দ্য অ্যামিটিভিল হরর – ৫

পঞ্চম অধ্যায় 

২৩ ডিসেম্বর। 

ভাঙা দরজাটা টানাহ্যাঁচড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ক্যাথির। ঘরের ভেতর রীতিমতো কনকনে ঠান্ডা! “কোনো জানালা খোলা রয়ে গেছে না কি?” আপনমনেই বলে উঠল ক্যাথি। নিচতলা থেকে তখনও শব্দ আসছে। কোনোমতে ড্রেসিং গাউনটা গায়ে জড়িয়ে ত্রস্ত পায়ে নিচে নেমে এসে ও দেখে জর্জ বিশাল দরজাটাকে আবার ফ্রেমে ঢোকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

“কী হলো গো?” বলে উঠল সে। 

“জানি না, নিচে নেমে দেখি এটা খোলা, একটা কবজার সাথে ঝুলছে!” দরজাটাকে কোনোমতে ফ্রেমে আটকে দিয়ে ঘুরে তাকাল সে। তারপর তালা লাগানোর পিতলের প্লেটটা দেখাল ক্যাথিকে, “এই দেখো, এটা ধরে কেউ প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকিয়েছে! দরজার হাতলটাও একেবারে মোচড় দিয়ে বাঁকিয়ে ফেলেছে! হাতলের সাথের প্লেটটাও বাঁকিয়ে উপরে ফেলেছে… বুঝলে? হাত দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব না। কেউ বিশেষ কোনো যন্ত্র দিয়েই করেছে। আর কাজটা করা হয়েছে বাড়ির ভেতর থেকে!” 

“তারমানে কেউ বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেনি? বরং ভেতর থেকে বাইরে যেতে চেয়েছে! হে ঈশ্বর!” আঁতকে উঠল ক্যাথি। 

“এই বাড়িতে যে আসলে কী হচ্ছে তা আমার মাথায় ঢুকছে না!” আপনমনেই বলে উঠল জর্জ, “ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমি ভালো করে বাড়ির সব দরজা-জানালা বন্ধ করেছি। আর কেউ যদি ভিতর থেকে বাইরে বেরোতে চায়… তাহলে এই দরজার হাতল ঘোরালেই খুলে যাবে! এভাবে দরজা ভেঙে বের হওয়ার কী দরকার?” 

“বাইরের অবস্থাও কি একই?” জর্জের কাঁধে হাত রাখল ক্যাথি. 

“নাহ,” মাথা নাড়ল জর্জ, “বাইরের হাতল আর প্লেট ঠিক আছে। আমার মাথায় ঘুরছে অন্য ব্যাপার। একটা জিনিস ভেবেছ? এত ভারী আর শক্ত দরজা এভাবে ভেঙে বেরোতে কী পরিমাণ অমানুষিক শক্তির দরকার? বাবারে বাবা… ভেঙে রীতিমতো কবজার সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছে…” 

“হয়তো বাতাসের কারণে এমন হয়েছে?” কুটো ধরে বাঁচতে চাইল ক্যাথি, “এলাকাটা সাগরের কাছে, কী জোরে বাতাস হচ্ছে দেখছ?” 

“আরে ধুর,” খেঁকিয়ে উঠল জর্জ, “ঘূর্ণিঝড় হলেও একটা কথা ছিল। এইটুকু বাতাসে ছোটো চারাগাছেরও ক্ষতি হবে না। সেখানে এত মজবুত দরজা? এটা নিশ্চিত ভাবেই মানুষ বা… অন্য কিছুর কাজ।” 

কিছুক্ষণ চুপচাপ একে অপরের দিকে চেয়ে রইল ওরা। “আরে! বাচ্চারা…’ এই বলে দোতালার দিকে ছুটল ক্যাথি। মিসির শোবার ঘরে যেতে হবে! 

ছোট্ট একটা ইয়োগি বিয়ার টেবিল ল্যাম্প রাখা ছিল মিসির পায়ের কাছে। সারারাতই জ্বলে ওটা। 

সেটার ক্ষীণ আলোয় ক্যাথি দেখল যে মিসি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।

“মিসি,” একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে ডাকলো ক্যাথি। কেমন যেন ফুঁপিয়ে উঠল মিসি, তারপর উঠে চিত হয়ে ঘুমাল। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল ক্যাথি, তারপর চাদরটা তুলে মিসির গলা পর্যন্ত ঢেকে দিলো সে। সদর দরজা দিয়ে হাওয়া ঢুকে পুরো বাড়িটাকে একেবারে হিমশীতল করে তুলেছে। মিসির কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে, তিন তলায় ছেলেদের শোবার ঘরও দেখতে হবে। 

ড্যানি আর ক্রিসও অঘোরে ঘুমাচ্ছিল, কিন্তু দু’জনেই… উপুড় হয়ে! 

এই প্রসঙ্গে ক্যাথি পরে আমাদের বলেছিল, “ব্যাপারটা অদ্ভুত, বুঝলেন? এর আগে কখনোই আমার বাচ্চাদের ওভাবে উপুড় হয়ে ঘুমাতে দেখিনি… তা-ও আবার তিন জন একইসাথে! ভেবেছিলাম সকালবেলায় জর্জকে ব্যাপারটা বলব… কিন্তু কেন যেন আর বলা হয়নি!” 

পরেরদিন সকালেও বেশ খানিকটা সময় কনকনে ঠান্ডা ঘিরে রইল অ্যামিটিভিলকে। একটু বেলা হতেই জর্জ ফায়ারপ্লেসের আগুন জ্বালিয়ে দিলো, একগাদা কাঠ এনে ঢুকিয়ে দিলো সেখানে। আকাশটা বেজায় মেঘলা, রেডিয়োর আবহাওয়া বার্তাতে বারবার বলা হচ্ছিল যে এবার বড়োদিনে বরফ পড়বেই। ধীরে ধীরে ফায়ারপ্লেসের তাপে গরম হয়ে উঠল বাড়িটা। থার্মোস্টাটে তাপমাত্রা দেখাল আশি ডিগ্রি। কিন্তু জর্জের তখনও ঠান্ডা লাগছে! বসার ঘরের ফায়ারপ্লেসে একের পর এক কাঠ গুঁজে দিতে লাগল সে। 

“অনেক তো হলো জর্জ, আর কত কাঠ দেবে?” বলে উঠল ক্যাথি। 

“আরে কী বলো,” রেগে গেল জর্জ, “কী অসহ্য ঠান্ডা! আমার অবাক লাগছে… তোমারও ঠান্ডা লাগছে না… বাচ্চাদেরও না! তাহলে কি এই বাড়িতে শুধু আমারই ঠান্ডা লাগে? “ 

জর্জ ভেবেছিল যে সদর দরজাটা ও নিজেই মেরামত করতে পারবে। কিন্তু বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে বুঝল যে এই কাজে তাকে দিয়ে সম্ভব না। বাধ্য হয়ে স্থানীয় এক তালার মিস্ত্রিকে ফোন করা হলো। লোকটা জানাল সে বেলা বারোটায় আসবে। সময়মতোই এলো সে। বেশ অনেকক্ষণ ধরে দরজার ভেতরের দিকটা পরীক্ষা করল সে, তারপর কয়েক মুহূর্ত অবাক চোখে জর্জের দিকে চেয়ে রইল। জর্জ ভেবেছিল কী করে এমনটা হলো সেই ব্যাপারে জানতে চাইবে লোকটা, কিন্তু তেমন কোনো প্রশ্নই করল না সে। 

চুপচাপ সবকিছু মেরামত করল সে, বেশ দ্রুতই হয়ে গেল কাজটা। 

যাওয়র আগে সে জর্জকে বলল, “কয়েক বছর আগে ডিফেওরাও আমাকে এমনই এক সমস্যার জন্য ডেকেছিল।” 

“কেন ডেকেছিল?” চমকে উঠল জর্জ। 

“আপনাদের বাড়ির পিছনে নৌকা রাখার ছাউনি আছে না? ওটার তালাতে সমস্যা হয়েছিল। একবার ভিতর থেকে ওদের একজন ওখানে ঢুকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল… তারপর আর দরজা খুলছিল না! আমি এসে দেখি ঝামেলা বেশ জটিল… অবশেষে তালাটাই বদলে দিয়েছিলাম।” 

“আচ্ছা, ওই নৌকা রাখার জায়গাটা…” কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল জর্জ। 

“জর্জ,” ওর কাঁধে হাত রাখল ক্যাথি, তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করল। থেমে গেল জর্জ। ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটা নিয়ে আবার পুরো অ্যামিটিভিলে কোনো অদ্ভুত ঘটনা রটে গেলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না। 

বেলা দুটোর দিকে বাইরের পরিবেশ বেশ খানিকটা উষ্ণ হয়ে এলো, কিন্তু টিপ টিপ বৃষ্টির কারণে বাচ্চারা হ্যারির সাথে বাইরে বেরোতে পারল না। জর্জ সেদিনও অফিসে গেল না। কখনও ফায়ারপ্লেসে কাঠ গুঁজে দিচ্ছিল, তো কখনও বেসমেন্টে যাচ্ছিল। ড্যানি আর ক্রিস তিন তলার খেলার ঘরে হুটোপুটি শুরু করে দিলো, ওদের খেলনাগুলোর শব্দে আজ জর্জকে একেবারেই বিরক্ত মনে হলো না। ক্যাথি ব্যস্ত বাড়িঘর পরিষ্কার করতে। নিচতলার আলমারিগুলোর তাকের কাগজ পালটে দোতালায় নিজেদের শোবার ঘরে যাওয়ার আগে মিসির ঘরে উঁকি দিলো সে। জানালার পাশে নিজের ছোট্ট দোলখাওয়া চেয়ারে বসে মেয়েটা গুনগুনিয়ে গান গাইছে… ওর দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে নৌকা রাখার ছাউনিটার দিকে। 

মিসিকে ডাকতে যাবে ক্যাথি ঠিক তখনই ওদের বাড়ির ফোনটা বেজে উঠল শোবার ঘরে গিয়ে ফোনটা ধরল সে। ওর মা ফোন দিয়েছিলেন। আগামীকাল তিনি অ্যামিটিভিলে আসবেন, ক্রিসমাসের আগের সন্ধ্যাটা মেয়ে-জামাই আর নাতি- নাতনিদের সাথে কাটানোর ইচ্ছা ভদ্রমহিলার। ক্যাথির ভাই জিমিও আসছে সাথে, ওদের জন্য বেশ বড়ো একটা ক্রিসমাস ট্রি আনছে সে। 

“ওহ মা,” হাঁপ ছেড়ে বাঁচল ক্যাথি, “জিমি আমাকে রীতিমতো বাঁচিয়ে দিলো। যাক, ক্রিসমাস ট্রির ব্যবস্থা তো হলো! বাড়ি পরিষ্কার করতেই ব্যস্ত দিন যাচ্ছে আমার। জর্জ… ওর শরীরটাও ভালো নেই! তাই তেমন বাজার করাই হয়নি।” 

“আরে নতুন বাড়িতে এমনটা হয়ই,” হেসে উঠলেন ক্যাথির মা, “জিমির অনেকদিনের ইচ্ছা, নতুন বাড়িতে ওঠা উপলক্ষে তোমাকে কিছু দেবে… তা সামনে বড়োদিন, তাই আমি এটাই দিতে বললাম।” 

মায়ের কথা শুনতে শুনতেই ক্যাথি আড়চোখে খেয়াল করল যে মিসি ওর ঘর থেকে বেরিয়ে হালকা সুরে গান গাইতে গাইতে সেলাইঘরের দিকে গেল! কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গেল সে, ওপাশ থেকে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছিলেন ওর মা, কিন্তু ক্যাথির কানে কিছুই ঢুকছে না। ওই ঘরে মিসির কী কাজ? ওখানকার জানালাতেই না গতকাল মাছিগুলো জড়ো হয়েছিল? ঘরটা থেকে মিসির কণ্ঠ ভেসে আসছে, এখনও গান করছে মেয়েটা। হুট করে একটা শব্দ হলো, সম্ভবত কার্ডবোর্ডের কোনো বাক্সের সাথে ধাক্কা লেগেছে মিসির। পাঁচ বছর বয়সি একটা মেয়ে সেলাইঘরে কেন যাবে? 

ক্যাথি ভাবছিল মায়ের সাথে কথা শেষ করে ওই ঘরে যাবে, ঠিক তখনই মিসি বেরিয়ে এলো। বারান্দাতে খানিকটা ঘুরঘুর করে আবার নিজের ঘরে চলে গেল ও। আর গান করছে না সে। মেয়ের এহেন ব্যবহারে রীতিমতো অবাক হলো ক্যাথি! 

“শোনো মা, একটু কাজ পড়ে গেছে, বুঝলে?” আস্তে করে বলল ক্যাথি, “জিমিকে অনেক ধন্যবাদ ক্রিসমাস ট্রির জন্য,” এই বলে ফোনটা রেখে দিলো সে। ধীরে ধীরে মিসির ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। 

মিসি দোল খাওয়া চেয়ারটায় বসে আবার গুনগুন করে গান শুরু করেছে, নজর এখনও সেই ছাউনির দিকে। গানের সুরটা কেমন অপরিচিত ঠেকল ক্যাথির! সে কখনও এই গান শোনেনি… মিসি কোথায় শুনল? প্রশ্নটা মিসিকেই করতে যাচ্ছিল সে, ঠিক তখনই ঘাড় না ঘুরিয়ে মিসি জিজ্ঞাসা করল, “মা, দেবদূতেরা কি কথা বলে?” 

অবাক হয়ে কিছুক্ষণ মিসির দিকে চেয়ে রইল ক্যাথি! ঘাড় না ঘুরিয়েই কী করে মিসি বুঝল যে ক্যাথি দরজায় দাঁড়িয়ে? ক্যাথি ঘরে ঢুকতে যাবে তার আগেই ওপরতলা থেকে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ এলো! ওখানে তো ড্যানি আর ক্রিস আছে! ভয় পেয়ে সাথে সাথে ওপরে ছুটল ক্যাথি। ছেলেদের খেলাঘরের সামনে গিয়ে রীতিমতো হতবাক হয়ে গেল সে! ড্যানি আর ক্রিস মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে রীতিমতো… ক্রমাগত লাথি, ঘুসি আর কিল মেরে চলেছে একে অপরকে! 

“আরে আরে, কী হচ্ছে এখানে?” চিৎকার করে উঠল ক্যাথি, “ড্যানি, ক্রিস এখনই থামো… আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না তোমরা!” বাধ্য হয়ে নিজেই এগিয়ে এসে ওদের ছাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু কাজ হলো না। দুই ভাই রীতিমতো ফুঁসছে, রাগে জ্বলছে ওদের চোখ! এর আগে কখনোই ওদের এভাবে মারামারি করতে দেখেনি ক্যাথি… এই প্রথম! 

বাধ্য হয়ে দু’জনের গালে দুটো কষে চড় দিলো ক্যাথি, তবে গিয়ে থামল বাচ্চাদুটো।

“কী সমস্যা হুম?” গর্জে উঠল ক্যাথি, “কী হয়েছিল?” 

“ড্যানি আমাকে আগে মেরেছে,” ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল ক্রিস।

“ওরে মিথ্যুক,” খেঁকিয়ে উঠল ড্যানি, “ও আমাকে আগে মেরেছে!” 

“আহ, বন্ধ করো এসব,” গলা চড়িয়ে বলল ক্যাথি “কী নিয়ে মারামারি করছিলে তোমরা?” কেউ কোনো উত্তর দিলো না। মায়ের কাছ থেকে খানিকটা সরে দাঁড়াল দুই ভাই। ক্যাথি বুঝতে পারল, ব্যাপারটা ওকে খুলে বলতে চাইছে না ওরা! 

হুট করেই মাথাটা গরম হয়ে গেল তার, “কী শুরু করেছো তোমরা সবাই? প্রথমে মিসি বলল ওর সাথে কোন দেবদূত না-কি কথা বলেছে! আর এখন এই দুই পাজি কোনো কারণ ছাড়াই মারামারি করছে! আর নিতে পারছি না আমি। হু হু, দাঁড়াও তোমাদের বাবাকে সব খুলে বলছি। সে-ই তোমাদের ভালো করে সব ‘বুঝিয়ে’ দেবে। আর টু শব্দটাও আমি শুনতে যেন না পাই? ঠিক আছে? আমার কথা বুঝেছ? আর কোনো চেঁচামেচি নয়!” 

রাগে কাঁপতে কাঁপতে দোতালায় নেমে এলো ক্যাথি। “নাহ, বেশি মাথা গরম করা যাবে না,” নিজেই নিজেকে বোঝাল সে, “বাচ্চারা একটু-আধটু অমন করবেই।” মিসির ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সে খেয়াল করল মেয়েটা তখনও সেই অদ্ভুত সুরটা গুনগুন করছে। একবার ভাবল ভেতরে ঢুকবে, তারপর আর ঢুকল না। এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানো যাবে না। জর্জকে খুলে বলতে হবে সবকিছু, তারপর ওর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। 

নিজেদের শোবার ঘরে ঢুকে কাগজের একটা রোল হাতে নিল ক্যাথি, তারপর দেওয়াল আলমারিটার একটা পাল্লা খুলল। সাথে সাথে ভক করে একটা টক-টক গন্ধ এসে লাগল ওর নাকে। বাতি জ্বালাবার তারটা টানল সে, আলোকিত হয়ে উঠল পুরো আলমারি। কোথাও কোনো পচা জিনিস নেই! পুরো আলমারিটা ফাঁকা, শুধু একটা জিনিস ঝোলানো রয়েছে দেওয়ালে। বাড়িতে ওঠার দিন নিজের হাতেই ও ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তিটা ঝুলিয়ে দিয়েছিল আলমারির দেওয়ালে। ডিয়ার পার্কের বাড়িতেও শোবার ঘরের দেওয়াল আলমারিতে ওটা ছিল। ওদের বিয়েতে এক বন্ধু ওটা উপহার দিয়েছিল। রূপার তৈরি মূর্তিটা প্রায় বারো ইঞ্চি লম্বা। ক্যাথি বিশ্বাস করে যে শোবার ঘরে ওটা থাকলে স্বয়ং যিশুর নেকনজর সর্বদা ওদের ওপর থাকে। 

আরে মূর্তিটাতে অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার আছে না? 

ভালো করে খেয়াল করতেই আতঙ্কে ওর চোখ দুটো প্রায় ঠেলে বেরিয়ে আসার অবস্থা হলো! উলটো হয়ে ঝুলছে মূর্তিটা! উলটা ক্রুশ[৭]… এ তো কোনো শুভ লক্ষণ হতে পারে না! টক টক গন্ধটায় রীতিমতো দম বন্ধ হয়ে এলো ক্যাথির, কিন্তু মূর্তিটার ওপর নজর যেন আটকে গেছে ওর। 

[৭. ইনভার্টেড ক্রুশ বা উলটা ক্রুশ। মূলত এটির নাম ক্রুশ অফ সেইন্ট পিটার, এটি একটি লাতিন ক্রুশ। তবে বিংশ শতকের শুরু থেকে হুট করেই এই ক্রুশটিকে খ্রিষ্টবিরোধীতা এবং শয়তানের প্রতীক হিসেবে দেখানো শুরু হয়। ১৯৬০ সালের পর এই চর্চা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ব্ল্যাক ও ডেথ মেটাল মিউজিশিয়ানদের মধ্যে এই ক্রুশটির ব্যবহার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *