দ্বাবিংশ অধ্যায়
১১ জানুয়ারি।
পঁচিশ দিন হলো লুজরা ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটাতে এসেছে। ওই রবিবারের মতো বাজে অবস্থায় তারা এর আগে আর পড়েনি।
সকালে উঠে ভালো করে বাড়িটা দেখল জর্জ, প্রবল বাতাস আর বৃষ্টি সবকিছুর একেবারে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে দেওয়াল, পর্দা, গালিচা, আসবাবপত্র সবকিছুই ভিজে গেছে। একতলা থেকে তিন তলা, সবখানেই একই অবস্থা। দশটা জানালার পাল্লা একদম ভেঙে গেছে, কয়েকটার ছিটকিনি এমনভাবে নষ্ট হয়ে গেছে যে ওগুলো আর লাগানো সম্ভব না। সেলাই আর বাচ্চাদের খেলাঘরের দরজার লক বেঁকিয়ে একদম পিতলের পাত থেকে বেরিয়ে এসেছে, ওই দুটো কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। জর্জ ভেবেছিল যে সকালেই সবাইকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে, কিন্তু এই অবস্থায় বাড়িটা রেখেও তো যাওয়া যায় না! ওদের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র থেকে যাবে।
রান্নাঘরের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। তাকে রাখা থালাবাসনগুলো পানি আর কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে, মেঝেতে একগাদা পানি জমেছে। ক্যাথি ভেবে পাচ্ছে না যে কী করবে। একটা বালতি নিয়ে মেঝেতে জমে থাকা পানি তুলে বাইরে ফেলতে লাগল সে। থালাবাসনগুলোতে এখন আর হাত দেওয়া যাবে না। আর তাছাড়া বেশিক্ষণ পানি জমে থাকলে মেঝের টালিগুলোরও ক্ষতি হবে।
দুটো কাগজের রোল নিয়ে প্রতিটি ঘরের দেওয়াল মোছার কাজে লেগে পড়ল ড্যানি আর ক্রিস। রান্নাঘরের ছোট্ট মইটা নিয়ে এসেছিল ওরা। ওটাতে উঠে উঁচু জায়গাগুলোও পরিষ্কার করে ফেলছিল ক্রিস। ওদিকে ওদের ফেলে দেওয়া কাগজগুলো তুলে একটা বেশ বড়ো প্লাস্টিকের ব্যাগে তুলে রাখছিল মিসি।
বাড়ির সব পর্দা খুলে ফেলল জর্জ। যেগুলোতে কাদা লেগেছিল সেগুলো নিয়ে গিয়ে রাখল বেসমেন্টে, ওয়াশিং মেশিনে কাচতে হবে ওগুলো। আর যেগুলোতে লাগেনি সেগুলো এনে রাখল খাবার ঘরে, একটু রোদ উঠলেই শুকাতে দেবে। তাছাড়া ওই ঘরটাই বৃষ্টিতে সবচেয়ে কম ভিজেছে।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা কাজ করে চলল লুজরা। কারও মুখে তেমন কোনো কথা নেই। হুট করে ঘটে যাওয়া এই অদ্ভুত ঘটনা যেন ওদেরকে অদ্ভুত রকমের শক্ত করে তুলেছে। ওরা যেন ঠিক করেই নিয়েছে যে এত সহজে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটা ছেড়ে যাবে না। জর্জ, ক্যাথি, মিসি, ড্যানি, ক্রিস… সবাই-ই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত… তা সে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথেই হোক বা কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে…
হ্যারিও আজ বেশ শান্ত রয়েছে। মাঝে মাঝেই উঠে দাঁড়াচ্ছে তারপর নিজের ঘরের আশেপাশে জমে থাকা কাদায় পায়চারি করছে। মাঝে মাঝে গম্ভীর কণ্ঠে গর্জন করছে, যেন অচেনা কাউকে দেখলেই টুকরো টুকরো করে ফেলবে। অবাক চোখে নৌকা রাখার ছাউনির দিকে তাকাচ্ছে ও, নেকড়ে বাঘের মতো গর্জন ছাড়ছে। শব্দটা শুনে বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠল জর্জের, বাচ্চারাও বেশ কয়েকবার ভয় পেল।
সবগুলো পর্দা খোলার পর জানালার দিকে মন দিলো জর্জ। বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো প্লাস্টিকের শিট কেটে সাদা টেপ দিয়ে জানালার ফ্রেমে মেরে দিলো সে। পাল্লাগুলো পুরোপুরি আটকাতে এসব একেবারেই যথেষ্ট নয়। বেশি জোরে বাতাস উঠলে এগুলো কোনো কাজেই দেবে না, তবে এছাড়া তো আর কোনো উপায়ও নেই। আর ঠান্ডা হাওয়া একটু হলেও প্রতিরোধ করবে এসব। এমনিতে ঝড় যেহেতু হয়েছে, একটু পর তাপমাত্রাও বাড়বে।
আসলেই বাড়ল, ঠান্ডা বেশ খানিকটা কমে গেল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল জর্জ, আশেপাশের অনেক গাছেরই ডাল ভেঙে পড়ে আছে। সাউথ আয়ারল্যান্ড প্লেসের দিকে নজর পড়ল ওর, ওদিককার গাছগুলোর আরও খারাপ অবস্থা। তবে হ্যাঁ… পুরো অ্যামিটিভিলের আর কোনো বাড়িরই দরজা বা জানালা ভাঙেনি, শুধু ওদের বাড়িতেই এমনটা হয়েছে! অদ্ভুত ব্যাপার!
দরজা জানালাগুলোর লকেরও ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু ওগুলো ঠিক করার মতো যন্ত্রপাতি জর্জের কাছে নেই। তাই সে করল কী, প্লায়ার্স দিয়ে লোহার পাতগুলো একটু বেঁকিয়ে দিলো, যাতে করে মিস্ত্রি আসার আগ পর্যন্ত দরজাগুলো লেগে থাকে। তারপর সেগুলোর ওপর বেশ কয়েকটা লোহার পেরেক মারতে মারতে সে চেঁচিয়ে উঠল, “সাহস থাকলে এসব তুলে দেখাও, শয়তানের বাচ্চারা! কী ভাবছ? ভয় পেয়ে পালাব? তেমন মানুষ আমি নই!” তবে সেলাইঘর আর বাচ্চাদের খেলাঘরের দরজার যে পাতই উঠে গেছে! এখন? বেসমেন্টে গেল জর্জ, বেশ কয়েকটা ভালো লোহার পাত খুঁজে পেল সে। তারপর পাতগুলো আড়াআড়িভাবে দরজাদুটোর সাথে আটকে দিলো সে, এতে করে বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেল ঘরগুলো। ভেতর থেকে আর খোলার উপায় নেই। “হাহা,” হেসে উঠল জর্জ, “শয়তানের বাচ্চারা, এবার দেখব তোরা বের হোস কী করে!”
অবশেষে তদন্তকারী জর্জ কেকোরিসের ফোন এলো। সে জানাল যে জর্জদের বাড়িতে একটা রাত কাটাতে চায় ও। তবে সমস্যা হলো যে ওর কাছে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। তাই নর্থ ক্যারোলাইনার ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ও আসছে এমনটা ধরা যাবে না! ব্যক্তিগত উদ্যেগই বলা যায়…. তবে ওর দৃঢ় বিশ্বাস এক রাত থাকলেই ও বুঝতে পারবে যে বাড়িটার সমস্যা আসলে কী।
“ব্যাপার না,” হাসল জর্জ, “আপনি আসুন তো। অনেকেই আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না। আপনি যদি কিছু দেখেন… তাহলে এটা প্রমাণ হবে যে ব্যাপারগুলো আমার আর ক্যাথির কল্পনা নয়।”
“আপনি কি অদ্ভুত কিছু অনুভব করেন?”
“অদ্ভুত বলতে? অনেক কিছুই তো মনে হয়!”
“আচ্ছা আমি আসি, তারপর দেখছি। আপনার বাড়িতে কি কোনো কুকুর আছে?”
“আছে তো, হ্যারি। বাড়ি পাহাড়া দিতে বেশ ভালোই অভ্যস্ত ও।”
“বেশ বেশ, কুকুররা আবার এসব ব্যাপার বেশ ভালো বুঝতে পারে।”
ফোনটা রেখে দিলো জর্জ। অবশেষে কেউ তো আসছে!
***
দুপুর তিনটা দিকে রকভিল সেন্টারের বিশপের অফিস থেকে বের হলেন ফাদার রায়ান। ফাদার ম্যানকুসোকে নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। বিশপের অফিসের চ্যান্সেলর হিসেবে পুরো রাজ্যের সব রেক্টরিগুলোর খোঁজ রাখা ওনার দায়িত্ব।
লং আইল্যান্ডের সেক্রেড হার্ট রেক্টরিতে খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেলেন তিনি।
ফাদার ম্যানকুসোর অবস্থা একটু ভালো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মাত্র এই ক’দিনের মধ্যে তিনবার ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও যে তিনি বেঁচে আছেন এটাই তো অনেক!
“আমি শেষ ফাদার, মনে হয় আর বাঁচব না,” কেঁদে ফেললেন ফাদার ম্যানকুসো।
“আহ ম্যানকুসো শোনো… মহামান্য বিশপের সাথে তোমার ব্যাপারে কথা হয়েছে আমার। উনি নিশ্চিত নন যে, কোনো প্রেতাত্মার কুদৃষ্টির কারণে তোমার এই অবস্থা… হয়তো লুজদের নিয়ে মানসিক চাপে আছ তুমি, তাই এমনটা হচ্ছে?”
“বিশ্বাস করুন ফাদার! ওই বাড়িতে খারাপ কিছু একটা আছে। আপনি দয়া করে কাউকে পাঠান। নইলে আমিও বাঁচব না, লুজদেরকেও ওরা ছাড়বে না… দয়া করুন… নইলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! দরকার হলে আমিও যাব। “
“হুম, আমরা আর চাচ্ছি না যে তুমি ওই বাড়িতে যাও। তবে মহামান্য বিশপের তরফ থেকে যদি কোনো প্রতিনিধি ওখানে যান… তবে তার সাথে তুমি যেতে চাইলে আমরা আপত্তি করব না।”
চিন্তায় পড়ে গেলেন ফাদার। মুখ ফসকে একটু বেশিই বলে ফেলেছেন তিনি। বিশপের প্রতিনিধির সাথেও ওই বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা নেই তার। উনি যেতে না চাইলে চ্যান্সেলররাও জোর করতে পারবেন না অবশ্য। কিন্তু জর্জদের নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে ওনার। আবার ওই বাড়ির কথা ভাবলে ভয়ও করছে!
“আচ্ছা ফাদার,” দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ফাদার ম্যানকুসো, “এক কাজ করুন, আমাকে একটু মহামান্য বিশপের সাথে কথা বলাতে পারবেন? ওনার আথে আমি বাড়িটা নিয়ে কথা বলতে চাই! নইলে আর চলছে না।’
“হুম, আচ্ছা আমি অফিসে ফিরে যাচ্ছি… বিশপের সাথে আমার আজকে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন তোমাকে ফোন করব।”
***
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফোন করলেন ক্যাথির মা।
“ক্যাথি, তোমরা আজকে আসছ না ইস্ট ব্যাবিলনে?” জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।
“না মা,” মাথা নাড়ল ক্যাথি, “বাড়ির অবস্থা একেবারেই ভালো না। আমরা সবাই ব্যস্ত। না জানি কতক্ষণে সবকিছু ঠিক করতে পারব। সকালে অনেক কাপড় ধুতে হবে। আর তাছাড়া বাচ্চাদের স্কুলও তো আছে। এমনিতেই বেশ ক’দিন স্কুলে যায়নি ওরা।”
“আচ্ছা ঠিক আছে… কিন্তু কথা দাও কোনো ঝামেলা হলেই আমাকে ফোন করবে তুমি? আমি সাথে সাথে জিমিকে পাঠিয়ে দেবো তোমাদের নিতে।”
“ঠিক আছে মা, “ ফোনটা রেখে দিলো ক্যাথি। তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিল জর্জ।
“বুঝলে জর্জ,” ওকে ডাকল ক্যাথি, “মা ফোন করেছিলেন। বললাম আমরা যাচ্ছি না… গেলেই ভালো হতো না কি?”
“আরে না! ঠিকই আছে, এত সহজে হাল ছাড়ব না আমরা,” গর্জে উঠল জর্জ, “বাচ্চারা ঘুমানোর আগেই হ্যারিকে নিয়ে পুরো বাড়িটা একবার ঘুরে দেখব আমি। কেকোরিস বলেছে এসব ব্যাপার না-কি কুকুরেরা ভালো বোঝে!”
“জর্জ… এই বাড়ির অপশক্তিগুলো আবার রেগে যাবে না তো?” বলে উঠল ক্যাথি, “মনে আছে? আমরা যখন ক্রুসিফিক্স নিয়ে ঘুরছিলাম, তখন কী হয়েছিল?
“না না ক্যাথি, এটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। যদি হ্যারি কোনো গন্ধ পায়? বা কিছু শুনতে পায়? “
“তাতে কী লাভ হবে? আমরা কি ভূতেদের সাথে লড়তে পারব?”
হ্যারিকে দেখে মনে হচ্ছিল বেশ রেগে আছে কুকুরটা, সুযোগ পেলেই কাউকে কামড়ে দেবে। “কী খবর হ্যারি?” হাসল জর্জ, “চলো দেখি, বাড়িতে অদ্ভুত কিছু পাওয়া যায় না-কি! হুম?”
হ্যারির বাঁধন খুলে দিলো জর্জ, শক্ত করে ধরল দড়িটা। তারপর বাড়ির এদিক-সেদিক ঘুরতে লাগল ওরা। বেসমেন্টে নেমে কেমন যেন অদ্ভুতভাবে ডেকে উঠল কুকুরটা, তারপর অস্থিরভাবে কয়েক জায়গা শুঁকল। দেওয়ালে খামচি দিলো। কিন্তু লাল ঘরের সামনের সেই দেওয়াল আলমারিটার সামনে এসে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল সে, তারপর বাতাস শুঁকে লেজটা দুই পায়ের ফাঁকে ঢুকিয়ে পিছিয়ে এলো… যেন খুব ভয় পাচ্ছে, জর্জের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইল ও!
“কী হলো? কোনো গন্ধ পেয়েছ?” ফিসফিসিয়ে বলল জর্জ। ককিয়ে উঠল হ্যারি, আরও খানিকটা পিছিয়ে গেল সে। হ্যারি হুট করে এত ভয় পাচ্ছে কেন? তারপরেই বেশ জোরে ডেকে উঠল কুকুরটা… সিঁড়ি দিয়ে ছুটল ওপরের দিকে। দরজা বন্ধ, সেখানে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে হ্যারি। এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো জর্জ।
বসার ঘরে এলো ওরা।
“কী হলো?” বলে উঠল ক্যাথি।
“ওই গোপন দরজাটার সামনে যেতে ভয় পাচ্ছে হ্যারি,” মাথা নাড়ল জর্জ। এরপর হ্যারিকে নিয়ে রান্নাঘর, বসার ঘর আর হলঘর ঘুরে এলো সে। প্রতিটা ঘর বেশ ভালো করে শুঁকে দেখল হ্যারি। দোতালায় উঠতে যাবে, ঠিক তখনই আবার থমকে দাঁড়াল কুকুরটা।
“কী হলো হ্যারি? চলো, ওপরে যেতে হবে,” এই বলে দড়ি ধরে টান মারল জর্জ। কিন্তু একটা ধাপে পা রেখেই আবার নিচে নেমে এলো হ্যারি।
“দাঁড়াও বাবা, আমি ওকে ওপরে নিয়ে যাচ্ছি,” এগিয়ে এলো ড্যানি।
“না ড্যানি,” ওকে থামিয়ে দিলো জর্জ, “তুমি এখানেই থাকো, হ্যারিকে আমি দেখছি।” হ্যারিকে রীতিমতো টানতে টানতে কয়েক ধাপ ওপরে তুলল জর্জ প্রায় সাথে সাথেই দৌড়ে দোতালায় উঠে গেল কুকুরটা… তারপরেই আমার থমকে গেল!
ওপরে এসে ওকে নিয়ে এগিয়ে চলল জর্জ। শোবার ঘর আর সাজঘর বেশ ভালোই ঘুরে দেখল হ্যারি। কিন্তু মিসির ঘরের সামনে এসে আবার থমকে দাঁড়াল। পিছন থেকে ওকে ধাক্কা দিলো জর্জ, কিন্তু হ্যারি ভেতরে ঢুকবে না… পা দিয়ে জোরে ঠেলল, কিন্তু ফলাফল একই। সেলাই ঘরের সামনে এসেও প্রায় একই অবস্থা… জর্জের পিছনে লুকিয়ে কেমন যেন অদ্ভুতভাবে ডাকতে লাগল হ্যারি!
“আরে হ্যারি, করছ কী তুমি? ভেতরে কেউ নেই, এত ভয় কেন পাচ্ছ?” চেঁচিয়ে উঠল জর্জ। কিন্তু হ্যারি ভেতরে ঢুকল না।
তিন তলায় ছেলেদের শোবার ঘরে ঢুকেই ক্রিসের বিছানায় লাফিয়ে উঠল জর্জ। আর নামতেই চায় না! তাড়া দিলো জর্জ, তারপর এক লাফে চলে গেল সিঁড়ির কাছে। এত জোরে যে হ্যারি চলে যাবে, ভাবতেও পারেনি জর্জ। যাওয়ার সময়ে খেলাঘরের দরজার দিকে একবারও তাকায়নি কুকুরটা। নিচতলায় চলে এলো হ্যারি, কিছুক্ষণ পর নামল জর্জ।
“কী হলো?” ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল ক্যাথি
“কিছু না, কী আর হবে,” খেঁকিয়ে উঠল জর্জ।
***
ওদিকে বিশপের অফিস থেকে ফোন এসেছে ফাদার ম্যানকুসোর কাছে। সকালবেলা ওনার সাথে দেখা করতে চান বিশপ, ফাদারের যদি কোনো অসুবিধা না থাকে তবে উনি অফিসে চলে আসতে পারেন।
“আসব আসব,” মাথা নাড়লেন ফাদার, “আমার বাড়ি থেকে মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা। আর আমার জ্বরও তেমন নেই। রেডিয়োতে যা শুনলাম, কাল বরফও পড়বে না। চলে আসব, সমস্যা নেই!”
***
ওদিকে রাতের বেলা পুরো লুৎজ পরিবার জড়ো হলো জর্জ আর ক্যাথির শোবার ঘরে। বাচ্চারা বিছানায় শুয়ে পড়ল, জর্জ আর ক্যাথি বসে রইল ভাঙা জানালার সামনের চেয়ারদুটোতে। ঘরটা কেন যেন একটু বেশিই গরম মনে হচ্ছিল, সবারে চোখ কুটকুট করতে শুরু করল। জর্জ আর ক্যাথি ভাবল সারাদিন পরিশ্রম আর দুশ্চিন্তার কারণে এমনটা হচ্ছে। একে একে সবাই ঘুমিয়ে পড়তে লাগল। প্রথমে মিসি, তারপর ক্রিস, ড্যানি, ক্যাথি আর সবার শেষে জর্জ।।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই জর্জকে ঝাঁকিয়ে ওর ঘুম ভাঙাল ক্যাথি। অবাক হলো জর্জ, ওরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে ওর চেয়ারের সামনে… ওদের চোখে পানি।
“হলো কী তোমাদের?” ঘুম জড়ানো কণ্ঠে প্রশ্ন করল সে।
“তুমি ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছিলে জর্জ,” শব্দ করে কেঁদে উঠল ক্যাথি, “আমরা অনেক চেষ্টা করেও তোমাকে জাগাতে পারছিলাম না!”
“হ্যাঁ বাবা,” বলল মিসি, “মা অনেক ভয় পেয়েছে! আমরাও…”
“তাই না কি?” জর্জের ঘুমের ভাবটা যেন যাচ্ছেই না, “আমি কাউকে মেরেছি? হুম?”
“আরে না,” জর্জের কপালে চুমু খেলো ক্যাথি, “তুমি কাউকেই মারোনি!”
“তাহলে? কী হয়েছে?”
“তুমি চিৎকার করে শুধু একটা কথাই বলছিলে, ‘আমি টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছি’… শুধু এটুকুই! কত চেষ্টা করে যে তোমাকে জাগালাম…’