1 of 2

কিলিং মিশন – ৩৭

সাঁইত্রিশ

সময় বাঁচাতে হলে আইল অভ ম্যানে বিমানে করে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নকল নাম ব্যবহার করে অনলাইন থেকে বিমানের টিকেট কিনল রানা ও ফক্স। ঝোড়ো বেগে গাড়ি চালিয়ে বিকেল ছয়টার আগেই পৌছে গেল হিথ্রো এয়ারপোর্টে। গাড়ি লং-স্টে কার পার্কে রাখল রানা। হ্যারিসের ল্যাপটপসহ ব্যাগটা কাঁধে তুলে নেমে পড়ল অফরোড প্রিমিয়াম থেকে। টাকা ভরা হোল্ডঅল গাড়িতে রাখা নিরাপদ নয় বলে ওটা সঙ্গে নিল ফক্স। আরও জরুরি কিছু চাই ওর, সেজন্যেই বলল, ‘সঙ্গে অস্ত্র নিলে ভাল হতো না?’

‘লাগবে না,’ জবাবে বলল রানা। ‘অস্ত্রসহ বিমানে উঠতে গেলে গ্রেফতার হব।’

ওর কথায় তিক্ত হাসল ফক্স। ‘বস্, মরে ভূত হওয়ার আগে বহুৎ লোক এ-কথা বলেছে।’ চেকিঙের কথা স্পিকারে শুনে নিজের হোল্ডঅল ব্যাগেজ স্টোরেজে নিয়ে রাখল সে।

বহুবার হিথ্রো এয়ারপোর্ট ব্যবহার করেছে রানা, তাই ভাল করেই চেনে কোথায় যেতে হবে। অপেক্ষার সময়টাতে অনলাইনে গিয়ে ববি জনসন সম্পর্কে তথ্য খুঁজল। তার ইউটিউব চ্যানেল থাকলেও কোথাও নেই লোকটার ছবি। বলা হচ্ছে ধার্মিক মানুষ সে। কালো জাদু ও শয়তান-পূজার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে। এ-ছাড়া আছে বেশকিছু ভিডিয়ো। লাখ লাখ ইউরোপীয় ও আমেরিকান খ্রিস্টান ধর্মপ্রাণ মানুষ সেগুলো দেখে। নতুন কোন তথ্য নেই দেখে ফোন রেখে দেবে রানা, এমনসময় এল টেক্সট মেসেজ।

ঝড়ের বেগে গাড়ি চালিয়ে জেসিকাকে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে ওয়াকার ও রামিন। একটু আগে ডিগবার্টের বাড়ির পেছনের মাঠে নেমেছে বিলিয়নেয়ার লুকা ব্রেযনেভের বিমান। এবার ওটাতে জেসিকাকে তুলে দেবে ওরা। একঘণ্টার ভেতরে মেয়েটা পৌঁছে যাবে বুড়োর দুর্গে। এদিকে সেসনায় চেপে নরম্যাণ্ডিতে ফিরবে ওয়াকার ও রামিন। কোন সাহায্য লাগলে দেরি না করে যেন যোগাযোগ করে রানা।

কিছুক্ষণ পর দুই প্রপেলারের ছোট এক ফকার বিমানে চেপে বসল রানা ও ফক্স। লিয়োনেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আজ আবারও বিমানে উঠেছে রানা। লণ্ডনের ওপর দিয়ে শব্দদূষণ করে উড়ে গেল বিমান। গত ক’দিনে কত কিছু ঘটে গেছে, চুপচাপ বসে ভাবছে রানা। অবশ্য শেষমেশ পাল্টে গেছে পাশার ছক। যদিও ভবিষ্যতে কী ধরনের বিপদ হবে সেটা জানার উপায় নেই। পরিকল্পনা করে এগোবে ওরা। প্রথম কাজ এখন উত্তর উপকূলে রহস্যময় লোকটার সঙ্গে দেখা করা।

একসময় কুয়াশায় ভরা আইরিশ সাগরের ওপর দিয়ে উড়ে গেল পুরনো বিমান। গন্তব্যের কাছে পৌঁছে রানা দেখল, দূরে আইল অভ ম্যানের রুক্ষ ক্লিফ ও ধূসর-কালো পাহাড়।

‘লোকটা কমপিউটার জিনিয়াস,’ মন্তব্য করল ফক্স, ‘নইলে কোটি কোটি ডলার পেত না।’

জবাবে চুপ করে থাকল রানা। আকাশে ওঠার সোয়া একঘণ্টা পর বিমান নামল রোনাল্ডসওয়ে এয়ারপোর্টের রানওয়েতে। জনসন বলেছে, দ্বীপে পৌঁছে ফোন দিতে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরোবার আগেই তাকে কল দিল রানা। জবাবে লোকটা জানিয়ে দিল, একটু পর ওদেরকে তুলে নেবে।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে সাগর থেকে আসা মৃদুমন্দ হাওয়ায় এসে দাঁড়াল রানা ও ফক্স। মিনিট পাঁচেক পর ওদের পাশে থামল লাল এক সুযুকি ভ্যান। কঙ্কালের মত চিকন, টাকমাথা এক বয়স্ক লোক ওটার ড্রাইভার। তার কানদুটো শয়তানের মূর্তির কানের মত খাড়া। খসখসে গলায় বলল সে, ‘আপনারাই মিস্টার রানা আর ফক্স?’

‘আপনিই কি মিস্টার জনসন?’ জানতে চাইল রানা। কেন যেন ওর মনে হচ্ছে, এই জিন্দালাশ ববি জনসন নয়।

‘শালা সাক্ষাৎ ইবলিশ!’ বিড়বিড় করল ফক্স।

‘আমার নাম কার্লি ফ্রেডিসন,’ চাপা স্বরে বলল লোকটা। ‘আমি তাঁর ড্রাইভার। ভ্যানের পেছনের সিট দেখাল সে। রানা ও ফক্স গাড়িতে উঠে দরজা আটকে নিতেই রওনা হয়ে গেল।

দ্বীপের দক্ষিণে এয়ারপোর্ট। ওটা পেছনে ফেলে আঁকাবাঁকা গ্রাম্য সরু পথে উত্তরদিকে চলল ফ্রেডিসন। যেভাবে পেঁচার মত নাক-মুখ পেঁচিয়ে রেখেছে, রানার মনে হলো কিছু জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেবে না সে। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল রানা। আয়ারল্যাণ্ডের বেশিরভাগ এলাকার মতই আইল অভ ম্যানে আছে নানান ধরনের ফসলের খেত। মাঝে মাঝে একটা-দুটো গ্রাম। নড়বড়ে বেড়া দিয়ে ঘেরা খামারের সামনে সাদা রঙের পাথুরে আউটবিল্ডিং। দূরে কুয়াশায় ভরা ধূসর-কালচে উঁচু পর্বত।

সরু, লম্বাটে দ্বীপ আইল অভ ম্যান। কয়েকবার রাস্তা পাল্টে চল্লিশ মিনিট উত্তরদিকে যাওয়ার পর ভ্যান পড়ল আরও চিকন পথে। চারপাশে গ্রাম্য পরিবেশ। মাথার কাছে ঝুঁকে এল পর্বতশ্রেণী। সন্ধ্যা পৌনে নয়টায় ঘনিয়ে এল রাতের আঁধার। আবছা আলোয় রানা দেখল, খাড়া এক টিলার ওপরে বহু পুরনো এক গির্জা। আরও কিছুটা গিয়ে পরিত্যক্ত বাড়িটার সামনে গাড়ি রাখল টেকো ড্রাইভার। ত্রিশ গজ দূরে হঠাৎ করেই খাড়া দেয়ালের মত সাগরে গিয়ে নেমেছে টিলা। গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ না করে রানা ও ফক্সকে দেখল ফ্রেডিসন। ‘আমরা পৌঁছে গেছি।’

‘আমার তো ধারণা: জনসনের সঙ্গে দেখা হবে তার বাড়ি বা অফিসে,’ বলল রানা।

‘তিনি এখানেই বাস করেন,’ মাথা নাড়ল ড্রাইভার।

গাড়ি থেকে নামল রানা ও ফক্স। ভ্যান ঘুরিয়ে একরাশ কালো ধোঁয়া ওদের নাকে-মুখে ছড়িয়ে দিয়ে দেখতে না দেখতে উধাও হলো টেকো জিন্দালাশ। প্রাচীন গির্জার ধারেকাছে আর কোন বাড়ি নেই। কেউ অপেক্ষা করছে না রানা ও ফক্সের জন্যে। হাঁটু সমান ঘাস ও জংলা ঝোপগুলোকে দুলিয়ে দিচ্ছে সাগরের ঝিরঝিরে নোনা হাওয়া।

ভুরু কুঁচকে রানাকে দেখল ফক্স। ‘তা হলে ওই লোক এখানে থাকে? জানতাম না এতবড় উন্মাদ!’

রানা কিছু বলার আগেই ওর পকেটে বাজল স্মার্টফোন। ওটা হাতে নিয়ে দেখল, এই একই নম্বর থেকে কল এসেছিল লণ্ডনে। ফোন রিসিভ করতেই বলল জনসন, ‘গরীবের বাড়িতে পা রেখেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ!’

‘আপনি কি ঠাট্টা করছেন?’ জানতে চাইল রানা।

‘মোটেও না। গির্জার তৃতীয় ঘরে দরজা পাবেন।

কেন যেন রানার মনে হলো, ওদেরকে চোখে চোখে রাখা হচ্ছে। গির্জার ধুলোময় প্রথম ঘরে ঢুকল ওরা। মাঝের লম্বাটে ঘরটা পেরিয়ে তৃতীয় ঘরে পেল পেছনের দেয়ালে ধাতব এক আধুনিক সিকিউরিটি ডোর। রানার মনে হলো, জলপাই রঙের দরজাটা মিলিটারি বাঙ্কারের প্রবেশপথ। লোহার কবাটে হাতল নেই। তালায় চাবি ঢোকাবার কোন ফুটোও দেখা গেল না। রানা কবাটে দু’বার নক করতেই যে আওয়াজ হলো, ওরা বুঝল ওটা অনেক পুরু। বুলেটপ্রুফ তো বটেই, সম্ভবত বোমা নিরোধক।

‘এটা ফাঁদ বলে মনে হচ্ছে,’ বিড়বিড় করল ফক্স।

কু ডাকছে রানারও মন। জানা নেই দরজার ওদিকে কী অপেক্ষা করছে।

স্টিল-ডোরের ইলেকট্রনিক লক মেকানিযমের কিরকির শব্দ শুনল ওরা। পাঁচ সেকেণ্ড পর সরসর করে সরে খুলে গেল দরজা।

পরস্পরের দিকে তাকাল রানা ও ফক্স।

‘আগে চলুন, বস্,’ নিচু স্বরে বলল প্রাক্তন সৈনিক।

স্টিলের কবাট পেরিয়ে রানা পা রাখল চওড়া এক করিডরে। সাবধানে পিছু নিল ফক্স।

দরজার ধারেকাছে কেউ নেই। একটু দূরে পাতালে নেমে যাওয়ার কংক্রিটের সিঁড়ি। দু’দিকে সাদা রঙের মসৃণ দেয়াল। সিলিঙে জ্বলছে ছোট কিছু এলইডি বাতি। মাথার ওপরের গির্জা ও নিচের আধুনিক এই ভবনটা অস্বাভাবিক লাগছে রানার কাছে।

সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতেই বামে বাঁক নিল করিডর। রানার পেছনে হাঁটছে ফক্স। পেরিয়ে গেল একটা স্টিলের পুরু দরজা। কিন্তু হঠাৎ করেই ওদের পেছনে নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেল ওটা। লক আটকে যাওয়ার ক্লিক শব্দটা বিশ্রী শোনাল ওদের কানে। কোন হাতল বা নব নেই যে ওটা মুচড়ে দরজা খুলে ফিরে যাবে।

সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় ধাপ গুনেছে রানা। ওর ধারণা: ওরা আছে মাটির কমপক্ষে ষাট ফুট নিচে। ঢালু হয়ে নেমে গেছে সুড়ঙ্গের মত করিডর। মিনিটখানেক হাঁটার পর সামনে পড়ল স্টিলের তৃতীয় দরজা। রানার মনে হলো, আড়াল থেকে ওদেরকে দেখছে কেউ। থমকে চারপাশে তাকাল ও। নয় ফুট ওপরে সাদা সিলিঙে এক জোড়া স্টিল মেশ গ্রিড। প্রথমে ওটা ভেন্টিলেটর শাট্ ভেবেছিল রানা, কিন্তু এবার দেখল একটা গ্রিড থেকে চেয়ে আছে ক্যামেরার চকচকে লেন্স।

ওরা পার হতেই পেছনে নিঃশব্দে লক হলো তৃতীয় স্টিলের দরজা। সামনে সাদা রঙের এক চেম্বার। ওটা দেখতে বায়োকেমিকেল ল্যাবের এয়ারলকের মত। ঝিরঝির করে ওদের গায়ে লাগছে এয়ারকুলারের ঠাণ্ডা হাওয়া। সিলিঙে একাধিক ক্যামেরা। দু’দিকের দেয়ালে কিছু প্যানেল। সামনে স্টিলের ইলেকট্রনিক চতুর্থ দরজা। এ-মুহূর্তে ওটা বন্ধ। দরজার আগে স্টিলের আর্চওয়ে। ওটা এয়ারপোর্টের হাই-টেক মেটাল ডিটেক্টর বলেই মনে হলো রানার। ওরা চেম্বারে ঢুকতেই পেছনে নিঃশব্দে আটকে গেল ইলেকট্রনিক দরজা। একবার পরস্পরের দিকে তাকাল রানা ও ফক্স। খাঁচার মত বদ্ধ পরিবেশে আটকা পড়েছে ওরা।

‘হাই-টেক ফ্যাসিলিটি,’ রানার দিকে তাকাল ফক্স।

ওরা বুঝে গেছে, এই ফ্যাসিলিটি তৈরি করতে গিয়ে খরচ করা হয়েছে কমপক্ষে কয়েক মিলিয়ন ডলার।

আমেরিকায় এরচেয়ে কম সফিসটিকেটেড মিলিটারি ইন্সটলেশন দেখেছে রানা। তাই ভাবছে, একটু পর হয়তো দেখবে আরও আধুনিক কিছু।

‘সত্যিই আশ্চর্য!’ বিড়বিড় করল ফক্স।

‘আমার বাড়ি আপনাদের ভাল লেগেছে বলে খুশি হলাম,’ ছাতের গ্রিলের স্পিকার থেকে এল জনসনের কণ্ঠ রানার ধারণা, লোকটা আছে গোপন কোন কন্ট্রোল রুমে। মনিটরে দেখছে ওদেরকে। মুখের কাছে মাইক। আবারও বলল, ‘এবার, আমার কাছে আসার আগে আপনাদেরকে পেরোতে হবে কিছু সিকিউরিটি চেক। দয়া করে জ্যাকেট, জুতো, বেল্ট, ঘড়ি, পকেটের সবকিছু আর মোবাইল ফোন দেয়ালের ট্রেতে রাখুন। ধাতব কিছু যেন সঙ্গে না থাকে।’ দেয়ালে প্যানেল খুলে যেতেই দেখা গেল প্লাস্টিকের ভারী দুটো ট্রে।

জনসনের কথা না মেনে উপায় নেই, বুঝে গেল রানা ও ফক্স। বিরক্তি নিয়ে কবজি থেকে খুলে ওমেগা ডাইভার্স ঘড়ি ট্রেতে রাখল রানা। বাদ গেল না বার্নার ফোন, হ্যারিসের ল্যাপটপসহ ব্যাগ। বুট খোলার পর আলগা করল কোমরের বেল্ট। নিজেকে ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিযনের বন্দি বলে মনে হলো ওর। একই হাল ফক্সের, বিপদ হবে ভেবে শুকিয়ে গেছে মুখ।

সবকিছু রাখতেই দেয়ালের ওদিকে চলে গেল ট্রে-দুটো। বন্ধ হলো দেয়ালের প্যানেল।

‘অসংখ্য ধন্যবাদ,’ স্পিকারে এল জনসনের কণ্ঠ। ‘ফেরার সময় সব ফেরত পাবেন। এবার একজন একজন করে মেটাল ডিটেক্টরের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যান।’

‘ভয় পাবেন না, আমরা সশস্ত্র নই,’ বলল রানা। ‘একটু আগে নেমেছি কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফ্ট থেকে। তথ্য বিনিময় করতে এসেছি, আপনাকে খুন করতে নয়।’

‘আগে সেটা প্রমাণ করুন,’ বলল জনসন। ‘আপনারা হয়তো জানেন না, আমার কোন ভুল হলে যে-কোন সময়ে খুন হব।’

‘আপনি কি মনে করেন জুতোর ফিতা দিয়ে আপনাকে খুন করব?’ জানতে চাইল ফক্স।

‘কে জানে! হয়তো খালি হাতেই ঘাড় মটকে দেবেন! আমি বুদ্ধির চর্চা করি, শরীরের নয়। দয়া করে এগিয়ে যান মেটাল ডিটেক্টর আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে।’

প্রথমে পেরিয়ে গেল রানা। নীরব থাকল ডিটেক্টর। তবে ফক্স আর্চওয়ের অর্ধেক যেতেই কর্কশ শব্দে বাজল অ্যালার্ম। দু’হাতে শরীর চাপড়ে ক্যামেরার দিকে তাকাল ও। পরক্ষণে বত্রিশ দাঁত মেলে হেসে বলল, ‘যাশালা, শেষমেশ আটকে গেছি দাঁতে!’

‘দয়া করে ওগুলো বের করুন,’ বলল জনসন। ‘নইলে বুঝব কী করে, আপনার সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র বা ছোরা নেই!’

বিরক্ত হলেও সোনা ও টাইটেনিয়ামের দাঁতের পাটি মুখ থেকে বের করল ফক্স। ওগুলো রুমালে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে দিল আর্চওয়ের ওদিকে। খপ্ করে ক্যাচ ধরল রানা। এবার অ্যালার্ম বাজল না। নিশ্চিন্তে বাকি পথ পেরোল ফক্স। রানার কাছ থেকে নিয়ে দ্রুত মুখে পুরল দু’পাটি দাঁত। ক্যামেরার দিকে সোনালি হাসি দিয়ে বলল, ‘এবার খুশি হয়েছেন তো?’

জবাবে হঠাৎ করেই নিঃশব্দে খুলে গেল সামনে স্টিলের দরজা।

‘যাব্বাবা!’ বিড়বিড় করল ফক্স।

দরজা পেরোতেই সামনে পড়ল চওড়া প্যাসেজ। দু’দিকে বার্নিশ করা স্টিলের দেয়াল। কোথায় আছে সেটা না জানলে ওরা ভাবত, পৌঁছে গেছে ইণ্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে।

প্যাসেজের ওদিকে ডোরওয়ে।

এরই ভেতরে খুলে গেছে দরজা। আগে কখনও এত মোটা লোক দেখেনি রানা ও ফক্স। সুমো কুস্তিগীররা এর কাছে কিছুই নয়। দাঁড়িয়ে আছে পুরো চওড়া দরজা জুড়ে। প্যান্টের বেল্ট দৈর্ঘ্যে হবে অন্তত ছয়ফুট। কত গজ কাপড়ে তৈরি হয়েছে এই লোকের প্যান্ট, ভাবতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। মস্তবড় ভুঁড়িটাকে ঢেকে মেঝে ছুঁই-ছুঁই করছে তাঁবুর মত কাফতান। লোকটার চুল-দাড়ি মিলেমিশে একাকার। নির্জন দ্বীপে দশবছর বাস করলেও এত করুণ হাল হওয়ার কথা নয় কারও। দাড়ি-গোঁফের জঙ্গলে উঁকি দিল খয়েরি কিছু আধখাওয়া দাঁত। বাচ্চাহাতির থাবায় রানা ও ফক্স দেখল বিশাল এক স্টেইনলেস-স্টিলের ম্যাগনাম রিভলভার।

‘মিস্টার রানা, মিস্টার ফক্স, পরিচিত হয়ে খুব খুশি হলাম। আসুন, আসুন!’

আঙুল তুলে অস্ত্রটা দেখাল রানা। ‘ওটা কি আপনার বাড়তি সিকিউরিটির জন্যে?’

শ্রাগ করতেই দানবের থলথলে কাঁধে উঠল বড় এক ঢেউ। ‘ঠিকই ধরেছেন। আপনারা সশস্ত্র নন মানেই তো আর এমন নয় যে, আমি কোন বিপদে নেই। মনে রাখবেন রিভলভার পুরো লোডেড। হামলা করা না হলে ব্যবহার করব না। কিন্তু তার উল্টো হলে দুই গুলিতে উড়িয়ে দেব আপনাদের মগজের খুপরি।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *