পত্রের উত্তর
কল্যাণীয়াসু,
পরিচারিকা বাহিত তোমার নিদারুণ পত্রটি আমার হস্তগত হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটি পাঠ করে ফেলেছি।
এত রাগ? আমার লেখার ওপরে তোমার এত রাগ?
আমি তোমাকে কখনও দেখিনি। তবু তোমার ক্রোধান্বিতা মুখশ্রী কল্পনা করার চেষ্টা করছি। তোমার তো অভিযোগ একটাই আমি কেন পুরনো দিনের ভাঙা রেকর্ডের মতো একই কথা বারবার বলে যাচ্ছি, একই গল্প শতবার শোনাচ্ছি।
কিন্তু ঠাকুরানি, আমার যদি অনুমান ভুল না হয়, তুমি মোড়ের তিনতলা বাড়ির নতুন বউ। তুমি যে গত চার মাস ধরে রাতদিন সকাল-সন্ধ্যা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘আসছে শতাব্দীতে, আসব ফিরে তোমার খবর নিতে’ বাজিয়ে বাজিয়ে পাড়ার লোকের কানের পোকা বার করে দিয়েছ, তার বেলা? নেতারা যে বছরের পর বছর বলে যাচ্ছেন, ‘ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণ’, সেই একই কথা। তার বেলা?
এই প্রশ্নে আমি পরে ফিরে আসব। তার আগে তোমাকে খুশি করার জন্যে এবার শুধু গল্প আর গল্প।
কয়েকটি পুরনো গল্প যার মজা এখনও ফুরিয়ে যায়নি, তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমারও সুবিধে, বানিয়ে বানিয়ে বাজে গল্প লেখার হাত থেকে ক্ষণিক অব্যাহতি পাওয়া যাবে।
তা, সেই ভয়াবহ গল্পটা দিয়েই শুরু করি। কোনও এক অফিসে, যেমন হয়, হয়ে থাকে, এক সহকর্মী আর এক সহকর্মিণীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া, বাদানুবাদ।
এ রকম প্রায় প্রতিদিনই চলে। একদিন সেই ঝগড়া তুঙ্গে উঠল।
বলাবাহুল্য, কী নিয়ে ঝগড়া তা আমরা কেউ জানি না। তোমরা কেউ অনুমান করতে যেও না।
সেই উচ্চকণ্ঠে কলহের সর্বশেষে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি যদি তোমার স্ত্রী হতাম, আমি তোমার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতাম।’ ভদ্রমহিলা তাঁর সহকর্মীকে চিৎকার করে একথা বলেছিলেন।
এ রকম ভয় দেখানোয় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, ‘আমি যদি তোমার স্বামী হতাম আমি সেই বিষ খেতাম।’
কথাটা গোলমেলে। অর্থাৎ তোমার মতো স্ত্রীর স্বামী হয়ে বেঁচে থাকার থেকে বিষ খেয়ে মরা ভাল। ভয়াবহ গোলমেলে কথা। অবশ্য গোলমেলে না হলেই মশকরা জমে না।
আরেকটি গোলমেলে কথা মনে পড়ছে।
এক নির্বোধ প্রেমিক গদগদ কণ্ঠে তার ভালবাসার প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘ওগো, একবার মুখ ফুটে বল না, আমি কি তোমার যোগ্য?’
সেই প্রেমিকা বলেছিল, ‘না। সত্যি কথাটা হল তুমি আমার যোগ্য মোটেই নও।’ তারপর, একটু পরে সান্ত্বনা দেওয়ার গলায় বলল, ‘তবে তুমি অন্য যে কোনও মেয়ের পক্ষে যথেষ্ট যোগ্য।’
পুনশ্চ:
কল্যাণীয়াসু,
কোপান্বিতা হওয়ার পথে সামান্য মশলা এবারও এগিয়ে দিলাম। দেখি তোমার প্রতিক্রিয়া কী হয়।
আমি বলি কি, রাগ করে লাভ কী? তার চেয়ে হাসো, আরও হাসো।
ইতি
তোমার অপ্রিয় লেখক।