টাইম ট্রাভেল – পরিচ্ছেদ ২০

২০.

 ওখানে নেমে হয়তো ওদের বোকা বানাতে পারব, কম্পিত কণ্ঠে বলল মুসা। হয়তো কথা বলতে পারব ওদের মনিবের সঙ্গে। বাড়ি পাঠিয়ে দিতে অনুরোধ করব। পাঠিয়ে দিতেও পারেন।

কি কারণটা আছে দেয়ার? খাঁচার রূপালী শিকে কপাল ঠেকিয়ে বলল কিশোর, মোটেও বুদ্ধিমান মনে হচ্ছে না আর নিজেকে। স্পষ্ট করে কিছুই ভাবতে পারছি না। কিছু বুঝতেও পারছি না।

বুঝতে তো আমিও পারছি না, রবিন বলল। কেন এমন হচ্ছে? বেশি ভয় পাওয়ার জন্যে? গাজুল ঠিকই বলে গেছে যদি শান্ত হতে পারি আমরা, স্নায়ুকে শান্ত করতে পারি, হয়তো… কথা শেষ না করেই চুপ হয়ে গেল সে।

ওর দিকে তাকিয়ে থেকে মুসা বলল, আমাদেরকে অতি বুদ্ধিমান বানানোর চেষ্টা করেছিল ওরা। নামার পর যখন দেখবে আবার বোকা হয়ে গেছি আমরা, কি করবে তখন? মেরে ফেলবে? নাকি বাড়ি পাঠিয়ে দেবে?

জবাব দেয়ার সময় পেল না রবিন কিংবা মুসা।

মাজুল এসে হাজির হয়েছে খাঁচার সামনে। গর্জে উঠে বলল, তোমাদের মিথ্যে কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আমাদের। কি ভেবেছ তোমরা? মিথ্যে বলে আমাদের ফাঁকি দিতে পারবে? একটা কথা জেনে রাখো, মগজশক্তি রসায়নের কার্যকারিতা কখনও কমে না, মরার আগে কোনদিন কমবে না। অতএব ভাওতাবাজি বন্ধ করো।

কিন্তু, আপনি বুঝতে পারছেন না, কিশোর বলল, আমাদের বেলায় কমেছে…

চুপ, গোলামের দল। ধমকে উঠল মাজুল। আমাদের বোকা বানাতে পারবে না। কতগুলো কাগজ খাঁচার ফাঁক দিয়ে ঠেলে দিল সে।

কাগজগুলো হাতে নিল কিশোর। বোকার মত তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, কি এগুলো?

দেখতে পাচ্ছ না? ধাঁধা, মাজুল বলল। মগজকে ব্যস্ত রাখো। বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হবে।

নিরাসক্ত ভঙ্গিতে কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। কি করে আপনার ধারণা হলো, এ সব ছাইপাশ আমাদের ভাল লাগবে?

ভাল লাগুক বা না লাগুক, তোমাদেরকে এগুলোর সমাধান করতেই হবে, একঘেয়ে কণ্ঠে বলল মাজুল। মগজটাকে সাফ রাখতে হবে তোমাদের। ভোতা মগজ একদম পছন্দ করেন না আমাদের মনিব।

কিন্তু কিন্তু আমরা তো…

ওসব বুঝিটুঝি না। করতেই হবে তোমাদেরকে।

মস্ত বড় একটা ভুল করছেন আপনারা, রবিন বলল। অকারণে আমাদের টেনে না নিয়ে গিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আসুন। আমাদেরকে দিয়ে কোন উপকার হবে না আপনাদের। কোন কাজ হবে না। গোলাম হওয়ার উপযুক্ত নই আমরা।

জবাব দিল না মাজুল। ঘুরে রওনা হয়ে গেল। ফিরে গেল কন্ট্রোল ডেকে।

ও…ও আমাদেরকে বিশ্বাস করল না, গুঙিয়ে উঠল কিশোর। সত্যিই যে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস করানো গেল না ওকে।

কি করব আমরা এখন? কেঁদে ফেলবে যেন রবিন।

 মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে থাকল মুসা। কোন কথা বলল না।

প্রথম ক্রসওয়ার্ড পাজলটার দিকে তাকাল কিশোর। পড়ে শোনাল রবিন আর মুসাকে। বলল, চার অক্ষরের শব্দ, উল্টো দিকে যেতে হবে।

চিবুক ডলল রবিন। ম! অনেকক্ষণ ধরে ভাবল। সূত্রটা কি বলল তো আবার। ভুলে গেছি।

ভুলে তো যাবেই, এত কঠিন। আমিও মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পারছি না। দূর বাদ দাও এটা। দেখি তো পরেরটা…

গলা বাড়িয়ে দেখল রবিন। তিন অক্ষরের…এই, মুসা, দেখো না পারো নাকি।

পারব তো না-ই, আমার দেখতেও ইচ্ছে করছে না, নিরাসক্ত গলায় বলে চোখ ফিরিয়ে আরেক দিকে তাকিয়ে রইল মুসা।

নীরব হয়ে গেল তিনজনে।

কিন্তু হাল ছাড়ল না কিশোর। কাগজটার দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করল, ডগ দিয়ে শুরু করলে কেমন হয়? ডগ মানে কুকুর।

হাতের পেন্সিলটা নামিয়ে কাগজে ডগ শব্দটা লিখতে গিয়ে থেমে গেল সে। কোনটাতে লিখব? সাদা ঘরটায় না কালো ঘরটায়?

মনে হয় সাদা ঘরটায়, রবিন বলল। না না, কালো ঘরটায়। ধূর, বুঝতে পারছি না। এক কাজ করো। সাদাটাতেই লেখো।

পেন্সিল নামাল আবার কিশোর। খসখস করে ঘষল কাগজে। আরি, লেখা বেরোচ্ছে না কেন?  

বেরোবে কি করে? ধরেছই তো উল্টো করে,রবিন বলল।

আমি আগেই দেখেছি, তিক্ত:হাসি হেসে বলল মুসা। ইরেজারের দিকটা দিয়ে লেখা শুরু করেছে সে।

তাহলে বললে না কেন? কিশোর বলল।

ইচ্ছে করল না।

চোখের পাতা সরু করে পেন্সিলের পেছনে লাগানোরবারটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। বিড়বিড় করে বলল, ইরেজার কি জিনিস?

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল রবিন। তাই তো! আমিও তো জানি না।

কিশোরের হাত থেকে কাগজ আর পেন্সিল খসে পড়ে গেল। করুণ কণ্ঠে বলে উঠল, আবার বোকা হয়ে গেছি আমরা!… আগের চেয়ে হাদা!

কেঁপে উঠল রবিন। কান্নার সুরের মত ফোঁপানি বেরিয়ে এল গলা থেকে। কোন সন্দেহ নেই তাতে। ওষুধের ক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। মস্ত ক্ষতি করে দিয়ে গেছে আমাদের। একেবারে বোকা বানিয়ে ফেলেছে।

আতঙ্কিত হয়ে পড়ল কিশোর। জোরে জোরে মাথা নাড়তে শুরু করল। কি করব আমরা এখন? এতটাই বোকা হয়ে গেছি পালানোর কোন বুদ্ধিই আর কোনদিন বের করতে পারব না।

ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করল রবিন।

তার কান্না দেখে মুসারও কান্না পেতে লাগল। মুখটাকে করুণ করে তুলে কিশোরকে জিজ্ঞেস করল, বেরোব কি ভাবে আমরা এখন? বুদ্ধি ঘোলা হয়ে গেছে। বাঁচার তো কোন উপায়ই আর বের করতে পারব না।