শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ৭

০৭.

কিশোর, ফিসফিস করে বলল মুসা। দেখেছ?

উপরে-নীচে মাথা নাড়ল কিশোর। মিসেস হগার্ডের দিকে চেয়ে রয়েছে। ভদ্রমহিলা কথা বলছেন রয়ের সঙ্গে।

বেশ গরম লাগছে এখানে, বললেন মিসেস হগার্ড।

একেই বোধহয় বলে আগস্টের ডগ ডে, বলল রয়।

আমার কাছে সারা বছরই ডগ ডে! কুকুর দুটোকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে বললেন ভদ্রমহিলা।

জলদি লুকিয়ে পড়ো, কিশোর বলল বন্ধুদের উদ্দেশে। আমি চাই না উনি আমাদেরকে দেখে ফেলুন।

বাঘার শিকল ধরে টান দিল কিশোর। ঘাপটি মারল গোলাপি রঙের এক পর্দার পিছনে। ওর দেখাদেখি একই কাজ করল মুসা ও রবিন।

কিশোর! গলা নামিয়ে ডাকল রবিন। আমরা একা নই। দেখেছ!

ঘুরে তাকাল কিশোর। উঁচু টেবিলে বসে দুটো কুকুর। কোকড়াচুলো এক পুড়ল, আর তোয়ালে মোড়া এক বুলডগ।

শশ, কুকুর দুটোকে লক্ষ্য করে বলল কিশোর। ঠোঁটে আঙুল রেখেছে।

বিশ্বাস করতে পারো, মিসেস হগার্ডের কুকুরদের গলায় কালো ভেলভেটের কলার! মুসা ফিসফিসে কণ্ঠে বলল।

হু, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দেখা যাক, ঘটনা কদ্দুর গড়ায়।

হঠাৎ মৃদু এক গর্জন কানে এল ওদের। নীচের দিকে তাকাল কিশোর। ছোট্ট এক ইয়র্কি পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে।

মিসেস হগার্ডের ঝাড়ন, বলল মুসা। এই যা, ভাগ!

অপর ইয়র্কিটাও এসে উঁকি মারছে। গা গুঁকছে বাঘার। এবার ডাক ছাড়তে শুরু করল।

খাইছে!

কী হচ্ছেটা কী ওখানে? সামনে থেকে শোনা গেল রয়ের গলা।

বাঘা পাল্টা ঘেউ-ঘেউ করে পর্দার নীচ দিয়ে সঁত করে বেরিয়ে গেল। তিন গোয়েন্দা ওর পিছু-পিছু ছুটল।

বাঘা, ফিরে আয় বলছি! কিশোর হাঁক ছাড়ল।

খুদে ইয়র্কি দুটো বাঘাকে তাড়া করে বেড়াতে লাগল ওয়েটিং রূম জুড়ে।

এক মহিলা ম্যাগাজিন পড়ছিলেন, চেঁচিয়ে উঠলেন। এক ভদ্রলোক তাঁর চিহুয়াহুয়া চেপে ধরলেন বুকের সঙ্গে।

কুকুর তিনটে সোফা আর চেয়ার টপকে ছুটে বেড়াচ্ছে।

ওই, ধাড়ি কুকুরটা আমার সোনামণিদেরকে তাড়া করছে! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন মিসেস হগার্ড।

ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো! বাঘাকে ধরার চেষ্টারত কিশোর বলল।

কুকুরগুলোর লাথি খেয়ে এদিক-সেদিক উড়ছে ম্যাগাজিন। কোনদিকে হৃক্ষেপ নেই ওদের। ঘরময় ছোটাছুটি করেই চলেছে। তার সঙ্গে সমান তালে চলেছে হাঁক-ডাক।

স্টপ! গর্জে উঠল রয়। ডাউন! হীল!

ইয়র্কি দুটো বাঘার গায়ে লাফিয়ে উঠে ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল। বাঘা কেউ-কেঁউ করে নালিশ জানাল। শেষমেশ আর না পেরে দৌড়ে এসে আশ্রয় নিল কিশোরের কাছে। ওর মাথা চাপড়ে আদর করল কিশোর। ওদিকে মিসেস হগার্ড তার কুকুরছানাদের পরম আদরে কোলে তুলে নিলেন।

আমার সোনামণিদের কোট আরেকটু হলেই ছিঁড়ে দিয়েছিল ধাড়িটা, চোখ পাকিয়ে বললেন।

মুসার হাতে বাঘার শিকলটা ধরিয়ে দিল কিশোর। গিয়ে গেল মিসেস হগার্ডের কাছে।

কালো কলার দুটো কোথায় পেলেন, মিসেস হগার্ডঃ

তোমার চাই নাকি? জবাবটা দিল রয়। আরও আছে আমার কাছে।

 কিশোর ঘুরে দাঁড়াল।

আমার ডগি ফ্যাশন কালেকশনের কোট ওগুলো, জানাল রয়। আজ ডিসপ্লে দেব। বলে একটা বাক্স ডেস্কের নীচ থেকে টেনে বের করল।

বাক্সের ভিতর উঁকি দিল কিশোর। খুদে হ্যাট, সোয়েটার আর কোটে ঠাসা ওটা। অনেকগুলোরই দেখা গেল কালো ভেলভেটের কলার।

রয় কাল আমাকে এগুলো দেখিয়েছে, বললেন মিসেস হগার্ড। কালো ভেলভেটের কলারওয়ালা কোট দেখেই মনে ধরে যায় আমার।

তা হলে ফ্যাশন হাউজের কালো কোটটা কিনতে চাইছিলেন কেন? কিশোর প্রশ্ন করল।

ওটা তো দারুণ দেখতে, বললেন ভদ্রমহিলা। আমার নাতনীকে খুব মানাত।

আপনার নাতনী? বলে পকেট থেকে মুক্তার ইয়ারিংটা বের করে দেখাল কিশোর। কালকে এটা ফ্যাশন হাউজে পেয়েছি আমরা।

ইয়ারিং দেখে হাসলেন মিসেস হগার্ড।

কোটের সাইয দেখছিলাম, বললেন। তখন হয়তো পড়ে গেছে। স্টকরূমে তখন আমি ছাড়া কেউ ছিল না।

আচ্ছা, তা হলে ব্যাপারটা এই, মনে মনে বলল কিশোর। ইয়ারিংটা ফিরিয়ে দিল।

আচ্ছা, চলি, বললেন মিসেস হগার্ড। রয়কে দেখাতে এসেছিলাম আমার সোনামণিদের নতুন পোশাকে কেমন দেখাচ্ছে।

সেলুন ত্যাগ করছেন তিনি, খুদে কুকুর দুটো শেষবারের মত ঘেউ-ঘেউ করে গেল বাঘার উদ্দেশে।

আমার কাছে চমৎকার এক ডেনিম জ্যাকেট আছে, বলে হাতে হাত ঘষল রয়। বাঘাকে খুব মানাবে। দেখাব?

দরকার নেই, জানাল কিশোর। গোসল করালেই ওর রূপ খুলে যাবে।

বাঘার শিকল ধরল রয়।

এক ঘণ্টা পরে এসে নিয়ে যেয়ো।

ড্যাশিং ডগ ত্যাগ করল ছেলেরা।

মিসেস হগার্ডও ফসকে গেল, হতাশ কণ্ঠে বলল রবিন। এখন আর বাকি থাকল কে?

নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল গোয়েন্দাপ্রধান।

কেউ না। অথচ যা করার শীঘি করতে হবে, বলল। নইলে শুঁটকি যাতা কথা লিখতেই থাকবে।

মেইন স্ট্রীট ধরে হাঁটছে, ছোটখাট এক জটলা চোখে পড়ল ওদের।

কী হচ্ছে ওখানে? মুসা জিজ্ঞেস করল।

আর্ট শো, বলে কাছিয়ে গেল কিশোর।কেন শিপটনের আর্ট শো!

সাইডওয়কে সারি দিয়ে রাখা কেনের আর্টওয়র্ক। পিঁপড়ে, ফড়িং অবশ্যই বিলির ছবি শোভা পাচ্ছে সেখানে।

তুমি কোথা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছ? এক লোক শিল্পীকে প্রশ্ন করল।

 বিলির কাঁচের জারটা উঠিয়ে দেখাল কেন।

পাথরের তলা থেকে।

কিশোর লক্ষ করল একটা পেইন্টিং অন্যগুলোর চাইতে আলাদা। পোকা মাকড়ের বদলে বাদামী-সাদা এক ছোপ।

রবিনেরও দৃষ্টি কেড়েছে ছবিটা।

কেউ মনে হয় পোকাটাকে মাড়িয়ে দিয়েছিল, বলল।

পোকার মত লাগছে না আমার কাছে, কিশোর বলল।কাছ থেকে খুঁটিয়ে পরখ করল। বাদাম আর চকোলেট চিপ ছিটিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রলেপটা। আইসক্রীম।

মুসা একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে ছোপটার দিকে।

খাইছে! পাণ্ডা বার আইসক্রীম! চেঁচিয়ে উঠল ও।

আর খেয়াল করে দেখো, বলল কিশোর। ছবিটার নীচে কেন, শিপটনের সই নেই। আছে মানি আর পেনির।

কালো পটভূমিটা পরিচিত ঠেকল কিশোরের চোখে। হাত বাড়াল ছোঁয়ার জন্য। পুরু আর মোলায়েম। রবিন। মুসা! উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল কিশোর। এটাই সেই কালো কোটের ভেলভেট!