দ্য অ্যামিটিভিল হরর – ২৪

চতুর্বিংশ অধ্যায় 

১৩ জানুয়ারি। 

উঠে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল জর্জ। সে কি তাহলে আসলেই স্বপ্ন দেখছিল? কিন্তু মনে হচ্ছিল যে পুরোপুরি বাস্তব! তিন তলার ক্রিস আর ড্যানির শোবার ঘরটা যেন পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছিল সে। একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তি এগিয়ে যাচ্ছিল ক্রিসের বিছানার দিকে। 

জর্জের খুব ইচ্ছা হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে উদ্ধার করবে সেই ভয়ংকর প্রেতের হাত থেকে। কিন্তু চেয়ার থেকে উঠতেই পারল না সে। দুটো শক্তিশালী হাত চেপে বসেছিল ওর কাঁধে, চেয়ার থেকে উঠতে দেবে না… কোনোভাবেই না! জৰ্জ জানত ওই হাতদুটোর সাথে পেরে ওঠা ওর পক্ষে সম্ভব না। 

ততক্ষণে ছায়ামূর্তিটা ঝুঁকে পড়েছে ক্রিসের ওপর। অসহায় জর্জ চেঁচিয়ে উঠল, “ওটা ক্রিসের ঘরে!” কিন্তু কেউ ওর কথা শুনতে পেল না। 

“ওটা ক্রিসের ঘরে,” আবার বলে উঠল সে। ধীরে ধীরে চাপ কমতে লাগল জর্জের কাঁধ থেকে। একটা সময়ে মুক্ত হয়ে গেল হাতদুটো। ওদিকে ক্রিসকে বিছানা থেকে তুলে নিয়েছে ওই ছায়ামূর্তি… ধীরে ধীরে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে ওরা। 

হাতদুটো ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে উঠল জর্জ, “ধরো ধরো, ওটাকে ধরো… ওটা ক্রিসের ঘরে।” তখন কে যেন খুব জোরে ওর কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে লাগল, “জর্জ, জর্জ, কী হয়েছে তোমার?” 

চোখ খুলে সে দেখল ক্যাথি ওর বুকের ওপর ঝুঁকে রয়েছে, ধাক্কা দিচ্ছে কাঁধে, “জর্জ, ওঠো,” বেশ জোরে বলে উঠল মেয়েটা। 

লাফিয়ে উঠল জর্জ, “ওটা ক্রিসকে নিয়ে যাচ্ছে… আমাকে এখনই ওপরে যেতে হবে!” 

“আরে যাচ্ছ কোথায়?” ওর হাত টেনে ধরল ক্যাথি, “ক্রিস তো এখানেই, ওই দেখো! তুমি স্বপ্ন দেখছিলে!” 

বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল জর্জ, তিনটে বাচ্চাই ওখানে। জর্জের চিৎকারে জেগে উঠেছে, মা-বাবার দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে ওরা। 

“আরে ধুর,” রেগে উঠল জর্জ, “ক্রিসকে তুলে নিচ্ছিল ওটা… আমি স্বপ্ন দেখছিলাম না! স্বপ্ন এত পরিষ্কার হয়?” 

“আচ্ছা ঠিকাছে, কিন্তু ক্রিস তো এখানেই, তাই না? কোথাও যায়নি ও, পুরোটা সময় বিছানাতেই ছিল! ওপরে যেয়ো না জর্জ,” ওকে বোঝানোর চেষ্টা করল ক্যাথি। 

“না… মা আমি একবার বাথরুমে গেছিলাম,” বলে উঠল ক্রিস, “তুমি আর বাবা তখন ঘুমাচ্ছিলে!” 

“তাই? কোনো শব্দই পেলাম না!” চমকে উঠল ক্যাথি, “তুমি কি আমাদের বাথরুমে গেছিলে?” 

“না, ওটা বন্ধ ছিল… তাই তিন তলায় গেছিলাম!” 

বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল জর্জ, আসলেই ওটা বন্ধ! কিন্তু ওটা তো লক করেনি সে! 

“ওপরে? তারপর?” ক্রিসের হাত ধরল ক্যাথি। 

“হ্যাঁ,” আস্তে করে বলল ক্রিস, “আমি ওখানে অনেক ভয় পেয়েছি!”

“কেন?” ওর দিকে এগিয়ে এলো জর্জ। 

“জানো বাবা… মেঝেটা কাচের মতো হয়ে গেছিল! আমি ওই ঘর থেকেও তোমাকে দেখতে পাচ্ছিলাম!” 

সেই রাতে মিসি ছাড়া আর কেউই ঘুমাল না। সে-ও ভোর পর্যন্ত জেগে ছিল, তারপর হুট করেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ফাদার ম্যানকুসোকে ফোন করল জর্জ। 

*** 

ওদিকে প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন ফাদার ম্যানকুসো। লুজদের বাড়িতে কী হচ্ছে? জর্জ আর ক্যাথি ভালো আছে তো? বাচ্চাগুলোর কী খবর? এসব চিন্তায় ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না ওনার। অবশেষে ঠিক করলেন যে আবার দেখা করবেন বিশপের সাথে, জর্জদের সাথে যোগাযোগ করার অনুমতি দরকার ওনার। আয়নায় নিজের মুখ দেখলেন ফাদার, চোখের নিচে আবার কালো দাগ পড়েছে। দাড়ি কাটতে হবে। ইলেকট্রিক রেজারটা বের করলেন ফাদার, ওটার প্লাগ লাগাতেই ফোনটা বেজে উঠল। 

কেন যেন ওনার মনে হলো যে জর্জই ফোন দিয়েছে। 

“হ্যালো জর্জ না কি?” ফোন ধরে বললেন তিনি। 

“আপনি কী বুঝলেন যে আমি ফোন করেছি?”

“সেইসব কথা বাদ দাও… নতুন কোনো সমস্যা হলো না কি?” 

“হুম, আমি আর ক্যাথি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ওশান অ্যাভিনিউতে আর থাকব না। ইস্ট ব্যাবিলনে ক্যাথির মায়ের ওখানে চলে যাব। বাড়িটা নিয়ে তদন্ত হোক… তারপর দেখা যাক, ফিরে আসা যায় না-কি। বাচ্চাদের সাথে আজকাল অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে, এখানে আর কিছুদিন থাকলে ভয়ংকর কিছু হয়ে যেতে পারে! ড্যানি, ক্রিস আর মিসিকে নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গেছে ক্যাথি!” 

“ভালো সিদ্ধান্ত,” কী হয়েছে, না হয়েছে তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করলেন না ফাদার, “তোমরা যত তাড়াতাড়ি পারো ওখান থেকে চলে যাও!” 

ড্যানি আর ক্রিস সেদিন স্কুলে গেল না। তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করল ক্যাথি। ওরা কিছুদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছে এটা পুলিশকে জানাতে হবে। মিসেস কনার্সের নম্বরটাও দিতে হবে, যাতে করে কোনো ঝামেলা হলে ওতে ফোন দেওয়া যায়। কিন্তু রিসিভার তুলে জর্জ দেখল ফোন ডেড! ব্যাপারটা ক্যাথিকে খুলে বলল জর্জ… আরও ভয় পেয়ে গেল ক্যাথি। কোনোমতে বাচ্চাদের জামা-কাপড় বদলে দিলো সে, তারপর নিজে কাপড় না বদলেই ওদের নিয়ে ভ্যানে গিয়ে উঠল। 

বেসমেন্ট থেকে হ্যারিকে নিয়ে এলো জর্জ, তারপর ভ্যানের কাছে বেঁধে রাখল। সব দরজা-জানালা বন্ধ আছে না-কি তা দেখার জন্য আবার ঢুকল বাড়িতে। পুরো বাড়ি দেখে নৌকা রাখার ছাউনির কাছে গেল সে… সব দরজা ভালোমতো বন্ধ আছে। ফিরে এসে ভ্যানের ড্রাইভিং সিটে বসে চাবি ঘুরাল জর্জ… কিন্তু মোটর চালু হলো না! 

“জর্জ,” ভয়ে কেঁপে উঠল ক্যাথির গলাটা, “কী হলো?” 

“আরে হয়তো ইঞ্জিনে কোনো ঝামেলা হয়েছে, তেল তো আছেই, দাঁড়াও আমি নেমে দেখি,” গাড়ি থেকে নামল জর্জ। 

গাড়ি থেকে নামতেই আকাশের দিকে নজর পড়ল জর্জের, ঘনো মেঘ জমেছে। ঠান্ডা বাতাসের বেগও যেন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। হুড খোলার সাথে সাথে কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ল উইন্ডশিল্ডের ওপর। 

গাড়ির কী হয়েছে তা ভালো করে দেখতেই পেল না জর্জ, তার আগেই অ্যামিটিভিল নদীর দিক থেকে বাতাসের এক ভয়াবহ ঝাপটা এসে হুডটাকে আবার নিচে ফেলে দিলো! ভাগ্যিস লাফিয়ে সরে গেছিল জর্জ, নইলে রীতিমতো জখম হয়ে যেতো! প্রচণ্ড আওয়াজ করে গ্যারেজের পিছনে বাজ পড়ল… ঝমঝম করে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো জর্জের পুরো শরীর। 

দৌড়ে গিয়ে বাড়ির সদর দরজা খুলল জর্জ, তারপর চেঁচিয়ে উঠল, “সবাই ভেতরে এসো।” ক্যাথি আর বাচ্চারা এলো বটে, কিন্তু জবজবে হয়ে ভিজে। 

জর্জের বুঝতে বাকি রইল না ওরা আবার এই বাড়িতে বন্দি হয়ে গেছে! অপশক্তিগুলো ওদের যেতে দেবে না! কিন্তু ক্যাথিকে কিছুই বলল না সে। 

বৃষ্টি আর বাতাসের বেগ ক্রমাগত বেড়েই চলল, দুপুর একটার দিকে পুরো অ্যামিটিভিলের ওপর দিয়ে বয়ে গেল এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। দুপুর তিনটার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেল, কিন্তু সকালে ফায়ারপ্লেসে একটু কাঠ দিয়েছিল জর্জ, তাই বাড়িটা বেশ গরমই ছিল। রেডিয়ো চালু করল জর্জ। আবহাওয়া বার্তাতে বলা হলো বাইরের তাপমাত্রা বিশ ডিগ্রির মতো, গোটা লং আইল্যান্ডেই ঝড় হচ্ছে। পুরো এলাকায় নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, কখন যে ঝড় থামবে তা বলা যাচ্ছে না। 

মিসির ঘরের জানালাটা নিয়ে বিপদে পড়ল জর্জ। প্রথমে একটা তোয়ালে শক্ত করে টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিলো, কিন্তু বাতাসের সামনে টিকতে পারল না ওটা। পরে পুরোনো একটা কম্বল দিয়ে জানালা আটকে আশপাশে পেরেক মেরে দিলো। ততক্ষণে ঘরের জিনিসপত্র কয়েক দফা ভিজেছে। 

ওদিকে রান্নাঘরের পিছনে লাগানো থার্মোমিটারের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে জর্জ, তাপমাত্রা আশি ডিগ্রি দেখাচ্ছে ওখানে। পুরো বাড়িটা হুট করেই একটু বেশিই গরম হয়ে উঠেছে… অস্বস্তি লাগছে জর্জের। বিদ্যুৎ নেই, অয়েল বার্নারের থার্মোস্টাট কাজ তো করছে না… তাহলে? আবার থার্মোমিটারের দিকে চেয়ে রইল সে… তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে পঁচাশি ডিগ্রি। 

গরম কমাতে বাহির থেকে বাতাস আসা দরকার। কোনার দিকের একটা ঘরের জানালা একটু ফাঁক করল জর্জ, ওদিকটায় ঝড়ের প্রকোপ কম। তাই পানি ঢুকবে না। 

ঝড় আর লোডশেডিংয়ের কারণে মোমবাতি জ্বালাতে হয়েছিল ক্যাথিকে। সাড়ে চারটার দিকে বাইরে বলতে গেলে নিকষ কালো আঁধার নেমে এলো, দিনের বেলাতেই রাত হয়ে এলো ওশান অ্যাভিনিউতে। 

কয়েকবার ফোনের রিসিভারটা তুলে দেখল ক্যাথি। নাহ, লাইন ঠিক হয়নি। আর ঠিক হলেই কী? এই ঝড়ের মধ্যে গাড়ি মেরামত করার লোকরা কি আর আসবে? ওদিকে অন্ধকারের মধ্যে বেশ মজাই পাচ্ছিল বাচ্চারা। বাড়ির এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সিঁড়িতে লুকাচুরি খেলছিল। ড্যানি আর ক্রিস লুকাতে ওস্তাদ, তাই প্রতিবারই ‘চোর’ হচ্ছিল মিসি। দুই ভাইকে খুঁজে বের করতে পারছিল না ছোট্ট মেয়েটা। ওদের সাথে হ্যারিও দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। হুট করেই মেজাজটা গরম হয়ে এলো জর্জের, কাগজের একটা দলা তুলে সেটা ছুড়ে মারল হ্যারির দিকে। ভয় পেয়ে ক্যাথির পিছে লুকাল কুকুরটা। 

সন্ধ্যা ছ’টা বেজে গেল, ঝড় খানিকটা কমলেও বৃষ্টি থামার নাম নেই। যেন পৃথিবীর সব পানি আজ ওশান অ্যাভিনিউতেই পড়বে। ওদিকে বাড়ির তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি পেরিয়ে গেছে! বেসমেন্টে গিয়ে দেখেছে জর্জ, অয়েল বার্নার বন্ধ! তারপরেও গরম বাড়ছে কেন? শুধু মিসির ঘরটাই ঠান্ডা। 

কী করবে এখন জর্জ? ঈশ্বর ছাড়া কেউ আর ওদের বাঁচাতে পারবে না। তবে ঈশ্বরকেই ডাকা হোক না? একটা মোমবাতি নিয়ে প্রতিটি ঘরে যেতে লাগল সে আর জোরে জোরে বলতে লাগল, “হে ঈশ্বর, এই বাড়ি আমাদের কষ্টের টাকায় কেন! যে অপশক্তিরা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে তাদের দূর করে দিন!” প্রায় সবগুলো ঘরে গিয়েই এই কাজ করল সে, কোনো অপার্থিব বাধা এলো না। বুকে সাহস পেল জর্জ। 

বাচ্চাদের খেলাঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। আগেরবারের ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল দরজাটা, তারপর থেকে এটা লাগিয়েই রেখেছে। চমকে উঠল সে… দরজার চাবি ঢুকানোর গর্ত দিয়ে সেই সবুজাভ চিটচিটে তরল বেরিয়ে এসে মেঝেতে পড়ছে! ধীরে ধীরে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওই জেলির মতো জিনিসটা… 

দরজার ওপর পেরেক ঠুকে লাগানো দেবদারু গাছের তক্তাটা টেনে তুলে ফেলল জর্জ। তারপর ঢুকল ঘরে। ভেবেছিল জেলির মতো সবুজ তরলে ভরে থাকবে ঘরটা… কিন্তু কই! তেমন কিছুই নেই! শুধু চাবি ঢুকানোর ফুটাতেই ওই অবস্থা। বাথরুম থেকে বেশ মোটা একটা তোলায়ে এনে ফুটোতে গুঁজে দিলো সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিজে গেল তোয়ালেটা… তবে তরল আর বের হলো না। দরজা লাগিয়ে ফিরে এলো জর্জ। 

বেরিয়ে আসা তরল ততক্ষণে সিঁড়ি বেয়ে অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। ক্যাথিকে এসব বলার দরকার নেই, শুধু শুধু ভয় পাবে মেয়েটা। 

ওদিকে ক্যাথি কিন্তু ঘুরছে না, চুপচাপ টেলিফোনের পাশে বসে ছিল সে। গরমে রীতিমতো ঘামছিল ও, একবার রান্নাঘরের জানালা খুলে দিয়েছিল। কিন্তু তীব্র বাতাস আর বৃষ্টির কারণে সাথে সাথেই বন্ধ করে দিয়েছে! চুপচাপ বসে বসে ঝিমাচ্ছে সে। 

কিছুক্ষণ পরেই রান্নাঘরে এলো জর্জ, ক্যাথি ততক্ষণে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর কাঁধে হাত রাখল জর্জ, কেমন যেন কেঁপে উঠল ক্যাথি। কী যেন বলল ও, কথাটা বুঝতে পারল না জর্জ… তারপর একটু আরেকটু নড়ে মাথাটা ঘাড়ের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সে। 

রেডিয়োতে আবহাওয়া বার্তা শোনার আর কোনো দরকার নেই জর্জের। বাইরে এখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে, ওর বুঝতে বাকি নেই যে সকাল হওয়ার আগে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটা থেকে বের হতে পারবে না ওরা। একটু পর ক্যাথিকে কোলে তুলে শোবার ঘরে নিয়ে গেল সে, রান্নাঘরের ঘড়িতে তখন বাজছিল রাত আটটা। 

ওদিকে এতক্ষণ ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ছোটাছুটি করে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে বাচ্চারা। ক্যাথিকে শুইয়ে দেওয়ার একটু পরেই ড্যানি আর ক্রিস শোবার ঘরে চলে গেল। একটা জিনিস বেশ অবাক করল জর্জকে, তিন তলায় ছেলেদের শোবার ঘরটা অনেক ঠান্ডা! বাতাস গরম হলে তো তা ওপরের দিকে ওঠে, সেক্ষেত্রে ওদের ঘরের তাপমাত্রা নব্বই ডিগ্রির ওপরে হওয়া উচিত! 

ঘুম জড়ানো চোখে ক্যাথির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল মিসি, কিন্তু গায়ে কম্বল নিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল ও। ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল জর্জ। 

বসার ঘরে এখন শুধু জর্জ আর হ্যারি। অন্যদিন এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়লেও আজকে বেশ সজাগ আছে কুকুরটা। জর্জকে বেশ ভালো করে খেয়াল করছে সে। গরমে তার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে অন্য ঘরগুলো দেখে আসছে জর্জ… ওই সময়টায় কেন যেন জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছিল হ্যারি, জর্জ ফিরে এলে আবার ওর পাশে গিয়ে বসছিল। 

জর্জের বারবার মনে হচ্ছিল বাইরে গিয়ে দেখবে যে ভ্যানের ইঞ্জিন চালু হয় না-কি। ব্যাপারটা পুরোটাই অযৌক্তিক, তীব্র বৃষ্টিতে ভিজে গেছে গাড়িটা… ইঞ্জিন যেটুকু ভালো ছিল সেটুকুও হয়তো গেছে! তারপরেও সাহস করে একবার বের হতে লাগল সে… কিন্তু তারপরেই মনে হলো, বের হলে ওকে যদি আর ভেতরে না আসতে দেয় বাড়িটার অপার্থিব শক্তিগুলো? তাহলে? ক্যাথি আর বাচ্চাদের কী হবে? দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়াল সে। 

হুট করেই রাত দশটার দিকে বাড়ির তাপমাত্রা কমতে শুরু হলো। হ্যারি সবার আগে খেয়াল করল ব্যাপারটা। উঠে দাঁড়াল সে, বাতাসে কী যেন শুঁকল… তারপর বন্ধ ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে থাকার জর্জকে ডাকতে লাগল। একমনে ভ্যানটার কথা ভাবছিল জর্জ, হ্যারির ডাকে বাস্তবে ফিরে এলো সে। ঠান্ডায় রীতিমতো কেঁপে উঠল… হুট করেই তাপমাত্রা এত কমলো কী করে? 

আধা ঘণ্টা পর তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়াল ৬০ ডিগ্রিতে। ফায়ারপ্লেসে দেওয়ার জন্য কাঠ আনতে বেসমেন্টের দিকে গেল জর্জ, দরজা পর্যন্ত তো এলো হ্যারি… কিন্তু নামল না। বারবার ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাচ্ছিল কুকুরটা… 

বেসমেন্টে বেশ ভালো করে টর্চ মেরে দেখল জর্জ, অদ্ভুত কিছুই নজরে পড়ল না। বেশ কয়েকটা গুঁড়ি নিয়ে ওপরে উঠে এলো সে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে ফোনের রিসিভারটা তুলল, ওটা তখনও ডেড। ফায়ারপ্লেসে কাঠগুলো দিয়ে আগুন জ্বালাতে যাবে সে, ঠিক তখনই ওপর থেকে মিসির চিৎকার ভেসে এলো। 

ঘরে ঢুকে জর্জ দেখল মিসি রীতিমতো কাঁপছে আর আর্তনাদ করছে! কম্বল না নেওয়ার কারণে মেয়েটার ঠান্ডা লেগে গেছে। তাড়াতাড়ি ওর শরীর কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলো সে। পাশে উপুড় হয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে ক্যাথি… নেশাগ্রস্থের মতো লাগছে ওকে! মিসির চিৎকারেও ঘুম ভাঙেনি! আজব! ক্যাথির গায়ে হাত দিলো জর্জ… বেজায় ঠান্ডা হয়ে আছে ওর শরীর! তাড়াতাড়ি কম্বলটা দিয়ে ওকে ভালো করে ঢেকে দিলো জর্জ। 

নিচে নেমে এলো জর্জ, কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তারপর ঠিক করল আজ রাতে আর আগুন জ্বালাবে না। ক্যাথি আর বাচ্চাদের কাছাকাছি থাকতে হবে ওকে। যে-কোনো সময় ভয়ংকর কিছু হয়ে যেতে পারে… প্রস্তুত থাকতে হবে। হ্যারির গলায় শিকল বেঁধে ওকে ওপরে নিয়ে চলল জর্জ, তারপর বেঁধে দিলো শোবার ঘরের সামনে। কুকুরটাই দরজা পাহাড়া দিক আজ রাতে। তারপর জামাকাপড় না বদলেই জুতাটা খুলে বিছানায় উঠে পড়ল জর্জ। 

রাত একটায় কম্বলের তলাতেও বেজায় শীত করতে লাগল জর্জের। বাইরে থেকে সমানে তুফানের শব্দ আসছে। বিদ্যুৎ নেই, তাই অয়েল বার্নার কাজ করবে না। এখন নেমে যে ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বালাবে… সেটাতেও বিপদ হতে পারে। চোখে পানি এসে গেল জর্জের… এখন কী করবে সে? ফাদার ম্যানকুসোর কথামতো অনেক আগেই ওর এই বাড়ি থেকে পালানো উচিত ছিল। “হে ঈশ্বর! রক্ষা করুন আমাদের,” ফুঁপিয়ে উঠল সে। হুট করেই ও খেয়াল করল যে ক্যাথি উঠে বসেছে… আয়নার দিকে তাকাল মেয়েটা… বিছানা ছেড়ে উঠে সেদিকে যেতে লাগল ও… মোমবাতির আলোয় জর্জ স্পষ্ট দেখতে পেল যে ক্যাথির চোখদুটো খোলা। 

জর্জ জানে ক্যাথির এখন হুঁশ নেই! 

আয়নার সামনে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে রইল ক্যাথি। তারপর এগিয়ে গেল দরজার দিকে… হুট করেই ওর পা গিয়ে লাগল হ্যারির শরীরে। 

লাফিয়ে উঠল জর্জ, তারপর গিয়ে জড়িয়ে ধরল ক্যাথিকে। ফ্যালফ্যাল করে জর্জের দিকে চেয়ে রইল ক্যাথি… যেন চিনতেই পারছে না! এ এক অদ্ভুত ঘোর। 

“ক্যাথি,” ওকে ঝাঁকালও জর্জ, “ওঠো তুমি।” কিন্তু ওভাবেই চেয়ে রইল ক্যাথি। প্রায় ত্রিশ সেকেন্ড এভাবেই রইল, তারপর চোখদুটো বন্ধ করল ক্যাথি, জর্জের গায়ে এলিয়ে পড়ল সে। ওকে কোলে তুলে নিল জর্জ, তারপর বিছানায় এনে শুইয়ে দিলো, ভালো করে পা দুটো সোজা করে দিয়ে ক্যাথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সে। কেন যেন জর্জের মনে হচ্ছে ক্যাথির ওজন অনেক কমে গেছে… যেন ও মানুষ না… খড়ের তৈরি পুতুল! 

মিসি তখনও অঘোরে ঘুমাচ্ছে, ওর পাশেই যে ক্যাথিকে শুইয়ে দিলো জর্জ তাতেও মেয়েটার ঘুম ভাঙল না। তখনই জর্জের নজর গেল দরজার দিকে। হ্যারি কেমন যেন করছে… কাঁপছে কুকুরটা! আরে আরে… কুকুরটা বমি করবে না কি? মেঝে ভরে বমি করে দিলো হ্যারি। কিন্তু তারপরেও কাশছে সে, যেন গলায় আটকে থাকা কিছু একটা বের করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে! লোহার শিকলটা আরও শক্ত হয়ে আটকে যাচ্ছিল বেচারা কুকুরটার গলায়। 

বমির তীব্র গন্ধে জর্জেরও বমি পেয়ে গেল। এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেল সে, ভালো করে কুলি করল, মুখে পানির ছিটা দিলো… তারপর একটা তোয়ালে নিয়ে বেরিয়ে এলো। বমি পরিষ্কার করে হ্যারির গলার বাঁধন খুলে দিলো সে। জর্জের দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল হ্যারি, তারপর কয়েকবার লেজ নাড়িয়ে বারান্দার মেঝেতে টান হয়ে শুয়ে পড়ল… ধীরে ধীরে চোখ বুজে এলো ওর। 

“যাক, ভয়ের কিছু নেই হ্যারি,” নিজের গলা শুনে নিজেই চমকে উঠল জর্জ। গোটা বাড়িটা যেন একটু বেশিই নিঃস্তব্ধ। কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারল ঝড় আর বৃষ্টি থেমে গেছে। বাড়ির ভিতরটা হিমঘরের মতো ঠান্ডা… বাথরুমের একটা কল থেকে ‘টুপ-টুপ’ পানি পড়ার শব্দ পেল সে… গোটা পৃথিবীর সকল নীরবতা যেন ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটাতে নেমে এসেছে। 

বাড়ির আবহাওয়া আরও বেশি ঠান্ডা হয়ে গেল। জর্জের মনে হচ্ছিল পুরো বাড়িটাতে কুয়াশা পড়ে গেছে। গায়ে ভারী জামা-কাপড় পরে কম্বলের নিচে শুয়েও ঠক-ঠক করে কাঁপতে লাগল সে। 

হুট করেই ওপর থেকে অদ্ভুত একটা শব্দ পেল জর্জ। ড্যানি আর ক্রিসের শোবার ঘর থেকে আসছে শব্দটা। কিছু একটা যেন মেঝের ওপর দিয়ে টেনে সরানো হচ্ছে, শব্দটা ক্রমাগত বাড়তে লাগল… জোরে জোরে কোনো ভারী জিনিস টানছে যেন কেউ। কম্বলটা সরিয়ে ফেলল জর্জ… কিন্তু একি! নিচে নামতে পারছে না ও! না, অদৃশ্য কোনো হাত এবার ওকে চেপে ধরেনি… বরং ওঠার শক্তিই পাচ্ছে না সে! তখনই টেবিলের ড্রয়ার খোলার শব্দ এলো… মোমের আলোয় জর্জ দেখল ড্রয়ারগুলো একবার করে খুলছে আবার বন্ধ হচ্ছে… একপাশের ড্রয়ারগুলো খুললে অপরপাশের গুলো বন্ধ হচ্ছে, আবার ওগুলো বন্ধ হলে এগুলো খুলছে। অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারল না জর্জ… কেঁদেই ফেলল সে। 

তারপরেই নিচতলা থেকে মানুষের কণ্ঠ ভেসে আসতে লাগল। একগাদা মানুষ একসাথে ফিসফিসিয়ে কীসব যেন বলছে… কী বলছে তা বুঝতে পারল না জর্জ। ধীরে ধীরে জোরে হতে লাগল কথার শব্দ, যেন একে অপরের সাথে তর্ক করছে ওরা। অনেক কষ্টে এগিয়ে গিয়ে ক্যাথি আর মিসিকে জাগানোর চেষ্টা করতে লাগল জর্জ। 

কয়েক মিনিট পরেই শুরু হলো ব্যান্ডপার্টির সেই পুরোনো বাজনা। সেই বাজনাতে চাপা পড়ে গেল আগের শব্দগুলো। জর্জের মনে হচ্ছিল ও পাগল হয়ে যাবে! পুরো একতলায় ঘুরে বেড়ালো সেই ব্যান্ডপার্টি তারপর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল। 

চিৎকার করতে লাগল জর্জ, কিন্তু ওর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না। সর্বশক্তি দিয়ে উঠতে চেষ্টা করল, সাথে সাথে ওর শরীরটাকে কে যেন আছড়ে ফেলে দিলো বিছানায়! ঘাড়ের দিকটায় খুব জোরে লাগল… অসহ্য যন্ত্রণায় গোঙিয়ে উঠল সে… ঘামে ভিজে গেছে পুরো বিছানা। 

অদ্ভুত একটা পরিবেশ জর্জের আশেপাশে। নিচ থেকে কে যেন নড়াচ্ছে বিছানাটা, ড্রয়ারগুলো এখনও খুলছে আবার বন্ধ হচ্ছে… ব্যান্ডপার্টিও দোতালায় উঠে আসছে! কিন্তু এখানেই শেষ নয়… জর্জ শুনতে পেল পুরো বাড়ির সবগুলো দরজা জোরে জোরে খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে! আজব ব্যাপার, বারান্দাতে অঘোরে ঘুমাচ্ছে হ্যারি… ও কি এসব শুনতে পাচ্ছে না? ওকে কি কেউ ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে না কি? নইলে এত শব্দের মধ্যে ঘুমাচ্ছে কী করে? 

তাহলে কি শুধু জর্জই এসব শুনতে পাচ্ছে? ওর কি মাথায় সমস্যা? 

হুট করেই ভয়ংকর একটা শব্দে যেন কানে তালা লেগে তার, তীব্র আলোতে ভেসে গেল সবকিছু। বজ্রপাত হয়েছে… কেঁপে উঠল পুরো বাড়িটা। আবার ঝড় শুরু হলো, মনে হচ্ছিল বাতাস আর বৃষ্টি মিলে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে! 

চুপচাপ শুয়ে রইল জর্জ, বুকের ভিতরটা রীতিমতো ধকধক করছে ওর। অপেক্ষা করছে… জানে, খুব খারাপ কিছু একটা ঘটবে… তারপরেই সে বুঝতে পারল ব্যাপারটা! বিছানাতে অচেনা কেউ আছে! চিৎকার দিতে চাইল সে, কিন্তু এবারও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো না। 

ওর বুকের ওপর পা রেখেছে জিনিসটা… তারপর পায়ের ওপর! প্রচণ্ড ভারী… ব্যথা করছে জর্জের। খুর রয়েছে ওই পা-গুলোতে…. “হে ঈশ্বর!” মনে মনে বলল জর্জ, “ওটা মানুষ না! পশু!” 

সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গেছিল জর্জ, কারণ অনেক চেষ্টা করেও সে মনে করতে পারেনি এরপর কী হয়েছিল! হুঁশ ফেরার পর ও দেখল যে ড্যানি আর ক্রিস দাঁড়িয়ে আছে বিছানার পাশে। 

“বাবা বাবা, ওঠো,” জোরে জোরে বলছে ওরা, “আমাদের ঘরে কী যেন ঢুকেছে!” 

সবকিছু ঝাপসা দেখছিল জর্জ… তারপরেও বুঝতে পারল যে বাইরে কিছুটা হলেও আলো ফুটেছে। ঝড় পুরোপুরি থেমে গেছে। টেবিলের ড্রয়ারগুলো খোলা অবস্থাতেই পড়ে আছে। 

“বাবা, তাড়াতাড়ি চলো,” প্রায় কেঁদে ফেলল ক্রিস। 

তাড়াতাড়ি উঠে মিসি আর ক্যাথির দিকে তাকাল জর্জ। ওরা তখনও শুয়ে আছে, ঘুমে অচেতন যাকে বলে। 

“বাবা,” ওর হাত ধরে টান মারল ড্যানি, “তাড়াতাড়ি এসো!” 

“হয়েছে কী? হুম?” আস্তে করে বলল জর্জ, “কী হয়েছে তোমাদের ঘরে?”

“একটা রাক্ষস আছে ওখানে,” চেঁচিয়ে উঠল ড্যানি, “ওর কোনো মুখ নেই!” 

“আমাদেরকে ধরতে এসেছিল দানবটা,” এগিয়ে এলো ক্রিস, “ওকে পাশ কাটিয়ে পালিয়ে এসেছি, বাবা তুমি তাড়াতাড়ি চলো!” 

বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করল জর্জ, মাথাটা একটু তুলতেই বাইরে থেকে হ্যারি ডেকে উঠল। খোলা দরজা দিয়ে হ্যারির দিকে তাকাল জর্জ, ওর শিকল খোলা। সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করে যাচ্ছে… কিন্তু সিঁড়ির দিকে ছুট দিচ্ছে না। ডেকেই চলল কুকুরটা… যেন সিঁড়ির ওপরে থাকা কাউকে সতর্ক করছে সে। সিঁড়ির ওপর গিয়ে দেখতে হবে। 

নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে বিছানায় উঠে বসল জর্জ। ড্যানি আর ক্রিসের সাথে আরেকটু হলেই ধাক্কা লেগে যাচ্ছিল ওর। দৌড়ে বেরিয়ে এসে সিঁড়ির দিকে চাইল সে! 

সিঁড়ির একদম ওপরের ধাপে সাদা আলখাল্লা পরা একটা ভয়ংকর মূর্তি দাঁড়িয়ে! মুখের পর্দাটার খানিকটা সরে গেল মূর্তিটার… এ তো সেই দানবটা যাকে ফায়ারপ্লেস থেকে উঠে আসতে দেখেছিল সে আর ক্যাথি! 

জর্জের দিকে আঙুল তুলল সেই ভয়ংকর প্রেত 

এক ছুটে শোবার ঘরে চলে এলো জর্জ, তারপর মিসিকে তুলে নিয়ে ড্যানির কোলে দিলো, “ড্যানি, ওকে নিয়ে বাইরে যাও… এখনই যাও, ক্রিস তুমিও ওদের সাথে যাও!” 

তারপর একটু ঝুঁকে ক্যাথিকে কোলে তুলে নিল সে। 

“কী ব্যাপার? ড্যানি… ক্রিস, তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন?” চেঁচিয়ে উঠল জর্জ, “তাড়াতাড়ি চলো!” সবাই মিলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল ওরা। হ্যারিও পিছু নিল। 

নিচে এসে জর্জ দেখল সদর দরজাটা ভাঙা, ঝুলছে ওটার পাল্লা… ঠিক সেই আগের মতো। যেন প্রচণ্ড শক্তিশালী কেউ মুচড়ে ভেঙে ফেলেছে ওটাকে। 

ড্যানি আর ক্রিস বাইরে চলে গেছে ইতোমধ্যেই। মিসি একটু একটু নড়ছে… কিছুক্ষণ পরেই চোখ খুলল ছোটো মেয়েটা। আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল যে কী হচ্ছে… তারপরেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। 

ভ্যানের দরজা খুলল জর্জ, ক্যাথিকে সামনের সিটে বসিয়ে বাচ্চাদের পিছে উঠিয়ে দিলো সে। হ্যারিও লাফিয়ে উঠল। গাড়ির দরজাগুলো বন্ধ করে ড্রাইভারের আসনে এসে বসল জর্জ, তারপর ঈশ্বরের নাম করে চাবি ঘোরাল। 

অদ্ভুত ব্যাপার… একবারেই চালু হয়ে গেল নষ্ট গাড়িটা! দেরি না করে গাড়িটা সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগল জর্জ, কিন্তু ঝড়ের কারণে জমে থাকা ছোটো পাথরগুলোতে আটকে যাচ্ছিল চাকা। কিছুটা পিছিয়ে গেল জর্জ, তারপর প্রচণ্ড গতিতে চালিয়ে দিলো গাড়ি… মুহূর্তেই রাস্তায় উঠে গেল ওরা। 

হাঁপ ছেড়ে বাঁচল জর্জ, গতি কমিয়ে সাইড ভিউ মিররের দিকে তাকাল সে, ধীরে ধীরে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটা।

“ঈশ্বরকে ধন্যবাদ,” আপনমনেই বলে উঠল সে, “আর যেন কখনও এই শয়তানের বাড়িতে ফিরে যেতে না হয় আমাদের!” 

.

১৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬… সকাল সাতটা। 

আটাশতম দিনে ওশান অ্যাভিনিউয়ের ১১২ নম্বর বাড়িটা ছেড়ে পালিয়ে এলো লুৎজ পরিবার। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *