আরাকিয়েলের হিরে – মিতিনমাসি – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
পার্থমেসোর সঙ্গে জমিয়ে দাবা খেলছিল টুপুর। খেলা তো নয়, যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেই দুপুর থেকে, রবিবারের বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধে, এখনও লড়াই থামার কোনও লক্ষণ নেই। টক্কর চলছে সমানে-সমানে দুপক্ষেরই স্নায়ু টানটান, একটা কী হয়, কী হয় ভাব। কালো বোড়েটাকে ষষ্ঠ ঘরে ঠেলে দিয়ে টুপুর একবার চোরা চোখে দেখে নিল পার্থমেসোকে। মাথাখানা চৌষষ্টি খোপের বোর্ডর উপর ঝুঁকে পড়েছে, ভুরুতে ইয়া মোটা ভাঁজ। হবেই তো। মেসোর হাল এবারও মোটেই সুবিধের নয়। টুপুর খুইয়েছে একটা গজ, একটা ঘোড়া, আর দুখানা বোড়। ওদিকে মেসোর দুটো হাতিই খতম, তিন-তিনখানা সাদা বোড়ে অক্কা পেয়েছে, সাদা মন্ত্রীরও ল্যাজে-গোবরে দশা।
মেসোকে আরও চাপে ফেলতে টুপুর তাড়া লাগাল, কী গো, আর কত ভাববে? মুভ করো।
পার্থ গম্ভীর মুখে বলল, দাঁড়া, দাঁড়া। সব দিকটা বুঝে নিই।
কম্পিটিশনে খেললে তুমি কিন্তু টাইম প্রবলেমে পড়ে যাবে। কোথাও তোমায় এত সময় দেবে না।
খুব ডেঁপো হয়েছিস তো! আমাকে নিয়ম শেখাচ্ছিস? পার্থর দৃষ্টি তেরচা হল, কবে থেকে দাবায় এত ওস্তাদ বনে গেলি রে? অবনীদার সঙ্গে রোজ প্র্যাক্টিস করিস বুঝি?
বাবা আজকাল থোড়াই দাবা খেলেন।
তা হলে কি তোর মাসির ট্রেনিং?
টুপুর মুচকি হাসল। পার্থমেসোকে কেন বলতে যাবে, মিতিনমাসির টিপস সে পাচ্ছে বটে, কিন্তু আদতে তার উন্নতি তো ঘটেছে কম্পিউটারের সঙ্গে খেলে-খেলে। এই তো, এ বাড়িতে আসার পর, গত সাতদিনে আরও কত নতুন-নতুন চাল যে শিখল। নানান ধরনের ডিফেন্স, নয়া-নয়া কৌশলে আক্রমণ…I কম্পিউটারের শিক্ষা থেকেই তো এবার রক্ষণব্যুহ সাজিয়েছে। নিমো-ইন্ডিয়ান কায়দায়, যা ভেদ করতে হিমশিম খাচ্ছে মেসো।এখন একবার যদি ভুল করে মন্ত্ৰীটাকে পিছিয়ে নেয়…।
হ্যাঁ, তাই হল। মন্ত্রী কোনাকুনি দুধাপ হঠে গিয়েছে। ব্যস, টুপুরকে আর পায় কে। লাফিয়ে উঠল কালো ঘোড়া, আড়াই ঘরের মোক্ষম প্যাঁচে একসঙ্গে পাকড়াও করেছে সাদা মন্ত্ৰী আর নৌকোকে। মেসোর মাথায় হাত। চুল খামচাচ্ছে।
ঠিক তখনই হুড়মুড়িয়ে বুমবুমের প্রবেশ। পার্কে ফুটবল পেটাতে গিয়েছিল, বিস্তর আছাড় খেয়েছে, সর্বাঙ্গ ধুলোকাদায় মাখামাখি। সটান টুপুরের পাশে বসে পড়ে বলল, ও মা, তোমরা এখনও খেলছ?
পার্থ গোমড়া গলায় বলল, সোফা নোংরা কোরো না বুমবুম। যাও, জামা-প্যান্ট বদলে এসো।
বুঝেছি। বুমবুম ফিচেল হাসল, তুমি টুপুরদিদির কাছে হারছ।
চোপ! যাও এখান থেকে।
বুমবুম পলকে ধাঁ। পার্থর ধমক শুনে এবার মিতিন আবির্ভূত হয়েছে। চোখ ঘুরিয়ে বলল, ব্যাপারটা কী? হঠাৎ চেঁচামেচি কেন? টুপুরের সঙ্গে পারছ না বুঝি?
পাৰ্থ অপ্রস্তুত হয়েছে এতক্ষণে। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আরে দুর, টুপুরের সঙ্গে আবার পারাপারির কী আছে! ছোটদের জিতিয়ে দিলে তবেই তো তারা খেলায় উৎসাহ পাবে।
ভুলভাল যুক্তি সাজিয়ো না, মিতিন ফিক করে হাসল, দাবাটা ছোটরাই ভাল খেলে স্যার। তারা অনায়াসেই বড়দের পটকে দেয়। কেন বলো তো?
ছোটদের মাথায় প্যাঁচপয়জারগুলো ভাল খেলে বোধ হয়।
আজ্ঞে না স্যার। ছোটদের মেমরি ব্যাঙ্কের স্টক কম, কিন্তু যেটুকু তাদের মেমরিতে থাকে, সেটুকু তারা সঙ্গে-সঙ্গে স্মরণে আনতে পারে। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক দেখবে, অতিরিক্ত মেমরির ভারে হ্যাং করে যায়। আমাদের, বড়দের হয় সেই দশা। ছোটরা অবলীলায় সম্ভাব্য ষাট-পয়ষট্টিটা চাল মাথায় রেখে সেই অনুযায়ী আক্ৰমণ শানিয়ে যায়। বড়রা কিন্তু তা পারে না। তাই একটা বয়সের পর ফিশার-কাসপারভদের মতো প্রতিভাধরদেরও দাবার আসর থেকে সরে যেতে হয়। অথচ এঁরাই পনেরো-ষোলো বছর বয়সে দুনিয়া কাঁপিয়েছিলেন। তিরিশ পেরোবার আগেই হয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
রাইট, রাইট। পার্থ উজ্জীবিত হয়েছে, বিশ্বনাথন আনন্দই তো কম বয়সে…। কিংবা আমাদের ঘরের ছেলে সূর্যশেখর বা দিব্যেন্দু…
অতএব বুঝতে পারছ, টুপুরের কাছে হারায় কোনও লজ্জা নেই।
যাঃ, লজ্জা পাব কেন? টুপুরের মাথায় আলগা চাপড় দিল পাৰ্থ, মন দিয়ে দাবাটা খেল রে টুপুর। তোর হবে। আমাকে যখন দু-দুবার হারাতে পেরেছিস…. জানিস তো, আমি খুব একটা হেঁজিপেজি প্লেয়ার নই। আন্ডার ফিফটিনের স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে…
তুমি লাস্ট হয়েছিলে, তাই তো? মিতিন ফোড়ন কাটল।
নো। আমার নীচে আরও দুজন ছিল। পার্থ হা হা হাসছে, যাক গে, একটু গরম-গরম কফি খাওয়াবে?
দিচ্ছি। কিন্তু তোমাদের খেলাটা যে এবার বন্ধ করতে হবে।
কেন?
আমার কাছে এক্ষুনি একজন আসবেন।
কে?
জনৈক আর্মেনিয়ান মহিলা।
আর্মেনিয়ান? তিনি তোমার সন্ধান পেলেন কী করে?
হয়তো কাগজে পড়ে। কিংবা কোনও ম্যাগাজিন-ট্যাগাজিন। আমার থার্ড আইয়ের নাম তো এখন একেবারে অপরিচিত নয়।
দাবা ভুলে গিয়েছে টুপুর। টগবগ করে ফুটছে উত্তেজনায়। চোখ গোল-গোল করে বলল, তা হলে একটা নতুন কেস বলো? আমার সামার ভেকেশনটা তা হলে মাঠে মারা যাচ্ছে না?
ধীরে মিস ওয়াটসন, ধীরে। আগে তিনি পায়ের ধুলো দিন, তাঁর সমস্যাটা কী শুনি, আদৌ তাঁকে ক্লায়েন্ট হিসেবে নেব কিনা ভেবে দেখি… তারপর না হয় নাচনকোদনটা শুরু করিস।
তা মিতিন যতই জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করুক, টুপুরের কৌতূহল কিন্তু নিবল না। একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে সে। মিতিন রান্নাঘরে যেতেই পার্থমেসোকে জিজ্ঞেস করল, আর্মেনিয়ান মহিলার কী কেস হতে পারে বলো তো?
পাৰ্থ দাবার ঘুঁটি বাক্সে পুরছিল। ঠোঁট উলটে বলল, কী করে আন্দাজ করি বল। দু-চার দিনের মধ্যে লোকাল আর্মেনিয়ানদের নিয়ে কোনও ঘটনা কাগজে বেরিয়েছে কিনা তাও তো মনে পড়ছে না। তবে এটুকু বলতে পারি, আর্মেনিয়ানরা মূলত বেনিয়া। অর্থাৎ কেসটা ধরলে তোর মাসির টু পাইস আসবে।
মিতিন শুনতে পেয়েছে কথাগুলো। গলা উঠিয়ে বলল, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল কোরো না। কলকাতার আর্মেনিয়ানরা মোটেই তেমন বড়লোক নন। অন্তত এখন যাঁরা থাকেন। এবং এদের অধিকাংশই বয়স্ক। অনেকে চার্চ থেকে সাহায্য পান, আবার কেউ কেউ ক্রিস্টানদের হোম-টোমেও আছেন।
পার্থ বলল, যাচ্চলে, তা হলে তুমি মহিলাকে আসতে বললে কেন? বেগার খাটবে নাকি?
মিতিন ফের গলা তুলে বলল, ঠিকঠাক কেস হলে এই প্রজ্ঞাপারমিতা মুখার্জি কখনওই টাকার হিসেব করে না স্যার।
এ কথা জজেও মানে। টুপুর মনে-মনে সায় দিল। নয়নয় করে কম কেসে তো মাসির শাগরেদি করল না সে। স্রেফ অর্থপ্রাপ্তির আশায় মিতিনমাসি কোনও রহস্যের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছে, এমনটা কি কখনও দেখেছে? এই তো, গত বছরই কী দারুণ একটা কেরামতি দেখাল। বিয়ের বাহাত্তর ঘণ্টা আগে কনের নেকলেস উধাও। মাত্র এক দিনেই মিতিনমাসি উদ্ধার করে আনল কণ্ঠহার। গরিব মেয়েটার বাবার কাছ থেকে একটা পয়সাও নেয়নি মিতিনমাসি। তেমন অভাগা কেউ এলে মিতিনমাসি অবশ্যই এবারও টাকা নিয়ে মাথা ঘামাবে না।
দাবার বোর্ড আর ঘুঁটি রাখতে গিয়েছিল পার্থ। ফিরে সোফায় হেলান দিয়েছে। বিজ্ঞ ভঙ্গিতে বলল, কলকাতার সঙ্গে আর্মেনিয়ানদের কিন্তু একটা নাড়ির টান আছে।
টুপুর নড়ে বসল, কী রকম?
সাদা চামড়াদের মধ্যে ওরাই কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা। ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, দিনেমারদের ঢের আগে ওরা এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। প্রত্যক্ষ প্রমাণও আছে। জব চার্নক আমাদের এই শহরে এসেছিলেন ষোলোশো নব্বইতে। তার অন্তত ষাট বছর আগে কলকাতায় এক আর্মেনিয়ান মহিলাকে সমাধি দেওয়া হয়। মহিলার নাম ছিল রেজা বিবি। বিশ্বাস না হয় আর্মেনিয়ান চার্চের গোরস্থানে গিয়ে সমাধিফলকটা দেখে আসতে পারিস।
ছোট ট্রে-তে কফি সাজিয়ে মিতিন হাজির। কাপগুলো হাতেহাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,তাতে কিছুই প্রমাণ হয় না স্যার। একটা মাত্ৰ সমাধি দেখেই ধরে নেব, আর্মেনিয়ানরা তখন এখানে বাস করত?
কেন ধরব না শুনি?
গির্জার সমাধিক্ষেত্রে ওই সময়কার আর কোনও আর্মেনিয়ানের সমাধি নেই, তাই। ইতিহাস বলছে, ওখানে নেক্সট সমাধি আছে সতেরোশো কুড়িতে। মাঝে আশি-নব্বই বছরে আর একজনও আর্মেনিয়ান মারা যাননি বলতে চাও? কফিতে চুমুক দিয়ে মিতিন টুপুরের দিকে ফিরল,আসলে কী হয়েছিল জানিস? কলকাতা তো তখন ঘোর জঙ্গল। বনজঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে গোটাকয়েক গ্রাম ছাড়া এখানে আর কি ছিল না। …আমার ধারণা, নদী দিয়ে তখন হয়তো কোনও আর্মেনিয়ান জাহাজ যাচ্ছিল, ওই মহিলা কোনও অসুখবিসুখে জাহাজে মারা যান, কাছেই ডাঙায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তারপর যখন শহরটা গড়ে উঠল, তখন ওই সমাধিটা খুঁজে পেয়ে আর্মেনিয়ানরা ওখানেই একটা চার্চ প্রতিষ্ঠা করলেন।
পার্থ ভুরু কুঁচকে বলল, তার মানে আর্মেনিয়ান চার্চ পরে হয়েছে?
অবশ্যই। রেজা বিবি মারা গিয়েছেন ষোলোশো তিরিশে। আর চাৰ্চটা তৈরি হয়েছে সতেরোশো চব্বিশে। মাঝে চুরানব্বইটা বছরের ব্যবধান, বুঝলে।
তর্কে জুত করতে না পেরে পার্থ গুম। টুপুর মুগ্ধ চোখে মিতিনকে বলল, তুমি আর্মেনিয়ানদের সম্পর্কেও এত খবর রাখো?
মিতিন চোখ টিপে বলল, ধুস, আমিও কি এত জানতাম নাকি? মহিলা কাল ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পর ইন্টারনেট ঘেঁটে মগজব্যাঙ্কটাকে একটু ভারী করে নিলাম। তোর মেসো তো পুরনো কলকাতার উপর হেভি ফান্ডা লড়ায়, ওকেও একটু চিপে দেওয়া গেল।
এবার পার্থও হেসে ফেলেছে। মিতিনকে পালটা খোঁচা দেওয়ার জন্য জিভে শান দিতে যাচ্ছিল, ডোরবেল টুংটাং।
টুপুর অস্ফুটে বলল, মহিলা এসে গেলেন নাকি?
মনে হচ্ছে। মিতিন দেওয়ালঘড়িটা দেখল, খুব পাংচুয়াল তো! সাড়ে ছটায় আসবেন বলেছিলেন, একেবারে কাঁটায়কাঁটায়।
মাসি-বোনঝির কথার মাঝেই পাৰ্থ গিয়ে দরজা খুলেছিল। আহ্বান জানিয়ে যে মহিলাকে অন্দরে নিয়ে এল, সে কিন্তু মোটেই প্ৰবীণা নয়। বড়জোর মিতিনের বয়সি, দু-এক বছরের ছোটও হতে পারে। দেখে দীনদরিদ্র ভাবাও অসম্ভব। রীতিমতো ঝকঝকে চেহারা, তকতকে বেশবাস। গায়ের রংটি পাকা গমের মতো। কোঁকড়া-কোঁকড়া একমাথা কুচকুচে কালো চুল টানটান করে বাঁধা। নীলচে চোখে বিদেশিনী-বিদেশিনী আভাস। পরনে লং স্কার্ট, আর ফুলহাতা বাহারি টপ। দুটোই যথেষ্ট মহার্ঘ। হাতে কালো ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলছে। ব্যাগের গায়ে নামী ইতালিয়ান কোম্পানির মনোগ্রাম।
মিতিন উঠে সৌজন্যের সুরে বলল, আই অ্যাম প্ৰজ্ঞাপারমিতা মুখার্জি। ইউ ক্যান কল মি মিতিন।
আই অ্যাম হাসমিক। হাসমিক ভারদোন। ডিম্বাকৃতি মিষ্টি মুখখানায় হাসি ফুটেছে। ইংরেজি টান মেশানো বাংলায় বলল, আর্মেনিয়ানে হাসমিক মানে ইংরেজিতে জেসমিন। আমাকে সবাই জেসমিন বলেই ডাকে।
নাইস নেম। প্লিজ টেক ইওর সিট।
জেসমিন ছোট সোফাটায় বসেছে। একটু যেন আড়ষ্ট। পার্থ আর টুপুরের সঙ্গে জেসমিনের পরিচয় করিয়ে দিয়ে মিতিন বলল, কফি চলবে?
নো থ্যাংক্স। আমি চা-কফি খুব কম খাই।
অ্যাজ ইউ প্লিজ।
টেবিলে পড়ে থাকা কফির ট্রে-টা ডাইনিং টেবিলে রেখে এল মিতিন। এক গ্লাস জলও এনেছে। টেবিলে গ্লাসটা নামিয়ে বড় সোফাটায় বসল। টুপুরের পাশে। কেজো গলায় বলল, হ্যাঁ, এবার শোনা যাক আপনার প্রবলেমটা কী?
পার্থ আর টুপুরকে এক ঝলক দেখে নিয়ে জেসমিন বলল, কীভাবে যে স্টার্ট করি… আমি থাকি মারকুইস স্ট্রিটে…।
নিজেদের বাড়ি?
না। আমার আঙ্কল, মানে পিসেমশাইয়ের বাড়ি। অনেক বছর ধরেই পিসি-পিসেমশাইয়ের সঙ্গে আছি। ওঁদের কোনও সন্তান নেই তো, আমিই ওঁদের মেয়ের মতো।
আপনার বাবা-মা…?
নেই। রাশিয়া ভেঙে যখন আবার আর্মেনিয়া স্বাধীন হল, আমাকে পিসির কাছে রেখে বাবা-মা একবার দেশটা দেখতে যান। ওখানেই এক প্লেন ক্ৰ্যাশে দুজনে একসঙ্গে…। জেসমিন কপালেবুকে হাত ছুইয়ে ক্রস আঁকল, তখন আই ওয়াজ সিক্সটিন। তারপর থেকে আঙ্কল-আন্টির কাছেই থাকি।
বিয়ে করেননি?
এখনও হয়ে ওঠেনি।
আঙ্কেল-আন্টির দেখভাল করার জন্যেই কি…?
খানিকটা হয়তো তাই। জেসমিন হালকা নিশ্বাস ফেলল, আর এই মুহূর্তে তো বিয়ের প্রশ্নই ওঠে না।
কেন?
রিসেন্টলি আঙ্কল মারা গেলেন। গত বাইশে ডিসেম্বর। জাস্ট তিন মাস হয়েছে।
ও। কী হয়েছিল আঙ্কলের?
হার্ট অ্যাটাক। হসপিটালে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পাইনি।
কত বয়স হয়েছিল?
নট মাচ। ওনলি সেভেনটি থ্রি।
মিতিনমাসির প্রশ্ন করার ধারাটা লক্ষ করছিল টুপুর। ক্ৰমাগত কথা চালাচালি করে কী সুন্দরভাবে সহজ করে দিচ্ছে জেসমিনকে। সঙ্গে-সঙ্গে জানা হয়ে যাচ্ছে ছোটখাটো তথ্য। যা হয়তো আপাতচোখে অদরকারি, আবার কাজে লেগে যেতে পারে।
আলাপচারিতার ফাঁকে জেসমিন কখন যেন হাতে তুলে নিয়েছিল গ্লাসটা। জলটুকু শেষ করে একটুক্ষণ চুপ। তারপর গলা ঝেড়ে বলল, হ্যাঁ, যা বলতে আসা। আমরা খুব বিপদে পড়েছি ম্যাডাম।
কী রকম?
একটা হিরে ছিল বাড়িতে। আঙ্কলের মৃত্যুর পর থেকে সেটা মিসিং।
হিরে? পাৰ্থ ফস করে বলে উঠেছে, কত বড়?
প্ৰায় পাঁচ ক্যারাট।
টুপুরের চোখ পিটপিট! বলে কী জেসমিন? অত বড় একটা হিরে গায়েব?
.
০২.
মিতিন অবশ্য তেমন অবাক হয়নি। যেন এমন একটা কিছুই সে জেসমিনের মুখে শুনবে বলে আশা করেছিল। ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে হেলান দিল সোফায়। স্বাভাবিক স্বরে বলল, আমাকে হিরেটা উদ্ধার করে দিতে হবে, তাই তো?
জেসমিন উৎকণ্ঠিত মুখে মিতিনকে দেখছিল। মিনতির সুরে বলল, হ্যাঁ, ম্যাডাম। অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
এক্ষুনি-এক্ষুনি কথা দিতে পারছি না। আগে সাফ-সাফ কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর চাই।
বলুন কী জানতে চান?
ডায়মন্ডটা এজাক্টলি কবে খোওয়া গিয়েছে?
আঙ্কলের মৃত্যুর পর আন্টি সিন্দুকটা প্রথম খোলেন পঁচিশে ডিসেম্বর সকালে। তখনই আবিষ্কার করেন হিরের বাক্সটা খালি।
অমন একটা দামি স্টোন বাড়িতে থাকত কেন?
তিন পুরুষ ধরে ওটা তো আয়রন চেস্টেই ছিল ম্যাডাম।
ইনশিওরেন্স করানো হয়নি নিশ্চয়ই?
থাকলে কি আর আপনার কাছে আসতাম?
ইনশিওরেন্স কোম্পানিতে ক্লেম ঠুকে বসে থাকতেন, তাই তো? সেটা সোজাও হত অনেক। মিতিন টানটান, কিন্তু কেন ইনশিওরেন্স করানো হয়নি?
বলতে পারব না। ইনশিওরেন্সের ব্যাপারটা কখনও মাথাতেই আসেনি। চিরকালই শুনে আসছি, আরাকিয়েল পরিবারের গুড লাক হিসেবে হিরে আয়রন চেস্টে আছে, থাকবে…।
পাৰ্থ জিজ্ঞেস করল, আপনার পিসেমশাইয়ের টাইটেল বুঝি আরাকিয়েল?
হ্যাঁ স্যার। আঙ্কলের পুরো নাম জোসেফ মেলিক আরাকিয়েল। ওঁরা কলকাতার খুব পুরনো বাসিন্দা। প্রায় সওয়া দুশো বছর আগে ওঁদের পূর্বপুরুষ মিস্টার আগা ক্যাচিক আরাকিয়েল কলকাতার আর্মেনিয়ান চার্চকে একটা বড় ঘড়ি উপহার দেন। গির্জার পাঁচিলটাও ওঁরই পয়সায় তৈরি।
বলেন কী? পার্থর চোখ গোল-গোল, আরাকিয়েল ফ্যামিলি দু-আড়াইশো বছর ধরে কলকাতায়?
না না, মাঝে সুরাটে চলে গিয়েছিলেন। আঙ্কলের গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। মারকুইস স্ট্রিটের বাড়িটা তাঁরই তৈরি। হিরেটাও তাঁর সময় থেকেই ও বাড়িতে।
বুঝলাম। মিতিনের কপালে পাতলা ভাঁজ, তা হিরে চুরির তিন মাস পরে আমার কাছে এলেন যে বড়?
আগে পুলিশেরই দ্বারস্থ হয়েছিলাম ম্যাডাম। তারা তো এখনও কিছুই করে উঠতে পারল না। থানায় গেলেই শুধু শুনতে হয়, হচ্ছে-হচ্ছে, আমরা তো তদন্ত চালাচ্ছি…! এদিকে আন্টির তো চিন্তায়-চিন্তায় শরীর ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। একে আঙ্কলকে হারানোর শোক, তার উপর ওই হিরে…। মরিয়া হয়ে ভাবলাম যদি কোনও প্রাইভেট ডিটেকটিভের সাহায্য নেওয়া যায়…। আমার এক বাঙালি বন্ধু আপনার নামটা সাজেস্ট করল। ইনফ্যাক্ট, কালই আপনার ফোন নাম্বার পেয়েছি।
উম। পুলিশকে কবে ইনফর্ম করেছিলেন?
ওই দিনই। পঁচিশে ডিসেম্বর।
পুলিশ কি সঙ্গে সঙ্গেই এল?
তা এল। প্রচুর জেরা করল সবাইকে। আন্টিকেও বাদ দেয়নি।
চাবি আর সিন্দুকের ফিংগারপ্রিন্ট নেয়নি?
সবই করেছিল ম্যাডাম। আবার কিছুই করেনি। অর্থাৎ কিস্যু পায়নি।
মানে?
চাবি আর সিন্দুকে তো তখন শুধু আন্টির হাতের ছাপ।
হুম। তা চাবি কি আন্টির কাছেই থাকত?
না না, চাবি তো সর্বদাই আঙ্কলের জিন্মায়। কোমরে বাঁধা থাকত। সিন্দুকও আঙ্কল ছাড়া কেউ খুলতেন না। তবে এখন চাবি আন্টির হাতে এসেছে।
এখন মানে কখন?
অবশ্যই আঙ্কলের মৃত্যুর পর।
আপনার পিসেমশাইয়ের হার্ট অ্যাটাকটা কখন হয়েছিল?
রাতে। শোওয়ার পর। চেস্ট পেন ওঠার মিনিট পনেরো-কুড়ির মধ্যেই তো সব শেষ।
তখন বাড়িতে আপনারা কে কে ছিলেন?
আমি, আন্টি আর নির্মলা।
নির্মলাটি কে?
নিৰ্মলা মেরি বিশ্বাস। আমাদের হাউস মেড। রাতদিন থাকে। বাড়ির লোকের মতোই হয়ে গিয়েছে।
অর্থাৎ আঙ্কল যখন মারা যান, বাড়িতে আপনারা তিনজনই…
তা কেন, ডাক্তারবাবুও ছিলেন। ডাক্তারের হাতের উপরেই তো আঙ্কল…। ফোনে খবর পেয়ে হ্যারিও প্রায় সঙ্গে-সঙ্গে চলে এল।
হ্যারি…?
আঙ্কলের দাদার ছেলে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে থাকে। কারনানি ম্যানশনে। এ ছাড়া নির্মলা ঘাবড়ে গিয়ে ভাড়াটেদের খবর দেয়। তারাও এসে গিয়েছিল।
আপনাদের কজন ভাড়াটে?
দুটো ফ্যামিলি। একতলায় থাকে।
তারাও কি আর্মেনিয়ান?
এই শহরে আর্মেনিয়ান আর কোথায় ম্যাডাম। কমতে কমতে সাকুল্যে আমরা এখন একশোজন হব কিনা সন্দেহ। বেশির ভাগই হয় অস্ট্রেলিয়ায় কেটে পড়েছে, নয়তো ব্যাক টু আর্মেনিয়া। জেসমিনের মুখে বিষগ্ন হাসি, আমাদের টেনেন্টদের মধ্যে একটা ফ্যামিলি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, অন্যটি কেরালাইট ক্রিস্টান।
আর কে এসেছিল সেদিন?
বাহাদুর… মানে আমাদের দারোয়ান এক-দুবার দোতলায় উঠেছিল। ডাক্তারবাবু যে ইঞ্জেকশনটা লিখে দিয়েছিলেন, বাহাদুরই দৌড়ে গিয়ে কিনে আনে। ওষুধটা অবশ্য পুশ করার আর সময় পাওয়া যায়নি।
তার মানে সেদিন রাত্তিরে আপনাদের বাড়িতে অনেক লোক?
হ্যাঁ, যাদের কথা বললাম। ভাড়াটেরা আসা-যাওয়া করছিল, হ্যারি তো থেকেই গেল। ও হ্যাঁ, হ্যারির বউ সুজানও এসেছিল। ভোর রাতে।
আপনারা কি সারারাত আঙ্কলের ডেডবডির পাশে ছিলেন?
কেউ না-কেউ তো ছিলই। হয় নির্মলা, নয় হ্যারি, কিংবা একতলার কেউ। আমি ঢুকছি, বেরোচ্ছি… মাঝে অবশ্য ঘণ্টা খানেকের জন্য নিজের ঘরে গিয়েছিলাম। আন্টি খুব কান্নাকাটি করছিলেন তো, তাই জোর করে তাঁকে আমার ঘরে শোওয়াতে হয়েছিল। আন্টির মাথায় হাত বোলাতে-বোলাতে কখন আমারও চোখ দুটো একটু জড়িয়ে আসে। সুজান আসার পরে অবশ্য জেগে যাই। তারপর তো একের পর-এক আত্মীয়, প্রতিবেশী, আর বন্ধুরা আসতে শুরু করল।
ফিউনারেল কি পরদিনই হয়েছিল?
হ্যাঁ। সকালেই বডি পিস হ্যাভেনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সব ব্যবস্থা-ট্যবস্থা করে সূর্যাস্তের আগেই… জেসমিন রুমালের খুঁটে চোখের কোল মুছল। শুকনো হেসে বলল, এর পর আপনি কী প্রশ্ন করবেন, আমি জানি ম্যাডাম। ..হ্যাঁ, পিস হ্যাভেনে পাঠানোর আগে আঙ্কলকে যখন সুট পরানো হচ্ছে, তখনই সুজান আঙ্কলের কোমর থেকে সিন্দুকের চাবিটা খুলে আন্টির হাতে দেয়। যদ্দুর জানি, আন্টি তারপর থেকে চাবি আর কাছছাড়া করেননি।
মিতিন হেসে ফেলল, ভালই থট রিডিং পারেন দেখছি।
তা নয় ম্যাডাম। বেশ কয়েকবার পুলিশের কাছে এই ভাইটাল কোয়েশ্চেনটার উত্তর দিতে হয়েছে যে।
পার্থ বলল, হবেই তো। ওটাই তো আসল পয়েন্ট। একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝতে পারবে, রাত্তির থেকে ভোরের গ্যাপটুকুর মধ্যে হিরেটাকে সরানো হয়েছে। মিস্টার আরাকিয়েলের কোমর থেকে চাবি নিয়ে সিন্দুক খুলে হাতানো এবং সিন্দুক লক করে আবার চাবি কোমরে খুঁজে দেওয়া, এ তো জাস্ট মিনিট কয়েকের কাজ।
পুলিশও তো তাই বলছে। যুক্তিও। জেসমিন দুদিকে মাথা নাড়ল, কিন্তু আমার মন যে কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। ভেবেই পাচ্ছি না, শোকের মুহূর্তে কে ওই অপকর্ম করতে পারে!
আপনার মনটা বোধ হয় একটু বেশি সরল মিস ভারদোন!
পার্থ ভুরুতে ঢেউ খেলাল, ভেবে দেখুন, সেই রাত্তিরে যারা ডেডবডির কাছাকাছি ছিল, তারা সকলেই তো ডায়মন্ডটার কথা জানত?
তা ঠিক। তবে…।
তবেটবে কিছু নেই। লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ কী না করতে পারে। আমার তো মাথাতেই ঢুকছে না, কী করে আপনার পিসেমশাই ওরকম একটা দামি জিনিস ঘরে রাখার সাহস পেয়েছিলেন। সেদিন নয় ডামাডোল ছিল, এমনি দিনেই তো এটা যে-কোনও সময় চুরি-ডাকাতি হয়ে যেতে পারত।
না, সেটা বোধ হয় সহজ ছিল না। আঙ্কল অসম্ভব সাবধানি ছিলেন। বাইরের লোক তো দূরস্থান, আমাদের কারওর সামনে উনি সিন্দুক খুলতেন না। এমনকী আন্টির সামনেও নয়। তা ছাড়া সিন্দুকে সিকিউরিটি অ্যালার্মের বন্দোবস্ত আছে। চাবি ছাড়া খোলা বা ভাঙার চেষ্টা করলে সাইরেন বেজে উঠবে।
কিন্তু চাবিটার জন্য তো উনি যে-কোনও দিন মার্ডারও হয়ে যেতে পারতেন।
সে ভয় তো ছিলই। আমি আর আন্টি কতবার বুঝিয়েছি… বলেছি, ব্যাঙ্কের ভল্টে রেখে আসতে… আঙ্কল শুনতেনই না। হিরেটা বাড়িতে না থাকলে সংসারে নাকি অমঙ্গল হবে।
টুপুর ফস করে বলে উঠল, আপনি কখনও হিরেটা দেখেছেন?
একবার। অস্ট্রেলিয়া থেকে ওঁর এক কাজিন এসেছিলেন, তাঁর পীড়াপীড়িতেই বের হয়েছিল।
কেমন দেখতে?
অনেকটা পায়রার ডিমের মতো। তবে আর-একটু ছোট। গোটা গা নিখুঁতভাবে কাটা-কাটা। পালিশটাও অসাধারণ। বাক্স খুললেই ঝলমল করে ওঠে। ওই অপরূপ হিরে চুরি যাওয়াটা যে কত দুর্ভাগ্যের…
জেসমিনের বাক্য শেষ হল না, মিতিনের মোবাইল ঝংকার তুলেছে। সেলফোন কানে চেপে উঠে গেল মিতিন। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা সারছে।
টুপুর জেসমিনকে দেখছিল। কথা থামিয়ে বসে আছে চুপচাপ। মাথা ঝুঁকিয়ে। গোলাপি নেল-পলিশ লাগানো নখে আঙুল বোলাচ্ছে আনমনে। বোঝাই যায়, ভারী উদ্বেগে রয়েছে। একে পিতৃসম পিসেমশাইয়ের আকস্মিক মৃত্যু, তায় একখানা আস্ত হিরে লোপাট, জেসমিনের তো বিচলিত হয়ে পড়া স্বাভাবিক। বেচারা।
মিতিন ফিরেছে। মোবাইল ফোন টেবিলে রেখে কোনও ভূমিকা না করেই বলল, হ্যাঁ, কেসটা আমি নিচ্ছি।
বিষাদের ছায়া সরে পলকে জেসমিনের মুখে অনাবিল হাসি। কৃতজ্ঞ স্বরে বলল, সো কাইন্ড অফ ইউ। এই মুহূর্তে আপনার মতো একজন নামী গোয়েন্দাকেই আমাদের প্রয়োজন। আন্টি অবশ্যই এবার মনে খানিকটা বল পাবেন।
আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব, মিতিন মিষ্টি করে হাসল, কবে আপনাদের বাড়ি যাওয়া যায় বলুন তো? কাল?
কালকের দিনটা বাদ দিন ম্যাডাম। পরশু আসুন। কাল আমার কিছু বিজনেস অ্যাসাইনমেন্ট আছে।
আপনি ব্যবসা করেন বুঝি?
তেমন বড় কিছু নয়। নিজেই ডিজাইন করে শৌখিন মোমবাতি বানাই। নিউ মার্কেট আর নতুন শপিং-মলগুলোয় দুচারটে বাঁধা দোকান আছে, ক্যান্ডেলগুলো তাদের সাপ্লাই দিই। বলতে বলতে ভ্যানিটিব্যাগ থেকে ভিজিটিং কার্ড বের করেছে জেসমিন। মিতিনকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এতে বাড়ির অ্যাড্রেস আর ফোন নাম্বারটাও পেয়ে যাবেন। আর ডিরেকশনটা হল, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট দিয়ে মারকুইস স্ট্রিটে ঢুকে…।
আমি চিনে নেব। তা হলে পরশুই যাচ্ছি? বিকেলে? অ্যারাউন্ড সিক্স?
ও কে। আন্টিকে আমি আজই জানিয়ে রাখছি। জেসমিন উঠে পড়ল। দরজার দিকে যেতে গিয়েও থমকেছে। ঘুরে ঈষৎ সংকোচের সুরে বলল, ম্যাডাম, আপনার ফিজটা…?
পরে সেটল করব। আগে কাজ তো স্টার্ট করি।
তবু… এখন একটা অ্যাডভান্স…।
পরশু তো যাচ্ছি। তখন দেখা যাবে।
খটখটিয়ে হিল বাজিয়ে জেসমিন চলে যেতেই পার্থ গজগজ করে উঠেছে, তোমার কোনও দিন আক্কেল হবে না?
মিতিন ভ্রুকুটি হানল, কেন?
মিস হাসমিক ভারদোনের পেট থেকে আরও কিছু ইনফরমেশন টেনে আনব ভাবছিলাম। তুমি এমন তাড়া দিয়ে ভাগালে…।
নতুন কী জানতে, শুনি?
আটমসফিয়ারটা। যাদের-যাদের নাম করল, তাদের কাকে কাকে সন্দেহ করা উচিত… তারা সব কে কেমন লোক… হিরের প্রতি কার কতটা লোভ আছে…।
হিরের উপর লোভ? মিতিন শব্দ করে হেসে উঠল, সে তো দুনিয়ার সবার। চান্স পেলে তুমি, আমি হিরে চুরি করে ফেলব কিনা তার ঠিক আছে?
হাহ, তোমার দৌড় জানা। অ্যাডভান্সের টাকাটাও তো ছেড়ে দিলে।
ঠিকই তো। টুপুর সায় দিল, আরাকিয়েল ফ্যামিলির যথেষ্ট পয়সা আছে। টাকা তোমার নেওয়াই উচিত ছিল।
টাকা তো এসেই যাবে। মিতিন চোখ নাচাল, তা হ্যাঁ রে, হাঁ করে জেসমিনের কথা তো গিললি। কিছু বুঝলি কি?
কেস তো সোজা। তুমি একটু সুতো নাড়লেই কালপ্রিট ধরা পড়ে যাবে।
অত জলভাত নয় রে টুপুর। আমার তো ধারণা, প্যাঁচ একটা আছে।
কী রকম?
দেখা যাক।
মিতিন উঠে বুমবুমের খাবার গরম করতে গেল। পার্থও রিমোট টিপে টিভি চালিয়েছে। চুপচাপ বসে ভাবছিল টুপুর। প্যাঁচের কথা বলল কেন মিতিনমাসি? এই কেসে কী ধরনের প্যাঁচ থাকতে পারে?
টুপুর জোরে-জোরে মাথা ঝাঁকাল। নাহ, মগজে কিছু আসছে না।