দ্য অ্যামিটিভিল হরর – ১৮

অষ্টাদশ অধ্যায় 

৬-৭ জানুয়ারি। 

সেদিন মায়ের বাসা থেকে ফেরার পথে ড্যানি আর ক্রিসকে স্কুল থেকে তুলে নিল ক্যাথি। অ্যামিটিভিলের নতুন স্কুলের প্রথমদিনে খুশিতে ভরে ছিল ছেলেদুটোর মন। নতুন স্কুলের খেলার মাঠ, বন্ধু আর শিক্ষকদের নিয়ে নানান কথা বলতে লাগল ওরা দু’জন। গল্প যেন শেষই হতে চাচ্ছিল না ওদের। সকাল সকালই না-কি স্কুলের মাঠ পরিষ্কার করা হয়েছে, তাই মন ভরে খেলেছে সব ছেলেমেয়ে। এসব শুনে মিসির বেজায় হিংসা হচ্ছিল, সারাদিন ওকে বাড়িতেই কাটাতে হয়েছে। সে-ও কয়েকবার স্কুলের মেয়েদের ব্যাপারে ভাইদের প্রশ্ন করল। তারপর মাকে বলল, “মা, আমি কবে স্কুলে যাবে?” 

“যাবে সোনা, যাবে,” মৃদু হাসল ক্যাথি। 

বাড়িতে পৌঁছে গেল ওরা। জর্জও এসে গেছিল। পুরো পরিবার সাড়ে ছ’টার দিকে একসাথে সন্ধ্যার নাস্তা করল। জর্জ ক্যাথিকে জানাল যে ফাদার ম্যানকুসোর কথামতোই সে কাজ করেছে, এছাড়া ফ্রান্সিনের কথাও জানাল। ফ্রান্সিন ভূত- প্রেতের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। নর্থ ক্যারোলাইনার ওই সংস্থার কাছে শুধু চিঠি লিখেই জর্জ চুপ করে বসে থাকেনি বরং ওদের ফোনও করেছে… এটা শুনে ক্যাথি যতটা খুশি হলো, ফ্রান্সিনের আসার কথাতে ততটাই বিরক্ত হলো সে। অচেনা একটা মেয়ে ওদের বাড়িতে আসবে ভূতের সাথে কথা বলতে? তা-ও যুবতী মেয়ে! 

সেদিন একটু তাড়াতাড়িই রাতের খাবার খেয়ে নিল ওরা, তারপর ক্যাথি জর্জকে বলল, “এক কাজ করি জর্জ, বাড়িটার ঝামেলা মেটার আগ পর্যন্ত আমি বাচ্চাদের নিয়ে আমার মায়ের ওখানেই থাকি? এখানে বাচ্চাদের রাখাটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।” 

“দেখো ক্যাথি,” মাথা নাড়ল জর্জ, “বাইরে তাপমাত্রা শূন্যেরও দশ ডিগ্রি নিচে, আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানিয়েছে সকালে ভারী তুষারপাত হবে। ইস্ট ব্যাবিলন এখান থেকে খুব একটা দূরে না… তারপরেও তুমি ওখান থেকে সকালে বাচ্চাদের স্কুলে রাখতে আবার অ্যামিটিভিলে আসবে… আবার বিকালে ওদের নিতে আসবে… বরফের মধ্যে গাড়ি চালাতে পারবে তো? দেরি হয়ে যাবে ওদের।’ 

ওদিকে বাবার সুরে সুর মেলাল ড্যানি আর ক্রিস। স্কুল থেকে অনেক বাড়ির কাজ দিয়েছে, ওরা এখন ওসব করতে বসবে। এই রাত বিরাতে নানির বাসায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই ওদের আর তাছাড়া নানি রাত আটটার পর আর টিভি দেখতে দেন না। 

ক্যাথি আর কী বলবে? এতগুলো মানুষের কথা কি ফেলা যায়? কিন্তু এই বাড়িতে আরও একটা রাত? ভাবতেই তো রীতিমতো অস্বস্তি হচ্ছে ওর! 

“এই বাড়িতে আমার ভয় লাগে জর্জ, মনে হয় না আজ রাতে একটুও ঘুম হবে,” দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। 

রাতের খাবারের একটু আগে হ্যারিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসেছিল জর্জ। খাবারের পর বেঁচে যাওয়া মাংসের টুকরোগুলো ওকে খেতে দিলো ক্যাথি। ওদিকে জর্জ মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে যে হ্যারিকে আজ বাড়ির ভেতরেই রাখবে। বাইরে যে ঠান্ডা, তুষারপাত শুরু হলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে কুকুরটার। আর তাছাড়া আজ শুকনা খাবারের বদলে লাল মাংস খেয়েছে কুকুরটা… একটু বেশি রাতই জেগে থাকবে ব্যাটা। এই অবস্থায় ওকে কোনোভাবেই বাইরে রাখা যাবে না। 

খাওয়ার পর স্কুলের দেওয়া বাড়ির কাজ করতে তিন তলায় চলে ড্যানি আর ক্রিস। হ্যারিকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল মিসি। কিন্তু সেখানে রীতিমতো ভয় পাচ্ছিল হ্যারি, থাকতেই চাইছিল না। কেমন যেন অদ্ভুতভাবে ডাকছিল সে। ক্যাথি খেয়াল করল যে হ্যারিকে যখন নিজের অদৃশ্য বন্ধু জোডির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো মিসি… আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল কুকুরটা। ডাকতেও পারছিল না। হ্যারি যাতে পালাতে না পারে সেজন্য ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো মিসি, ভয় পেয়ে বিছানার নিচে চলে গেল বেচারা কুকুর। সেখান থেকে আর ওকে নড়ানোই গেল না। কিছুক্ষণ পর অবশেষে ওকে নিতে এলো ক্রিস, দুই পায়ের ফাঁকে লেজ গুঁজে দ্রুত ওর সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল হ্যারি। এরপর তিন তলাতেই বাকি রাতটা কাটাল সে। 

রাত বারোটার দিকে ঘুমাতে গেল জর্জ আর ক্যাথি। এই দিয়ে পর পর তিন রাত বিছানায় ওঠার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল ক্যাথি। প্রায় সাথে সাথেই নাক ডাকতে লাগল ও। বেশ অবাক হলো জর্জ, ক্যাথি না বলছিল রাতে ওর ঘুম হবে না? জর্জের চোখে ঘুম নেই, যেন সেই অদৃশ্য ‘ব্যান্ডপার্টি’র বাজনা শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে ওর কানদুটো। 

কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো তুষারপাত। জানালায় বরফ জমছে, জর্জ হাত ঘড়িতে দেখল রাত একটা বাজে। বেশ জোরে বইছে বাতাস, উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে জমে থাকা তুষারকে। ঠিক তখনই জর্জ ‘ভটভট’ একটা শব্দ শুনতে পেল, যেন অ্যামিটিভিল নদীতে কেউ ইঞ্জিনওয়ালা নৌকা চালাচ্ছে… গিয়ে দেখবে না কি? কিন্তু শোবার ঘরের জানালা দিয়ে তো নদী দেখা যায় না। এই রাতের বেলা গরম বিছানা ছেড়ে সেলাইঘর বা মিসির ঘরের জানালা দিয়ে যে উঁকি দেবে, সেটাও ইচ্ছা করছে না! আর তাছাড়া নদীর পানি তো জমে গেছে, তাহলে ওখানে নৌকা চালানো কীভাবে সম্ভব? বাতাসেরই শব্দ হবে হয়তো! 

রাত দুটোর দিকে হাই তুলতে শুরু করল জর্জ, একইভাবে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার জন্য পিঠে রীতিমতো ব্যথা করছে তার। শরীরটা কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে আছে। ক্যাথির দিকে একবার চাইল সে, অঘোরে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। মুখ হা করা। 

হুট করেই একটা অদ্ভুত চিন্তা মাথায় এলো জর্জের, এখনই একবার উইচেস ব্রুতে গিয়ে কয়েক গ্লাস মদ খেলে কেমন হয়? বাড়ির ফ্রিজেও কিন্তু কয়েক ক্যান বিয়ার ছিল, তারপরেও রাতের বেলা অমন চিন্তা কেন ওর মাথায় এসেছিল তা আজও জানে না জর্জ। ওর শুধু মনে হচ্ছিল পানশালাতে না গেলে বিয়ার খেয়ে মজা নেই। এবং সেই পানশালাটা হতে হবে উইচেস ব্রু। রাত দুটো বাজে, বাইরে রীতিমতো কনকনে ঠান্ডা… তারপরেও ও পানশালাতে যাবেও! পাশে ঘুরল সে, ক্যাথিকে তুলে বলতে হবে যে সে একটু বাইরে যাচ্ছে। 

চমকে উঠল জর্জ! অন্ধকার অনেকটা সয়ে এসেছিল ওর চোখে… সে স্পষ্ট দেখতে পেল যে ওর পাশে ক্যাথি শুয়ে নেই বরং ওর শরীরটা আবার হাওয়ায় ভাসছে! বিছানা থেকে প্রায় এক ফুট উঁচুতে… ধীরে ধীরে জানালার দিকে সরে যাচ্ছে ক্যাথি। 

লাফিয়ে উঠল জর্জ, তারপর ক্যাথির চুল ধরে টান দিলো। সাথে সাথে নিচে নেমে এলো ক্যাথির শরীরটা, বিছানায় পড়তেই জেগে উঠল মেয়েটা। 

তাড়াহুড়ো করে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলো জর্জ। কিন্তু এ কাকে দেখছে সে! কোথায় ক্যাথি? প্রায় নব্বই বছর বয়স্ক এক বুড়ি বসে আছে ওর পাশে… একমাথা ভরতি এলোমেলো সাদা চুল, মুখের চামড়া অদ্ভুতভাবে কুঁচকে আছে, কিছু জায়গায় খাঁজের মতো অদ্ভুত রেখা… দন্তহীন মুখের দু’পাশ দিয়ে লালা পড়ছে! 

রীতিমতো কেঁপে উঠল জর্জ। এটা ক্যাথি না! হতেই পারে না… এ কে? জর্জের খুব ইচ্ছা করছিল ঘর থেকে পালিয়ে যেতে, কিন্তু ওর পা-দুটো যেন জমে গেছিল। ওদিকে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ক্যাথি। কেন এমন করছে জর্জ? কী হলো তবে? 

কিছুক্ষণ পর ক্যাথি বুঝতে পারল যে জর্জ আসলে ওকে দেখে ভয় পাচ্ছে! কিন্তু কেন? তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে দৌড় দিলো সে। বাতি জ্বালিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই চিৎকার করে উঠল ক্যাথি! ভয়ংকর দেখাচ্ছে ওকে! জর্জ যেমনটা দেখেছিল ঠিক তেমন আর নেই। চুলগুলো আগের মতোই সোনালি তবে বেজায় অগোছালো, এখন আর মুখ দিয়ে লালা পড়ছে না… দাঁতও রয়েছে। তবে মুখে খাঁজের মতো রেখাগুলো রয়ে গেছিল। 

ক্যাথির পিছু পিছু বাথরুমে এসে ঢুকল জর্জ। এখন আর ওকে নব্বই বছরের বুড়ির মতো লাগছে না। কিন্তু মুখের দাগগুলো যেন চিরস্থায়ীভাবে বসে গেছে! 

“হে ঈশ্বর!” চেঁচিয়ে উঠল ক্যাথি, “আমার চেহারা এমন হলো কী করে?”

জর্জের দিকে ঘুরল সে। এগিয়ে এসে ওর ঠোঁটে হাত দিলো জর্জ। বেজায় গরম ক্যাথির মুখ! গালের গভীর দাগগুলোতে হাত বুলাল জর্জ, তিনটে তিনটে করে মোট ছয়টা দাগ! চোখের নিচ থেকে শুরু হয়ে চোয়াল পর্যন্ত নেমে এসেছে দাগগুলো। 

“কী থেকে কী হয়ে গেল, আমি বুঝতে পারছি না সোনা,” ফিসফিসিয়ে বলল সে। 

পাশ থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে সেটাকে গরম পানিতে ভিজিয়ে ক্যাথির মুখ মুছে দিতে লাগল জর্জ… যদি দাগগুলো ঠিক হয়। আবার আয়নার দিকে তাকাল ক্যাথি, দাগে ভরা মুখটা যেন ব্যঙ্গ করছে ওকে! নিজের মুখে একবার হাত বুলিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। 

অনেক চেষ্টা করেও ওর কান্না থামাতে পারল না জর্জ। অবশেষে সে বলল, “দাঁড়াও ক্যাথি, আমি এখনই ফাদার ম্যানকুসোকে ফোন করছি।” 

“না না, ওনাকে এসবের মধ্যে জড়ানো ঠিক হবে না,” মাথা নাড়ল ক্যাথি, তারপর কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে আয়নার দিকে চেয়ে আপনমনেই বলে উঠল সে, “কেন যেন আমার মনে হচ্ছে এখানে আসলে ওনার অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে। একটু বাচ্চাদের ঘরে দেখি, ওরা ঠিক আছে না-কি,” হুট করেই শান্ত হয়ে গেল মেয়েটা। 

বাচ্চারা ভালোই ছিল। কিন্তু সেই রাতে জর্জ এবং ক্যাথির আর ঘুম হলো না। বাতি নিভিয়ে একমনে জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখছিল ওরা, কিছুক্ষণ পর পর মুখের দাগগুলোতে হাত বুলাচ্ছিল ক্যাথি। পুরো রাত দাগগুলো ছিল। অবশেষে সকাল হলো, তুষারপাত একটু আগেই বন্ধ হয়েছে। জানালার পাশের একটা চেয়ারে বসে চুপচাপ আকাশের দিকে চেয়েছিল জর্জ, তখনই ওর কাঁধে হাত রাখল ক্যাথি। ঘুরে তাকাল জর্জ, ভোরের আলোয় অপার্থিব রকমের সুন্দর লাগছে ক্যাথিকে। 

“জর্জ,” বলে উঠল সে, “আমার মুখটা দেখো!” 

ক্যাথির মুখের দাগগুলো আর নেই। ছুঁয়ে দেখল জর্জ, ক্যাথির মুখটা আবার আগের মতোই কোমল হয়ে গেছে। দাগের কোনো চিহ্নই নেই! যেন ওগুলো কোনোকালেই ছিল না। 

“আরে অসাধারণ!” হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে, “দাগগুলো আর নেই!” 

রাতের বেলা ক্যাথি মানা করার পরেও সকাল সকালই ফাদার ম্যানকুসোকে ফোন দিলো জর্জ। গির্জায় সকালের প্রার্থনায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন ফাদার। 

জর্জ ফাদারকে জানাল যে নর্থ ক্যারোলাইনার ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে ওর কথা হয়েছে। ওখানকার জেরি সলফভিন তাকে জানিয়েছে যে ব্যাপারটা তদন্ত করতে খুব তাড়াতাড়ি ওদের একজন লোক আসবে। এরপর সে গতরাতের কথা খুলে বলল। ক্যাথির আবার বাতাসে ভাসা আর ওর মুখের দাগের কথা শুনে বেজায় ভয় পেয়ে গেলেন ফাদার। 

“দেখো জর্জ,” গম্ভীর কণ্ঠে বললেন তিনি, “তোমাদের নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি! না জানি কখন কী হয়ে যায়! এক কাজ করো, তোমরা ক’দিন অন্য কোথাও গিয়ে থাকো না?” 

“আমিও অমনটাই ভাবছি ফাদার। কিন্তু ফ্রান্সিন বলে একটা মেয়ের সাথে কথা হয়েছে। ভূত-প্রেতের সাথে যোগাযোগ করতে পারে ও। মানে মিডিয়াম আরকি… তো ও একবার আসুক, তারপর দেখি কী হয়। কোনো ঝামেলা হলে আমরা চলে যাব।” 

“মিডিয়াম!” অবাক হলেন ফাদার ম্যানকুসো, “তোমাকে না বলেছিলাম বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান খুঁজছে? এই মেয়েকে আবার কেন ডেকেছ?” 

“আরে ফাদার শুনুন,” বিরক্ত হলো জর্জ, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই বাড়িতে ভূত আছে। আর শুধু কি তাই? ও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে বাড়িতে কোনো গোপন কুয়া আছে না কি? সদর দরজার সিঁড়ির ধাপের নিচে আসলেই একটা কুয়া পেয়েছি আমি। কুয়ার কথা ওর মাথায় এলো কী করে? ও তো জীবনেও আমার বাড়ি আসেনি!” 

“বাদ দাও জর্জ,” রেগে উঠলেন ফাদার, “তুমি আসলে চিরকালই এমন। আমার কথামতো কাজ করতে লজ্জা লাগে না কি? নিজের কথা না ভাবলেও বাচ্চাদের কথা তো ভাবো! ওই বাড়িতে থাকছ কেন? এখনই ওদের নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও!” 

“ও আচ্ছা, তাহলে নিজের কেনা বাড়ি রেখে চলে যাব?” 

“হ্যাঁ। চিরদিনের জন্য তো নয়, তাই না? ওই সংস্থার লোক আসুক। ওরা দেখুক… তারপর সমাধান না হলে আমি আবার ফাদার রায়ানের সাথে কথা বলব। এরপর হয়তো উনি অভিজ্ঞ কোনো যাজককে পাঠাবেন!” 

কোনো উত্তর দিলো না জর্জ। ফাদারের ওপর বেজায় রাগ উঠছে ওর। এত করে বলল ওর বাড়িতে আসতে, তা এলো না লোকটা। একটা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দিয়েই খালাস! সেটাও সে নিজে খুঁজে বের করেনি, পেয়েছে বিশপের অফিস থেকে। তা এত বড়ো বড়ো যাজক ওখানে আছেন… কেউ সাহস করে ওর বাড়িতে কেন আসছে না? অবশেষে নিজেই ফ্রান্সিনকে খুঁজে বের করেছে… হয়তো মেয়েটাই সমস্যার সমাধান করবে? কিন্তু পালিয়ে যাওয়াটা কি কোনো সমাধান? ভীরুর মতো! 

“আচ্ছা ফাদার,” গম্ভীর কণ্ঠে বলল জর্জ, “আমি ক্যাথির সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি। ধন্যবাদ আমার ফোন ধরার জন্য!” 

“দাঁড়াও জর্জ, আরেকটা ব্যাপার, তুমি আর ক্যাথি কি ধ্যান করতে? একবার ক্যাথি আমাকে বলেছিল ওই কথা।” 

“হুম, করতাম তো।” 

“এখনও কি নিয়মিত করো?” প্রশ্ন করলেন যাজক। 

“ওই না করারই মতো। এই বাড়িতে আসার পর সেভাবে ধ্যানে বসাই হয়নি। কেন?” 

“ওই এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম, “ মৃদু হাসলেন ফাদার, “যাক, ভালো হয়েছে এখন আর তোমরা ধ্যানে বসো না। মাঝে মাঝে না… ধ্যান করার কারণে ভূত- প্রেতদের বেশি দেখা যায়!” 

**** 

জর্জের সাথে কথা শেষ করেই ফাদার ম্যানকুসো রকভিল সেন্টারের বিশপের অফিসে ফোন দিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দু’জন চ্যান্সেলর, ফাদার রায়ান বা ফাদার নানসিও কেউই অফিসে ছিলেন না। তাদের ব্যক্তিগত সচিব জানালেন যে ওনারা ফেরার সাথে সাথে ফাদার ম্যানকুসোর সাথে যোগাযোগ করবেন। “হে ঈশ্বর, আপনমনেই বলে উঠলেন ফাদার ম্যানকুসো, “বিশপের অফিস থেকে সাহায্য না যাওয়া পর্যন্ত যেন ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটায় আর কোনো উদ্ভট ঘটনা না ঘটে!” 

লুৎজদের কথা ভাবতে ভাবতে ফাদার ম্যানকুসো ভুলে গেছিলেন যে তার ওপরেও ওই অশুভ শক্তির নজর আছে। কে জানে, হয়তো তিনি ভেবেছিলেন ওই শক্তি তাকে ছেড়ে দিয়েছে? কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই ওই শক্তি তাকে বুঝিয়ে দিলো যে অত সহজে ছাড়ার পাত্র সে নয়। 

হুট করেই বেজায় শীত লাগতে লাগল ফাদারের, মাথার ভেতরটাও কেমন যেন ঘুরে গেল। মনে হলো যেন পড়েই যাবেন। গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে, গলাটাও কেমন যেন খসখস করছে… হাঁচি দিলেন ফাদার, বেশ কয়েকবার। হাঁচি যেন আর থামছিলই না! চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো! পকেট থেকে টিস্যু পেপার বের করলেন ফাদার, আবার হাঁচি… এ যে রক্ত! ফাদার রায়ানের বলা কথাগুলো মনে পড়ল তার, “তুমি আর কখনও ওই বাড়িতে যেয়ো না। ওদের ফোন দিয়ে আমরা যা বলেছি সেগুলো বলে দিয়ো, কিন্তু নিজে আর যেয়ো না। কখনোই না, কোনোভাবেই না! ওই বাড়ি নিয়ে ভাবারও প্রয়োজন নেই তোমার।” 

অনেক দেরি হয়ে গেছে! ফাদার ম্যানকুসো বুঝতে পারলেন তিনি আবার ফ্লুতে আক্রান্ত হতে চলেছেন। 

*** 

ওইদিন সন্ধ্যাতেই জর্জের কোম্পানির প্রকৌশলী এরিক তার প্রেমিকা ফ্রান্সিনকে নিয়ে পৌঁছল লুজদের বাড়িতে। বাইরে বেজায় ঠান্ডা, তাই ওদের তাড়াতাড়ি বসার ঘরে এনে বসাল জর্জ। ফায়ারপ্লেসে আরও কয়েকটা কাঠ ঠেলে দিলো। বেশ গরম হয়ে উঠল পরিবেশটা। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই জর্জ আর ক্যাথির সাথে গল্প জুড়ে দিলো ওরা। বাড়ির গম্ভীর পরিবেশ অনেকটাই কেটে গেল। অনেকদিন পর ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটায় এমন আড্ডা জমে উঠল। ক্যাথির মনটা বেশ হালকা হলো। ওদিকে ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠছিল জর্জ। সে শুধুই ভাবছিল, ফ্রান্সিন কখন ওদের বাড়িটা ঘুরে দেখবে? 

শেষ পর্যন্ত সে ভাবল ভূত-প্রেতের ব্যাপারটা আড্ডায় তুলবে, তাহলে হয়তো ফ্রান্সিনের মনে পড়ে যাবে যে সে আসলে এই বাড়িতে ‘ভূত তাড়াতে’ এসেছে। কিন্তু তখনই কাউচ থেকে উঠে দাঁড়াল ফ্রান্সিন। 

তারপর জর্জকে কাছে ডাকল। জর্জ কাছে গেলে সে কাউচের পাশের একটা জায়গায় ওকে দাঁড়াতে বলল, তাই-ই করল জর্জ। 

“আপনার একটু ঠান্ডা লাগছে না? ঠান্ডা বাতাস?” বলল ফ্রান্সিন। 

“হ্যাঁ, এই জায়গাটা এত ঠান্ডা কেন? ফায়ারপ্লেসে তো আগুন জ্বলছে!” অবাক হলো জর্জ। 

“কারণ একটা মেয়ে একটু আগে এদিক দিয়েই গেল, তার আগে ও কোথায় ছিল জানেন? আমাদের সাথেই কাউচে বসেছিল,” এই বলে কাউচের এক জায়গায় হাত দিতে বলল ফ্রান্সিন 

জর্জ হাত দিয়ে দেখলো জায়গাটা গরম! কিন্তু ওখানে তো কেউ বসেনি! “কী ব্যাপার ফ্রান্সিন? কে বসেছিল এখানে?” বলে উঠল সে। 

কোনো উত্তর না দিয়ে ইশারায় জর্জকে খাবার ঘরের দিকে ডাকল ফ্রান্সিন। জর্জের পিছে পিছে ক্যাথিও গেল। ওদিকে এরিক ফায়ারপ্লেসের কাছেই বসে রইল। 

ডাইনিং টেবিলের কাছে থমকে দাঁড়াল ফ্রান্সিন, “আচ্ছা এখানে একটা 

অদ্ভুত গন্ধ পাচ্ছি, আপনারা পাচ্ছেন? কীসের গন্ধ ওটা?” 

গন্ধটা জর্জও পাচ্ছিল। “আমার মনে হয়,” হাত নাড়ল সে, “ঘামের গন্ধ!” এবার মেয়েটা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে গিয়েই খানিকটা থমকে দাঁড়াল সে, তারপর ক্যাথির দিকে চেয়ে বলল, “এখানে এক বুড়ো আর বুড়ি আছে… অতৃপ্ত প্রেত আরকি। আপনারা মাঝে মাঝে পারফিউমের গন্ধ পান, তাই না?” 

ভয় পেয়ে গেল ক্যাথি! সে তাকাল জর্জের দিকে। 

“হুম আমি, ক্যাথি দু’জনেই পাই,” কাঁধ ঝাঁকাল জর্জ। 

“হুম, হয়তো এরাই এককালে এই বাড়ির মালিক ছিল,” মৃদু হাসল ফ্রান্সিন, “ওরা মারা গেছে, কিন্তু এই বাড়িতে ওদের মৃত্যু হয়নি। আচ্ছা স্যার,” জর্জের দিকে তাকাল সে, “বেসমেন্টে যাওয়া যাবে?”

ফোনে কথা বলার সময় জর্জ ফ্রান্সিনকে শুধু বলেছিল ওর বাড়িতে কিছু অতিপ্রাকৃত ঝামেলা হয়। কিন্তু কী ধরনের ঝামেলা বা কোথায় কোথায় ঝামেলা… তা কিন্তু খুলে বলেনি। ক্যাথি আর ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও সেভাবে বলেনি। সে কারণেই রান্নাঘরে পারফিউমের গন্ধ কিংবা ক্যাথিকে সেই অদৃশ্য হাতের জড়িয়ে ধরার ব্যাপারটা ফ্রান্সিন আগে থেকেই জানত, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আর তাছাড়া ফ্রান্সিন নিজেই বলেছিল যে বাড়িটা ঘুরে সে নিজেই বের করবে যে ওখানে আসলে কী সমস্যা। দরকার হলে আত্মাদের সাথে কথা বলবে। 

সিঁড়ি দিয়ে বেসমেন্টে নেমেই মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল ফ্রান্সিনের, “এ জায়গাটা বেজায় খারাপ! সম্ভবত কোনো কবরস্থানের ওপর তৈরি হয়েছে এই বাড়ি… কিংবা অতি প্রাচীন কোনো সমাধিক্ষেত্র। প্লাইউডের দেওয়াল আলমারিটার দিকে আঙুল তুলে সে জর্জকে জিজ্ঞাসা করল, “নতুন বানানো হয়েছিল না কি ওটা?” 

“নাহ,” মাথা নাড়ল জর্জ, “আমি যতদূর জানি, এই বাড়ির তৈরির সময়েই ওই ঘরটা বানানো হয়েছে।” 

তাকগুলোর সামনে এসে থমকে দাঁড়াল ফ্রান্সিন, “এখানে অনেককেই কবর দেওয়া হয়েছে। জায়গাটা কেমন যেন বদ্ধ… উদ্ভট একটা গন্ধ, দম বন্ধ হয়ে আসে রীতিমতো। এখানে এই তাকগুলো বানানো একেবারেই উচিত হয়নি!” এরপর সে আঙুল তুলে একটা জায়গা দেখাল। জর্জ রীতিমতো আঁতকে উঠল! ওখানেই গুপ্ত ঘরটার দরজা! 

“এখানে কীরকম ঠান্ডা দেখেছেন?” দেওয়ালে হাত রাখল সে, “সম্ভবত কাউকে এখানে খুন করে পুঁতে ফেলা হয়েছিল! ওর কবরের ওপরেই তৈরি হয়েছে সব! এই ঘটনা বেশিদিন আগের না। তাকগুলো বেশ নতুনই মনে হচ্ছে। হে ঈশ্বর! কী অশুভ!” 

ওদিকে ভয়ে ক্যাথির অবস্থা রীতিমতো খারাপ। ওর খুব ইচ্ছা করছিল বেসমেন্ট থেকে ছুটে পালাতে। জর্জের বুঝতে বাকি রইল না ব্যাপারটা। বউয়ের হাতটা শক্ত করে ধরল ও। ফ্রান্সিনই উদ্ধার করল ওদের এই অস্বস্তি থেকে, হুট করেই মেয়েটা বলে উঠল, “এই জায়গাটা ভালো না, এখানে বেশিক্ষণ থাকতে ভালো লাগছে না!” এই বলে সোজা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। 

দোতালায় ওঠার সময়ে ফ্রান্সিনের প্রেমিক এরিকও যোগ দিলো ওদের সাথে। দোতালার বারান্দায় এসে সিঁড়ির রেলিং ধরে থমকে দাঁড়াল ফ্রান্সিন, “ওপরে আসার সময় মনে হচ্ছিল অদ্ভুত একটা বাতাস আমাদের ঘিরে আছে… ঘূর্ণি বাতাস আরকি! হুট করেই বুকের ডানদিকে কেমন যেন চাপ লাগছিল!” 

“ব্যথা?” বলে উঠল ক্যাথি। 

“আরে না না, অদৃশ্য একটা চাপ! অল্প একটু… সিঁড়ি দিয়ে উঠে কোনাটা ঘুরতেই অমনটা হলো,” সেলাইঘরের দিকে এগিয়ে গেল ফ্রান্সিন, “আচ্ছা, এই ঘরে বেশ ঝামেলা হয়েছে, তাই না? 

মাথা নাড়ল জর্জ আর ক্যাথি। তারপর এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো জর্জ; ভেবেছিল আজকেও জানালায় মাছি দেখতে পাবে। কিন্তু তেমন কিছুই নেই। ও আর ফ্রান্সিন ঘরে ঢুকল, এরিক আর ক্যাথি দরজাতেই দাঁড়িয়ে রইল। 

হুট করেই কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গেল ফ্রান্সিন, ভারী হয়ে এলো ওর গলাটা। অনেকটা পুরুষ মানুষের মতো। জর্জের দিকে চেয়ে ও বলে উঠল, “শুনুন, আমার কথা ভালো করে শুনুন… এই পৃথিবীতে মানুষ যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই অতৃপ্ত আত্মারাও রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ওরা থাকে। বেশিরভাগ সময়েই ওরা মানুষকে তেমন জ্বালায় না… কিন্তু এই বাড়িটা… আলাদা। খুবই অশুভ একটা জায়গা… তাড়াতাড়ি এটাকে শুদ্ধ করা দরকার!” 

অবাক হয়ে গেল জর্জ! ফ্রান্সিনের বদলে যাওয়া কণ্ঠটা কেমন যেন চেনা চেনা মনে হতে লাগল ওর। পরিচিত কারও কণ্ঠ এটা! কিন্তু কার? ঠিক মনে করতে পারছে না জর্জ। 

বলে চলেছে ফ্রান্সিন, “ছোটো ছেলে আর মেয়ে… ওদের মা-বাবা কাঁদছে! রক্তের দাগ চারদিকে! ওদেরকে কেউ মেরেছে… খুব বাজেভাবে মেরেছে! ওদেরকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছিল… খুনি কি মানুষ? না অন্যকিছু?” 

ঘোর কেটে গেল ফ্রান্সিনের। “আমার এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত, “ জর্জের দিকে তাকিয়ে বলল সে। আগের মতো হয়ে গেছে ওর গলা।” 

“কেন?” এগিয়ে এলো ক্যাথি। 

“আত্মাদের সাথে যোগাযোগের জন্য এই সময়টা ভালো না। এখন এই বাড়িতে থাকলে আমার বিপদ হবে! ভিনিশিয়াল ভেইল[১১] নিয়ে জন্মেছি তো… তাই এগুলো ভালোই জানি।” 

[১১. ভ্রুণকে একটি স্বচ্ছ পর্দা ঘিরে রাখে, ৮০ হাজারের মাত্র ১ জন শিশু ওই পর্দাটি নিয়েই জন্ম নেয়। ওই পর্দাকে ভিনিশিয়ান ভেইল বলে অনেকে। কিছু মানুষ মনে করে ওই পর্দা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা বিশেষ ক্ষমতা পায়।] 

ফ্রান্সিনের কথার অর্থ কিছু বুঝল না জর্জ, তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল সে।

“ভাববেন না, আমি ক’দিন পর আবার আসব, যখন আপনাদের বাড়ির পরিস্থিতি একটু ভালো হবে,” এই বলে এরিককে নিয়ে বেরিয়ে গেল ফ্রান্সিন। 

বসার ঘরে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল জর্জ আর ক্যাথি। কারও মুখে কোনো কথা নেই। 

“ব্যাপারটা তাহলে কী দাঁড়াল?” আনমনেই বলে উঠল ক্যাথি। 

“বুঝতে পারছি না,” ফায়ারপ্লেসের আগুন নেভানোর জন্য উঠে দাঁড়াল জর্জ, “কোথায় কোথায় সমস্যা আছে তা ঠিকই ধরল মেয়েটা… কারণও বলল কিছু! কিন্তু তারপর হুট করে চলে গেল কেন? দেখি, এরিকের সাথে কথা বলতে হবে!” 

ওপরে বাচ্চাদের ঘরে চলে গেল ক্যাথি। বাইরে অনেক ঠান্ডা সে কারণে আজকেও হ্যারিকে, ড্যানি আর ক্রিসের ঘরে রাখা হয়েছে। এই শীতের মধ্যে বেচারা কুকুরটাকে বাইরে রাখলে মরেই যেত! জর্জ ভালো করে সব জানালা আর দরজাগুলো দেখল, তারপর একতলার আলোগুলো নিভিয়ে দিলো। সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠল সে, আর বারান্দায় পৌঁছেই থমকে দাঁড়াল! সিঁড়ির ঠিক মাথায় চাতালের ওপরের লোহার রেলিংটা কে যেন প্রচণ্ড আক্রোশে ভেঙে ফেলেছে! একটু ঝুঁকে ওটা দেখতে লাগল জর্জ, ঠিক তখনই ওর মনে পড়ে গেল… সেলাইঘরে ফ্রান্সিন কার গলায় কথা বলছিল! ওটা ফাদার ম্যানকুসোর কণ্ঠ! 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *