শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ৫

০৫.

মুসা তোমার বো চুরি করেনি, জোর দিয়ে বলল কিশোর।

করেছে! গর্জন ছাড়ল পুঁটকি। আর তুমি ওকে দিয়ে চুরিটা করিয়েছ!

আমি? বলল কিশোর।

শুঁটকি মাথা ঝাঁকাল।

 জি। তুমি যে শুধু কাঁচি চালাও তাই না, তুমি একটা চোরও!

 কিশোর ছোঁ মেরে মুসার হাত থেকে বো-টা কেড়ে নিল।

আমি যদি কাঁচি চালাই, তা হলে এটা কী?

শুঁটকির নাকের সামনে বো-টা দোলাচ্ছে, এসময় এক টুকরো কাগজ দেখতে পেল কিশোর-পিছনে স্ট্যাপল করা। ফ্যাশন হাউজের প্রাইস ট্যাগ।

একটু আগে কিনেছি ওটা, ঐ কুঁচকে বলল শুঁটকি। বাইরে এসে পরেছি। ওটা দিয়ে দাও বলছি!

আঙুলে বো-টার স্পর্শ নিল কিশোর। ওই কোটটার মত পুরু আর মোলায়েম নয়।

সরি, টেরি, বলে বো-টা বাড়িয়ে দিল কিশোর। আমরা আসল কাট আপকে ধরতে চাইছি বলে নাটকটা করতে হলো।

থাবা মেরে কেড়ে নিল জিনিসটা শুঁটকি।

তাকে ধরতে আবার এসব করতে হয় নাকি? আমি তো কাগজে সূত্র দিয়েই দিয়েছি।

ছেলেরা পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল।

ইন ফ্যাক্ট, বলে নাক উঁচু করল বঁটকি। আমি ডয়েল নিউজকে ডেইলি পেপার করব ভাবছি। যাতে প্রতিদিন গসিপ কলাম লিখতে পারি।

খাইছে! আওড়াল মুসা।

শুঁটকি বো-টা বেঁধে নিল লম্বা চুলে। তারপর যার সঙ্গে এসেছিল, সেই মহিলাকে বেরোতে দেখে এগিয়ে গেল।

চলো, আমরা ফ্যাশন হাউজে যাই, প্রস্তাব করল কিশোর। মিরা হয়তো তদন্তের কাজে হেল্প করবে আমাদের।

কিন্তু ওরা যখন স্টোরের ভিতরে ঢুকল, মিরা ওদেরকে ক্লু দিতে রাজি হলো না।

একবার শুধু একটু উঁকি মেরেই চলে আসব, বলল রবিন।

 মাথা নেড়ে সাফ নিষেধ করে দিল মিরা।

এখন থেকে স্টকরূম বন্ধ থাকবে।

ও, আচ্ছা, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। স্টোরের সামনের দিকে হেঁটে এসেছে, জুয়েলারি কাউন্টারের উপর একটা কাগজ চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে দেখতে পেল। ডয়েল নিউজের একটা কপি।

তাই তো বলি, ফিসফিস করে বলল কিশোর। মিরাও আমাকে সন্দেহ করছে!

শুঁটকির মাথাটা ভেঙে দিতে ইচ্ছা করছে আমার! দাঁত কিড়মিড় করে বলল মুসা। ওকে হাতের কাছে পেলে দেখে নিতাম।

দোকান ত্যাগ করল ওরা। বাইরে এসে এক বেঞ্চির উপর বসল।

শুঁটকিকে সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায়, বলল গোয়েন্দাপ্রধান।

তারপরও দুজন থাকে, বলল রবিন। মিসেস হগার্ড আর কেন শিপটন।

কেন তোমার বাসার কাছেই থাকে, কিশোর, বলল মুসা। লাঞ্চের পর ওকে চেক করলে হয় না?

লাঞ্চের পর কিশোর তো প্রায়ই বাঘাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোয়, বলল রবিন। ঠিক না, কিশোর?

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। পরমুহূর্তে মাথায় একটা বুদ্ধি ঝিলিক দিয়ে গেল ওর।

মানি আর পেনি তো কুকুর ভালবাসে, তাই না? বন্ধুদের উদ্দেশে বলল।

হ্যাঁ, একসঙ্গে জানাল রবিন ও মুসা।

ওরা যখন বাঘাকে আদর করবে, সেই সুযোগে আমরা কেনের ওপর তদন্ত চালাব, বাতলে দিল কিশোর।

সাবাস! বলে উঠল মুসা।

.

কিশোরের বাসায় ফিরে এল তিন বন্ধু। মেরি চাচী রবিন ও মুসাকে খেয়ে যেতে বললেন। ওরা বাসায় ফোন করে অনুমতি নিয়ে নিল।

মেরি চাচীর বানানো টিউনা সালাদ স্যান্ডউইচ চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। বাঘাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এল কেন শিপটনদের ব্লকে।

ওর ঘরটা সার্চ করতে না হলেই বাঁচি, বলল রবিন।

ওর পোষা ইগুয়ানার জন্য বলছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

না, বলল রবিন। নাক টিপে ধরল। ওর মোজার দুর্গন্ধের জন্য।

ওরা গিয়ে দেখল মিসেস শিপটন বাগান পরিচর্যা করছেন। ওদেরকে দেখে হাসলেন ভদ্রমহিলা, বাঘাকে হাত বুলিয়ে আদর করলেন।

কেমন আছ তোমরা? কুশল জানতে চাইলেন।

ভাল, মিসেস শিপটন, বলল কিশোর। কেন, মানি, পেনি ওরা বাসায় আছে?

হ্যাঁ, জানালেন তিনি। মানি-পেনি উপরতলায় ফিঙ্গার পেইন্টিং করছে। কেন আছে পিছনের উঠনে। ও-ও আঁকাআঁকি করছি।

কেন কি তেলাপোকা আঁকছে? নাক কুঁচকে প্রশ্ন করল রবিন।

হ্যাঁ, বললেন মিসেস শিপটন। কালো রঙের কীসের ওপরে যেন।

কালো? চমকে গেল কিশোর।

মিসেস শিপটন, স্বাভাবিক গলায় বলল ও। আমরা কেনের সাথে একটু কথা বলে আসি?

মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন মিসেস শিপটন।

 বেশ তো, যাও না। ও খুশি হবে বন্ধুদের দেখলে।

বন্ধুদের  শুনে শ্বাস টানল মুসা, স্পষ্ট শুনতে পেল কিশোর।

 ধন্যবাদ, মিসেস শিপটন, বলল ও। শিকল ধরে টানল বাঘাকে।

বাড়িটাকে এক পাক দিয়ে পিছনে এল ওরা।

 ওই যে! গলা খাদে নামিয়ে বলল কিশোর।

ইজেল সামনে নিয়ে বসেছে কেন শিপটন। পাশে ছোট টেবিলের উপর। কাঁচের এক জার রাখা।

দিলে তো আলো বন্ধ করে, তিন গোয়েন্দা কাছিয়ে এলে বিরক্তির সুরে বলল কেন। আর আমার বিলিকেও ভয় পাইয়ে দিয়েছে তোমাদের কুকুরটা।

বিলি কে? কিশোরের প্রশ্ন।

কাঁচের জারটা দেখাল কেন। জারের ভিতরে ইয়া বড় এক তেলাপোকা।

 ঘেন্নায় নাক কুঁচকে গেল রবিনের।

লোকে বিলিকে পানির পোকা বলে, ব্যাখ্যা করল কেন। কিন্তু আমি ওকে স্রেফ একটা বড়সড় তেলাপোকা মনে করি।

কালো এক টুকরো জিনিসের উপর তেলাপোকাটাকে আঁকছে কেন দেখে নিল কিশোর।

নীচের দিকে চোখ গেলে আরেকটা জিনিস নজরে এল। কেন শিপনের পাশে একই ধরনের জিনিসের আরেকটা ছোটখাট তূপ।

কালো ভেলভেটের উপর আঁকছে নাকি, কেন? কিশোর জিজ্ঞেস করল।

 পেইব্রাশ তুলে ধরল কেন।

হতেও পারে, নাও হতে পারে, বলল।

 কিশোর হাত বাড়াল জিনিসগুলোর উপর।

 কোথায় পেয়েছ?

কেন শিপটন তার আগেই ধপ করে বসে পড়ল ওগুলোর উপর।

তাতে তোমার কী? পাল্টা প্রশ্ন করল।

 মুসা এগিয়ে এল কেনের কাছে।

গতকাল ফ্যাশন হাউজে যে ভেলভেটের কোটটা কাটা হয়েছে এগুলো সেই কাপড়।

তুমি কেটেছিলে ওটা, কেন? কিশোর জবাব চাইল।

 শ্রাগ করল ছেলেটি।

হয়তো, হয়তো নয়।

 বাঘা দৌড়ে গেল। কেন বসেছে, সেই আসনটা কামড়ে ধরে টানতে লাগল।

অ্যাই, সরাও ওকে! চেঁচিয়ে উঠল কেন।

কিশোর বাঘাকে সরিয়ে নেবে, এ সময় কারা যেন খিলখিল করে হেসে উঠল।

যমজ ভাইদেরকে ডাক দিল কেন শিপটন। কুকুরটাকে দেখে যাও।

ছেলেরা ঘুরে দাঁড়াল। যমজ ভাইরা বাড়ির পিছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে।

 পরমুহূর্তে কুকুর দেখে সোৎসাহে ছুটে এল।

সভয়ে শ্বাস চাপল কিশোর। রঙমাখা হাত নিয়ে ছুটে আসছে দুভাই।