জটাধর বকশী

জটাধর বকশী

নূতন দিল্লির গোল মার্কেটের পিছনে কুচা চমৌকিরাম নামে একটি গলি আছে। এই গলির মোড়েই কালীবাবুর বিখ্যাত দোকান ক্যালকাটা টি ক্যাবিন। এখানে চা বিস্কুট সস্তা কেক সিগারেট চুরুট আর বাংলা পান পাওয়া যায়, তামাকের ব্যবস্থা আর গোটকতক হুঁকোও আছে। দু—এক মাইলের মধ্যে যেসব অল্পবিত্ত বাঙালী বাস করেন তাঁদের অনেকে কালীবাবুর দোকানে চা খেতে আসেন। সন্ধ্যার সময় খুব লোকসমাগম হয় এবং জাঁকিয়ে আড্ডা বসে।

পৌষ মাস পড়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে ছটা, বাইরে খুব ঠাণ্ডা, কিন্তু কালীবাবুর টি ক্যাবিন বেশ গরম। ঘরটি ছোট, এক দিকে চায়ের উনুন জ্বলছে, পনের—ষোল জন পিপাসু ঘেঁষা—ঘেঁষি করে বসেছেন। সিগারেট চুরুট আর তামাকের ধোঁয়ায় ঘরের ভিতর ঝাপসা হয়ে গেছে।

রামতারণ মুখুজ্যে কথা বলছিলেন। এঁর বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি। মিলিটারী অ্যাকাউণ্টসে কাজ করতেন, দশ বছর হল অবসর নিয়েছেন। দুই ছেলেও দিল্লিতে চাকরি পেয়েছে, সেজন্য রামতারণ এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। ইনি একজন সবজান্তা লোক, কথা বলতে আরম্ভ করলে থামতে চান না, অন্য লোককে কিছু বলবার অবকাশও দেন না। চায়ের আড্ডায় সবাই এঁকে উপাধি দিয়েছে—বিরাট ছেঁদা, অর্থাৎ দ গ্রেট বোর।

রামতারণবাবু বলছিলেন, আরে না না, তোমাদের ধারণা একবারে ভুল। ভূত আর প্রেত স্বতন্ত্র জীব, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি শোন। মৃত্যুর পর মানুষ যত দিন বায়ুভূত নিরালম্ব নিরাশ্রম হয়ে থাকে, অর্থাৎ যে পর্যন্ত আবার জন্মগ্রহণ না করে তত দিন সে প্রেত। কিন্তু—

স্কুল মাস্টার কপিল গুপ্ত বললেন, অর্থাৎ পরলোকের ভ্যাগাবণ্ডরাই প্রেত।

বক্তৃতায় বাধা পাওয়ায় রামতারণ বিরক্ত হয়ে বললেন, ফাজলামি রাখ, যা বলছি শুনে যাও। মৃত্যুর পর মানুষ চিরকাল প্রেত হয়ে থাকে না, আবার জন্মায়। ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ। কিন্তু যারা ভূত তারা চিরকালই ভূত।

কপিল গুপ্ত আবার বললেন, বুঝেছি। যেমন গাজনের সন্ন্যাসী আর লোটা—চিমটা—কম্বল—ধারী বারমেসে সন্ন্যাসী।

—আঃ চুপ কর না। মরা মানুষের আত্মা হল প্রেত, বিলিতি গোস্টও প্রেত। কিন্তু পিশাচ আর পল্টারগাইস্টকে ভূত বলা যেতে পারে। ভূত হল অপদেবতা, তারা নাকে কথা কয়, ভয় দেখায়, ঘাড় মটকায়, নানা রকম উপদ্রব করে। কিন্তু প্রেত সে রকম নয়, জীবন্দশায় যার যেমন স্বভাব, প্রেত হলেও তাই থাকে। তবে চলিত কথায় প্রেতকেও লোকে ভূত বলে।

এই সময় একজন অচেনা লোক ঘরে প্রবেশ করলেন। বয়স আন্দাজ পঁয়তাল্লিশ, ছ ফুট লম্বা, মজবুত গড়ন, মোচড় দেওয়া কাইজারী গোঁফ। গায়ে কালচে খাকী মিলিটারী ওভারকোট, পরনে ইজার আছে কি ধুতি আছে বোঝা যায় না, মাথায় পাগড়ির মতন বাঁধা কম্ফর্টার। আগন্তুক ঘরে এসে বাজখাঁই গলায় বললেন, নমস্কার মশাইরা, এখানে আপনাদের সঙ্গে বসে একটু চা খেতে পারি কি?

কয়েক জন এক সঙ্গে উত্তর দিলেন, বিলক্ষণ, চা খাবেন তার আবার কথা কি, এ তো চায়েরই দোকান। ওহে কালীবাবু, এই ভদ্রলোককে চা দাও। আপনাকে তো আগে কখনও দেখি নি, নতুন এসেছেন বুঝি?

—নতুন নয়, দিল্লি আমার খুব চেনা জায়গা, তবে সম্প্রতি বহু কাল পরে এসেছি। পুরনো দিল্লির কেউ কেউ এখনও হয়তো আমার নাম মনে রেখেছেন—জটাধর বকশী। ও ম্যানেজারমশাই, দয়া করে আমাকে বেশ বড় এক পেয়ালা চা দিন, খুব গরম আর কড়া। একটা মোটা বর্মা চুরুট, দশ খিলি পান, এক ধেবড়া চুন, আর অনেকখানি দোক্তাও দেবেন। হাঁ, তার পর ভূত প্রেতের কি যেন কথা হচ্ছিল আপনাদের। আমি একটু শুনতে পাই কি? এসব কথায় আমার খুব আগ্রহ আছে।

একজন উৎসুক নতুন শ্রোতা পেয়ে রামতারণবাবু খুশী হয়ে বললেন, হাঁ হাঁ শুনবেন বইকি। বলছিলুম, ভূত আর প্রেত আসলে আলাদা জীব, তবে সাধারণ লোকে তফাত করে না। বাদশাহী আর ব্রিটিশ জমানায় ভূত প্রেতের কথা অনেক শোনা যেত, কিন্তু এখনকার এই সেকিউলার ভারতে তারা ফৌত হয়ে যাচ্ছে। গুরুমহারাজ পানিমহারাজ রাজজ্যোতিষী নেপালবাবা ইত্যাদির ওপর লোকের ভক্তি খুব বেড়েছে বটে, কিন্তু ভূত প্রেতের ওপর আস্থা কমে গেছে, সেজন্য তাদের দেখা পাওয়া এখন কঠিন।

কপিল গুপ্ত বললেন, বিশ্বাসে মিলায়ে ভূত, তর্কে বহু দূর।

জটাধর বকশী বললেন, ঠিক কথা, কিন্তু ভূত যদি প্রবল হয় তবে অবিশ্বাসীকেও দেখা দেয়। যদি অনুমতি দেন তো আমি কিছু বলি।

রামতারণবাবু ভ্রূ কুঁচকে বললেন, আপনি ভূতের কি জানেন? গেল বছর যখন চাঁদনি চকের ঘড়িটা পড়ে গেল।

তিন—চার জন একবাক্যে বললেন, মুখুজ্যেমশাই, দয়া করে আপনি একটু থামুন, এঁকে বলতে দিন।

জটাধর বকশী বলতে লাগলেন।—বাদশা জাহাঙ্গীরের আমলে দিল্লিতে একবার প্রচণ্ড ভূতের উৎপাত হয়েছিল, আমাদের ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর তার চমৎকার বৃত্তান্ত লিখেছেন। ভবানন্দ মজুমদারের ইষ্টদেবীকে জাহাঙ্গীর ভূত বলে গাল দিয়েছিলেন। প্রভুর আশকারা পেয়ে বাদশাহী সিপাহীরা ভবানন্দকে বললে—

অরে রে হিন্দুর পুত দেখলাও কঁহা ভূত

নহি তুঝে করুঙ্গা দো টুক।

ন হোয় সুন্নত দেকে কমলা পড়াঁও লেকে

জাতি লেউঁ খেলায়কে থুক।।

তখন ভবানন্দ বিপন্ন হয়ে দেবীকে ডাকলেন। ভক্তের স্তবে তুষ্ট হয়ে মহামায়া ভূতসেনা পাঠালেন, তারা দিল্লি আক্রমণ করলে—

ডাকিনী যোগিনী শাঁখিনী পেতিনী গুহ্যক দানব দানা।

ভৈরব রাক্ষস বোক্কস খোক্কস সমরে দিলেক হানা।।

লপটে ঝপটে দপটে রবটে ঝড় বহে খরতর।

লপ লপ লম্ফে ঝপ ঝপ ঝম্ফে দিল্লি কাঁপে থরথর।।…

তাথই তাথই হো হো হই হই ভৈরব ভৈরবী নাচে।

অট্ট অট্ট হাসে কট মট ভাষে মত্ত পিশাচী পিশাচে।।

অবশেষে বেগতিক দেখে বাদশা ভবানন্দের শরণাপন্ন হলেন, বিস্তর, ধন—দৌলত খেলাত আর রাজগির ফরমান দিয়ে তাঁকে খুশী করলেন, তখন ভূতের উৎপাত থামল। সেকালেরতুলনায় আজকাল ভূত প্রেত কিঞ্চিৎ দুর্লভ হয়েছে বটে, কিন্তু এই দিল্লিতে এখনও ভূত দেখা যায়।

কপিল গুপ্ত বললেন, মুখুজ্যেমশাই, আপনি তো প্রাচীন লোক, বহুকাল দিল্লিতে আছেন, ভূতের সঙ্গে কখনও আপনার মোলাকাত হয়েছিল?

রামতারণ বললেন, আমি নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ, তোমাদের মতন অখাদ্য খাই না, নিত্য সন্ধ্যা—আহ্নিক করি। ভূতের সাধ্য নেই যে আমার কাছে ঘেঁষে।

কপিল গুপ্ত বললেন, আচ্ছা জটাধরবাবু, আপনাকে তো একজন চৌকস লোক বলে মনে হচ্ছে, আপনি ভূত দেখেছেন?

জটাধর বললেন, নিরন্তর দেখছি, ভূত দেখা অতি সহজ।

—বলেন কি! দয়া করে আমাদের দেখান না।

রামতারণ বললেন, ওসব বুজরুকি আমার কাছে চলবে না। ভূত প্রেত মানি বটে, একলা অন্ধকারে ভয়ও পাই, কিন্তু জটাধর কি ঘটাধর বাবু ভূত দেখাতে পারেন এ কথা বিশ্বাস করি না। কলেজে আমি রীতিমত সায়েন্স পড়েছি, ম্যাজিকওয়ালাদের জোচ্চুরিও আমার জানা আছে।

অট্টহাস্য করে জটাধর বললেন, যদি আপনাকে ভূত দেখাই?

—দেখাবেন বললেই হল! কবে দেখাবেন? কোথায় দেখাবেন? কখন দেখাবেন?

—আজই, এখানেই, এখনই দেখাতে পারি।

কপিল গুপ্ত বললেন, দেখিয়ে ফেলুন মশাই, আর দেরি করবেন না, আমাদের বাড়ি ফেরবার সময় হল। কিন্তু কি দেখাবেন, ভূত না প্রেত?

রামতারণবাবু প্রতিবাদ সইতে পারেন না। চটে গিয়ে বললেন, বেশ এখনই দেখান ভূত প্রেত বেম্মদত্য শাঁখচুন্নী যা পারেন। আমি বাজি রাখছি যে আপনি পারবেন না, শুধু ধাপ্পা দিচ্ছেন। ভূত দেখানো আপনার সাধ্য নয়।

জটাধর বললেন, আপনার চ্যালেঞ্জ মেনে নিলুম। মোটা টাকা বাজি রাখতে চাই না, কারণ আপনি নিশ্চয় হারবেন। ছা—পোষা পেনশনভোগী বুড়ো মানুষ, আপনার ক্ষতি করবার ইচ্ছে নেই। এই বাজি রাখা যাক যে ভূত যদি দেখাতে পারি তবে আমার চা চুরুট পানের দাম আপনি দেবেন। আর যদি হেরে যাই তবে আপনি যা খেয়েছেন তার দাম আমি দেব। রাজী আছেন? আপনারা সবাই কি বলেন?

সবাই বললেন, খুব ভাল প্রস্তাব, ভেরি ফেয়ার অ্যান্ড জেণ্টলম্যানলি।

বর্মা চুরুটের উগ্র ধোঁয়া উদগিরণ করতে করতে জটাধর বকশী বলতে লাগলেন।—উনিশ শ একচল্লিশ সালের কথা। তখন আমি বর্মায় জেনারেল সিওয়েলের স্যাপার্স অ্যাণ্ড মাইনার্স এর দলে সিনিয়র হাবিলদার—আমিন। বর্মা থেকে চীন পর্যন্ত যে রাস্তা তৈরি হচ্ছিল তারই জরিপ আমাকে করতে হত। আমার ওপরওয়ালা অফিসার ছিলেন ক্যাপ্টেন ব্যাবিট।

রামতারণবাবু বললেন, ওসব বাজে কথা কি বলছেন, আপনার চাকরির বৃত্তান্ত আমরা শুনতে চাই না। ভূত দেখাতে পারেন তো দেখান।

দুই হাত নেড়ে আশ্বাস দিয়ে জটাধর বললেন, ব্যস্ত হবেন না সার। আমার কথাটি শেষ হবামাত্র ভূত দেখতে পাবেন। তখন জাপানীরা দক্ষিণ বর্মায় পৌঁছেছে, তাদের আর এক দল থাইল্যাণ্ডের ভেতর দিয়ে বর্মার উত্তর—পূর্ব দিকে হানা দিচ্ছে। আমাদের সার্ভে পার্টি সে সময় শান স্টেটের উত্তরে কাজ করছিল। দলটি খুব ছোট, ক্যাপ্টেন ব্যাবিট, আমি, পাঁচজন গোর্খা সেপাই, পাঁচজন বর্মী কুলী, একটা জিপ, আর আমাদের তাঁবু রসদ থিওডোলাইট লেভেল চেন ঝাণ্ডা ইত্যাদি বইবার জন্য চারটে খচ্চর। আমরা যেখানে ছাউনি করেছিলুম সে জায়গাটা পাহাড় আর জঙ্গলে ভরা, মানুষের বাস নেই। বাঘ ভালুক হুড়ার প্রভৃতি জানোয়ারের খুব উপদ্রব। বন্দুক দিয়ে মারা বারণ, পাছে শত্রুরা টের পায়। ব্যাবিট সায়েবের সঙ্গে এক টিন স্ট্রিকনীনের বড়ি ছিল, জিলাটিন দিয়ে মোড়া, পেটে গেলে তিন মিনিটের মধ্যে গলে যায়। মাংসের টুকরোর সঙ্গে সেই বড়ি মিশিয়ে ক্যাম্পের বাইরে ফেলে রাখা হত, রোজই দু—চারটে জানোয়ার মারা পড়ত।

একদিন গুজব শোনা গেল যে জাপানীরা আমাদের বিশ মাইলের মধ্যে এসে পড়েছে। ক্যাপ্টেন ব্যাবিট বললেন, ওহে বকশী শুধু তুমি আর আমি একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি চল, আর সবাই ক্যাম্পেই থাকুক। চিয়াং কাই—শেক আমাদের সাহায্যের জন্য একটা চীনা পল্টন ইউনান থেকে পাঠিয়েছেন, আজ তাদের এখানে পৌঁছবার কথা। দেখতে হবে তাদের কোনও পাত্তা মেলে কিনা।

আমরা দুজনে উত্তর—পূর্ব দিকে চার—পাঁচ মাইল হেঁটে চললুম। সামনে একটা নিবিড় জঙ্গল, তার ওধারে একটা ছোট পাহাড়। সায়েব বললেন, ওই পাহাড়ের ওপর উঠে দুরবীন দিয়ে চারিদিক দেখতে হবে। আমরা জঙ্গলে ঢুকলুম, সঙ্গে সঙ্গে জন পঞ্চাশ জাপানী আমাদের ঘিরে ফেললে।

রামতারণবাবু অধীর হয়ে বললেন, ওহে বকশী, তুমি তো কেবলই বক বক করে চলেছ। শেষকালে হয়তো বলবে যে তুমি নিজেই একটি জাপানী ভূত দেখেছিলে। সেটি চলবে না বাপু, তোমার দেখা ভূত মানব না।

জটাধর বললেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আর একটু পরেই আপনারা সবাই স্বচক্ষে ভূত দেখবেন। তারপর শুনুন।—ক্যাপ্টেন ব্যাবিট বললেন, বকশী, আত্মরক্ষার কোনও উপায় নেই, হাত তুলে সরেণ্ডার কর। আমরা হাত তুলতেই জাপানীরা কাছে এল। এমন রোগা হাড্ডি—সার পল্টন কোথাও দেখি নি। তাদের তিন—চার জন আমাদের গাল কাঁধ হাত পা টিপে টিপে দেখতে লাগল, একজন সায়েবের কাঁধে কামড়ে দিলে, আর সবাই তাকে ধমক দিয়ে টেনে নিয়ে গেল।

ব্যাবিট সায়েব একটু আধটু জাপানী ভাষা বুঝতেন জিজ্ঞাসা করলুম এদের মতলব কি? সায়েব বললেন, মাই পুওর বকশী, বুঝতে পারছ না? এদের ভাঁড়ার শূন্য, রসদ যা আসছিল শান ডাকাতরা লুট করে নিয়েছে, সাত দিন উপোস করে আছে, খিদেয় পেট জ্বলছে। তার পর দেখলুম ওদের কয়েকজন একটা উনন বানিয়ে আগুন জ্বেলেছে, তার ওপর মস্ত একটা ডেকচি চাপিয়েছে।

টি ক্যাবিনে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে বীরেশ্বর সিংগি একটু বেশী ভীতু। ইনি শিউরে উঠে বললেন, এই সময় চীনা পল্টন এসে পড়ল বুঝি?

জটাধর বললেন, কোথায় পল্টন! চারজন জাপানী এগিয়ে এল, দুজনের হাতে দড়ি, আর দুজনের হাতে তলোয়ার। সায়েব বললেন, বকশী, এই চারটে বড়ি এখনই গিলে ফেল। আমি বললুম, আগে থাকতেই বিষ খেয়ে মরব কেন, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। সায়েব ধমক দিয়ে বললেন, যা বলছি তাই কর, আমি তোমার কমান্ডিং অফিসার, অবাধ্য হলে কোর্ট মার্শালে পড়বে। কি আর করা যায়, বড়ি চারটে গিলে ফেললুম, সায়েবও গিললেন।

বীরেশ্বর সিংগি আঁতকে উঠে বললেন, অ্যাঁ, বিষ খেলেন? তার পর চীনা ফৌজের ডাক্তার এসে বিষ বার করে ফেললে বুঝি?

—চীনা ফৌজ এক ঘণ্টা পরে এসেছিল। আমাদের যা হল শুনুন। দুটো জাপানী আমাদের হাত পা বেঁধে ঘাড় নীচু করে বসিয়ে দিলে। আর দুটো জাপানী তলোয়ার দিয়ে ঘ্যাঁচ—

বীরেশ্বরবাবু মাথা চাপড়ে চিৎকার করে বললেন, ওরে বাপ রে বাপ!

—হাঁ মশাই, তলোয়ারের চোপ দিয়ে ঘ্যাঁচ করে আমাদের মুণ্ডু কেটে ফেললে।

রামতারণবাবু ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন, তবে বেঁচে আছেন কি করে?

বজ্রগম্ভীর স্বরে জটাধর বকশী বললেন, কে বললে বেঁচে আছি? আপনার হুকুমে বাঁচতে হবে নাকি? আমাদের কেটে টুকরো টুকরো করলে, ডেকচিতে সেদ্ধ করলে, চেটে পুটে খেয়ে ফেললে, খিদের চোটে স্ট্রিকনীনের তেতো টেরই পেলে না। তারপর তিন মিনিটের মধ্যে সব কটা জাপানী কনভলশন হয়ে পটপট করে মরে গেল। ক্যাপ্টেন ব্যাবিটের মতন বিচক্ষণ অফিসার দেখা যায় না মশাই, আশ্চর্য দূরদৃষ্টি। আচ্ছা, আপনারা বসুন, আমি এখন চললুম। ও কালীবাবু, আমার বিলটা রামতারণবাবুই শোধ করবেন। নমস্কার।

১৩৫৯ (১৯৫২)