পাঁচ
হৈমন্তী মুখ শুকিয়ে বেড়ায়, কেউ জানে না কেন।
মা জিজ্ঞাসা করলেন, তোর মুখ অমন শুকনো কেন রে? জ্বর হয়নি তো?
হৈমন্তী জোর করে বললে, না।
সময়টা খারাপ। চারিদিকে বসন্ত হচ্ছে। সুতরাং ছোট্ট একটুখানি উত্তরে মা সান্ত্বনা পেলেন না।
বললেন, এদিকে সরে আয় তো দেখি।
বিরক্তভাবে হৈমন্তী কাছে সরে এল। হাত দিয়ে তার ললাটের উত্তাপ পরীক্ষা করে তিনি নিশ্চিন্তভাবে নিজের কাজে চলে গেলেন : না, জ্বর হয়নি।
কিন্তু তাতেও নিষ্কৃতি নেই।
খানিক পরেই বাসন্তী তাকে দেখে চমকে উঠলো : তোকে অমন লাগছে কেন রে? জ্বর নাকি?
—হ্যাঁ।
বলে হৈমন্তী তার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। সে জানে তার জ্বর নয়। কিন্তু জ্বরের মতো। তার কিছুই ভালো লাগছে না।
বিকেলে শ্রীমন্ত যখন একবার বেরিয়ে গিয়েছিল, হৈমন্তী একখানা চিঠিতে সব কথা লিখে তার বিছানার তলায় রেখে এসেছে। কে জানে সে চিঠি তার চোখে পড়ছে কি না। শ্রীমন্ত আজকাল যেন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে উঠেছে। বেশ-ভূষায় কেমন যেন বিশৃঙ্খলা। বোধ করি পরীক্ষার দুশ্চিন্তায়। কে জানে কেমন তার পড়া তৈরী হোল।
হৈমন্তী রেগে যায় ওর ওপর। মানুষের জীবনের চেয়ে কি পড়ার দাম বেশি? ভালোবাসার চেয়েও?
আর শুয়ে থাকতে পারলে না সে। গায়ে একখানা চাদর জড়িয়ে চুপি চুপি ছাদে চলে গেল। কি জানি কেন, সবাইকে তার এড়িয়ে চলতে ইচ্ছা হচ্ছে।
শেষ শরতের অপরাহু।
সীসার মতো মলিন আকাশে সূর্যাস্তের বর্ণ-সমারোহও যেন তেমন জমছে না। বড়লোকের প্রসাদী পুরানো মূল্যবান পোশাক-পরা গরীবকে যেমন দেখায় তেমনি। উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ,—তিন দিক থেকে একটা কালো পাতলা পর্দা সেই বর্ণাঢ্যতাকে ছুটে গ্রাস করতে আসছে।
দূরে পশ্চিম দিগন্তে উড়ছে ক’টা কালো কালো পাখি। নীড়ে ফিরে চলেছে বোধ করি। সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হৈমন্তীর মন যেন আরও উদাস হয়ে গেল।
আলিসায় ভর দিয়ে অভিভূতের মতো একদৃষ্টে সেই দিকেই সে চেয়ে রইল।
হঠাৎ এক সময় সিঁড়িতে জুতোর শব্দে এবং কাদের যেন কলকণ্ঠে সে সচকিত হয়ে উঠলো।
বড়দিদি আর সুবিমল!
সুবিমল তার অপরিচিত নয়। এ বাড়িতে তার প্রায়ই আসাযাওয়া। দিদির দেবর হিসাবে হৈমন্তী তার সঙ্গে কত রসিকতা করেছে, ক্যারম খেলেছে, গল্প করেছে। কিন্তু এখন তাকে দেখামাত্র হৈমন্তীর মন যেন হঠাৎ বরফের মতো জমে গেল।
বাসন্তী বললে, কি রে, তোর না জ্বর হয়েছে? ঘরে গিয়ে শুয়েছিলি না? হঠাৎ ছাদে ঠাণ্ডায় চলে এলি যে!
হৈমন্তী ফিরে একটু হাসলে। বললে, জ্বর কে বললে? মাথাটা কেমন ধরেছে, তাই।
—মাথা ধরার ওষুধ জানি আমি।—সুবিমল হাসতে হাসতে বললে।
—কি—বাসন্তী জিজ্ঞাসা করলে।
—ক্যারম খেলা।—সুবিমল গম্ভীরভাবে উত্তর দিলে।
ওরা দু’জনই হেসে উঠলো।
ক্যারম হৈমন্তীর একটা নেশা। ক্যারমের নামে মনের বরফ যেন গলতে লাগলো।
ভুরু কুঁচকে বললে, তবু যদি খেলতে জানতেন!
এর উত্তরে সুবিমল শুধু একটা অট্টহাস্য করে উঠলো। বললে, চলো, গোটা কয়েক নতুন মার তোমাকে শিখিয়ে দিয়ে যাই।
দু’জনে বেধে গেল কলহ।
সেই উত্তেজনায় ওরা দু’জনে বাসন্তীর দু’খানা হাত ধরে নিচে নেমে গেল। সে হবে ওদের খেলার বিচারক।
কি জানি কেন, খেলা তেমন জমলো না।
অনেকগুলো সহজ মার হৈমন্তীর ফসকে গেল। তার আঙুল কাঁপছে। বাসন্তী বুঝতে পারছে কেন। কিন্তু সুবিমল কিছুই জানে না, সরু সরু লম্বা আঙুল দিয়ে সে চমৎকার স্ট্রাইক করেছে। আজকে তার হাত যেন আরও খুলে গেছে।
কিন্তু হৈমন্তী পারছে না।
একদৃষ্টে সে সুবিমলের চাঁপার কলির মতো সুন্দর আঙুলের দিকে চায়। শ্রীমন্তও সুপুরুষ। কিন্তু তার আঙুল এমন সুন্দর নয়। দিন মজুরের মতো শক্ত-শক্ত, মোটা মোটা তার আঙুল। এমন সূক্ষ্মাগ্র নয়।
উভয়েই সুন্দর। কিন্তু সুবিমলের মুখে যে অভিজাত সৌকুমার্য আছে, শ্ৰীমন্ত তা কোথায় পাবে?
খেলার আসরে হৈমন্তী মনে-মনে উভয়ের মধ্যে তুলনা করে দেখে। বিদ্যা, বিত্ত, রূপ কোনো দিক দিয়েই সুবিমলের সঙ্গে শ্রীমন্তের তুলনা চলে না। শ্রীমন্ত অনেক ছোট, অনেক নিচে। সে এই বাড়ির একজন আশ্রিত ছাড়া আর তো কিছুই নয়। আর সুবিমল এই মহানগরীর একটি অভিজাত বংশের সুশিক্ষিত যুবক। আচারে-ব্যবহারে নিখুঁত।
কিন্তু সুবিমলের সান্নিধ্য তাকে আনন্দ দিতে পারে না কেন? তার এত কাছে বসেও ওর মন চঞ্চল হয়ে উঠছে কই? খেলার ছলে দু’জনের আঙুলে আঙুলে ঠেকে গেলে দেহে শিহরণ জাগে না কেন?
হৈমন্তী ভাবতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়। খেলায় ভুল করে। সহজ মার ফসকে যায়। বাসন্তী হাসে। সুবিমল ব্যঙ্গ করে। হৈমন্তী লজ্জা পায়। আবার মন দিয়ে খেলবার চেষ্টা করে। পারে না।
সুবিমল সুন্দর, আশ্চর্য সুন্দর। একতাল গলিত কাঁচা সোনার মতো ঢলঢল। আর শ্রীমন্ত যেন পাথর। তার মূল্য বেশি নয়। কিন্তু কোথায় যেন তার মধ্যে একটা কঠিন অদম্য শক্তির উৎস আছে। তার পুরু-পুরু ঠোটে, ছোট তীক্ষ্ণ চোখে এবং মোটা বেঁটে লোহার শিকের মতো আঙুলের ফাঁকে যেন সেই শক্তি লুকানো আছে। সেখানে, সেই শক্তির ক্ষেত্রে সুবিমল তার কাছে কতটুকু?
শ্রীমন্ত এই বাড়ির আশ্রিত। পোষা বাঘের মতো সে হৈমন্তীর পায়ের তলায় বসে থাকে। হৈমন্তীর ভালো লাগে। সে ওকে ভালবাসে…এবং একটু বোধ করি যেন ভয়ও করে। ওকে তার অদেয় কিছুই নেই।
আর এই সুবিমল…মোমের পুতুলের মতো আশ্চর্য সুন্দর এই সুবিমল …একে নিয়ে সে করবে কি? মনের আলমারীতে ঝেড়ে-মুছে সাজিয়ে তুলে রেখে দেবে?
হৈমন্তী একটা অ্যাঙ্গল মারতে গিয়ে পারলে না।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
হঠাৎ রেগে গিয়ে হৈমন্তী ক্যারামের বোর্ডখানাই উলটে দিয়ে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ওরা হৈ হৈ করে উঠলো।
সে চীৎকারে বাসন্তীর মা পর্যন্ত কৌতূহল রাখতে না পেরে ছুটে এলেন :
—কি হোল রে তোদের?
বাসন্তী হাসতে হাসতে বললে, খেলায় না পেরে হিমু বোর্ড উলটে দিয়ে ছুটে পালালো।
—কার সঙ্গে খেলছিল?
—ঠাকুরপোর সঙ্গে।
শুনে নয়নতারা হাসতে হাসতে পালালেন। আজকালকার ছেলেমেয়েগুলো যেন কী! না লজ্জা, না শরম। কিন্তু তার জন্যে তিনি দুঃখিত হলেন বলেও মনে হোল না।
.
অনেকক্ষণ বিছানায় ছটফট করে হৈমন্তী আর পারলে না।
রাত তখন দুটো। পাশেই বাসন্তী শুয়ে অঘোরে ঘুমুচ্ছে। দেখতে দেখতে দিদিটা কি মোটা হচ্ছে! আর কী ঘুমুতেই পারে! সমস্ত রাত্রির মধ্যে আর সাড়া পাওয়া যাবে না। আর কী নাকটাই ডাকে! মোটা হওয়ার জ্বালা কম নয়!
হৈমন্তীর ঘুম আসে না কিছুতে।
সমস্ত বাড়ি নিস্তব্ধ। রাজপথে শব্দ নেই। হৈমন্তীর মাথার মধ্যে অসংখ্য দুশ্চিন্তা যেন সাপের মতো কিলবিল করছে।
আস্তে আস্তে সে উঠে বসলো।
শ্রীমন্ত তাকে তার ঘরে আসতে নিষেধ করেছে। সে ভয় পায়। অথচ শ্রীমন্তকে তার বিশেষ প্রয়োজন। তার সঙ্গে অনেক আলোচনা করার আছে।
কি করছে এখন সে?
ঘুমোয়নি নিশ্চয়ই। হয়তো পরীক্ষার পড়া তৈরী করছে রাত জেগে। নয়তো ঘুম ভাঙাবার জন্যে স্টোভে কফি তৈরী করছে।
হৈমন্তী অত্যন্ত সন্তর্পণে দরজা খুলে বেরিয়ে এল।
দিদি জানতে পারবে না তো?
জানে জানুক, কাউকে সে ভয় করবে না।
অন্ধকার রাত্রি। শ্রীমন্তের ঘর পর্যন্ত এই রাস্তাটা তার একেবারে মুখস্থ। দূর থেকেই দেখতে পেলে শ্রীমন্তের ঘরে আলো জ্বলছে। দরজা খোলা। আস্তে আস্তে ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলে, শ্রীমন্ত টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে কি করছে বোঝা যাচ্ছে না।
ক্লান্ত বোধ হয়।
পরীক্ষার আর বেশী দেরি নেই। হৈমন্তী জানে এই পরীক্ষাটা পাস করবার জন্যে কি ভীষণ পরিশ্রম সে গেল ক’মাস থেকে করছে। সমস্ত দিন রাত্রির মধ্যে কতটুকু সময়ই বা সে ঘুমোয়?
শ্রীমন্তের প্রতি মমতায় হৈমন্তীর মন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠলো।
নিঃশব্দে দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে ওর শিয়রে এসে সে দাঁড়ালো।
অঘোরে ঘুমুচ্ছে শ্রীমন্ত। টেবিল-ল্যাম্পের নিচে খোলা রয়েছে তার পড়ার বই। তারই আধখানায় মাথা রেখে ক্লান্ত হয়ে ও ঘুমুচ্ছে।
হৈমন্তীর আসা টেরও পেলে না।
কী রোগা হয়ে গিয়েছে শ্রীমন্ত! অনেক দিন হৈমন্তী আসেনি এ-ঘরে। অনেক দিন ওর দিকে ভালো করে এমন পরিপূর্ণ আলোয় চেয়ে দেখেনি।
ওর পেশীবহুল লোহার মতো শরীরের এ কী অবস্থা হয়েছে! সব যেন ঢিলে হয়ে গিয়েছে। ব্যায়াম করার ফলে মুখখানি তার কখনই খুব ভরাট নয়। এখন যেন একেবারেই চুপসে গিয়েছে। নিমীলিত চোখে অপরিসীম ক্লান্তি। রুগ্ণ দেহে শুধু হাড় সার হয়েছে।
এ কী দুশ্চর তপস্যা আরম্ভ করেছে শ্রীমন্ত! বিদ্যার জন্যে অমন দেবদুর্লভ স্বাস্থ্য পর্যন্ত বিসর্জন দিতে বসেছে!
ওকে জাগাতে হৈমন্তীর মমতা হোল। নিঃশব্দে ফিরে যেতেও মন সরলো না। এই অবসরে ওকে একটুখানি সেবা করার লোভ হৈমন্তীর পক্ষে দুর্জয় হয়ে উঠলো। পাশে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ওর মাথার বড় বড় কোঁকড়া চুলে হাত বুলোতে লাগলো।
সে স্পর্শে শ্রীমন্তের চোখে ঘুম বেশী করে জড়িয়ে আসারই কথা। কিন্তু মাথায় তার পরীক্ষার দুর্ভাবনা। নিশ্চিন্তে ঘুমোবার এখন অবসর নেই। একটু পরেই সে চমকে মাথা তুলে চোখ মেলে চাইলে।
—হৈমন্তী!
ওর চোখ ঘুমের জন্য তখন জবাফুলের মতো লাল।
হৈমন্তী হাসলে। বললে, উঠলে কেন? শোও না আর একটু।
সামনের খোলা বইখানির দিকে শ্রীমন্ত একবার চাইলে। বললে, একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, না?
অপ্রস্তুতভাবে ধড়মড় করে সে উঠে দাঁড়াল। হৈমন্তীকে একটু আদর করলে। বললে, দাঁড়াও, একটু কফি তৈরী করি আগে। ঘুমে চোখ মেলে যেন চাইতে পারছি না।
হৈমন্তী ধমক দিলে। বললে, না। আর কফি তৈরী করতে হবে না। অনেক রাত্রি হয়েছে। শুয়ে পড়ো। শরীর কি হয়েছে একবার দেখ দেখি
শ্রীমন্ত হাসলে। বললে, শরীরের জন্য ভেবো না হিমু। পনেরো দিনে সেরে নোব। কিন্তু এই পরীক্ষায় আমাকে পাস করতেই হবে।
শ্রীমন্ত স্টোভ জ্বালিয়ে জল চড়িয়ে খাটের ওপর হৈমন্তীর পাশে এসে বসলো। বুঝলে, তার অবাধ্যতায় হৈমন্তী ক্রুদ্ধ হয়েছে।
ওকে শান্ত করবার জন্যে বললে, এই কটা দিন আমাকে কিছু বোলো না। আর ক’টা দিনই বা!
মুখ ভার করে হৈমন্তী বললে, পরীক্ষা পাস করা কি এমনই দরকারী যে তার জন্যে শরীর পর্যন্ত পাত করতে হবে?
—সকলের জন্যে হয়তো নয় হিমু। কিন্তু যাদের বাপ মা নেই, নিরাশ্রয় পরের বাড়িতে যারা মানুষ হচ্ছে, তাদের পক্ষে এমনই দরকারী।
শ্রীমন্তের পিতৃমাতৃহীন নিরাশ্রয় অবস্থার কথায় হৈমন্তী চিরকাল চুপ করে গেছে। আজও সাড়া দিলে না।
শ্রীমন্ত বলতে লাগলো :
হৈমন্তী, যদি ভেবে থাকো বিদ্যার জন্যে আমি এই পরিশ্রম করছি তাহলে ভুল করবে। বিদ্যায় আমার বিশেষ লোভ নেই। বিদ্বান হবার শক্তি আমাকে ভগবান দেননি আমাদের সমাজে বিদ্বানের মূল্যও বেশি নয়। কিন্তু আমাকে বড় হতে হবে। প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে হবে। সকলের মাথার উপর উঠতে হবে। আমি ভেবে দেখেছি, আজকের সমাজে সে কিছুই শক্ত নয়।
এবারে হৈমন্তী হেসে ফেললে। সে বিশ্বাস করতে পারলে না যে, বড় হওয়া এতই সোজা। সে গিয়ে কফি তৈরী করতে বসলো।
কিন্তু তার হাসি শ্রীমন্ত বোধহয় দেখতে পেলে না। সে আপন মনেই বলতে লাগলো : কিছু শক্ত নয় হিমু। শুধু ক’টা জিনিস দরকার। ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্বন্ধে নির্বিচার হতে হবে। আর কিছু পরিমাণে নির্লজ্জ হতে হবে। বৈষ্ণব শাস্ত্রে বলে :
লজ্জা, ঘৃণা, ভয়-
তিন থাকতে নয়।
কথাটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও সত্যি। আমার বিশ্বাস, এই তিনটেই আমার নেই। আমার বড় হওয়ার পথ তৈরী হয়েই আছে। ছেলেবেলা থেকেই আমি পিতৃমাতৃহীন। আমার আপনার কেউ নেই। সুতরাং কিসের লজ্জা, কোথায় দ্বিধা, ভয় করবারই বা কারণ কি?
বলতে-বলতে ওর চোখ দপ করে জ্বলে উঠলো।
কফি তৈরী করতে করতে হৈমন্তী চমকে গেল। শ্রীমন্তের ছোট ছোট চোখে যেন সাপের হিংস্র দৃষ্টি!
সে স্তব্ধ হয়ে গেল। শ্রীমন্তের এই রূপ এর আগে কখনো দেখেনি। যে গুরুতর বিষয়ের আলোচনা সে করতে এসেছিল, তার কিছুই হোল না। নীরবে এক পেয়ালা কফি শ্রীমন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে সে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালো।
শ্রীমন্ত জিজ্ঞাসা করলে, তুমি খাবে না কফি?
হৈমন্তীর কেমন যেন মাথা ঝিমঝিম করছে। সব গোলমাল লাগছে। ফিকে একটুখানি হেসে বললে, সর্বনাশ! এমনিতেই আমার চোখে ঘুম নেই, তার ওপর কফি?
সে যেমন নিঃশব্দে এসেছিল, তেমনি নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল।