1 of 2

কিলিং মিশন – ৫

পাঁচ

নিঃশব্দে বিদায় নেবে, না ওয়ার্কার ও রামিনের সঙ্গে দু’চার কথা সেরে রওনা হবে, ভাবল রানা। অবশ্য সিদ্ধান্ত নিতে হলো না ওকে। সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতেই কিচেন থেকে বেরিয়ে এল জনি ওয়াকার।

‘ফিরেই আবারও কোথায়?’ জানতে চাইল সে।

‘জরুরি কাজে,’ বলল রানা।

ওর কাঁধের ব্যাগ দেখল ওয়াকার। ‘আবারও স্কটল্যাণ্ডে? আমাদেরকে না বলেই কি বিয়েটা সেরে নেবে নাকি?’

বন্ধুকে সব জানাতে চাইলেও কিছুই বলতে পারবে না রানা। চুপ করে থাকল। অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেলের নিষ্ঠুর খেলার নিয়ম ভাঙলে বেঘোরে মরবে জেসিকা। বাকি জীবন নিজেকে দোষী বলে মনে হবে ওর।

‘কেন বা কোথায় যাচ্ছি, জানতে চেয়ো না,’ বলল রানা। ‘পরে সব জানবে। এ-ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই আমার।’

সারা বিকেল বোতলের পর বোতল ওয়াইন গিলেছে জনি ওয়াকার। কিন্তু প্রিয় বন্ধুর ক্লান্ত মুখ দেখে মুহূর্তে কেটে গেছে নেশা। তার পাশে এসে থেমেছে রামিন। কুঁচকে গেছে দুই ভুরু।

‘তুমি জানো, বিপদে আমাদেরকে পাশে পাবে,’ বলল ওয়াকার। ‘তাই না, রানা?’

‘জানি।’

‘তা হলে সমস্যাটা শেয়ার করতে পারো।’

‘এই মুহূর্তে আমার বলার মত কিছুই নেই, জনি।’

‘আপনার জন্যে মরতেও দ্বিধা করব না আমরা, মাসুদ ভাই,’ বলল রামিন রেজা। ‘আপনি সেটা জানেন।’

‘কথাটা বলেছ সেজন্যে ধন্যবাদ,’ অন্তর থেকে বলল রানা।

‘আপনার হাত কেটে গেছে,’ খেয়াল করল রামিন। ‘আমি ব্যাণ্ডেজ করে দেব?’

‘না, লাগবে না।’ হাতের দিকে তাকাল রানা। ‘ওটা কিছু নয়।’

অবাক হয়ে ওকে দেখছে রামিন।

গম্ভীর হয়ে গেছে জনি ওয়াকার।

‘একটা কথা, আমি যাওয়ার পর এ-বাড়ির প্রতিটি ফোন পরীক্ষা করে দেখবে,’ বলল রানা। বুঝতে পারছে, ওর কথা খুব অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে রামিন ও জনির কাছে।

‘সেটা কেন করব, রানা?’ ভুরু কুঁচকে গেল ওয়াকারের।

‘জেসিকা হয়তো ফোন দেবে,’ বলল রানা। ‘সেক্ষেত্রে ওর কল রিসিভ করবে না। নিজেরাও ওকে ফোন দেবে না। আমার অনুরোধটা মনে রাখবে তো তোমরা?’

বিস্মিত হয়ে পরস্পরকে দেখল ওয়াকার ও রামিন। বন্ধুর দিকে তাকাল ওয়াকার। ‘বাড়ি ফেরার পর থেকেই তোমার আচরণ খুব রহস্যময়, রানা। আসলে কী হয়েছে?’

‘আগেই বলেছি, কিছুই বলতে পারব না,’ বলল রানা।

‘এভাবে আমাদেরকে অন্ধকারে ফেলে যাবে?’ বলল ওয়াকার, ‘সংক্ষেপে বলো কী হয়েছে।’

‘আমি দুঃখিত, জনি।’

‘অন্তত বলে যাও কোথায় যাচ্ছ।’

‘আপাতত লণ্ডনে।’ ওয়াকারের কাঁধে হালকা চাপড় দিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরোল রানা। নানান বিপদে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে ওরা। অথচ জনি বা রামিনের কাছে আজ গোপন করতে হচ্ছে সব। রানা টের পেল, ওর গলার ভেতরে পাকিয়ে, গেছে শক্ত দলা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছে জনি ও রামিন, অথচ কিছুই বলার উপায় নেই। লিয়োনেলের প্রতি ঘৃণার মাত্রা আরও বেড়ে গেল রানার।

ফক্সের বিষয়টা মিটে গেলে ভদ্রবেশী জানোয়ারটাকে খুঁজে নেব, আঁধার উঠনে থেমে ভাবল রানা। জেসিকাকে মৃত্যু-মুখে ঝুলিয়ে রেখেছে লোকটা। সুতরাং দুনিয়ার শেষমাথা পর্যন্ত তাকে ধাওয়া করবে রানা। রক্ষা পাবে না সে।

টয়োটা অফরোড প্রিমিয়ামের ড্রাইভিং সিটে উঠে ইঞ্জিন চালু করল রানা। দরজা বন্ধ করার পর গিয়ার ফেলে পা দিয়ে চেপে ধরল অ্যাক্সেলারেটর। রানা এজেন্সির উঠন পেছনে ফেলে ঝড়ের বেগে রওনা হয়ে গেল গাড়িটা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *