২৫শে মার্চ – ১৪

১৪

কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৫শে মার্চ, ১৯৭১
সময় : রাত প্রায় ১২টা

“শ শ শ, কোনো শব্দ না,” মনিরুজ্জামান আবু আর কবিরের দিকে ফিরে ইশারা করল। একটু আগেই তারা কার্জন হলের নিচু দেয়াল টপকে হল এলাকার ভেতরে ঢুকেছে। এখন কার্জন হলের মূল ভবনের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছে পরিস্থিতি বোঝার

নিরীহ শান্তশিষ্ট ঢাকার বুকে আগুন জ্বলছে। পুরো ক্যাম্পাস থেকেই ভেসে আসছে গুলির শব্দ আর মর্টার শেলের আওয়াজ। মনিরুজ্জামান আবু আর কবিরকে নিয়ে রেসকোর্স থেকে পালিয়ে চলে আসে উদ্যানের কিনারায়। ওখানে সবাই নিজেদের কাপড় খুলে পানি নিংড়ে নেয় যতটা সম্ভব। এরপর তারা রেসকোর্স ময়দানের কিনারায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। বেশিরভাগ শব্দ ভেসে আসছে ওদের ডান দিক থেকে, তার মানে ক্যাম্পাসের টিচার্স কোয়ার্টার, জগন্নাথ হল, ইকবাল হল এগুলোতে হামলা চালানো হচ্ছে। কার্জনের ওদিকটা মোটামুটি শান্ত।

মনিরুজ্জামান আবু আর কবিরকে নিয়ে সন্তর্পণে রাস্তা পার হয়ে কার্জনের নিচু দেয়াল টপকে প্রবেশ করল কার্জনের এলাকায়। মূল ভবনের সামনের মাঠটা দ্রুত পার হয়ে তারা চলে এলো ভবনের কাছে। এখানে এখনও কারও উপস্থিতি তেমনভাবে নজরে আসছে না।

“স্যার, এখানে কোনো ঝামেলা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না,” আবু বলল। সে দেয়ালের ওপর থেকে উঁকি দিয়ে অন্যপাশে দেখার চেষ্টা করছে। “আমরা কি সামনে এগোব?” কবির আর মনিরুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে সে জানতে চাইল।

“দাঁড়া আমার মনে হয় পরিস্থিতিটা আরেকটু ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত,” মন্তব্য করল কবির। সে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কাছে মনে হচ্ছে ওখান থেকে কিছু একটা এগিয়ে আসছে। মনিরুজ্জামান ও ওদিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কবির আবুকে একটানে নিচে বসিয়ে দিল। আর মনিরুজ্জামান চেপে ধরল তার মুখ। কার্জনের সামনের রাস্তা দিয়ে একটা বিরাট আর্মি ট্রাক চলে গেল।

“শশশশ, সাবধান। খুব সাবধানে এগোতে হবে আমাদের। কোনো অবস্থাতেই ধরা পড়া চলবে না। আমি কোনোভাবেই আরেকবার ধরা পড়তে চাই না। তোরা এখানে বস, আমি চারপাশের পরিস্থিতিটা একটু জরিপ করে আসছি। খবরদার এখান থেকে একদম নড়বি না,” বলে মনিরুজ্জামান চলে গেল।

“দোস্ত, এ কী শুরু হলো, এখন তো আমরাও ফেঁসে গেছি,” আবু কবিরের দিকে তাকিয়ে বলল।

“হুমমমম, কী আর করা। ফেঁসে যেহেতু গেছি তার মানে এর শেষ দেখতে হবে। আর মনির স্যার নিশ্চয়ই একটা না একটা কিছু করবেন।“

ওরা কথা বলতে বলতেই মনিরুজ্জামান চলে এলো। “চল এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখিনি। হয় পাকিস্তানি আর্মি এদিকে আসেনি। অথবা এসে চলে গেছে। এখন আমরা কার্জনের ভেতর দিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাব। খুব সাবধানে যেতে হবে। আর কপাল ভালো হলে হয়তো অফিসে পৌঁছে প্যাকেটটা নিয়ে নিতে পারব,” বলে সে একটু থামল।

“স্যার, প্যাকেটটা পাওয়ার পর আমরা কী করব?” কবির জানতে চাইল।

“প্যাকেটটা যদি আমার অফিসে পেয়ে যাই তবে আমরা ওখান থেকে বের হয়ে চেষ্টা করব আমার গাড়িটা উদ্ধার করার। ওটা বাংলা একাডেমির সামনেই থাকার কথা। এখন চল। আগে থেকে এতকিছু চিন্তা করে লাভ নেই। খুব সাবধানে, মনে থাকবে। কেউ কোনো শব্দ করবি না। আমার ঠিক পেছনেই থাকবি।”

ওরা সবাই মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়াল। বারান্দার দেয়াল টপকে চলে এলো ভেতরে। ভেতরে করিডর ধরে এগোল। একটু এগোতেই দেখা গেল ভেতরের কলাপসেবল গেট বন্ধ।

“হায় হায়, এখানে তো দেখি তালা মারা,” মনিরুজ্জামান অসহায়ভাবে আশেপাশে তাকাল। কেউ নেই। গার্ডদের ছায়াও নেই।

“স্যার এদিক দিয়ে যওয়া যাবে না। আমাদেরকে আবার বের হতে হবে। হয় বাম দিক দিয়ে ঢুকে মাঝখান দিয়ে এগোতে হবে, অথবা ডান দিকে দেয়ালের পাশ দিয়ে যেতে হবে,” কবির বলল।

“তাই মনে হচ্ছে। বের তো হতেই হবে। চল।”

সবাই মিলে আবার বের হয়ে এলো মূল ভবনের সামনে। “আমার মনে হয় বাম দিক দিয়ে এগোলে খুব একটা লাভ হবে না। আমাদেরকে ডান দিক দিয়ে এগোতে হবে, দেয়ালের পাশ দিয়ে। খুব সাবধানে। ওইদিকের রাস্তা ধরে সমানে মিলিটারি ট্রাক যাচ্ছে। দেখতে পেলে সোজা গুলি করে দেবে। থামের আড়াল দিয়ে এগোতে হবে। চল।”

তিনজনই মূল ভবন পার হয়ে চলে এলো গেটের কাছে। এখানে দেয়ালের পাশ ঘিরে এগোতে হবে। নিচু দেয়াল। বাইরে থেকে তাকালে ভেতরের সবকিছু সহজেই চোখে পড়ে। রাস্তা দিয়ে যখন-তখন মিলিটারি ট্রাক যাচ্ছে। কাজেই ব্যাপারটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তিনজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। “থামের আড়ালে, মনে থাকবে?” মনিরুজ্জামান দুজনকেই মনে করিয়ে দিল। কবির আর আবু দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

তিনজনই মাথা নিচু করে দেয়ালের পাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে হাঁটা দিল। চারপাশে ভীষণ অন্ধকার। অন্যান্য দিনে এই এলাকাটাতে বিভিন্ন জায়গায় বাতি জ্বালানো থাকে। আজ একটাও নেই। একটু একটু করে এগোচ্ছে তিনজন। যথাসম্ভব চেষ্টা করছে থামের আড়ালে থাকার জন্য। যদিও রাস্তায় এখনও কোনো মিলিটারি ট্রাক দেখা যায়নি। ওরা এগোচ্ছে হঠাৎ অন্ধকারের ভেতরে আবু হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। ব্যথা পেয়ে “উফফফ,” করে উঠল সে।

“কী ব্যাপার? কী হলো?” মনিরুজ্জামান তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। “বেশি ব্যথা পেয়েছিস?” উদ্‌বেগের সাথে জানতে চাইল সে। আবু জবাব দেওয়ার আগেই একটা গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখা গেল রাস্তায়। “সর্বনাশ, জলদি সরে পড়তে হবে।” মনিরুজ্জামান আর কবির মিলে কোনোমতে আবুকে টেনে নিয়ে এলো একটা থামের আড়ালে। ওদের পাশ দিয়ে রাস্তা কাঁপিয়ে ট্রাকটা চলে গেল। তিনজনই চেপে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়ল।

“হাঁটতে পারবি?” মনিরুজ্জামান ফিসফিস করে জানতে চাইল আবুর কাছে।

“পারব স্যার, তেমন ব্যথা পাইনি। হঠাৎ পড়ে যাওয়াতে চমকে গিয়েছিলাম আর কি,” আবু পায়ের গোড়ালি ডলতে ডলতে বলল।

“চল আমাদের দ্রুত যাওয়া দরকার,” বলে সে উঠে দাঁড়িয়ে রওনা দিল কার্জনের ভেতরের দিকে। আবু উঠে দাঁড়িয়ে কয়েকবার পা ঝাড়া দিয়ে তাকে অনুসরণ করল। হাঁটতে হাঁটতে তারা তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই কার্জনের ভেতরে চলে এলো। আরেকবার মিলিটারি ট্রাক যাওয়াতে থামের আড়ালে লুকিয়ে পড়তে হয়েছিল ব্যাস।

কার্জনের ভেতরে ঢুকে গলি-ঘুপচি পার হয়ে তারা চলে এলো পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কাছে। বিভাগের বাইরে একটা ছোট্ট বাল্ব জ্বলছে টিমটিম করে। সেটার আলোয় যা দেখল তা অত্যন্ত ভয়ংকর। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দারোয়ান রসুল মিয়াকে সম্ভবত প্রথমে শরীরে কয়েক দফা বেয়োনেট চার্জ করা হয়েছিল। তারপর মুখে গুলি করে তাকে মারা হয়েছে। তারপর লাশটাকে গেঁথে রাখা হয়েছে ডিপার্টমেন্টের বড় একটা কাঠের দরজার সাথে। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে বারান্দার একটা অংশ লাল রক্তের পুকুর হয়ে আছে।

লাশটাকে দেখে সাথে সাথেই তিনজন লুকিয়ে পড়ল।

“সর্বনাশ স্যার মিলিটারি কি এখানেও এসেছে নাকি?” কবির বোকার মতো প্রশ্ন করল।

“না হলে কি? তোর কি মনে হয় রসুল মিয়াঁ নিজে নিজের এই অবস্থা করেছে?”

“স্যার, এখন কী করবেন?” আবু প্রশ্ন করল।

মনিরুজ্জামান চুপচাপ ভাবছে। “মিলিটারি যদি এসেও থাকে আমার ধারণা এখন তারা আর এখানে নেই। কারণ কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। কোনো নড়াচড়াও টের পাওয়া যাচ্ছে না। তার মানে ওরা অনেক আগেই এসে চলে গেছে।”

“স্যার, যদি ওরা আমাদের জন্য ওত পেতে থাকে?”

“সেটার সম্ভবনা একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এত ধৈর্য ওরা ধরবে বলে মনে হয় না।”

“তাহলে কি আমরা ভেতরে ঢুকব?”

“সেটাই তো করা উচিত। কিন্তু আমার মনে বাজছে অন্য কথা। যদি ওরা এসেই থাকে তবে তো জিনিসটা নিয়েই গেছে,” বলে সে একটু চুপচাপ ভাবল। “রিস্ক আমাদের নিতেই হবে। রিস্ক নিয়ে হলেও চেক করে দেখতে হবে আসলেই ওরা জিনিসটা নিয়ে গেছে নাকি ওটা এখনও ওখানেই আছে। চেক করা ছাড়া উপায় নেই।”

“স্যার, তাহলে কীভাবে ঢুকবেন? আর অন্য আরেকটা দারোয়ান আছে না? ওই লোকটা কই?”

“হ্যাঁ সোহেল। রসুল মিয়ার ভাগনে না কী যেন হয়। কম বয়স্ক একটা ছেলে। ওই ব্যাটা হয়তো বিপদ বুঝে পালিয়েছে। শোন,” বলে সে আবু আর কবিরের দিকে তাকাল। “তোরা এখানেই বসবি। আমি পেছন দিকে যাব। ওখান থেকে উঁকি দিয়ে দেখব পরিস্থিতি কী? যদি কেউ না থাকে তবে আমি শিস দিয়ে ডাকব। বুঝেছিস?”

“জি, স্যার,” দুজনেই মাথা নাড়ল। ওদরেকে পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিয়ে মনিরুজ্জামান উঠে চলে গেল। দুজনেই চুপচাপ বসে রইল শিসের আওয়াজের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পরে শিসের আওয়াজ নয় মনিরুজ্জামান নিজেই চলে এলো।

“স্যার, কী খবর?”

“কেউ নেই। আমার মনে হয় মিলিটারি এখানে অপারেশন চালিয়ে চলে গেছে। চল আমরা ভেতরে যাব। যদিও কেউ নেই তবুও আমরা সাবধান থাকব।”

তিনজনই রওনা দিল ডিপার্টমেন্টের দিকে। রসুল মিয়ার লাশটার সামনে এসে দাঁড়াল। বুড়ো মানুষটা মৃত্যুর আগে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছে। “ধর লাশটাকে নামাব আমরা।” তিনজনে মিলে সাবধানে ধরে লাশটাকে নামিয়ে মেঝেতে শুইয়ে দিল। মনিরুজ্জামান বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে পড়তে মৃতের চোখ দুটো বন্ধ করে দিল।

লাশটাকে একটা পর্দা দিয়ে ঢেকে ওরা ডিপার্টমেন্টের ভেতরের দিকে এগোল। পুরো ডিপার্টমেন্টকে ইচ্ছেমতো লন্ডভন্ড করা হয়েছে। আসবাব থেকে শুরু করে দেয়ালের ঘড়িগুলো পর্যন্ত আছড়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে মনিরুজ্জামান একটা ল্যাবের সামান্য খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেল।

দরজাটা হালকা করে খুলে উঁকি দিল ভেতরে। দেখার মতো কিছু আর অবশিষ্ট নেই। প্রতিটা জিনিস আক্ষরিক অর্থেই গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলা হয়েছে। এই ল্যাবটা সে নিজের হাতে গড়ে তুলেছিল। কত জায়গায় জায়গায় ধরনা দিতে হয়েছে তাকে এই ল্যাবটা গড়ে তুলতে, কত কষ্ট করতে হয়েছে একমাত্র সে-ই জানে। মুখ অন্ধকার করে সে ল্যাবটা থেকে বেরিয়ে এলো। “চল।”

করিডর পার হয়ে নিজের রুমের সামনে চলে এলো মনিরুজ্জামান। রুমের দরজা হালকা খোলা, ভেতরে লাইট জ্বলছে। দরজাটা আস্তে ধাক্কা দিল। ভেতরে কেউ নেই। হালকা পায়ে সাবধানে সে ভেতরে ঢুকল। তার পেছন পেছন আবু আর কবির।

ভেতরে ঢুকে আবু মৃদু শিস দিয়ে উঠল। কোনো সন্দেহ নেই এই রুমটাই ছিল মিলিটারিদের প্রথম লক্ষ্য। রুমটা পুরো লন্ডভন্ড হয়ে আছে। প্রতিটা ড্রয়ার বের করে জিনিসপত্র নিচে নামানো হয়েছে। দেয়ালের র‍্যাক থেকে সমস্ত বই মাটিতে পড়ে আছে। এককথায় পুরো রুমটা একটা ধ্বংসস্তূপ।

মনিরুজ্জামান এগিয়ে গেল একটা ফাইল ক্যাবিনেটের দিকে। ওটার ড্রয়ারগুলো এখনও ভেতরেই আছে। খুলে দেখল কিছু নেই ভেতরে। “এখানে আমার বেশিরভাগ দরকারি কাগজপত্র রাখা থাকত। নেই।”

“স্যার তাহলে তো নারায়ণ ব্যানার্জির পাঠানো জিনিসটাও ওরা নিয়ে গেছে,” কবির বলল। “কিন্তু যদি আমরা অসার অনেক আগেই ওটা ওদের হাতে পড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ব্যাটারা আমাদের পিছু নিল কেন?”

মনিরুজ্জামান চুপচাপ ভাবল। “হতে পারে আমাদের পিছু নেওয়ার পর জিনিসটা ওদের হাতে পড়েছে। যদিও কোনো সম্ভবনা নেই তবুও আমরা রুমটা একবার চেক করব। আমি এগুলো দেখছি,” সে টেবিল আর র‍্যাকগুলো দেখল। “আর তোরা দুজনে দুদিক থেকে খুঁজে দেখবি। নারায়ণ ব্যানার্জির পাঠানো জিনিসটা একটা বাক্সের মতো হতে পারে। শুরু কর।”

তিনজন তিনদিকে ছড়িয়ে পড়ে খোঁজা শুরু করল। আধা ঘণ্টা ধরে পশ্রম করার পরও কিছুই পেল না।

“নাহ নেই,” মনিরুজ্জামান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল। “এখানে কিছুই নেই। চল আমাদের এখান থেকে বেরোনো উচিত।”

সবাই মিলে বেরিয়ে এলো করিডরে। “স্যার, এখন কী করবেন?” মনিরুজ্জামান কোনো জবাব দিল না। ভাবছে আসলেই কী করা উচিত। ওরা ল্যাবের সামনে দিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ কবির থেমে গেল।

“কী ব্যাপার? থামলি কেন?”

“স্যার, ল্যাবে আপনার একটা আলমারি আছে না। আপনার অনেক জিনিসপত্র তো ওখানে রাখা থাকে। যদিও সম্ভবনা কম তবুও একবার দেখলে কেমন হয়। আলমারিটা তো অনেক শক্ত। হয়তো ব্যাটারা ওটা ভেঙে দেখেনি।”

“দেখা যেতে পারে। তবে ওটা ভাঙতে না পারলেও কোনো লাভ নেই। কারণ ওটার চাবি একমাত্র আমার কাছে থাকে। আর নারায়ণ ব্যানার্জি প্যাকেটটা পাঠিয়েছে আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর। কাজেই জিনিসটা ওটাতে ঢোকানোর কোনো সুযোগ নেই,” বলে সে একটু থামল। “তবুও আমি ল্যাবের ভেতরে একবার দেখতে চাই।”

ল্যাবের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল সবাই। কবির লাইট জ্বেলে দিল ভেতরে। ল্যাবের ধ্বংসস্তূপ পার হয়ে চলে এলো পেছন দিকে।

“ফুউউউ,” মনিরুজ্জামান মুখ দিয়ে শব্দ করে বাতাস ছাড়ল। আলমারিটা হাঁ হয়ে খুলে আছে। ভেতরে একটা কাগজের টুকরোও নেই। “চল এখানে আর থাকার কোনো মানে নেই।”

“শালারা স্টিলের আলমারিও ছাড়েনি,” আবু বিড়বিড় করে বলল।

তিনজনই বেরিয়ে আসবে হঠাৎ থেমে গেল মনিরুজ্জামান। কিছু একটা শুনতে পেয়েছে সে। “স্যার?” কবির কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল মনিরুজ্জামান হাতের ইশারায় থামিয়ে দিল তাকে। সে নিশ্চিত হতে চাইছে আসলেই কিছু শুনেছে নাকি মনের ভুল। আবার খচমচ করে উঠল কিছু একটা। এবার তিনজনেই শুনতে পেল।

আবু হাতের ইশারায় দেখাল একটা ছোট দরজার দিকে। ওটা ল্যাবের একপাশে অনেকটা কাবার্ডের মতো ছোট্ট একটা রুম। ওটাতে সাধারণত ঝাড়ু, বাস্কেট এইসব হাবিজাবি সহ ল্যাবের বিভিন্ন টুকিটাকি জিনিসপত্র রাখা থাকে।

ওখানে কেউ আছে.” মনিরুজ্জামান ফিসফিস করে বলল। কবির মাটি থেকে একটা লাঠির মতো জিনিস তুলে নিল। আবু একটা মোটা ঝাড়ু তুলে নিয়ে উলটো করে ধরল। প্রয়োজনে ওটা দিয়ে আঘাত করা যাবে। দুজন দরজাটার দুপাশে দাঁড়াতেই মনিরুজ্জামান একটানে দরজাটা খুলে ফেলল।

ভেতর থেকে কেউ একজন প্রায় তার গায়ের ওপরে পড়ে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *