টাইম ট্রাভেল – পরিচ্ছেদ ২

০২.

কলিং বেলের বোতাম টিপে দিয়ে দরজার গোড়ায় বিছানো খড়ের বানানো ম্যাটের ওপর থেকে পিছিয়ে গেল কিশোর পাশা। ঘরের ভেতরে ঘণ্টা বাজার শব্দ শুনতে পেল।

ফিরে তাকাল তার দুই সহকারী মুসা আর রবিনের দিকে, কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?

হচ্ছে। অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকে জবাব দিল রবিন, আঙ্কেল জ্যাক আমাদের সাহায্য করতে না পারলে দুনিয়ার আর কেউ পারবে না।

দরজার গায়ে লাগানো পিতলের নামফলকটার দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। তাতে লেখা:

ডক্টর জ্যাক স্টিভেনস, ব্রেন এক্সপার্ট
রকি বীচ সাইন্স ল্যাবরেটর।

কিন্তু সত্যিই যদি আমাদের বোকা ভেবে বসেন তিনি?মুসার কণ্ঠেও অস্বস্তি।

এটা আর নতুন কি? করুণ শোনাল কিশোরের কণ্ঠ। সবাই তো আজকাল তা-ই ভাবছে আমাদের। কোনদিন, কখনই আর মনে হচ্ছে স্কুলের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলে হতে পারব না আমরা।

ওই যে যা বললাম, কিশোরের কথার সঙ্গে যোগ করল রবিন, আঙ্কেল জ্যাক যদি আমাদের বোকা ভেবে বসেনও, তিনি সাহায্য করতে না পারলে দুনিয়ার আর কেউ করতে পারবে না। তবে, আমি শিওর, তিনি আমাদের ফিরিয়ে দেবেন না। এটুকু ভরসা না থাকলে কি আর আসতাম।

বাড়ির ভেতরে পদশব্দ কানে এল ওদের। এগিয়ে আসছে।

 মাথা চুলকানো বন্ধ করে হাতটা সরিয়ে আনল রবিন।

কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে টেনেটুনে কাপড়-চোপড় ঠিক করল কিশোর। অস্বস্তি বোধ করছে। প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে দিল।

মুসার মুখ দেখে মনে হলো ডক্টরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দৌড় মারবে। পালানোর জন্যে যেন অস্থির হয়ে উঠেছে সে। সবই এগুলো বোকামির লক্ষণ।

খুলে গেল দরজা। একটা মুহূর্ত ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন আঙ্কেল জ্যাক। তারপর বড় বড় হয়ে গেল চোখ। খুশি খুশি গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন, আরে রবিন! তোরা! কি মনে করে?

সাদা এলোমেলো চুল, ছড়ানো সাদা দাড়ি, গোলগাল লাল টকটকে হাসিখুশি মুখ, সব মিলিয়ে আঙ্কেল জ্যাককে দেখতে একেবারে সান্তা ক্লজের মত লাগছে। তার চওড়া কাঁধ, বড় বড় হাতের থাবা। মস্ত ভুড়ি নেচে ওঠে হাসার সময়।

সব সময় সাদা পোশাক পরেন তিনি। সাদা সোয়েটার, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো। ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় গায়ে দেন সাদা কোট।

অ্যাই চেরি, ভেতরের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে গলা চড়িয়ে হাঁক দিলেন তিনি, দেখে যাও কে এসেছে! গমগমে কণ্ঠস্বর। সরে জায়গা করে দিলেন তিন গোয়েন্দাকে ঢোকার জন্যে।

রান্নাঘর থেকে খাবারের গন্ধ নাকে এসে লাগল। রোস্ট। সম্ভবত মুরগী। চট করে রবিনের দিকে তাকাল মুসা।

খেতে বসেছিলে? আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করল রবিন। না বসবে?  

না, শেষ করে ফেলেছি, আঙ্কেল জ্যাক বললেন। তোর আন্টি রান্নাঘরে, এঁটো থালা-বাসন মাজছে। কেন, খিদে পেয়েছে?

মাথা নাড়ল রবিন, না, আমরা খেয়ে এসেছি।

রান্নাঘরের দরজার দিকে ফিরে আবার হাঁক দিলেন আঙ্কেল জ্যাক, চেরি? এই চেরি? রবিনের দিকে তাকালেন, তারপর? হঠাৎ কি মনে করে?

দ্বিধা করতে লাগল রবিন। ইদানীং খুব বোকা হয়ে গেছি আমরা, আঙ্কেল।

ভুরু কুঁচকালেন আঙ্কেল জ্যাক, বোকা হয়ে গেছিস মানে?  

কি ভাবে বোঝাব ঠিক বুঝতে পারছি না, কিশোর আর মুসার দিকে তাকাতে লাগল রবিন। শেষে কিশোরকে বলল, তুমিই বলো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। আমরা যে কতখানি বোকা হয়ে গেছি, একটা দিনের ঘটনা বললেই বুঝতে পারবেন…