ভারত সফর
চবিশা অধ্যায়
১. পাক-ভারত বাণিজ্য চুক্তি
যথাসময়ে এক হাতে লাঠিতে অপর হাতে অন্যের কাঁধে ভর করিয়া দিল্লি গেলাম বোধ হয় ১৯৫৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি। অফিসারদের এক বাহিনী সাথে গেলেন। তার উপর গেলেন আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে মহফুয আনাম ওরফে তিতু মিয়া। তার বয়স তখন মাত্র ন বছর। দিল্লি বিমান বন্দরে ভারতের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী মিঃ মুরারজী দেশাই আমাদের অভ্যর্থনা করিলেন। আমার থাকার ব্যবস্থা হইল নিয়াম-ভবনে। বিরাট ও বিশাল শাহী বালাখানা। এলাহি কারখানা। অফিসারদেরে স্থান দেওয়া হইল অশোক হোটেলে। কূটনৈতিক জগতে বিস্ময় সৃষ্টি করিয়া আমি রাষ্ট্রপতি ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ও প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুর জন্য দুই হাড়ি মধুপুরের মধু লইয়া গিয়াছিলাম। বক্তৃতায় বলিলাম : পাকিস্তানের জনগণ ভারতের জনগণের সাথে যে প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন করিতে চায় তারই প্রতীক এই মধু। পাকিস্তান ও ভারত উভয়েই ভারত মাতার যমজ-সন্তান। দুই সহোদর। ভারতীয় কাগযে ’সাধু সাধু’ রব ধ্বনিত হইল।
প্রেসিডেন্ট ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ও প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুর পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ সহানুভূতির ফলে আমাদের সমস্ত দাবি-দাওয়াই চুক্তিতে গৃহীত হইল। চুক্তির মেয়াদ আমাদের দাবি মত তিন বছর করা ছাড়াও তিনটি বিষয়ে ভারত আমাদের প্রতি বিশেষ বন্ধুত্বের পরিচয় দিল : (১) প্রচলিত ছয় লক্ষ বেলের জায়গায় আঠার লক্ষ বেল পাট আমদানি করিতে রাযী হইল; (২) ৫০ হাজার টন ভারতীয় সিমেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে দিয়া তার বদলা ঐ পরিমাণ সিমেন্ট পশ্চিম পাকিস্তান হইতে নিতে রাযী হইল। (৩) পূর্ব-পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় সমস্ত কয়লা সরবরাহ করিতে এবং রেলযোগে পূর্ব-পাকিস্তান রেল-মুখে পৌঁছাইয়া দিতে রাযী হইল। জিরাতিয়াদের সমস্যার সমাধান হইল। একবার প্রীতির ভাব প্রতিষ্ঠিত হইয়া গেলে উদারতার দরজাও প্রসারিত হয়। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের তাই হইল। উভয় পাকিস্তানের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের জন্য ভারতের মধ্যে দিয়া থুরেল চালাইবার যে স্বপ্ন আমরা দেখিয়াছিলাম, ভারতের নেতৃবৃন্দ সে প্রস্তাবও বিবেচনা করিতে রাযী হইলেন। কথা হইল উভয় দেশের রেল মন্ত্রীদ্বয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন।
২. পাক-ভারত সম্পর্কে নূতনত্ব
আমাদের আলোচনার মধ্যে যে প্রীতি-সদ্ভাবের আবহাওয়া বিরাজ করিতেছিল, তা শুধু কূটনৈতিক ভাষার প্রতি সদ্ভাব ছিল না। অনেকটা আন্তরিক সদ্ভাব ছিল। বাণিজ্য চুক্তি সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় বিষয় হইলেও আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সরকারদ্বয়কে গোড়া হইতেই পাক-ভারত বাণিজ্য আলোচনায় শামিল করিয়াছিলাম। এই উদ্দেশ্যে আমার বিশেষ আমন্ত্রণে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খাঁ ও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী মিঃ মোযাফফর হুসেন কিযিলবাস তাঁদের অফিসার দলসহ দিল্লিতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। দিল্লি পৌঁছিয়াই আমি প্রথম কাজ করি পণ্ডিত নেহরুর সংগে সাক্ষাৎকার। জনাব আতাউর রহমান ও জনাব মুজিবুর রহমান এ সাক্ষাৎকারে শামিল ছিলেন। জনাব সুহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বর্তমান পাকিস্তান সরকার যে ভারতের সাথে সত্যিকার বন্ধু ভাবে যার-তার আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে শান্তি ও প্রীতিতে বাস করিতে চান, সে কথা আমরা পণ্ডিত নেহরুকে বুঝাইবার চেষ্টা করি। পাক-ভারত সম্পর্ক সম্বন্ধে মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগের মতাদর্শের বুনিয়াদী পার্থক্য আমরা তাঁকে বুঝাইয়া দেই। এটা বিশেষভাবে দরকার হয় এইজন্য যে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক প্রভাবশালী শ্রেণীর মনোভাব আমাদের নেতা সুহরাওয়ার্দীর প্রতি অতিশয় বিরূপ ছিল। পাকিস্তান সংগ্রামের সময়ের এবং পাকিস্তান হাসিলের পরের ভূমিকায় জনাব সুহরাওয়ার্দী এপ্রোচের পার্থক্য গণতান্ত্রিকতা যৌক্তিকতা ও নির্ভুলতার দিকে আমরা পণ্ডিত নেহরুর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আমরা দেখিয়া পুলকিত হই যে জনাব সুহরাওয়ার্দীর প্রতি পণ্ডিত নেহরুর মনোভাব সাধারণ হিন্দু-মনোভাব হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তিনি স্পষ্টই বলেন যে, সুহরাওয়ার্দী-নেতৃত্বে পাক-ভারত সম্পর্কের মধ্যে উভয় পক্ষ হইতে বাস্তববাদী দৃষ্টিভংগির উন্মেষ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। জনাব আতাউর রহমান ও জনাব মুজিবুর রহমান বিশেষভাবে পূর্ব-পাকিস্তানের অভাব-অভিযোগঞ্জর উল্লেখ করেন। পূর্ব-পাকিস্তান চার দিক দিয়া ভারত-বেষ্টিত। পূর্ব-পাকিস্তানবাসীর শান্তিপূর্ণ নিরাপত্তা-বোধ অনেকখানি নির্ভর করে ভারত সরকার এবং পশ্চিম বাংলা ও আসাম সরকারের নীতি ও মনোভাবের উপর। আমরা দেখিয়া সুখী হইলাম যে পণ্ডিত নেহরু পূর্ব-পাকিস্তানের অসুবিধা-অভিযোগের প্রতি সম্পূর্ণ সচেতন ও সহানুভূতিশীল। আমরা আন্তরিক সৌহার্দের মধ্যে আমাদের সাক্ষাৎকার সমাপ্ত করিলাম।
ভারত সফর এই পরিবেশে আমাদের বাণিজ্য-চুক্তির আলোচনা শুরু হইয়াছিল বলিয়াই আমাদের নয়া দিল্লি গমন এমন সফল হইয়াছিল। আমরা করাচি হইতে যেসব প্রস্তাব ও শর্ত যে আকারে লইয়া আসিয়াছিলাম, প্রায় সবগুলিই সেইরূপেই গৃহীত হইয়াছিল। বাণিজ্য সেক্রেটারি জনাব আযিয আহমদ খুটি-নাটি নির্ধারণে ও চুক্তির ভাষা রচনায় সম্পূর্ণ দক্ষতার পরিচয় দেন। ঐ দক্ষতার জন্য আমি তাঁর তারিফ করিতে গেলে তিনি হাসিয়া বলিয়াছিলেন : ‘সার, সব কৃতিত্ব আপনার। কারণ সর্বত্র আপনি মধু মাখাইয়া রাখিয়াছিলেন।‘ দেখিলাম, আযিয় আহমদ সাহেবের ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হইয়াছে।
সরকারী কাজ ছাড়া নয়া দিল্লিতে আমি দুইটা বেসরকারী কাজ করিয়াছিলাম। একটা মওলানা আজাদ সাহেবের সংগে মোলাকাত। অপরটি মনের মত, বোধ হয় শেষবারের মত, পুরান দিল্লি দেখিয়া লওয়া। দ্বিতীয় কাজটির ব্যাপারে আমার স্ত্রী আরও বেশি করিয়াছিলেন। আমাদের সরকারী বৈঠকাদির ফাঁকে-ফাঁকে সব দর্শনীয় বস্তু মায় আগ্রার তাজমহলাদি দেখিয়া লইয়াছিলেন। ফলে সরকারী কাজের শেষে আমি যখন মোগল-পাঠান দিল্লির দর্শনীয় বস্তুসমূহ দেখিতে বাহির হইলাম, তখন তিনি আমার আগে-আগে চলিয়া এবং আমাকে এটা-ওটা বুঝাইয়া এমন ভাবখানা দেখাইলেন, যেন বাংগালকে তিনি হাইকোর্ট দেখাইতেছেন।
মওলানা আযাদের সাথে দেখা না করিয়া নয়াদিল্লি ছাড়িব না, একথা আগেই স্থির করিয়া রাখিয়াছিলাম। বন্ধুবর হুমায়ুন কবিরকে আগেই সেকথা বলিয়া রাখিয়া ছিলাম। হুমায়ুন কবির তখন মওলানার সেক্রেটারি হইতে স্টেট-মিনিস্টারের পদে উন্নীত হইয়াছেন। তবু যোগাযোগ আগের মতই আছে। কাজেই আমাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থার তিনি ভার নিলেন। একবেলা সেখানে খাওয়ার কথা উঠিলে অফিসাররা বলিলেন তার সময় হইবে না। কারণ আমাকে আমার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী মিঃ মুরারজী দেশাইর ওখানে একটি পারিবারিক ডিনার খাইতে হইবে।
৩. দেশাইর ডিনার
সত্য-সত্যই মিঃ দেশাই একদিন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে আমাকে দাওয়াত করিলেন এবং আমার স্ত্রীকে দাওয়াত করিবার জন্য দরবার হল হইতে আমার সুইটে আসিলেন। আগেই বলিয়াছি নিযাম ভবনেরই একটি কনফারেন্স হলে আমাদের বাণিজ্য চুক্তির কনফারেন্স হইতেছিল। নির্ধারিত সময়ে মিঃ দেশাইর বাড়িতে গেলাম। দেখা গেল, পারিবারিক-ডিনার সত্য-সত্যই পারিবারিক। ছোট একটি ডিনার টেবিলে ছয়জনের বসিবার ব্যবস্থা। মিঃ ও মিসেস দেশাই, আমি ও আমার স্ত্রী। আমার নয় বৎসরের ছোট ছেলেটার প্রতিপক্ষ রূপে ঐ বয়সের তাঁদের একটি ছেলেকে টেবিলে বসান হইয়াছে। খানার আগে খানার পরে মোট ঘন্টা দুই আমরা নীরবে শান্তিতে অফিসার সংগহীন অবস্থায় একা-একা আলাপ করিতে পারিয়াছিলাম। তাতে দেশাই পরিবারের প্রতি আমরা সকলে এবং মিঃ দেশাইর প্রতি আমি আকৃষ্ট হইয়া পড়িয়াছিলাম। তিনি ভয়ানক গোড়া ব্রাহ্মণ হিন্দু, একথা আগেই শুনিয়াছিলাম। পারিবারিক ডিনারের দাওয়াত কূটনৈতিক ব্যবস্থার কোন অংশ নয়। মিঃ দেশাই এ ধরনের পারিবারিক ডিনারের দাওয়াত আর কোনও বিদেশী শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রীকে করেন নাই বলিয়াও সকলে বলাবলি করিলেন। আমাকেই কেন তিনি এই ধরনের দাওয়াত করিলেন, তাও কেউ বুঝিলেন বলিয়া মনে হইল না। কাজেই আমি যথেষ্ট সংকোচ ও দ্বিধার মধ্যেই মিঃ দেশাইর বাড়িতে আসিয়াছিলাম। কিন্তু তাঁদের ব্যবহারে আদর-যত্নে আলাপে-আলোচনায় আমাদের সকল দ্বিধা-সংকোচ দূর হইয়া গেল। নিষ্ঠাবান হিন্দু ব্রাহ্মণের বাড়িতে ডিনার খাইয়া আমরা মুগ্ধ হইলাম। নিষ্ঠাবান গোড়া হিন্দু সত্যই। মাছ-গোশূতের কোনও বালাই নাই। কিন্তু মাছ-গোশত ছাড়াও কি উপাদেয় ডিনার হইতে পারে তা দেখাইয়া দিলেন মিসেস দেশাই। নিজ হাতে পাক করিয়াছেন; নিজ হাতে পরিবেশন করিলেন। নিজে আমাদের সাথে টেবিলে বসিয়া খাইলেন। আমার স্ত্রীর সাথে মিসেস দেশাইর বনিলও ভাল। উনার বোম্বাইয়া হিন্দী আর ইনার বাংগালী উর্দু। মিলিল ভাল। দুই ঘন্টা কাটাইতে তাঁদের কোনও অসুবিধা হইল না। ভাষা না বুঝিলেও বোধ হয় চলিত। নারীরা নাকি ভাষার চেয়ে চোখ-মুখ ও হাতের ইশারায়ই কথা বলে বেশি। মানুষ চিনিবার ও বন্ধু বাছিবার পক্ষে নাকি তাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আমরা পুরুষরা দুইজন আমাদের নিজস্ব দফতরের আলোচনাতেই বেশিক্ষণ কাটাইলাম। পাক-ভারতের সম্পর্কের কথা বিশেষ বলিলাম না বোধ হয় উভয় পক্ষ হইতে ইচ্ছা করিয়াই। কাজেই শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপারে আমরা কে কি করিতে চাই তার আলোচনাতেই কাল কাটাইলাম।
৪. মওলানা আযাদের খেদমতে
পরদিনই গেলাম মওলানা আযাদ সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে। বন্ধুবর হুমায়ুন কবির আমাদের সংগে গেলেন। আর থাকিলেন সেখানে মওলানা সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারি মিঃ খোরশেদ। আলাপ তিনজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় খুবই প্রাণখোলা হইল যাকে বলে হার্ট-টু-হার্ট। প্রায় এক ঘন্টা থাকিলাম। কাজেই অনেক কথা হইল। পাক-ভারত সম্পর্ক, ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থা, পাকিস্তানের ভবিষ্যত ইত্যাদি ইত্যাদি। অত বড় পণ্ডিত অত বড় আলেম বিশ্ব-রাজনীতির এত সূক্ষ্মদর্শী বিচারক যেসব কথা বলিলেন, তার সবই শুনিবারও চিন্তা করিবার বস্তু। সুতরাং গোগ্রাসে গিলিলাম। কিন্তু আমাদের নিজেদের আশু বিচার্য ও কর্তব্য সম্বন্ধে তিনি যা বলিয়াছিলেন, সেটাই মাত্র সংক্ষেপে স্মরণ করিতেছি। তিনি যা বলিলেন তার সারমর্ম এই : ‘আমি সারা অন্তর দিয়া সমস্ত শক্তি দিয়া পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করিয়াছি। আজ তেমনি সারা অন্তর দিয়া পাকিস্তানের স্থায়িত্ব ও সাফল্য কামনা করিতেছি। শক্তি থাকিলে এ কাজে সহায়তাও করিতাম। পাকিস্তান না হইলে ভারতীয় মুসলমানদের ক্ষতি হইত, এটা আমি আগেও বিশ্বাস করিতাম না, এখনও করি না। কিন্তু পাকিস্তান যখন একবার হইয়া গিয়াছে, তখন ওটাকে টিকিতেই হইবে এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র হইতে হইবে। না হইলে শুধু পাকিস্তানের মুসলমানদের নয় ভারতের মুসলমানদেরও ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তোমরা পাকিস্তানীরা সর্বদা একথা মনে রাখিও। এ জন্য দরকার পাক-ভারতের মধ্যে বাস্তব বুদ্ধিজাত সম্মানজনক সমঝোতা। তার জন্য তোমরা তৈয়ার হও। আমি যতদিন আছি, নেহরু যতদিন আছেন, এদিকে সহানুভূতির অভাব ততদিন হইবে না।‘ চিন্তাভারাক্রান্ত মনে মওলানা সাহেবের নিকট হইতে বিদায় হইলাম।
৫. নির্বোধের প্রতিবাদ
কিন্তু পাক-ভারত সমঝোতা যে কঠিন কাজ, এটা দিলি বসিয়াই আমি টের পাইলাম। নয়াদিল্লিতে আমার মধু লইয়া আসা ও পাকিস্তান-হিন্দুস্থানকে ভারত মায়ের যমজ সন্তান বলায় ‘মর্নিং নিউয’ ও অন্যান্য মুসলিম লীগবাদী খবরের কাগ আমার বিরূপ সমালোচনা করিতেছেন, তা আমি দিল্লিতেই পড়িলাম। অপর দিকে কলিকাতার একটি ইংরাজী দৈনিক চুক্তি সম্পাদনের পরেপরেই এক জোরালো সম্পাদকীয়তে লিখিলেন : আমরা আগেই বলিয়াছিলাম, নয়াদিল্লির কর্তাদেরে হুশিয়ার করিয়াছিলাম যে আবুল মনসুর মুখে মধু লইয়া আসিয়াছেন বটে, কিন্তু অন্তরে আনিয়াছেন বিষ। আবুল মনসুরের মধু দেখিয়া ভারতীয় নেতারা এমন বিভ্রান্ত হইয়াছিলেন যে আবুল মনসুর তাঁদের পিঠে হাত বুলাইয়া চোখে ধুলি দিয়া সবগুলো অধিকার আদায় করিয়া নিলেন। ভারতের কর্তারা টেরই পাইলেন না।
ভাবখানা এই যে ভারতের যেন সিন্দুক মারা দিয়াছে। একটা বাণিজ্য-চুক্তি মাত্র। উভয় পক্ষের লাভ-লোকসান বিবেচনা করিয়াই এটা করা হইয়াছে। উভয় পক্ষের অভিজ্ঞ অফিসাররাই এ সবের খুটি-নাটি ভাল-মন্দ বিচার করিয়াছেন। কোনও এক বিষয়ে এক পক্ষকে এক-আধটুক বিশেষ সুবিধা দেওয়া হইয়া থাকিলেও অন্য দিকে নিশ্চয়ই তা পোষাইয়া নেওয়া হইয়াছে। তা নাও যদি হইয়া থাকে তবু দেশের সর্বনাশ হইয়া যাইবে না। এটা জানিয়াও ভারতের ঐ কাগটি শুধু আমাকে ‘বিষকুম্ভ পয়েমুখ বলিলেন না। নিজের দেশের সরকারকে নির্বোধ প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিলেন।
এরাই ভারতে পাকিস্তানের ‘মর্নিং নিউয’-ওয়ালাদের জবাব, প্রতিবিম্ব, কাউন্টার পার্ট। এরা পাক-ভারত মৈত্রী চায় না। এরা বিশ্বাস ও অনুভব করে যে পাক-ভারত সম্প্রতি স্থাপিত হইয়া গেলে এদের এডিটরিয়াল লিখিবার বিষয় থাকিবে না। স্বাধীনতার আগে এক পক্ষ মুসলিম লীগ, তার আদর্শ ও নেতৃবৃন্দকে, অপর পক্ষ কংগ্রেস, তার আদর্শ ও নেতৃবৃন্দকে, গালদিয়া সাংবাদিকতা করিত। হিন্দু-মুসলিম, কংগ্রেস-লীগ বা গান্ধীজিন্না মিলনের কথা শুনিলেই এরা আঁকিয়া উঠিত। গেল গেল বুঝি এদের দম আটকাইয়া। হায়াত ফুরাইয়া। প্রধানতঃ এদের চেষ্টাতেই সকলের বাঞ্ছিত ও প্রার্থিত সমঝোতা হয় নাই। এদেরই প্রচার-ফলে পাকিস্তানে শেখ আবদুল্লা ও আবদুল গফফার খাঁকে এবং হিন্দুস্থানে শহীদ সুহরাওয়ার্দীকে বরাবর ভুল বুঝা হইয়াছে। উপমহাদেশ ভাগ হইয়া দুইটি সার্বভৌম রাষ্ট্র যে স্থাপিত হইয়াছে, সেটাও মূলতঃ হইয়াছে হিন্দু-মুসলিম কংগ্রেস-লীগ ও গান্ধীজিন্নার ঐক্যেরই ফল স্বরূপ। যে দাবির জন্য দুই দলে ঝগড়া হয়, সেটা মিটিয়া গেলে দুই দলে প্রীতি স্থাপিত হইবার কথা। কিন্তু দশ বছরেও আমাদের মধ্যে তা হয় নাই। কেন হয় নাই? কারণ উভয় দেশেই ‘মনিং নিউয’ শ্রেণীর সংবাদপত্র আছে। কংগ্রেস ও লীগকে হিন্দু ও মুসলমানকে গাল দেওয়ার অভ্যাস এরা ছাড়িতে পারে নাই। তাই পরিবর্তিত পরিবেশেও এরা ভারত ও পাকিস্তানকে গাল দিয়া চলিয়াছে। আগে হিন্দুর বিরুদ্ধে মুসলমানের, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের অভিযোগ ও রাগ-বিদ্বেষের কারণ ছিল। অপর পক্ষেরও ছিল। এখন ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগের ও রাগ বিদ্বেষের কারণ আছে। অপর পক্ষেরও আছে। আগে ঐগুলি খোঁচাইয়া, বিদ্বেষে ইন্ধন যোগাইয়া এরা সাংবাদিকতা ও রাজনীতি করিত। বর্তমানে এইগুলো খোঁচাইয়া বিদ্বেষে ইন্ধন যোগাইয়া সাংবাদিকতা ও রাজনীতি করে। আগের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ সবারই ভাল জানা আছে। এখনকার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগও কম না। এপক্ষ হইতে বলা চলে : ‘আমরা দাবি মত জমি পাই নাই; ভারত পাকিস্তান ধ্বংস করিবার চেষ্টা করিতেছে। তাঁরা অন্তর দিয়া দেশ-বিভাগ মানিয়া লয় নাই।‘ ইত্যাদি ইত্যাদি। অপর পক্ষ হইতে বলা চলে : ‘ইংরাজের পৃষ্ঠপোষকতায় কংগ্রেসের দুর্বলতায় এই অস্বাভাবিক দেশ বিভাগ হইয়াছে। ভারত-ভূমির বই দ্বিধাবিভক্তি কিছুতেই মানিয়া লওয়া যাইতে পারে না।’ ইত্যাদি। ভারতে মুসলমানদের এবং পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর ভীষণ যুলুম চলিতেছে, এ কথা উভয় পক্ষই খুব জোরের সাথে বলিতে পারে। এসব কথা বলিয়া উভয় দেশের লোক ক্ষেপানো যাইতে পারে এবং এরা তাই করিতেছে। ফলে দেশ-বিভাগের আগে যেমন উভয় সম্প্রদায়কে সর্বদাই সাজ-সাজ যুদ্ধং দেহি ভাবে উদ্দীপিত করা যাইত এবং হইত, এখনও তেমনি উভয় দেশের সরকার ও জনতাকে সাজ-সাজ যুদ্ধং দেহি ভাবে উদ্দীপিত করা যায় এবং হয়। আগে মহল্লায়-মহল্লায় লাঠি-সোঁটা যোগাড় করিয়া সম্ভাব্য দাংগায় ‘আত্মরক্ষার আয়োজন করা হইত। এখন উভয় দেশের দেশ রক্ষা দফতরের খরচ বাড়াইয়া যুদ্ধাস্ত্র আমদানি ও প্রস্তুত করিয়া আত্মরক্ষার আয়োজন চলিতেছে। আগে গরিবের শ্রমের পয়সা বা ভিক্ষার চাউল দিয়া লাঠি-সোটা যোগাড় হইত শ্রমিক ও ভিক্ষুককে উপাস রাখিয়া। এখন জনসাধারণের অজ্ঞতার সুযোগে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রাখিয়া ফরেন এইডে’ অস্ত্র যোগাড় করা হইতেছে দেশবাসীকে ভুকা রাখিয়া।
৬. নেহরুর সাথে নিরালা তিন ঘন্টা
এ সব কথাই আলোচনা হইয়াছিল পন্ডিত নেহরু ও মওলানা আযাদের সাথে। বাণিজ্য-চুক্তি-বৈঠক শেষে আমরা দেশে ফিরিবার আয়োজন করিতেছি। এমন সময়, প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু দাওয়াত দিলেন তাঁর সাথে বোম্বাই যাইতে। আমি রাজি আছি কি না। ব্যাপার এই যে বোষের নিকটবর্তী টোম্বে নামক স্থানে পাক-ভারতের প্রথম এটমিক রিসার্চ রিয়েক্টর প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। উহাই উদ্বোধন করিবার জন্য পণ্ডিত নেহরু বোঝাই যাইতেছেন। করাচি হইতেই উহার দাওয়াত আমি পাইয়াছিলাম। কিন্তু দিল্লি আসার দরুন আমার সে দাওয়াত রাখার প্রশ্নই উঠিতে পারে না বলিয়া আমাদের এটমিক কমিশনের চেয়ারম্যান ডাঃ নাযির আহমদকেই পাকিস্তান সরকারের পক্ষে দাওয়াত রাখিতে বলিয়া আসিয়াছিলাম। বাণিজ্য-সেক্রেটারি মিঃ আযিয় আহমদকে সে কথা বলিলে তিনি ভারতীয় অফিসারদের সাথে পরামর্শ করিয়া বলিলেন ডাঃ নাযির আহমদ দাওয়াত রাখিলেও আমার যাওয়ায় কোনও অসুবিধা নাই। বরঞ্চ মন্ত্রী-স্তরে দাওয়াত রাখিলে ভারত-সরকার আরও খুশী হইবেন। আমি নেহরুজীকে আমার সম্মতি জানাইলাম। আমার সংগে আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে মহফুয় আনাম (তিতু মিয়া) যাইবে, সে কথাও জানাইলাম। বোম্বাই সরকারকে সে-মত এত্তেলা দেওয়া হইল। বোম্বাইর গবর্নর মিঃ শ্রীপ্রকাশের মেহমানরূপে গবর্নর হাউসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হইল। কথা হইল, আমি আমার স্ত্রী-পুত্রসহ প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রেসিডেন্টের ‘বিশেষ প্লেইনে’ যাইব। আমার অফিসাররা যাত্রীবাহী সার্ভিসের বিমানে যাইবেন।
যথাসময়ে পণ্ডিতজীর সাথে আমরা প্লেইনে উঠিলাম। নাশতা খাওয়া-দাওয়া সারিয়াই উঠিয়াছিলাম। তবু আমার স্ত্রী ও পুত্রের খাতিরে পণ্ডিতজী ভদ্রতা করিয়া কিছু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করিলেন। নিজ হাতে পরিবেশন করিলেন। বিশাল সুন্দর প্লেইনে শোওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা। অল্পক্ষণেই আমার স্ত্রী ও পুত্র ঘুমাইয়া পড়িলেন। পণ্ডিতজী নিজ হাতে তাদের গায়ের কম্বল টানিয়া-গুঁজিয়া দিয়া আমার সাথে আলাপে বসিলেন। বোম্বাই পৌঁছাইতে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগিল। এই সাড়ে তিন ঘন্টায় আমরা কত কাপ চা ও কফি এবং কত কাঠি সিগারেট খাইয়াছিলাম, তার হিসাব নাই। কিন্তু এই সুযোগে রাজনৈতিক আলাপ যা করিয়াছিলাম, তা জীবনে ভুলিতে পারিব না। উপরে আমি যে সব কথা বলিয়াছি, ভাষান্তরে বা প্রকারান্তরে তার সবগুলিই আমাদের আলোচনায় আসিল। পণ্ডিতজী একজন অসাধারণ স্কলার-পলিটিশিয়ান। বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ স্টেটসমেনদের অন্যতম। তাঁর কথা শোনা একটা মস্তবড় প্রিভিলেজ। শিক্ষার একটা অপূর্ব সুযোগ। তিনি বলিয়া গেলেন। আমি শুনিয়া গেলাম। প্রশ্ন করা না করা পর্যন্ত কথা বলিলাম না। তাঁর সব কথার সারমর্ম ছিল দুইটি : ‘এক, ভারতের দিক হইতে পাকিস্তানের কোন বিপদ নাই। দুই, পাক-ভারত সমঝোতার পথে পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দের মনোভাবই একমাত্র প্রতিবন্ধক। দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি বলিলেন, ভারত পূর্ব পাকিস্তান গ্রাস করিতে চায়, এটা ভুল ধারণা। ভারত নিজের স্বার্থেই দুই বাংলাকে একত্র করার বিরোধী। যে সাম্প্রদায়িক বিরোধ মিটাইবার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষ বাটোয়ারা হইয়াছে, পূর্ব বাংলার চার কোটি মুসলমানকে ভারতে আনিলে সেই সমস্যাই পুনরুজ্জীবিত হইবে। পাক-ভারত সমঝোতায় পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দের মনোভাবই যে অন্তরায় তার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়া পণ্ডিতজী নো-ওয়ার চুক্তি প্রত্যাখ্যানের কথা তুলিলেন। তিনি আমাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিলেন যে কাশ্মির-প্রশ্ন মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নো ওয়ার’ চুক্তি হইতে পারে না বলিয়া পাকিস্তানের নেতারা যে যুক্তি দিতেছেন, ওটা ভ্রান্ত। তিনি নিজের কথার সমর্থনে যে সব যুক্তি দিলেন, তার আবশ্যকতা ছিল না। কারণ আমার ব্যক্তিগত মতও তাঁর মতের অনুরূপ। তাঁর মত আমিও বিশ্বাস করি, কাশ্মির-প্রশ্ন অমীমাংসিত রাখিয়াও পাক-ভারতের মধ্যে ‘নো ওয়ার’ চুক্তি হইতে পারে। এ সব কথা আমি অনেক আগে হইতেই বলিতেছি। মোহাম্মদ আলী বগুড়া ও চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলেও আমি তাঁদেরে এবং আমার নেতা শহীদ সাহেবকে এ ধরনের কথা বলিয়াছি। প্রথমতঃ ভারতের সাথে আমাদের অনেক ব্যাপারে বিরোধ আছে। সবগুলি আমরা মিটাইতে চাই। সম্ভব হইলে সবগুলি এক সাথে মিটাইব। তা সম্ভব না হইলে একটা-একটা করিয়া মিটাইব। এক এক করিয়া মিটাইতে হইলে কোন্টা আগে ধরিব? কাণ্ডজ্ঞানের কথা এই যে সবচেয়ে সোজা যেটা সেইটাই আগে ধরিব। ব্যক্তিগত পারিবারিক ও বৈষয়িক ব্যাপারে আমরা যা করি, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও তাই করা বুদ্ধিমানের কাজ। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের যারা আগে সোজা প্রশ্নের উত্তর দিয়া সবার শেষে কঠিনটা ধরে, তারাই পরীক্ষায় পাস করে। দুনিয়াবী ব্যাপারে আমাদের বিরোধসমূহ মিটাইবার বেলা যদি আগে সহজগুলি মিটাই, তবে কঠিনগুলি মিটাইবার সাইকলজিক্যাল পরিবেশ স্বতঃই সৃষ্টি হবে। পাক-ভারতের বেলাও এটা সত্য হইতে বাধ্য। কাশ্মির প্রশ্নটাই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জটিল সমস্যা। এই জটিলতম প্রশ্নটার মীমাংসা না হইলে, বা মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত, অপেক্ষাকৃত সহজগুলিও মীমাংসা করিব না, এটা কোনও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমাদের সীমা-সরহদ্দ আমাদের উভয় পাকিস্তানের মধ্যেকার যাতায়াত, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম বাংলা ও বিহারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমস্যা, পশ্চিম-পাকিস্তান ও পূর্ব পাঞ্জাব ও রাজস্থানের মধ্যেকার সিন্ধু-অববাহিকার সেচ ও পানি সরবরাহ সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের মীমাংসা পাকিস্তান ও ভারতের সমবেত চেষ্টা ব্যতীত হইতে পারে না।
খোদ কাশ্মির-সমস্যাটা লইয়াও পাকিস্তান সরকার বিশেষতঃ মুসলিম লীগ নেতারা বরাবর ভুল নীতি অবলম্বন করিয়া আসিয়াছেন। এটাই ছিল আমার বরাবরের মত। শেখ আবদুল্লার মত কাশ্মিরের জাতীয় জনপ্রিয় নেতার প্রতি মুসলিম লীগ নেতাদের নিতান্ত ভ্রান্ত ধারণাই এই ভুল নীতির মূলীভূত কারণ। শেখ আবদুল্লার সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস ও তাঁর স্বাধীনতা-প্রীতির যাঁরা বিস্তারিত খবর রাখেন, তাঁরাই জানেন যে শুধু ভারতের কেন কোনও শক্তিরই তিনি দালালি করিতে পারেন না। তদুপরি তিনি নিষ্ঠাবান খাঁটি মুসলমান। তিনি পাকিস্তান-বিরোধী বা পাকিস্তানের অহিতকামী হইতে পারেন না। বস্তুতঃ আমার বিশ্বাস করিবার যথেষ্ট কারণ আছে যে ১৯৫৮ সালের আগে শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে স্বাধীন-গণভোট হইলে কাশ্মিরী মুসলমানরা এক বাক্যে পাকিস্তানে যোগ দিবার পক্ষে ভোট দিত। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ অথবা মার্চ মাসের গোড়ার দিকে শেখ আবদুল্লার এক বিশ্বস্ত বন্ধু ও অনুচর আমাকে বলিয়াছিলেন যে শেখ আবদুল্লা মনের দিক দিয়া সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের সমর্থক এ কথা যেন আমি পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের গোচর করি। আমি তৎকালে পূর্ব-বাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাযিমুদ্দিনকে এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য নেতাকে সেকথা বলিয়াছিলাম। নেতারা আমার কথায় আমল দেন নাই। অবশেষে ১৯৫৪ সালে যখন ভারত সরকার প্রকাশ্যভাবে শেখ আব্দুল্লার বিরুদ্ধে একের-পর আরেকটা কর্মপন্থা গ্রহণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে ডিসমিস করিয়া জেলে পুরেন, এখনও পাকিস্তানী নেতাদের অনেকের কাছেই আমার মতামত প্রকাশ করি এবং শেখ আবদুল্লার প্রতি তাঁদের মনোভাব পরিবর্তনের অনুরোধ করি। কিন্তু তখনও তাঁদের হুশ হয় নাই। পরে বহুদিন পরে জেনারেল আইউবের দ্বারা পাকিস্তানে গণতন্ত্রের হত্যাকাণ্ডের পর বড় দেরিতে পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দের কেউ-কেউ শেখ আবদুল্লাকে বুঝিতে পারিয়াছিলেন। বর্তমান সময়ে অনেকেই সে কথা স্বীকার করেন। কিন্তু আমার ক্ষুদ্র অভিমত এই যে পাকিস্তানে গণতন্ত্র হত্যার ফলে আমাদের কাশ্মির গণ-ভোটের দাবি অতিশয় দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে।
যা হোক কাশির-প্রশ্ন সম্পর্কে আমার মতামত আমি পণ্ডিতজীকে সরলভাবে স্পষ্ট ভাষায় বলিতে কিছুমাত্র দ্বিধা করিলাম না। তিনি আমার কোন কথাই মানিলেন না বটে কিন্তু জোরে প্রতিবাদও করিলেন না।
কিন্তু প্রশ্ন এই যে কাশির সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কি এ সবের সমাধান করিব না? যতই নীতিগত প্রশ্ন হউক, চল্লিশ লক্ষ কাশ্মিরীর জন্য কি পাকিস্তানের এক-এক অঞ্চলের চার কোটি লোককে মারিয়া ফেলিব? কাজেই, কি জনগণের সুবিধা, কি সমাধানের পন্থা, উভয় দিক বিচার করিয়াই পাকিস্তানী নেতাদের এই অবাস্তব অনমনীয় মনোভাব ত্যাগ করিয়া বাস্তববাদী হইতে হইবে। কাশ্মির বাদ দিয়া নয়, কাশ্মির বিরোধ বাকী থাকিল এই মূলসূত্র ধরিয়া, উভয় দেশের অন্যান্য ছোট সমস্যার সমাধানে হাত দেওয়া উচিৎ। এইসব কথা নানাভাবে আমি আমাদের বিভিন্ন নেতা ও মন্ত্রীকে বলিয়াছি। আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও কর্মী ভাইদেরে আমি বুঝাইয়াছি। আমার বিশ্বাস, আমার সহকর্মীরা সকলেই আমার এই মতের পোষকতা করেন। আমি যতদূর বুঝিতে পারিয়াছি, আমার নেতা শহীদ সাহেবেরও এই মত। পাক-ভারত সম্প্রীতি সম্বন্ধে তীর আস্থা এমন দৃঢ় ছিল যে তিনি উভয় দেশের মধ্যে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মত ভিসা-প্রথা উঠাইয়া অবাধ যাতায়াতের পক্ষপাতি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তাঁর এই মত বদলায় নাই। এই মূলসূত্র হইতেই আমাদের ‘নো ওয়ার’-চুক্তিতে সই করা উচিৎ। ‘নো ওয়ার’-চুক্তির প্রস্তাবটা আসিয়াছে ভারতের পক্ষ হইতে। কেন আসিয়াছে? যেহেতু, ভারত সত্যসত্যই আশংকা করে পাকিস্তান যুদ্ধ বাধাইতে পারে। দেশ বিভাগে পাকিস্তানের উপর যে সব অন্যায় ও চক্রান্তমূলক অবিচার হইয়াছে, তার প্রতিকারের জন্য পাকিস্তান যদি যুদ্ধ বাধায় তবে যুদ্ধনীতি, রাজনীতি, এমনকি ন্যায়-নীতির দিক হইতেও তা অন্যায় হইবে না। ভারত এটা জানে, বুঝে এবং হৃদয়ংগম করে। পক্ষান্তরে ভারতের পাকিস্তান আক্রমণের কোনও যুক্তি ও কারণ নাই। বাটোয়ারায় ভারত জিতিয়াছে এবং অন্যায় রূপেই জিতিয়াছে। তবু যদি বিনা-কারণে পাকিস্তান আক্রমণ করিবার ইচ্ছা তার থাকিত, তবে ১৯৪৭-৪৮ সালেই তা করিত। ঐটাই তার পক্ষে পূর্ণ সুযোগ ছিল। হায়দরাবাদ কাশ্মির জুনাগড় মানবাদাড় আক্রমণ ও দখল করিয়া সে সুযোগ পুরাপুরিই ভারত গ্রহণ করিয়াছে। ঐ সব জায়গা দখল করিয়া ভারত দখলই স্বত্বের দশ ভাগের নয় ভাগ এই নীতিতে বিশ্বাসী বুদ্ধিমানের মতই অতঃপর চুপ করিয়া আছে এবং দখল-করা দেশগুলিতে নিজের স্থিতিশীলতার চেষ্টা করিতেছে। এর পরেও যদি তার পূর্ব ও পশ্চিম সীমায় আরও কিছু জায়গা দখল করিবার ইচ্ছা ভারতের থাকিত, তবে ঐ সূযোগেই-ভারত তা করিয়া ফেলিত। যদি তা করিত, তবে জাতিসংঘে মামলা দায়ের করা ছাড়া আমরা আর কিছুই করিতে পারিতাম না। তা করিয়া আমরা কাশ্মিরের চেয়ে বেশি কিছু প্রতিকারও করিতে পারিতাম না। সুতরাং কোনও সীমান্তেই ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করিতে চায় না। এ বিশ্বাস আমার খুবই দৃঢ়।
পক্ষান্তরে বাটোয়ারায় পাকিস্তানের উপর অন্যায় ও চক্রান্তমূলক অবিচার হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান যুদ্ধ করিয়া তার সীমা প্রসারিত করিতে চায় না। এটা পাকিস্তানের সকল দলের নেতাদের মত বলিয়াই আমার ধারণা ও বিশ্বাস। কাজেই ‘নো-ওয়ার’ চুক্তি করিতে পাকিস্তানের পক্ষে কোনও আপত্তির বাস্তব কারণ নাই। তবু কাশ্মির মীমাংসা না হইলে ‘নো-ওয়ার’-চুক্তি করিব না যাঁরা বলেন, তারা নিশ্চয়ই ভারতকে ডর দেখাইবার জন্যই তা বলেন। কিন্তু প্রশ্ন এই যে সেই ডরে ভারত কাশ্মির ত্যাগ করিবে কিনা? তা যদি না করে, তবে পাকিস্তান যুদ্ধ করিয়া কাশ্মির উদ্ধার করিবে কিনা? ন বছরের অভিজ্ঞতায় এই উভয় প্রশ্নের না-বাচক উত্তর পাওয়া গিয়াছে।
পন্ডিত নেহরু তাঁর কথাবার্তায় সুস্পষ্ট আন্তরিকতার সাথে যে সব কথা বলিলেন, মোটামুটি তা উপরের কথাগুলির অনুরূপ। সুতরাং এসব ব্যাপারে তাঁর মতের সহিত আমার মতের মিল ছিল। তবু আমি বলিলাম : আপনার সব কথা সত্য হইতে পারে, কিন্তু আপনেরাই বা কাশির সমস্যাটা আগে মিটাইতে রাযী হন না কেন? জবাবে তিনি বলিলেন : ‘মিটাইতে আমরা সব সময়েই রাযী। কিন্তু প্রশ্ন এই যে কিভাবে মিটান যায়? কোন একটি ব্যাপারেই ত ভারত-পাকিস্তান, একমত হয় না। আমি কথার পিঠে কথা বলিলাম কোন পন্থাতেই যদি তারত-পাকিস্তান একমত হইতে না পারে, তবে শেষ পন্থা সালিশ মানা! সালিশের মাধ্যমেই এ ব্যাপারটা মিটাইয়া ফেলেন না কেন? পন্ডিতজী সরলভাবে বলিলেন : সেটাও সম্ভব হইতেছে না। কারণ উভয় দেশের গ্রহণযোগ্য কোনও সালিশই পাওয়া যাইবে না। ইনি পাকিস্তানের গ্রহণযোগ্য হইলে ভারতের অগ্রহণযোগ্য। আর উনি ভারতের গ্রহণযোগ্য হইলে পাকিস্তানের অগ্রহণযোগ্য। দুই পক্ষ একই ব্যক্তিকে কখনো গ্রহণ করিবে না। মুশকিল হইয়াছে ত এইখানেই। পন্ডিতজীর মুখে সত্যই বিষণ্ণতা ফুটিয়া উঠিল। আমার মাথায় হঠাৎ একটা ফন্দি জুটিল। বলিলাম : ‘না পন্ডিতজী, আমি আপনের সাথে একমত নই। উভয় পক্ষের গ্রহণযোগ্য লোক চেষ্টা করিলে পাওয়া যাইবে। খুব জোরের সাথে মাথা নাড়িয়া তিনি বলিলেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা হইতে আমি বুঝিয়াছি, সারা দুনিয়া তালাশ করিয়াও তুমি এমন একজন লোক পাইবে না যাঁকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে সালিশ মানিবে। আমিও সমান জোর দিয়া বলিলাম : আপনের কথা সত্য হইতে পারে না। কারণ আমি অন্ততঃ একজনের কথা জানি যিনি ভারত ও পাকিস্তানের নিকট সমান গ্রহণযোগ্য হইবেন। পণ্ডিতজী আরো জোরে প্রতিবাদ করিলেন। বলিলেন : ‘অসম্ভব। এমন লোকের অবস্থিতি অসম্ভব। কারণ এরা দুইপক্ষ কথিত ব্যক্তির গুণাগুণ নিরপেক্ষতা বিচার করিবে না। একপক্ষ যাঁকে বলিবে ‘হ’, অপর পক্ষ নির্বিচারে তাকেই বলিবে না। বিচারের এদের আর কোন মাপকাঠি নাই।‘ আমি ঠেটামি করিয়া বলিলাম : ‘আপনের কথা ঠিক। কিন্তু আমি যে ব্যক্তির কথা ভাবিতেছি তাঁর বেলা ঐ নিয়ম চলিবে না। তিনি উভয় দেশের গ্রহণযোগ্য হইবেন। উভয় দেশ সমান আগ্রহে তাঁকে গ্রহণ করিবে।‘ পন্ডিতজী হাসিয়া বলিলেন : ‘দুনিয়ায় এমন একজন লোকও নাই জানিয়াও তোমাকে প্রশ্ন করিতেছি : ঐ অদ্ভুত ভদ্রলোকটি কে?’
আমি পন্ডিতজীর চোখে-মুখে অপলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া গম্ভীর সুরে বলিলাম : পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু।‘ পন্ডিতজী হাসিয়া বলিলেন : ‘ওঃ তুমি। তামাশা করিতেছ?’ আমি সে হাসিতে যোগ না দিয়া গভীর ভাবেই বলিলাম : ‘জি না, আমি ঠাট্টা করিতেছি না। সারা অন্তর দিয়াই কহিতেছি। আপনে রাযী হন। আমি আজই আমার প্রধানমন্ত্রীকে দিয়া এই মর্মে ঘোষণা করাইতেছি।‘ পন্ডিতজী তাঁর হাসি থামাইয়া বলিলেন : তোম বড়া বদমায়েশ হো। আমি আগ্রহ দেখাইয়া বলিলাম : ‘এতে বদমায়েশির কি হইল? আপনে বিশ্বাস করুন, আমার প্রধানমন্ত্রী, এমনকি গোটা পাকিস্তানবাসী, এক বাক্যে আপনাকে সালিশে মানিয়া লইবেন। আপনে রাযী হোন।‘ এতক্ষণে পন্ডিতজীর হাসি বন্ধ হল। তিনি গম্ভীর মুখে কিন্তু রসিকতার ভংগিতে হাত জোড় করিয়া বলিলেন : ‘হাম কো মাফ করো। মুঝসে ইয়ে কাম নেহি হোগা।’ আমি যিদ করিয়া বলিলাম : ‘কেন হইবে না? পাকিস্তানের পক্ষ হইতে আপনাকে মানা হইতেছে। ভারতের পক্ষ হইতে আপনাকে মানা হইবে না, এটা হইতে পারে না। তবে আপনার দ্বারা হইবে না একথা কেন বলিতেছেন?’ পন্ডিতজী আরো গম্ভীর হইয়া বলিলেন : ‘তুমি জান, কেন আমার দ্বারা এটা সম্ভব নয়।‘ কথাটা এইখানে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এ সুযোগ আমি ছাড়িলাম না। কারণ মস্তবড় ঝুঁকি আমি লইয়াছিলাম। যদি পন্ডিতজী বলিয়া বসিতেন : বহুৎ আচ্ছা! তবে আমার অবস্থা কি হইত? পন্ডিতজী শেষবারের মত না বলার পর আমার গলার জোর বাড়িয়া গেল। এতক্ষণ পন্ডিতজীই বেশির ভাগ কথা বলিতেছিলেন। এইবার আমার পালা শুরু। বলিলাম : আপনাকে আমি আজো আমার নেতা বলিয়া মানি। আপনি শুধু ভারতের নেতা নন। এই উপমহাদেশের এমনকি সারা বিশ্বের নেতা। মহাত্মাজীর মৃত্যুর পর তাঁর দায়িত্বও আপনার ঘাড়ে পড়িয়াছে। যে মহান উদ্দেশ্যে আপনারা দেশ বিভাগ মানিয়া লইয়াছিলেন, তা আজো সম্পন্ন হয় নাই। আমার ভাবিতে লজ্জা হয় যে আপনেরা একটা বিবাদ মিটাইতে মূল গাছটা দুই ভাগ করিয়া শাখা-প্রশাখা পাতা পুতুড়ি লইয়া ঝগড়া জিয়াইয়া রাখিয়াছেন। আপনাকে এটা বুঝান অনাবশ্যক যে আপনি জীবিত থাকিতে-থাকিতে যদি পাক-ভারত বিরোধ মিটাইয়া না যান, তবে এ বিরোধ চিরস্থায়ী হইতে পারে। অতঃপর পন্ডিতজীর সুরে বেদনা ফুটিয়া উঠিল। তিনি বলিলেন : প্রশ্নটা দুইটা জাতির, দুই রাষ্টের। ব্যক্তির ক্ষমতা এখানে কতটুকু? পরিবেশ সৃষ্টি আগে দরকার। তোমরাও পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা কর।
অতঃপর আমাদের মধ্যে যে সব কথাবার্তা হইল তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কথা এই যে তিনি শহীদ সাহেবের সাথে বৈঠক করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। আমাকে আয়োজন করার উপদেশ দিলেন।
অতঃপর গবর্নর মিঃ শ্রীপ্রকাশের শাহী আতিথেয়তায় তাঁর আয়োজিত সম্বর্ধনা ও গানের জলসার আনন্দ উপভোগ করিয়া কায়েদে-আযমের বাড়ি-সহ বোম্বাইর দর্শনীয় স্থানগুলি দেখিয়া তিন-চার দিন পর পি, আই. এ. বিমানে করাচি ফিরিয়া আসিলাম। করাচি বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা ভিড় করিলেন। বাণিজ্য-চুক্তিতে জিতিয়া আসিয়াছি স্বীকার করিয়াও তাঁরা মধু ও যমজ ভাইর জন্য এমন ভাব দেখাইলেন যে আরেকটু হইলে কালানিশান দেখাইতেন আর কি?
করাচি ফিরিয়া প্রথম সুযোগেই প্রধানমন্ত্রীকে আমার দিল্লি সফরের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করিয়া পন্ডিত নেহরুর সাথে আমার আলাপের কথাটা, সবিস্তারে বর্ণনা করিলাম। আমি যে পন্ডিতজীকে সালিশ মানিয়া কি সাংঘাতিক ঝুঁকিটা লইয়াছিলাম, বাহাদুরি দেখাইবার জন্য তার উপর বিশেষ জোর দিলাম। লিডার ফুৎকারে ওটা উড়াইয়া দিলেন। কোনও ঝুঁকিই তুমি নেও নাই’ তিনি অবহেলায় বলিলেন। ওতে কোনও ঝুঁকিই ছিল না। কারণ জওয়াহের লাল অমন দায়িত্ব নিতেই পারেন না। অমন অবস্থায় কেউ পারে না। তবে প্রস্তাবটি দিয়া তুমি মন্দ কর নাই। আমাদের প্রতি তাঁর ধারণা ভাল হইতে পারে। ঐ সংগে তিনি বলিলেন যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে মোলাকাতের খুবই ইচ্ছা তাঁর আছে। তিনি নিজেই ঐ লাইনে চিন্তা করিতেছিলেন। শীঘ্রই তিনি ঐ ব্যাপারটা হাতে লইবেন বলিয়া আশ্বাস দিলেন।
ভারত সফরের শ্রমে অতিরিক্ত নাড়াচাড়ায় আমার আহত হাঁটুটা আবার প্রদাহিত, ব্যথিত ও অচল হইল। পা আবার ফুলিয়া গেল। ফলে আবার বন্দী হইলাম। বাসা হইতেই অফিস করিতে লাগিলাম। কেবিনেট সভাও আমার বাসাতেই হইতে লাগিল। বাহিরে যাইতে না হওয়ায় অধিক চিন্তা করিবার ও ফাইলপত্র ডিসপোয় করিবার অনেক সময় পাইলাম।