জলদস্যু!
ইয়েস। স্প্যানিশ শব্দ আর্মাডার অপভ্রংশ হল হার্মাদ। আর্মাডার অর্থ হল নৌবহর। তা যাই হোক, দেড়-দুশো বছর ওই পর্তুগিজ জলদস্যুরা নুরপুরকে সেন্টার করে তাদের লুঠপাট চালাত। এইটিন্থ সেঞ্চুরির শেষের দিকে ব্রিটিশরা তাদের হঠিয়ে দেয়। তবে এক-দুজন ব্রিটিশদের সঙ্গে ভাবটাব জমিয়ে রয়ে গিয়েছিল নুরপুরে। সেই রকমই এক হার্মাদ বেসিল ডি অলমিডা ওখানে একটা নতুন ব্যবসা ফেঁদে বসে। খুব অভিনব নয় অবশ্য, এই কাজ তারা ভারতবর্ষে আগেও করেছে। ভারতের বাইরেও। হঠাৎ হঠাৎ গ্রামে হানা দিয়ে ছেলে-বুড়ো-জোয়ান যাদেরই হাতের কাছে পেত, তুলে এনে বিদেশে চালান করত দাস হিসেবে। বেসিল প্রধানত এদের পাচার করত ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওখানকার গায়না, ত্রিনিদাদ, অনেক জায়গাতেই তখন ব্রিটিশ শাসন। ওইসব ব্রিটিশরাই কিনে নিত লোকগুলোকে, তাদের দিয়েই বানাত বাড়িঘর রাস্তাঘাট।
মিতিন বলল, বাজে কথা ছেড়ে পয়েন্টে এসো।
আরে বাবা, আসছি তো। পার্থ ছাই ঝাড়ল, কুইন ভিক্টোরিয়া ভারতের ভার নেওয়া পর্যন্ত এই ব্যবসাটি রমরমিয়ে চলেছে। তারপর ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে এই দাস-চালান নিয়ে খুব ঝড় ওঠে। অগত্যা ব্যবসাটাও শেষমেশ বন্ধ করতে হয়।
ফ্রান্সিস ডি অলমিডা সম্পর্কে কী জানলে?
ওই নামটা পাইনি। বোধ হয় ফ্রান্সিস ছিল বেসিলের ছেলে। ওর সময়েই সম্ভবত ওই পাপ ব্যবসার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে।
এটা হয়তো মানা যেতে পারে। মিতিন ঘাড় নাড়ল, সময়টা মোটামুটি মিলছে। রানি ভিক্টোরিয়া মানে আঠারোশো আটান্ন। তার যদি পনেরো-বিশ বছর পরেও ফ্রান্সিস নুরপুর ছেড়ে চলে গিয়ে থাকে, তা হলে তো এখন থেকে সওয়াশো বছরই হয়। ঠিক কিনা?
একদম ঠিক খাপে-খাপ মিলে যাচ্ছে।
আমিও এই লাইনেই ভাবছিলাম। মনে হচ্ছে, এবার আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছি।
রেখাটি সম্পর্কে অভাজন কি কিছু জানতে পারে?
ধৈর্য ধরো মহাশয়। অচিরেই সব প্রাঞ্জল হয়ে যাবে।
বলতে বলতে মিতিন মোবাইলের বোতাম টিপল। রিংটোন বেজে উঠতেই কানে চাপল খুদে দূরভাষ যন্ত্রটি। ও প্রান্ত বোধ হয় ধরছে না, কেটে দিয়ে আবার চেষ্টা করল। এবারও ব্যর্থ। আস্তেআস্তে ভুরু কুঁচকে যাচ্ছে মিতিনের। চতুর্থ দফা প্রয়াস চালিয়ে ছেড়ে দিল। মোবাইলটা টুপুরকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, একটা দরকারি কল আসতে পারে। ধরে শুনে নিস কথাগুলো।
কার ফোন? কী কথা?
তুই জানিস।
মিতিন উঠে বাথরুমে গেল। চোরা একটা উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছে টুপুর। বেশিক্ষণ ধৈর্য ধরতে হল না অবশ্য, মিনিট তিনেকের মধ্যেই মোবাইলে ঝংকার। মনিটরে নামটা দেখেই টুপুর শশব্যস্ত, হ্যাঁ অনিশ্চয় আঙ্কল, বলুন?
মোবাইলটা সাইলেন্ট মোডে ছিল। ওপারে অনিশ্চয় মজুমদারের ওজনদার গলা, তোমার মাসির তো পরপর মিসড কল দেখছি।
হ্যাঁ, কাল রাত্তিরে মাসি আপনার কাছে একটা ইনফর্মেশন চেয়েছিল, সেই ব্যাপারেই…!
মাসি এখন কোথায়?
স্নানে ঢুকেছে। আপনি আমায় বলতে পারেন।
মিস ওয়াটসন? অনিশ্চয় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। হাসিটা থামতে প্ৰায় মিনিটখানেক সময় লাগল। তারপর হঠাৎই ভারী গলায় বললেন, বেশ, শোনো তা হলে। কাল রাতেই আমি গেঁওখালি থানায় ফোন করেছিলাম। ওরা এখনও ডিটেল জানাতে পারেনি, তবে কিছু ফিডব্যাক দিয়েছে। যে ছেলে দুটো নুরপুরে ধরা পড়েছিল…একজনের নাম তপন, অন্যজন বোধ হয় সফিকুল…দুই মূর্তিমানই দিনপনেরো হল বেপাত্তা।
মানে?
মানে গেঁওখালি ছেড়ে কোথাও পালিয়েছে। কোথায় আছে বাড়ির লোকও নাকি ঠিকঠাক বলতে পারেনি।
ও।
তোমার মাসিকে বোলো, থানায় আমার বলা আছে, ওরা ফিরলেই খবর পাওয়া যাবে।
থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কল।
তারপর…তোমরা আবার মীনধ্বজদার বাড়ি যাচ্ছ কবে?
ঠিক জানি না। মাসি বলতে পারবে।
আমাকে টাইম টু টাইম কেসের ডেভেলপমেন্টটা জানাতে বোলো। আমি কিন্তু একটু চিন্তায় আছি। বেচারা বিদেশ থেকে এসে কী যে গাড্ডায় পড়ল…আমাদের হাতেও ব্যাপারটা ছাড়তে চাইল না!
আপনমনে আরও একটুক্ষণ গজগজ করে ফোন কাটলেন অনিশ্চয়। টুপুর বুঝে উঠতে পারল না, অনিশ্চয়ের সমাচারটা ভাল না খারাপ? ছেলে দুটোকে জেরা না করলে সেটা এগোতে কি অসুবিধে হবে মিতিনমাসির? ওরাই নাকি মিসিং লিঙ্ক! কিন্তু দু’মক্কেল পালালই বা কোথায়? কেন? অন্য কোনও গুপ্তধনের সন্ধানে পাড়ি দিল নাকি?
টুপুরের বিস্ময় অনেকটাই বুঝি বাকি ছিল। এমন একটা দুঃসংবাদ পেয়ে হতাশা তো দূরে থাক, মিতিনমাসি একটু চমকাল না পর্যন্ত! শুধু চোয়াল আরও শক্ত হল, চোখের মণি দু-এক সেকেন্ড বুঝি স্থির, ব্যস। চুলটুল আঁচড়ে এসে আবার হাতে তুলল মোবাইল ফোন।
এবার মীনধ্বজ মর্মরবক্ষ বাগচী। অসম্ভব কেজো স্বরে মিতিন বলল, গুপ্তধন রহস্য আমি সমাধান করে ফেলেছি। আমার চেকটা রেডি রাখবেন।
…
দাঁড়ান, উত্তেজিত হবেন না। যা বলছি আগে মন দিয়ে শুনুন। কাল দুপুর বারোটায় করুণা, সন্দীপন আর অনঙ্গমোহনকে অতি অবশ্যই উপস্থিত থাকতে বলবেন। তাদের সামনেই আমি সুতোর জটটা খুলব।
…
না। এই মুহূর্তে আপনার কিছুই জানার প্রয়োজন নেই। বরং কিছু করণীয় আছে। এখন বাড়িতে ওই তিনজনের কেউ প্রেজেন্ট আছে কি?
…
শুধু করুণা? আপনি এক্ষুনি ছুটি দিয়ে দিন। সন্দীপন আর অনঙ্গমোহনবাবুকে ফোনে ইনফর্ম করুন, দুজনের কারওরই আজ আর আপনার বাড়িতে আসার দরকার নেই। রাধামাধবের পূজার্চনা একদিন বন্ধ থাক। কারণটাও তিনজনকে জানিয়ে দেবেন। বাড়িটা এখন যে অবস্থায় আছে, আমি ঠিক সেই অবস্থাতেই কাল বাড়িটাকে দেখতে চাই। অতএব কাল দুপুর বারোটার আগে কেউ যেন ও বাড়িতে পা না রাখে। যা বললাম, মুখস্থ করে নিন। অবিকল এই বাক্যগুলোই বলবেন সকলকে। একটি শব্দও বাদ না দিয়ে। গুপ্তধন-রহস্য ফাঁস করার জন্য আমিই যে তাদের ডাকছি, এটাও জানাতে ভুলবেন না।
…
আর-একটা কথা। আজ রাত্তিরটা চোখ আর গলাকে বিশ্রাম দিন। আপনার কম্পাউন্ডে কেউ ঢুকলেও টুঁ শব্দটি করবেন না। চেনা অচেনা কাউকে দেখলেও না। ভয় নেই, আপনার প্রোটেকশনের ব্যবস্থা থাকছে।
পার্থ আর টুপুর হাঁ করে কথাগুলো গিলছিল। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে, কিছুই ঢুকছে না মগজে।
ফোনালাপ সেরে মিতিনের সরাসরি প্রশ্ন, তোমরা আজ সারারাত জাগতে পারবে?
পার্থ-টুপুর কোরাসে বেজে উঠল, আমরা? কেন?
নো কোয়েশ্চেন। জবাব চাইছি। পারবে?
চোখ চাওয়াচাওয়ি করল পার্থ-টুপুর। কী হেঁয়ালি রে বাবা।
.
১০.
রাত তখন দুটো দশ। নুরপুরের পথঘাট পুরোপুরি শুনশান। রাস্তার কুকুরগুলো পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাদা। একটা জিপ প্রায় নিঃশব্দে উঠে এল বাঁধের রাস্তায়। হেডলাইট না জ্বালিয়ে। নিনহোর খানিক আগে থামল সহসা। পরপর পাঁচটা লোক নামল গাড়ি থেকে। এগোল সতর্ক ভঙ্গিতে।
নিনহোর গেটে এসে সামনের লোকটা একগোছা চাবি বের করল। ছোট্ট শব্দ, খুলে গেল তালা। ফটক সামান্য ফাঁক করে একে একে ঢুকে পড়ল পাঁচমূর্তি। প্রত্যেকেরই পায়ে রবার সোলের জুতো, তবু নুড়িপাথরে হাঁটতে গিয়ে আওয়াজ বাজছে মৃদু-মৃদু। গোটা কম্পাউন্ড এখন অন্ধকার। চওড়া বারান্দায় একখানা বাল্ব জ্বলছে বটে, তবে তার দ্যুতি সিঁড়ির নীচ পর্যন্ত যেন পৌঁছচ্ছে না। গাঢ় আবছায়ায় লোকগুলোকে কেমন আধিভৌতিক লাগছে।
অ্যাসবেস্টস ছাওয়া গ্যারাজটার কাছাকাছি এসে সামনের লোকটা দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ। কিছু শুনল কি? নাকি মনের ভুল? সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল এদিক-ওদিক। মীনধ্বজের গাড়িখানাকে দেখল ঝলক। আস্তেআস্তে মিলিয়ে এল ভুরুর ভাঁজ, আবার এগোল। সোজা বেসমেন্টের দরজায় পৌঁছে অভ্যস্ত হাতে চাবি ঘোরাল তালায়। হাতের ইশারায় ডাকল সঙ্গীদের। পরপর পাঁচজন সেঁধিয়ে গেল বেসমেন্টে। দশ মিনিট। কুড়ি মিনিট। তিরিশ মিনিট। প্ৰায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর নিঝুম পুরীর গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এল লোকগুলো। চারজনের মাথায় ভারী কাঠের বাক্স, পঞ্চমজনের কাঁধে বড়সড় এক ঝোলা। সেই ঝোলাধারীই ফের বন্ধ করল বেসমেন্ট।
ঠিক তখনই এক তীব্র আলোর ঝলকানি। পাঁচ সেলের টর্চের জোরালো রশ্মি আছড়ে পড়ল লোকটার মুখে। টর্চের পিছন থেকে মিতিনের গলা গর্জে উঠল, আপনার কারিকুরি, জারিজুরি, সব শেষ সন্দীপন। উঁহু, একটুও নড়ার চেষ্টা করবেন না। আমার রিভলবার কিন্তু লোডেড এবং আমি টার্গেট মিস করি না।
ঘটনার আকস্মিকতায় সন্দীপন হতচকিত। দাঁড়িয়ে পড়ল স্থাণুবৎ। বাকি চারজন বাক্স ফেলে ফটকের দিকে দৌড়তে যাচ্ছিল, মিতিন এবার তাদের উদ্দেশে হুংকার ছুড়ল, পালাবার পথ নেই। পুলিশ গোটা বাড়িটাই ঘিরে ফেলেছে। যদি চুপচাপ ধরা দেন তো ভাল, নইলে এক্ষুনি পুলিশ শুট করবে।
সত্যি সত্যিই ডজনদুয়েক পুলিশ যেন মাটি ফুড়ে আবির্ভূত হল। কম্পাউন্ডেই গা-ঢাকা দিয়ে অপেক্ষা করছিল তারা। ঝকঝকে চেহারার এক তরুণ অফিসার সপ্রতিভ স্বরে বলল, এবার তা হলে হ্যান্ডকাফ পরাই ম্যাডাম?
এক্ষুনি। একটুও দেরি করবেন না। পাখির বাসা থেকে একটা পাখিও যেন উড়ে যেতে না পারে। আগে পালের গোদাটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধুন। ওর মগজটা শয়তানিতে গিজগিজ করছে। ও কিন্তু ভয়ংকর বিপজ্জনক ক্রিমিনাল।
কাজটা কিন্তু ভাল করলেন না ম্যাডাম। সন্দীপন গরগর করে বলে উঠল, ভবিষ্যতে আপনার কপালে খুব বড় বিপদ আছে।
নিজের বর্তমানটা তো আগে সামলান। অন্তত দশ বছর জেলের ঘানি তো ঘুরিয়ে আসুন। যদি গরাদের ওপার থেকে বেরোতে পারেন, তখন নয় আবার মোকাবিলা করা যাবে।
সন্দীপন ফের তড়পে উঠতে যাচ্ছিল, পুলিশ অফিসার দাবড়ে থামালেন তাকে। হাতকড়া পরালেন। পার্থ-টুপুরও বেরিয়ে এল মীনধ্বজের গাড়ির পিছন থেকে। জুলজুল চোখে দেখল সন্দীপনকে। অস্ফুটে বলল, কিন্তু ও ব্যাটার ক্রাইমটা কী? বাক্সগুলোয় গুপ্তধন আছে বুঝি?
এতক্ষণ কষ্ট করলে, আর-একটু ধৈর্য ধরো। বাড়ির মালিকের সামনেই বাক্স খোলা থোক।
হ্যাঁ, পার্থ-টুপুর কম কষ্ট করেনি। সেই রাত সাড়ে নটায় পৌঁছেছিল ফলতায়। অনিশ্চয় মজুমদারের নির্দেশে একখানা ভুটভুটি তৈরি ছিল ফেরিঘাটে, তাতে চড়ে এগারোটায় নুরপুর। তারপর চোর-ছ্যাঁচোড়ের মতো পিছনের ফটক টপকে গুটিগুটি পায়ে মীনধ্বজের গ্যারাজ। তখন থেকে টানা তিনঘণ্টা ঘাপটি মেরে বসে ছিল ঢাউস গাড়িটার আড়ালে। ইয়া-ইয়া মশার কামড়ে সর্বাঙ্গ দাগড়া-দাগড়া, তবু মুখে শব্দটি করার জো নেই, এতটুকু নড়াচড়াও নিষিদ্ধ। এ যে কী যমযন্ত্রণা! তা যাই হোক, কষ্ট করে কেষ্ট না পাক, সন্দীপন তো মিলেছে। এবার ক্লাইম্যাক্স তো দেখতেই হয়।
মিতিনের ডাক পেয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এসেছেন মীনধ্বজ। হঠাৎ বাড়িতে এত পুলিশটুলিশ, লোকজন দেখে প্ৰথমটায় তার কেমন বেভুল দশা। সন্দীপনের হাতকড়াটি পর্যন্ত খেয়াল করেননি। তাকেই জিজ্ঞেস করে বসলেন, অ্যাই, কী হয়েছে? এখন এত ভিড় কেন?
সন্দীপন এক ঝটকায় মুখ ঘুরিয়ে নিল।
মিতিন হেসে বলল, ও আপনাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে মিস্টার বাগচী!
কেন?
এমন মহৎ কাজকর্ম করছিল…আপনার বাড়িটাকে গোডাউন বানিয়ে…।
মানে?
মানে এই বাক্সগুলোয় আছে। স্বচক্ষেই দেখুন।
তরুণ পুলিশ অফিসারটি একটার পর একটা বাক্স খুলছেন। অন্দরের বস্তুগুলোকে দেখে, শুধু মীনধ্বজ কেন, সকলেরই আক্কেল গুড়ুম। ডজন-ডজন রিভলবার! স্বয়ংক্রিয় রাইফেল! খানতিনেক মিতিন রকেট লঞ্চার! অজস্র কার্তুজ, শেল, গ্রেনেড! সন্দীপনের ঝোলা থেকেও বেরোল বেশ কিছু জিনিস। দিশি পিস্তল, পাইপগান, গুলি….
টুপুরের স্বর ঠিকরে উঠল, এ যে একখানা আস্ত অস্ত্রাগার!
সেই জন্যই তো বলছি, উনি মহৎ কর্মে লিপ্ত ছিলেন। বিদেশ থেকে চালান হয়ে আসা অস্ত্র যেসব গুণধরদের মাধ্যমে দেশময় ছড়িয়ে পড়ে, শ্রীমান সন্দীপন তাদেরই একজন। সঙ্গে সাঙ্গোপাঙ্গও আছে। তপন, সফিকুল, তারপর এই আরও চার পিস…।
কী সৰ্বনাশ! সন্দীপনকে আমি এত বিশ্বাস করতাম…। মীনধ্বজ হায়-হায় করে উঠলেন, আমার বাড়িতে এই কারবার চালাত? কোথায় রাখা ছিল এসব?
রাত্তিরবেলাতেই দেখবেন? চলুন তা হলে।
পাঁচ মক্কেলকে পুলিশভ্যানে তুলে দিয়ে অফিসারটিও মিতিনদের সঙ্গ নিলেন। বেসমেন্টে ঢুকল মিতিন টর্চের আলো পথ দেখাচ্ছে। প্রথম ঘর দুটো পেরিয়ে তিন নম্বরটিতে এসে মিতিন বলল, আপনি কি জানেন, এ বাড়িতে একটা পাতালপুরী আছে?
মীনধ্বজ বললেন, আমরা তো সেখানেই দাঁড়িয়ে।
উঁহু, এ তো মৰ্ত্যধাম। পাতালপুরী আরও নীচে। অন্ধকারে মিতিনের গলা কেমন অন্যরকম শোনাল, আমরা এখন পাতালপুরীর খিড়কি দরজায় মিস্টার বাগচী।
কই, কোথায় দরজা। ওদিকে তো শুধু বেসমেন্টের চাতালে নামার…!
ওটি ছাড়াও এ ঘরে আর-একটি দরজা আছে। আরও নীচে নামার। বলতে বলতে মিতিন ক্রুশবিদ্ধ যিশুর বিশাল তৈলচিত্রটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ছবিটাকে ঠেলে বাঁয়ে সরাতেই বেরিয়ে পড়ল এক গহ্বর। অন্ধকারে গর্তটা যেন হাঁ হাঁ করছে।
মিতিন গহ্বরের মুখটায় আলো ফেলল, আসুন, দেখুন, এখান থেকে কীভাবে লোহার সিঁড়ি নেমে গিয়েছে। অনেকটা নীচ পর্যন্ত!
টুপুর বিস্ময়ের প্রান্তসীমায়। অন্তত পঁচিশতিরিশ ফুট নেমেছে ঘোরানো সিঁড়ি! তলায় শুধু আঁধারই আঁধার!
একে-একে সবাই নামছেন সিঁড়ি বেয়ে। খুব সাবধানে। মাঝামাঝি পৌঁছতেই পরপর লোহার বাঙ্ক। একটা-দুটো নয়, অজস্র। কম করে তিরিশ-চল্লিশটা তো হবেই। সিঁড়ি থেকে বাঙ্কে যাওয়ার রাস্তাও আছে। সরু সরু। তিন-সাড়ে তিন ফুটের বেশি উঁচু নয় বাঙ্কগুলো, কিন্তু অনেকটাই গভীর।
টর্চ মেরে-মেরে বাঙ্কের ভিতরগুলো দেখছিল মিতিন। বলল, বেবাক ফাঁকা। সব কটা বাক্সই বের করে নিয়েছে।
মীনধ্বজ হতবাক মুখে বললেন, বাড়ির তলায় এরকম সাংঘাতিক সব ব্যবস্থা আছে আমি জানতামই না!
আপনার বাবা-ঠাকুরদাও অবগত ছিলেন বলে মনে হয় না। সম্ভবত সিংহধ্বজবাবুই ওই প্ৰকাণ্ড ছবিটি দিয়ে দরজাটাকে পাকাপাকিভাবে আড়াল করে দেন।
কেন?
কারণ, এই দরজাই তো একটা কুৎসিত অধ্যায়ের স্মৃতি বহন করছে।
কী হত এখানে?
অন্ধকারে দাঁড়িয়েই অন্ধকারের কাহিনি শুনবেন? মিতিন টর্চের আলো ঘোরাল, তার চেয়ে চলুন উপরে, আপনার লিভিংরুমে গিয়ে বসি।
.
১১.
দিনের আলো ফুটতে না-ফুটতে খবর পেয়ে গিয়েছিলেন অনিশ্চয়। অস্ত্র উদ্ধারের নাম শুনেই প্রায় উড়তে-উড়তে চলে এসেছেন নুরপুরে। দ্রুত ঘুরে এলেন পাতালপুরী। একদম তলা পর্যন্ত সরেজমিন করে উপরে উঠে হাঁপালেন কিছুক্ষণ। তার পরেই গলায় বিলাপ ঝরে পড়ল, ও হো হো, আর্মস ম্যাগলিংয়ের কেসেও আপনি পুলিশকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন?
মিতিন ঠেটি টিপে হাসল, কিছু মনে করবেন না অনিশ্চয়দা, পুলিশের যা কর্মতৎপরতা, তাদের কাছে হারা কিন্তু খুব কঠিন।
যা খুশি টিজ করে যান। আমাদের তো এখন প্রতিবাদের মুখ নেই। ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেললেন অনিশ্চয়, তবে ক্রিমিনালদেরও ব্রেনের তারিফ করতে হয়। জিনিসগুলো রাখার জন্য এমন একখানা জায়গা সেট করেছে…!
ওই বাঙ্কগুলো কিন্তু সন্দীপনদের তৈরি নয়। ওগুলোর নির্মাতা তো বেসিল ডি অলমিডা।
তিনি কে?
ফ্রান্সিস ডি অলমিডার বাবা। ঠাকুরদাও হতে পারেন। ওই ফ্রান্সিস ডি অলমিডার কাছ থেকেই বাগচীপরিবার এই বাড়িটি কিনেছিলেন। বেসিল ডি অলমিডা ছিলেন একজন পর্তুগিজ হার্মাদ এবং দাসব্যবসায়ী। গ্রামগঞ্জ থেকে ছেলেবুড়োদের ধরে এনে ওই অন্ধকূপের মতো বাঙ্কগুলোয় পুরে রাখতেন। জাহাজের খোল ভর্তি করার মতো লোক সংগ্রহ হয়ে গেলেই পত্রপাঠ চালান করতেন সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। বিনিময়ে মিলত ঘড়া-ঘড়া মোহর।
করুণা এখনও আসেনি। মীনধ্বজ নিজেই কফি বানিয়ে এনেছেন। ট্রেখানা টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন, এখন বুঝতে পারছি গুপ্তধনের গুজব চাউর হওয়ার কারণ কী।
যা রটে তার কিছু তো বটে। মিতিন হাতে কফিমগ তুলল, সিংহধ্বজবাবু ওই ঘড়া-ঘড়া মোহরের গল্পই করেছিলেন ভুজঙ্গমোহনকে। সম্ভবত গুপ্ত দরজার সংবাদটিও ভুজঙ্গমোহনের অজ্ঞাত ছিল না। কিন্তু সিংহধ্বজবাবুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হবে ভেবে কাউকেই ওই গোপন দরজাটির কথা তিনি জানাননি। এমনকী, দাসব্যবসার কথাও নয়। তাতে হয়তো বাগচীবাড়িরও দুর্নাম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে খানিক হেঁয়ালি করেছেন। ফলে মাটির তলায় মাটি, তার তলে ঘড়া-ঘড়া মোহর…! এমন একটি গুজব ক্ৰমে-ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে।
অনিশ্চয় প্রাজ্ঞস্বরে বললেন, ওই রিউমার থেকেই কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের কথা আপনার মাথায় আসা উচিত ছিল মীনধ্বজদা।
আরে ভাই, আন্ডারগ্রাউন্ড মানে আমরা তো চিরকালই জানি, বেসমেন্ট আর বেসমেন্টের চাতাল। লকগেট খুললে নাকি চাতাল পর্যন্ত জল এসে যেত। তারপর আর-একটি আউটলেট দিয়ে তা বের করেও দেওয়া হত। অবশ্য সবই শোনা গল্প। আমার ঠাকুরদা তো কবেই পাঁচিল তুলে চাতালে জল আসাযাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
নিনহোয় জল ঢোকা কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি মিস্টার বাগচী। ওই জলপথেই এ বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র ঢোকানো হয়েছে।
কীভাবে? কীভাবে? অনিশ্চয় খাড়া হয়ে বসলেন।
তা হলে একটু পিছন থেকে শুরু করি। অলমিডাদের সময়ে লকগেট ছিল তিন-তিনখানা। জলের চাপ কমাতেই গেটগুলো ব্যবহার হত বটে, তবে যাদের ধরে আনছে, তারা যাতে কোনওভাবেই নদীতে পালাতে না পারে তার জন্যও ছিল ওই তিন ধাপের গারদ। কোনও কারণে হু হু করে জল বেড়ে গেলে গোটা পাতালপুরী ভর্তি হয়ে জল উঠে পড়ত বেসমেন্টের চাতালে। তখন বাঙ্ক থেকে বের করে বেসমেন্টের ঘরগুলোয় রাখা হত বন্দি মানুষগুলোকে। আর যখন চালানের প্রয়োজন হত, লকগেটগুলো খুলে, ক্যানালে জল ঢুকিয়ে, নৌকোয় করে নদীতে আনা হত, অর্থাৎ অলমিডাদের জাহাজঘাটায়। শিখিধ্বজ বাড়িটা কেনার পর ক্ৰমে-ক্রমে জাহাজঘাটা এবং দুখানা লকগেট পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তখন হয়তো কোনও বড় ঘূর্ণিঝড়টড়ও হয়েছিল।
হ্যাঁ, হয়েছিল তো! পার্থ বাইরে থেকে একরাশ শিঙাড়া-জিলিপি কিনে এনেছে। গরম শিঙাড়ায় কামড় বসিয়ে বলল, অরুণাভর বাড়িতে তো কাল দেখছিলাম। আঠারোশো তিরানব্বইতে একটা জোর সাইক্লোন হয়েছিল এই এলাকায়।
তবে তো ওই ঝড়েই..। মিতিন পার্থর কথাটা প্রায় লুফে নিয়ে বলল, যাই হোক, থার্ড গেটটা টিকে গিয়েছিল কোনও মতে। কিন্তু আর ব্যবহার হয়নি। সিংহধ্বজবাবু গুপ্ত দরজাটি ছবি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পর পাতালপুরীটিও পাকাপাকিভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। পরে মীনধ্বজবাবুর ঠাকুরদা বজ্ৰধ্বজবাবু আর কোনওরকম ঝুঁকিতেই যেতে চাননি। পাছে ওই লকগেটখানা ভেঙে কোনওভাবে জল ঢুকে পড়ে, এই আশঙ্কায় তিনি চাতালেও পাঁচিল তুলে দেন। অতএব লকগেট অধ্যায়ের ওখানেই পরিসমাপ্তি হওয়ার কথা।
কিন্তু তা হল না। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর টুপুর বলে উঠল, সন্দীপনবাবু লকগেটখানা পরিষ্কার করে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তুললেন।
ঠিক তাই। কারণ, এ বাড়িতে একা থাকার সময় সে আবিষ্কার করে ফেলেছে, কীভাবে লকগেট খোলা যায়। একই সঙ্গে সে বের করে ফেলেছে পাতালপুরীতে ঢোকার রাস্তা। তারপরেই আর্মস ডিলারদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তলে-তলে নিজস্ব একটা দলও তৈরি করে নেয় সে। রাতে জোয়ারের সময় লকগেট খুলে দেয়, টুক করে অস্ত্র সমেত স্পিডবোট ঢুকে পড়ে পাতালপুরীতে। অস্ত্ৰ বেরনোরও একই পন্থা। তবে স্থলপথেও পাচার হয় অস্ত্রের পেটি। ভায়া গুপ্ত দরজা।
এবং তাকে তো সন্দেহ করারও কেউ নেই। পার্থ কাঁধ ঝাঁকাল, ফাঁকা বাড়িতে তো শ্রীমান সন্দীপন একাই অধীশ্বর।
টুপুর বলল, তা কেন? অনঙ্গমোহনবাবু তো আসতেন দুবেলা। তিনি কি কিছুই আঁচ করতে পারেননি?
কী করে করবেন? প্রথমত, তাঁর যাতায়াত একটা নির্দিষ্ট টাইমে। আর সেই সময়টিতে তো সন্দীপন লক্ষ্মী ছেলে। দ্বিতীয়ত, অনঙ্গমোহনবাবুর সঙ্গে ব্যবহারটিও অত্যন্ত মধুর রেখেছে সন্দীপন। তা ছাড়া অনঙ্গমোহন তো বহু সময়ই নেশার ঘোরে থাকেন!
হুঁ। মীনধ্বজবাবু এসে পড়াতেই সন্দীপনের মুশকিল হল।
শুধু মুশকিল কী রে? বল সাড়ে সর্বনাশ। মীনধ্বজবাবু পার্মানেন্টলি থাকাই শুরু করলেন তা নয়, সন্দীপনকেও বাড়ি থেকে আউট করে দিলেন। ফলে সন্দীপনেরও ছটফটানি বাড়ছিল। কারণ, এই ধরনের নিষিদ্ধ মাল তো রোজ-রোজ আসে না, দুমাস, চারমাস পরপর হয়তো কোনও জাহাজে চোরাগোপ্তা এল। সমুদ্র থেকে সেই অস্ত্র স্পিডবোট বা নৌকোয় করে ঢোকে সন্দীপনদের মতো এজেন্টদের ঘরে। মীনধ্বজবাবু দেশে ফেরার পরেও সন্দীপনের কাছে এরকম একটা কনসাইনমেন্ট এসেছিল। ঝুঁকি নিয়ে পাতালপুরীতে পেটিগুলো ঢুকিয়েও ফেলেছিল সন্দীপন। প্ল্যান ছিল, এবার কারবারটা কিছুদিন বন্ধ রাখবে। পাছে মীনধ্বজবাবুর কোনওভাবে খটকা জাগে, তাই লকগেট খোলা-বন্ধের ব্যবস্থাটাও সাময়িকভাবে অকেজো করে দিয়েছিল। আর সেই কম্মোটি করতে গিয়েই বিপত্তি। যা ভয় পাচ্ছিল, তাই হল, মীনধ্বজবাবু দেখে ফেললেন।
মীনধ্বজ হতবাক স্বরে বললেন, আমি আবার কী দেখলাম?
ওই যে দুটো চোর..মাটি খোঁড়া…!
লকগেট বিকল করার জন্য ওরা মাটি খুঁড়ছিল?
ওটাই তো ভ্ৰান্তি। দৃষ্টিবিভ্রম। দূর থেকে যখন আপনি দেখছেন, তখন মাটি খোঁড়া হচ্ছে না বোজানো চলছে, তা কি আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব?
মীনধ্বজবাবু কেমন ভ্যাবাচ্যাকা মুখে তাকিয়ে। চশমার কাচের পিছনে বড়-বড় চোখ দুখানা যেন আরও বিস্ফারিত। তোতলানো গলায় বললেন, ম-ম-মাটি খোঁড়া হচ্ছিল না?
উঁহু। উলটো কাজটাই তপনরা করছিল তখন। আপনার সন্দীপনের নির্দেশ মতো।
ওরা কী বোজাচ্ছিল?
আহা, ওইখানটাতেই তো লকগেটের প্রাণভোমরা। পাথরের নীচটায়। আমার হিসেব বলছে, ওখানেই আছে লকগেট খোলা বন্ধ করার মূল হাতলখানা। ওই হাতল থেকেই মোটা লোহার তার খাড়া নেমেছে পাতালপুরীতে। সেখানে পুলিতে পাক খেয়ে লম্বভাবে তার পৌঁছেছে লকগেটে। পাথর সরিয়ে হ্যান্ডেলটা ঘোরালেই লকগেট খুলে যাবে।
কী কাণ্ড! যত শুনছি, ততই শিহরিত হচ্ছি।
চিরকাল চোখের সামনে পড়ে থাকা জিনিসে আমাদের কৌতূহল থাকে না মিস্টার বাগচী। তবে হ্যাঁ, ইদানীং তো পরিস্থিতির কিছু বদল ঘটেছিল। ওই জগদ্দল পাথর আর অনড় অবস্থায় ছিল না। নিয়মিত সরানো হয় বলে আলগা হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং এবার আপনার কৌতূহল জাগতেও পারত।
কিন্তু আমি সত্যিই কিছু খেয়াল করিনি ম্যাডাম!
হতে পারে। তবে যার মনে পাপ, সে তো ভয় পাবেই। এবং তাকে সাবধানও হতে হবে। অবশ্য একটা কথা মানছি, সন্দীপনের উপস্থিতবুদ্ধি অত্যন্ত প্রখর। পরিস্থিতি ম্যানেজ করার জন্য সুচতুরভাবে নিজেই ছেলে দুটোকে পাকড়াও করেছে। আর তারাও সন্দীপনের শিক্ষা মোতাবেক গুপ্তধনের হুজুগটা আউড়ে গিয়েছে পুলিশের কাছে। কিন্তু ধর্মের কল যে বাতাসে নড়ে! ওই গুজবই যে সন্দীপনকে গাড্ডায় ফেলে দেবে, এটা সন্দীপন ভাবতেও পারেনি।
কী গাড্ডা?
ওই যে…গুপ্তধন নিয়ে হইচই, ভিড়ভাট্টা, নিউজ চ্যানেল…। হট্টগোলের মাঝে বেচারা সন্দীপনের কারবারের নাভিশ্বাস। অগত্যা বেচারা আপনাকে অনেক ভয় দেখানোর চেষ্টা করল। রাত্তিরে চুপিসারে বেসমেন্টে ঢুকে নানানরকম সাউন্ডের টেপ চালাত। হ্যাঁ, সেই কারণেই সন্দীপন সামনে থাকলে আপনি ভৌতিক শব্দ কখনও শোনেননি। মিতিন সোফায় হেলান দিল, আপনি যে ভূতের ভয়েও তেমন কাবু হলেন না, এটাও সন্দীপনের দুর্ভাগ্য। এদিকে পাতালপুরীতে জমে থাকা জিনিসগুলো ডেলিভারির তাগাদা আসছে, সন্দীপন ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠছে। জিনিস পাচারের জন্য ইটভাঁটার পাঁচিল দিয়ে দুটো লোক নামাল, আপনি দেখে ফেললেন। স্পিডবোটে পাঁচজন এল, তাও আপনার নজরে পড়ে গেল।
অনিশ্চয় গোঁফ মোচড়াতে-মোচড়াতে গিলছিলেন কথাগুলো। হঠাৎ জলদগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, আপনি যা বলছেন ম্যাডাম, তাতে তো অ্যাদ্দিনে মীনধ্বজদার সাবাড় হয়ে যাওয়ার কথা। আস্ত মানুষটা হাপিস হয়ে গেলেই বা কী করার ছিল?
উঁহু। তাতে একটু সমস্যা ছিল বইকী। মীনধ্বজবাবুকে খুনই করুক কি লোপাট, চাঞ্চল্য তো একটা হবেই। কলকাতার আত্মীয়স্বজনরা আসবে, ছেলেমেয়েরাও এসে পড়বে…। আর সবচেয়ে বড় ঝামেলা তো আপনি আই জি সাহেব যে একটা হেস্তনেস্ত না করে ছাড়বেন না, এটাও তো সন্দীপনকে মাথায় রাখতে হয়েছে। অতএব সব মিলিয়ে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তাতে সন্দীপনের কারবারের চিরতরে বারোটা। এমনকী, তার গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়াও কিছু অসম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং কোনওক্রমে এবারের কনসাইনমেন্টটা বিনা ঝঞ্ঝাটে পার করে দেওয়াটা তো বেশি জরুরি। মীনধ্বজবাবু সেপ্টেম্বরে বিদেশে গেলে আবার নয় কদিন ব্যাবসাটা চালাত। মিতিন একটু থামল। আড়চোখে মীনধ্বজকে দেখে নিয়ে বলল, অবশ্য শেষ পর্যন্ত যে মেরে ফেলত না, সে গ্যারান্টিও কিন্তু নেই। কারণ, আমদানি করা পেটিগুলো সন্দীপনকে বের করতেই হত। আর পৌঁছে দিতে হত যথাস্থানে। নইলে সন্দীপন তো নিজেই ঘ্যাচাং ফু হয়ে যাবে।
বটেই তো। ওই ব্যবসা সাংঘাতিক খতরনাক। লাখ-লাখ টাকা উপার্জন হয় ঠিকই, কিন্তু প্রতি মুহুর্তে সামনে খাঁড়া। সামান্য বেগড়বাঁই করলেই জান খতম।
একবার লাইনে পা রাখলে বেরিয়ে আসারও তো উপায় নেই। পার্থ রুমালে মুখ মুছল, একেই বলে শাঁখের করাত। আসতে কাটে, যেতেও কাটে।
মীনধ্বজ করুণ মুখে বললেন, আমি তো এখনও বুঝতে পারছি না, সন্দীপনের মতো ভদ্ৰ, শিক্ষিত ছেলে কী করে দেশদ্রোহীদের খাতায় নাম লেখাল?
দুষ্কর্মের জন্য সম্ভাবনাময় এমন একটা নিরালা বাড়িতে একটি ইয়াং ছেলে একা বাস করছে…, দেখে নিশ্চয়ই কোনও ওস্তাদ ছিপ ফেলেছিল। চারের সঙ্গে বঁড়শিও বিঁধে গিয়েছে গলায়, আপনার সন্দীপন হাঁসফাঁস করছে এখন।
বেচারার লাইফটাই বরবাদ হয়ে গেল।
সেই টোপ দেনেওয়ালাকেও আমি ছাড়ছি না। ছোকরার পেট থেকে সব কটা নাম টেনে বের করব। মুঠো ঝাঁকিয়ে ঘোষণা করলেন অনিশ্চয়, যদি ভালয়-ভালয় সব স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়, তো আবার সুস্থজীবনে ফিরলেও ফিরতে পারে।
মিতিন চুপচাপ আলোচনা শুনছিল। হাত বাড়িয়ে ভ্যানিটিব্যাগখানা টানল কাছে। কবজি উলটে ঘড়ি দেখে বলল, এবার তো আমাদের উঠতে হয় মিস্টার বাগচী।
মীনধ্বজ ব্যস্তভাবে বললেন, সে কী? এক্ষুনি যাবেন? রাতভর পরিশ্রম গেল, একটু বিশ্রামটিশ্রাম নিয়ে…।
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। একেবারে বাড়ি গিয়েই রেস্ট নেব।
ওকে। ফিজটা তো অন্তত নিয়ে যাবেন। মীনধ্বজ উঠে দাঁড়ালেন, এক সেকেন্ড। চেকবইটা নিয়ে আসি।
লম্বা-লম্বা পায়ে দোতলায় গেলেন মীনধ্বজ। অনিশ্চয় গা-ঝাড়া দিয়ে বললেন, চলুন, আমিও রওনা দিই। একবার শুধু থানাটা ছুঁয়ে যাব। তারপর চারজনে একসঙ্গে গল্প করতে করতে…!
পুলিশের গাড়িতে ফিরব? পার্থর পুটুস টিপ্পনী।
অনিশ্চয় ভুরু কুঁচকে বললেন, কেন, পুলিশের গাড়িতে কী অসুবিধে?
না, মানে শুনেছি, পুলিশের গাড়িতে ওঠাটা নিজের হাতে, কিন্তু নামাটা…! অনেক সময় নাকি নামতে নামতে ছমাস, এক বছরও লেগে যায়।
অনিশ্চয় দম ছেড়ে হেসে উঠলেন। দুলে দুলে হাসলেন, হাসিতে সর্বাঙ্গ কেঁপে কেঁপে উঠল। ঘরের গুরুগম্ভীর আবহাওয়া তরল হয়ে গেল যেন।
মীনধ্বজ ফিরলেন। হাতের সাদা খামখানা মিতিনকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আর একটা-দুটো প্রশ্ন করব?
বলুন?
করুণা আর অনঙ্গকে কি কাজে বহাল রাখতে পারি?
স্বচ্ছন্দে। সন্দীপন ওদের হাতে রেখেছিল, তবে পলিউট করতে পারেনি।
আপনার তদন্তে আমি মুগ্ধ। কিন্তু, রহস্য উদঘাটনের সূত্রগুলো আপনি কী করে এত তাড়াতাড়ি পেয়ে গেলেন যদি জানতে পারি? নিছকই কৌতূহল!
খামখানা ব্যাগে ঢুকিয়ে মিতিন ভাবল কয়েক সেকেন্ড। তারপর বলল, আমি শুধু চারটে সুতো জোড়া লাগিয়েছি। পাথর, বস্তা, বেসমেন্টের প্যাসেজের লেন্থ, বাড়ির উচ্চতা।
মীনধ্বজ ফ্যালফ্যাল তাকালেন, বুঝলাম না।
একটা ভারী পাথর দীর্ঘকাল মাটিতে গাঁথা থাকলে যে পরিমাণ শ্যাওলা জমা উচিত, এমনটি ছিল না। অর্থাৎ পাথর মাঝে-মাঝেই সরানো হত। তারপর পাঁচিলের ওপারে পেলাম দুখানা মাটির বস্তা। ইটভাঁটায় বস্তা করে মাটি আসে না। ওরা পাড়ের মাটিই কাটে, অথবা নৌকো বোঝাই মাটি কেনে। তখনই বুঝেছিলাম তপনরা বস্তা বোঝাই মাটি এনেছিল হ্যান্ডেলের জায়গাটা বোজাতে। সন্দীপন বস্তা দুটো পাঁচিলের ওপারে ফেলে দেয়। মোরওভার, গর্ত যদি খোঁড়াই হয়ে থাকে, তবে সেই মাটি দিয়ে গর্ত পুরো বুজবে না, দুরমুশ করতে আরও মাটি লাগবে। তখনই নিশ্চিত হলাম, গর্ত খোঁড়াই হয়নি। তিন নম্বর, আপনার বেসমেন্টের প্যাসেজের দৈর্ঘ্য, আই মিন যেখানে তিনটে ঘর আছে, আপনার বাড়ির দৈর্ঘ্যের চেয়ে অন্তত তিরিশ ফুট কম। ওই শূন্যস্থানটুকু তা হলে কোথায়? তৃতীয় ঘরের গুপ্ত দরজাই এর একমাত্র সমাধান। এবার আসি আপনার বাড়ির উচ্চতায়। নদী থেকে লকগেট সমেত বাড়িটা যত উঁচু হওয়া উচিত, বাড়ির বেসমেন্ট আর উপরের অংশ মিলিয়ে তার চেয়ে অনেক কম। অতএব একটা পাতালপুরী থাকতেই পারে। এই সিম্পল ব্যাপারগুলো যে কেন আপনারা লক্ষ করেননি! সন্দীপন তো মনে হয় এগুলো থেকেই…!
মীনধ্বজ মোহিত হয়ে তাকিয়ে আছেন। তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিতিন-পার্থ অনিশ্চয়ের গাড়িতে গিয়ে উঠল। পাদানিতে পা রেখেও টুপুর হঠাৎ থমকাল। বলল, দু মিনিট। আমি এক্ষুনি আসছি।
বলেই ছুটতে ছুটতে সোজা গঙ্গার পাড়। প্রভাতী আলোয় কী উজ্জ্বল দেখাচ্ছে নদীকে!
প্রায় দুশো বছর ধরে কত কিছু ঘটে গিয়েছে এ বাড়িতে। সেই অলমিডাদের সময় হাজার-হাজার মানুষের কান্না, বাগচীপরিবারের আয়েশি জীবন, শেষমেশ সন্দীপনের এই ভয়ংকর কার্যকলাপ– বহতা নদী সবই দেখেছে, তবু কেমন বয়ে চলেছে উদাসীন!
আপনাআপনি একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল টুপুরের। কার জন্য কে জানে!