রামধনের বৈরাগ্য
সাহিত্যগগনে উড়ন—তবুড়ির মতন রামধন দাসের উত্থান যেমন আশ্চর্য তাঁর হঠাৎ অন্তর্ধানও সেই রকম। কিন্তু এখন তাঁর নাম কেউ করে না, কারণ বাঙালী পাঠক অতি নিমকহারাম। তারা জয়ঢাক পিটিয়ে যাকে মাথায় তুলে নাচে, চোখের আড়াল হলেই কিছু দিনের মধ্যে তাকে ভুলে যায়। রামধনেরও সেই দশা হয়েছে। এককালে তিনি অদ্বিতীয় কথাসাহিত্যিক বলে গণ্য হতেন, তাঁর খ্যাতির সীমা ছিল না, রোজগারও প্রচুর করতেন। তার পর হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ হলেন। তাঁর ভক্তপাঠকরা এবং সপক্ষ বিপক্ষ লেখকরা অনুসন্ধানের ত্রুটি করেন নি, কিন্তু ঠিক খবর কিছুই পাওয়া গেল না। কেউ বলে নোবেল প্রাইজের তদবির করবার জন্য তিনি বিলাতে আছেন, কেউ বলে সাহিত্যিক গুণ্ডারা তাঁকে গুম—খুন করেছে, কেউ বলে সোভিয়েট সরকার তাঁকে মোটা মাইনে দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গেছে, তিনি কমিউনিস্ট শাস্ত্রের বাংলা অনুবাদ করছেন।
আসল কথা, রামধন দাস তাঁর নাম আর বেশ বদলে ফেলে বিষ্ণুপ্রয়াগে আছেন এবং গুরুর উপদেশে সস্ত্রীক যোগ সাধনা করছেন। কেন তিনি সাহিত্যচর্চা আর বিপুল প্রতিপত্তি ত্যাগ করে আশ্রমবাসী তপস্বী হলেন তার রহস্য তাঁর মুখ থেকে কেবল একজন শুনেছেন—তাঁর গুরুদেবের প্রধান শিষ্য ও আশ্রম—সেক্রেটারি নিবিড়ানন্দ। এই নিবিড় মহারাজের পেটে কথা থাকে না। এঁর মুখ থেকে লোকপরম্পরায় যে খবর এখানে এসে পৌঁছেছে তাই বিবৃত করছি। কিন্তু শুধু এই খবরটি শুনলে চলবে না, রামধন দাসের ইতিহাস গোড়া থেকে জানা দরকার।
বি. এ. পাস করার পর রামধন একজন বড় প্রকাশকের অফিসে চাকরি নিয়েছিলেন। মনিবের ফরমাশে তিনি কতকগুলি শিশুপাঠ্য পুস্তক লেখেন, যেমন ছেলেদের গীতা, ছোটদের বেদান্ত, কচিদের ভারতচন্দ্র, খোকাবাবুর গুপ্তকথা, খুকুমণির আত্মচরিত ইত্যাদি। বইগুলি সস্তা, সচিত্র আর প্রাইজ দেবার উপযুক্ত, সেজন্য কাটতি ভালই হল। একদিন রামধন এক বিখ্যাত প্রবীণ সাহিত্যিকের কাছে শুনলেন, গল্প রচনা খুব সোজা কাজ। সাহিত্যে কালো—বাজার নেই, কিন্তু চোরাবাজার অবারিত। বাঙালী লেখক ইংরিজী থেকে চুরি করে, হিন্দী লেখক বাংলা থেকে চুরি করে এই হল দস্তুর। কথাটি রামধনের মনে লাগল। তিনি দেদার বিলিতী আর মার্কিন ডিটেকটিভ গল্প আত্মসাৎ করে বই লিখতে লাগলেন। খদ্দেরের অভাব হল না, তাঁর মনিবও তাঁকে লাভের মোটা অংশ দিলেন। কিন্তু রামধন দেখলেন, তাঁর রোজগার ক্রমশ বাড়লেও উচ্চ সমাজে তাঁর খ্যাতি হচ্ছে না। মোটর ড্রাইভার, কারিগর, টিকিটবাবু, বকাটে ছোকরা, আর অল্পশিক্ষিত চাকরিজীবীই তাঁর বইএর পাঠক। পত্রিকাওয়ালারা বিজ্ঞাপন ছাপেন কিন্তু সমালোচনা প্রকাশ করতে রাজী হন না। বলেন, এ হল নীচু দরের সাহিত্য, এর সমালোচনা ছাপলে পত্রিকার জাত যাবে। রামধন মনে মনে বলেন, বটে! আমার রোমাঞ্চ—লহরীকে হরিজন—সাহিত্য ঠাউরেছ? প্রেমের প্যাঁচ চাও, মনস্তত্ত্ব চাও, যৌন আবেদন চাও? আচ্ছা, আমার শক্তি শীঘ্রই দেখতে পাবে।
রামধন হুঁশিয়ার কর্মবীর, আগাগোড়া না ভেবে কোনও কাজে হাত দেন না। তিনি প্রথমেই মনে মনে পর্যালোচনা করলেন—বাংলা কথাসাহিত্যের আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত কি রকম পরিবর্তন হয়েছে। সেকালের লেখকদের হাত পা বাঁধা ছিল, প্রণয়ব্যাপার দেখাতে হলে প্রাচীন হিন্দুযুগে অথবা মোগল—রাজপুতের আমলে যেতে হত, নইলে নায়িকা জুটত না। তার পরের লেখকরা নোলক—পরা বালিকা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেন, কিন্তু জুত করতে পারলেন না। দুর্গেশনন্দিনীর তিলোত্তমা নেহাত বাচ্চা, তবু বঙ্কিমচন্দ্র তাকে সসম্মানে ‘তিনি’ বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ নাবালিকা সাবালিকা কোনও নায়িকাকেই খাতির করেন নি, কিন্তু তাঁর কমলা সুচরিতা ললিতা এখনকার দৃষ্টিতে খুকী মাত্র। পরে অবশ্য তিনি বয়স বাড়িয়েছেন, যেমন শেষের কবিতার লাবণ্য, চার অধ্যায়ের এলা। বাংলা গল্পের মধ্যযুগে জোরালো প্রেম দেখাতে হলে মামুলী নায়িকায় কাজ চলত না, শালী বউদিদি বা বিধবা উপনায়িকাকে আসরে নামাতে হত। সেকেলে গল্পের নায়কদেরও বৈচিত্র্য ছিল না, হয় প্রতাপের মতন যোদ্ধা, না হয় গোবিন্দলালের মতন ধনি—সন্তান। দামোদর মুখুজ্যে ও তৎকালীন লেখকদের নায়করা প্রায় জমিদারপুত্র, তারা ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে যেত, গরিব প্রজাদের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিত, এবং যথাকালে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে খুশী করে রায় বাহাদুর খেতাব পেত। তার পর ক্রমে ক্রমে বাঙালী সমাজের পটপরিবর্তন হল, সঙ্গে সঙ্গে গল্পেরও প্লট পরিবর্তন হল। বোমা স্বদেশী আর অসহযোগের সুযোগে মেয়ে—পুরুষের কাজের গণ্ডি বেড়ে গেল, মেলা—মেশা সহজ হল। অবশেষে এল কিষান—মজদুরের আহ্বান, কমরেডী কর্মক্ষেত্র, জাপানী আতঙ্ক, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, নরহত্যা, দেশ—জবাই, স্বাধীনতা, বাস্তুত্যাগ, নারীহরণ, মহাকলিযুগ, লোক—লজ্জার লোপ, অবাধ দুষ্কর্ম। মানুষের দুর্দশা যতই বাড়ুক, গল্প লেখা যে খুব সুসাধ্য হয়ে গেল তাতে সন্দেহ নেই। এখনকার নায়ক কবি দোকানদার সৈনিক নাবিক বৈমানিক চোর ডাকাত দেশ—সেবক সবই হতে পারে। নায়িকাও নার্স টাইপিস্ট টেলিফোনবালা সিনেমাদেবী মজদুরনেত্রী সম্পাদিকা অধ্যাপিকা যা খুশি হতে পারে। সংস্কৃত কবিরা যাকে ‘সংকেত’ বলতেন, অর্থাৎ ট্রিস্ট, তারও বাধা নেই, রেস্তোরাঁ আছে, পার্ক আছে, লেক আছে, সিনেমা আছে। ভারতীয় কথাসাহিত্যের স্বর্ণযুগ উপস্থিত হয়েছে, সমাজ আর পরিবেশ বদলে গেছে, অতএব রামধন একটু চেষ্টা করলেই শ্রেষ্ঠ পাশ্চাত্ত্য গল্পকারদের সমকক্ষ হতে পারবেন।
আধুনিক বাঙালী লেখকরা বুঝেছেন যে সেক্স অ্যাপীলই হচ্ছে উৎকৃষ্ট গল্পের প্রাণ। এই জিনিসটি আসলে আমাদের সনাতন আদিরস। কিন্তু তার ফরমুলা বড় বাঁধাধরা, বৈচিত্র্য নেই, ঝাঁজও মরে গেছে, সেজন্য আধুনিক রুচির উপযুক্ত অদলবদল করে তার নাম দেওয়া হয়েছে যৌন আবেদন। এ পর্যন্ত কোনও বাঙালী সাহিত্যিক এই আবেদন পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেন নি। ফরাসী লেখক ফ্লোবেয়ার প্রায় একশ বছর আগে ‘মাদাম বোভারি’ লিখেছিলেন, কিন্তু এদেশের কোনও গল্পকার তার অনুকরণ করেন নি। লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লি, হাক্সলির ‘পয়েণ্ট কাউণ্টার পয়েণ্ট’ প্রভৃতির নকল করতে কারও সাহস হয়নি। রবীন্দ্রনাথের কোনও নায়িকা ‘প্রেমের বীর্যে যশস্বিনী’ হতে পারে নি। চারু কমলা বিমলা আর বিনোদ বোঠানকে তিনি রসাতলের মুখে এনেও রাস টেনে সামলে রেখেছেন। আর শরৎ চাটুজ্যেই বা কি করেছেন? গুটিকতক ভ্রষ্টাকে সুশীলা বানিয়েছেন। দুর্দান্ত লম্পট জীবনানন্দকে পোষ মানিয়েছেন, অথচ কোনও লম্পটাকে গৃহলক্ষ্মী করতে পারেন নি। চারু বাঁড়ুজ্যে তাঁর ‘পঙ্কতিলক’—এ এই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা একেবারে পণ্ড হয়েছে। আসল কথা, এদেশের কথাসাহিত্য এখনও সতীত্বের মোহ কাটাতে পারে নি।
পাশ্চাত্ত্য লেখকরা যা পেরেছেন রামধনও তা পারবেন, এ ভরসা তাঁর আছে। সমাজের মুখ চেয়ে লিখবেন না, তিনি যা লিখবেন সমাজ তাই শিখবে। রামধন তাঁর পদ্ধতি স্থির করে ফেললেন এবং বাছা বাছা পাশ্চাত্ত্য উপন্যাস মন্থন করে তা থেকে সার উদ্ধার করলেন। এই বিদেশী নবনীতের সঙ্গে দেশী শাক—ভাত আর লঙ্কা মিশিয়ে তিনি যে ভোজ্য রচনা করলেন তা বাংলা সাহিত্যে অপূর্ব। প্রকাশক ভয়ে ভয়ে তা ছাপলেন। বইটি বেরুবামাত্র সাহিত্যের বাজারে হুলুস্থূল পড়ে গেল।
প্রবীণ লেখক আর সমালোচকরা বজ্রাহত হয়ে বললেন, এ কি গল্প না খিস্তি। তাঁরা পুলিস অফিসে দূত পাঠালেন, মন্ত্রীদের ধরলেন যাতে বইখানা বাজেয়াপ্ত হয়। কিন্তু কিছুই হল না, কারণ কর্তারা তখন বড় বড় সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। প্রগতিবাদী নবীন সমাজ গল্পটিকে লুফে নিলেন। এই তো চাই, এই তো নবাগত যুগের বাণী, মিলনের সুসমাচার, প্রেমের মুক্তধারা, হৃদয়ের ঊর্ধ্বপাতন, আকাঙ্ক্ষার পরিতর্পণ। একজন উঁচু দরের সাহিত্যিক—যিনি চুলে কলপ না দিয়ে মনে কলপ লাগিয়ে আধুনিক হবার চেষ্টা করছেন—বললেন, বেড়ে লিখেছে রামধন। এতে দোষের কি আছে? তোমাদের ঋষিকল্প সবজান্তা লেখক এইচ. জি. ওয়েলস—এর নভেল ‘বলপিংটন অভ ব্লপ’ পড়েছ? তাতে যদি কুরুচি না পাও তবে রামধনের বইএও পাবে না।
প্রথমে যে দু—চারটি বিরুদ্ধ সমালোচনা বেরিয়েছিল পরে তা উচ্ছ্বসিত প্রশংসার তোড়ে ভেসে গেল। বইটি কেনবার জন্য দোকানে দোকানে যে কিউ হল তার কাছে সিনেমার কিউ কিছুই নয়। এক বৎসরের মধ্যে সাতটি সংস্করণ ফুরিয়ে গেল। রামধন পরম উৎসাহে গল্পের পর গল্প লিখতে লাগলেন। যেসব সম্পাদক পূর্বে তাঁকে গাল দিয়েছিলেন তাঁরাই এখন গল্পের জন্য রামধনের দ্বারস্থ হতে লাগলেন। সমস্ত সাহিত্যসভায় রামধনই এখন সভাপতি বা প্রধান অতিথি। তাঁর উপাধিও অনেক—সাহিত্যদিগগজ, গল্প—রাজচক্রবর্তী, উপন্যাস—ভাস্কর, কথারণ্যকেশরী, ইত্যাদি। তাঁর ভক্তের দল এক বিরাট সভায় প্রস্তাব করলেন যে তাঁকে জগত্তারিণী মেডেল দেওয়া হক। কিন্তু সস্তা নাইন ক্যারাট গোল্ডের তৈরী জানতে পেরে রামধন বললেন, ও আমার চাই না, বাহাত্তুরে বুড়োদের জন্যই ওটা থাকুক।
যাঁর লক্ষ টাকা জমেছে তিনি কোটিপতি হতে চান, যিনি এম. এল. সি. হয়েছেন তিনি মন্ত্রী হতে চান, সেকালে রায়বাহাদুররা সি. আই. ই. আর সার হবার জন্য লালায়িত হতেন। রামধনেরও উচ্চাশা ক্রমশ বেড়ে যেতে লাগল। তিনি স্থির করলেন এবারে এমন একটি উপন্যাস লিখবেন যার প্লট কোনও দেশের কোনও লেখক কল্পনাতেও আনতে পারেন নি। ভীরু বাঙালী লেখক কদাচিৎ নায়ককে উচ্ছৃঙ্খল করলেও নায়িকাকে একানুরক্তাই করে। তারা বোঝে না যে নারীরও জংলী জই অর্থাৎ ওআইল্ড ওটস বোনা দরকার, নতুবা তার চরিত্র স্বাভাবিক হতে পারে না। আধুনিক পাশ্চাত্ত্য লেখক অনেক গল্পে নায়িকাকে কিছুকাল স্বৈরিণী করে রাখেন, তাতে তার ‘আবেদন’ বেড়ে যায়। তার পর শেষ পরিচ্ছেদে তার বিয়ে দেন। কিন্তু এবারে রামধন দেশী বা বিদেশী কোনও গতানুগতিক পথে যাবেন না, একেবারে নতুন নায়িকা সৃষ্টি করবেন। বিশ্বজগতের স্রষ্টা ভগবান নিজের মতলব অনুসারে নরনারীর চরিত্র রচনা করেন। কিন্তু গল্পজগতে ভগবানের হাত নেই, রামধন নিজেই তাঁর পাত্র—পাত্রীর স্রষ্টা আর ভাগ্যবিধাতা। তিনি প্রচলিত সামাজিক আদর্শ মানবেন না, যেমন খুশি চরিত্র রচনা করবেন।
মা বাপ একসঙ্গে অনেক সন্তানকে ভালবাসে, তাতে দোষ হয় না। নারী যদি এককালে একাধিক পুরুষে আসক্ত হয় তাতেই বা দোষ হবে কেন? এখনকার প্রগতিবাদী লেখকদের তুলনায় ব্যাসদেব ঢের বেশী উদার ছিলেন। তিনি দ্রৌপদীকে একসঙ্গে পাঁচটি পতি দিয়েছেন, যযাতির কন্যা মাধবীর এক পতি থাকতেই অন্য পতির সঙ্গে পর পর চার বার বিবাহ দিয়েছেন। নিজের জননী মৎস্যগন্ধাকেও তিনি ছেড়ে দেন নি, তাঁকে শান্তনু—মহিষী বানিয়েছেন। ব্যাস বেপরোয়া বাহাদুর লেখক, কিন্তু রামধন তাঁকেও হারিয়ে দেবেন। দ্রৌপদী স্বেচ্ছায় পঞ্চপতি বরণ করেন নি, গুরুজনের ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলেন। মাধবী আর মৎস্যগন্ধাও নিজের মতে চলেন নি। স্ত্রীজাতির স্বাতন্ত্র্য কাকে বলে রামধন দাস তা এবারে দেখিয়ে দেবেন।
রামধন যে নতুন গল্পটি আরম্ভ করলেন তা খুব সংক্ষেপে বলছি। রাধাকৃষ্ণের লীলাস্থান যেমন বৃন্দাবন, সিনেমার তারক—তারকার গগন যেমন টালিগঞ্জ, অভিজাত নায়ক—নায়িকার বিলাসক্ষেত্র তেমনি বালিগঞ্জ। আনাড়ী পাঠক—বিশেষত প্রবাসী আর পাড়াগেঁয়ে পাঠক –মনে করে বালিগঞ্জ হচ্ছে অলকাপুরী, যক্ষ গন্ধর্ব কিন্নর অপ্সরার দেশ। সেখানে মশা আছে, মাছি আছে, পচা ড্রেন আছে, দারিদ্র্যও আছে, কিন্তু তার খবর কে রাখে। সেই কল্পলোক বালিগঞ্জেই রামধন তাঁর গল্পের ভিত্তিস্থাপন করলেন।
তিন একর জমির মাঝখানে একটি প্রকাণ্ড প্রাসাদ, তাতে থাকেন প্রৌঢ় ব্যারিস্টার পি. পি. মল্লিক আর তাঁর রূপসী বিদুষী যুবতী কন্যা রম্ভা। বাড়িতে অন্য কোনও আত্মীয়ের জঞ্জাল নেই, অবশ্য দারোয়ান খানসামা বাবুর্চী যথেষ্ট আছে। মল্লিক সাহেব সকালে ব্রেকফাস্ট করেই তাঁর চেম্বারে যান, সেখান থেকে কোর্টে যান, ফিরে এসে বাড়িতে ঘণ্টা খানিক থেকেই ক্লাবে যান, তারপর অনেক রাত্রে টলতে টলতে ফিরে আসেন। কন্যার বিবাহের জন্য তাঁর কোনও চিন্তা নেই। বলেন, মেয়ে বড় হয়েছে, বুদ্ধিও আছে, সম্পত্তিও ঢের পাবে; উপযুক্ত বর ও নিজেই বেছে নেবে।
বাড়ির তিন দিকে বাগান, একদিকে গাছে ঘেরা সবুজ মাঠ। বিকেলে সেখানে নানা জাতের শৌখিন পুরুষের সমাগম হয়। তারা টেনিস খেলে, চা বা ককটেল খায়, তার পর রম্ভাকে ঘিরে আড্ডা দেয়। এরা সবাই তার প্রেমের উমেদার, কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ কোনও প্রশ্রয় পায় নি, রম্ভা সকলের সঙ্গে সমান ব্যবহার করেছে। পূর্বে অনেক মেয়েও এখানে আসত, কিন্তু পুরুষগুলোর একচোখোমির জন্য রেগে গিয়ে তারা আসা বন্ধ করেছে।
এই রকমে কিছুকাল কেটে গেল। যাদের ধৈর্য্য কম তারা একে একে আড্ডা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চেষ্টা করতে গেল। বাকী রইল শুধু আট জন পরম ভক্ত। সাড়ে সাত বলাই ঠিক কারণ একজন হচ্ছে ইস্কুলের ছাত্র, এবারে ম্যাট্রিক দেবে। সে কথা বলে না, শুধু হাঁ করে রম্ভাকে দেখে আর বোকার মতন হাসে।
এই সাড়ে সাত জনের মধ্যে তিন জনের পরিচয় জানলেই চলবে, বাকী সব নগণ্য। প্রথম লোকটি ডক্টর বিদ্যাপতি ঘোষ, বিস্তর ডিগ্রি নিয়ে সম্প্রতি বিলাত থেকে ফিরেছে, সরকারী ভাল চাকরি পেয়েছে। দ্বিতীয় হচ্ছে ফ্লাইট—লেফটেনাণ্ট বিক্রম সিং রাঠোর, লম্বা চওড়া জোয়ান, এয়ার ফোর্সে কাজ করে, এখন ছুটিতে আছে। তৃতীয় লোকটি শ্যামসুন্দর ভ্রমরবররায়, উড়িষ্যার কোনও রাজার জ্ঞাতি, অতি সুপুরুষ, সরাইকেলার নাচ জানে।
ক্রমশ সকলের সন্দেহ হল যে বিদ্যাপতি ঘোষের দিকেই রম্ভা বেশী ঝুঁকেছে। কিন্তু দু দিন পরেই দেখা গেল, নাঃ, ওই ষণ্ডামার্কা বিক্রম সিংটার ওপরেই রম্ভার টান। আরও দু দিন পরে বোধ হল, উঁহু, ওই উড়িষ্যার নবকার্তিক শ্যামসুন্দরের প্রেমেই রম্ভা মজেছে।
কারও বুঝতে বাকী রইল না যে ওই তিনজনের মধ্যেই একজনকে রম্ভা বরমাল্য দেবে। অগত্যা আর সবাই আড্ডা থেকে ভেগে পড়ল, কিন্তু সেই ইস্কুলের ছেলেটি রয়ে গেল।
একদিন বিদ্যাপতি ঘোষ এক ঘণ্টা আগে এসে রম্ভাকে যথারীতি প্রণয়নিবেদন করলে। রম্ভা গদগদ স্বরে বললে, এর জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম, অনেকদিন থেকেই তোমাকে আমি ভালবাসি। তবে আজ আর বেশী কথা নয়, দশ দিন পরে তোমার কাছে আমার হৃদয় উদঘাটন করব।
পরদিন বিক্রম সিং রাঠোর এক ঘণ্টা আগে এসে বিবাহের প্রস্তাব করলে। রম্ভা বললে, থ্যাঙ্ক ইউ ডিয়ার, তুমি আমার দিল কা পিয়ারা। লক্ষ্মীটি, ন দিন সময় দাও, তার পর পাকা কথা হবে।
তার পরদিন শ্যামসুন্দর ভ্রমরবররায় সকাল সকাল এসে বললে, শুন রম্ভা, তুমার জন্য আমি পাগল, তুমি আমার হও। রম্ভা উত্তর দিলে, আমিও তোমার জন্য পাগল, আট দিন সবুর কর, তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
নির্দিষ্ট দিনে সকলে উপস্থিত হলে চা খাওয়ার পর সেই ম্যাট্রিক ছাত্রটিকে রম্ভা বললে, গাবলু, তুমি বাড়ি যাও। গাবলুর পৌরুষে ঘা লাগল। একটু রুখে বললে, কেন?
—দু দিন পরে পরীক্ষা তা মনে নেই? তুমি অঙ্কে বেজায় কাঁচা। যাও, বাড়ি গিয়ে গসাগু লসাগু কষ গে, এখানে ইয়ারকি দিতে হবে না।
গাবলু সকলের দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে চলে গেল।
রম্ভা তার তিন প্রণয়ীকে বললে এখন এখানে কোনও বাজে লোক নেই, আমার মনের কথা খোলসা করে বলছি শোন। তোমাদের তিন জনের সঙ্গেই আমি প্রেমে পড়েছি, তিন জনই আমার বাঞ্ছিত বল্লভ, কান্ত দয়িত, দিলরুবা ডারলিং।
বিদ্যাপতি হতভম্ব হয়ে বললে, তুমি পাগল হয়েছ নাকি? বিয়ে তো একজনের সঙ্গেই হতে পারে।
বিক্রম সিং বললে, মরদের অনেক জোরু হতে পারে, কিন্তু ঔরতের এক শৌহর। এই হল আইন। তুমি আমাদের মধ্যে একজনকে বেছে নাও, নয় তো ভারী গড়বড় হবে।
শ্যামসুন্দর বললে, রম্ভা, তুমি একি বলছ? ছি ছি, হে জগন্নাথ দীনবন্ধু!
রম্ভা উত্তর দিলে, আমি সত্য বলেছি, আমার কথার নড়চড় হবে না। শোন বিদ্যাপতি, তুমি আমার দেশের লোক, বিদ্যার জাহাজ, তোমাকে আমার চাইই। আর বিক্রম সিংহ, রাজপুত জাতটির ওপর আমার ছেলেবেলা থেকেই একটা টান আছে। তোমার মতন নওজওআন বীরকে আমি কিছুতেই ছাড়তে পারি না। আর শ্যামসুন্দর, তুমি ললাটেন্দুকেশরীর বংশধর, তোমরা চিরকাল সৌন্দর্যের উপাসক, তুমি নিজেও পরম সুন্দর। তোমাকে না হলে আমার চলবে না।
শ্যামসুন্দর বললে, তবে আর এদিক ওদিক করছ কেন রম্ভা? তুমি রাধা আমি শ্যাম, আমাকে বিয়া কর।
রম্ভা বললে, রাধার সঙ্গে শ্যামের বিয়ে হয় নি।
বিদ্যাপতি বললে, রম্ভা, তুমি স্পষ্ট করে বল তো কাকে বিয়ে করতে চাও।
—কাকেও নয়। বিবাহের কোনও দরকার নেই, তোমরা তিন জনেই মিলে মিশে আমার কাছে থাকবে। যদি নিতান্ত না বনে তবে নিজের বাড়িতেই থেকো, ডেট ফিকস করে আমার কাছে আসবে।
—সমাজের ভয় কর না?
—আমরা নতুন সমাজ গড়ব। আবার বলছি শোন। তোমাদের তিন জনকেই আমি ভালবাসি। বিনা বিবাহে একসঙ্গে বা পালা করে যদি আমার সঙ্গে বাস কর তবে আমি ধন্য হব তোমরাও নিশ্চয় সুখী হতে পারবে। তাতে যদি রাজী না হও তবে চিরবিদায়, আমি তিব্বতে চলে যাব। আমার আদর্শ বিসর্জন দিতে পারব না।
বিদ্যাপতি বললে, স্ত্রীলোক সপত্নীর ঘর করতে পারে, কিন্তু পুরুষ সপতি বরদাস্ত করবে না, খুনোখুনি হবে।
শ্যামসুন্দর বললে, সে ভারি মুশকিলের কথা। আমরা মরে গেলে তুমি কার সঙ্গে ঘর করবে রম্ভা?
রম্ভা বললে আমার আর একটু বলবার আছে শোন। তোমরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কর, বেশ করে ভেবে দেখ, সেকেলে সংস্কারের বশে আমার এই মহৎ সামাজিক এক্সপেরিমেণ্টটি পণ্ড করে দিও না। দশ দিন পরে তোমাদের সিদ্ধান্ত আমাকে জানিও, তার মধ্যে এখানে আর এসো না, তাতে শুধু বাজে তর্ক আর কথা কাটাকাটি হবে। এই আমার শেষ কথা।
তিন প্রণয়ী সাপের মতন ফোঁস ফোঁস করতে করতে চলে গেল।
এই পর্যন্ত লেখার পর রামধন একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গল্পের প্রথম খণ্ড শেষ হয়েছে, কিন্তু আসল জিনিস সমস্তই বাকী। এর পরেই প্লট জমে উঠবে, পাত্র—পাত্রীর সম্পর্ক জটিলতর হবে, রামধন ভানুমতীর খেল দেখাবেন। তিনি তাঁর চমৎকার প্লটটির সমধান মামুলী উপায়ে কিছুতেই হতে দেবেন না। দুজন নায়ককে মেরে ফেলে লাইন ক্লিয়ার করা অতি সহজ, কিন্তু তাতে বাহাদুরি কিছুই নেই। নায়িকাকেও তিনি মারবেন না অথবা দেশের কাজে বা ধর্মকর্মে তার জীবন উৎসর্গ করবেন না। রামধন প্রতিজ্ঞা করেছেন যে রম্ভার পরিকল্পনাটি বাস্তবে পরিণত করবেনই। কিন্তু শুধু তিন নায়কের একমুখী প্রেম এবং এক নায়িকার ত্রিমুখী প্রেম দেখালেই চলবে না, অন্য নরনারীর সঙ্গেও তাদের প্রেমলীলা দেখাতে হবে, তবেই তাঁর গল্পটি একেবারে অভাবিতপূর্ব বৈচিত্র্যময় রসঘন চমকপ্রদ হবে। প্রথম ধাক্কায় ঘাবড়ে গেলেও সমঝদার পাঠকরা পরে ধন্য ধন্য করবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিন নায়কের সঙ্গে এক নায়িকার মিলন ঠিক কি ভাবে দেখাবেন, তাদের যৌথ জীবনযাত্রার ব্যবস্থা কি রকম করবেন, সমাজের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কি ভাবে বজায় থাকবে—এই রকম নানা সমস্যা তাঁর মনে উঠতে লাগল। রামধন দমবার পাত্র নন। এতটা যখন গড়তে পেরেছেন তখন শেষটাই বা না পারবেন কেন। তাড়াতাড়ি করা ঠিক হবে না, তিনি দিনকতক লেখা বন্ধ রেখে বিশ্রাম নেবেন। তার মধ্যে সমাধানের একটা প্রকৃষ্ট পদ্ধতি নিশ্চয় তার মাথায় এসে পড়বে।
রামধন কলকাতা ছেড়ে কোন্নগরে গঙ্গার ধারে তাঁর এক বন্ধুর বাগানবাড়িতে এসে বিশ্রাম করতে লাগলেন। বিশ্রাম ঠিক নয়, একরকম তপস্যা। তিনি তার মনের বলগা ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁর কল্পনা এলোমেলো নানা পথে সমস্যার সমাধান খুঁজছে।
রাত বারোটা, রামধন বিছানায় শুয়ে সশব্দে ঘুমুচ্ছেন। হঠাৎ তাঁর নাক ডাকা থেমে গেল। জাগা আর ঘুমের মাঝামাঝি অবস্থায় তিনি মশারির ভিতর থেকে দেখলেন, তিনটে ছায়ামূর্তি। মূর্তি ক্রমশ স্পষ্ট আর জীবন্ত হয়ে উঠল। রামধন তাদের চিনতে পারলেন, তাঁর গল্পের তিন নায়ক। তারা একটা গোল টেবিল বৈঠকে বসে তর্ক করছে।
বিদ্যাপতি বলছে, এই যে বিশ্রী বিপরিস্থিতি, এ থেকে উদ্ধার পাবার উপায় তো আমার মাথায় আসছে না।
বিক্রম সিংহ উত্তর দিলে, উপায় আছে। ডুয়েল লড়লে সহজে ফয়সালা হতে পারবে। এই ধর, প্রথমে তোমার সঙ্গে শ্যামসুন্দরের লড়াই হল, তুমি মরে গেলে। তার পর শ্যাম আর আমার লড়াই হল, শ্যাম মরল। তখন আর কোনও ঝঞ্ঝাট থাকবে না, আমার সঙ্গে রম্ভার শাদি হবে।
শ্যামসুন্দর বললে, তুমার মুণ্ড হবে, মানুষ খুন করার জন্য তুমাকে ফাঁসিতে লটকে দেবে। তা ছাড়া এখন হচ্ছে গান্ধীরাজ, খুন জখম চলবে না। আমি বলি কি—লটারি লাগাও।
বিদ্যাপতি বললেন, রম্ভা তাতে রাজী হবে না, ভারী বেয়াড়া মেয়ে। ওকে ছেড়ে দেওয়াই ভাল।
এমন সময় রম্ভা হঠাৎ এসে বললে, তোমরা কি স্থির করলে? তিন জনে একমত হয়েছ তো?
শ্যামসুন্দর বললে, হাঁ, তুমার নাক কাটি দিব। তুমাকে চাই না, আমার দু—গোটা ভাল ভাল বহু দেশে আছে, বিক্রম সিংএর ভি ওমদা ওমদা জোরু আছে। আর বিদ্যাপতিবাবুর বহু তো মজুত রয়েছে, উনি ইচ্ছা করলেই তেলেনা সরকারকে বিয়া করতে পারেন।
নায়কদের এই বিদ্রোহ দেখে রামধন আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। শুয়ে থেকেই হাত নেড়ে বললেন, না না, ওসব চলবে না।
শ্যামসুন্দর বললে, তু কোনরে শড়া? তুই কে?
রামধন উত্তর দিলেন, আমিই গল্পলেখক, তোমাদের স্রষ্টা আর ভাগ্যবিধাতা। তোমরা নিজের মতলবে চলতে পার না, আমি যেমন চালাব তেমনি চলবে। আমার মাথা থেকেই তোমরা বেরিয়েছ।
বিক্রম সিংহ বললে, এই ছুছুন্দরটা বলে কি? এই আমাদের পয়দা করেছে? আমাদের বাপ দাদা পরদাদা নেই?
রম্ভা বললে, কেউ নেই, কেউ নেই, আমরা সব ঝুটো।
বিক্রম সিংহ একটানে খাটের ছতরি খুলে ফেলে একটা কাঠ হাতে নিয়ে রামধনকে বললে, এই, আমরা সব ঝুটা?
রামধন ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন, তা একরকম ঝুটা বই কি—যখন আমারই কল্পনাপ্রসূত আপনারা।
—তুই সাচ্চা না ঝুটা?
—আজ্ঞে আমি তো ঝুটা হতে পারি না।
—এই ডান্ডা সাচ্চা না ঝুটা?
—আজ্ঞে এও ঝুটা নয়।
অনন্তর তিন নায়ক আর এক নায়িকা ছতরির কাঠ দিয়ে বেচারা রামধনকে পিটতে লাগল। স্বামীর আর্তনাদ শুনে রামধন—পত্নী ননীবালার ঘুম ভেঙে গেল, তিনি একটি চিৎকার ছেড়ে মূর্ছিত হলেন। তার পর চার মূর্তি তাণ্ডব নাচতে নাচতে অদৃশ্য হল।
রামধন বেশী জখম হন নি। একটু পরে তিনি প্রকৃতিস্থ হয়ে কোনও রকমে বিছানা থেকে উঠলেন এবং ননীবালার মুখে চোখে জলের ছিটে দিয়ে তাঁকে চাঙ্গা করলেন।
ননীবালা ক্ষীণস্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, গেছে?
–গেছে।
–ডাকাত?
–ডাকাত নয়।
–সাহিত্যিক গুণ্ডা?
—তাও নয়। বেতাল জান? নিরাশ্রয় প্রেত মরা মানুষের দেহে ভর করলে বেতাল হয়।
শুনেছি, যদি পছন্দ মতন লাশ না পায় তবে তারা গল্পের খাতায় ঢুকে গিয়ে নায়ক—নায়িকার ওপর ভর করে। এ তাদেরই কাজ।
—তোমার ওপর ওদের রাগ কেন?
—বোধ হয় সেকেলে প্রেতাত্মা, আমার প্লটের রসগ্রহণ করতে পারে নি।
—তুমি আর ছাই ভস্ম লিখো না বাপু।
রাম বল, আর লিখব! দেখছ না, আমার সমস্ত খাতা কুচি কুচি করে ছিঁড়েছে, দামী ফাউনটেন পেনটা চিবিয়ে নষ্ট করেছে, ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা থেঁতলে দিয়েছে। তোমার দিদিমার গুরুদেব বিষ্ণুপ্রয়াগে থাকেন না? তাঁর আশ্রমেই বাস করব ভাবছি। ভোরের গাড়িতে কলকাতায় ফিরে যাই চল, তার পর দিন দুইয়ের মধ্যে সব গুছিয়ে নিয়ে চুপি চুপি বিষ্ণুপ্রয়াগ রওনা হব।
১৩৫৮ (১৯৫১)