দ্য অ্যামিটিভিল হরর – ১৩

ত্রয়োদশ অধ্যায়

১ জানুয়ারি, ১৯৭৬। 

 ওই অদ্ভুত জিনিসটা দেখার পর কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিল জর্জ আর ক্যাথি। ধাক্কা সামলে বিছানায় যেতে যেতে রাত একটা বেজে গেল ওদের। বড়োজোর পাঁচ মিনিট ওরা চোখ বন্ধ করে শুয়েছে, এমন সময়ে হুট করেই ঘর জুড়ে শুরু হলো ঝড়ো হাওয়ার দাপাদাপি। এই অবস্থায় আর শুয়ে থাকা যায়? 

যদিও ক্যাথির ওঠার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু হুট করেই অদৃশ্য কেউ যেন ওদের দু’জনের গা থেকে কম্বলদুটো টেনে নিল! দুম-দাম আওয়াজ শুরু হলো চারদিকে, নিচতলায় ঝনঝন শব্দ করে কী যেন ভেঙে পড়ল। প্রচণ্ড ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসল ওরা দু’জন… ঘরের সবগুলো জানালা হাট করে খোলা! দমকা হাওয়ার কারণে দরজার পাল্লাদুটো কাঁপছে। 

বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে জানালা বন্ধ করতে ছুটল জর্জ, ওদিকে ক্যাথি মেঝে থেকে কম্বলদুটো টেনে তুলল বিছানায়। আচমকা কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়াতে দু’জনেই হতভম্ব। বাইরের হলঘরেও বেজায় জোরে বাতাস বইছে, দরজা বন্ধ থাকার পরেও সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছে ওরা। 

জানালাগুলো বন্ধ করে দরজা খুলতেই ঠান্ডা হাওয়ার একটা প্রচণ্ড ঝাপটা লাগল জর্জের মুখে। হলঘরের আলো জ্বালাতেই রীতিমতো চমকে উঠল সে… সেলাইঘর আর সাজঘরের দরজাগুলো একেবারে খোলা! ওগুলো দিয়েই হলঘরে বাতাস আসছে, কেবলমাত্র মিসির ঘরের দরজাটা বন্ধ আছে। 

প্রথমেই সাজঘরে গেল জর্জ, ওটার সব জানালা খোলা! ঝড়ো হাওয়ার দাপটের মধ্যে কোনোমতে জানালাগুলো লাগিয়ে সেলাইঘরে ছুটল সে। এখানেও সব জানালা খোলা! ঠান্ডা হাওয়ার কারণে চোখে রীতিমতো পানি এসে গেছে ওর, ওই অবস্থাতেই একটা জানালা বন্ধ করল সে। কিন্তু নদীর দিকের জানালাটা কোনোমতেই বাগে আসছিল না, বাধ্য হয়ে কাঠের ফ্রেমে দমাদম কিল মারতে লাগল জর্জ… সেই কিলের কারণেই হয়তো পিছলে নেমে বন্ধ হয়ে গেল পাল্লাটা।

রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে জর্জ। হাওয়া আর নেই, কিন্তু পুরো ঘর জুড়ে নেমে এসেছে কনকনে ঠান্ডা। কাঁপতে লাগল জর্জ, ওর পরনে শুধুই একটা পায়জামা। একটু ধাতস্থ হয়ে আশপাশটা দেখে নিল সে, তারপরেই মনে পড়ল ক্যাথির কথা! ওকে এভাবে একা ঘরে রেখে আসাটা ঠিক হয়নি! 

“ক্যাথি… সোনা, তুমি ঠিক আছ তো?” চেঁচিয়ে উঠল জর্জ। 

ওদিকে জর্জের সাথে সাথেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল ক্যাথি। সবগুলো দরজা খোলা, কিন্তু মিসির ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ভয় পেয়ে যায় সে। মেয়েটার কিছু হয়ে গেল না তো? দৌড়ে গিয়ে মিসির ঘরে ঢুকে আলো জ্বালায় সে। 

এই ঘরটা কিন্তু উষ্ণই আছে, একটু বেশিই উষ্ণ আরকি। জানালাগুলোও লাগানো, বিছানাতে গভীর ঘুমে মগ্ন মিসি। সহসা ওর নজর পড়ল জানালার পাশে রাখা মিসির চেয়ারটার দিকে। দোল খাচ্ছে ওটা… যেন কেউ বসে আছে… অদৃশ্য কেউ! তখনই জর্জের কণ্ঠ শুনতে পেল সে, “ও ক্যাথি, তুমি ঠিক আছ তো?” 

“এইতো আমি এখানে,” চেঁচিয়ে উঠল ক্যাথি। 

মিসির ঘরে ঢুকে চমকে গেল জর্জ। এত গরম কেন ঘরটা? মনে হচ্ছে যেন ফায়ারপ্লেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। এক নজরে পুরো ঘরটা দেখে নিল সে। বিছানায় ঘুমাচ্ছে মিসি, ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ক্যাথি… দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারণে ভয় পেয়েছে… মিসির চেয়ারটা আগে-পিছে দোল খাচ্ছে। 

চেয়ারটা দিকে এগিয়ে যেতে লাগল জর্জ, সাথে সাথে থেমে গেল ওটা! থমকে দাঁড়াল জর্জ… এটা কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ হতে পারে না… চেয়ারটা ওভাবে দুলছিল কেন? হুট করে থেমেই বা কেন গেল? 

“ক্যাথি, মিসিকে কোলে নাও, নিচে যেতে হবে আমাদের, এখনই,” চেঁচিয়ে উঠল জর্জ। 

কোনো প্রশ্ন না করেই কম্বলে জড়িয়ে বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে তুলে নিল ক্যাথি, তারপর বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ওর সাথে সাথে জর্জও বেরিয়ে এলো, আলো বন্ধ না করেই দ্রুত ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিলো সে। সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে একতলায় নামতে লাগল ক্যাথি, পুরো বাড়িটাতেই যেন অপার্থিব এক শীত নেমে এসেছে। আর জর্জ তিন তলায় দৌড় দিলো, ড্যানি আর ক্রিসের ঘরটা দেখতে হবে ওকে। 

কয়েক মিনিট পর নিচে নেমে এলো সে। বসার ঘরে ফায়ারপ্লেসের সামনের চেয়ারটায় চুপচাপ মিসিকে কোলে নিয়ে বসে আছে ক্যাথি, ভয়ে আলোও জ্বালায়নি। মিসির ঘুম এখনও ভাঙেনি। আলো জ্বেলে দিলো জর্জ। অন্ধকারে বেজায় ভয় লাগছে ওর। 

জর্জকে দেখেই উঠে এলো ক্যাথি। 

“ড্যানি আর ক্রিস ঘুমাচ্ছে,” মাথা নাড়ল জর্জ, “তিন তলাতেও বেশ ঠান্ডা… কিন্তু ওদের কোনো সমস্যা হয়নি।” 

“ঈশ্বরকে ধন্যবাদ,” দীর্ঘশ্বাস ফেলল ক্যাথি। ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেল সেই নিশ্বাস। 

তাড়াতাড়ি ফায়ারপ্লেসে লেগে পড়ল জর্জ, বাড়ির তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। আগুন জ্বালাতে হবে। ঠান্ডায় হাতের আঙুলগুলো রীতিমতো অবশ হয়ে আছে, পায়েরগুলোর অবস্থা আরও খারাপ… খালি পায়েই নিচে নেমে এসেছে সে। পাতলা পায়জামা আর শার্টে শীত যেন আর মানছিল না। প্রথমে পুরাতন কয়েকটা খবরের কাগজে আগুন ধরাল জর্জ, তারপর ওগুলোকে ফায়ারপ্লেসে ভরে পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগল। বাইরে এখনও বাতাসের গর্জন শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেশ জোরাল হয়ে উঠল আগুন। 

“ক্যাথি,” আস্তে করে বলল জর্জ, “ক’টা বাজে এখন?” ওই সময়ে বলার মতো আর কিছু পাচ্ছিল না সে। 

জবাবে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল ক্যাথি। পরবর্তীতে জর্জ আমাদের বলেছে ক্যাথির ওই চাহনির কথা ও জীবনেও ভুলবে না। ওখানে যেন মিশে ছিল পৃথিবীর সব বিষণ্ণতা। 

যা-ই হোক, কিছুক্ষণ পর মুখ খুলল ক্যাথি, “মনে হয়…” কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারল না, তার আগেই কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। কাঁপছিল ওর শরীরটা। পড়েই যাচ্ছিল সে, কিন্তু জর্জ শক্ত হাতে ধরে ফেলল বউকে। মিসিকে আঁকড়ে ধরে ফোঁপাতে ফোঁপাতে ক্যাথি বলল, “ওহ জর্জ, আমি আর পারছি না… খুব ভয় লাগছে, এই বাড়িতে থাকলে আমরা কেউ আর বাঁচব না। “ 

“কেঁদো না ক্যাথি,” ওকে জড়িয়ে ধরল জর্জ, “আমি আছি না? আমি থাকতে তোমার কেউ কিছু করতে পারবে? তুমি বলো? পারবে?” তারপর ক্যাথিকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো সে, “বাচ্চাদের কিছু হবে না। তুমি দেখে নিয়ো, আমরা সবাই ভালো থাকব! কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না। 

বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই থাকল ওরা। আগুনের তেজ আরও বেড়ে গেছে, ঘরটা বেশ গরম হয়েছে। কান পাতল জর্জ, বাইরে হাওয়ার দাপটও খানিকটা কমেছে। বেসমেন্টের অয়েল বার্নারটা ‘ক্লিক’ করে একটা শব্দ করল। জর্জ বুঝতে পারল যে ভোর ছ’টা বেজে গেল। নববর্ষের প্রথম সকালটা এমন কাটল! না জানি পুরো বছরটা কেমন কাটবে! 

সকাল ন’টার মধ্যে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটার তাপমাত্রা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে এলো। থার্মোস্টাট পরীক্ষা করল জর্জ, ৭৫ ডিগ্রি; বেশ ভালোই। সেই হিম ঠান্ডা আর নেই। এক তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সবগুলো জানালা পরীক্ষা করে দেখেছে সে, সবগুলোর ছিটকিনি ঠিকই আছে! তার মানে কেউ কারসাজি করে ওগুলো খোলেনি! কিন্তু তবে? খুলল কেন ওগুলো? 

এখন পর্যন্ত এই প্রশ্নের কোনো উত্তর জানা নেই জর্জ বা ক্যাথির। 

অবশেষে জর্জ ধরে নিল যে ঝড়ো বাতাসের কারণেই জানালাগুলোর পাল্লা ওপরে উঠে গেছিল। কিন্তু ঝড়ের কারণেই যদি জানালা খুলবে তবে শুধু দুই তলার জানালাগুলোই কেন খুলল? এক আর তিন তলা কী দোষ করেছিল? বাড়িতে থাকলে বারবার এসব উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসবে, তাই অফিস যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জর্জ। আজকে ছুটির দিন, কর্মচারীরা কেউই থাকবে না তেমন। না থাকুক, ফাইলগুলো তো আছে। ওরা কেমন কাজ করছে সেটা একটু যাচাই করে দেখতে চায় জর্জ। 

উইলিয়াম এইচ. প্যারি ইনকরপোরেটেড’র মোট চারটি দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করে। এই দলগুলোর নেতৃত্বে থাকেন একজন করে প্রকৌশলী, তার অধীনেই কাজ করে জরিপকারী আর বাকি সব লোকেরা। এখন পর্যন্ত নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড়ো ভবনের পরিকল্পনা আর নকশা ওদের করা, লং আইল্যান্ডের গ্লেন ওকস’র বিখ্যাত ‘গ্লেন ওকস টাওয়ার’র নকশা তারা করেছিল। জামাইকার একটি পুরো আবাসিক এলাকার পরিকল্পনাও ওরাই করে দিয়েছিল। এছাড়া ছোটো-বড়ো অনেক কোম্পানির হয়েই ভূমি জরিপ করে দেয় ওরা। কখন কে কোন কাজ হাত দেবে এটা ঠিক করা খুবই কঠিন। মালিক হিসেবে জর্জকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। গত কয়েকদিন ধরে ও আসেনি, দায়িত্বটা একজন বয়স্ক নকশাকারকে দিয়ে রেখেছিল জর্জ। লোকটা বেশ অভিজ্ঞ, ওর বাবার সাথে কাজ করেছে… ওর দাদার আমলে চাকরিতে ঢুকেছিল আরকি। 

গত বছরের শুরুতে মায়ের কাছ থেকে কোম্পানির পুরো দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে জর্জ। বড়ো বড়ো ভবন নির্মাণ কোম্পানিগুলোর কাজ করে দেওয়ার পর ওদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে বেশ বেগ পেতে হয় জর্জকে। ওর বাবার সময়ে যেমনটা ছিল তার চেয়ে ঢের বেশি বড়ো হয়েছে এখন কোম্পানি, সেই সাথে বেড়েছে খরচও। অফিসের জন্য কেনা ছয়টা গাড়ি আর কিছু যন্ত্রপাতির দাম এখনও শোধ করা হয়নি… সেগুলোর চিন্তাও করতে হচ্ছে। নাহ, অ্যামিটিভিলে আসার পর থেকে কেমন যেন দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছে জর্জ! আর না, এবার ওকে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। 

*** 

সকাল দশটা বাজে। ফাদার ম্যানকুসো জেগেই আছেন। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, হাতের যন্ত্রণাটা বেজায় বেড়ে গেছিল। বাধ্য হয়ে ডাক্তারকে ফোন দিয়েছিলেন তিনি। সব শুনে ডাক্তার বললেন, “বেশি ব্যথা হলে বা চুলকালে বুরোস সলিউশনে[১০] হাত ডুবিয়ে রাখবেন, আরাম পাবেন।” গির্জাতেই ছিল ওটা। এক অল্পবয়স্ক যাজক রাত দুটোর দিকে বাটিতে খানিকটা সলিউশন ঢেকে রেখে গেছে ওনার টেবিলে। একটু পর পর হাত ডুবিয়ে বেশ আরামই পেয়েছেন ফাদার। সকাল সাতটাতেই বিছানা ছেড়েছেন তিনি, কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে বিছানায় শুয়ে থাকলেই ভালো হতো। 

[১০. পানি আর অ্যালুমিনিয়াম অ্যাসিটেটের মিশ্রণে বানানো সলিউশন।]

হাতের চুলকানি আর ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে, কিন্তু জ্বর এখনও আছে। তাহলে কি ওষুধ কাজ করছে না? বারবার শুধু ওশান অ্যাভিনিউয়ের বাড়িটার কথা পড়ছে। নাহ, মনকে অন্যদিকে সরাতে হবে। হাতের কাছে পড়ে থাকা ম্যাগাজিনগুলো নিয়ে বসলেন ফাদার। আজকাল ওগুলোতে আমেরিকার নানান গির্জা সম্পর্কে বেশ ভালোই প্রবন্ধ লেখা হয়। পরবর্তী তিন ঘণ্টাতে প্রায় এক ডজন ম্যাগাজিন পড়ে শেষ করলেন ফাদার। শেষ ম্যাগাজিনটা টেবিলে রাখার সময় দেখলেন প্রচ্ছদে খানিকটা হলুদ রস লেগে আছে। 

হাত উলটে দেখলেন ফাদার। ফোসকাগুলো দিয়ে রস বের হচ্ছে, মনে হচ্ছে যে-কোনো মুহূর্তে ফেটে যাবে ওগুলো। 

*** 

দুপুরের দিকে সিয়োসেটে পৌঁছল জর্জ। ফাইলগুলো নিয়ে বসে পড়ল এক কোণে, তারপর একঘণ্টা ধরে নানান যোগ-বিয়োগ করে বুঝতে পারল যে পরিমাণ টাকা আসছে তার চেয়ে বেশিই খরচ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে কিছুদিনের মধ্যে ব্যাবসাতে লালবাতি জ্বলে যাবে। কিছু কর্মচারী ছাঁটাই ছাড়া উপায় নেই। 

কিন্তু ছাঁটাই করে আবার কর্মীদের পেটে লাথি মারতেও বিবেকে বাঁধছে ওর। বর্তমানে জমি জরিপ আর বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রগুলোতে কাজ খুবই কম। লোকগুলোকে একবার বের করে দিলে ওরা সহজে নতুন চাকরি পাবে না। কিন্তু আগে নিজের কোম্পানি তো বাঁচাতে হবে, তাই না? কোথা থেকে ছাঁটাই শুরু করা যায়? ভাবতে লাগল জর্জ, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারল না। ওর মাথায় আরও কতগুলো চিন্তা ঘুরছে। আগামীকাল শুক্রবার… শনি আর রবিবার ব্যাংক বন্ধ। বিভিন্ন মালামাল যাদের কাছ থেকে নিয়েছিল তাদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা নেই তেমন, ওদিকে ক্যাশিয়ার ঠিকই ওদের চেক দিয়ে বসে আছে! কী আর করা? অন্য অ্যাকাউন্টগুলো থেকেই টাকা ওখানে পাঠিয়ে দিতে হবে। কোন অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা পাবে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ল জর্জ, এভাবেই কেটে গেল কয়েক ঘণ্টা। 

১৮ ডিসেম্বরের পর এই প্রথম জর্জ মন দিয়ে অফিসে কয়েক ঘণ্টা কাজ করল। ওশান অ্যাভিনিউয়ের ভয়ংকর বাড়িটার কথা একটিবারও মনে এলো না তার। 

ওদিকে ওর বউ কিন্তু একমনে ভেবে যাচ্ছে বাড়িটার কথা। জর্জকে মুখ ফুটে কিছু বলেনি সে, কিন্তু গত দুই সপ্তাহের ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবলে যে-কোনো মানুষই বুঝতে পারবে এই বাড়িতে অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তির প্রভাব রয়েছে। আর এসব জর্জকে বলেও লাভ নেই, ও বিশ্বাস করবে না। সেদিন যে ওর চোখের সামনেই সিংহমূর্তিটা সরে এসেছিল, সেটা জর্জকে এজন্যই বলেনি সে। 

কিন্তু এমন একটা ব্যাপার গোপন রাখাটাও বেশ কঠিন… তীব্র মানসিক অশান্তিতে একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছে ক্যাথি। নাহ, জর্জকে বলা যাবে না… কিন্তু অন্য কাউকে তো বলাই যায়। কাকে? প্রথমেই মায়ের কথা মনে পড়ল। কিন্তু জোয়ান কনার্স বেশ গোঁড়া ধার্মিক… নিজের সামান্য অসুখ হলেও এই মহিলা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে এক যাজক বন্ধুর কাছে যান। ক্যাথির কথা শুনে ওকেও জোর করে ওই লোকের কাছে নিয়ে যাবেন! 

আর তাছাড়া ব্যাপারটা যে ভূত-প্রেতের কারসাজি এটাও কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারে ক্যাথি? এমনটাও তো হতে পারে যে এটার পিছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে? এমন একজনকে বলতে হবে যেকোনো প্রশ্ন না করে পুরো ঘটনাটা শুনবে, তারপর মতামত দেবে। 

হ্যাঁ, এমন একজন আছেন—ফাদার ম্যানকুসো। যাজক হলেও মানুষটা বেশ উদারমনা। রান্নাঘরে গিয়ে ওনার নম্বর ডায়াল করল ক্যাথি। একবার রিং হলো… সাথে সাথেই পুরো রান্নাঘরটা ভরে গেল মিষ্টি একটা গন্ধে! ক্যাথির পরিচিত সেই পারফিউমের গন্ধ… হে ঈশ্বর! আবার ওকে অদৃশ্য কেউ এসে জড়িয়ে ধরবে না তো? 

ওপাশে আবার রিং হলো, কিন্তু ক্যাথির আর কথা বলার ইচ্ছা নেই। তাড়াতাড়ি রিসিভারটা নামিয়ে রেখে রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো সে। 

*** 

ওদিকে রেক্টরিতে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে চুপচাপ বসে আছেন ফাদার। ওনার হাত ডোবানো সলিউশনে। একটু আগেই হাতের ফোসকাগুলো দিয়ে রক্ত পড়ছিল, এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তোয়ালেতে হাত মুছতে লাগলেন তিনি, সাথে সাথে বসার ঘরের ফোনটা বেজে উঠল। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পরেই ফাদার গিয়ে ধরলেন ফোনটা। 

“হ্যালো,” ফোনটা ধরতেই তিনি বুঝতে পারলেন ওপাশ থেকে কল কেটে গেছে। “এসব আবার কী?” ফোনটা রেখে আপনমনেই বললেন তিনি, “আচ্ছা লুৎজদের আবার কিছু হলো না তো? আরে না না, ওসবের মধ্যে আমি নেই। ওরা যদি কখনও ফোন দেয় তখন ভেবে দেখব। নিজে থেকে আর কিছু করব না।” 

বাথরুমে এলেন ফাদার। হাতের ফোসকাগুলো দেখে বেজায় ঘেন্না লাগছে তার। তারপর আয়নায় নিজের মুখটা দেখলেন। বেজায় কাহিল দেখাচ্ছে… এই ক’দিনে বয়স যেন কয়েক বছর বেড়ে গেছে। “এসবের শেষ কোথায়?” নিজেই নিজের প্রতিবিম্বকে প্রশ্ন করলেন যেন। চোখের কোণে কালি পড়ে গেছে, চেহারাও ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে! খোঁচা খোঁচা দাড়ির কারণে আরও বিশ্রী লাগছে… দাড়ি কামানো দরকার। কিন্তু হাতের যে অবস্থা, রেজার তো ধরতেই পারবেন না তিনি। 

হুট করেই প্রেততত্ত্বের কথা মনে পড়ল ফাদারের। বিষয়টার বিস্তৃতি অনেক বেশি, অনেক যাজক তো এটা নিয়ে কাজ করেই সারাজীবন কাটিয়ে দেন। ছাত্র থাকার সময় থেকেই এই বিষয়টা কেন যেন পছন্দ না ম্যানকুসোর। এমনকি আজকাল ছাত্রদের ক্লাসও নেন তিনি, কিন্তু এই বিষয়টা কখনোই পড়াননি। প্রধান যাজক বারবার বলেছেন এটা নিয়ে আরেকটু পড়াশোনা করতে, 

কিন্তু ম্যানকুসোর একেবারেই আগ্রহ হয়নি। 

অনেক ক্যাথলিক আর প্রোটেস্ট্যান্ট যাজকই আজকাল বেশ ভালো ওঝাগিরি করছেন। ওদিকে অর্থডক্সদের মধ্যে এর চর্চা নিয়ে খানিকটা নিষেধাজ্ঞা ছিল এককালে, এখন আর নেই। ফাদার ম্যানকুসোর সাথে তেমন কোনো ভালো ওঝার পরিচয় নেই। হ্যাঁ, ভূত-প্রেত তাড়ানোর অধিকার সব যাজকেরই রয়েছে। তবে এই নিয়ে ক্যাথলিক চার্চ বেশ খানিকটা রক্ষণশীল, ক্যাথলিক মতে এই কাজ শুধু সেসব যাজকেরই করা উচিত যারা শুরু থেকেই প্রেততত্ত্বকে গুরত্ব দিয়ে আসছেন, কাজটায় যথেষ্ট বিপদ আছে… তাই বিশেষজ্ঞ ছাড়া কাউকেই এই কাজে হাত দিয়ে উৎসাহিত করে না ক্যাথলিকরা। ওদিকে প্রোটেস্ট্যান্টরা আবার এদিক দিয়ে বেশ উদার, ওরা বলে সব যাজকই ওঝাগিরি করতে পারে। 

ফাদার ম্যানকুসো বেশ কয়েকবার ভেবেছেন, যে ওই বাড়িটা নিয়ে তিনি কোনো প্রেত বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওই যে বললাম… তেমন কাউকে তিনি চেনেনই না। অবশেষে ঠিক করলেন প্রধান যাজককে সব খুলে বলবেন। দেখা যাক, তিনি কী বলেন। 

*** 

সকালের তীব্র তুষারপাতের কারণে হাইওয়ের অবস্থা একেবারে যাচ্ছেতাই। ভেতরের শর্টকাটগুলো? সেগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। বেলা বাড়তে লাগল, তাপমাত্রা আরও কমে গেল… তুষারপাতও থামল না। পুরো লং আইল্যান্ড জুড়ে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে গেল রীতিমতো। সেদিন কত গাড়ি যে বরফে আটকে গেছিল তার ইয়ত্তা নেই। তবে জর্জ অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে গেছিল, তাই কোনো সমস্যা ছাড়াই ভ্যানটা নিয়ে বাড়ি চলে এলো সে। 

ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটার গ্যারেজে ঢোকার রাস্তায় বরফ জমে বেশ উঁচু হয়ে আছে। পরিষ্কার না করে ভ্যান ঢোকানো সম্ভব না। শরীরটা বেজায় ক্লান্ত লাগছে জর্জের। এখন বরফ পরিষ্কার করা সম্ভব না ওর পক্ষে, তাই গাড়িটাকে রাস্তাতেই পার্ক করে রাখল ও। একটু আগেই পৌরসভার স্নো-ট্রাক এসে পরিষ্কার করে গেছে রাস্তাটা। 

রাস্তায় বরফের মধ্যে খেলছে ড্যানি আর ক্রিস। রান্নাঘরের সিঁড়ির ধাপের ওপর হেলান দিয়ে রাখার ওদের স্লেজদুটো। ভেতরে ঢুকে জর্জ দেখল বরফমাখা পায়ের ছাপ রান্নাঘর হয়ে ওপরতলায় যাওয়ার সিঁড়ির দিকে চলে গেছে। ক্যাথি সম্ভবত ওপরে রয়েছে, নিচতলায় থাকলে এতক্ষণ এই ছাপ দেখে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলত মেয়েটা! পরিচ্ছন্নতার ব্যাপার বেজায় খুঁতখুঁতে ওর বউ 

ক্যাথি দোতালাতেই ছিল। শোবার ঘরের বিছানায় বসে বসে বড়োদিনে উপহার দেওয়া একটা বই থেকে মিসিকে গল্প পড়ে শোনাচ্ছিল সে। আনন্দে রীতিমতো হাততালি দিচ্ছিল মিসি, হয়তো হাসির কোনো গল্প শোনাচ্ছে? 

“কী খবর তোমাদের?” হাসল জর্জ। 

ক্যাথি আর মিসি দু’জনেই একসাথে মুখ তুলে তাকাল। “বাবা!” লাফিয়ে নেমে এলো মিসি। 

“যাও, এবার তবে বাবার কাছেই থাকো?” হাসল ক্যাথি, “আমি রান্না করি গিয়ে।” 

সেই সন্ধ্যায়, অনেকদিন পর শান্তি করে সন্ধ্যার নাস্তা খেলো লুজরা। ক্যাথিকে না জানিয়েই ড্যানি আর ক্রিসকে পায়ের ছাপগুলো মুছতে বলেছিল জর্জ, বাবার কথামতোই কাজ করেছিল ওরা। ঠান্ডায় খেলার জন্য এখনও ওদের মুখ কেমন যেন লালচে হয়ে আছে। একমনে হ্যামবার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়ে চলেছে ছেলেদুটো, আসলে ওদের জন্যই এগুলো বানিয়েছে ক্যাথি। ওরা এসব খাবার খুব পছন্দ করে। 

মিসি নানান মজার মজার কথা বলে সবাইকে হাসাচ্ছে, এইটুকু বয়সেও মানুষকে ভালোই হাসাতে পারে মেয়েটা। শুধু কী তাই? সুযোগ পেলেই দুষ্টুমি করছে সে। যখনই ওর ভাইয়েরা একটু অন্যমনস্ক হচ্ছে সাথে সাথে ওদের প্লেট থেকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তুলে মুখে পুরছে সে। একটু পরেই ক্রিস ধরে ফেলল ওকে! ওমা! সাথে সাথে ফোকলা দাঁতের খিলখিলে হাসিতে ভাইয়ের রাগ পানি করে দিলো মেয়েটা। 

জর্জ বাড়িতে থাকার কারণে ক্যাথিরও আর ভয় লাগছে না। একবার ভেবেছিল বিকালবেলায় পাওয়া সেই পারফিউমের গন্ধের কথা জর্জকে জানাবে। কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশটাকে শুধু শুধু অমন কথা বলে নষ্ট করার কি খুব দরকার? তাই আর জানাল না। টেবিলের আশপাশে তাকালেই মন ভরে যাচ্ছে ওর। স্বামী আর বাচ্চাদের হাসিমুখ দেখতে সব মেয়েরই ভালো লাগে! এর মধ্যে ভূতের কথা কে তোলে? আর তাছাড়া ওসব তো ওর কল্পনাও হতে পারে! 

ওদিকে জর্জও নিজের ব্যবসার ঝামেলার কথা ভুলে গেছে। বাড়িতে আসার পর বেজায় ভালো লাগছে ওর। নিজের একটা বাড়ি তো আছে! আমেরিকাতে এটাই বা ক’জনের থাকে? বাড়ি মানে ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর মমতার আশ্রয়… কেন যেন খুব খুশি লাগছে ওর। লোকেরা বিয়ে করে কয়েক বছর অপেক্ষায় থাকে সন্তানের জন্য, সেখানে ওর ভাগ্য কত ভালো… বিয়ের সাথে সাথেই তিনটে সন্তান পেয়ে গেছে। এরকম জীবনই সে চায়, বাইরে যতই সমস্যা থাকুক… বাড়ির লোকেরা যেন সব অবস্থাতেই খুশি থাকে। ক্যাথির সাথে একটা স্টেক ভাগাভাগি করে খেলো সে, তারপর সিগারেট ধরিয়ে দুই ছেলের সাথে বসার ঘরে চলে গেল। হ্যারিকে খাওয়ানোর জন্য ভেতরে এনেছিল সে, ওকে নিয়ে মেতে উঠল ক্রিস আর ড্যানি। ফায়ারপ্লেসের সামনে খেলতে লাগল ওরা। সেদিন আটটার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে নিল ওরা, কিছুক্ষণের মধ্যে হাই উঠতে লাগল ওদের। ওপরে চলে গেল ওরা, পিছে পিছে ক্যাথি আর মিসিও গেল। 

সবাই যাওয়ার পর হ্যারিকেও ওর ঘরে নিয়ে চলল জর্জ। উঠানে এখনও কিছু জায়গায় বরফ পড়ে আছে। হ্যারির গলায় দড়ি পরিয়ে সেটাকে এক কোনায় বেঁধে দিলো জর্জ। একটু ঘুরে-ফিরে মোটামুটি আরামদায়ক জায়গায় শুয়ে পড়ল হ্যারি। মাত্র কয়েক মুহূর্তের চোখ বুজে এলো তার… জর্জ অবাক হয়ে খেয়াল করল এটুকুর মধ্যেই হ্যারি ঘুমিয়ে পড়েছে! 

“নাহ, থামা যাবে না,” বলে উঠল জর্জ, “শনিবারেই তোমাকে পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।” 

মিসিকে ঘুম পাড়িয়ে নিচের বসার ঘরে ফিরে এলো ক্যাথি। জর্জ পুরো বাড়িটা ঘুরে এলো, দু’বার করে দেখেছে জানালাগুলো, সব ভালো করে লাগানো। হ্যারিকে রেখে আসার সময় নৌকা রাখার ছাউনিটাও দেখে এসেছে। 

“বুঝলে ক্যাথি, আজ রাতে দেখব কী হয়,” বলে উঠল সে, “আজ তো বাইরে তেমন বাতাসও নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাল কোনো শয়তান লোক বাইরে থেকে এসে ওসব করেছিল! আমাদের ভয় দেখানোর জন্য।” 

রাত প্রায় দশটা বেজে গেছিল। জর্জ আর ক্যাথি দু’জনেরই ঘুম আসছে। ফায়ারপ্লেসের আগুন কিছুটা কমজোর হয়ে ধোঁয়া উঠছে, ক্যাথির চোখ জ্বলতে শুরু করল। জর্জ খুঁচিয়ে আধপোড়া কাঠগুলোকে আলাদা করে তারপর ওগুলোর ওপর পানি ঢেলে দিলো। ঝাড়বাতির সুইচ বন্ধ করে দিলো ক্যাথি। বলতে গেলে পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে এলো ঘরটা। 

জর্জের হাত ধরার জন্য হাত বাড়াল ও, ঠিক তখনই নজর পড়ল জানালার দিকে… চিৎকার করে উঠল সে! 

জর্জের কাঁধের ওপর দিয়ে বসার ঘরের জানালাটার দিকে নজর পড়েছে ক্যাথির। ওখানে ফুটে উঠেছে এক জোড়া লাল চোখ… অপলক দৃষ্টিতে যেন জর্জ আর ক্যাথির দিকে চেয়ে আছে কোনো প্রাণী। 

ক্যাথির চিৎকার শুনে জর্জও ঘুরে দাঁড়াল জানালার দিকে। চোখদুটো তখনও আছে। তাড়াতাড়ি আলো জ্বেলে দিলো জর্জ, চোখদুটো ততক্ষণে শার্শির আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেছে! 

“অ্যাই কে তুমি? দাঁড়াও!” বলে প্রায় লাফিয়ে উঠে দরজার দিকে ছুট দিলো জর্জ। বাইরে তখন হালকা তুষারপাত হচ্ছিল। 

বসার ঘরের জানালাগুলো বাড়ির একদম সামনেই। দরজা দিয়ে বেরিয়ে ওই জানালাটার সামনে পৌঁছতে বড়োজোর দুই থেকে তিন সেকেন্ড সময় লেগেছিল জর্জের। কিন্তু ওখানে কেউ ছিল না। 

“ক্যাথি,” চেঁচিয়ে উঠল সে, “আমার টর্চলাইট নিয়ে এসো!” বার কতক এপাশ- ওপাশ চেয়ে বাড়ির পিছন দিকটায় নজর দিলো ও… ওদিকেই অ্যামিটিভিল নদী। 

একটু পরেই জর্জের জ্যাকেট আর টর্চ নিয়ে বেরিয়ে এলো ক্যাথি। জানালার নিচে টর্চ মারল জর্জ, জমে থাকা বরফে কিছু একটা খুঁজছে ওর দৃষ্টি… পায়ের ছাপ আরকি। টর্চের হলুদ আলোয় কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুটে উঠল একজোড়া পায়ের ছাপ… আরও ছিল… অনেক… জানালার পাশ থেকে সরে কেউ কেউ যেন সামনে এগিয়ে গেছে… 

কোনো মানুষের পায়ের ছাপ অমন হতে পারে না! খুরাকৃতির পায়ের ছাপগুলো… অতিকায় কোনো শুয়োর যেন হেঁটে গেছে! 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *