শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ৪

০৪.

পরদিন। মুসা আর রবিনের সঙ্গে কথা বলছে কিশোর।

শুঁটকি কোট কাটার জন্য আমাকে দায়ী করছে, দুঃখ করে বলল।

ওরা আজও ফ্যাশন হাউজে চলেছে, যদি আর কোন ক্লু পায়।

শুঁটকি তোমাকে দোষ দিচ্ছে কেন? মুসা প্রশ্ন করল।

কোটটা আমার পরার কথা ছিল, কিন্তু শেষমেশ রুডিকে পরতে দেয়া হ তাই।

যাকগে, নাম তো আর উল্লেখ করেনি শয়তানটা, রবিন বলল।

করার দরকার পড়েনি, জানাল কিশোর। ইঙ্গিতই যথেষ্ট।

মন খারাপ কোরো না, কিশোর, বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল মুসা। রকি বীচের কটা ছেলে-মেয়ে ওর ফালতু কাগজ পড়ে?

এসময় দুটো ছোট মেয়ে ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। কিশোরের দিকে চেয়ে মুখ টিপে হাসাহাসি করতে লাগল ওরা।

কিশোর পাশার কথাই লিখেছে, একজন বলল।

আমিও পড়েই বুঝতে পেরেছি, বলল অপরজন। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল দুজনে।

ভাল, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল কিশোর।

মেইন স্ট্রীট ধরে হাঁটছে এখন তিন বন্ধু। রবিন আচমকা বাহু চেপে ধরল কিশোরের।

আমরা শুঁটকির কথা বলছিলাম না? বলল। ওই দেখো, ফ্যাশন হাউজ থেকে কে বেরোচ্ছে।

টেরিকে দেখা গেল এক মহিলার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে দোকান থেকে। দেখে মনে হলো মহিলা ওদের গভর্নেস হতে পারে।

মহিলার হাতে প্রকাণ্ড এক শপিং ব্যাগ। শুঁটকির পনিটেইল হাঁটার ছন্দে লাফাচ্ছে।

কী কিনল, কে জানে, বলল রবিন।

শয়তান জাদুকরের হ্যাট আর ঝাড় হবে আর কী? আওড়াল মুসা।

কাছেই এক ফুড শপে গিয়ে ঢুকল মহিলা। শুঁটকি বাইরে দাঁড়িয়ে জানালায় চোখ রাখল। ও যেই ঘুরে দাঁড়াল, চমকে উঠল কিশোর।

মুসা! রবিন! জরুরী কণ্ঠে বলল। শুঁটকির পনিটেইলে একটা কালো বো। দেখে মনে হচ্ছে ভেলভেট।

কোটের সেই ভেলভেট নয় তো? মুসার জিজ্ঞাসা।

ওটা হলে তো হাতেনাতে ধরেই ফেলব।

এখান থেকে দেখে কী মনে হচ্ছে, ওটাই? রবিন জানতে চাইল উত্তেজিত কণ্ঠে।

কোটের ভেলভেটটা ছিল পুরু আর মোলায়েম, জানাল কিশোর। জীবনেও ভুলব না।

মুসা চোখ সরু করে রাস্তার ওপারে চেয়ে রয়েছে।

 ওর ঘাড়টা চেপে ধরে কেড়ে নিয়ে আসি বো-টা? দাঁতের ফাঁকে বলল।

না, না, আপত্তি করল কিশোর। কাজটা কৌশলে সারা যায় কিনা দেখো।

সেটা সম্ভব ও যদি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে তবেই, বলল রবিন। কিন্তু শুঁটকি তো সর্বক্ষণ ছটফট করছে।

এসময় ফ্যাশন হাউজের জানালায় চোখ সেঁটে গেল কিশোরের। পুরোদস্তুর পোশাক পরা একটা ম্যানিকিন। ঠিক ওদের বয়সী একটি কিশোরের মত লাগছে। ওটাকে দেখেই বুদ্ধি খেলে গেল গোয়েন্দাপ্রধানের মাথায়।

শুঁটকিকে ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখার একটা উপায় পেয়েছি, ধীরে ধীরে বলল ও।

কীভাবে? রবিন কৌতূহলী হলো।

ওর দিকে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।

 রবিন, ডামি সাজবে?

 মানে?

 মানে খুব সোজা-ম্যানিকিন, বলল কিশোর।

বলতে চাইছ আমাকে পুতুলের মত কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?

 হাসল কিশোর।

আমিও থাকব, বলল। ও যদি ফাঁদে ধরা দেয় তবেই কেল্লা ফতে। মুসা। ওর মাথা থেকে খুলে নেবে বো-টা।

পারবে না, মুসা? রবিন বলল। আলগোছে ওর পিছনে গিয়ে এক টানে খুলে নিতে?

পারব না মানে, বলে উঠল মুসা। পায়ের দিকে আঙুল ইশারা করল। স্নিকার পরি কী করতে?

মুসা এপারে অপেক্ষা করতে লাগল। ওদিকে, কিশোর আর রবিন তড়িঘড়ি হেঁটে চলে এল শুঁটকির কাছে।

হাই, টেরি, বলল কিশোর।

শুঁটকি ঘুরে দাঁড়ালে ওর কালো বো নড়ে উঠল।

 আমার আজকের গসিপ কলামটা দেখেছ? বাঁকা হেসে প্রশ্ন করল।

দেখেছি, বলল কিশোর। কিন্তু কাকে নিয়ে লিখেছ তা বুঝিনি।

আমিও বুঝিনি, সায় জানিয়ে বলল রবিন।

কিশোর তিন পর্যন্ত গুণল। তারপর কাঠ-পুতুল বনে গেল। ওর দেখাদেখি একই কায়দা ধরল নথিও।

এ আবার কী? শুঁটকি অবাক।

বুঝতে পারলে না? মাথায় দুহাত রেখে বলল রবিন। আমরা ডামি।

তাতে কোন সন্দেহ নেই, তীব্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল শুঁটকি।

আমরা ম্যানিকিন, শুধরে দিল কিশোর।

কী কারণে, জানতে পারি? সুর করে প্রশ্ন করল শুঁটকি।

মিরা আমাদেরকে ওর জানালায় দাঁড়িয়ে কাপড়ের মডেলিং করতে বলেছে, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। তাই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা প্র্যাকটিস করছি।

শুঁটকি ওর কথায় কান না দিয়ে হাঁটা ধরল।

পাগলামি আর কাকে বলে!

তা তো বলবেই, ফুট কাটল কিশোর। করে দেখতে গেলে বোঝা যায় কত কঠিন।

তোমার দ্বারা সম্ভব না, যোগ করল রবিন।

 থমকে দাঁড়িয়ে গেল শুঁটকি।

কী বলতে চাও তোমরা? খেঁকিয়ে উঠল। পারি কিনা দেখতে চাও? পরমুহূর্তে, শূন্যে হাত দুটোকে নিথর রেখে চিবুক সোজা করল ও।

দারুণ তো! প্রশংসা করল কিশোর মনে মনে। শুঁটকি মুসার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আরও খুশি হলো।

দেখি কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ও।

চোখের কোণে লক্ষ করল মুসা রাস্তা পার হচ্ছে। পা টিপে টিপে শুঁটকির দিকে এগোচ্ছে ও।

সব ঠিকঠাক, ভাবল কিশোর।

হঠাৎ জোরাল গুঞ্জনের শব্দ কানে এল ওর। মাথার উপরে একটা মাছি চক্কর কাটছে!

ভনন! ভনন! ভনন!

হাত নেড়ে ওটাকে সরাতে চাইছে কিশোর। কিন্তু ওকে তো কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।

ঠিক ওর নাকের ডগায় এসে বসল মাছিটা।

জলদি করো, মুসা-বলল মনে মনে। নাক চুলকাচ্ছে, অথচ হাত দেওয়ার উপায় নেই। জলদি!

কিন্তু হলো না। নাক সুড়সুড় করে উঠলে হাঁচি পেয়ে গেল ওর।

ওকে হাঁচতে দেখে চমকে উঠল রবিন। ফলে, দুজনেরই ভঙ্গি গেল বদল হয়ে।

এসময় চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল শুঁটকি।

মুসা আমান! চেঁচিয়ে উঠল। তুমি আমার পিছনে কী করছ?

 শ্রাগ করল মুসা। হাতে ওর কালো বোটা।

আমার বো! বলে পিছনে হাত দিয়ে পনিটেইল স্পর্শ করল শুঁটকি। তুমি আমার ভেলভেট বো চুরি করেছ!