১-২. টিফিনের ঘণ্টা

দুঃস্বপ্ন বারবার – মিতিনমাসি – সুচিত্রা ভট্টাচার্য

টিফিনের ঘণ্টা বাজতেই স্কুলব্যাগ থেকে প্লাস্টিকের বাক্সটা বের করল টুপুর। ক্লাসরুমে আহার ব্যাপারটা টুপুরের না-পসন্দ, সোজা গিয়ে বসেছে কম্পাউন্ডের ছাতিম গাছের নীচের বেদিটায়। সেই কোন সোয়া ন’টায় বেরিয়েছে, এখন ঘড়ির কাঁটায় দুটো পার। বহুৎ চোঁ-চোঁ করছে পেট, এক্ষুনি চিল চিৎকার জুড়বে নাড়িভুড়ি। থুড়ি ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, পাকস্থলি, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

হ্যাঁ, এইভাবেই ভাবতে বলে মিতিনমাসি। এতে নাকি চিন্তাভাবনায় বেশ একটা গোছানো ভাব আসে। কথাটা মনে আসতেই টুপুর সামান্য উদাস। কতদিন দেখা হচ্ছে না মাসির সঙ্গে। সেই গরমের ছুটিতে মাত্র সাতদিনের জন্য গিয়েছিল টুপুর, ব্যস। এমনই পোড়া কপাল টুপুরের, ঠিক তখনই জ্বরে পড়ল মাসি। ব্যস, বেড়াতে যাওয়া চুলোয়, কোনও কেসটেসও এল না, দিনগুলো পুরো বৃথাই গেল টুপুরের। আজকাল তো টুপুরকে ফোন পর্যন্ত করতে পারছে না মাসি! কে জানে, মাসি হয়তো টুপুরকে আর পাত্তাই দিতে রাজি নয়। গোয়েন্দাগিরিতে মাসির সহকারী হওয়ার স্বপ্নটাও বুঝি অপূর্ণই রয়ে গেল এজন্মে।

ঈষৎ বেজার মুখে টুপুর পাত্রটা খুলল। খাবার দেখে আরও খিঁচড়ে গেল মেজাজ। উফফ, আজ আবার চাউমিন। তাও হয়তো গিলে নেওয়া যেত, কিন্তু এমন গাদাখানেক সস ছড়িয়েছে মা প্রাণের সুখে! ওই দ্রব্যটি মুখে তুললে ওয়াক না উঠে আসে!

দ্রুত একটা মতলব এঁটে নিল টুপুর। ক্লাসের অনেকেই তো তোলাতোলা করে খায় চাউমিন, তাদের কাউকে গছিয়ে দিতে পারলেই তো ল্যাঠা চোকে, বিনিময়ে তার খাবারটাই নয় সাঁটাবে আজ।

কাকে ধরা যায়? টুপুর তাকাচ্ছে এদিক-ওদিক। জয়, নেহাল, তরান্নুমদের দলটা টিফিন বদলাবদলি করেই খায়, সুতরাং, ওখানে ভেড়া যাবে না। শৌভিক তো নির্ঘাত টোস্ট এনেছে, শুকনো শুকনো ওই দ্রব্যটিও টুপুরের দু’চক্ষের বিষ। ওপাশে রিয়া, মণিকা, দেবারতিদের দঙ্গলটায় উঁকি দিয়ে দেখবে? বড্ড বেশি সাজগোজের গল্প করে ওরা, টুপুর পছন্দ করে না খুব একটা, তবু আজ না হয়…

আচমকা চোখ আটকেছে শালিনীতে। সামনে খোলা টিফিনকৌটো, মেয়েটা কেমন ভ্যাবলার মতো বসে! হাত নড়ছে না, মুখ নড়ছে না, চারদিকের হট্টগোলে দৃষ্টি নেই। হলটা কী? খাবার পছন্দ নয়? কিন্তু শালিনী ঘোরতর নিরামিষাশী, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন কিচ্ছুটি ছোঁয় না, ও কি খাবার বিনিময়ে রাজি হবে?

তবু খিদে বড় বালাই। পায়ে পায়ে শালিনীর কাছে গেল টুপুর। পিছন থেকে ঘাড়ের উপর দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল, তোর কী মেনু রে আজ?

পুরি, হালুয়া, আঙুর আর মুগডালের ভুজিয়া।

আইব্বাস, সবক’টাই তো টুপুরের প্রিয় আইটেম! আর শালিনীর বাড়ির পুরি-হালুয়ার টেস্টও আলাদা। খাঁটি ঘিয়ে ভাজা বলে ভারী চমৎকার একটা বাসও বেরোয়! একদিন খাইয়েছিল শালিনী, সাতদিন স্বাদটা লেগে ছিল জিভে!

কিন্তু কীভাবে আজ কথাটা পাড়ে টুপুর? সরাসরি খেতে চাইবে, নাকি কায়দা করে বলবে একটু টেস্ট করা তো? খাবলা মেরে তুলেও নেওয়া যায় খানিকটা। খুব ঠান্ডা মেয়ে শালিনী, রাগও করবে না, মুখে রাও কাড়বে না সম্ভবত, কিন্তু মনে মনে বিরক্ত তো হবে নিশ্চয়ই।

ভাবনার মাঝে আচমকা শালিনীর গলা, তুই আমার টিফিনটা খেয়ে নিবি ঐন্দ্রিলা, প্লিজ?

অভাবিত প্রস্তাবে ঐন্দ্রিলা তথা টুপুর তো প্রায় বিষম খাওয়ার জোগাড়। কোনওক্রমে ঢোক গিলে বলল, কেন রে, তুই খাবি না?

ইচ্ছে করছে না রে।

শরীর ভাল নেই বুঝি?

 শরীর, মন কিচ্ছু ভাল নেই রে। খাবার দেখলেই আমার গা গুলোচ্ছে।

তা হলে তো চেষ্টা করে দেখতেই হয়। খাবারদাবার নষ্ট করা খুবই অনুচিত কাজ, নয় কি? বিশেষত যে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে থাকে?

বলেই আর অপেক্ষা করল না টুপুর, হাতে তুলে নিয়েছিল শালিনীর টিফিনবক্স। গপগপ সাবাড় করছে পুরি, হালুয়া, টকাটক আঙুর চালান করছে মুখগহ্বরে। আহ, ভরে যাচ্ছে মন! এমন মনোহারী হালুয়া আগে খেয়েছে কি? মনে তো পড়ে না।

হঠাৎ হোঁচট খেল। শালিনীর আচরণটা কেমন অদ্ভুত না? সামনেই এক সহপাঠিনী তার খাবারটা গোগ্রাসে খাচ্ছে, অথচ মেয়েটা সেদিকে তাকাচ্ছেই না! কী এত ভাবে বিভোর?

 টুপুরের মুখ দিয়ে প্রশ্ন বেরিয়ে গেল, তোর ব্যাপারখানা কী বল তো?

শালিনীর দৃষ্টি শূন্য থেকে ধরায় নামল, কেন, কী হয়েছে?

সেটাই তো আমি জানতে চাইছি। হয়েছেটা কী বলবি তো।

কী যে বলি, শালিনীর স্বর দ্বিধান্বিত, শুনলে তুইও নিশ্চয়ই হাসবি। রণদেব, জয়িতা, নিশাদের মতো।

টুপুর ক্ষুব্ধ হল একটু, তবে মুখে কোনও ভাব ফুটতে দিল না। সে যে ক্লাসের অনেক ছেলেমেয়ের থেকেই আলাদা, তা বোধহয় জানে না শালিনী। অবশ্য শালিনীর সঙ্গে টুপুরের তো তেমন ঘনিষ্ঠতাও হয়নি এখনও। শালিনী তাদের স্কুলেই পড়ছে বরাবর, কিন্তু ছিল অন্য সেকশনে, এ বছরই ক্লাস সেভেনে তাদের সেকশানে এসেছে শালিনী। মাত্র কয়েক মাসেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারত, যদি মেয়েটা তেমন মিশুকে হত। কিন্তু মেয়েটা বড্ড বেশি চুপচাপ ধরনের। কারও সঙ্গেই দরকার ছাড়া কথা বলে না খুব একটা, শুধু ওই হাই হ্যালো, ব্যস। এবছর স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানের দিন পেঁয়াজের ছোঁয়া খেল না বলে নজরে পড়ল ওর খাদ্যাভ্যাস, নয়তো শালিনী যে চরম গোঁড়া নিরামিষাশী, তাও হয়তো অজানা থেকে যেত টুপুরদের।

একমুঠো মুগডালের ভুজিয়া মুখে চালান করে টুপুর বলল, কথাটা নিশ্চয়ই মজার নয়?

একেবারেই না। বরং ভয়ের। ভাবলেই, আই মিন সিনটা মনে পড়লেই আমার বুক কেঁপে উঠছে।

টুপুর যেন হালকা রহস্যের গন্ধ পেল। ঈষৎ উদগ্রীব গলায় বলল, কী কথা? কী এমন দৃশ্য? কোথায় দেখেছিস?

স্বপ্নে।

মানে? টুপুরের আচমকা হাসি পেয়ে গেল। কোনওমতে গিলে নিয়ে বলল, স্বপ্ন দেখে কেউ ভয় পায় নাকি?

আমিও পাই না, কিন্তু অবিকল একই স্বপ্ন কেউ যদি দিনের পর দিন দেখে, আর সেই স্বপ্নটা যদি ভয়ংকর হয়।

দাঁড়া দাঁড়া, রোজ তুই সেম স্বপ্ন দেখিস?

গত চারদিন তো দেখছি।

স্বপ্নটা কী? বলতে আপত্তি নেই নিশ্চয়ই? হাসব না, ওয়ার্ড অব অনার।

তবু যেন ভরসা পাচ্ছে না শালিনী, নখ খুঁটছে নত মুখে। টুপুরের কপালে ভাঁজ বাড়ল। নাহ, সমস্যাটা গভীরই মনে হচ্ছে। মিতিনমাসির পরামর্শটা মনে পড়ল টুপুরের। যখন কেউ সংকোচের কারণে কোনও কিছু বলতে কুণ্ঠা বোধ করে, তখন বেশি জোরাজুরি করতে নেই, বরং প্রশ্ন বদলে ফেলে তাকে সহজ করে নেওয়া অনেক জরুরি।

টুপুর প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল, হ্যাঁরে শালিনী, তোদের বাড়িতে সব্বাই ভেজিটেরিয়ান?

শালিনী অল্প মাথা নাড়ল, হু।

কেউ কখনও আমিষ খায় না?

 খেতে পারবেই না।

 কেন?

 ধর্মে নিষেধ আছে যে।

তোরা বুঝি বৈষ্ণব?

উঁহু, আমরা জৈন।

টুপুরের একটু কৌতূহল জাগল। জৈনধর্ম ইতিহাসে পড়েছে বটে, কিন্তু জৈনদের সম্বন্ধে তার তেমন ধারণা নেই। সামান্য আগ্রহী স্বরে টুপুর বলল, বাঙালিদের মধ্যে জৈন আছে নাকি?

আমরা তো বাঙালি নই। রাজস্থানি। আরও ঠিক ভাবে বলতে গেলে আমরা মারোয়াড়ি।

তোর কথা শুনে তো একটুও বোঝা যায় না। একটুও অবাঙালি টান নেই।

শালিনীর মুখে এবার পাতলা হাসি ফুটেছে, তাও তো তুই আমার বাবার কথা শুনিসনি। বাবা তো হিন্দি পর্যন্ত বলে বাংলা টোনে।

সে কী? কেন?

অনেকদিন এ রাজ্যে আছি যে আমরা। বোধহয় এক-দুশো বছর।

এই কলকাতাতেই? বরাবর?

তাই তো জানি। বিকানিরের কাছে নাগৌর না কোথায় যেন আমাদের দেশ। তা আমি সেখানে কখনও যাইনি, সে জায়গার নামও ঠিক জানি না।

ও, কথায় কথায় শালিনী খানিকটা সহজ হয়েছে দেখে টুপুর ফস করে পুরনো প্রশ্নে ফিরে গেল, তুই কী যেন স্বপ্নের কথা বলছিলি না?

হ্যাঁ তো, শালিনী মাথা দোলাল, পর পর চার রাত দেখলাম। আমি একটা বিশাল ঘরে ঢুকেছি, ঘরটা এত উঁচু যে, সিলিংটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। সেই ঘরে একটা লোক দাঁড়িয়ে। লোকটা কী প্রকাণ্ড, যেন একটা মিনি পাহাড়। ইয়া মোটা গোঁফ আছে লোকটার, চোখ দুখানাও জাম্বো সাইজের। আমার দিকে দৃষ্টি পড়তেই আরও যেন বড় বড় হয়ে গেল চোখের মণিগুলো। আমাকে এক হ্যাঁচকায় শূন্যে তুলে নিল লোকটা, তারপর ছুঁড়ে দিল সিলিং এর দিকে। মাটিতে পড়ার আগেই লুফে নিল। আবার ছুড়ছে, আবার লুফছে। আমি চিৎকার করছি, কিন্তু গলায় কোনও স্বর নেই…

সত্যিই তো, খুব অস্বস্তিকর স্বপ্ন। টুপুর নিজেকে ওরকম একটা দৃশ্যে কল্পনা করল। উঁহ, মোটেই মজা লাগছে না।

টুপুর গম্ভীরমুখে বলল, তখনই তোর ঘুম ভেঙে যায় নিশ্চয়ই।

তা হলে তো বেঁচে যেতাম। কিন্তু স্বপ্নটা আরও অনেক লম্বা। ওই লোকটা আমাকে এক হাতে ঝুলিয়ে ঘরে পাক খায়। তারপর দেওয়ালের ধারে গিয়ে আর-একটা লোকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল…

যা বাব্বা, দ্বিতীয় একজন? সে এল কোত্থেকে?

কী জানি। সে লোকটা দেওয়ালে ঝোলে। ওই লোকটার বডি থেকে একটা লাঠি বের করে আনে, হঠাৎই লাঠিটা খুলে যায়, আর লাঠিটা হয়ে যায় দেওয়াল।

তা কী করে সম্ভব?

কিন্তু সেটাই তো হচ্ছে। আমি তো তাই দেখছি, শালিনীর নাকের পাটা ফুলছে উত্তেজনায়, এর পর যা ঘটে সে তো আরও ভয়ংকর। লোকটা দেওয়ালে লাথি মারে, অমনি কানে তালা লাগা আওয়াজ। আর দেওয়াল ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। সেই গর্তে আমাকে ফেলে দিল… আমি অন্ধকারে পড়ছি, পড়ছি…তখনই আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। আমি দরদর করে ঘামতে থাকি। বাকি রাতটা আমি আর ঘুমোতে পারি না। সারাদিন স্বপ্নটা চোখে লেগে থাকে, আমার গা শিউরোনো ভাবটা কিছুতেই কাটতে চায় না।

খুবই বিশ্রী ব্যাপার তো, টুপুর ঠোঁট চাপল, অবিকল এই স্বপ্ন দেখছিস রোজ?

একেবারে সিন টু সিন, শালিনীর মুখ কাঁদোকাঁদো, আমার তো এক-এক সময় মনে হচ্ছে, আমি পাগল হয়ে যাব।

কী বলে মেয়েটাকে আশ্বস্ত করবে, ভেবে পেল না টুপুর। স্বপ্নকে আদৌ আমল দেওয়া উচিত কি? মনগড়া ব্যাপার স্যাপার থেকেই তো স্বপ্ন তার ডানা মেলে। কেউ কেউ অবশ্য বলে বটে ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। তা শালিনী তো স্বপ্ন দেখছে মাঝরাতে। সুতরাং স্বপ্নটাকে স্বচ্ছন্দে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া যায়। কিন্তু কোথায় যেন খচখচ করছে। কিছুতেই উড়িয়ে দিতে পারছে না কেন? টুপুরও কি স্বপ্নটাকে বিভীষিকাময় কিছু একটা ভেবে নিল?

ফের শালিনীর গলা বাজছে। একটু যেন বাঁকা সুরেই বলল, কী রে, শুনেই নার্ভাস হয়ে গেলি?

না, না, স্বপ্নটা বোঝার চেষ্টা করছি, টুপুর একটু কায়দা করে গলা ঝাড়ল, তুই কি রিসেন্টলি কোনও ভয়ের সিনেমা দেখেছিস?

মোটেই না। আমি হরর মুভি দেখিই না।

তা হলে নির্ঘাত ঘোস্ট স্টোরি পড়েছিস? এবং বইয়ের পাতার ভূত তোর মগজে সেঁধিয়ে গিয়ে রোজ রাত্রে তোর ঘুমটাকে ডিস্টার্ব করছে।

অসম্ভব। আমি ভূতের গল্প, রহস্য গল্প সেই কবে থেকে পড়ছি, কখনও এরকম হয়নি তো।

আগে কিছু হয়নি বলে কোনওদিন কিছু হবে না, এটা ধরে নেওয়া বোধহয় ঠিক নয়।

টুপুর বলল বটে, তবে নিজের কথা নিজের কানেই বড় ফাঁপা ঠেকল যেন। কপাল ভাল, টিফিন শেষের ঘণ্টা পড়ে গিয়েছে। শালিনীকে ফেলে রেখেই ক্লাসের দিকে দৌড়োল টুপুর। অঙ্ক, ভূগোল, ইংরেজি একটি ক্লাসেও পড়ায় মন দিতে পারল না, শালিনীর বিদঘুটে স্বপ্নটাই দখল করেছে মস্তিস্ক। কিছু যেন একটা অর্থ আছে, কিন্তু ধরা যাচ্ছে না। এক স্বপ্ন বারবার ঘুরে আসছে, এটাও তো অস্বাভাবিক। বাড়িতে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার একটা বই আছে, দেখেছে টুপুর। স্কুল থেকে ফিরেই বসে যাবে বইটা নিয়ে? নাকি অভিমান ভুলে একটা ফোন করবে মাসিকে?

কাল একটা কিছু জবাব তো দিতেই হবে শালিনীকে, নয় কি?

.

০২.

বাড়িতে ঢুকেই তো টুপুরের ভিরমি খাওয়ার দশা। মিতিনমাসি এসেছে আজ, সঙ্গে পার্থমেসোও হাজির। এ যে মেঘ না চাইতেই জল!

খাতা বইয়ের ব্যাগ ঘরে ছুঁড়ে দিয়েই লাফাতে লাফাতে ফিরল টুপুর। মাসি আজকাল খোঁজ রাখছে না টুপুরের, সেই অভিমান ধুয়েমুছে সাফ। মাসির গা ঘেঁষে টুপুর বসেছে সোফায়, আহ্লাদী সুরে বলল, তোমরা কতক্ষণ?

মেসোই উত্তর দিল, চারটের মধ্যেই ঢুকে যেতাম রে। নিরঞ্জনের মাংসের চপটা নিতে গিয়ে খানিক লেট হয়ে গেল।

শুধু চপ নাকি? আরও কত কী এনেছে। সন্দেশ, চমচম, সঙ্গে ডিমের ডেভিল, সহেলির গলায় ছদ্মবিরক্তি, এই পাহাড়প্রমাণ খাবার কে খাবে? টুপুরের বাবা তো ভাজাভুজি আজকাল ছুঁয়েও দেখে না…

কিচ্ছু চিন্তা করিস না দিদি, এবার মিতিনের স্বর ফুটেছে, ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, যে এনেছে, সে কি তোরা শেষ করবি তার তোয়াক্কা করে? একাই চপ-ডেভিলের শ্রাদ্ধ করবে এখন। তুই শুধু বসে বসে দেখে যা।

এই আওয়াজ মেরো না তো, পার্থ মুচকি হাসল, উত্তর কলকাতায় এলে এগুলো না খেয়ে ফেরে কোন বুরবক? আমাদের সাউথ কলকাতায় থোড়াই এসব সুখাদ্য মেলে।

তো আমাদের ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাটটা তা হলে বেচে দিই? মিতিন চোখ টিপল টুপুরকে। ঘুরে পার্থকে বলল, হাতিবাগান, শ্যামবাজার, বাগবাজার কিংবা ধরো বেলগাছিয়া-পাইকপাড়ার দিকটায় চলে আসি, কী বলো?

যাহ, তাই হয় নাকি? আমাদের বন্ধুবান্ধব, চেনাজানা সব্বাই তো সাউথেই থাকে, হুট করে তাদের ছেড়ে আসা যায় নাকি?

আসল কথাটা বলো না, মিতিন ফিকফিক করে হাসছে, নর্থের ভিড়ভাট্টা তোমার পোষায় না। কিন্তু জিভটা তোমার উত্তরের খাবারের লোভে সদাই লকলক করে।

কী অপমানজনক মন্তব্য! বিটকেল একটা ভ্রুকুটি করল পার্থ। পরক্ষণেই অম্লানবদনে বলল, আমি অবশ্য গায়ে মাখছি না। কারণ, যেখানকার যেটা ভাল, সেটা গ্রহণ করতে কোনও দ্বিধা নেই। এটা তো মানতেই হবে কাটলেট, ডেভিল, চপ, কবিরাজি বানানোয় উত্তর কলকাতার একটা দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। এক-একটা দোকানের বয়স একশো-সোয়াশো বছর। এতদিন ধরে তারা নানান পরীক্ষানিরীক্ষা করে একটা নিজস্ব গুণমান তৈরি করেছে। আমি তাদের সেই গুণটার কদর করছি মাত্র।

বেশি জ্ঞান মেরো না তো, মিতিন হালকা ধমক দিল পার্থকে। ঘুরে টুপুরের মাকে বলল, চটপট ওকে থালা সাজিয়ে দে। নয়তো ও ভাট বকেই যাবে।

সহেলি হাসতে হাসতে চলে গেল রান্নাঘরে। সত্যিই দু’খানা প্লেট-বোঝাই চপ, ডেভিল, মিষ্টি এনে রাখল সেন্টার টেবিলে। সঙ্গে পেঁয়াজ, শশা, বিট আর মাস্টার্ড সস। খাও’ শব্দটুকু শোনার তর সইল না পার্থর। হলুদ, ঝাঁঝালো সসে চপ ডুবিয়ে পেল্লাই কামড় বসাল একখানা। পরক্ষণে চোখ দু’খানা বুজে গেল। যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি জেগেছে। মুখ নাড়ছে অল্প অল্প, জিভ যেন চপের পুরের প্রতিটা কণার স্বাদ নিচ্ছে তারিয়ে তারিয়ে।

টুপুর হেসে ফেলল। ওহ, পেটুক বটে পার্থমেসো। মাসি বলে, মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বাঁচার জন্য খায়। কিন্তু পার্থমেসোর খাওয়ার ভঙ্গিমাটি দেখলে মনে হয়, মানুষের বেঁচে থাকার সার্থকতা বোধহয় শুধু ভোজনেই।

পার্থ ভুরু নাচিয়ে টুপুরকে বলল, কী রে তোল কিছু। আমার একা একা খেতে লজ্জা করছে যে।

টুপুর একখানা ডেভিল নিল প্লেট থেকে। নিরঞ্জন দোকানটা বানায় সলিড, আস্ত ডিম পোরা থাকে, গোটা একখানা ডেভিল খেলে পেট জয়ঢাক অনিবার্য। আধখানা ভেঙে পুরল মুখে, দু’আঙুলে মুদ্রা ফোটাল তারিফের। ঘাড় হেলিয়ে মিতিনমাসিকে জিজ্ঞেস করল, তোমরা নিশ্চয়ই কেবল খাবার কিনতেই আজ পেট্রল পুড়িয়ে এত দূর আসোনি?

মিতিন ব্যঙ্গের সুরে বলল, তোর তো দারুণ অবজার্ভেশন! তা হলে এবার বের করে ফ্যাল, কেন এসেছি?

টুপুর বলল, নিশ্চয়ই কাছাকাছি কোথাও তোমার কোনও ক্লায়েন্ট আছে? তাকে মিট করে তুমি এখানে…

নো সেনোরিটা, ইউ আর রং। আমরা তোমাদের বাড়িতেই এসেছি। কারণটা ক্রমশ প্রকাশ্য। তার আগে বল তোর স্কুল কেমন চলছে?

সো-সো। তবে আজ একটা… টুপুর থমকাল একটু। শালিনীর প্রসঙ্গটা তুলবে কি এখন? সামান্য দোনামোনা করে বলল, স্কুলে আজ একটা আজব ঘটনা শুনলাম। একবার মনে হচ্ছে হাস্যকর, আবার কখনও মনে হচ্ছে ব্যাপারটায় একটা রহস্যের ইঙ্গিত থাকলেও থাকতে পারে…

তোকেও কি মাসির রোগে ধরল? পার্থ দ্বিতীয় চপ তুলল। তেরচা হেসে বলল, তুই কি স্কুল থেকেই টিকটিকিগিরি ধরবি প্ল্যান আঁটছিস?

টুপুর মিইয়ে গেল। ঢোঁক গিলে বলল, না মানে… আমার এক ক্লাসমেট…।

খুব বিপদে পড়েছে তো? পার্থর হাসি চওড়া হল, ওরে বুদ্ধ, বিপদ মানেই রহস্য নয়। আর অন্যের বিপদের সমাধান করার জন্য তুই স্কুলে যাস না, তুই যাস লেখাপড়া করতে।

তাই বলে বন্ধুকে হেল্প করব না?

সে তুই নোট দিয়ে হেল্প কর। বই দিয়ে সাহায্য কর। কাল্পনিক রহস্যের গন্ধ খুঁজে কেন সময়টা বরবাদ করবি?

আমিও তো সর্বদা সেই উপদেশই দিই, গ্রাহ্য করে মেয়ে? এবার সহেলির গলা আছড়ে পড়ল, স্কুলে গিয়েও তিনি সারাক্ষণ গেছোমি করছেন। কোথায় কে কার সঙ্গে মিসবিহেভ করল, উনি চললেন তাকে শাসাতে। স্কুলের পেয়ারা গাছে কে পেয়ারা পাড়তে উঠবে? আর কে? ঐন্দ্রিলা। গত সপ্তাহে কতটা হাঁটু ছড়ে স্কুল থেকে ফিরেছিল, তোমরা যদি দেখতে? ওদিকে ক্লাসটেস্টের নম্বর দ্যাখ? কোনওটায় ফর্টি পারসেন্ট, কোনওটায় ফিফটি। সায়েন্সে কুড়িতে মাত্র তেরো পেয়েছে, ভাবতে পারিস?

আহ দিদি, ওর পিছনে ট্যাকট্যাক করিস না তো। ক্লাসটেস্টে যেমনই হোক, ফাইনাল এগজ্যামে ও ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। আফটার অল, ব্রেনটা তো টুপুরের খারাপ নয়। একটুআধটু দস্যিপনা না করলে ও লেবদুস বনে যাবে।

তুই ওকে আর তোল্লাই দিস না তো। এই আমি সাফ জানিয়ে রাখছি, যদি অ্যানুয়ালে ও ধ্যাড়ায়, মানে প্রথম তিনজনের মধ্যে না আসতে পারে, তা হলে তোমার সঙ্গে ল্যাংবোট হয়ে ঘোরা ওর খতম। শত কাকুতিমিনতি করলেও ওকে আমি ছাড়ব না।

আচ্ছা বাবা আচ্ছা, তাই হবে, দিদির শাসানির বহরে যেন ভারী মজা পেয়েছে মিতিন। দু’হাত তুলে সহেলিকে থামিয়ে টুপুরকে গলা নামিয়ে বলল, কী হয়েছে স্কুলে?

মাকে চোরা চোখে দেখে নিয়ে টুপুর উগরে দিল শালিনীর স্বপ্ন উপাখ্যান। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিল মিতিন। একটু চুপ থেকে বলল, কী যেন নাম বললি মারোয়াড়ি মেয়েটির?

শালিনী। শালিনী শেঠ।

শেঠ তো উপাধি। আসল পদবি কী?

মানে?

আশ্চর্য, এটাও বুঝলি না! শেঠ উপাধিটা ওঁরা কোনও সূত্রে পেয়েছেন। কিন্তু ওঁদের তো একটা বংশগত সারনেম থাকার কথা।

আছে হয়তো, জানা হয়নি।

 ভেরি ব্যাড। তথ্য যখন নিবি, ডিটেলে কালেক্ট করবি।

 ধমক খেয়ে দমল না টুপুর। জোর গলায় বলল, সবই জোগাড় করেছি। শুধু ওই ছোট্ট পয়েন্টখানা মিস করে গিয়েছি।

 বটে। কী কী পেয়েছিস তা হলে বল।

যেমন ধরো, শালিনীর বাবার নাম আকাশচাঁদ, মায়ের নাম গৌরী।

অপ্রয়োজনীয় তথ্য। আর?

শালিনীর কোনও ভাইবোন নেই। ওর ঠাকুরদা, ঠাকুরমাও বেঁচে নেই। ঠাকুরমাকে ও চোখেই দেখেনি। ঠাকুরদাও মারা গিয়েছেন খুব ছেলেবেলায়, তাঁকেও ওর ভাল মনে নেই। আগে ওরা থাকত নর্থ ক্যালকাটায়, মানিকতলার কাছে। ঠাকুরদার মৃত্যুর পর পরই শালিনীর বাবা উঠে এসেছিলেন দক্ষিণ কলকাতায়। এখন ওরা থাকে ঢাকুরিয়া লেকের ধারে, একটা চোদ্দোতলা বাড়ির টেন্থ ফ্লোরে। শালিনীর জ্যাঠা এখনও সেই মানিকতলার বাড়িতেই বাস করছেন।

অর্থাৎ দুই ভাই আলাদা হয়ে গিয়েছেন?

অনেকদিন।

 হুম। তারপর?… কী করেন শালিনীর বাবা?

 সফটওয়্যারের ব্যবসা। ওদের বাড়ির কাছেই। খুব রমরমা কারবার।

স্বপ্নটার কথা ও বাবা-মাকে বলেছে?

হ্যাঁ, তাঁরা নাকি খুব একটা পাত্তা দেননি।

তোরাই বা মাথা ঘামাচ্ছিস কেন? খাওয়া থামিয়ে চোখ গোলগোল করে মাসি-বোনঝির বাক্যালাপ গিলছিল পার্থ, একটু সুযোগ মিলতেই নাক গলিয়ে দিয়েছে তৎক্ষণাৎ, কেন সে রোজ একই অদ্ভুতুড়ে স্বপ্ন দেখছে, তার জন্যও কি গোয়েন্দাগিরি করতে হবে?

যে-কোনও অস্বাভাবিক ঘটনার পিছনে একটা কিছু কারণ থাকে, মিতিন ঠান্ডা গলায় বলল, আর গোয়েন্দার দায়িত্ব সেই লুকোনো কারণটা খোঁজা।

আরে, এখানে তো কিছুই ঘটেনি।

একই স্বপ্ন বারবার দেখাটাও একটা বিশেষ ঘটনা বই কী, মিতিন নিজের মতে অনড়। দৃঢ় স্বরে বলল, স্বপ্ন আশমান থেকে টপকায় না স্যার। আমাদের নিত্যদিনের নানান ঘটনাই রূপ বদলে রাতের স্বপ্নে হানা দেয়। কখনও বা অবিকৃত চেহারাতেও আসে। কিন্তু প্রতি রাতে একভাবে ফিরে ফিরে আসাটা অবশ্যই স্পেশাল মনোযোগ দাবি করে। হয়তো স্বপ্নটার মধ্যে লুকিয়ে আছে কোনও আসন্ন বিপদের সংকেত। শালিনী মেয়েটা মনে মনে হয়তো…

ধুৎ, স্বপ্ন কি সর্বদা নিয়ম মেনে হয় নাকি? কত তুচ্ছ ব্যাপার থেকেও তো স্বপ্নের জন্ম হয়। স্বপ্ন তো অবচেতন মনের একটা মিক্সচার। হয়তো মেয়েটা পথেঘাটে একটা ভয় পাওয়ানো গোছের সামথিং দেখেছিল, মে বি কোনও কাপালিক বা তান্ত্রিক। তার ভাটার মতো চোখ কিংবা চুল ওর মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি করেছিল। তারই একটা ভাঙাচোরা চেহারা ওই স্বপ্নটার মধ্যে এসে হাজির হয়েছে।

হতেও পারে। কিন্তু কোনও অনুমানের ওপর তো ছেড়ে দিতে পারি না। সুতরাং স্বপ্নটা কার্যকারণ সূত্র মানছে কিনা সেটাও তো বাজিয়ে দেখতে হবে।

আমার ঘাট হয়েছে। আমাকে ক্ষ্যামা দাও, মজারু ভঙ্গিতে হাতজোড় করল পার্থ, তোমাদের যা প্রাণ চায় করো, কিন্তু দরকারি কাজটা আগে সেরে নাও। নয়তো যে উদ্দেশ্যে আসা, সেটাই হয়তো ভুলে যাব।

মিতিন কাঁধ ঝাঁকাল, তুমিই বলো না।

ওকে, পার্থ ডেভিলের শেষটুকু চালান করে দিল মুখগহ্বরে। সহেলি চা এনেছে, পেয়ালা-পিরিচ হাতে তুলে নিয়ে বলল, সহেলিদি, পুজোয় এবার স্পেশাল কোনও প্রোগ্রাম আছে নাকি আপনাদের?

সহেলি জোরে জোরে মাথা নাড়ল, কই না তো। ওই কয়েকটা মণ্ডপে ঘোরা, আর বড়জোর এক-আধদিন কোনও ভাল রেস্তরাঁতে যাওয়া। তাও যদি টুপুরের গেঁতো বাবাটিকে নাড়াতে পারি। তিনি নির্ঘাত ওই সময়টিতেই ভারী ভারী কেতাব খুলে বসার মতলব আঁটবেন।

টুপুরের বাবা অবনী কলেজে পড়ান। তাঁর দুটিই নেশা। দুষ্প্রাপ্য প্রবন্ধের বই গেলা ও ঘুম। পুজোর ছুটিতে দুটোই যে তিনি পুরোমাত্রায় উপভোগ করতে চাইবেন, এ তো বলাই বাহুল্য।

পার্থ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, এবার যদি অবনীদার সুখে ব্যাঘাত ঘটাই?

কীভাবে?

রাজস্থানে যদি একটা ট্রিপ করি?

ও মা, রাজস্থান তো আমার স্বপ্ন! সহেলি আহ্লাদে লাফিয়ে উঠল, কবে বেরোব? ক’দিনের জন্য যাব? কোথায় কোথায় ঘুরব?

ধীরে ধীরে। একে-একে বলি তা হলে, মিতিনকে ঝলক দেখে নিয়ে পার্থ গলা ঝাড়ল, লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন বিকেলে যাত্রা শুরু। প্রথমে দুরন্ত এক্সপ্রেসে নয়াদিল্লি। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে জয়পুর। কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদটা আমরা জয়পুরেই দেখব। তারপর যাব আজমেঢ়, পুষ্কর, যোধপুর, বিকানির, জয়সলমীর হয়ে মাউন্ট আবু। দেন উদয়পুর টঙ্ক অ্যান্ড চিতোরগড়। দুর্গ দেখার মাঝে টুক করে একটু জঙ্গল সাফারি। রণথম্ভোর ফরেস্ট। অবশেষে ভরতপুর পাখিরালয় ছুঁয়ে ব্যাক টু নিউদিল্লি এবং রাজধানীতে চড়ে প্রত্যাবর্তন। মোট আঠারো দিন।

টুপুরের উত্তেজনায় দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। নাচতে ইচ্ছে করছিল টুপুরের। কল্পচক্ষে দেখতে পাচ্ছে দুর্গ, মরুভূমির উটের পাল। সোনালি বালি। রঙিন পাগড়ি পরা তাগড়াই লোকজন।

আচমকা মিতিনমাসির গলা, শালিনীকে একটা কথা জিজ্ঞেস করিস তো। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িতে নতুন কেউ এসেছে কিনা।

আজব কৌতূহল তো! স্বপ্নটা তা হলে টানছে মাসিকে। কিন্তু কেন?