কাশীনাথের জন্মান্তর

কাশীনাথের জন্মান্তর

প্রায় দেড় শ বৎসর আগেকার কথা। তখন কলকাতার বাঙালী হিন্দুসমাজের নানারকম পরিবর্তন আরম্ভ হয়েছে কিন্তু তার কোনও লক্ষণ রাঘবপুর গ্রামে দেখা দেয় নি, কাশীনাথ সার্বভৌম সেই গ্রামের সমাজপতি, দিগগজ পণ্ডিত, যেমন তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান তেমনি বিষয়বুদ্ধি। তাঁর সন্তানরা কলকাতা হুগলি বর্ধমান কৃষ্ণনগর মুরশিদাবাদ প্রভৃতি নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে, কিন্তু তিনি নিজে তাঁর গ্রামেই থাকেন, জমিদারি দেখেন, তেজারতি আর দেবসেবা করেন, একটি চতুষ্পাঠীরও ব্যয় নির্বাহ করেন।

একদিন শেষরাত্রে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, তাঁর ইষ্টদেবী কালীমাতা আবির্ভূত হয়ে বলছেন, বৎস কাশীনাথ, তোমার বয়স শত বর্ষ অতিক্রম করেছে, তুমি সুদীর্ঘকাল ইহলোকের সুখদুঃখ ভোগ করেছ। আর কেন, এখন দেহরক্ষা কর।

কাশীনাথ বললেন, মা কৈবল্যদায়িনী, এখন তো মরতে পারব না। আমার জাজ্বল্যমান সংসার, চতুর্থ পক্ষের স্ত্রী এখনও বেঁচে আছেন। আঠারোটি পুত্রকন্যা, এক শ পঁচিশটি পৌত্র পৌত্রী দৌহিত্র দৌহিত্রী। প্রপৌত্র প্রদৌহিত্র প্রভৃতি বোধ হয় হাজার খানিক জন্মেছিল, তাদের অনেকে মরেছে কিন্তু এখনও প্রচুর জীবিত আছে। তাছাড়া বিস্তর শিষ্য আমার চতুষ্পাঠীতে পড়ে, আমি তাদের পালন ও অধ্যাপনা করি। এই সব স্নেহভাজনদের ত্যাগ করা অতীব কষ্টকর। তোমার জন্য একটি বৃহৎ মন্দির নির্মাণের সংকল্প করেছি, তাও উদযাপন করতে হবে। কলকাতার কিরিস্তানী অনাচার যদি এই গ্রামে প্রবেশ করে তবে আমাকেই তা রোধ করতে হবে। আমার ছেলেদের দিয়ে কিছু হবে না, তারা স্বার্থপর, নিজেদের ধান্দা নিয়েই ব্যস্ত। বয়স বেশী হলেও আমার শরীর এখনও শক্ত আছে। অতএব কৃপা করে আরও দশটি বৎসর আমাকে বাঁচতে দাও।

কালীমাতা, ভ্রূকুটি করে অন্তর্হিত হলেন।

পরদিন প্রাতঃকালে কাশীনাথ সার্বভৌমের চতুর্থ পক্ষের পত্নী রাসেশ্বরী বললেন, আজ যে তোমার তিনটি প্রপৌত্রপুত্র আর পাঁচটি প্রদৌহিত্রপুত্রের অন্নপ্রাশন, তার হুঁশ আছে? তুমি চট করে স্নান আহ্নিক সেরে এস, তোমাকেই তো হোমযাগ করতে হবে।

গঙ্গায় স্নান করে এসে কাতরকণ্ঠে কাশীনাথ বললেন, সর্বনাশ হয়েছে গিন্নী, কালসর্প আমাকে দংশন করেছে, আমার মৃত্যু আসন্ন। মা করালবদনী, এ কি করলে, হায় হায়, সংকল্পিত কর্ম সমাপ্ত না হতেই আমাকে পরলোকে পাঠাচ্ছ!

শাস্ত্রে বলে, যার যেমন ভাবনা তার তেমনি সিদ্ধিলাভ হয়। কাশীনাথ যদি শ্রীরামপুরের পাদরীদের কবলে পড়ে খ্রীষ্টান হতেন তবে মৃত্যুর পর শেষ বিচারের প্রতীক্ষায় তাঁকে সুদীর্ঘকাল জড়ীভূত হয়ে থাকতে হত, সরীসৃপাদি যেমন শীতকালে থাকে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি অতি নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন, সেজন্য তাঁর পারলৌকিক পরিণাম অবিলম্বে সংঘটিত হল।

মৃত্যুর পরেই কাশীনাথ উপলব্ধি করলেন, তিনি সূক্ষ্ম শরীর ধারণ করে শূন্যে অবস্থান করছেন, তাঁর প্রাণহীন দেহ অঙ্গনে তুলসীমঞ্চের সম্মুখে পড়ে আছে। তাঁর পত্নী আর আত্মীয়বর্গ চারিদিকে বিলাপ করছেন, প্রতিবেশীরা বলছেন, ওঃ, একটা ইন্দ্রপাত হল! ক্ষণকাল পরেই তিনি প্রচণ্ড বেগে ব্যোমমার্গে দক্ষিণ দিকে বাহিত হয়ে যমলোকে উপনীত হলেন।

যম বললেন, এস হে কাশীনাথ। তোমার সুকৃতি—দুষ্কৃতির বিচার এবং তদুপযুক্ত ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি, সংক্ষেপে বলছি শোন। পুণ্যকর্মের তুলনায় তোমার পাপকর্ম অল্প। রামগতি ভট্টাচার্যের জমির কিয়দংশ তুমি অন্যায় ভাবে দখল করেছিলে, তিন বার আদালতে মিথ্যা হলফ করেছিলে, প্রথম ও মধ্য বয়সে বন্ধুপত্নী ও বধুস্থানীয় কয়েক জনের প্রতি কুদৃষ্টিপাত করেছিলে, মুষিকের ন্যায় অজস্র সন্তান উৎপাদন করেছিলে, অন্তিম কাল পর্যন্ত বিষয়চিন্তায় মগ্ন ছিলে। এ ছাড়া আর যা করেছ সবই সৎকার্য। নিয়মিত দুর্গোৎসবাদি করেছ, গঙ্গাস্নান তীর্থভ্রমণ বারব্রতাদি এবং ব্রাহ্মণের যাবতীয় কর্তব্য পালন করেছ, কদাপি অখাদ্য ভোজন করনি। দুষ্কৃতির জন্য তুমি পঞ্চাশ বৎসর নরকবাস করবে, তারপর পুণ্যকর্মের ফল স্বরূপ এক শত বৎসর স্বর্গাবাস করবে। আচ্ছা, এখন যাও, কর্মফল ভোগ কর গিয়ে।

নির্দিষ্ট কাল নরকভোগ আর স্বর্গভোগের অন্তে কাশীনাথ পুনর্বার যমসকাশে আহুত হলেন। যম বললেন, ওহে কাশীনাথ, তোমার প্রাক্তন কর্মের ফলভোগ সমাপ্ত হয়েছে, এখন তোমাকে পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে। বিধাতা তোমার উপর প্রসন্ন, তুমি অভীষ্ট কুলে জন্মগ্রহণ করতে পারবে। বল, কি প্রকার জন্ম চাও, ধনী বণিকের বংশধর হয়ে, না দরিদ্র জ্ঞানী ধর্মাত্মার পুত্র রূপে, না শুচীনাং শ্রীমতাং গেহে?

কাশীনাথ উত্তর দিলেন, ধর্মরাজ, মৃত্যুকালে আমার অনেক কামনা অতৃপ্ত ছিল। দয়া করে এই ব্যবস্থা করুন যাতে আমার বর্তমান বংশধরের গৃহেই প্রত্যাবর্তন করতে পারি। আমার প্রপৌত্রের পুত্র শ্রীমান ভবানীচরণ আমার অতিশয় স্নেহভাজন ছিল, তারই সন্তান করে আমাকে ধরাধামে পাঠান।

যম বললেন, কি বলছ হে কাশীনাথ! জীবিত কালেই তুমি অধস্তন পাঁচ পুরুষ পর্যন্ত দেখেছিলে। তোমার মৃত্যুর পর দেড় শ বৎসর কেটে গেছে, তাতে আরও ছ পুরুষ হয়েছে। এখন যে বংশধর সে তোমার সপিণ্ডও নয়, তার সঙ্গে তোমার কতটুকু সম্পর্ক? তার পুত্র হয়ে জন্মালে তোমার কি লাভ হবে? আরও তো ভাল ভাল বংশ আছে।

কাশীনাথ বললেন, প্রভু, দয়া করে সেই অধস্তন একাদশসংখ্যক বংশধরের গৃহেই আমাকে পাঠিয়ে দিন। ব্যবধান যতই থাকুক, সে আমার তথা শ্রীমান ভবানীচরণের সন্তান, অতীব স্নেহের পাত্র। তাকে দেখবার জন্য আমি উৎকণ্ঠ হয়ে আছি।

—তুমি তাকে চিনবে কী করে? তোমার বর্তমান স্মৃতি তো থাকবে না, জ্ঞানহীন ক্ষুদ্র শিশু রূপে প্রসূত হয়ে তুমি ক্রমে ক্রমে বড় হবে, জ্ঞানার্জনও করবে, কিন্তু বিগত কালের সঙ্গে তোমার নবজীবনের যোগ থাকবে না।

—প্রভু, আমার প্রার্থনাটি অবধান করুন। নারীগর্ভে ন মাস দশ দিন বাস করার পর শিশু রূপে ভূমিষ্ঠ হতে আমি চাই না। জ্ঞানবান জাতিস্মর করেই আমাকে পাঠিয়ে দিন।

—মরবার সময় তোমার বয়স এক শ বৎসরের কিঞ্চিৎ অধিক হয়েছিল। সেই বয়স নিয়েই জন্মাতে চাও নাকি?

—আজ্ঞে না। জরাজীর্ণ স্থবির হয়ে যদি পৃথিবীতে যাই তবে নবজন্ম কদিন ভোগ করব? আমাকে পঁচিশ—ত্রিশ বৎসরের যুবা করে পাঠিয়ে দিন।

—তোমার আকাঙ্ক্ষা অতি অদ্ভুত। গর্ভবাস করবে না, যুবা রূপে নবজন্ম লাভ করবে, পূর্বস্মৃতি বিদ্যমান থাকবে, বর্তমান বংশধরের গৃহে অকস্মাৎ অবতীর্ণ হবে। এই তো তুমি চাও?

—আজ্ঞে হ্যাঁ।

—আচ্ছা, তাই হবে। দেখাই যাক না এর ফল কি হয়। তোমার গোত্র কি?

—ভরদ্বাজ।

যমরাজ মুহূর্তকাল ধ্যানমগ্ন হয়ে রইলেন, তারপর বললেন, ধরাধামে অনেক সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে। তুমি যদি স্বাভাবিক নিয়মে শিশু রূপে ভূমিষ্ট হতে তবে ক্রমে ক্রমে বর্তমান অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যেতে। কিন্তু অদৃষ্টপূর্ব সমাজে হঠাৎ অবতরণের ফলে সংকটে পড়বে। তোমার অসুবিধা যাতে অত্যাধিক না হয় তার জন্য আমি যথাসম্ভব ব্যবস্থা করছি।

যম তাঁর এক অনুচরকে বললেন, আজ দ্বিপ্রহর রাত্রিতে এই জীবাত্মা ত্রিশ বৎসরের যুবা রূপে ধরাধামে ফিরে যাবে। একে পশ্চিমবঙ্গের আধুনিক ভাষা শিখিয়ে দাও, সেই সঙ্গে কিঞ্চিৎ অপভ্রষ্ট ইংরেজী আর হিন্দীও। বর্তমান কালের উপযুক্ত পরিচ্ছদ, নিতান্ত প্রয়োজনীয় অন্যান্য বস্তু, এবং প্রচুর অর্থও একে দেবে। একটি নিষ্ক্রান্তি বটিকাও দেবে। তারপর কলিকাতা নগরীতে নিয়ে গিয়ে শ্রীমধুসূদন রোডে তিন নম্বর বাড়ির ফটকের সামনে একে সুপ্ত অবস্থায় রেখে দেবে। ওহে কাশীনাথ, তোমার বংশধর চক্রধর মুখুজ্যের কাছে তোমাকে পাঠাচ্ছি। তোমার পূর্বনামই বজায় থাকবে। যদি দেখ যে বর্তমান সমাজব্যবস্থা তোমার পক্ষে কষ্টকর, কিছুতেই তুমি সইতে পারছ না, তবে নিষ্ক্রান্তি বটিকাটি খেয়ো। তা হলে তৎক্ষণ যমলোকে ফিরে আসবে এবং অবিলম্বে পুনর্বার সনাতন রীতিতে জন্মগ্রহণ করবে।

চক্রধর মুখুজ্যে ধনী লোক, বাস্তুবিবর্ধন করপোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, তিন নম্বর শ্রী মধুসূদন রোডে তাঁর প্রকাণ্ড বাড়ি। সকালে আটটার আগে তিনি বিছানা ছেড়ে ওঠেন না, কিন্তু আজ ভোর বেলায় তাঁর স্ত্রী সরূপা ঠেলা দিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে দিলেন। চক্রধর জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে?

—নীচে গোলমাল হচ্ছে শুনতে পাচ্ছ না? বারান্দায় দাঁড়িয়ে খোঁজ নাও কি হয়েছে। আমার বাপু ভয় করছে।

চক্রধর বারান্দা থেকে দেখলেন গেটের সামনে অনেক লোক জমা হয়ে কলরব করছে। প্রশ্ন করলেন, কি হয়েছে লালবাহাদুর?

দারোয়ান লালবাহাদুর বলল, কে একজন বাবু ফটকের সামনে রাস্তার উপর পড়ে আছে, বেঁচে আছে কি মরে গেছে বোঝা যাচ্ছে না।

নেমে এসে চক্রধর দেখলেন, তাঁর বাড়ির ফটকের ঠিক বাইরে একটা চামড়ার ব্যাগ মাথায় দিয়ে আগন্তুক বেহুঁশ হয়ে শুয়ে আছে। বার কতক জোর ঠেলা দিতেই লোকটি মিটমিট করে তাকাল তারপর আস্তে আস্তে উঠে হাই তুলে তুড়ি দিয়ে বলল, তারা ব্রহ্মময়ী করালবদনী, কোথায় আনলে মা?

চক্রধর বললেন,কে হে তুমি? এখন নেশা ছুটেছে? কি খেয়েছিলে, মদ না চণ্ডু?

—আমি শ্রীকাশীনাথ মুখোপাধ্যায় সার্বভৌম, আবার এসে পৌঁছেছি। তুমিই চক্রধর? শ্রীমান ভবানীচরণের বংশধর? আহা, কত বড়টি হয়েছ! ঘরে চল বাবাজী, সব কথা বলছি।

কাশীনাথের আত্মকথা শুনে চক্রধর স্থির করলেন, লোকটা নেশাখোর নয়, মিথ্যাবাদী জুয়াচোরও নয়, কিন্তু এর মাথা খারাপ। প্রশ্ন করলেন, তোমার ওই ব্যাগে কি আছে?

—তা তো জানি না, তুমিই খুলে দেখ। এই যে, আমার পইতেতে চাবি বাঁধা রয়েছে, খুলে নাও।

চক্রধর ব্যাগ খুললেন। গোটাকতক ধুতি গেঞ্জি পাঞ্জাবি, একটা এণ্ডির চাদর, একজোড়া চটি, একটা গামছা, আরশি চিরুনি ইত্যাদি। নীচে একটা পোর্টফোলিও। সেটা খুলে চক্রধর আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, প্রায় পাঁচ লাখ টাকার গভর্নমেণ্ট কাগজ এবং ভাল ভাল শেয়ার, নগদ দু হাজার টাকার নোট আর দশ টাকার আঁধুলি সিকি আনি ইত্যাদি।

—সব তোমারই নামে দেখছি। কি করে পেলে।

—কিছুই জানি না বাবাজী, সবই জগদম্বার লীলা আর যমরাজের ব্যবস্থা।

চক্রধর অনেকক্ষণ ভাবলেন। লোকটি পাগল হলেও গুছিয়ে কথা বলে। একে হাতছাড়া করা চলবে না, বাড়িতেই রাখতে হবে, চিকিৎসাও করাতে হবে। বয়স তো বেশী নয়, বড় জোর ত্রিশ। তাঁর একমাত্র মেয়ের বিবাহ হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর ভাইঝি তো রয়েছে! এই কাশীনাথের সঙ্গে বিয়ে দিলে সেই বাপ—মা—মরা মেয়েটার একটা চমৎকার গতি হয়ে যায়। পাঁচ লাখ টাকার ইনভেস্টমেণ্ট কি সোজা কথা! লোকটা যদি তিন বৎসর আগে আসত তবে চক্রধর নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতেন।

চক্রধর বললেন, শোন হে কাশীনাথ। তুমি আমার পূর্বপুরুষ হলেও আপাতত আমার চাইতে অনেক ছোট, তোমার বয়স বোধ হয় ত্রিশ হবে, আর আমার হল গিয়ে ষাট। তোমার ইতিহাস আমি জানলুম, কিন্তু আর কাকেও ব’লো না, লোকে তোমাকে পাগল ভাববে। তুমি আমার জ্ঞাতি, ছেলেবেলায় তোমাদের পাড়াগাঁ থেকে এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে পালিয়েছিলে, এখন সন্ন্যাসে অরুচি হওয়ায় আমার আশ্রয়ে এসেছ, এই তোমার পরিচয়! তুমি আমাকে বলবে কাকাবাবু, আমি তোমাকে বলব কাশী বাবাজী। তোমার সম্পত্তির কথা খবরদার কাকেও বলবে না, বুঝলে?

কাশীনাথ বললেন, হাঁ বুঝেছি। কিন্তু তোমার বাড়ীতে আমি থাকব কি করে? তুমি তো দেখছি স্লেচ্ছ হয়ে গেছ। পেঁয়াজের গন্ধ পাচ্ছি, পাশের জমিতে মুরগী চরছে। একটি প্রৌঢ়াকে দেখলুম, চটি জুতো পরে চটাং চটাং করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল, ঘোমটা নেই, প্যাঁটপ্যাঁট করে আমার দিকে চাইল।

—উনি তোমার কাকীমা।

—ও তা বেশ। কিন্তু স্ত্রীলোক জুতো পরে কেন? ঘোর কলি।

—ঠিক বলেছ বাবাজী, ঘোর কলি। এই কলিযুগের সঙ্গেই তোমাকে মানিয়ে চলতে হবে।

—তুমি বোধ হয় মুসলমান বাবুর্চীর রান্না খাও? তা আমি মরে গেলেও খেতে পারব না।

—না, না, বাবুর্চী আছে বটে, কিন্তু মুসলমান নয়, হরিজন, জাতে চামার।

—রাধামাধব! আমি স্বপাকে খাব, আজ শুধু ফলার। আমার থাকবার আলাদা ব্যবস্থা করে দাও।

—বেশ তো, আমার বাড়ির নীচের তলায় পূর্ব দিকের অংশে তুমি থাকবে, এক বারে আলাদা আর নিরিবিলি।

চক্রধর ডাকলেন, চন্দনা, ও চন্দনা।

একটি মেয়ে ঘরে এল। চক্রধর বললেন, এটি আমার ভাইঝি। প্রণাম কর রে, ইনি তোর কাশী দাদা, দূর সম্পর্কে আমার ভাইপো!

চন্দনা প্রণাম করে চলে গেল। কাশীনাথ বললেন, তোমাদের কাণ্ড কিছুই বুঝতে পারছি না। মেয়েটার মাথায় সিঁদুর নেই কেন? কপাল পুড়েছে নাকি।

চক্রধর বললেন, না, না, ওর বিয়েই হয়নি। খুব ভাল মেয়ে, বি.এ. পাস করেছে।

—দুর্গা দুর্গা! এত বড় ধাড়ী মেয়ের বিবাহ হয় নি? বিবি বানাচ্ছ দেখছি।

—আচ্ছা কাশীনাথ, তোমার বিবাহের মতলব আছে তো?

—আছে বইকি। একজন ভাল ঘটক লাগাও।

—আমার ভাইঝি এই চন্দনাকে বিয়ে কর না?

—তুমি উন্মাদ হলে নাকি চক্রধর? এক গোত্রে বিবাহ হবে কি করে? তা ছাড়া ও রকম বেয়াড়া স্ত্রী আমার পোষাবে না। সদবংশের লজ্জাবতী নিষ্ঠাবতী মেয়ে চাই। বিদ্যার দরকার নেই, রান্না আর ঘরকন্নার সব কাজ জানবে, বারব্রত পালন করবে, তোমার গিন্নী আর ভাইঝির মতন ধিঙ্গী হলে চলবে না।

—মুশকিলে ফেললে কাশীনাথ। তুমি যেরকম পাত্রী চাও তেমন মেয়ে ভদ্র ঘরে আজকাল লোপ পেয়েছে। আচ্ছা, যতটা সম্ভব তোমার পছন্দসই পাত্রীর জন্যে আমি চেষ্টা করব। এখন তুমি স্নান আর সন্ধ্যা—আহ্নিক সেরে আহারাদি কর।

চক্রধর মুখুজ্যে ভাবতে লাগলেন। লোকটা পাগল, কিন্তু কথাবার্তা অসংলগ্ন নয়, সেকেলে মতিগতি হলেও বুদ্ধিমান বলা চলে। আশ্চর্য ব্যাপার, কাশীনাথ অত টাকা পেল কোথা থেকে? যাই হক, ওকে আটকে রাখতে হবে, সম্পত্তি যাতে আমার কাছেই গচ্ছিত রাখে তার ব্যবস্থা করতে হবে। চন্দনার সঙ্গে বিয়ে হলে খাসা হত, একেবারে আমার হাতের মুঠোয় এসে পড়ত। ওর পছন্দমত পাত্রীই বা পাই কোথায়? সেকেলে নিষ্ঠাবতী মেয়ে হবে, পাগল স্বামীকে সামলাবে, আবার আমার বশে চলবে। হঠাৎ চক্রধরের মাথায় একটা বুদ্ধি এল? আচ্ছা, গয়েশ্বরীর সঙ্গে বিয়ে দিলে হয় না? তার তো খুব নিষ্ঠা আর আচার—বিচার, বুদ্ধি খুব, আমাকেও খাতির করে, সব বিষয়ে আমার মত নেয়। টাকার লোভে কাশীনাথকে বিয়ে করতে হয়তো রাজী হবে। কিন্তু বয়সের তফাতটা যে বড্ড বেশী।

গয়েশ্বরী সম্পর্কে চক্রধরের ভাগনী, জেঠতুতো বোনের মেয়ে। বয়স প্রায় পঞ্চাশ হলেও এখনও তিনি কুমারী। বাপ মা অল্প বয়সে মারা গেলে চক্রধরই অভিভাবক হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে ভাগনীর তত্ত্বাবধান বেশী দিন করতে হয় নি। গয়েশ্বরী অসাধারণ মহিলা, অল্প লেখাপড়া আর নানা রকম শিল্পকর্ম শিখেই তিনি স্বাবলম্বিনী হলেন। তাঁর নারীবস্ত্রশালা খুব লাভের ব্যবসা। পাঁচজন উদবাস্তু মেয়ে আর দুজন দরজী গয়েশ্বরীর দোকানে কাজ করে, তিনটে সেলাই—এর কল চলে, খদ্দেরের খুব ভিড়। চক্রধর অনেক বার ভাগনীর বিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু গয়েশ্বরী বলেছেন, ও সব হবে না, আমি কত কষ্ট করে ব্যবসাটি খাড়া করেছি, আর এখন একটা উটকো মিনসে এসে কর্তামি করবে তা আমি সইব না। চক্রধর স্থির করলেন, খুব সাবধানে কথাটা পাত্র আর পাত্রীর কাছে পাড়তে হবে।

দৈবক্রমে চার দিন পরেই কাশীনাথ আর গয়েশ্বরীর একটা সংঘর্ষ হয়ে গেল।

চক্রধরের বাড়ির একতলায় পূর্বদিকের অংশে কাশীনাথ স্বতন্ত্র হয়ে বাস করতে লাগলেন। তিনি স্বপাকে খান, চক্রধরের একজন পুরনো চাকর তাঁর ফরমাশ খাটে। একদিন সকালবেলা প্রাতঃকৃত্য সেরে কাশীনাথ গড়িয়াহাট মার্কেটে বাজার করতে গেছেন। জামাইষষ্ঠীর জন্যে সেদিন বাজারে খুব ভিড়। কাশীনাথ অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে ভাবছিলেন, এ যে ঘোর কলি, বারো আনা সের বেগুন! সব জিনিসই অগ্নিমূল্য, দেশে মন্বন্তর হয়েছে নাকি? কাশীনাথ দুটি কাঁচকলা কিনবেন বলে ভিড়ের মধ্যে সাবধানে অগ্রসর হচ্ছিলেন এমন সময় অকস্মাৎ থপাস করে গয়েশ্বরীর সঙ্গে তাঁর কলিশন হল।

কাশীনাথের অপরাধ নেই। তিনি রোগা বেঁটে মানুষ, পিছনের ভিড়ের ঠেলা সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পড়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় গয়েশ্বরী উল্টোদিক থেকে আসছিলেন। তিনি স্থূলকায়া, সুতরাং তাঁর দেহেই পতনোন্মুখ কাশীনাথের ধাক্কা প্রতিহত হল। গয়েশ্বরী পড়ে গেলেন না, অত্যন্ত রেগে গিয়ে বললেন, আ মরণ ছোঁড়া, নেশা করেছিস নাকি? ভদ্রলোকের মেয়ের গায়ে ঢলে পড়িস এতদূর আস্পর্ধা!

কাশীনাথ বললেন, ক্ষমা করবেন ঠাকরুন, ভিড়ের চাপে এমন হল, আমি ইচ্ছে করে অপরাধ করি নি।

গয়েশ্বরী বললেন, একশ বার অপরাধ করেছিস, হতভাগা বেহায়া বজ্জাত!

এক দল লোক গয়েশ্বরীর পক্ষ নিয়ে এবং আর এক দল কাশীনাথের হয়ে তুমুল ঝগড়া আরম্ভ করল। গয়েশ্বরীকে অনেকেই চেনে। একজন টিকিধারী পুরুত ঠাকুর বললেন, ও গয়া দিদি, ব্যাপারটি তো সোজা নয়, তোমাকে প্রায়শ্চিত্তির করতে হবে।

চার—পাঁচ জন চিৎকার করে বলতে লাগল, নিশ্চয় নিশ্চয়। তুমি লোকটা কে হে, পাড়াগাঁ থেকে এসেছ বুঝি! ধাক্কা লাগাবার আর মানুষ পেলে—না, গয়েশ্বরী দেবীর গায়ে ঢলে পড়লে কোন আক্কেলে? এক্ষুনি বার কর পঞ্চাশটি টাকা, প্রায়শ্চিত্তের খরচ, নইলে তোমার নিস্তার নাই।

এইসময়ে চক্রধরের চাকর এসে পড়ায় কাশীনাথ বেঁচে গেলেন। পুরুত ঠাকুরটি বললেন, তা বেশ তো, গয়া দিদি আর এই কাশীনাথ ছোকরা দুজনেই যখন চক্রধরবাবুর আপনার লোক তখন তিনিই একটা মীমাংসা করবেন।

চক্রধর মুখুজ্যে বোঝেন যে তপ্ত অবস্থায় ঘা দিলেই লোহার সঙ্গে লোহা জুড়ে যায়। তিনি কালবিলম্ব না করে প্রথমে তাঁর ভগিনীকে প্রস্তাবটি জানালেন। গয়েশ্বরী আশ্চর্য হয়ে বললেন, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি মামা? চক্রধর সবিস্তারে জানালেন, লোকটা বাতিকগ্রস্ত হলেও ভালমানুষ, সহজেই পোষ মানবে, আর তার বিস্তর টাকাও আছে। বয়স কম তাতে হয়েছে কি? আজকাল ও সব কেউ ধরে না। গয়েশ্বরী অতি বুদ্ধিমতী মহিলা, মামার প্রস্তাবটি সহজেই তাঁর হৃদয়ংগম হল। পরিশেষে বললেন, তা ও ছোঁড়া যদি রাজী হয় তো আমার আর আপত্তি কি, লোকে কি বলবে তা আমি গ্রাহ্য করি না।

কাশীনাথ অত সহজে বাগ মানলেন না। বললেন, কি পাগলের মতন বলছ চক্রধর কাকা! গয়েশ্বরীর বয়স যে আমার প্রায় ডবল। সেকালে কুলীন কন্যার অমন বিবাহ হত বটে, কিন্তু আমি তো পেশাদার পাণিগ্রাহী নই।

চক্রধর বললেন, বেশ করে সব দিক ভেবে দেখ কাশী বাবাজী। মেয়েটি অতি নিষ্ঠাবতী, সব রকম বারব্রত পালন করে, মায় আমড়া—ষষ্ঠী পর্যন্ত। দরজীর দোকান চালায় বটে, কিন্তু ওর চালচলন তোমারই মতন সেকেলে। দোকানটা তোমারই হাতে আসবে, তোমার আয় বেড়ে যাবে!

—কিন্তু বয়সের যে আকাশ—পাতাল তফাত।

—খুব ঠিক কথা। তোমার ইতিহাস যা বলেছ তাতে তোমার আসল বয়েস এখন দু শ পঞ্চাশের বেশী, আর গয়েশ্বরীর মোটে উনপঞ্চাশ। তোমার তুলনায় ও তো খুকী। আরও বুঝে দেখ, তোমার শরীরটাই জোয়ান, কিন্তু মনটা দু সেঞ্চুরি পিছিয়ে আছে। গয়েশ্বরীর সঙ্গে তোমার মনের মিল সহজেই হবে। আরও একটা কথা, আধুনিক পণ্ডিতরা বলেন, মেয়েদের পূর্ণযৌবন হয় পঞ্চাশের পরে। মর্তমান কলা খেয়েছ তো? পাকলেই সুতার হয় না। যার খোসাটি কালচিটে হয়ে কুঁচকে গেছে, শাঁসটি মজে গিয়ে একটু নরম হয়েছে, সেই পরিপক্ক কলাই অমৃত। মেয়েরাও সেই রকম। এখনকার পঞ্চাশীর কাছে তোমাদের সেকেলে ষোড়শী—টোড়শী দাঁড়াতেই পারে না।

চক্রধরের যুক্তি শুনে কাশীনাথ ধীরে ধীরে বশে এলেন। একটু চিন্তা করে বললেন, আমি যখন মারা গিয়েছিলাম তখন আমার চতুর্থ পক্ষের স্ত্রী রাসেশ্বরীর বয়েস ছিল তোমার ভাগনী গয়েশ্বরীর মতন। এখন মনে হচ্ছে রাসেশ্বরী গয়েশ্বরী হয়ে ফিরে এসেছে। আচ্ছা, তুমি ঘটক লাগাতে পার।

—আমিই তো ঘটক। গয়েশ্বরীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, সে রাজী আছে। এখন পাকা দেখাটা হয়ে গেলেই বিবাহ হতে পারবে। আজ বিকেল বেলা তুমি তার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে আলাপ ক’রো।

—তোমারও উপস্থিত থাকা চাই চক্রকাকা।

—না, না, তা দস্তুর নয়, তোমরা দুজনে আলাপ করবে।

কাশীনাথকে দেখে গয়েশ্বরী একটু হেসে বললেন, কি হে ছোকরা, আমাকে মনে ধরেছে তো?

কাশীনাথ নীরবে উপরে নীচে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।

—তোমার নাকি পাঁচ লাখ টাকা আছে? শোন কত্তা, বিয়েটা চুকে গেলেই সব টাকা আমার হাতে দেবে। তুমি যে রকম ন্যালাখ্যাপা মানুষ তোমার হাতে টাকা থাকলে গেছি আর কি, লোকে সব ঠকিয়ে নেবে। আমার মামাবাবুটিকেও বিশ্বাস করি না।

কাশীনাথ বললেন, ভয় নেই গয়েশ্বরী ঠাকরুন, আমাকে ঠকাতে পারে এমন মানুষ ভূভারতে নেই। যা মতলব করেছি বলি শোন। মেয়েছেলের দোকানদারি ভাল নয়, বিয়ের পর তোমার দোকানটা বেচে দেব। তার টাকা আর আমার যা আছে তা দিয়ে তেজারতি করব। চক্রকাকা বলেন আজকাল জমিদারি কেনা যায় না। তোমার কোনও অভাব রাখব না, এক গা গহনা গড়িয়ে দেব। এই কলকাতা হচ্ছে অসুরের শহর, ভয়ংকর জায়গা, আমরা রাঘবপুর গ্রামে গিয়ে বাস করব। বাড়ি বাগান পুকুর গোয়াল সব হবে, একটি দেবমন্দির আর চতুষ্পাঠীও হবে।

গয়েশ্বরী হাত নেড়ে ঝংকার করে বললেন, আ মরিমরি, কি মতলবই ঠাউরেছ ঠাকুর মশাই! পাগল কি আর গাছে ফলে, তুমি একটি আস্ত উন্মাদ পাগল। শোন হে ছোকরা, তোমার স্ত্রী হলেও আমি বয়সে বড়, গুরুজন তুল্যি। আমার হেপাজতে তুমি থাকবে, আমার বশেই তোমাকে চলতে হবে।

কাশীনাথ কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলেন, তারপর ‘তারা ব্রহ্মময়ী’ রক্ষা কর মা’ বলেই চলে গেলেন।

সন্ধ্যাহ্নিকের পর কাশীনাথ ইষ্টদেবীকে নিজের অবস্থা নিবেদন করলেন।— এ কি বিপদে ফেললে মা! তোমারই বা দোষ কি, নিজের কুবুদ্ধিরই ফল ভোগ করছি। পৃথিবীতে কলি যে এত প্রবল হয়েছে তা তো ভাবতে পারি নি। ব্রাহ্মণের বাড়ি বাবুর্চী রাঁধছে, মুরগী চরছে, বুড়ী মাগীরা জুতো পরে খটমটিয়ে চলছে, ধাড়ী মেয়েরা ইস্কুলে যাচ্ছে। ছোট লোকের আস্পর্ধা বেড়ে গেছে, ব্রাহ্মণকে গ্রাহ্য করে না, সামনেই বিড়ি খায়। এখানে জাত ধর্ম কিছুই রক্ষা পাবে না। ওই গয়েশ্বরী একটা ভয়ংকরী খাণ্ডার মাগী, ওকে বিয়ে করলে আমার নরকভোগের আর বাকী থাকবে না। চক্রধর একটা পাষণ্ড কুলাঙ্গার, আমার বংশধর হতেই পারে না, যমরাজ নিশ্চয় ভুল করে ওর কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন। কালী কৈবল্যদায়িনী, উপায় বাতলাও মা।

শেষরাত্রে কাশীনাথ স্বপ্ন দেখলেন, তাঁর ইষ্টদেবী আবির্ভূত হয়ে হাত নেড়ে বলছেন, সরে পড় কাশীনাথ। তখনই কাশীনাথের ঘুম ভেঙে গেল। তিনি বুঝলেন, এই পাপ সংসারে ফিরে আসা তাঁর মস্ত বোকামি হয়েছে। মন স্থির করে কাশীনাথ তখনই যমদত্ত সেই নিষ্ক্রান্তি বটিকাটি গিলে ফেললেন এবং অবিলম্বে যমলোকে প্রয়াণ করলেন।

সকালবেলা কাশীনাথকে পরীক্ষা করে ডাক্তার বললেন, থ্রম্বোসিস। এত কম বয়সে বড় একটা দেখা যায় না, তবে পাগলদের এরকম হয়ে থাকে।

চক্রধর তখনই কাশীনাথের পইতে থেকে চাবি নিতে গেলেন, কিন্তু পেলেন না। তাড়াতাড়ি ব্যাগটা দখল করতে গেলেন, কিন্তু তাও খুঁজে পেলেন না। নিশ্চয় গয়েশ্বরী ভোগা দিয়ে সেটা হাতিয়েছে, এই ভেবে তিনি ভাগনীর বাড়ি ছুটলেন। দুজনের তুমুল ঝগড়া হল কিন্তু ব্যাগ পাওয়া গেল না। কাশীনাথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর যমদত্ত সম্পত্তি যম—সরকারে বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

১৮৭৮ শক (১৯৫৬)