সতী
নিশিশেষে কৃতান্ত কহিল দ্বার ঠেলি’—
‘ছাড় পথ হে কল্যাণী, আনিয়াছি রথ,
জীর্ণ দেহ হতে আজি পতিরে তোমার
মুক্তি দিব। ধৈর্য্য ধর, শান্ত কর মন।’
কৌতুকে কহিল সতী—‘দেখি দেখি রথ।’
সসম্ভ্রমে বলে যম—‘দেখ দেখ দেবী,
রথশয্যা মাতৃঅঙ্কসম সুকোমল
ব্যথাহীন শান্তিময় বিশ্রাম-নিলয়,
কোনো চিন্তা করিও না হে মমতাময়ী।’
চকিতে উঠিয়া রথে বসে সীমন্তিনী
বিদ্যুৎ-প্রতিমা সম। শিরে হানি’ কর
বলে যম—‘কি করিলে কি করিলে দেবী!
নামো নামো, এ রথ তোমার তরে নয়।’
দৃপ্তস্বরে বলে সতী—‘চালাও সারথি,
বিলম্ব না সহে মোর, বেলা বহে যায়।’
বিমূঢ় শমন কহে—‘যথা আজ্ঞা সতী।’
উল্কাসম চলে রথ জ্যোতির্ম্ময় পথে,
স্তব্ধ বসুন্ধরা দেখে কোটি চক্ষু মেলি’।
প্রবেশি’ অমরলোকে জিজ্ঞাসে শমন—
‘হে সাবিত্রীসমা, বল আর কি করিব?’
কহে সতী—‘ফিরে যাও আলয়ে আমার,
যার তরে গিয়াছিলে আনো শীঘ্র তারে।’
যার তরে গিয়াছিলে আনো শীঘ্র তারে।’
কৃতান্ত কহিল—‘অয়ি মৃত্যু-বিজয়িনী,
নিমেষে যাইব আর আসিব ফিরিয়া।’
১৬।৪।১৯৩৪
১৫ই এপ্রিল ১৯৩৪ একই সঙ্গে মৃত্য হয় রাজশেখরের একমাত্র সন্তান ‘প্রতিমা’ ও জামাতা অমরনাথ পালিতের। তার পরদিনই এই নিয়ে রাজশেখরের রচনা ‘সতী’।