শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ৩

০৩.

 খাইছে! বলে উঠল মুসা।

গোটা স্টোরে পিনপতন নিস্তব্ধতা। রুডি কাঁধের উপর দিয়ে কোটের পিছন দিকটা দেখার চেষ্টা করছে।

সুইস পনিরের মত দেখাচ্ছে, দর্শকদের মধ্য থেকে একটি মেয়ে বলে উঠল।

লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল রুডির। এক দৌড়ে ফিরে এল স্টকরূমে।

আজকের মত শো এখানেই শেষ হচ্ছে, লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন, ত্বরিত বলল মিরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

স্টকরূমে ঢোকার সময় কিশোরকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ফেলেই দিচ্ছিল রুডি।

সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে! চিৎকার করে বলল। কোটটা খুলে ফেলেছে গা থেকে। আমি সুপারমডেল হতে চেয়েছি-ক্লাউন নয়!

দর্শকরা তোমাকে দেখতে তো পেয়েছে অন্তত, খুরি গলায় বলল জুলি মরগ্যান।

ওর দিকে দুমুহূর্ত চেয়ে থাকল রুডি। তারপর দৌড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

আমি দোষের কী বললাম? জুলি অবাক গলায় প্রশ্ন করল।

 মিরা স্টকরূমে এসে ঢুকল। সোজা গিয়ে দাঁড়াল রুডির র‍্যাকের সামনে।

মেঝেতে এটা কেন? বলে একটা কাচি তুলে নিল। এটা তো আমার সিউয়িং বাস্কেটে থাকে।

তারমানে এই কাঁচিটা দিয়েই অপকর্মটা করা হয়েছে, মনে মনে বলল কিশোর।

কাজটা যে করেছে সে খোলাখুলি স্বীকার করো, বলল মিরা। কথা দিচ্ছি, আমি কিছু বলব না।

কেউ স্বীকার করল না দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিরা।

আমি সারা দিন স্টোরেই থাকব। কারও কিছু বলার থাকলে গিয়ে বলে এসো, কথাগুলো বলে ঘর ত্যাগ করল।

হাহ-হাহ-হা!

হাসির শব্দে ঘুরে তাকাল তিন গোয়েন্দা।

আমি জানতাম এরকম একটা কিছু ঘটবে। খুশি ধরছে না শুঁটকির।

তুমি এত নীচ! ঘৃণা ঝরল রবিনের কণ্ঠে। ফ্যাশন শো বরবাদ হয়ে গেল আর তুমি মজা পাচ্ছ!

কী করব বল, বলল শুঁটকি। প্যাড দোলাল। আমার দরকার ছিল গসিপ, পেয়েও গেছি।

একটু পরে ওকে ঘর ত্যাগ করতে দেখল তিন গোয়েন্দা।

ইচ্ছা করছিল কষে দুঘা লাগিয়ে দিই, দাতে দাঁত পিষে বলল মুসা।

বাদ দাও শুঁটকির কথা, বলল কিশোর। আমাদের সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে।

কীরকম? রবিন জিজ্ঞেস করল।

 জানতে হবে না, কে কোটটা কাটল?

ঝিক করে উঠল রবিনের দুচোখের তারা।

তারমানেই রহস্য, বলল হাসি মুখে।

 কথায় আছে না, চেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, বলল মুসা।

ওর কথা শুনে হেসে ফেলল গোয়েন্দাপ্রধান।

মুসা এসময় হাতঘড়ি দেখল।

ড্যাডি একটু পরেই চলে আসবে আমাদের নিতে।

নো প্রব্লেম। আগে কাপড় পাল্টে নিই, তারপর ক্ল খুজব, বলল কিশোর।

অন্য মডেলরা বাড়ি চলে গেছে। রয়ে গেছে শুধু কিশোর, মুসা আর রবিন।

কিশোর আর রবিন পোশাক পাল্টাবার পর, একটা বাক্সের উপর বসল তিনজন।

ক্লু বলতে এখন পর্যন্ত ওই কাঁচিটাই, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল।

রবিনের মুখে চিন্তার ছাপ।

একটা ব্যাপার বুঝলাম না, কিশোর, বলল ও। ঘর ভর্তি লোকের মধ্যে কোটটা কাটল কে?

আর আমি তো সর্বক্ষণ এই স্টকরূমেই ছিলাম, জানাল মুসা।

হু, বলল কিশোর। কিন্তু মিরা আমাদেরকে যখন রানওয়েতে নিয়ে যায় তখন কিন্তু এখানে কেউ ছিল না। অন্তত পনেরো মিনিট।

কালপ্রিট তখনই সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে এখানে, বলল মুসা।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

কাঁচিটা একটা জোরাল সূত্র। আরও কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখি এসো।

ছেলেরা পিছনের কামরাটা তন্নতন্ন করে খুঁজল। হঠাই তীক্ষ্ণ চিৎকার করে উঠল রবিন।

পেয়েছি। পেয়েছি!

কী পেয়েছ? সূত্র? কিশোর প্রশ্ন করল।

না! বলল রবিন। লাল রঙের এক বেরে টুপি তুলে ধরে দেখাল। আমার নতুন জ্যাকেটের সাথে ভাল মানাবে। সুন্দর না?

এই? হতাশ কণ্ঠে বলল মুসা। আমি ভাবলাম কী না কী।

 আমরা ক্লু খুঁজছি, রবিন, বলল কিশোর। কাপড় না।

রবিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে টুপিটা রেখে দিল।

কালো কোটটা যে র‍্যাক থেকে ঝুলছিল তার নীচে চোখ রাখল কিশোর। পরমুহূর্তে চকচকে কিছু একটা দৃষ্টি কাড়ল ওর।

রবিন, মুসা, এদিকে এসো! জরুরী কণ্ঠে ডাকল বন্ধুদের।

চকচকে জিনিসটা কুড়িয়ে নিয়েছে গোয়েন্দাপ্রধান। বড় বড় মুক্তোখচিত সোনার এক ক্লিপ-অন ইয়ারিং।

চেনা-চেনা লাগছে না? বলল মুসা।

হাতের তালুর উপর ইয়ারিংটা গড়িয়ে দিল কিশোর।

হু। মিসেস হগার্ডের কানে এরকম ইয়ারিং দেখেছি।

কোট র‍্যাকের কাছে আসার ওঁর কী দরকার পড়ল? সপ্রশ্ন কণ্ঠে বলল রবিন।

আঙুল মটকাল মুসা।

কুকুরদের জন্য উনি কোটটা চাইছিলেন।

 কিশোর ক্লুটা পকেটে রাখল।

প্রথম সাসপেক্টকে পাওয়া গেল, বলল ও নীচের ঠোঁটে চিমটি কেটে। মিসেস হগার্ড।

আর কে কাটতে পারে কোটটা? মুসার প্রশ্ন।

নিচু মনের কেউ, বলল রবিন।

 ছেলেরা পরস্পর মুখ তাকাতাকি করল।

শুঁটকি! বলে উঠল একসঙ্গে।

শুঁটকি গুজব রটানোর জন্য ছোঁকছোঁক করে বেড়াচ্ছিল, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। স্টোরি বানানোর জন্য ও নিজেই ওটা কেটে থাকতে পারে।

শুঁটকির নামটাও মনে গেঁথে নিল কিশোর।

 কেন শিপটনকেও আমার সন্দেহ হচ্ছে, জানাল।

কেন শিপটন? জিজ্ঞেস করল রবিন। ও কোট কাটতে যাবে কেন?

ওর পেইন্টিঙের জন্য কালো ভেলভেটের দরকার, বলেছিল না? বলল কিশোর। তা ছাড়া ওকে আমি কোটটার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি।

মাথা দোলাল রবিন।

 ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে কেসটা।

শুরুতেই তিনজন সাসপেক্ট আর দুটো কু পাওয়া বিরাট ব্যাপার, খুশি মনে বলল কিশোর। কাল আবার দেখা করছি আমরা। আলোচনা হবে কেসটা নিয়ে।

.

সেদিন সন্ধ্যায় মেরি চাচীকে সালাদ তৈরি করতে সাহায্য করছিল কিশোর।

সুপারমডেল হতে কেমন লাগল তোর? শসা কাটার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন চাচী।

লেটুস ছিঁড়ছিল কিশোর, মুখ তুলে চাইল।

মডেলিঙের কাপড়-চোপড় পরতে ভালই লাগে, চাচী, বলল ও। কিন্তু গোয়েন্দা আছি গোয়েন্দাই থাকতে চাই।

তারমানে চকচকে শু-র চেয়ে তোর ক্লু বেশি পছন্দ?

হেসে ফেলল কিশোর। কেসের কথাটা চাচীকে বলতে যাবে এসময় তোর বেলের শব্দ।

দেখ তো কে এল, বললেন চাচী। আমার হাত ভেজা।

যাচ্ছি, বলল কিশোর।

দরজার কাছে চলে এল ও। পীপ হোল দিয়ে উঁকি দিল। কেউ নেই।

কে? গলা চড়িয়ে বলল কিশোর।

সাড়া পেল না দেখে দরজাটা আস্তে আস্তে খুলল ও। দোরগোড়ায় পড়ে রয়েছে এক টুকরো কাগজ।

কী এটা?

ওটা তুলে নিয়ে গুঙিয়ে উঠল কিশোর। ডয়েল নিউজ। কাগজের শিরোনামে রয়েছে: গুজব! গুজব! গুজব!

শুঁটকি দ্রুত কাজে নেমে গেছে, ভাবল কিশোর। পড়তে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠল ওর। লেখাটা বাংলা করলে দাঁড়ায়:

বলতে পারেন কোন তথাকথিত গোয়েন্দা ভেলভেটের চমৎকার কোটটা কেটেছে?- জনশ্রুতি, সে নাকি হিংসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, সে ফ্যাশন শোতে মডেলিংও করেছে। গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে তবে কি সে ইঁদুরের মত কাপড় কাটতে লেগেছে? খাসা! পাঠক, ভেবে দেখুন তো ছন্দে কীসের সঙ্গে মিলছে?

কিশোর কাগজটা থেকে মুখ তুলে ঢোঁক গিলল।

 খাসা আর পাশা!