রহস্যময় দুর্গ – ২

দুই

‘সবাই পিছিয়ে যান!’

স্টাডির দরজাটা দড়াম করে লাগিয়ে মেইডের উদ্দেশে ঘুরে দাঁড়ালেন ফ্রেডি।

‘ক্যাথরিন, পুলিসকে ফোন করো!’

‘জি, মিস্টার ব্রাউন।’

‘পুলিস না আসা পর্যন্ত আমাদের সবাইকে একসাথে থাকতে হবে।’

কিশোর মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে, হলদে মোমের আলোয় সব কটা মুখের ওপর একবার করে নজর বুলিয়ে আনল। এদের মধ্য থেকে কেউ কি গারফিল্ডের ওপর হামলা করে তাকে স্টাডিতে হিঁচড়ে নিয়ে আসে, বিদ্যুৎ যখন ছিল না? অবশ্যই টম মামা আর টিনা এর সাথে জড়িত নয়, কিন্তু এখানে আরও অনেকে আছে যারা সন্দেহভাজন।

‘মিস্টার ব্রাউন, চিৎকার করে বলল ক্যাথরিন, পিকক অ্যালি ধরে শশব্যস্তে ওদের দিকেই আসছে মহিলা। ‘ফোন ডেড, পুলিসে কল করতে পারলাম না।’

‘ঝড়ে নিশ্চয়ই ফোন লাইনও অকেজে। হয়নি?’ বললেন ফ্রেডি।

‘কেউ হয়তো লাইন কেটে দিয়েছে,’ সন্দেহের কথা জানাল ক্যাথরিন।

‘হতে পারে।’ দীর্ঘ কটি মুহূর্ত যুবতী মেইডের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন ‘ফ্রেডি, যতক্ষণ অবধি না চোখ নামাল মহিলা। ‘আমি বরং গাড়ি নিয়ে থানায় চলে যাই, রিপোর্ট করিগে। কিন্তু তার আগে আমাদের জানতে হবে গারফিল্ডের কী হয়েছে।’

কিশোর কাছিয়ে এল, ফ্রেডিকে স্টাডির দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিতে দেখে বুকের ভেতরে ধড়াস ধড়াস করতে লাগল হৃৎপিণ্ড।

কামরাটা ফাঁকা I

‘একী!’ স্টাডির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে কিশোর। ‘এখানে তো এই একটাই দরজা, আর কোন জানালাও নেই!’

হঠাৎই আলোগুলো জ্বলে উঠল এবং ঘরটার ভেতরে জড় হলো ওরা, একটু আগে যেখানে গারফিল্ডের দেহ পড়ে ছিল সেদিকে দৃষ্টি সবার।

‘আমাদের প্রত্যেকের তো আর চোখের ভুল হতে পারে না?’ ফ্রেডি হাসার চেষ্টা করলেন। ‘পুলিশ নিশ্চয়ই এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবে। তার আগে চলুন লাইব্রেরিতে ফিরে যাই, স্যর ডয়েল সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছু কথা জানাই।’

স্টাডি ত্যাগের সময় হুইলচেয়ার ঘোরাতে গিয়ে শিউরে উঠলেন রেজিনা।

‘গত কদিনের মধ্যে আরেকটা রহস্যময় অন্তর্ধান। এখানে আর চাকরি করা যাবে না।’

‘প্লিজ, এমন কথা বলবেন না,’ বললেন টম মামা, মহিলার পাশাপাশি হেঁটে লাইব্রেরিতে ফিরলেন। ‘আমার একার পক্ষে এতবড় একটা দুর্গ সামলানো সম্ভব নয়।’

ফ্রেডি বসে পড়ে লম্বা দু’পা ছড়িয়ে দিলেন, তারপর শৌখিন হাতঘড়িটার দিকে চকিতে চাইলেন।

‘সরি, দেরি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি আপনাদেরকে স্যর ডয়েলের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই।’

‘হ্যাঁ,’ বললেন টম মামা। ‘আবার কেউ নিখোঁজ হওয়ার আগেই চটপট শুনে ফেলি।’ কেউ তাঁর ক্ষীণ হাসিটা ফিরিয়ে দিল না। সবাই উদ্বিগ্ন।

হুইলচেয়ারে বসা রেজিনা সামনে ঝুঁকলেন।

‘আপনারা জানেন, স্যর রোনাল্ড জেমস ডয়েল এক বছর আগে কাসা লোমা কিনেছেন, ব্রিটেন থেকে অবসর নিয়ে এখানে আসার পর। দুর্গটা কিনতে বিপুল টাকা খরচ করতে হয়েছে, কিন্তু স্যর ডয়েল একজন ধনকুবের। তিনি তেল আর সোনার ব্যবসা করে মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন।’

মুচকি হাসলেন ফ্রেডি।

‘মিলিয়ন? আমি তো বলব বিলিয়ন-বিলিয়ন।’

‘কাসা লোমা তাঁকে কৌতূহলী করে তোলে এবং তিনি এ দুর্গের ইতিহাস জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একটা অস্বাভাবিক বিষয় জানতে পারেন স্যর ডয়েল, এই দুর্গের আদি মালিক নাকি এতটাই ঘোড়া-পাগল ছিলেন যে, প্রিয় এক যুদ্ধঘোড়ার জন্যে তিনি নকল দাঁত অবধি বানিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ওটাই একমাত্র—’

‘এক্সকিউজ মি,’ বাধা দিয়ে বলল টিনা। ‘আমিও খুব ঘোড়া ভক্ত। নকল দাঁতে কি কাজ হয়েছিল?’

‘জানা নেই আমার,’ স্মিত হেসে জবাব দিলেন রেজিনা। ‘যাই হোক, স্যর ডয়েল এখানে একদিন এক কোডেড ডকুমেন্ট খুঁজে পান। কোড় ভাঙার পর তিনি লুকানো হীরের এক গুপ্তস্থানের সন্ধান জানতে পারেন।’

‘হীরে! দারুণ ব্যাপার তো!’ বলে উঠল টিনা।

‘হুঁ, দারুণ ব্যাপারই বটে। স্যর ডয়েল ওগুলো আবারও লুকিয়ে ফেলার আগে আমি একবারের জন্যে দেখেছিলাম, সত্যিই অসাধারণ। হীরেগুলো ছোট, ঝকঝকে আর নিখুঁত।

ভ্রূ কুঁচকে গেল টম মামার।

‘উনি ওগুলো আবারও লুকিয়ে ফেলেন বলছেন?’

‘হ্যাঁ, স্যর ডয়েলের সেফটি-ডিপোজিট বক্সে আস্থা ছিল না, তাই কাসা লোমার ভেতরেই নতুন এক গুপ্তস্থান খুঁজে নেন তিনি।’

ফ্রেডি তাঁর গ্লাসের বাকি শেরিটুকু গিলে নিলেন।

‘এর অল্প কিছুদিন পরেই, রেজিনার মাধ্যমে স্যর ডয়েলের সাথে আমার পরিচয়। এবং শীঘ্রিই আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হই। আমি তাঁকে হীরেগুলো কোন ব্যাঙ্কে রাখার তাগিদ দিই, কিন্তু তিনি রাজি হননি।’

মাথা ঝাঁকালেন রেজিনা।

‘ভুলটা ওখানেই হয়। পুলিস নিশ্চিত যে স্যর ডয়েলের অন্তর্ধানের পেছনে অপরাধীচক্রের হাত আছে। ওরা হীরেগুলোর পেছনে লেগেছে।’

‘আসলে ঠিক কী ঘটেছিল বলবেন?’ টিনার প্রশ্ন।

‘এক সপ্তাহ আগে, স্যর ডয়েল তাঁর স্টাডিতে বসে কাজ করছিলেন। এক মেইড তাঁকে এক কাপ চা দিয়ে ফেরার সময় পিলে চমকানো এক চিৎকার শোনে। সে দৌড়ে স্টাডিতে গিয়ে দেখে, স্যর ডয়েল ডেস্কের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় মৃত অথবা অজ্ঞান।’

ফ্রেডি স্মৃতিটা মনে করে শিউরে উঠলেন।

‘আমি তখন উইকএণ্ড কাটাতে এখানেই ছিলাম। মেইড অ্যালার্ম বাজাতেই, স্টাডিতে ছুটে যাই আমি এবং…’

‘হ্যাঁ?’ কিশোর জানতে উদ্‌গ্রীব।

‘এবং গিয়ে দেখি স্টাডিটা ফাঁকা।’

‘গারফিল্ডের বেলায় ঠিক যেমনটা হয়েছে!’ বললেন টম মামা।

‘হ্যাঁ, স্যর ডয়েল যেন স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। তার পর থেকে তাঁর আর কোন খবর পাইনি।’

এক মুহূর্ত সবাই নীরব রইল। চকিতে টিনার দিকে চাইল কিশোর, কাসা লোমার রহস্যময় ঘটনাগুলো নিয়ে কী ভাবছে ও? আচমকা দুর্গের কোথাও থেকে জোরাল এক শব্দ শোনা গেল।

কিশোর আর টিনা দু’জনেই চমকে শব্দটার উৎস লক্ষ্য করে চাইল।

মুচকি হাসলেন ফ্রেডি

‘ভয় পেয়ো না, কাসা লোমায় ভূত-টুত নেই। মাঝেমধ্যে · বাতাসে দরজা বাড়ি খায় আরকী।’

‘ভয়ঙ্কর ক্যাঁচকোঁচ শব্দটা কীসের?’ টিনা জানতে চাইল। ‘ওটা সেগুন কাঠের মেঝের আওয়াজ, অন্য কিছু নয়।’

‘ঠিক বলছেন তো? মনে তো হচ্ছে একদল জিন্দালাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে,’ বলল টিনা।

ফ্রেডি মৃদু হেসে, টম মামার উদ্দেশে চাইলেন।

‘আর তাই, স্যর ডয়েলের ঘনিষ্ঠতম আত্মীয় হিসেবে, আপনাকে উইনিপেগ থেকে ডেকে আনা হয়েছে কাসা লোমার দায়িত্ব বুঝে নেয়ার জন্যে। স্যর ডয়েলকে খুঁজে পাওয়া না গেলে, দুর্গটা আপনারই হবে।’

এসময় এক প্রাচীন গ্র্যাণ্ডফাদার ঘড়ি বিলাপ করে মধ্যরাতের জানান দিল। টম মামা বিচলিত ভঙ্গিতে মাথার চুল ভেদ করে হাত চালালেন।

‘স্যর ডয়েলকে খুঁজে পেলে বাঁচা যায়। এই দুর্গটায় আসার পর থেকেই আমার কেমন গা ছমছম করছে,’ বললেন।

.

পরদিন সকালে কিশোর অনুভব করল ওর মাথা ঝিমঝিম করছে। রাতে ভাল ঘুম হয়নি, যদিও রাউণ্ড রুম-এর বিলাসবহুল, সুবিশাল বিছানাটি ওকে দেয়া হয়েছিল, ডিউক অভ উইণ্ডসর একবার’ যেটিতে শুয়েছিলেন।

কিশোর নিচে, গ্রেট হল-এ নেমে এল নাস্তার খোঁজে, এবং দেখল টিনা ইতোমধ্যেই হাজির ওখানে। সোনালী ফ্রেমের এক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কালো চুল আঁচড়াচ্ছে।

‘এই, জানো?’ খোশমেজাজে বলল টিনা। ‘আমার সুইটের শাওয়ার থেকে না সুগন্ধী পানি বেরোয়।’

‘আমার বাথরুমটা এতটাই বড়, ইচ্ছে করলে সাইকেল চালানো যাবে। কিন্তু বাথটাব মাত্র একটা।’

‘এক কাজের লোক আমাকে বলেছে স্যর ডয়েলের প্রাইভেট সুইটে নাকি ছয় কলওয়ালা দুর্দান্ত একটা শাওয়ার আছে। স্যর ডয়েল নাকি কখনও ওটা ব্যবহার করেননি, তবে তুমি চাইলে চেষ্টা করে দেখতে পারো।’

এসময় জন উদয় হলো।

‘নাস্তা দেয়া হয়েছে, ইয়াং স্যর এবং ম্যাডাম।’

খানসামার গোমড়া মুখের চেহারা গতরাতে গারফিল্ডের অপ্রত্যাশিত অন্তর্ধানের কথা মনে করাল ওদেরকে। এমনকী দিনের বেলাতেও কেমন ভুতুড়ে অনুভূতি হয়, এই দুর্গে; কিশোর আর টিনা জনকে অনুসরণ করে ব্রেকফাস্ট রুমে ঢুকল, দেখল টম মামা কমবয়সী মেইড ক্যাথরিনের সঙ্গে আলাপ করছেন আর প্লেট ভর্তি বেকন আর ডিম খাচ্ছেন।

‘গুড মর্নিং, বাচ্চারা! ঘুম কেমন হলো?’

‘বেশি ভাল না,’ বলল কিশোর, সামুদ্রিক সরীসৃপ আর ড্রাগন খোদাই করা পেল্লায় এক চেয়ারে বসল। ‘পুলিস কি এসেছে?’

মাথা নাড়লেন টম মামা।

‘এখনও আসেনি। তোমরা কাল রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পর ফ্রেডি গাড়ি চালিয়ে থানায় যায় রিপোর্ট করতে। সকালের মধ্যেই পুলিসের এসে পড়ার কথা।’

‘তাই! আমার তর সইছে না,’ বলল কিশোর।

টম মামা মৃদু হাসলেন, খানিকটা বোকাটে দেখাল তাঁর হাসিটা।

‘আমি কারও আনন্দ মাটি করতে চাই না, কিন্তু আমি এরমধ্যেই তোমাদের সকালের প্ল্যান করে ফেলেছি। তোমরা ক্যাথরিনের সাথে যাবে। মাত্র এক সপ্তাহের ছুটিতে এখানে এসেছ, কাজেই টরন্টো শহরটা ভালমত ঘুরে দেখো। সাত দিন পরেই তো আমাদের ফ্লাইট।’

কিশোর আর টিনার উদ্দেশে দাঁত বের করে হাসল ক্যাথরিন।

‘আজ সকালে মানুষের খুলি দেখলে কেমন হয়?’

‘খুব ভাল হয়,’ উৎসাহ ধরে না কিশোরের।

ঠিক এমনিসময়, রেজিনা হুইলচেয়ারে করে কামরায় ঢুকলেন।

‘ফোর্ট ইয়র্কে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছ? তোমাদেরকে ঘুরিয়ে দেখাতে পারলে ভাল লাগবে আমার। আমার অ্যাক্সিডেন্টটার আগে, আমি ওখানকার গাইড ছিলাম কিনা।’

‘তাহলে আজ সকালটা ছুটি নিন আপনি,’ বললেন টম মামা। ‘জন আর পঁচিশজন কাজের লোক দুর্গটা ঠিকই সামলে নিতে পারবে! ঠিক না, জন?’

খানসামা গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল। চোখের নিচে কালি, চিবুকে দাড়ি কামানোর কয়েকটা ক্ষতচিহ্ন নিয়ে আজ সকালে লোকটাকে রীতিমত ভীতিকর দেখাচ্ছে। জন ওদের সঙ্গে ফোর্ট ইয়র্কে যাচ্ছে না বলে স্বস্তি পেল কিশোর।

.

দুর্গটির প্রথম যে জিনিসটি ওদের নজরে পড়ল সেটি হচ্ছে ইউনিয়ন জ্যাক; ঠাণ্ডা, বৃষ্টিভেজা বাতাসে পতপত করছে। ওরা পার্কিং লটে ঢুকছে, এসময় কামানের গমগমে শব্দ পেল।

‘আমার কাছে দিন,’ বলল কিশোর, ক্যাথরিনের গাড়ি থেকে হুইলচেয়ার নামাতে রেজিনা যখন রীতিমত যুঝছেন।

‘অসুবিধে নেই, আমার অভ্যাস আছে। হ্যাণ্ড কন্ট্রোল ব্যবহার করে গাড়ি চালিয়ে কাজে যাই আমি।’

হুইলচেয়ার চালিয়ে দুর্গের দিকে এগোলেন রেজিনা, পেছনে কাদাময় পথের ওপর লম্বা দুটো রেখা পড়ল।

‘আঠারোশো বারোর যুদ্ধে,’ কিশোর আর টিনার উদ্দেশে ব্যাখ্যা করলেন, ‘মার্কিন সামরিক বাহিনী এই এলাকায় আক্রমণ চালায়। ফোর্ট ইয়র্ক ছিল ব্রিটিশ প্রতিরোধ-যোদ্ধাদের হেডকোয়ার্টার।’

।মৃদু হাসল ক্যাথরিন।

‘আর এখন মার্কিনরা সব টুরিস্ট হয়ে গেছে।’

স্মিত হাসলেন রেজিনা।

‘আর আমরা কিছু মানুষ কানাডাকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছি যে এখানেই রয়ে গেছি।’

‘আপনি কি আমেরিকা থেকে এসেছেন, রেজিনা?’ টিনার প্রশ্ন।

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালেন রেজিনা।

‘ওই দেখো, ফোর্ট ইয়র্কের গার্ড, ব্রাউন বেস মাস্কেট নিয়ে ড্রিল করছে। ওদের লাল উর্দিগুলো দারুণ না?’

‘মড়ার খুলিটা কোথায়?’ কিশোর জিজ্ঞেস করল। ‘এসো আমার সাথে,’ বলে, হেসে উঠল ক্যাথরিন।

খুলিটা-কাঠের এক স্ট্রেচারে লম্বা কালো চুল আর খানিকটা চামড়া নিয়ে যুক্ত-এক ব্যারাকের ভেতরে ডিসপ্লে করা হচ্ছে। এবার কিশোর আর টিনা অন্যদেরকে অনুসরণ করল, দুর্গের অস্ত্রাগারে এক শট-আভ্ দেখার জন্য। রেজিনা জানালেন, শত্রুদের জাহাজবহরে আগুন ধরাতে কামানের গোলা উত্তপ্ত করা হত এটিতে।

এরপর ওরা গেল অফিসার্স’ কিচেন-এ। ওখানে অ্যাপ্রন পরা এক মেয়ে দারুচিনি ডৌনাট বানাচ্ছিল খোলা আগুনে। তামার পাত্রগুলোতে প্রতিফলিত হচ্ছে কাঁপা-কাঁপা অগ্নিশিখা। গোল- গোল গরমাগরম ময়দার তাল দেখে জিভে জল চলে এল কিশোরের।

মেয়েটি ওদের প্রত্যেককে একটা করে ডৌনাট দিল, এবং কিশোর ওটা চিবোতে চিবোতে বাইরে বেরিয়ে এল।

আরি, গারফিল্ড আঙিনায় দাঁড়িয়ে!

কিশোরের বিষম খাওয়ার জোগাড়। হনহন করে লোকটির উদ্দেশে এগিয়ে গেল ও।

‘গারফিল্ড! আপনি বেঁচে আছেন!’

কিশোরকে দেখামাত্রই লোকটার মুখের চেহারা মড়ার মতন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বাচ্চা দুটোর দিকে চট করে চাইল সে।

‘যাও, তোমরা নানুকে খুঁজে নাওগে। আমি এখুনি আসছি।’

বাচ্চা দুটো চলে গেলে, কিশোরের দিকে চাইল লোকটা।

‘হ্যাঁ, তো আমি গারফিল্ড। তাতে কী হলো?’

‘কাল রাতের ঘটনাটা কী? আর আস্তাবলের ব্যাপারে কী যেন বলতে চাইছিলেন আপনি?’

চলাচলরত মানুষজনের উদ্দেশে নার্ভাস চাউনি হানল গারফিল্ড।

‘ও কিছু নয়, কামার ঠাণ্ডা লোহা পিটছিল আরকী। এখন, প্লিজ, আমাকে যেতে দাও।’

গারফিল্ড উল্টো ঘুরতেই, কিশোর তার পিছু নিল।

‘আলো নিভে যাওয়ার পর কী হয়েছিল আপনার?’

উদ্বেগের মেঘ জমল গারফিল্ডের মুখের চেহারায়।

‘শোনো, ওরা আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে কাসা লোমার বিষয়ে আমি যেন কারও কাছে মুখ না খুলি। কাজেই সরে যাও আমার কাছ থেকে।’

‘কারা হুমকি দিয়েছে?’

গারফিল্ড ভীতিমাখা মুখে কিশোরের দিকে দু’মুহূর্ত চেয়ে রইল, তারপর তড়িঘড়ি পার্কিং লটের উদ্দেশে পা চালাল। হতচকিত কিশোর একটু পরে লোকটিকে এক বৃদ্ধা মহিলা আর সেই বাচ্চা দুটোকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে দেখল।

গাড়িটার লাইসেন্স প্লেট নম্বর টুকে নিয়ে অফিসার্স’ কোয়ার্টারে ফিরে লল কিশোর। গতরাতে গারফিল্ড খুন হয়নি জেনে স্বস্তি বোধ করছে ও, কিন্তু কাসা লোমা দুর্গে ঘটে যাওয়া রহস্যময় ঘটনাগুলো ওকে হতবাক করে দিয়েছে।

দুর্গে কামার আছে নাকি? নোটবইতে কামার ঠাণ্ডা লোহা পিটছিল—একথাগুলো টুকতে থেমে দাঁড়াল কিশোর। এবার মুখে চওড়া হাসি নিয়ে ফের হেঁটে চলল।

চমৎকার এক সূত্র পাওয়া গেছে!