শুঁটকি বাহিনী – পরিচ্ছেদ ১০

১০.

মুসার প্রশ্ন হাঁ করিয়ে দিল টাকি আর তার তিন দোস্তকে। সবার আগে সামলে নিল কডি। নিষ্ঠুর, শীতল হাসি হাসল। সে তাতে যোগ দিল নিটু আর হ্যারল্ড।

টাকি হাসল না। গম্ভীর হয়ে বলল, আমি তোমাকে এখনও কাজটা না করতে অনুরোধ করব, মুসা।

কেন, তোমার হঠাৎ এত মুসার জন্যে দরদ উথলে উঠল কেন? কিশোর বলল। ওর নাটকে কান দিয়ো না, মুসা। কথা বুলে ভয় দেখিয়েই ও তোমাকে কাবু করে ফেলার চেষ্টা করছে।… শোনো টাকি, আমি বলি কি, অকারণে সময় নষ্ট না করে টাকাগুলো দিয়ে বিদেয় হও। টেরিকে গিয়ে বোলো, বাজিফাজি খতম। কত আর বলব, মুসা কোন কিছুকে ভয় করে না।

না দেখে কিছু বিশ্বাস করব না। হাত তুলে বাড়িটা দেখাল টাকি। মুসা, পেছনের ওই জানালাটা দেখতে পাচ্ছ?  

পাতাবাহারের ওপর দিয়ে গলা লম্বা করে তাকাল মুসা। সবগুলো জানালাই অন্ধকার। কোনটাতে আলো নেই। সমস্ত বাড়িটায় আলো বলতে শুধু ওই একটাই, বোর্ডের ওপরের স্পটলাইট। এ পরিবেশে হলুদ আলোটাকেও কেমন ভুতুড়ে লাগছে।

দেখছ না জানালাটা? জিজ্ঞেস করল টাকি।

 মাথা ঝাঁকাল মুসা।

 ওটা দিয়ে ঢুকতে হবে তোমাকে।

ঢুকতে হবে!

 কেন, ঘাবড়ে গেলে?

হেসে উঠল টাকি বাদে টেরির বাকি তিন সহচর।

আমি বলতে চাইছি, কাজটা বেআইনি হবে না? কণ্ঠস্বর যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল মুসা। টেরির বাবা কি জানেন?

আরে নাহ! পাগল নাকি! টাকি বলল।

কডি বলল, টেরির বাবা জানলে আমাদের সবাইকে ধরে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবেন।

যেন মস্ত এক রসিকতা করে ফেলেছে কডি। হো হো করে হেসে উঠল নিটু আর হ্যারল্ড। পিঠে চাপড় মারতে শুরু করল পরস্পরের।

আস্তে! সাবধান করল টাকি। অত জোরে হেসো না। কেউ শুনে ফেলবে।

ধূর, এ সব বাঁচালের দলের সঙ্গে কে গেম খেলতে যায়! রেগে উঠল কিশোর। এই টাকি, আমাদের টাকা দিয়ে দাও, আমরা চলে যাই। বসে বসে এখানে যত খুশি প্যাচাল পাড়োগে তোমরা। আমি সারারাত ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।

কাজটা সহজ, মুসার কাঁধে হাত রেখে আন্তরিক স্বরে বলল টাকি। বাড়ির পেছনের জানালাটার দিকে ইঙ্গিত করল আবার। জানালাটা খুলবে। চৌকাঠে উঠে বসবে। লাফ দিয়ে নামবে নিচে। সামনে প্রথম যে কফিনটা পড়বে সেটার মধ্যে ঢুকে শুয়ে পড়বে।

কিন্তু…কিন্তু… বলতে গেল মুসা। কিশোরের জন্যে পারল না।

কিশোর বলল টাকিকে, ব্যাস, এই? শুধু এটুকুর জন্যে এত ভণিতা? এ কোন কাজ হলো! নাহ, টাকার কোন মায়াদয়া নেই তোমাদের।

কিশোর, শোনো… আবার বলতে গেল মুসা, কফিনে ঢোকার কথা শুনেই ঘাবড়ে গেছে। ক-ক…।

শুনল না কিশোর। টাকিকে বলল, ভয় দেখানোর মত আর কিছুই কি মাথায় আসে না তোমাদের? না এলে হাতজোড় করে সাহায্য চাও, আমিই নাহয় বলে দেব একটা কিছু।

কিশোরের কথাবার্তায় অবাক হচ্ছে রবিন। টেরির দলকে উস্কে দিয়ে মুসাকে বার বার এ ভাবে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে কেন কিশোর? কারণটা কি?

কিশোর বলল, মুসা, যাও না, চট করে সেরে চলে এসো কাজটা। আজ আর টাকা না নিয়ে ছাড়ছি না ওদের কাছ থেকে। দুই-দুইবার মাপ করলাম, আর কত। যাও, যাও।

টাকিকে জিজ্ঞেস করল মুসা, আমি ঢুকলাম কিনা, কি করে জানছ তোমরা?

আমরা চেয়ে থাকব, জবাব দিল টাকি। পেছনের জানালায় দাঁড়িয়ে সবাই দেখব আমরা।

টেরির বাবার লোক যদি আমাদের ধরে ফেলে?

ধরবে না। আর কোন মানুষই থাকে না এখানে, লাশগুলো বাদে।

 লাশকে নিশ্চয় ভয় পাও না তুমি? ফ্যাকফাঁক করে হাসল কডি।

হ্যাঁ, পাই!-মুসা বলল। তবে শুনিয়ে নয়, মনে মনে। লাশকে ভয় পায় না কে!

তার কথার সমর্থনেই যেন আরেক ঝলক বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। পাতাবাহারের বেড়াকে। বাতাসের শব্দকে লাগল প্রেতাত্মার দীর্ঘশ্বাসের মত। কেঁপে উঠল মুসা। কপালে আঘাত হানছে বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টি বেড়েছে। হুডটা আবার তুলে দিল সে।

যাও, মুসা, তাগাদা দিল কিশোর, কাজটা যত তাড়াতাড়ি পারো শেষ করে চলে এসো। বাড়ি যাই। এই ছাগলগুলোর চেহারা দেখতেও বিরক্ত লাগছে আমার।

দেখো, মুখ সামলে কথা বলো! রেগে গেল কডি।

কেন, মারবে নাকি? মরফির কি অবস্থা করে ছেড়েছে মুসা, বলে বলে কল্পনায় ছবি দেখায়নি তোমাদের দোস্ত টাকি? খোঁচাটা ঠিকই দিয়ে দিল কিশোর। তোমার ওস্তাদ টেরিই তো ঘুস দিয়ে পাঠিয়েছিল ওকে, নাকি?…এসো হয়ে যাক তাহলে আরেকটা বাজি, মারামারির…

কিশোর, প্লীজ! নতুন আর কোন চ্যালেঞ্জে যেতে চায় না মুসা।

 থেমে গেল কিশোর।

 বাড়িটার দিকে তাকাল মুসা। পারবে কি? লাশ ভর্তি ঘরে ঢুকে কফিনের মধ্যে শুতে পারবে?

বেড়ার কাছ থেকে বাড়িটা মাইলখানেক দূরে মনে হলো তার। যে হারে পা কাঁপছে হেঁটে জানালা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে কিনা সন্দেহ হলো।

সত্যি কথাটা বলে ফেল, মুসা!-ভাবল সে। জানিয়ে দাও ওদের, এ কাজ তুমি পারবে না। বলে দাও, এত সাহস তোমার নেই। ল্যাঠা চুকে যাক। কিন্তু এর পরে যে কি হবে ভাবতেই দমে গেল সে। এতগুলো টাকা গচ্চা যাবে। তার ওপর রয়েছে তোতলা মুসা খেতাব নিয়ে টিকে থাকা।

না, মুসা, কোন উপায় নেই আর তোমার। ভাল ফাঁদে জড়িয়েছ তুমি। সব রাগ গিয়ে পড়ল কিশোরের ওপর। কিশোরই তাকে এ রকম করে ফাঁসিয়েছে! টেরির দলের সঙ্গে অতটা বাড়াবাড়ির কি কোন প্রয়োজন ছিল?

আমি যাচ্ছি, বলল সে। কপালের ওপর থেকে হুডটা সরিয়ে দিল। বাতাসের অনুকূলে মাথা নিচু করে রেখে, গাছের বেড়া ফাঁক করে ঠেলে বেরিয়ে এল অন্যপাশে। পার্কিং লটে ঢুকল।

আধাআধি গিয়েছে, এই সময় হঠাৎ জ্বলে উঠল উজ্জ্বল আলো। সরাসরি তার গায়ে এসে পড়ল।