টাইম ট্রাভেল – পরিচ্ছেদ ১৬

১৬.

 আরও কিছুদিন পর।

কিশোরদের লিভিং রুমে বসে আছে তিন গোয়েন্দা। টিভি দেখছে।

…এই তিনটে ছেলে স্কুল বোর্ডের সঙ্গে আইনী লড়াই লড়ছে এখন, রিপোর্টার বলছে। প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষার জন্যে ওদের কি আর স্কুলে পড়ার দরকার আছে? স্কুল বলছে, নেই। ওদের অভিভাবকেরা বলছে, আছে। সুতরাং লড়াইটা চলছেই…

পাশের ঘরে ফোনে কথা বলছেন মেরিচাচী। তার এক বান্ধবীর সঙ্গে। না, আমাদের উকিল বলছে, জিতটা আমাদেরই হবে।…না না…নিশ্চয় নিশ্চয়…অন্য স্কুলের খোঁজেও রয়েছি আমরা। একটা প্রাইভেট স্কুলের সঙ্গে কথাও বলেছি। নিতে রাজি হয়েছে ওরা।…কি বললেন?…ও, আঙ্কেল জ্যাক। তিনি তো নেই এখন এখানে। সুইডেন চলে গেছেন একটা বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দিতে। তার স্ত্রীও গেছেন সঙ্গে।…নাহ, কোনভাবেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সামনের দরজার বেল বাজল।

খুলতে যাওয়ার জন্যে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েও বসে পড়ল কিশোর।

নিশ্চয় আরেকজন সাংবাদিক। একই প্রশ্ন করতে থাকবে। গত কয়েক দিনে কম করে হলেও ডজনখানেক সাক্ষাৎকার দিয়েছে ওরা।

আগে ভাবত রেডিও-টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়াটা মজার ব্যাপার। কিন্তু এখন আর মজা নেই। লোকে যখন ওদেরকে ফ্রীক ভাবতে আরম্ভ করেছে। স্কুল থেকেও যখন বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে, স্কুলে যেতে দেয়া হচ্ছে না ওদেরকে। তা ছাড়া.কে দেখবে এখন ওদের অনুষ্ঠান? কেউ তো ওদের পছন্দ করে না।

ওই ওষুধ আমাদের জীবনটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে, ভেবে মনটা তেতো হয়ে গেল কিশোরের।

সোফা থেকে উঠে এসে দাঁড়াল দরজার কাছে। টেলিফোনে মেরিচাচী কি বলছেন ভাল করে শোনার জন্যে। এখন আর রবিনের আম্মার সঙ্গে নয়, একটা টিভি কোম্পানিকে ধমকাচ্ছেন তিনি, না, কোনমতেই যাবে না। ওই মগজ উন্নত করার ওষুধে কোন আগ্রহ নেই আমাদের।…বুঝলাম আপনাদের কোম্পানি খুব ভাল ফলের রস বানায়, কিন্তু আমার ছেলে আপনাদের বিজ্ঞাপন করতে যাবে না। সরি।

আস্তে করে সরে চলে এল কিশোর। আবার আগের জায়গায় এসে বসল। কানে আসছে মেরিচাচীর রাগত কণ্ঠ।

কার সঙ্গে কথা বলছেন? রবিন জিজ্ঞেস করল।

টেলিভিশন। আমাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করাতে চাইছে, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল কিশোর।

আগের দিনের কথা মনে পড়ল রবিনের। একটা লোক এসে বলল ওদের এজেন্ট হতে চায়। সাংঘাতিক এক পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে সে। ওদেরকে ব্যবহার করে জুতো, ক্যান্ডি, সুগার কনের বিজ্ঞাপন করতে চায়। টেলিভিশনে শনিবার। সকালের কমিক শোতেও ওদের দিয়ে অভিনয় করাতে ইচ্ছুক। তাতে, তার ধারণা কোটি কোটি ডলার আয় হয়ে যাবে খুব সহজেই।

ভালই তো, রাজি হয়ে যাচ্ছিল মুসা। কোটিপতি হয়ে যাব আমরা। বিখ্যাত হয়ে যাব।

হু, তা তো বটেই, মুখ বাঁকিয়েছে কিশোর, বিখ্যাত ফ্রীক। অস্বাভাবিক মানুষ। সবাই আমাদেরকে আঙুল তুলে দেখাবে। আমাদের নিয়ে রসিকতা করবে। কোনদিন যদি স্বাভাবিক হইও আবার, মানুষ আর আমাদেরকে স্বাভাবিক ভাবে নেবে না।

করুণ কণ্ঠে রবিন বলেছে, টাকা-পয়সা খ্যাতি কিছুই চাই না আমি। আমি শুধু স্বাভাবিক মানুষ হয়ে স্কুলে ফিরে যেতে চাই। সবার সঙ্গে স্বাভাবিক মানুষের মত মিশতে চাই।

পরিবারের লোকজন চাইছে ওরা অপেক্ষা করুক। সাবধান থাকুক। হুট করে কোন কিছুতে সই করে না দিক। অন্তত স্কুলে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আইনী লড়াইটার একটা কিনারা না হওয়া পর্যন্ত।

কিন্তু তাই বলে যে তোক আসা বন্ধ হচ্ছে তা না। নানা ধরনের লোক। খবরের কাগজ, বিজ্ঞাপন এজেন্ট, দোকানদার তো আছেই, প্রচুর ছেলেমেয়েরাও আসছে ওদের কাছে পড়ার জন্যে। আরেক দল আসছে ওদের পরামর্শ নিতে। কোন না কোন সমস্যায় পড়েছে ওরা। কি করলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেটা জানতে।

তারপর, সেদিন বিকেলেরই ঘটনা। পেছনের আঙিনায় খেলছে কিশোর, রবিন আর মুসা। ওদের সঙ্গে ডন। এই সময় ড্রাইভওয়েতে ঢুকল একটা কালো রঙের ট্রাক। ফ্রিসবি খেলছিল ওরা। খেলা থামিয়ে ফিরে তাকাল। লম্বা, গাঢ় রঙের সুট পরা দুজন লোককে সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে দেখল।

খেলা বাদ দিয়ে সেদিকে রওনা হলো ওরা। লোকগুলো কেন এসেছে দেখতে।

ততক্ষণে দরজা খুলে দিয়েছেন মেরিচাচী। ঘরে ঢুকেছে লোকগুলো।

মিসেস পাশা, একটা লোককে বলতে শুনল, আপনার স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই আমরা। এখান থেকে যাব মিস্টার মিলফোর্ড আর মিস্টার আমানের বাড়িতে। একটা টেস্টের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।

টেস্ট? বুঝতে পারলেন না মেরিচাচী। কুটি করলেন।

হ্যাঁ, জবাব দিল লোকটা। ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ল্যাব থেকে এসেছি আমরা। আপনাদের ছেলেদের আমরা ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যেতে চাই। ওদেরকে নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। এই যেমন ইনটেলিজেন্স টেস্ট। বেশ কিছু টেস্ট করব আমরা।

ঘরে ঢুকেছে তিন গোয়েন্দা। ওদের দিকে ফিরে তাকাল অন্য লোকটা। আমরা দেখতে চাই কতখানি বুদ্ধিমান তোমরা। হয়তো সরকারের কাছেও তোমরা মূল্যবান হয়ে উঠবে। দেশের জন্যে নিশ্চয় কাজ করতে চাও তোমরা, চাও না?

জবাব দিল না ওরা। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল গম্ভীর চেহারার লোকটার দিকে।

দেশের জন্যে কাজ তো সবাই করতে চায়, ওদের হয়ে জবাব দিলেন মেরিচাচী।

মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্যে ওদেরকে চাই আমরা, প্রথম লোকটা বলল। প্রথমে ওদের লিখিত পরীক্ষা নেব আমরা। তারপর ডাক্তারদের সঙ্গে ওদের ইন্টারভিউ। এবং, তারপর অবশ্যই সার্জারি।

সার্জারি? তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল মেরিচাচীর কণ্ঠ।

 হা। ওদের মগজ থেকে কিছু কোষের নমুনা নিতে চান ডাক্তাররা।