শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ২

০২.

 কিশোর হতচকিত।

রুডির দিকে চেয়ে রয়েছে সবাই। রুডি বয়সে কিশোরের চাইতে বড়। স্কুলে প্রায়ই ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক পরে আসে।

তোমাকে পরতে দেয়া উচিত একথা কেন বলছ, রুডি? জিজ্ঞেস করল মিরা।

কারণ আমি পিকচার পার্ফেক্ট মডেলিং স্কুলে ক্লাস করেছি, বলল। কোমরে ভঙ্গি নিয়ে হাত রেখে পাঁই করে এক পাক ঘুরে নিল। সবাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ওর দিকে।

মিরা হেঁটে এল কিশোরের কাছে। কোটের হাতা দুটো ধরে টানল।

 হাতা দুটো তোমার জন্য একটু বড় হয়ে গেছে, বলল। ঠিক ফিট করেনি।

কিশোর আঙুল বাড়িয়ে দিল।

কই, ঠিকই তো আছে, বলল।

একটু লম্বা ছেলেকে এটা ভাল মানাবে, বলল মিরা।

আমার মত! খোশমেজাজে বলে উঠল রুডি।

 আমি দুঃখিত, কিশোর, বলল মিরা।

মনটা খারাপ হয়ে গেল কিশোরের। শোতে এটা পরতে পারবে ভেবে খুশি হয়ে গিয়েছিল। মনে হলো ওর মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া হলো বুঝি।

ঠিক আছে, ঠিক আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোট খুলে দিল ও।

রুডির হাতে কোটটা তুলে দিচ্ছে, এসময় কেন শিপটনকে পিছনের কামরায় উঁকি মারতে দেখল। ওর চেহারায় ধূর্ততার আভাস।

ছেলেটা সব সময় একটা না একটা মতলব ভাজে, মনে মনে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। ওর মতলবটা কী এখন?

রুডি কোটটা পরল। তারপর হাসি মুখে বারবার ঘুরে ঘুরে সবাইকে দেখাল।

খাইছে! ওর কি মাথাও ঘোরে না নাকি? ফিসফিস করে বলল মুসা।

সবাই ফ্লোরে চলো, ডাকল মিরা। কোথায় মডেলিং করবে দেখে নাও।

তিন গোয়েন্দা ওকে অনুসরণ করবে, এমনিসময় প্যাড আর কলম হাতে ওদের সামনে লাফিয়ে পড়ল শুঁটকি টেরি।

আমি কাপড়ের র‍্যাকের পেছনে লুকিয়ে ছিলাম, বলল ও। দারুণ একটা নিউজ হবে।

কীসের নিউজ? কিশোরের প্রশ্ন।

 তুমি কোটটা পেয়েও হারালে।

 শ্রাগ করল কিশোর।

তাতে কী?

তাতে এই, তুমি হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরছ। তুমি চাইবে প্রতিশোধ নিতে!

আবার শুরু হলো, ভাবল কিশোর, শুঁটকির নোংরা খেলা।

কোটটা আমার গায়ে লাগেনি, বলল কিশোর।

চলে এসো, কিশোর, বলল রবিন, বুঝতে পারছি ও ফালতু খবর রটানোর সুযোগ খুঁজছে।

স্টকরাম ত্যাগ করল ছেলেরা। প্রচুর লোকজনকে ঢুকতে দেখা গেল স্টোরে। ফ্যাশন শো দেখতে এসেছে।

স্টোরের চারধারে চোখ বুলাল কিশোর। মিসেস হগার্ড হেয়ার ব্যারেটের একটা ব্ল্যাক ঘোরাচ্ছেন। কেন শিপটন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নানারকম মুখভঙ্গি করছে।

এই কার্পেটটা হচ্ছে তোমাদের রানওয়ে, বলল মিরা। স্টকরূমের বাইরে পেতে রাখা লালরঙা লম্বা কার্পেটটা দেখাল।

রুডি একটা হাত উঠাল।

মডেলিং স্কুলে আমরা একে ক্যাটওয়ক বলতাম।

মিয়াও! মিয়াও! পেনি বেড়াল ডাকল।

হেসে উঠল মিরা।

রানওয়েতে হাঁটা-চলা প্র্যাকটিস করা যাক, বলল। মানি, পেনি, আগে তোমরা।

পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল যমজরা।

ওকে, বলল মানি। রেডি, সেট, গো!

সবার চোখের সামনে কার্পেটের উপর ছোটাছুটি শুরু করল দুভাই।

কী করছ কী তোমরা? মিরা জবাব চাইল।

 রানওয়েতে দৌড়চ্ছি, জবাব দিল পেনি।

এটা নামেই রানওয়ে, শুধরে দিল মিরা। তোমরা আস্তে-ধীরে, সুন্দর করে হাঁটবে, সবাই যাতে তোমাদের ড্রেস দেখতে পায়।

সব কজন ছেলে-মেয়ের প্র্যাকটিস শেষ হলে দেয়াল ঘড়ি দেখল মিরা।

দুটো বাজে প্রায়, বলল ও। সবাই প্রথম প্রস্থ আউটফিট পরে ফেলল।

সবাই ছুটল স্টকরূমের দিকে। বাক্সের পিছনে গিয়ে কাপড় পাল্টাচ্ছে। জুতো, স্কার্ফ আর সোয়েটার উড়তে লাগল চারদিকে।

আমার ব্লু টাইটস কোথায়?

 ভেস্টটা খুঁজে পাচ্ছি না!

কিশোর তার লাল জ্যাকেটটা পরছে। রবিন বেচারাকে সুট পরতে হবে। টাই বাঁধতে ওকে কসরত করতে হচ্ছে রীতিমত।

মুসা, হাঁক ছাড়ল। এদিকে একটু আসবে?

 টাই বাধা সত্যি বড় ঝামেলার কাজ, কাজটা করে দিয়ে বলল মুসা।

কিশোর, সবার আগে তুমি, বলল মিরা। রেডি তো?

ধড়াস করে উঠল কিশোরের হৃৎপিণ্ড।

রেডি।

রীটা সিডি প্লেয়ার চালু করে দিল, কিশোর যেই ঘর থেকে বেরোবার জন্য পা বাড়াল।

লাল কার্পেটে পা রেখে চারধারে দৃষ্টি বুলিয়ে নিল কিশোর। একটা চেয়ারও খালি পড়ে নেই। পেটের ভিতর প্রজাপতি উড়ছে ওর।

কিশোর ব্যাক-টু-স্কুল জ্যাকেটের মডেলিং করছে, শ্রোতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করল মিরা।

লাল কার্পেটের উপর দিয়ে সাবধানে, ধীর গতিতে হাঁটছে কিশোর। শেষপ্রান্তে পৌঁছে মৃদু হেসে ঘুরে দাঁড়াল।

থ্যাংক ইউ, কিশোর, মিরা বলল।

 কিশোর স্টকরূমে ফিরে যাচ্ছে, এ সময় যমজরা ওর গায়ের উপর এসে আছড়ে পড়ল।

সরোহ! চেঁচিয়ে উঠল মানি।

হাতে বেলুন নিয়ে ছুটতে ছুটতে চলে গেল যমজরা।

এখন আপনাদের সামনে আসছে মানি আর পেনি, মিরার ঘোষণা এল। ওরা দেখাবে, যমজরাও আলাদা ড্রেস পরে।

ফ্যাশন শো-র বাকি সময়টুকু দারুণ উত্তেজনার মধ্যে কাটল। কিশোর আর রবিন আরও তিন ধরনের আউফিটের মডেল হলো।

এবার কালো ভেলভেট কোটের মঞ্চে আসার পালা।

সবাইকে একেবারে তাক লাগিয়ে দেব, আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে রুডির কণ্ঠে। ঝটপট কোটটা পরে নিয়ে বেরিয়ে গেল ও।

দেখা যাক ও কেমন করে, বলল মুসা।

তিন গোয়েন্দা স্টকরূমের ভিতর থেকে উঁকি মেরে চেয়ে রইল।

এবার আপনাদের সামনে আসছে, গর্ব ভরে বলল মিরা, আমাদের সেরা আউটফিট!

ঠোঁটে অহঙ্কারের হাসি নিয়ে, রানওয়ে ধরে গটগট করে হেঁটে গেল রুডি।

রবিন? মুসা? কিশোর ধীর কণ্ঠে বলল। আমি যখন কোটটা পরি তখন কি ওটার পেছনে ওই মস্ত ফুটোটা ছিল?

প্রশ্নই ওঠে না, দৃঢ়কণ্ঠে জানাল মুসা। চোখ ছানাবড়া।

কিশোরের বাহু চেপে ধরল রবিন। কে কাটল কোটটা?

কে জানে। কোটটার নীচে কালো লাইনিং আছে, ফিসফিস করে বলল কিশোর। হয়তো কারও চোখে পড়বে না।

কিন্তু ঠিক এসময় ছোট এক ছেলে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে।

মা, মা, দেখো! চেঁচিয়ে উঠল। কোটের পিছনে কত বড় ফুটো!