দ্য অ্যামিটিভিল হরর – ১৯

উনবিংশ অধ্যায় 

৮ জানুয়ারি। 

বৃহস্পতিবার, বারমুডা থেকে মধুচন্দ্রিমা শেষে ফিরে এলো জিমি আর ওর নতুন বউ ক্যারি। মিসেস কনার্সের বাড়ি থেকে ক্যাথিকে ফোন করল জিমি। জানাল যে সেদিনই ওরা ক্যাথির সাথে দেখা করতে আসছে। আরও কয়েকটা কথার পর জিমি জিজ্ঞাসা করল ১৫০০ ডলারের সেই খামটা পাওয়া গেছে না-কি। 

“আরে না, আমি আর জর্জ অনেক খুঁজেও ওটা পাইনি,” জবাব দিলো ক্যাথি। জিমি বেশ হতাশই হলো। 

দোতালার সিঁড়ির রেলিং ঠিক করতেই জর্জের অনেকটা সময় লেগে গেল, পুরো সকাল ওই কাজেই লেগে রইল সে। সকালের নাস্তা করতে যাওয়ার সময় ড্যানি আর ক্রিস এসেছিল ওকে সাহায্য করতে। কিন্তু জর্জ পাত্তা দেয়নি। “তোমাদের মায়ের সাথে না স্কুলের জন্য নতুন জুতা কিনতে যাওয়ার কথা? খেয়ে- দেয়ে রওনা দাও, এখানে কী?” বলে হটিয়ে দিয়েছে। 

ড্যানি, ক্রিস, ক্যাথি বা মিসি, কেউই রাতের বেলা রেলিং ভেঙে ফেলার শব্দ পায়নি। কীভাবে যে ঘটনাটা ঘটল তা কখনোই আর জানা যায়নি। যদিও জর্জ আর ক্যাথি কিছু সন্দেহ করেছিল.. কিন্তু ওসব কথা তো আর বাচ্চাদের সামনে বলা যায় না। 

অবশেষে সকালের খাওয়া শেষে বাচ্চাদের জামা-কাপড় পরিয়ে অনেক তাগাদা দিয়ে ওদের নিয়ে ভ্যানে উঠল ক্যাথি। সবার জন্য জুতা কিনতে হবে। ওরা বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই এরিককে ফোন দিলো জর্জ। জানতে চাইল সেদিন চলে যাওয়ার পর ফ্রান্সিন কিছু বলেছে না-কি 

“আসলে স্যার,” হতাশ কণ্ঠে বলল এরিক, “আপনার বাড়ি থেকে আসার পরেই কেমন যেন ভেঙে পড়েছে ফ্রান্সিন। আমাকে তো এটাও বলে দিয়েছে যে আর কখনও ওখানে যাবে না… যে অপশক্তিগুলো ওখানে আস্তানা গেড়েছে তারা খুবই শক্তিশালী! আরেকবার গেলে ওরা ফ্রান্সিনকে মেরেও ফেলতে পারে!” 

“হুম,” মনটা খারাপ হয়ে গেল জর্জের, “আচ্ছা এরিক, যাওয়ার আগে ভিনিশিয়ান ভেইল বা অমন কিছু একটার কথা বলেছিল ফ্রান্সিন, এটা কী জিনিস? 

“ও হ্যাঁ হ্যাঁ, রাস্তাতে আমিও ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। জন্মের সময় না-কি কিছু বাচ্চার গায়ে পাতলা চামড়ার মতো একটা আবরণ থাকে, অনেকটা পোটলার মতো… ওটা তুলে ফেলা যায়। ফ্রান্সিনের জন্মের সময় ওর মুখের দিকেও অমন একটা পর্দা ছিল… এই কারণেই না-কি সে এত ভালো মিডিয়াম হয়েছে। ওই পর্দা নিয়ে যারা জন্মায় তারা ভূত-প্রেতের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারে।” 

ফোন রেখে রান্নাঘরে প্রায় একঘণ্টা বসে রইল সে। ভেবেছিল ফ্রান্সিন হয়তো কিছু একটা করতে পারবে… কিন্তু সে-ও আর আসবে না! এখন কী হবে? এই পৃথিবীতে কেউই কি ওদের সাহায্য করতে পারবে না? 

বেজে উঠল টেলিফোনটা। ফোন দিয়েছে জর্জ কেকোরিস, নর্থ ক্যারোলাইনার সেই প্রতিষ্ঠানের একজন মাঠ পর্দায়ের তদন্তকারী। 

“দেখুন আমাকে বলা হয়েছে আপনার সাথে যোগাযোগ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার বাড়িতে যেতে। কিছু যন্ত্রপাতি বসাতে হবে,” বলল লোকটা, “আপনার বাড়ির ঘটনাগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব আমরা।” 

“আজই আসছেন?” 

“না না, আজ আসতে পারব না। এখন আমি বাফেলোতে। তবে কাল সকাল সকালই আসার চেষ্টা করব।” 

কেকোরিসের সাথে কথা বলার পর খানিকটা মানসিক শান্তি পেল জর্জ। যাক, তবে এখনও আশা আছে! ক্যাথি ফেরার আগ পর্যন্ত কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে, তাহলে উদ্ভট চিন্তাগুলো মাথায় আসবে না। বসার ঘরে এসে চুপচাপ ক্রিসমাস ট্রি থেকে জিনিসপত্রগুলো মেঝেতে বিছিয়ে রাখা খবরের কাগজের ওপর নামিয়ে রাখল সে… ক্যাথি এসে ওগুলো বাক্সে তুলে রাখবে। ওর দাদির দেওয়া সোনা আর রুপা দিয়ে বানানো জিনিসটা বেশ যত্ন করে রাখলো মাঝখানে। 

*** 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জ্বরে রীতিমতো কাহিল হয়ে রইলেন ফাদার ম্যানকুসো। বেশ কয়েকজন যাজক এসে দেখে গেলেন তাকে। ফাদারের বুঝতে বাকি রইল না যে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটার অপশক্তি আবার হামলা চালিয়েছে ওনার ওপর! 

প্রধান যাজকের কাছে যে অসুখের খবর গেছে সেটা ভালো করেই জানেন ফাদার ম্যানকুসো। কিন্তু তিনি এবার আর দেখা করতে আসেননি। বিছানায় শুয়েই রইলেন ম্যানকুসো, ডাক্তার এর আগে যেসব ওষুধ দিয়েছিলেন সেসবই খেলেন। জ্বর একবার ১০৪ ডিগ্রিতে উঠল, পেটের মধ্যে কেমন যেন একটা কুনকুনে ব্যথা। বেলা বাড়তে লাগল… কখনও ঠান্ডা লাগছিল আবার গায়ে কম্বল দিলেই গরম লাগে, ঘেমে যান। তবে সৌভাগ্যবশত এবার আর হাতে কোনো ফোসকা পড়েনি। তার মানে ওই অপশক্তি তাকে হালকা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, আবার যদি তিনি লুজদের ব্যাপারে নাক গলান তবে হয়তো ভয়ংকর শাস্তি দেবে! 

বিশপের অফিসেও আর ফোন দিলেন না তিনি। ওখানে ফোন দিলে যদি শাস্তির মাত্রা বেড়ে যায়? লুজদের নিয়ে আর ভাবাই যাবে না! কোনোভাবেই না… তবে হ্যাঁ, ফাদার রায়ান বা ফাদার নানসিও যদি নিজে থেকে ফোন দেন তাহলে ভিন্ন কথা। এই কথা ভাবতেই মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠল ম্যানকুসোর … আবার শাস্তি! 

“না না, আমাকে ছেড়ে দাও,” কেঁদে ফেললেন তিনি, “আমি আর ওনাদের সাথে কথা বলব না! কোনোভাবেই না! ওনারাও হয়তো আমাকে ভুলে গেছেন…. ওনারা ব্যস্ত মানুষ! সময় নেই ওনাদের…” 

*** 

বিকাল চারটার দিকে বাজার থেকে ফিরল ক্যাথি। জিমির গাড়ি ওদের বাড়িতেই থেকে গেছে। তাই ওদের না নিয়ে এলে এতদূর এমনি এমনি আসতে পারবে না। ক্যাথি ঠিক করল একটু পর সেই-ই জিমিদের আনতে যাবে। 

জর্জ একটু বেঁকে বসল। ইস্ট ব্যাবিলনের রাস্তাতে তুষার জমে খুবই খারাপ অবস্থা, ওর ওপরে গাড়ি চালিয়ে সুবিধা করতে পারবে না ক্যাথি। আর তাছাড়া জিমির গাড়ির গিয়ার সিস্টেমের সাথেও অভ্যস্ত নয় সে। জর্জই গাড়ি নিয়ে বের হলো, একঘণ্টার মধ্যেই জিমিদের নিয়ে অ্যামিটিভিলে ফিরে এলো সে। 

এতদিন পর জিমি আর ক্যারিকে দেখে বেশ খুশি হলো ক্যাথি। ক্যারির কাছ থেকে মন দিয়ে মধুচন্দ্রিমার গল্প শুনতে লাগল সে। একগাদা ছবি তুলে এনেছে ওরা, প্রতিটি ছবির পিছনের ঘটনা রসিয়ে রসিয়ে ক্যাথিকে বলতে লাগল ক্যারি। ক্যাথিও জায়গাগুলো চিনে রাখল, ভবিষ্যতে ওরও বারমুডা ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। 

“বুঝলে ক্যাথি,” হেসে ফেলল জিমি, “ঘুরে আসার পর দেখছি পকেটে আধলা পয়সাও নেই! কিন্তু যে মজা হয়েছে! আজীবন মনে থাকবে!” ড্যানি, ক্রিস আর মিসির জন্য বেশ কিছু উপহার এনেছে তারা, সেগুলো নিয়ে বসার ঘরে ব্যস্ত রয়েছে বাচ্চারা। খেলনা পেলে আর বড়োদের আড্ডায় কেন মাথা ঘামাবে ওরা? এভাবেই কেটে গেল সন্ধ্যাটা। 

নিজেদের অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতাগুলোর কথা জিমি আর ক্যারিকে বলল না লুৎজ দম্পতি। মধুচন্দ্রিমা থেকে ফিরে বেজায় খুশি ওরা, এখন ওসব বলে ওদের বিব্রত করার কোনো মানে হয় না। তারচেয়ে ওদের কথা শুনতেই বেশি মজা। একটু পর ক্যাথি আর ক্যারি ওপরে চলে গেল, মিসির বিছানার চাদর বালিশের কাপড় বদলাবে ওরা। আজ রাতে এই ঘরেই ঘুমাবে জিমি আর ক্যারি। সাজঘরের কাউচে ঘুমাবে মিসি। 

ওরা চলে যাওয়ার পর জিমি জর্জকে জানাল যে খুব তাড়াতাড়ি মায়ের বাড়ি থেকে নতুন অ্যাপার্টমেন্টে উঠবে ও আর ক্যারি। অ্যাপার্টমেন্টটা মিসেস কনার্সের বাড়ির কাছেই, ক্যারির মা-বাবার বাড়িও ওখান থেকে বেশি দূরে নয়। ইস্ট ব্যাবিলনেই আরামসে থাকবে ওরা সবাই। মাঝে মাঝেই সবাইকে নিয়ে একসাথে পার্টি করা যাবে। 

জিমিকে নিয়ে উঠানে ঘুরতে বের হলো জর্জ। এই সুযোগে সব জানালা আর দরজাগুলোও ভালো করে পরীক্ষা করে নিল সে। জিমিকে গ্যারেজের ভাঙা দরজাটা দেখাল সে, বলল, “দেখো, ঝড়ে কী অবস্থা!” 

“ঝড়ে এমনটা হয়েছে?” অবাক হলো জিমি। 

“আরে হ্যাঁ! এই অঞ্চলে যা বাতাস!” 

এদিকে জিমির অন্য কিছু সন্দেহ হচ্ছিল, টাকা হারানোর পর থেকে এই বাড়িটাকে কেন যেন সুবিধার মনে হয় না ওর। কিন্তু মুখে কিছু বলল না সে। 

জর্জের সাথে পিছনদিকের নৌকা রাখার ছাউনিটার দিকে এগিয়ে গেল সে। ছাউনিটা বেশ ভালো করে দেখে নিল জর্জ, তারপর সবকিছু পরীক্ষা করে বাড়ির ভিতর চলে এলো। 

রাত এগারোটা দিকে একে অপরকে “শুভরাত্রি” বলে শোবার ঘরে চলে গেল দু’জন। 

*** 

জর্জের এখনও স্পষ্ট মনে আছে যে ঘটনাটা ঘটেছিল ঠিক রাত সোয়া তিনটার দিকে। কারণ কয়েক মিনিট আগেই ভেঙে গেছিল ওর ঘুম, আর এই সময়ে প্রতিদিন ঘড়ি দেখে ও 

ব্যাপারটা হলো, ওই অশুভ সময়টাতে হুট করেই ক্যারি চিৎকার করে উঠল। “হে ঈশ্বর! ওদের ওপরেও কী তবে এই বাড়ির অপশক্তিগুলোর নজর পড়েছে!” বলতে বলতেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল জর্জ। তারপর দৌড় দিলো মিসির ঘরের দিকে। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ও দেখলো ক্যারিয়ে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করছে জিমি, রীতিমতো কাঁপছে মেয়েটা। 

“কী ব্যাপার?” এগিয়ে গেল জর্জ, “হয়েছে কী তোমাদের?” 

“ও-ওখানে,” হাত দিয়ে মিসির বিছানার নিচের দিকটা দেখাল ক্যারি, “ওখানে কিছু একটা বসেছিল! আমার পা লেগেছিল ওটার সাথে!” ভয়ে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না ক্যারি! 

এগিয়ে গিয়ে ক্যারির দেখানো জায়গাটাতে হাত দিলো জর্জ। বেশ গরম হয়ে আছে… একটু আগে আসলেই কেউ ওখানে বসেছিল! 

“হুট করেই ঘুমটা ভেঙে গেল,” আবার বলতে লাগল ক্যারি, “একটা ছোটো বাচ্চাকে দেখলাম ওখানে… বেজায় রোগা… আমাকে বলল ওর খুব অসুখ… কিছু খেতে দিতে!” মৃগী রোগীর মতো কাঁপতে লাগল এবার মেয়েটা। 

“আহ, ক্যারি,” আস্তে করে ওর কাঁধ ঝাঁকাল জিমি, “তুমি স্বপ্ন দেখছিলে… বাজে কোনো স্বপ্ন! কেঁদো না, শান্ত হও!” 

“না জিমি,” রীতিমতো রেগে উঠল ক্যারি, “ওটা স্বপ্ন ছিল না! ছেলেটাকে স্পষ্ট দেখেছি আমি। ও আরেকটা কথা বলেছে আমাকে।” 

“কী বলেছে ক্যারি?” বলল জর্জ। 

কেমন যেন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল ক্যারি। তারপর খানিকটা সরে বসল জিমির কাছ থেকে। হুট করেই জর্জ পিছনে পায়ের শব্দ পেল… এরপরেই ওর কাঁধ স্পর্শ করল কে যেন! রীতিমতো লাফিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াল সে। ক্যাথি এসেছে, চোখদুটো ভিজে আছে ওর। যেন সে-ও কাঁদছিল। 

“ক্যাথি!” অবাক হলো জর্জ। 

“ক্যারি, আমাকে বলো…” জর্জের কথায় কান না দিয়ে ক্যাথি বলল, “ওই ছেলেটা তোমাকে আর কী বলেছে?” 

“ও জিজ্ঞাসা করছিল, মিসি আর জোডি কোথায়,” মেঝের দিকে চেয়ে বলল ক্যারি। 

মিসির নাম শুনেই ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল ক্যাথি, বারান্দার ওপাশে সাজঘর। অঘোরে ঘুমাচ্ছে মিসি, একটা পা বেরিয়ে এসেছে কম্বলের ভিতর থেকে। পরম মমতায় ওর পা কম্বলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো ক্যাথি। তারপর কপালে চুমু খেয়ে হাঁটা দিলো দরজার দিকে। ততক্ষণে জর্জ এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। 

“মিসি ঠিক আছে?” গম্ভীরভাবে বলল সে। 

মাথা নাড়ল ক্যাথি। 

ক্যারির স্বাভাবিক হতে আরও পনেরো মিনিটের মতো লেগে গেল। তারপর শুয়ে পড়ল সে। জিমি কিছুটা চিন্তিত ছিল। ওকে ভালো করে বোঝাল ক্যাথি, কিছুক্ষণ পর সে-ও শুয়ে পড়ল। ওদের ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো জর্জ আর ক্যাথি। তারপর ফিরে এলো নিজেদের ঘরে। ঘরে ঢুকেই দেওয়াল আলমারি থেকে ক্রুসিফিক্সটা বের করল ক্যাথি। তারপর জর্জকে বলল, “জর্জ, চলো আমরা নিজেরাই বাড়িটাকে শুদ্ধ করি।” 

“হুম,” কিছুক্ষণ ভাবল জর্জ, তারপর বলল, “চলো তবে।” 

তিন তলায় বাচ্চাদের খেলাঘর থেকে শুরু করল ওরা। ঘরটার ভেতর যেন একটু বেশিই ঠান্ডা… অশুভ এক নিঃস্তব্ধতা যেন ঘিরে আছে জায়গাটাকে। দু’হাতে ক্রুসিফিক্সটা বুকের কাছে ধরে রইল জর্জ আর সুর করে শ্লোক আওড়াতে লাগল ক্যাথি। এরপর ড্যানি আর ক্রিসের ঘরে যেতে চাইল জর্জ, কিন্তু ক্যাথি বলল, “এখন গেলে ওরা জেগে যাবে, তার চেয়ে ওদের ঘর কাল শুদ্ধ করব। মিসির ঘরটাতেও কালকেই যাব… ওখানেও তো ক্যারি আর জিমি ঘুমাচ্ছে। তার চেয়ে বরং দোতালায় আমাদের শোবার ঘরে চলো।” 

শোবার ঘরটায় গেল তারা, সেখান থেকে সেলাইঘরে। এরপর একতলায় যেতে হবে। 

“সাবধানে নেমো ক্যাথি, রেলিং কিন্তু আজকেই ঠিক করলাম, “ এই বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল জর্জ। ক্রুসিফিক্সটা তখনও বুকের কাছে ধরে আছে সে… যেন প্রাচীনকালের কোনো ক্যাথলিক যাজকের আত্মা এসে ভর করেছে ওর ওপর 

রান্নাঘর আর খাবার ঘরে প্রার্থনা শেষ করতে করতেই ভোরের আলো ফুটে গেল। বসার ঘরটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এবার ওটার পালা। ধীরে ধীরে ক্রুসিফিক্সটা বুকে নিয়ে এগোতে লাগল জর্জ, আর ক্যাথি আবৃত্তি করতে শুরু করল, “হে আমাদের আদিপিতা, স্বর্গ থেকে আশীর্বাদ করুন আমাদের… হে সর্বশক্তিমান… স্বৰ্গ, পৃথিবী, পাতাল আর নরকের অধিপতি, আপনার নামেই লুকিয়ে আছে সকল সমাধান…” 

ঠিক তখনই অদ্ভুত একটা গুঞ্জন উঠল ঘরে। যেন ক্যাথির কথাগুলোকে ব্যঙ্গ করার চেষ্টা করছে কেউ। চমকে গেল ক্যাথি, ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগল সে। জর্জও ভয় পেয়ে গেছে, ঘরের প্রায় মাঝখানে পৌঁছে গেছে সে। ওর নজর পড়ল ছাদের দিকে। ওখান থেকে কালো একটা ছায়া যেন সরে গেল! বেড়েই চলল গুঞ্জনটা… যেন অনেক মানুষ একসাথে বিকৃত কণ্ঠে কথা বলার চেষ্টা করছে! চারপাশ থেকে শব্দ আসছে… আর সহ্য করতে পারল না ক্যাথি, দুই কানে হাত দিয়ে বসে পড়ল সে। কিন্তু জর্জ স্পষ্ট শুনতে পেল, গম্ভীর আর বিকৃত সেই সম্মিলিত কণ্ঠ বলে উঠল, “তোমরা থামবে?” 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *