জামাইবাবু ও বউমা

জামাইবাবু ও বউমা
(ন্যাকা ন্যাকা সুরে পড়িতে হইবে)
( By a Veteran )

সুত্রপাত

মানস সরসে কোথা স্বরস্বতি!
এস তাড়াতাড়ি করি গো মিনতি,
আজি হে ভারতি যতেক শকতি
গাহিব জামাইবাবুর গান।
কর অধিষ্ঠান পেনের ডগায়;
অতি চড়া সুর বাঁধো গো বীণায়।
শুন হে জামাই যে আছ যেথায়—
শুনিলে এতান জুড়াবে প্রাণ।
বউ আছ যত ঘরের কোনেতে,
জামাই-কাহিনী শুন কান পেতে;
তোমাদেরো কথা লিখিব শেষেতে,
কেহ নাহি আজ পাইবে পার।
হবে সব কথা রহিয়া রহিয়া,
যত আবরণ দিব গো খুলিয়া,
পেটের কথাটি আনিব টানিয়া;
যদি রাগ কর তবে নাচার।
সত্যতার ব্রতে হইয়াছি ব্রতী,
নাহি ভেদজ্ঞান সতী কি অসতী;
আজি এক গাড়ে গাড়িব সবারে—
জামাই বউমা শালাজ শালী।
পৃথিবীতে আছে নানাবিধ সঙ্
নানাবিধ সাজে করে কত ঢঙ্;
তাঁহাদের চাঁই বউমা জামাই,
তাঁদেরি চরণে দিনু এ ডালি।

অথ জামাইবাবুর পরিচয়

মা বাপের ছেলে যাদু বাছাধন,
কত যতনের একটি রতন।
চরিত্র নিখুঁৎ—যেন নীলাকাশ;
বিদ্যায় কি কম? ছেলে এলে পাশ।
রঙ বড় কাল কোন্ শালা বলে?
ন-হাজার টাকা দামের এ ছেলে!
শ্বশুরের খুব কপাল ভাল।
জন্মেছিল সেই পউষের শীতে,
পোয়াতী তখন কাতর জ্বরেতে।
পেঁচী ধাই ছিল,—মাগী বড় কাল,
তারি দুধ খেয়ে ছেলে হ’ল ভাল।
তা হলে কি হয়? কাল মাই খেয়ে
অমন যে রঙ—গেল মাটি হয়ে।
তা না হলে এরে কে বলে কাল।

মাথার অসুখ বাছার আমার
একজামিন দিতে পারেনি এবার।
কোবরেজ বলে পড়ে কায নাই,
মন ভাল থাক সেটা দেখা চাই।
শরীরের আগে পড়া ত নয়।
বয়েস কি বেশী? গেল পউষেতে
পা দিয়েছে বাছা মোটে তেইশেতে।
দুধের ছেলে এ—ষষ্‌টির দাস,
বেঁচে বত্তে থাক, নাই দিলে “পাশ”।
এখন বউমা এলেই হয়।

শ্বশুর লিখেচে পূজোর ছুটিতে
তাঁর কাছে যেতে হাওয়া বদ্‌লাতে।
পশ্চিমে এখন জলহাওয়া বেশ,
রেলে চড়ে যাবে নাই কোনো ক্লেশ;
পথ বেশী নয়, দুই দিনের।
রথ দেখা আর কলা বেচা হবে,
মন ভাল রবে শরীর সারিবে।
ভাল ডাক্‌তার সেইখানে আছে
কবিরাজ কোথা লাগে তার কাছে?
পাঁচনে টনিকে তফাৎ ঢের।
লেখাপড়া আর ভাল নাহি লাগে
বইগুনো দেখে হাড় জ্বলে রাগে।
জন্মিয়া অবধি জুটেছে জঞ্জাল
বহিতে হইবে আর কত কাল?
আর কায নাই এবারে থাক্।
রোজ রোজ আর বই হাতে করে
কলেজেতে যেতে মন নাহি সরে।
লেক্‌চার নোট হারিয়ে গিয়েছে,
অঙ্কের খাতাটি ইঁদুরে খেয়েচে।
দূর হোক্ ছাই চুলোয় যাক্।
কোথাকার এক বাঁকা প্যারাবোলা
ফোকস্ কোথায় জানে কোন্ শালা?
হাইপার বোলা খাক্ কাঁচকলা
মরুক এলিপ্স্ ঘোড়ার ডিম্।
BaCl2 + K2SO4
এ সকল জেনে কিবা লাভ মোর?
ফিজিক্স্ কেমিষ্ট্রী পড়ে গুলি খোর,
ফিজিক্স্ তেঁতুল কেমিষ্ট্রী নীম।
বিদ্যার ব্যাপারে পড়েছে ইস্তাফা
ও সকল দফা বহুদিন রফা।
জামা’য়ের কিরে ও সব পোষায়?
দুরকম জ্বালা নাহি সহা যায়।
বউ আর পড়া আদা কাঁচকলা,
বউ কাঁচপোকা পড়া আরসোলা।
পড়া কেলে হাঁড়ি বউ মোটা লাঠি
লেখা পড়া সব বউ করে মাটি।
আজ যা পড়ি তা কাল্‌কে ভুলি
পড়িতে কখনো মন নাহি লাগে
“কি যেন মু’খানি” হৃদয়েতে জাগে।
প্রাণ জ্বর জ্বর লভের জ্বালায়
বৌএর ভাবনা সর্বদা মাথায়।
কখন “কি যেন কি কথা” বলেচে
“কি যেন কি কথা” চিঠিতে লিখেচে।
ভালবাসে কি না বাসে প্রাণভরে
চিঠি দিতে কেন এত দেরি করে?
চিঠি নাহি এলে দুখ নাহি ঘোচে
চিঠি নাহি পেলে ভাত নাহি রোচে,
বৌএর চিঠি যে হজ্‌মি গুলি।
ভেবে ভেবে আহা মাথার অসুখ,
শরীর কাহিল মনে নাহি সুখ।
তাই বলি আর পড়ে কায নাই,
শ্বশুর বাড়িতে চলহে জামাই।
পরশু তরশু দিন ভাল নয়,
বার বেলা পড়ে নটার সময়।
কাল ত্রয়োদশী, দিনটাও ভাল,—
সেই বেশ কথা, কাল্‌কেই চল।
মিছে দেরি করে লাভ ত নেই।
কাল যেতে হবে কর তাড়াতাড়ি,
নাও হে গুছিয়ে খাবারের হাঁড়ি।
বোঁচ্‌কা বুঁচ্‌কি গেঁঠ্‌রি গেঁঠ্‌রা
চ্যাঙারি চুবড়ি বাক্‌স প্যাটরা।
এক গোছা টাকা শাশুরি প্রণামী,
একটা মোহর বৌএর সেলামী।
চাকরের তরে টাকা গোটা ছয়—
না না দশটাকা—যদি নিন্দে হয়!
প্রথম বারেতে বেশী দেওয়া চাই,
পরে না দিলেও কোনো ক্ষতি নাই;
শ্বশুরবাড়িতে ধারাই এই।

অথ যাত্রা

গড় গড় গড় মেল ট্রেন ধায়,
জামা’য়ের মন আগে আগে যায়।
এই যে হুগলী, ওই বর্দ্ধমান,
এই রাণীগঞ্জ—ওটা কোন স্থান?
দেরী নাহি সহে আর কত দূর?
আসান্সোল গেল, ওই মধুপুর।—
আঃ তবু ঘুম আসেনা ছাই।
মোকামা আসিল ঘুমে কায নাই,
পেটে বড় ক্ষিধে কি খাই কি খাই—
হোটেলেতে যেতে সাহস না হয়
দেরি হলে পাছে গাড়ি ছেড়ে যায়।
একটি হাঁড়িতে বাসি লুচি আছে,
সেটা থার্ড ক্লাসে চাকরের কাছে,—
চাকর বেটার দেখাই নাই।
ওই বাঁশী বাজে গাড়ি গেল ছেড়ে,
এই বারে বুঝি পেটে পিত্তি পড়ে।
পকেটেতে আছে ভাল বার্ডসাই,
বসে বসে কসে টানা যাক তাই।
বক্সর আসিলে ব্রেক্‌ফাস্ট্ হবে,
বাসি লুচি আলু পেটে কেন সবে ?
ন’টা বেজে হ’ল একুশ মিনিট,
তবু কেন দেরি—হাউ ইজ ইট ?
না না ওই ফের বাঁশী শোনা গেছে,
ডিস্টান্ট সিগ্নাল ছাড়িয়ে এসেছে।
আসিল স্টেশন, দাঁড়াল গাড়ি।
নামিল বাবু তড়বড় করে
হোটেলের দিকে চলিলেন জোরে।
দেরি হয়ে গেছে—নাইন হাফ্ পাস্ট্
খানসামা, খানসামা, লাও ব্রেকফাস্ট।
বহুতাচ্ছা বাবু, কোন্ চিজ চাহি ?
মটন কি বীফ ? আরে নেহি নেহি।
হিন্দু হ্যায় হাম—বীফ নেহি খাগা,
খানা খাগা কিন্তু জাত নেহি দেগা
মটন লে আও, বীফ নেহি খাতা,
কাহে তুম্ কহা অলক্ষুণে কথা ?–
যাতা হ্যায় হাম্ শ্বশুরবাড়ি !

পেঁয়াজের সহ মটনের কারী
গরম গরম ভাল লাগে ভারি।
কর তাড়তাড়ি–টাইম ওভার,
কাঁটা চামচেতে কাজ নাহি আর।
পুঁটিমাছ খেকো বাঙালীর ছেলে,
কাঁটা চামচেতে খেলে কি চলে ?
ইঁ হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ ওমা একি হল ?
হলুদের দাগ হাতে লেগে গেল !
বাহারে রুমাল গোঁজা আছে বুকে
মাখানো তাহাতে কাশ্মীর বোকে”।
কোন প্রাণে হাত মুছি গো তাহায় ?
শালা-শালী দেখে কি ভাবিবে হায় !
কি করি উপায় ? জয় জগন্নাথ—
টোবলের ক্লথে মুছে ফেল হাত।
এ বুদ্ধি কি আর জোটে না ছাই ?
আর দেরি নাই ছাড়ে বুঝি গাড়ি,
সিগারেট মুখে চল তাড়াতাড়ি।
বাবা–বাঁচা গেল, ধড়ে প্রাণ এল,
বোয়ের ভাবনা আবার জুটিল।
ভাবনা আসে না পেট খালি হলে
যতেক ভাবনা পেটটি ভরিলে।
তাই বিধবারা একাদশী করে,
তাই সন্ন্যাসীরা শুকাইয়া মরে
বে’র দিন লোকে খায় না তাই।

ঘড়্ ঘড়্ ঘড়্ ঝন্ ঝন্ ঝন্
কান ঝালাপালা হাড় জ্বালাতন।
সময় ত হ’ল আর দেরি নাই,
টেরীটা এবার ঠিক করা চাই।
মুখ ধুতে হবে সাবানের জলে,
এসেন্স একটু দিতে হবে চুলে।
কোঁচার ফুলটা হয়ে গেছে মাটি
সেটাকে আবার কর পরিপাটী।
সব কাজ হ’ল, বাকী কিছু আছে ?
চল একবার আয়নার কাছে।
কেমন দেখায় দেখি একবার—
বাঃ—এক্সেলেন্ট ! অতি চমত্কার !
এই সাজে যাব শ্বশুরবাড়ি।

আর কত দেরি ? আর যে সহে না
ধড়ে প্রাণ আর থাকিতে চাহে না।
না না না না না না ওই এল এল,
আর দেরি নাই হরি হরি বল।
ওই প্ল্যাটফরম্ ওই দেখা যায়,
শ্বশুর শালারা ওই যে বেড়ায় !
এইবারে গাড়ি ঢোকে ইস্টিসান
ভ্যাকুয়ম ব্রেকে পড়েছে কি টান ?
গুম্ গুম্ গুম্ কড়্ কড়্ কড়্
ঝড়াৎ হড়াৎ হড়্ হড়্ হড়্
ক্যাঁচ-ক্যাঁচ-কোঁ–থামিল গাড়ি।

অথ পদার্পণ

নামের জামাই গজেন্দ্র গমনে—
বাবাজি কোথায় ? —এই যে এখানে।
খবর ত সব ভাল তথাকার ?
পথে কোন কষ্ট হয়নি তোমার ?
“আজ্ঞে না। আপনি আছেন তো ভাল ?
এক রকম। আর দেরি কেন চল।
কোচম্যান কোথা ? গাড়ি নিয়ে আয়–
লগেজ আসিবে মুটের মাথায়।
বেলা পড়ে এলো গাড়ি হাঁকাও।
হ্যাট্ ট্যাক্ ট্যাক্ ছপাৎ ছপাৎ,
ঘোড়া বেটা বড় করে উত্পাত।
জামাই কুটুম কিছুই মানে না,
যখন তখন করে পাজিপনা।
অবশেষে খুব চাবুকের ঘায়,
গাড়ি লয়ে ঘোড়া অতি দ্রুত যায়।
অসার সংসার একমাত্র সার,
শ্বশুরবাড়ির গেট্ হল পার।
সবুর সবুর গাড়ি থামাও।

কোথায় আছিস ওরে ও ছেলেরা
জামাইবাবুকে ভেতরে নিয়ে যা।
বাহিরে এখন থেকে কাজ নাই,
ভিতরে আমার করুক জামাই।
দিতে বল ওরে জলখাবার।
ঠুংরী চালেতে চলেন জামাই,
মরি কি কায়দা বলিহারি যাই !
এইবারে রূপ করিব বর্ণনা,
এখন না হলে সময় হবে না।
রাত্তিরে জাগাতে সাহস কার ?

অথ রূপবর্ণনা

বারেক-দাঁড়াও হে বাপা-জীবন
নিরখি মুরতি জুড়াই নয়ন
আদরের ধন পতিত পাবন
অগতির গতি তুমি জামাই !
মুরতি তুলিতে ধরেছি ক্যামেরা
রূপ-নীর-ধারা ছুটিবে ফোয়ারা
হেরে চিত্তহারা হবে সবাই।
‘আরে কে হে তুমি কোথা হতে এলে
এ-সব ফ্যাসান কোথায় শিখিলে?
চাদরের ফুল শোভে কিবা বুকে,
শিরে কিবা টেরি চশমাটি নাকে ?
কচি কচি গোঁফ কচি কচি দাড়ি
কামিজেতে মোড়া নেয়াপাতি ভুঁড়ি।
সিল্কের কোট চিক্ মিক্ করে,
( পূজার সময় পান আর বারে। )
ঢাকাই কাপড় কোঁচায় বাহার
হাওয়া লাগিলেই সব একাকার।
ভিতরে একটা সেমিজ চাই।

কোটের বোতাম প্রায় সব খোলা,
কামিজের প্লেটে বেলফুল তোলা।
গলায় কলার,—আহা মরে যাই
ঘাড়ে বড় লাগে তবু পরা চাই !
একত্রিশ ভরি গলে গার্ড চেন্,
সেই একঘেয়ে স্টার প্যাটারেন্।
রদার হামের ঘড়িখানি বেশ,
বাবুদের প্রিয় হনটিং কেশ।
রেশমী রুমাল পকেটেতে আছে,
‘দৈবের গতিকে’ বেরিয়ে পড়েছে,—
জামাইয়ের অত খেয়াল নাই।
কারপেট পম্প শোভে শ্রীচরণে
সিল্কের সকে মন্ডিত যতনে।
ধীরে ধীরে যান ফিরে ফিরে চান,
কত বিধ আশে হাবুডুবু প্রাণ।
একটা বোয়েতে আশা নাহি মেটে।
বেহায়া নয়ন চারিদিকে ছোটে।
আঁদাড়ে পাঁদাড়ে খড়খড়ি ধরে
কে কোথায় আছ শীঘ্র যাও সরে—
হ্যাদে দেখ ওই জামাই আসে !

অথ শালী

চুম্বক পাথর লোহা টেনে আনে,
শালী চলে আসে জামাইয়ের টানে।
সেজে গুজে দেখ আসিছে শালীরা
রং বিরং-এর বিবিধ চেহারা।
কেহ এক হারা কেহ বা দোহারা
কেহ তিন হারা কেহ তারো বাড়া।
কারো হাতে চুড়ি কারো হাতে বালা,
কারো শিরে খোঁপা কারো চুল খোলা।
কানে কানে কহে ফিস্ ফিস্ করে,
জামাইবাবুর প্রাণ ওড়ে ডরে।
কেহ বা চালাক, মুখে খই ফোটে,
কেহ বা লাজুক কথা নাহি মোটে।
বসে থাকে শুধু একটি পাশে॥

শালীরা আসিয়া চারিদিকে ঘিরে
জামাইয়ের মুখে হাসি নাহি ধরে।
ঢিপ্ ঢিপ্ ঢিপ্ প্রণামের পালা,
নাও যত পার চরণের ধুলা।
এমন খাতির আর কেবা জানে ?
কত ভালবাসা জামাইয়ের প্রাণে
জামায়ের আহা তুলনা নাই !
জামাই কারুকে করে না বঞ্চিত
সকলেরই পায়ে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ।
বউ আট আনা শালী সাত আনা,
শালা আছে যত সব আধ আনা।
এক এক পাই শ্বশুর শাশুড়ী,
যত আছে বুড়ী—সব কানাকড়ি—
জামাইয়ের প্রেমে বিভাগ এই।

অথ সম্ভাষণ

‘ভাল আছ ভাই ? ( বোস না হেথায় )
কতদিন আহা দেখিনি তোমায়।
বে’র পরে ভাই আস নাই আর
কতদিন পরে এসেছ আবার।
দূর দেশে থাক দেখা না পাই।
সহজেতে মোরা ছেড়ে নাহি দিব
দুই মাস পাকা ধরিয়া রাখিব।
খাবারের থালা আয় না লো নিয়ে
ও ঝি—ও ঝি—দেনা আসন বিছিয়ে।

খাবার দিয়েছে—এস তো ভাই !’

‘আজ্ঞে না আজ্ঞে না, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ না না
মাপ করবেন, খেতে পারবো না।
পেট বড় ভারি ; অসুখ করবে,
একেবারে সেই রাতে খাওয়া যাবে।
খেয়ে কাজ নাই এখন আর॥’
‘ওমা সে কি কথা ? কিছুই খাবে না ?
তাকি হয় ভাই ? না না তা হবে না।
জামাই মানুষ লোকে কি বলবে ?
কিছু অন্ততঃ খাইতেই হবে,
তা না হলে খাও মাথা আমার।’
শালীদের কথা কে এড়াতে পারে ?
আসেন জামাই সুড় সুড় করে।
গালিচার কিবা বিচিত্র আসন,
ঝক্ মক্ করে রূপার বাসন।
পাথর বাটিতে মিছরী ভিজানো,
রূপার রেকাবে বেদানা ছাড়ানো।
ক্ষীরের ছাঁচেতে কি বা কারিগুরি,
মুগ ভিজে চিনি মাখম মিছরি
আরো কত ‘ছাই পাঁশ’ কত কি আছে।
জামাইবাবাজী বসেন আসনে,
সরবতে লেবু টেপেন যতনে।
( শ্বশুর বাড়িতে লেবু টেপা দায়—
শালীদের গায়ে পাছে ফসকায় ! )
ঢুকু ঢুকু ঢুকু সরবত পার—
ফলমূলে হাত দাও এইবার।
একটি একটি মুখে চলে যায়,
গোগ্রাসেতে নাহি জামাইরা খায়
জামাইয়ের কভু সব খেতে নাই,
অর্ধেক অন্ততঃ ফেলে রাখা চাই,—
লোকে মনে করে পেটুক পাছে।

আদরের ঝুড়ি যতনের খনি
নিকটেতে বসে শালীদিদিমণি।
করেন বাতাস পাখা লয়ে করে।
এমন আদরে কে থাকিতে পারে ?
জামাইয়ের প্রাণে অত কি সয় ?
‘পাখা রেখে দিন’—বলেন জামাই।
‘তাতে দোষ নেই, খাও তুমি ভাই !’
‘পাখা ধরেছেন কেন কষ্ট করে ?
তাহলে খাব না, দিন না আমারে’—
‘না ভাই, ছি ভাই, তাও কি হয় ?’
এ আদর আর কতদিন রবে ?
চিরস্থায়ী সুখ নাহি কভু ভবে।
নূতন জামাই এলে পরে হায়
পুরানো জামায়ে এঁড়ে লেগে যায়।
রূপার বাসন কোথা যায় চলে,
এনামেল প্লেট তাহার বদলে।
রূপার ডিবার না হয় সন্ধান,
কলাপাতে শুধু একখিলি পান।
ঘন ঘন আর হয় না পোলাও,
আছে ভাত ডাল যত পার খাও।
পাতে নাহি আর বড় বড় মুড়া,
যত পার চোষো কাঁকড়ার দাড়া।
রোজ রোজ আর নাহি আসে পাঁঠা,
পোড়া কপালেতে সজনের ডাঁটা।
জগতের রীতি এমন হায়।
চাঁদেতে কলঙ্ক গোলাপেতে কাঁটা,
কচি কচি খোকা তারো নাকে পোঁটা।
বেদানায় বিচি আঙ্গুরেও খোসা
ঘরেতেও ঝুল বিছানাতে মশা।
যেখানেতে সুখ সেইখানে দুখ,
সম্পদের মাঝে বিধাতা বিমুখ।
পেটের অসুখ হয় বেশী খেলে,
কুড়ি হলে বুড়ী বিয়ে হলে ছেলে।
বাড়া ভাতে কাঠি পাকা ধানে মই,
গুড়ে বালি হায় কেমনেতে সই ?
একটানা সুখ নাহি ধরায়।

এখন ওসব ভেবে কাজ নাই
খাওয়া শেষ হোল ওঠ হে জামাই।
জামায়ের পাতে যাহা আছে পড়ে
ছেলেগুনো নিয়ে কাড়াকাড়ি করে।
‘তোরা কি কাঙ্গাল ?’—দিদিরা গরজে ?
ছেলেরা কি আর ও সকল বোঝে ?
জামাই বাবাজী যান বাহিরেতে,
কে কোথায় আছ এস গো ঘরেতে।
ছেড়ে দাও গলা, নাড় খুব হাত,
সমালোচনায় কর মুন্ডপাত।
জামাই বেচারা নাই গো হেথা।

অথ সমালোচনা

‘ওমা কোথা যাব—কি ঠ্যাঁটা জামাই,
এমন ত কোথা দেখি নাই ভা—ই !
হি হি হি হি—টানে হাত ধরে,
বলে কিনা ভাই—‘আসুন এ ঘরে !’
তাতে দোষ কি লো, তুই যে শালাজ,
ঠাটটা তামাসা তোরি ত এ কাজ।’
‘যা বল যা কও, চেহারাটি বেশ;
রঙ কাল বটে, মুখটি সরেস।’
কিন্তু ভাই বড় কপালটা উঁচু,
কান বড় বড় চোক দুটো নিচু।’
‘যা বলিস্ ভাই চুপি চুপি বল্,
মা যদি শোনে ত বাধাবে জঞ্জাল।’
‘হ্যাঁ ভাই।–আবার দাঁত ফাঁক ফাঁক
ঠোঁট্ মোটা মোটা বড় খ্যাঁদা নাক।
ঠ্যাং বড় গোদা, পেট্‌টা গোলালো।–
মোটের ওপর নয় তত ভাল।’
‘কি করবে ভাই !—কপাল যেমন।
সকলে কি পায় মনের মতন ?
সে রকম হলে ভাবনা কোথা।

অথ সাজগোজ

রাত বহে যায়, দশটা বেজেছে,
খাওয়ার ব্যাপার সব চুকে গেছে।
তবু আর ছাই ডাকিতে আসেনা,
জামাইয়ের ব্যাথা কেহ বোঝে না।
চুপ্ করে বসে থাক গো জামাই;
চলহে পাঠক ভিতরেতে যাই।
এবার বৌয়ের সাজিবার পালা,
এক পাল মেয়ে করিছে জটলা।
কেহ চড়া সুরে হাসে হি হি হি হি,
কেহ মিহি সুরে করে চিঁহি চিঁহি।
দপ্ দপ্ কোরে মোমবাতী জ্বলে,
চারিদিকে ঘিরে আছেন সকলে।
সুগন্ধের শিশি—পফ্—পাউডার—
সাবান—তোয়ালে—কুন্তলীন আর।
আরসী—চিরুনী—ফিতে খোঁপাবাঁধা
ফুলের মালাটি ধপ্‌ধপে সাদা।
গোলাপী রঙের কাপড় কোঁচানো
এক ঘন্টা ধরে আল্‌তা পরানো।
লজ্জায় মেয়ের ঠোঁট যে শুখায়,
দাও রঙ দেওয়া গ্লিসারিণ তায়;
‘আতর দেওয়া এ পানটা খা।’
মল বালা চুড়ি অনন্তঃ সোনার
ব্রেস্‌লেট ব্রুচ নেক্‌লেস হার।
( আরো মাথামুন্ডু কত আছে ছাই—
সকলের নাম মোর মনে নাই। )
যত পার দেহে চড়াও গহনা,
সোনার ওজন ভারিতো লাগেনা।
‘চুড়ি কিম্বা বালা—পরাবো কোন্‌ টা ?
কিম্বা ব্রেসলেট ?—কিম্বা সব কটা ?’
‘বেশী গহনায় কাজ নাই বোন্—
জানো না ত ভাই পুরুষের মন।
অধিক গহনা ওরা নাহি চায়,
মল চুড়ি দেখে হাড়ে চটে যায়।
রাত হয়ে গেছে; আর কাজ নাই,
যা হয়েছে, —খুব; চল নিয়ে যাই।
টেনে দে ওর ঘোম্‌টা টা।

অথ বউমা

বিছানায় এসে এদিকে জামাই,
আর কত দেরি ভাবছেন তাই।
শুয়েছেন দিয়ে বালিষে ঠেষান্,
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
একে একে সব খিলি শেষ হয়।
তবু এক খিলি ডিপেতে রয়েছে,
বিশেষ কারণে সেটা বাঁকী আছে !
ওই—ওই—ওই কপাট খুলিছে—
বউ নিয়ে আহা শালীরা আসিছে !
‘লজ্জা কি লো তোর—আয় না এ ঘরে,
এখনি আমরা সবে যাব সরে।
এই দিকে ফের্—ঘোমটাটা খোল্,
আঃ কি করিস্ !—মুখ খানা তোল্।
কেমন দেখায় দেখ ত ভাই !’
দেখহে জামাই মেলিয়া নয়ন,
ধরণীতে কোথা দেখেচ এমন ?
মুখ চোখ নাক আরক্ত লজ্জায়
ড্যাব্‌ডেবে চোখ মিটি মিটি চায়।
পিটুলির জলে চিত্রিত বদন,
নাকেতে নোলক ভারি তিন মোণ।
বিষম লজ্জায় ঘন শ্বাস সরে,
বুকের ভিতর ধড়ফড় করে।
বউ হওয়া হায় কি বিষম দায়,
যার যাহা খুসী সে তাই সাজায়—
ট্যাঁ-ফোঁ কর্‌বার যোটি নাই।

‘তোমার এধন বুঝে নাও ভাই,
যার ধন তারে দিয়ে মোরা যাই।’—
শালীরা পালাল, আঃ বাঁচা গেল,
জামাইবাবুর ধড়ে প্রাণ এল।
চলহে পাঠক আমরাও যাই,
বউ নিয়ে তুমি ঘুমোও জামাই।
অপরের কাছে বউ জুজুবুড়ি
একলা থাকিলে মিছরির ছুরি।
কর স্তবস্তুতি যত পার তত,
শ্রীচরণে তেল দাওহে সতত।
পাঁচশত বার বোঝাও তাহারে—
বড় ভালবাসি বউ গো তোমারে।’
যত পার ঝাড় নভেলের বুলি
প্রতিদানে তার শোনো গালাগালী।—
বোয়ের এমনি লভের চাড় !

কেন কর্ম্মভোগ ? আরে ছিছি ছিছি
অত খিচি খিচি কেন মিছি মিছি ?
কোথাকার এক পুঁট্ পুঁটে মেয়ে
বেড়ায় তোমারে চরকী ঘুরিয়ে।
যত পার কর খোষামোদ তার
হায় হায় তবু মন পাওয়া ভার।
কোথা সরলতা পাবেহে খুঁজিয়ে
ন্যাকামীর ঝুড়ি এক ফোঁটা মেয়ে।
কোথা হে সাবিত্রী ! শকুন্তলা কোথা ?
কোথা দময়ন্তী ? কোথা আছ সীতা ?
কোথায় প্রফুল্ল ? কোথা তিলোত্তমা ?
কোথায় ভ্রমরা ? কোথা আছ রমা ?
হায়রে ও সব গাঁজার খেয়াল,
ধরণীতে শুধু গরুর গোয়াল ;
তাহাদের মাঝে তুমিও ষাঁড়।

এসেন্সের শিশি আরসী চিরুনী
গায়ে ভাল জামা মাথায় বিনুনী।
সাজিলে গুজিলে পুরে মনস্কাম,
বাহার মারিতে বড়ই আরাম।
যা আছে তাহাতে মিটে নাই আশ,
দ্বিগুনিতে রূপ সতত প্রয়াস।
চাই নানাবিধ লেটার পেপার
খাম নানা জাতি সোনালী বর্ডার।
আইভরি ফিনিশ্ তাসের জোড়াটি
চাই চক্‌মকে গানের খাতাটি।–
এই সবি বেশী ; বর বেশী নয়,
গাধা বাঁদরেতে হয় কি প্রণয় ?
শুয়ে থাক্ পাশে নাহি আসে যায়,
ছারপোকা মশা কত বিছানায়।—
বর হতভাগা তাদেরি সামিল,
মাঝে মাঝে পিঠে পড়ে চড় কিল ;—
লাথিটাও লাগে ঘুমের ঘোরে।

বিয়ের আগেতে বড়ই দুর্দ্দশা,
মিটিতে না পায় হৃদয়ের আশা।
দিদি বউদিদি ঘরে আছে যত
কত ফিশ্‌ফিশ্ করে অবিরত।
সে সকল কথা শুনিতে বাসনা।
কিন্তু দিদিমণি শুনিতে দ্যায় না।
কাছে গেলে হায় দূর্ দূর্ করে,
বলে—‘ঝাঁটা খেকি যা না তুই সরে !’
ধেড়ে ধেড়ে যত মেয়ের কথায়,
ছোট ছোট মেয়ে কল্কে না পায়।
বিয়ে হয়ে গেলে ভারিক্কেটা বাড়ে
কেহ নাহি আর দূর্ দূর্ করে।
দিদিরা তখন টেনে নেয় দলে,
ফিশ্ ফিশুনিটা ভাল রুপে চলে।
যতনে শিখায় ধরণ ধারণ
দু-দিনে বউমা সাবালক হন।
ইয়ার্কি না হলে পুরুষ বাঁচেনা
মেয়ে নাহি বাঁচে ফিশ্ ফিশ্ বিনা।—
টিকে থাকে তারা তাহারি জোরে।

বিয়ের আগেতে না থাকে জঞ্জাল
ছেলে মানুষিতে কেটে যায় কাল।
বিয়ে হয়ে গেলে বাধে যত গোল,
বউমার ন্যাজ ফুলে হয় ঢোল।
কোথা হতে এক আসে ধেড়ে বর
সেই দিন হতে ঘটে যুগান্তর।
কভু হাতে ধরে কভু পায়ে পড়ে
যোড় হাতে কত ‘হেঁই হেঁই’ করে।
নড়িতে চড়িতে করে খোষামোদ,
বাঁদর নাচাতে বড়ই আমোদ !
কভু হাতে দড়ি কভু হাতে চাঁদ
তবু বোকা বর নাহি সাধে বাদ।
গরজের বাড়া বালাই নাই।

কারু কারু থাকে পরামর্শদাতা
খেয়ে দেন তাঁরা বউমার মাথা।
নানা বিধ ফন্দি তাহারা শিখায়
বর যাতে থাকে হাতের মুঠোয়।
‘দেখ্ ভাই আজ শুস্ পাশ ফিরে
পায়ে না ধরিলে নাহি যাবি সরে।’
ইত্যাদি ইত্যাদি বিবিধ প্রকার
শেখেন বউমা ঘোর অত্যাচার।
হাঁদা বর গুনো চুপ্ করে সয়
যাতে তাতে রাত কেটে গেলে হয়।
পাজী বরগুনো করে পিট্ পিট্
আগে খুঁৎ খুঁৎ শেষে খিট্ মিট্।
অবশেষে যদি বাধে গোলমাল,
মন্ত্রী মহাশয় ছেড়ে দেন হাল।
চোখ রাঙানিতে নাহি মানে ডর
বড় ভয়ানক একগুঁয়ে বর,—
‘বোঝালেও বোঝে তাই কি ছাই।’

নেহাৎ বেহায়া হওয়া নহি যায়,
একবারে হাঁদা তাও ঠিক নয়।
আঁকা বাঁকা পথে বউমারা যায়,
ন্যাকামিতে থাকে দুদিক বজায়।
টন টনে জ্ঞান, মুখে ‘নাহি জানি,’
ধরি মাছ কিন্তু না ছুঁই পানি।
কোনো কোনো বর বড় লক্ষ্মীছাড়া
বউমা ঘাঁটিয়ে মজা দেখে তারা।
পেটের কথাটি যদি আনে টেনে,
জ্বলেন বউমা তেলেতে বেগুনে।
ঠাটটা করে যদি আঁতে দাও ঘা —-
ওগো সর্ব্বনাশ ! তা হলেই ‘যা !’
তখন বউমা একবারে বাঁকা
বর বেচারার লাগে ভ্যাবাচাকা ;
খোষামোদ ছাড়া উপায় নাই।

‘অদৃষ্টের দোষ’ কথায় কথায়
মনের মতন বর মেলা দায়।
বউমার আহা বেঁচে সুখ নাই
‘অতি পাপীয়সী বেঁচে আছি তাই।’
ঘন্টায় ঘন্টায় মরিতে বাসনা,
বর ঝাঁটা খেকো শুনেও শোনেনা।
মরার কথায় ভয় নাহি পায়,
রকম দেখিলে হাড় জ্বলে যায় !
মাটির ঢিপির মত হবে বর,
কথা নাহি কবে কথায় উপর।
যে দিকে ফিরাব সে দিকে ফিরিবে,
লাথি মারিলেও চরণ ধরিবে।—
এরকম বর বউমারা চায়,
পোড়া পৃথিবীতে কোথা পাবে হায় ?
বিধাতার রাজ্যে ঘোর অবিচার—-
বাঁদরের গলে মুকুতার হার।—-
এদুখ রাখিতে যায়গা নাই !

এই একদিন ; আর একদিন
বহুদূরে ওই দেখা যায় ক্ষীণ।—
কোথা অভিমান ? কোথা অহঙ্কার ?
কালের পেষণে সব চুরমার।
ঘন ঘন ভাব ঘন ঘন আড়ি
ঘন ঘন যাওয়া শ্বশুরের বাড়ি।
কোথা ঘন ঘন চিঠি লেখা লেখি ?
কোথা ঘন ঘন অত মাখামাখি !
কোথা সেন্টিমেন্ট ? প্রণয় কোথায় ?
বুড়ো হলে হয় সব চলে যায়।
একপাল মেয়ে একপাল ছেলে,
চারি দিক হতে ‘বাবা বাবা’ বলে।
কারো নাক খ্যাঁদা—পোঁটা বহে তায় ;
কেউ বড় কাল,—বর মেলা দায়।
গায়ে হেগে দ্যায়, কোলে মুতে দ্যায়,—
‘প্রাণাধিক প্রিয়ে’ সব ভেসে যায়।
প্রণয়ের কিরে এই পরিণতি ?
বুড়ো বয়সেতে হায় কি দুর্গিত !
সুখের ঘরেতে কেনরে আগুন ?
পাকা বাঁশে হায় কেন ধনে ঘুন ?
শধুর হাঁড়িতে কেনরে মাছি ?

কি কথা লিখিতে কি কথা আসিল,—
ঘুমোও জামাই রাত হয়ে গেল।
আর বেশি রাত জেগে কাজ নাই,
অসুখ কোর্‌বে না ঘুমুলে ভাই !
জামাই ঘুমুল, পাড়াটা জুড়ুল,
আমার কথাও শেষ হয়ে এল।

জামায়ে’র কথা অমৃত সমান,
কাশীরাম কহে শুন পূণ্যবান।
একথা শুনিলে দুখ দূর যায়,
পাপী নরাধম পরিত্রাণ পায়।
কাল রঙ যার সেও হয় সাদা
ছোট হয় বড় ঘোড়া হয় গাধা।
বাঁজা হয় তাজা, তাজা হয় বাঁজা
একথা যে শোনে সেই হয় রাজা।
একথা শুনিয়া যেবা রাগ করে,
তাহার ভিটায় সদা ঘুঘু চরে।
তাই বলি শোনো মন দিয়ে বেশ।—
হরি হরি বল, কথা হ’ল শেষ।
তোমরাও বাঁচ, আমিও বাঁচি।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি।

ইতি— [৬ই এপ্রিল ১৮৯৯।]