মূর্তিমান আতঙ্ক – ১০

দশ

ফোন বাজল।

চমকে উঠলাম, ফলে হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গেল বইটা। ফোন অন করলাম।

‘কিশোর? কী খবর?’

‘ও, হাই, রবিন,’ ফোনে বললাম। ‘এই তো।’

উযের বইটা নিয়ে যে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার ও নিয়ে কিছু বললাম না। হয় আমাকে নিয়ে হাসবে এবং মিথ্যুক বলবে, আর নয়তো হাজির হয়ে যাবে নিজে সুপারহিরো হওয়ার পাঁয়তারা চালাতে!

‘তুমি কি ভুলে গেছ?’ প্রশ্ন করল। কিন্তু জবাবের তোয়াক্কা করল না। ‘ডাউনটাউনে আজ কমিক বুক কনভেনশন?’

‘ওহ্, তাই-তো!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম। ‘কটা বাজে? আমরা কি দেরি করে ফেললাম?’

কীভাবে বেমালুম ভুলে গেলাম আমি কমিক বুক কনভেনশনের কথা? এমন একটা দিনের কথা কি ভোলা যায়?

সুবিশাল কনভেনশন সেন্টারটি ওদিন কমিক ভক্তদের ভিড়ে রীতিমত গিজগিজ করে। প্রতিটি প্রকাশক বিশাল ডিসপ্লে দেন। অনেক শিল্পী আর কমিক লেখক যান ওখানে। ভক্তরা সুপারহিরো আর সুপারভিলেন সেজে ঘুরে বেড়ায়। হাজারো কমিক বই কিনতে পাওয়া যায়।

‘আমরা যাচ্ছি?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘অবশ্যই,’ বললাম। ‘মুসাকেও জানাও। আর দশ মিনিটের মধ্যে বাস স্টপে তোমরা হাজির থেকো, আমি আসছি।’ বলে, ফোন কেটে দিলাম।

দরজার দিকে পা বাড়ালাম। ওহ, দাঁড়াও। আমি তো এখনও পাজামা পরে রয়েছি।

ধোয়া জিন্স আর টি-শার্ট পরলাম। আমার সক ড্রয়ারের পেছনে যে গোপন জায়গাটি আছে সেখান থেকে এক গোছা টাকা তুলে নিলাম। এবার তড়িঘড়ি কামরা ছাড়লাম।

ডন সিঁড়িতে পথ আগলে দাঁড়াল।

‘আমাকে নেবে না?’

‘ও, তুমি আবার আড়ি পেতেছিলে? উঁহুঁ, এখন নয়, পরে।’

‘আমিও যাব,’ রীতিমত পীড়াপীড়ি শুরু করল ও। আমার কোমর জড়িয়ে ধরেছে শক্ত করে। ‘আমাকে না নিলে তোমাকে যেতে দেব না।’

ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলাম।

‘আজকে না, ভাইয়া, অন্যদিন বেড়াতে নিয়ে যাব তোমাকে!’

‘তুমি খালি একাই ঘুরে বেড়াও!’ চেঁচিয়ে উঠল ও। ‘আমাকে নাও না!’

‘সবসময়ই তো নিই,’ আদর করে বললাম। ‘শুধু আজকেই নিচ্ছি না। মন খারাপ কোরো না, ফিরে এসে তোমার সাথে টেদারবল খেলব।’

‘খেলতে হবে না,’ রাগত স্বরে বলে, উল্টো ঘুরে গটগটিয়ে চলে গেল ডন।

.

কনভেনশন সেন্টারটি এক সুপ্রশস্ত কাঁচের বিল্ডিং, তিন-চারটি সিটি ব্লক অবধি বিস্তার পেয়েছে যেটি। মুসা, রবিন আর আমি টিকিট কিনেছি এবং এখন পা রেখেছি প্রকাণ্ড এক্সিবিশন হলটিতে।

প্রতিটি আইলে ভিড়। যদ্দূর চোখ যায় শুধু অসাধারণ সব ডিসপ্লে আর বুথ, ভিডিও স্ক্রিন, উঁচু-উঁচু বিলবোর্ড আর সাইনবোর্ড। মানুষজনের উত্তেজিত কণ্ঠের সম্মিলিত গর্জন কানে আসছে। গমগম করে গান বাজছে।

দেখা-শোনার কত কিছুই না রয়েছে এখানে। আহা, একটা সপ্তাহ যদি কাটাতে পারতাম এ জায়গায়!

ভিডিও গেমস সেকশন ভেদ করে পথ করে নিলাম আমরা। বুথগুলোতে শত-শত মানুষ ভিড় জমিয়েছে, নতুন গেমস আর গেম সিস্টেম যাচাই করছে।

থেমে দাঁড়ালাম আমি, একদল মেয়েকে প্রিন্সেস ওয় নামে এক থ্রি-ডি ব্যাল্‌ গেম খেলতে দেখলাম। লম্বা, সাদা গাউন পরা রাজকন্যারা সাঁই-সাঁই করে যুদ্ধ কুঠার ঘোরাচ্ছে, একে অন্যের মাথা থেকে মুকুট ফেলে দেয়ার চেষ্টা করছে।

আমরা তিনজন এক কোনা ঘুরতেই কিউকাম্বার আর তার সহকারী ক্যারট-স্টিকের মুখোমুখি হলাম। সালাদ লিগ মিউট্যান্টস-এর সবচাইতে জনপ্রিয় সদস্য ওরা। কটা ছোট ছেলে- মেয়ে অটোগ্রাফ বই ঝাঁকাচ্ছে, ভেজিটেবল্স্ অভ আয়রনের অটোগ্রাফ চাই ওদের।

আরেকটি আইলে ঢুকলাম আমরা। ডলার সাইনের পোশাক পরা এক লোক দাঁড়িয়ে মঞ্চে, উন্মাদের মত হাসছে আর বাতাসে নকল টাকা ওড়াচ্ছে। বারবার সবুজ-সাদা এক চিহ্ন দেখাচ্ছে তর্জনী তাক করে: তোমার সংগ্রহের কমিক বইয়ের জন্য উন্মাদের টাকা নিয়ে যাও।

‘খাইছে,’ বলে উঠল মুসা। একদল ছেলে-মেয়ে দুদ্দাড় করে পাশ কাটালে আমার গায়ের ওপর এসে পড়ল ও। ‘তোমার উয বইটায় দেয়া কোন টেস্ট ট্রাই করে ‘ দেখেছিলে? মানে, সুপারপাওয়ার খুঁজে পাওয়ার কথা বলছি আরকী।’

ওকে বলে ফেলার লোভ কোনমতে সামলালাম। বলতে গেলে ঝামেলায় পড়ব।

‘না, চ্যাপ্টারগুলো আসলেই ফালতু,’ বললাম। ‘স্রেফ ফিলার, কোন কাজের না। বাদ দাও।’

আমাকে এক মুহূর্ত খুঁটিয়ে দেখল ও। হয়তো বুঝতে পেরেছে সত্যি কথা বলছি না আমি।

কমিক বুক সেকশনের দিকে যতই কাছিয়ে যাচ্ছি, ভিড় ততই বাড়ছে। লুই কাবলুই বহেড পুতুলের এক টেবিলের পাশ কাটালাম আমি। লুই কাবলুইয়ের দারুণ মজার এক সুপারপাওয়ার আছে। নিজেকে ছোট-ছোট টুকরোয় বিস্ফোরিত করতে পারে ও, বোমার মতন।

‘বহেড পুতুলগুলোকে ঝাঁকালে যেন ফেটে যায় এমনভাবে বানানো উচিত ছিল,’ বলল রবিন। ‘তাহলে দারুণ হত।’

‘অ্যাই, দেখো!’ আইলের শেষপ্রান্ত দেখালাম আঙুল- ইশারায়। পেছনের দেয়াল জুড়ে বড়সড় এক সাইনবোর্ড। ইয়া বড়-বড় তেলতেলে অক্ষরে ওতে লেখা-উয। দেখে মনে হবে তেলের ফোঁটা ঝরছে, এমনভাবে অক্ষরগুলো লিখেছে।

উয ডিসপ্লে বুথটা এক ব্লক লম্বা হলে ভাল হত। আগামী গ্রীষ্মে যে উয ছায়াছবিটি মুক্তি পাবে ওটার প্রিভিউ সিন দেখানো হচ্ছে ভিডিও স্ক্রীনগুলোতে। ডিসপ্লের দু’পাশে উযের ইয়া লম্বা- লম্বা কাটআউট। দেয়াল লাগোয়া তাক জুড়ে উযের সব বই, কমিক, গেমস আর ভিডিও সাজানো।

উয ভক্তদের ভিড়ে পা রাখার জায়গা নেই বুথটিতে। ভিড় ঠেলে, পথ করে নিয়ে সামনে পৌঁছতে দীর্ঘক্ষণ লেগে গেল আমাদের তিনজনের।

প্রকাণ্ড এক ভিডিও স্ক্রীনে মুভি প্রিভিউয়ের একাংশ দেখলাম। ছবিতে দেখাচ্ছে, উয একদল অসহায় পুলিসের ওপর চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। একেবারে তেলের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে। স্পেশাল ইফেক্টগুলো সত্যিই অতুলনীয়!

পর্দা থেকে নিচে চোখ নামালাম। উয সামগ্রীতে ভরা এক টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আমি।

‘বাহ, দারুণ তো!’ চেঁচিয়ে উঠলাম। উয লাঞ্চ বক্স, স্নিকার্স, ক্যাণ্ডি বার আর পোস্টারগুলো জরিপ করলাম। এবার এক বাক্স উয দই তুলে নিলাম

‘আগে কখনও খেয়েছ এটা, বাছা?’ এক লোক জানতে চাইল। ‘স্বাদে লিকোরাইস। আর অনুভূতিতে উয।’

‘তাই?’ বললাম।

মাথা ঝাঁকাল লোকটি। লম্বা টিঙটিঙে। লাল মুখ, উজ্জ্বল সবুজ চোখের মণি তার, লাল চুল পনিটেইল করে বাঁধা।

এক তেল কোম্পানির ইউনিফর্ম পরেছে সে, লাল অক্ষরে তার পকেট থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ছে উয লেখাটি। নেম ব্যাজ বলছে লোকটির নাম-ড্যারেল।

‘বাছা, তুমি উয আইপড হোল্ডার দেখেছ?’ জিজ্ঞেস করল। তুলে দেখাল একটা। ‘এটা খাঁটি উযের তৈরি।’

আমাকে কনুইয়ের আলতো গুঁতো দিল রবিন।

‘গ্রাফিক নভেলগুলো দেখো, কিশোর। এখানে বোধহয় সবগুলো পাবে।’

ঘুরে চাইতেই দেয়ালে এক তাক ভর্তি গ্রাফিক নভেল দেখলাম। সব কটা প্রচ্ছদ থেকে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে উয, বইয়ের সারির ওপরে-নিচে চোখ বোলালাম। প্রতিটাই রয়েছে আমার সংগ্রহে।

রবিনের দিকে চাইলাম।

‘উইয়ার্ড অভ উয বইটা দেখছি না,’ বললাম। ‘একমাত্র ওটাই এখানে নেই।’

হঠাৎই একটা হাত খপ করে আমার কাঁধ চেপে ধরল। ড্যারেল সবুজ চোখজোড়া সরু করে চাইল আমার উদ্দেশে।

‘এসো আমার সাথে,’ বলল। ‘এখুনি।’

আমাকে টেনে নিয়ে চলল লোকটা।

‘কী ব্যাপার?’ প্রশ্ন করলাম। ‘এমন করছেন কেন? কী করেছি আমি?’

এগারো

উয টুথব্রাশে ঠাসা এক ডিসপ্লের পাশ দিয়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চলল আমাকে ড্যারেল। জিনিসগুলো সত্যিই অপূর্ব। হ্যাণ্ডেলগুলো দেখে মনে হবে উয চুইয়ে-চুইয়ে পড়ছে। কালো উয টুথপেস্টের সঙ্গে দেয়া হচ্ছে ওগুলো।

আমাকে বুথের পেছনের কোনায় নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টু শব্দটি করল না লোকটা

‘আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই,’ বলল। ‘তুমি দ্য উইয়ার্ড অভ উয গ্রাফিক নভেলটার কথা বলছিলে না?’

মাথা ঝাঁকালাম।

‘হ্যাঁ, ওটা ডিসপ্লেতে নেই।’

লোকটা লাল টকটকে চুলে হাত চালিয়ে কুতকুতে চোখে চাইল আমার দিকে।

‘ওটা কখনও দেখেছ তুমি, বাছা?’

‘আমার কাছে আছে তো,’ বললাম। ‘আমি এক কপি কিনেছি।’

শ্বাস গিলতে দেখলাম লোকটিকে। চোখ বিস্ফারিত।

কথা বলতে খানিক সময় লাগল তার।

‘ওয়াও। খুব ভাল, বাছা। ওটা একটা দুষ্প্রাপ্য বই,’ বলল শেষমেশ। ‘সত্যিই একটা কপি আছে তোমার কাছে? পড়েছ ওটা?’ ঘন-ঘন শ্বাস নিচ্ছে এখন লোকটা। নিঃসন্দেহে উত্তেজিত।

‘হ্যাঁ। দুর্দান্ত লেগেছে,’ বললাম।

আমার দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ লোকটার। চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে। তেল কোম্পানির শার্টের নিচে কাঁপছে তার সরু কাঁধজোড়া। শরীরের তুলনায় অনেক বড় মাপের শার্ট পরেছে লোকটি

‘বাছা, ওটা বেচবে আমার কাছে?’ প্রশ্ন করল।

‘আমার নাম কিশোর,’ জানালাম।

‘বেচবে? ভাল দাম দেব। সত্যি বলছি।’ মুখের চেহারায় কাতর অভিব্যক্তি। ভাবখানা এমন যেন তার জীবন-মরণ নির্ভর করছে বইটার ওপরে।

কপালে বিন্দু-বিন্দু ঘাম জমেছে লোকটার। কতখানি উত্তেজিত এমনকী তা গোপন করার চেষ্টাও করল না।

‘আমি…বেচতে…চাই না…’ বললাম।

‘সত্যি বলছি অনেক টাকা দেব,’ বলল ড্যারেল। হাতের চেটো দিয়ে চোখের ওপর থেকে ঘাম মুছল।

বইটার পেছনের সুপারপাওয়ার অধ্যায়গুলোর কথা মনে পড়ল আমার। সবগুলো চেষ্টা করা হয়নি এখনও। জানি ব্যাপারটা নিছকই পাগলামি। কিন্তু আমার প্রচেষ্টা দুটোয় তো সামান্য হলেও কাজ হয়েছিল।

আমার হয়তো কোন বিশেষ ক্ষমতা আছে, অথচ বিষয়টা জানা নেই? হতে পারে না? পারেই তো।

‘আমি বেচব না,’ ড্যারেলকে বললাম। ‘ওটা আমার সংগ্রহের জন্যে দরকার। আমার কালেকশনে সব কটা আছে কিনা।’

‘আমি তোমার পুরো কালেকশন কিনব!’ বলল ড্যারেল। ‘বলো, কত চাও!’

এক পা পিছালাম আমি। লোকটা এতটাই উত্তেজিত, কথা বলার সময় থুথু ছেটাচ্ছে।

‘সরি,’ বললাম। ‘আমি আমার কালেকশন বেচব না।’

‘তোমাকে যদি শুধু দ্য উইয়ার্ড অভ উয-এর জন্যে একশো ডলার দিই?’ প্রশ্ন করল ড্যারেল। ‘যদি তিনশো ডলার দিই?’

চোখ তুলে চাইলাম তার দিকে।

‘মাত্র একটা বইয়ের জন্যে?’

মাথা ঝাঁকাল লোকটা। লালচে কপাল থেকে আবারও ঘাম মুছল।

‘সে তো অনেক টাকা,’ বললাম।

মুখটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এল ড্যারেল।

‘বেচছ তাহলে?’

‘না,’ বললাম। ‘সরি। আমি ওটা সংগ্রহে রাখতে চাই। আমি—’

‘আচ্ছা, আচ্ছা,’ বলল ড্যারেল। গভীর শ্বাস টানল। ‘নো প্রবলেম। নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। এই নাও, এটা ধরো।’ আমাকে সাদা, ছোট এক কার্ড দিল। শার্টের পকেট থেকে ছোট হয়ে আসা এক পেন্সিল বের করল।

‘কী এটা?’ জিজ্ঞেস করলাম।

‘এটা পূরণ করো,’ বলল সে। পেন্সিলটা দিল আমার হাতে। ‘স্রেফ তোমার নাম-ঠিকানা লেখো। উয মেইলিং লিস্টে নাম তোলার জন্যে। তুমি নানা ধরনের লোভনীয় অফার পেতে থাকবে।’

দেয়ালে ঠেকিয়ে কার্ডটা পূরণ করলাম। এবার ড্যারেলকে দিতে গেলাম ওটা। কিন্তু একটা ছায়া পড়ল আমার ওপরে। লোকটার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে একটি অবয়ব।

সভয়ে শ্বাস চাপলাম-এবং হাত থেকে খসে পড়ল কার্ডটা। আমি চেয়ে রয়েছি কালো, তেলতেলে এক মুখের দিকে-স্বয়ং উয আমার সামনে!

বারো

প্রকাণ্ডদেহী ও!

মানে, ড্যারেল দীর্ঘকায় মানুষ। আমার চেয়ে অনেক লম্বা। কিন্তু উযকে দেখে মনে হলো একটা পাহাড় দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন!

তেল চুকচুকে মাথাটা ফোলা ফোলা। মনে হচ্ছে মাথা ভর্তি টিউমার গজিয়েছে। চোখজোড়া কালো আর গোল। মুখ খুলতেই বেরিয়ে পড়ল দু’সারি এবড়োখেবড়ো দাঁত আর গাঢ় নীল জিভ!

পরনের কালো ওভারলের স্ট্র্যাপগুলো ছাপিয়ে উপচে পড়ছে ওর চওড়া দু’কাঁধ। কিলবিল করছে ভেজা, চকচকে মাংসপেশী।

এমনকী গা থেকেও কেমন তেলের গন্ধ আসছে!

টলমল পায়ে পিছু হটলাম। মুখ হাঁ হয়ে গেছে আমার।

‘আপনি কি সত্যি?’ শব্দগুলো বেরিয়ে এল গলা দিয়ে।

‘হ্যাঁ, অবশ্যই, বাছা,’ খসখসে স্বরে বলল ও। ‘এবং স্পঞ্জবব স্কয়্যারপ্যান্টস প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছে!’

একথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল ড্যারেল।

‘কী, বুঝলে কিছু?’ বলল উয, তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে মুখের একপাশ দিয়ে কথা বলছে। এটা ওর সেই বিখ্যাত স্লোগান।

আবারও খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল ড্যারেল। উযের কাছ থেকে আলগোছে সরে এল। দৃষ্টি আমার ওপর স্থির।

‘কস্টিউমটা হেভি!’ চেঁচিয়ে উঠলাম প্রায়।

‘তোমার কস্টিউমটাও সুন্দর,’ পাল্টা বলল উয। ‘কী সেজেছ তুমি সঙ?’

হেসে উঠলাম। আসল উযের মতই আচরণ এই লোকটার! পাকা অভিনেতা নিঃসন্দেহে!

‘আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেবেন?’ প্রশ্ন করলাম তাকে। জবাবে ঘাউ করে উঠল লোকটা।

‘ভাগো! আমি এখন ছুটিতে আছি।’

লোকটার দু’বাহু বেয়ে আলকাতরার মত গড়াচ্ছে কালো তেল। জায়গায়-জায়গায় ফুলে ওঠা মাথাটা আঠায় মাখামাখি। ভেজা মুঠো দুটো বারবার খুলছে আর পাকাচ্ছে।

‘বস, শুনেছেন, কিশোর বলছে ওর কাছে নাকি অরিজিনাল বইটা আছে,’ ড্যারেল বলল তাকে।

উযের ছদ্মবেশধারী লোকটা জমে গেল জায়গায়।

‘তাই নাকি?’ এবার আমার দিকে চোখ নামিয়ে চাইল। ‘ও বই নিয়ে তুমি কী করছ? ওটা তো একটা রেয়ার এডিশন।’

‘জা-জানি,’ তুতলে বললাম।

লোকটা চাইল ড্যারেলের দিকে।

‘বইটা আমার চাই।’

আমার পূরণ করা কার্ডটা তুলে নিয়ে নিরীখ করল ড্যারেল।

‘আমারও,’ বলল। ‘শোনো, কিশোর-তুমি মত পাল্টালে জানিয়ো, ও বইয়ের জন্যে তোমাকে আমি তিনশো ডলার দেব। ভেবে দেখো অফারটা।’

আমি তো জানি ওটা বেচব না। কিন্তু মুখে বললাম, ‘আচ্ছা, ভাবব।’

বিদায় জানিয়ে হাঁটা ধরলাম। ভুলেই গেছিলাম মুসা আর রবিনের কথা, আইলের ও মাথায় উইযেল ওয়ার্ল্ড বুথ, ওখান থেকে আমার উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখলাম রবিনকে।

‘তোমরা বিশ্বাস করবে না কী ঘটেছে আমার সাথে,’ বললাম।

‘ফেরার সময় বাসে বোলো,’ বলল রবিন। ‘আমার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। মাকে কথা দিয়েছি ঠিক সময়ে বাসায় ফিরব।’

আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল এক্সিটের দিকে। মুসাও অনুসরণ করল।

‘দাঁড়াও, দাঁড়াও।’ হঠাৎই পিঠে গরম বাতাসের হলকা টের পেলাম। আমাকে ঢেকে দিল একটা ছায়া। তীব্র কটু গন্ধ ভক করে নাকে এসে লাগল।

পাঁই করে ঘুরে দাঁড়ালাম। উযের ছদ্মবেশধারী লোকটা আমার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে।

‘অ্যাই, ছেলে,’ কর্কশ কণ্ঠে বলে, ঝুঁকে পড়ল সে।

‘ওয়াও,’ বিড়বিড় করে বললাম। ‘আপনার কস্টিউম থেকে এমন গরম ভাপ বেরোয় কীভাবে? মনে হচ্ছে চুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি!’

‘বেশি গরম লাগছে, বাছা?’ গমগম করে উঠল লোকটার গলার স্বর। ‘তাহলে মন দিয়ে শোনো। বইটা বেচার ব্যাপারে মত বদলানো উচিত তোমার।’

তিন বন্ধু পরস্পর চোখাচোখি করলাম।

উয লোকটা কনভেনশন সেন্টারের চারপাশে দৃষ্টি বোলাল। ‘সবসময় যে তুমি অনেক মানুষের ভিড়ের মধ্যে থাকবে তা কিন্তু নয়,’ আওড়াল। ‘এবং আমি কিন্তু তোমার পিছু ছাড়ব না। কী, বোঝা গেছে?’

‘হ্যাঁ,’ বলতে গিয়ে কেঁপে গেল আমার কণ্ঠ। সারা দেহে হিমস্রোত বয়ে গেল।

লোকটা কি হুমকি দিচ্ছে আমাকে?

তেরো

‘কালো, বিশাল কস্টিউম পরা লোকটা আমাকে ভয় দেখাতে চাইছিল,’ বন্ধুদেরকে জানালাম। ভিড়ে ঠাসা বাসের সামনের দিকে বসেছি আমরা। আইলে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে যাত্রীরা। এক লোক অবিরাম ছাতার গুঁতো মেরে চলেছে আমাকে।

‘খাইছে, লোকটা আসলে স্রেফ ওর দায়িত্ব পালন করছিল,’ বলল মুসা। ‘ওর কাজই হলো সবার সাথে কড়া-কড়া কথা বলা। বোঝই তো। টাফ গাইয়ের অভিনয় করছে আরকী।’

‘কিন্তু ও এতটাই কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি আলকাতরার গন্ধ

পাচ্ছিলাম!’ চেঁচিয়ে উঠলাম।

হেসে ফেলল রবিন।

‘লোকটা আসলেই মজার,’ বলল।

এবার আমার হাঁটুতে খোঁচা মারল ছাতাওয়ালা। বাসটা থেমে দাঁড়াতেই, আইলে আরও ভিড় জমল। পেছনে, জানালায় বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগছে।

‘আমার ধারণা উয লোকটা আসলেই বিপজ্জনক,’ বললাম। ‘ও আর ওর কর্মচারী ড্যারেল আমার বইটার জন্যে রীতিমত মরিয়া।’

‘খাইছে, তোমার কাছ থেকে কিনবে বলেছে?’ মুসার প্রশ্ন।

মাথা ঝাঁকালাম।

‘ড্যারেল তিনশো ডলার সেধেছে ওটার জন্যে।’ শিস দিয়ে উঠল মুসা।

‘খাইছে, কিশোর, এ তো অনেক টাকা! তুমি ও টাকা দিয়ে তোমার পছন্দের নতুন গেম সিস্টেমটা কিনতে পারবে!’

‘জানি,’ বললাম, ‘কিন্তু–‘

‘বিনে পয়সায় পাওয়া একটা কমিক বইয়ের জন্যে তিনশো ডলার!’ বলে উঠল রবিন।

‘জানি,’ আবারও বললাম। ‘কিন্তু…আমি ওটা জমাতে চাই।’

হয়তো সুপারপাওয়ার নিয়ে আরও গবেষণা করার মতলবেই। বন্ধুদেরকে অবশ্য তা বললাম না।

এসময় ঝাঁকি দিয়ে থেমে পড়ল বাসটা। লোকজন টলে উঠল। যাত্রীরা নামতে শুরু করতেই আইলের ভিড় খানিকটা পাতলা হয়ে এল।

এবং বাসের পেছনে কিছু একটা দেখে আঁতকে উঠলাম আমি।

রবিনের হাতা চেপে ধরলাম।

‘দেখো।’ ব্যাকসিটের দিকে আঙুল-ইশারা করলাম।

‘কী দেখব?’ বলল রবিন। এবার ও-ও দেখতে পেল লোকটাকে।

‘খাইছে!’ দেখে বলে উঠল মুসা।

সেই লোকটা-উযের কস্টিউম পরা।

বাসের পুরোটা পেছনদিক জুড়ে বসে রয়েছে। চার-পাঁচজনের জায়গা দখল করে!

ছুরি বিধল যেন আমার বুকে।

‘ব্যাটা আমাদের ফলো করছে!’ বলে উঠলাম।

নিচের ঠোঁট কামড়াল রবিন।

‘হতে পারে।’

‘আমাদের পেছন-পেছন নামে কিনা দেখলেই বোঝা যাবে, ‘ বললাম। ‘ও আমাকে বাসা অবধি ফলো করবে তাই না? জোর করে বইটা আদায় করবে আমার কাছ থেকে।’

‘ম-মগের মুল্লুক নাকি!’ তুতলে বলল রবিন। সাহসী ভঙ্গি ফোটাতে চাইল গলার স্বরে। কিন্তু পরিষ্কার বুঝলাম ও আমার মতই ঘাবড়েছে।

‘খাইছে, লোকটা আমাদের দিকে কীভাবে চেয়ে আছে দেখো,’ বলল মুসা। ‘আমাদেরকে একটা বার্তা দিচ্ছে।’

লোকটার দিকে পাল্টা চাইল রবিন

‘কনভেনশনে কাজ সেরে হয়তো বাসায় ফিরছে ও,’ বলল।

মাথা নাড়লাম।

‘ও আমাদের পিছু নিয়েছে। আমি শিয়োর। কীভাবে তাকিয়ে আছে দেখো। চোখের পাতাও ফেলছে না। কী বিশ্রীভাবে ভ্রূ কুঁচকে রেখেছে।’

এক লাফে উঠে দাঁড়ালাম।

‘চলো।’

‘কিন্তু এটা তো আমাদের স্টপ নয়!’ আপত্তি করল রবিন। ‘আমরা হেঁটে বাসায় ফিরব,’ বললাম। ‘আর তো মাত্র কটা ব্লক।’ চকিতে পিছু ফিরে চাইলাম। উয লোকটা এক চুল নড়েনি।

ও একটু পরেই, গুঙিয়ে উঠে থমকে দাঁড়াল বাসটা। হড়কে খুলে গেল দরজা। দুটো শপিং ব্যাগ হাতে মোটাসোটা এক মহিলা, তার পাশ দিয়ে কোনমতে শরীর গলিয়ে সামনের দরজা দিয়ে লাফ দিলাম।

মুহূর্তে মাথা ভিজে গেল বৃষ্টির পানিতে। ভেজা সাইডওয়কে পিছলে গেল আমার জুতোজোড়া।

ঘুরে চাইতেই দেখলাম মুসা আর রবিন একে-একে লাফিয়ে নামল বাস থেকে। এবার তিনজনে বাস স্টপ থেকে দুলকিচালে ছুট দিলাম।

বাসের দরজা লেগে গেল। চালক কার্ব থেকে টান মারল বাসটাকে।

‘উয নামেনি,’ বললাম। স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। ‘বাঁচা গেছে।’

কিন্তু বাস গড়গড়িয়ে এগিয়ে যেতেই, পেছনের জানালায় ওকে দেখলাম। কাঁচে ঠেকিয়ে রেখেছে তেলতেলে মুখটা। এবং একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে আমাদের দিকে। বাসটা যতক্ষণ দৃষ্টিসীমার আড়াল না হলো, লোকটা চোখ সরাল না আমাদের ওপর থেকে।

‘আজব,’ বিড়বিড় করে বলল রবিন। ‘লোকটা তোমাকে ভয় দেখাতে চাইছিল কোন সন্দেহ নেই।’

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালাম।

‘হুম, লোকটাকে দেখলেই কেমন গায়ে কাঁটা দেয়,’ বললাম। মুখ থেকে বৃষ্টির পানি মুছলাম। ‘মুখোশ আর কস্টিউম খোলার পর ব্যাটাকে দেখতে কেমন লাগে তা-ই ভাবছি।’

‘খাইছে, বাদ দাও ওর কথা,’ বলল মুসা। এবার নিচু গর্জন ছেড়ে বলল, ‘কী, বুঝলে কিছু?’

জগিং করে যার-যার বাসায় পৌঁছলাম আমরা, বৃষ্টির কবল থেকে বাঁচতে মাথা নুইয়ে। বাসায় যখন এলাম, ভিজে একসা হয়ে গেছি আমি।

চাচা-চাচী কিচেনে ছিল। দু’জনেই কাউন্টারে দাঁড়িয়ে সালাদের জন্য সবজি কাটছিল।

‘কী রে, কমিক কনভেনশন কেমন লাগল?’ চাচী শুধাল।

‘ভাল,’ বললাম।

গাজর কাটা বাদ দিয়ে চোখ তুলে চাইল চাচী।

‘কিছু কিনলি?’

‘না, খালি দেখেছি,’ বললাম।

‘তুই তো কাকভেজা হয়ে গেছিস,’ বলল চাচা। ‘আর গন্ধটা কীসের? কেমন আলকাতরা-আলকাতরা একটা গন্ধ আসছে তোর গা থেকে!’

‘আমি…মনে হয় উযের বেশি কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম,’ জবাব দিলাম।

‘যা, ওপরে গিয়ে কাপড় বদলা, চাচী বলল। ‘তোর চাচা আর আমি এখুনি বেরোব। তুই ডনকে দেখে রাখবি।’

আমরা হররল্যাণ্ড থেকে ফেরার পরই ডনের নানী ফিরে গেছেন নিজের বাসায়।

‘রাখব,’ বললাম। এবার তরতর করে সিঁড়ি ভাঙতে লাগলাম।

আমি এখন আবার কিছু সুপারপাওয়ার টেস্ট করতে পারব, মনে-মনে বললাম।

এখনও অনেক অধ্যায় বাকি। প্রথম দু’বার তো প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম। আমি হয়তো নিজের ভেতরে সুপ্ত কোন ক্ষমতা আবিষ্কার করতে পারব।

আমার কামরায় ঢুকলাম। ভেজা টি-শার্টটা খুলে ছুঁড়ে দিলাম এক কোনায়।

এবার তড়িঘড়ি বিছানার কাছে গেলাম রেখে যাওয়া বইটা তুলে নিতে

একী! নেই ওটা।

‘আরি।’ চাদর টেনে সরালাম। নেই। কিন্তু আমি তো জানি এখানেই রেখে গেছিলাম। বিছানায় উপুড় করে।

ডেস্কে তল্লাশী চালালাম। ড্রেসারে, খাটের তলার মেঝে আর বইয়ের তাকগুলোতে খুঁজলাম।

ক্লজিট খুললাম এবং মেঝেতে ফেলা ময়লা কাপড়ের স্তূপ টেনে-টেনে তুলে পরখ করলাম। নেই। নেই তো নেইই।

কোথাও নেই। মাথাটা ঘুরে উঠল। বুক ধড়ফড় করছে।

আমার বইটা লাপাত্তা।

চোদ্দ

ধপ করে বিছানার কিনারায় বসে পড়ে লম্বা শ্বাস নিলাম। চোখ বুজে ভাবতে চাইছি…

কমিক কনভেনশনে যাওয়ার আগে কি বইটা কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলাম? সরিয়ে রেখেছি কোথাও?

না, ওটা বিছানায় খোলা পড়ে ছিল। স্পষ্ট মনে পড়ছে।

চোখ খুললাম এবং কাছেই একটা শব্দ শুনলাম। কাশির আওয়াজ। তারপর চাপা হাসি।

বেডরুমের দরজার কাছে হেঁটে গিয়ে ডনের কামরায় উঁকি দিলাম। ওই যে, মেঝেতে বুদ্ধাসনে বসে রয়েছে ও, কোলের ওপর গ্রাফিক নভেলটা রেখে।

‘অ্যাই!’ গর্জন ছেড়ে ঝড়ের বেগে ওর ঘরে ঢুকলাম।

চমকে উঠে আর্তচিৎকার ছাড়ল ডন। এক মুহূর্তের জন্য চোখ তুলে চাইল। এবার আবার মন দিল বইয়ের পাতায়।

‘দিয়ে দাও,’ গর্জালাম। ‘দিয়ে দাও বলছি।’ বইটা কেড়ে নিলাম ওর হাত থেকে। ‘তোমার এখনও এসব পড়ার বয়স হয়নি!’

‘কে বলল?’ পাল্টা চেঁচাল ডন। বইটা ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিতে চাইল।

ঝট করে সরিয়ে নিলাম ওটা।

এক লাফে সটান সিধে হলো ডন।

‘এমন করো কেন, কিশোরভাই,’ অনুনয় করে বলল ও, ‘আমি পড়লে কী হয়?’

ও বইটা লক্ষ্য করে থাবা মারলে পেছনে নিয়ে গেলাম ওটা। ‘বড় হয়ে তারপর পোড়ো, এখন নয়,’ বললাম চড়া গলায়। ‘আমার সুপারহিরোর মত ক্ষমতা আছে,’ বলে, আবারও বইটা কাড়ার চেষ্টা করল ডন।

আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দে কখন যে চাচী হাজির হয়েছে টেরই পাইনি।

‘কী হচ্ছেটা কী এখানে?’ রাগতস্বরে বলল চাচী।

চেয়ে দেখি দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সে। মাথা নাড়ছে। মুখের চেহারা থমথমে।

‘ছোট ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করছিস কেন?’ বলল চাচী আমার উদ্দেশে। ‘তুই না বড় হয়েছিস?’

‘ঝগড়া করছি না তো,’ প্রতিবাদ করলাম।

‘নিজের চোখেই তো সব দেখলাম,’ কঠোর গলায় বলল চাচী। ‘তুই গ্রাউণ্ডেড। এখন যা, নিচে লরুিমে গিয়ে ওয়াশার থেকে ভেজা কাপড়গুলো বের করে ড্রায়ারে দে। শুকানোর পরে সব কটা কাপড় ভাঁজ করে ড্রয়ারে রেখে দিবি।’

‘কিন্তু, চাচী—এটা তো ন্যায়বিচার হলো না,’ বললাম। ‘এত খাটুনি!’

‘বেশিক্ষণ গ্রাউণ্ডেড থাকতে না চাইলে কাজটা ভালভাবে করগে যা,’ বলল চাচী। এবার ডনের উদ্দেশে বলল, ‘ছোট বলে এবারের মত তোকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু সাবধান, ভবিষ্যতে আবার ঝামেলা করলে কিন্তু শাস্তি পেতে হবে।’

আমাদেরকে শাসিয়ে নিচে নেমে গেল চাচী। শ্বাসের নিচে নিজের কপালকে দুষলাম, কিন্তু ডনকে কিছু বললাম না। আবার কোন্ বিপদে পড়ি!

ডন ভেবেছিল আমি বুঝি ভুলে বইটা ওর ঘরে ফেলে যাব। কিন্তু ওটা নিয়ে নিজের কামরায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। ক্লজিটে কাপড়ের স্তূপের নিচে লুকিয়ে রাখলাম গ্রাফিক নভেলটা।

এবার নিচে নেমে লণ্ডিরুমে গিয়ে ড্রায়ারে ভেজা কাপড় ঠাসলাম। ভেজা কাপড় ধরলে কেমন গা ঘিনঘিন করে আমার।

কিন্তু যথাসম্ভব দ্রুত কাজটা সারতে ব্যস্ত আমি, কেননা নিজের রুমে ফিরতে উদ্‌গ্রীব হয়ে রয়েছি। উযের বইটা অমোঘ আকর্ষণে টানছে যে আমাকে।

ক’মিনিট পরে, দরজা বন্ধ করে বিছানায় আমার সামনে বইটা মেলে ধরলাম। এবার পেছনের অধ্যায়গুলো বের করে পড়তে লাগলাম….

তুমি হয়তো একজন জলনায়ক। জানা খুব সোজা। বাথটাব ভরে ফেলো বরফের কিউব আর হিমশীতল পানি দিয়ে। তারপর…