1 of 2

কিলিং মিশন – ৩

তিন

আবছা আঁধারেও বেডরুমটা ওর খুব পরিচিত। গত চারমাসে বেশ ক’বার জেসিকার পাশে ওই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়েছে রানা। আজ ভোরে রওনা হওয়ার আগে ওখানেই ছিল। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, আবছা আলোয় ক্ষমাপ্রার্থনার ভঙ্গিতে দু’হাত জড় করে ঘুমাচ্ছে জেসিকা। চাদরের নিচে উঠছে-নামছে ওর বুক। সাদা বালিশে ছড়িয়ে আছে একরাশ কালো চুল।

জেসিকার ঘরে ঢুকে স্মার্টফোন বা সস্তা ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে ছায়াছবি। থরথর করে কেঁপে উঠছে দৃশ্য।

‘ভাবছেন কবের,’ বলল প্রৌঢ়। ‘আপনার কৌতূহল মিটিয়ে দেয়ার জন্যে বলছি: এই ভিডিয়ো ধারণ করা হয়েছে আজ ভোরে। কী নিষ্পাপই না লাগছে মেয়েটাকে, তাই না? একেবারে যেন ঘুমন্ত রাজকুমারী!’

রেগে গেলেও চুপ করে থাকল রানা। ওর মনে হলো, সামনের টেবিলটা উপড়ে নিয়ে ভরে দেবে লোকটার গলায়। ভিডিয়ো থেকে চোখ সরাল না রানা। জেসিকার বেডরুমে তৃতীয় কেউ আছে। পরনে কালো পোশাক। মুখ ও দু’চোখ ছাড়া পুরো চেহারা ঢেকে রেখেছে কালো মুখোশে। হাতে কালো গ্লাভ্স্‌। ডানহাতে সেমি অটোমেটিক পিস্তল। ওটাও কালো রঙের। ব্যারেলে পেঁচিয়ে নেয়া হয়েছে দীর্ঘ সাইলেন্সার।

বিছানার পাশে থামল লোকটা। তাক করা পিস্তলের সাইলেন্সারের ডগা ছুঁই-ছুঁই করছে জেসিকার মাথার তালু। অকাতরে ঘুমিয়ে আছে জেসিকা। কয়েক মুহূর্ত ওর মাথায় তাক করা থাকল পিস্তল। তারপর পিছিয়ে ঝাপসা দৃশ্য থেকে আঁধারে মিলিয়ে গেল হবু আততায়ী। ভিডিয়ো থেমে যেতেই কালো হলো স্মার্টফোনের স্ক্রিন।

ওকে হুমকি দেয়া হচ্ছে, তা বুঝতে দেরি হয়নি রানার। নীরবে যেন শত্রুপক্ষ বলছে: সুতরাং বুঝতেই পারছ কী করতে পারি। একমুহূর্ত লাগবে না মেয়েটাকে মেরে ফেলতে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

‘মেয়েটা জানে না আসলে কী ঘটছে,’ নরম সুরে বলল প্রৌঢ়। ‘আপনি যখন ইনভার্নেস এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে উঠলেন, তার কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে ডিউটির জন্যে তৈরি হয়েছে জেসিকা থমসন। ওর জানা নেই চব্বিশ ঘণ্টা ওর ওপরে চোখ রাখছে একদল পেশাদার খুনি। নির্দেশ পেলেই খতম করে দেবে ওকে। অবশ্য আপাতত এসব ওর না জানলেও চলবে। আপনি তো আমার হাতের তাস দেখলেন। আপনি এখন কথামত কাজ করে দিলে মেয়েটার কোন ক্ষতি হবে না। আমার কথা কি বুঝতে পেরেছেন, মিস্টার রানা?’

হঠাৎ করেই ইঁদুরের খাঁচায় আটকা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে রানার। বসে থাকল নীরবে।

‘আপনি আমার কথা না-ও শুনতে পারেন,’ বলল প্রৌঢ়। ‘নিশ্চয়ই আপনার মনে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য প্রশ্ন। সেগুলোর ভেতরে সবচেয়ে বেশি খুঁচিয়ে চলেছে এই প্রশ্নটা: আমি আসলে কে? আলাপের সুবিধার জন্যে বলছি : আমি অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেল। আমাকে লিয়োনেল নামে ডাকতে পারেন। অন্যান্য যেসব প্রশ্ন আপনার মনে জেগে উঠেছে, সেসবের উত্তর আমি দেব না। আপনার জানার দরকার নেই কার বা কোন সংগঠনের হয়ে কাজ করি। আপনি শুধু মাথায় রাখুন, আমরা আপনাকে ভিত্তিহীন হুমকি দিচ্ছি না। জরুরি কাজে এসেছি। এটা তো বুঝতে পেরেছেন?’

‘বুঝতে পেরেছি,’ শুকনো গলায় বলল রানা। প্রচণ্ড রাগে বুক পুড়লেও বরফের মত শীতল হয়েছে ওর মগজ।

‘গুড, আমার কথা বুঝে নেয়া আপনার জন্যে ভাল,’ বলল লিয়োনেল। ‘এবার একটি মিশনে যাবেন আপনি। তার আগে মন দিয়ে শুনবেন আমার প্রতিটা কথা। কারণ এরপর থেকে এক পা এদিক-ওদিক হলে আপনার প্রেমিকা বেঁচে থাকবে না। একবার নির্দেশ দিলে বেঘোরে খুন হবে মেয়েটা। এ-কাজে ভুল হবে না পেশাদার খুনিদের। এবং সেটা এড়াতে হলে আমার কথা আপনার মেনে নিতে হবে। অবশ্য একবার মিশন শেষ হলে জেসিকার ওপর থেকে মৃত্যুপরোয়ানা সরিয়ে নেব আমরা। ওই মেয়ে জানবেও না, আরেকটু হলে খুন হতো। আমার কথা কি বুঝতে পেরেছেন, মিস্টার রানা?’

শীতল স্বরে জানতে চাইল রানা, ‘আপনার কথা আমাকে মেনে চলতে হবে, তাই না? এ-ছাড়া কোন উপায় নেই?’

রানা যে রেগে গেছে, তা টের পেয়েও সহজ সুরে বলল প্রৌঢ়, ‘আপনাকে কথা দিচ্ছি, কাজ শেষ হলে আর কখনও আমাদেরকে দেখতে পাবেন না।

‘আমাকে কী করতে হবে, আপনি এখনও বলেননি, ‘ বলল রানা। ‘আমি অপেক্ষা করছি।’

ভদ্রতার মুখোশের আড়াল থেকে হিংস্র এক পশুকে বেরোতে দেখছে রানা। অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেলের লেমুরের মত বড় বড় দু’চোখে হিমবাহের মত শীতল দৃষ্টি। রানাকে নরম সুরে জানাল সে, ‘আমাদের এ খেলার আইন খুব সহজ। শুধু মনে রাখবেন, সর্বক্ষণ জেসিকা থাকবে একদল দক্ষ খুনির চোখে চোখে। কাজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সতর্ক করবেন না। পথে তার সঙ্গে কেউ কথা বললেও কয়েক মুহূর্তে আমরা জেনে যাব সে কে। জানতে দেরি হবে না কারা তার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। এককথায় বললে, জেসিকার মোবাইল ফোন, ল্যাণ্ড ফোন, ই-মেইল, সোশাল মিডিয়ার ওপর আমাদের গভীর নজর থাকবে। কাজেই আবারও বলছি: তাকে সতর্ক করলে মস্ত ঝুঁকি নেবেন আপনি। আর সেক্ষেত্রে তার মগজে গেঁথে দেয়া হবে একটা বুলেট। আমার কথা কি আপনি বুঝতে পেরেছেন? অর্থাৎ, দ্বিতীয় কোন সুযোগ আপনি পাবেন না।’

‘এত ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ,’ শুকনো গলায় বলল রানা। ‘তারচে বলুন আমাকে কী করতে হবে।’

‘আপনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে গুলি খেয়ে মরবে আপনার প্রেমিকা,’ আবারও সতর্ক করল লিয়োনেল। ‘ভুলেও এসবে জড়াতে যাবেন না আপনার বন্ধু- বান্ধবকে। সেক্ষেত্রেও মরবে মেয়েটা।’

রানার মন চাইল, দু’হাতে মট্ করে ভেঙে দেবে প্রৌঢ়ের ঘাড়। তারপর বিমানের জানালা লাথি মেরে খুলে লাশ ফেলে দেবে নিচে। কিন্তু লোকটা বোধহয় মরে গিয়েও বলবে: এই যে আমি মরলাম, সেজন্যে খুন হবে আপনার প্রেমিকা!

শীতল কণ্ঠে বলল রানা, ‘আমি ফ্রান্সে গেলেই আমার তরফ থেকে ফোন আশা করবে জেসিকা।’

‘তা জানি। তবে ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনার হয়ে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে দেব আমরা। দু’এক কথায় জানিয়ে দেয়া হবে, আপনি নিরাপদে ফিরেছেন বাড়ি। যেহেতু জেসিকা ধরে নেবে আপনার মোবাইল ফোন থেকেই ওই মেসেজ গেছে, তাই কোন ধরনের সন্দেহ আসবে না তার মনে। ও, ভাল কথা, সর্বক্ষণ আপনার ডিভাইসগুলো মনিটর করা হচ্ছে।’

‘সব গুছিয়ে কাজে নেমেছেন।’ রানার মনে হচ্ছে, কথা দিয়েই সিটের সঙ্গে ওকে গেঁথে ফেলেছে লোকটা।

‘আমি সবসময় কাজে নিখুঁত হতে চাই।’

‘ঠিক আছে, লিয়োনেল, বা যা-ই হোক আপনার নাম- আপনার কথা আমি বুঝতে পেরেছি। এবার বলুন কী চান আপনি আমার কাছে।’

‘ছোট এক তালিকা থেকে আমরা বেছে নিয়েছি আপনাকে,’ ব্যাখ্যা করল লেমুর চোখ। ‘তালিকার অন্যরাও আপনার মতই একই ধরনের কাজে দক্ষ। তবে তাদের ভেতরে আপনি সেরা। আপনার কাজ হবে আমাদের টার্গেটকে নিশ্চিহ্ন করা।’

‘অর্থাৎ, খুন করতে বলছেন।’ কোন প্রশ্ন করেনি রানা। কথাটা ওর নিজের কানে মন্তব্যের মত শোনাল।

‘ওই তালিকার ভেতরে আপনিই সবচেয়ে যোগ্য। অন্যরা আপনার হাঁটু-সমান যোগ্যতা রাখে। আগেও বহু মানুষকে আপনি দুর্গম জঙ্গল, পাহাড় বা সাগর থেকে উদ্ধার করেছেন। কাউকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে আপনার তুলনা নেই। আর সেজন্যেই আপনাকে খুঁজে নিয়েছি আমরা। আগেও ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের হয়ে এই ধরনের কাজ আপনি করেছেন।

‘সেক্ষেত্রে কি ধরে নেব, এবারও তারাই সাহায্য চাইছে?’ বলল রানা।

অলসভাবে কাঁধ ঝাঁকাল লিয়োনেল। ‘শুধু এটা বলব, পাল থেকে সরে গেছে এক ভেড়া। এবং তাকে খুঁজতে আপনার মত দক্ষ কাউকেই আমাদের চাই। মস্ত ভুল করেছে ওই বোকা ভেড়া। আর সেজন্যে চরম শাস্তি পাবে

‘অর্থাৎ, তাকে হাতের কাছে পেলেই খুন করতে হবে?’ স্পষ্ট জবাব জানতে চাইছে রানা।

‘হ্যাঁ। শেষ করে দেবেন। তার লাশও যেন কেউ খুঁজে না পায়। আমার কথাটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন?’

‘তবে একটা বড় ভুল বোধহয় আপনারা করেছেন,’ বলল রানা। ‘আমি কিন্তু ভাড়াটে আততায়ী বা ঠাণ্ডা মাথার খুনি নই।’

ভুরু উঁচু করল লিয়োনেল। ‘কী যে বলেন, রানা! আমি কি তবে ধরে নেব আপনি কিলিং মিশনে যেতে রাজি নন? এত তাড়াতাড়ি খেলার প্রথম শর্তটা ভুলে গেলেন?’

চুপ করে থাকল রানা।

‘ডিয়ার এমআরনাইন, মাথায় জরুরি এই কথাটা গুঁজে নিন, আমাদের হয়ে কাজ না করে আপনার কোন উপায় নেই। হয় কিলিং মিশনে যাবেন, নইলে খুন হবে জেসিকা থমসন। আমরা হয়তো এ-কাজে অন্য কাউকে বেছে নিতাম, তবে এক্ষেত্রে আপনার রয়েছে বিশেষ যোগ্যতা। আপনি খুব ভাল করেই চেনেন টার্গেট আসলে কে। তার চলনবলন সবই আপনার জানা।’

‘অর্থাৎ, আমার পরিচিত কাউকে খুন করতে হবে,’ বলল রানা। ‘জানি, ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও খুন করা খুব স্বাভাবিক এক ঘটনা।’

‘আপনি ভুল ভাবছেন। পরিচিত সেই লোক আপনার ঠিক বন্ধু নয়। তবে কয়েকবার সামরিক মিশনে একসঙ্গে আপনারা গেছেন। তা-ও বেশ কয়েক বছর আগের কথা।’

‘কার কথা বলছেন?

‘ওর নাম ফক্স। উইলবার ফক্স।’

‘তার মানে সে দল ত্যাগ করেছে,’ মন্তব্য করল রানা। চট্ করে বুঝে গেল, কেন ওকে জড়ানো হচ্ছে এই কিলিং মিশনে। আরও তিক্ত হলো ওর মন। নিস্পৃহ সুরে বলল, ‘উইলবার ফক্স কী করেছে যে ওকে মেরে ফেলতে হবে?’

‘সে কী করেছে তা আপনার না জানলেও চলবে,’ রানার হাতের স্মার্টফোন দেখাল লিয়োনেল। ‘আপাতত ওটা নিজের কাছেই রাখুন। ওটার ভেতরে আছে জরুরি ইনফর্মেশন। তবে একবার দেখলে দু’মিনিটের ভেতর ধ্বংস হবে এনক্রিপটেড ডেটা। সুতরাং গেঁথে নেবেন সব মাথায়। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ, জরুরি তথ্য মুখস্থ করতে কষ্ট হবে না।’

‘ডিক্রিপশন কি বা পাসওয়ার্ড জানিয়ে দিন।’

মৃদু হাসল লিয়োনেল। ‘যেন মনে রাখতে আপনার কোন কষ্ট না হয়, তাই পাসওয়ার্ড হচ্ছে: ‘লিলিয়ানা’।

বিলিয়নেয়ার ডেসমণ্ড রুজভেল্টের একমাত্র মেয়ে লিলিয়ানা। ক’বছর আগে ওর বয়স যখন মাত্র আঠারো, তখন লিবিয়াতে বেড়াতে গিয়ে কিডন্যাপ হয়েছিল। সাহারার মরুদস্যুরা চেয়েছিল মেয়েটার জন্যে মুক্তিপণ পাওয়া গেলে ক্রীতদাসী হিসেবে ওকে বিক্রি করবে সৌদির নারীমাংস- লোভী এক শেখের কাছে। সে-সময়ে সাহারার সে-এলাকায় বাংলাদেশ আর্মির চার অফিসারসহ ডেয়ার্ট ওয়ারফেয়ার ট্রেইনিঙে ছিল রানা। ছত্রিশজন সশস্ত্র বেদুঈনের বিরুদ্ধে মাত্র পাঁচটা রাইফেল ও কা-বার নাইফ হাতে লড়াই করে ওরা। লিলিয়ানাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে লিবিয়া থেকে। তখন থেকেই রানাকে খুব শ্রদ্ধা করে মেয়েটা। বান্ধবীদেরকে সুযোগ পেলেই বলে: মাসুদ রানা হচ্ছে আমার সত্যিকারের বড় ভাই। ওর জন্যে হাসতে হাসতে মরেও যেতে পারি। আবার আমার জন্যে মরে যেতেও আপত্তি নেই ওর। ভাই হলে এমনই হতে হয়!

‘কবে দল ত্যাগ করেছে ফক্স?’ জানতে চাইল রানা।

‘পাঁচদিন আগে।’

‘এসএএস ফোর্স থেকে ফুললি ট্রেইণ্ড কমাণ্ডো, বলল রানা, ‘দুনিয়ার যে-কোন জায়গায় যেতে পারে। ধরে নিচ্ছি, ওর খোঁজে গোটা দেশ খুঁজেছে আপনাদের লোক।’

মাথা দোলাল প্রৌঢ়। ‘দু’একটা তথ্য আমরা জেনেছি। সারের এক গ্রামের কাছে পাওয়া গেছে ওর চুরি করা গাড়ি। ওই একই রাতে গ্রাম থেকে চুরি করা হয়েছে এক ফোক্সভাগেন। পরদিন ওটা পাওয়া গেছে লণ্ডনে। ডেটা ফাইল থেকে এসব জেনে নেবেন।’

‘হয়তো নকল পরিচয় ব্যবহার করে চলে গেছে অন্য কোন দেশে, বলল রানা।

‘মগজ ভাল ওর। প্রায় আপনার মতই বুদ্ধিমান। আপনারা দু’জনই এসএএস ফোর্স থেকে ট্ৰেইণ্ড।’

‘ফক্স হয়তো আছে মঙ্গোলিয়ার কোন এক গুহায়, অথবা ফ্লোরিডা কি এলাকায়।’

‘সেজন্যেই তো তাকে খুঁজে বের করতে তালিকার সেরা লোকটাকে বেছে নিয়েছি আমরা। আপনার চেয়ে বেশি তাকে চিনত না কেউ। আমার ধারণা: ওকে খুঁজে বের করতে পারলে সেই লোক হচ্ছেন আপনি, এমআরনাইন।’

‘অন্ধের মত এক পা এক পা করে এগোতে হবে।’

‘দরকার হলে তাই করবেন।’ রানার হাতে ধরা স্মার্টফোন দেখাল লিয়োনেল। ‘মিশন শেষ হলে ফোন দেবেন। ওটার ভেতর ফোন নম্বর আছে। এ-ছাড়া, ওখানে পাবেন সিকিয়োর ই-মেইল অ্যাড্রেস। টার্গেট খতম হয়ে গেলে ফোটো তুলে ওটা পাঠিয়ে দেবেন আমাদের কাছে। সেক্ষেত্রে আমাদের এক এজেন্ট গিয়ে নিজের চোখে দেখবে সে মারা গেছে কি না। এরপর আপনার ওপর আমাদের আর কোন দাবী থাকবে না। জেসিকা ও আপনি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন ফুর্তির সঙ্গে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ-ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

‘বুঝলাম আপনি অত্যন্ত সৎ একজন মানুষ, লিয়োনেল, ‘ কণ্ঠ থেকে তিক্ততা দূর করতে পারল না রানা।

সিট ত্যাগ করে ফিরতি পথে রওনা হয়েও থমকে গিয়ে বলল প্রৌঢ়, ‘আরেকটা কথা, এ বিমানে আপনার ওপর চোখ রাখতে আমার সঙ্গে এসেছে কয়েকজন এজেন্ট। সুতরাং টয়লেট ছাড়া অন্যদিকে আপনি গেলে, সেটা ভাল চোখে দেখবে না তারা। আবারও সতর্ক করছি, আপনি বেইমানি করলে প্রাণে বাঁচবে না জেসিকা। আশা করি ঠাণ্ডা মাথায় শেষ করবেন নিজের মিশন। তাতে রক্ষা পাবেন বিপদ থেকে।’

প্লেনে নিজের সিট লক্ষ্য করে ফিরে চলল প্রৌঢ়। চুপ করে বসে থাকল রানা, অন্ধক্রোধ ও ঘৃণায় ভরে গেছে মনটা

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *