দ্য অ্যামিটিভিল হরর – ২৫

পঞ্চবিংশ অধ্যায় 

লুৎজরা যখন বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, সেই সময় ফাদার ম্যানকুসো ঠিক করলেন যে তিনি কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও ঘুরতে যাবেন। 

সকাল এগারোটার দিকে নিজের চাচাতো ভাইকে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। লোকটা সানফ্রান্সিসকোতে থাকে, ওখানে এখন সকাল আটটা বাজে। এর আগে ফোন করে তাকে বিরক্ত করতে চাননি ফাদার। 

ফোন ধরল ফাদারের চাচাতো ভাই। ফাদার তাকে জানালেন যে তিনি কয়েকদিনের জন্য ছুটি কাটাতে আসতে চান। ১৬ তারিখ, শুক্রবার রওনা দেবেন। ফোনটা রেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন তিনি। কোথাও থেকে ঘুরে আসাটা খুবই দরকার ছিল তার। 

ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়া এই সময়ে বেশ ভালো থাকে। একটা সপ্তাহ ওখানে কাটালে শরীর অনেকটাই ভালো হবে। চুলায় যাক ওশান অ্যানিউয়ের সেই ভূতুড়ে বাড়ি, নিউইয়র্কের এই বাজে আবহাওয়াতে ভূতগুলো মরেও না! ওহ, ভূতদের তো আবার মৃত্যু নেই। 

রেক্টরির অফিসে ফোন করে ছুটির আবেদন জানালেন তিনি, কিছুক্ষণ পর তাকে জানানো হলে যে প্রধান যাজক ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করেছেন, এই সময়ে ফাদারের সাথে দেখা করতে কেউ এলে তাকে অফিস থেকে সব জানিয়ে দেওয়া হবে। ফাদারের আর কাউকে ফোন করে কিছু জানানোর দরকার নেই। 

খুশি হয়ে উঠলেন ম্যানকুসো। শেষবারের মতো ফাইলগুলো দেখে জিনিসপত্র গোছানোতে মন দিলেন তিনি। ওশান অ্যাভিনিউয়ের বাড়িটার কথা তেমন মনেই পড়ল না। কিন্তু বিকাল চারটার দিকে জর্জ লুৎজের ফোন এলো। 

“ফাদার, আমরা এখন সবাই ইস্ট ব্যাবিলনে। বাড়িটার ওপর সম্পূর্ণ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্যাথির মায়ের বাসাতেই সবাই থাকব। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, “ ক্লান্ত কণ্ঠে বলল জর্জ। 

“বেশ বেশ,” হাসলেন ফাদার, “কিন্তু শোনো, যাকে তাকে তোমাদের ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দিয়ো না। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমকে তো চেনোই… এরা একবার কোনো খবর পেলে সেটাকে ফলাও করে প্রচার করে।” 

“হ্যাঁ হ্যাঁ, তা আর বলতে। তাছাড়া যাকে তাকে এমনিতেও ঢুকতে দিতে পারি না, আমাদের সব জিনিসপত্র তো ওখানেই রেখে এসেছি।” 

“বাহ বাহ, নর্থ ক্যারোলাইনার ওই প্রতিষ্ঠানের লোকেরা এসে দেখে যাক। ওরা কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেবে আমি নিশ্চিত!” 

“হুম, ফাদার… একটা কথা বলি? যদি ওরা কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারে? তবে? গতরাতে আমি যা দেখেছি! তারপর মনে হচ্ছে না বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা আছে এসবের! তারপর? ওরা ব্যর্থ হলে কী হবে?” 

“গতরাতে মানে? তোমরা কাল রাতেও ওখানে ছিলে না কি? সকালেই না চলে যাওয়ার কথা ছিল?”

কিছুক্ষণ চুপ করে রইল জর্জ, তারপর বলল, “আসলে কাল দিনের বেলা আমরা অনেক চেষ্টা করেও বাড়ি ছাড়তে পারিনি… আমাদেরকে আটকে রেখেছিল… আজ সকালে অনেক কষ্ট করে বেরিয়ে এসেছি! পালিয়ে এসেছি বলতে পারেন।” 

“আহা…” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ফাদার, তখনই ওনার হাতের তালু চুলকাতে শুরু করল! অবাক হয়ে সেদিকে তাকালেন ফাদার… ফোসকাগুলো আবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে! সাথে সাথে ফোনটা রেখে দিলেন তিনি। প্রচণ্ড বমি পাচ্ছে ফাদারের… “হে ঈশ্বর! না… আর না!” কেঁদে ফেললেন তিনি। 

***

কিন্তু হাতের ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে লাগল। “মাফ করে দাও আমায়, ‘ পায়চারি করতে লাগলেন ফাদার, “আমি আর কখনও জর্জের সাথে কথা বলব না!” 

ওদিকে জর্জ তো অবাক! হুট করে ফোন রেখে কেন দিলেন ফাদার? কোনো কারণে রাগ করেছেন না কি? নাহ, ওনার তো খুশি হওয়া উচিত! ওরা বাড়িটা ছেড়ে এসেছে। “কী আর বলব,” রিসিভারটা রেখে দিলো সে। 

“বাবা,” ওর পাশে এসে দাঁড়াল মিসি, “তুমি না জোড়িকে আঁকতে বলেছিলে? এই দেখো এঁকেছি!” 

জর্জ দেখল মিসির হাতে একটা কাগজ। 

“ওহ তাই, দাও তো দেখি… জোডি দেখতে কেমন,” কাগজটা নিল সে। 

বেশ ভালো করেই ছবিটা এঁকেছে মিসি। পাঁচ বছর বয়সি একটা বাচ্চার পক্ষে এর চেয়ে ভালো ছবি আঁকা সম্ভব নয়। ছবিতে আঁকা শুয়োরটার মুখ কেমন যেন বিকৃত আর আশপাশে মেঘের মতো কীসব যেন। 

“এগুলো কী মিসি?” বলল জর্জ, “মেঘ না কি? 

“নাহ, ওগুলো বরফ, জোডি যখন বরফের মধ্যে দৌড়ায়… তখন এমনই দেখায় ওকে!” 

*** 

রাত ন’টার দিকেই সান ফ্রান্সিসকোর বিমানে উঠে পড়েন ফাদার ম্যানকুসো। 

সকালে হাতদুটো বেশ ভুগিয়েছে তাকে, প্রায় একঘণ্টা পর চুলকানি কমে সাথে সাথে আবার সেই চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে ফোন করেন তিনি, এবার ফোন ধরে ভাইয়ের বউ। তাকে ফাদার জানিয়ে দেন যে রাতের বিমানেই উনি রওনা দিচ্ছেন। মহিলা জানান যে যথাসময়ে তিনি এয়ারপোর্টে চলে আসবেন। 

হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন ফাদার। লং আইল্যান্ড থেকে যত দূরে যাওয়া যায়, ততই ভালো। 

এরপর ফাদার নিজের মাকে ফোন করে সব জানালেন। ফাইলগুলো রেক্টরির অফিসে জমা করে দিলেন। রাত আটটার মধ্যে একটা ট্যাক্সি নিয়ে কেনেডি বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। বিমানে ওঠার একটু আগে নিজের হাতের তালুর দিকে দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালেন তিনি… নাহ্, কোনো ফোসকা নেই। থেকে গেছে শুধু ফাদারের মনের গহীনের আতঙ্ক। 

*** 

ওদিকে জর্জদের আসার খবর পেয়ে জিমি আর ক্যারিও বেড়াতে এলো। বেশ মজা করল ওরা সবাই মিলে। জর্জ আর ক্যাথিও একটু বেশিই মদ খেয়ে ফেলল। খুব ভালো লাগছিল ওদের, ওশান অ্যাভিনিউয়ের ওই বাড়িটা থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ। 

বাড়িটার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলতে লাগল ওরা। কিছুই বাদ দিলো না। ক্যারি তো ভয় পেয়ে গেল রীতিমতো, সে আগেই ধারণা করেছিল বাড়িটাতে সমস্যা আছে! সব শেষে জর্জ বলল, “খুব তাড়াতাড়ি নর্থ ক্যারোলাইনার একটি সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা আসছে। ওকে এখানে আসতে বলে দিয়েছি, আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে যা ইচ্ছা করুক… আমি বা ক্যাথি, কেউই আর ওই বাড়িতে যাব না!” 

কিছুক্ষণ পর জিমি আর ক্যারি চলে গেল। কিছুদিন হলো নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছে ওরা। 

জিমি যে ঘরে ঘুমাত সেখানে ঘুমাতে চলে গেল ড্যানি, ক্রিস আর মিসি। বেজায় ক্লান্ত হয়েছিল ছেলেদুটো। অমন ভয়ংকর জিনিস দেখা… তারপর আবার পালিয়ে আসা… অনেক বড়ো মানসিক চাপের কাজ। জর্জেরই অবস্থা খারাপ, সেখানে ওরা তো বাচ্চা। কিন্তু একটা জিনিস নিয়ে বেশ বিরক্ত জর্জ… এখানে আসার পর থেকে ওই দানবটার ব্যাপারে কেন যেন কথাই বলতে চাচ্ছে না ছেলেদুটো… বেশ কয়েকবার ওদের মুখ থেকে ব্যাপারটা শুনতে চেয়েছিল জিমি, কিন্তু একটা কথাও বলেনি ওরা। 

ওদিকে মিসির মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। ক্যাথির ছোটোবেলার কিছু পুতুল থেকে গেছিল মিসেস কনার্সের বাড়িতে। সেগুলো নিয়েই মেতে রইল মেয়েটা। দেখে মনে হচ্ছিল বেশ মজা পাচ্ছে সে। ওর আঁকা ছবিটা ক্যাথিকে দেখাল জর্জ, অদ্ভুত শুয়োরটাকে দেখে ক্যাথি বেশ অবাকই হলো। 

“মিসি, জোডি কি আসলেই এমন?” প্রশ্ন করল সে। 

“হ্যাঁ, শুয়োররা তো দেখতে এমনই হয়,” হাসল মিসি। 

বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে গরম পানিতে গোসল করল সে বেরিয়ে এলে ক্যাথিও অনেকটা সময় নিয়ে গোসল করল। যেন গরম পানি তাদের শরীরের সাথে সাথে ভয়ংকর স্মৃতিগুলোও ধুয়ে ফেলবে! রাত দশটার দিকে অতিথিদের থাকার ঘরে ঘুমাতে গেল ওরা। বহুদিন পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো জর্জ আর ক্যাথি। 

*** 

ঘুমটা প্রথমে জর্জেরই ভাঙল। কেন যেন মনে হলো ওর শরীরটা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। নিচে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল সে! আসলেই বাতাসে ভাসছে ও… ধীরে ধীরে আবার বিছানায় গিয়ে পড়ল ও। তারপরেই ক্যাথির শরীরটা ওপরে উঠে গেল। প্রায় এক ফুটের মতো উঁচুতে উঠে জানালার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ওর শরীরটা….. 

ক্যাথিকে ডাকতে চাইল জর্জ, কিন্তু কেন যেন তখন ক্যাথির নামটাই ওর মনে পড়ছিল না! কী বলে ডাকবে? জানালা থেকে খানিকটা সরে ঘরের মাঝখানে এলো ক্যাথির শরীর, তারপর ছাদের দিকে যেতে লাগল। জর্জ অনুভব করল ওর শরীরটাও উঠে যাচ্ছে। 

খানিকটা ওঠার পর ও শুনতে পেল কে যেন ওর নাম ধরে ডাকছে, “জর্জ… জর্জ…” কণ্ঠটা চেনে ও। আরে! এ তো ক্যাথির কণ্ঠ! নিচ থেকে আসছে ডাকটা… নিচে তাকিয়ে জর্জ দেখল ক্যাথি বিছানায় বসে আছে… ভয়ার্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা! 

জর্জের শরীরটা আবার বিছানার দিকে যেতে লাগল, একদম গিয়ে ক্যাথির 

পাশে আস্তে করে পড়ল ও। 

“জর্জ!” কেঁদে ফেলল ক্যাথি, “তুমি উড়ছিলে!” 

“উঁহুঁ,” কেমন যেন ঘোরলাগা কণ্ঠে বলল জর্জ। 

“এসো তাড়াতাড়ি,” জর্জের হাত ধরে রীতিমতো টেনে বিছানা থেকে নামাল ক্যাথি, “চলো ঘরের বাইরে যাই!” 

টলতে টলতে ক্যাথির সাথে বেরিয়ে এলো জর্জ, সিঁড়ির সামনে এসে রীতিমতো চমকে উঠল ওরা। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চটচটে সেই সবুভাজ তরল পড়ে আছে… কেমন যেন কালচে ভাব এসেছে এখন ওগুলোতে, দূর থেকে দেখলে মনে হবে অতিকায় কোনো সাপ সিঁড়িতে পড়ে আছে! 

জর্জ জানে, এসব স্বপ্ন না… সবই বাস্তব! যে অপার্থিব শক্তির ভয়ে ওরা ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটা থেকে পালিয়ে এসেছে… তা ওদের পিছে পিছে এখানেও চলে এসেছে! 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *