৩৯
শেষ কথা
ঢাকা, ১৮৫৭
সিপাহি বিদ্রোহ শেষ হওয়ার পর …
সিপাহি বিদ্রোহের আগুন ধীরে ধীরে নিভে এসেছে পুরো মহাদেশে। ইতোমধ্যেই ভারতের মানুষের মন থেকে বিদ্রোহের স্মৃতি মুছে যেতে শুরু করেছে।
বুড়িগঙ্গা নদীর মৃদু দুলুনিতে তার চোখে সামান্য ঘুম চলে এসেছিল হঠাৎ দূরবর্তী আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। সূর্য গধূলির আলো ছড়াতে ছড়াতে ডুবে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নেমে আসছে ঢাকা নগরীর বুকে।
সে ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক কিছুই বদলে গেছে। ভারত মহাদেশ এখন কোম্পানি শাসন মুক্ত। খোদ ইরেজ সরকার এখন শাসক। ব্রিটিশ রাজ লালবাগ দুর্গে আক্রমণের পর সে বহু কষ্টে ঢাকা ছেড়ে পালায়। এখন আবার ফিরে আসছে। আলতো করে একবার নিজের কোমরে ঝোলানো জিনিসটায় হাত বুলিয়ে ওটা বের করে আনল। সেদিন মাজার প্রাঙ্গণ থেকে তুলে নেওয়া জিনিসটার ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিল তার আর সুবাদার সাহেবের তৈরি করা ম্যাপটা। এখনও ওটার ভেতরেই আছে।
ভাবতে ভাবতেই সে মৃদু হেসে ফেলল। জিনিসটার প্রতি তার একধরনের মায়া জন্মে গেছে। এই ম্যাপ এর ভেতরেই থাকবে। গত কয়েক মাসে দেশের বহু জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই রহস্যকে ধারণ করে সে একটা গোত্র তৈরি করবে যারা সময়ের বুকে এই রহস্যকে লালন করে যাবে। যেদিন এই সম্পদ এই দেশের মানুষের কাজে আসবে সেদিন তারা উন্মুক্ত করবে এটাকে।
নৌকা প্রায় ঘাটের কাছে চলে এসেছে সে সন্ধ্যার মৃদু আলোতে আলোকিত ঢাকার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল— একদিন নিশ্চয়ই সময় আসবে যেদিন এই মাটি শত্রুমুক্ত হবে। যেদিন এই মাটির মানুষ নিজের ভালোটা নিজে বুঝতে শিখবে। সেদিন নিশ্চয়ই এই সম্পদ এই মাটির মানুষের কাজে লাগবে। তার আগ পর্যন্ত যাতে এই ইতিহাস টিকে থাকে সেই ব্যবস্থা সে করে যাবে। ভাবতে ভাবতেই সে ঘাট পেরিয়ে ঢাকার রাস্তায় পা রাখল।
…