কালোঘোড়া – ১৮

আঠারো 

লালবাজারের লক-আপে শঙ্করের কাটলো তিন দিন। 

সোমবারে সে ধরা পড়ে। মঙ্গলবার তাকে কোর্টে হাজির করে। কোর্ট আবার তাকে পুলিসের জিম্মাতেই সমর্পণ করে। সেই থেকে সে সেখানেই। 

অন্ধকার একখানা ঘর। তাতেই ঠাসাঠাসি করে তারা পঁচিশ-ত্রিশ জন। অন্ধকারে প্রথমে কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না। এখন সয়ে গেছে। চোখ অন্ধকারে কিছুটা অভ্যস্ত হয়েছে। কিন্তু এই ঘর থেকে দিনরাত্রি সর্বক্ষণ যে চীৎকার উঠছে, শঙ্করের পক্ষে সেইটেই সবচেয়ে অসহ্য হয়ে উঠেছে। 

এতদিন মস্ত বড় বাড়িতে তার দিন কেটেছে। সে বাড়িতে চীৎকার করলেও বোধ করি বিশেষ এসে যায় না। কিন্তু অভিজাত-বাড়ির চাল-চলনই স্বতন্ত্র। সেখানে কেউ জোরে কথা বলে না। চাকর-বাকর নিঃশব্দে কলের মতো কাজ করে যায়। তারা নিজেরাও আস্তে কথা বলে। এই রেওয়াজ। 

 গারদখানার অবিশ্রান্ত হাসি-গান-হুল্লোড়ে সে যে অস্থির হয়ে উঠবে, সে আর বিচিত্র কি!

সোমবারে যখন সে লক-আপে এলো, তখনও তার খাওয়া হয় নি। সমস্ত দিন একপ্রকার অনাহারেই কেটেছে। বিকেলে একজন লোক তাদের আঁচলে আঁচলে একমুঠো করে মুড়ি ছড়িয়ে দিয়ে গেল। সেই মুড়ি দাঁতে কাটবার কথা মনে হতেই তার গা’টা পাক দিয়ে উঠলো। 

সে শুধু এক গ্লাস জল চাইলে। 

—এক গ্লাস! লোকটা গভীর অবজ্ঞায় অট্টহাস্য করে উঠলো,—গ্লাস কোথায় পাব চাঁদ! এ কি শ্বশুরবাড়ি পেয়েছ! একটু কষ্ট করে এই দিকে একটু এগিয়ে এসে হাত পাতো, জল ঢেলে দিই, আশ মিটিয়ে খাও। কি বলো? 

শঙ্কর কিছুই বললে না। তার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো। 

আঁজলা করে জল সে কখনও খায়নি। একটুখানি তৃষ্ণার জল দিতে কেউ যে কারও সঙ্গে এমন রূঢ় ব্যবহার করতে পারে সে ধারণাও ছিল না। আঁচলের মুড়ি সে পাশের ছেলেটির আঁচলে ঢেলে দিলে। সেটি তাদেরই পাড়ার বস্তির একটা ছেলে। তারই বয়সী হবে। সমস্ত দিনের পর ছেলেটি ক্ষুধার জ্বালায় সেই শুকনো মুড়িই গোগ্রাসে মশম করে চিবুচ্ছিল। 

শঙ্কর যখন তার আঁচলে মুড়িগুলো ঢেলে দিচ্ছিল, সে বাধা দেবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মুখ তখন তার মুড়িতে ভর্তি। তার মাথা নাড়া শঙ্কর দেখতে পায়নি। 

সে নিঃশব্দে মুড়ি ঢেলে দিয়ে নর্দমার কাছে সরে এসে বদ্ধাঞ্জলি পাতলো।

সমস্ত দিন হাত-মুখ ধোয়া হয়নি। হাতে কত ময়লা যে লেগে আছে তার ঠিক নেই। মুখ-চোখ-কান এবং ঘাড়ের পাশটা ধোয়া দরকার। 

আ! কী ঠাণ্ডা জল! শরীর যেন জুড়িয়ে যায়! 

আবার লোকটি তেমনি কৰ্কশকণ্ঠে হেসে উঠলো : 

—বাবুসাহেবকে একখানা সাবান এনে দোব কি? 

না। এরা সমস্ত দিনের পর কয়েদীকে মুখ-হাতটা ধুতে দিতেও চায় না। হাত ভালো করে ধোয়াও হোল না। তৃষ্ণায় শঙ্করের ছাতি ফেটে যাচ্ছিলো। কি জল, জলে ময়লা আছে কি না, তাও দেখার সুযোগ নেই। শঙ্কর সেই মলিন হাতেই অঞ্জলি পেতে ঢক ঢক করে আকণ্ঠ জল পান করলো। 

 তার পর নিজের কম্বলে এসে নিঃশব্দে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। 

এখন ক’টা কে জানে। বিকেল না সন্ধ্যা, ঘরের ভিতর থেকে তাও বোঝবার উপায় নেই।

বস্তির সেই ছেলেটির নাম কাশীনাথ। 

কাশীনাথের মায়ের বাড়ি আগ্রার কাছে। বাপ বাঙালী। মায়ের আলুর দোকান আছে হাতিবাগানের বাজারে। বাপ করে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ। কি করে ওদের দু’জনের পরিচয় হয়েছিল সে ইতিহাস এখানে অনাবশ্যক। বস্তি-জীবনে এমন হামেশাই হয়ে থাকে। 

‘দেবধামের’ তিনখানা বাড়ির পরে যে খোলার বস্তি, সেইখানে ওরা স্বামী-স্ত্রী ভাবে বাস করে। সেইখানেই কাশীনাথের জন্ম। সেইখানেই কাশীনাথের বাল্য এবং কৈশোর কেটেছে। 

কাশীনাথের যখন জন্ম হোল, তার নামকরণ নিয়ে বাপমায়ের মধ্যে একটা মতভেদ দেখা দেয়। বাপ বাঙালী। সে চায় একটা হালফ্যাশানের বাঙালী নাম রাখতে। মা আগ্রাবাসিনী। সে চায় সেইদেশীয় তার মনের মতো একটা নাম রাখতে। 

বস্তিতে ছিল এক দরিদ্র উড়িয়া ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। কলেজ স্কোয়ারের সামনের ফুটপাথে ছক পেতে সে পথিকের করকোষ্ঠী বিচার করতো। সে ওদের মীমাংসা করে দিলে। 

বললে, নাম রাখো কাশীনাথ। কাশী হচ্ছে কলিকাতা আর আগ্রার মাঝামাঝি। 

এই মধ্যস্থতা ওদের দু’জনেরই খুব পছন্দ হোল : কলকাতাও নয়, আগ্রাও নয়, —কাশী। যেখানে অন্ন-বস্ত্রের জন্যে স্বামী এবং স্ত্রী কেউ কারও মুখাপেক্ষী নয়, সেখানে এর চেয়ে সমীচীন আপোস আর কী হতে পারে? 

কলকাতা আর কাশীর মধ্যবর্তী পান্থনিবাসের মধ্যে কাশীনাথ বাড়তে লাগলো। লেখাপড়া শেখবার বয়স হোলে বস্তির আরও পাঁচটি ছেলের সঙ্গে সে কর্পোরেশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হোল। একটু ইংরাজী, খানিকটা বাঙলা এবং অঙ্ক শিখলে। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ হোলে সেও বাপের সঙ্গে ইলেকট্রিকের কাজ শিখতে লাগলো। 

মায়ের ইচ্ছা ছিল, কাশীনাথ তার আলুর দোকান দেখে। কিন্তু ছেলেকে কুঁড়ের ব্যবসায়ে দিতে বাপের মন সরলো না। সে নিজের ব্যবসাতেই ছেলেকে টানলে। মা বাধা দিলে না। 

সেই থেকে সে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। 

হাতে পয়সা পড়তেই তার চেহারার পরিবর্তন হতে লাগলো। মায়ের দৌলতে রঙটা বরাবরই ফর্সা। এখন তাতে সাবান-স্নো পড়লো। মাথার চুলে পড়লো টেরি। গায়ে দামী ছিটের সার্ট। পায়ে নিউ-কাট। 

সে যে বস্তিতে থাকে, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, তা আর বোঝবার উপায় রইলো না।

এই অবস্থায় এই ইলেকট্রিক মিস্ত্রি একদিন ‘দেবধামের’ উত্তরাধিকারীর সঙ্গে এক দড়িতে বাঁধা পড়ে চলে এলো লালবাজারের লক-আপে। 

পুলিসের লোকটা চলে গেলে কাশীনাথ জিজ্ঞাসা করলে, কিছুই তো খেলেন না বাবু, রাত কাটবে কি করে? 

শঙ্কর সে দুশ্চিন্তা করছিল না। অন্যমনস্কভাবে বললে, কে জানে কি করে কাটবে!

—সকালেও কিছু খেয়ে বেরোননি বোধ হয়? 

—সামান্য কিছু খেয়েছিলাম। 

কাশীনাথ যেন খুব দুঃখ পেলে বলে বোধ হোল। 

একটু পরে ধীরে ধীরে বললে, আপনি যে কোন বংশের ছেলে সে আমি তো জানি। সেই বাড়ির দুলাল সমস্ত দিন খায়নি, সারারাত্রি এই কয়েদঘরে একখানা কম্বলের উপর রাত কাটাবে! 

সারাদিনের পর এই নিষ্ঠুর লক-আপের ভিতর এইটুকু সহানুভূতিতে শঙ্করের চোখ ছাপিয়ে অশ্রু নামলো। কিন্তু সে দাঁতে ঠোঁট চেপে নিঃশব্দে শক্ত হয়ে পড়ে রইলো। 

কাশীনাথ বলতে লাগলো, কতদিন যে এখানে থাকতে হবে কে জানে? আপনি চলে যান বাবু। 

—কোথায়? 

—ঘরে। 

এবার শঙ্কর হেসে ফেললে। বললে, আমি চলে যেতে চাইলেই কি এরা ছেড়ে দেবে কাশীনাথ? লেটার-বক্সে আগুন লাগাবার সময় ধরেছে। এত সহজে কি ছাড়বে ভেবেছ? 

—ঠিক ছাড়বে বাবু। আপনি আপনার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিন। বলবেন, যা হবার হয়ে গেছে মশাই, আমাকে ছেড়ে দিন। দেখবেন, তখনই ছেড়ে দেবে। এমন কত বড়লোকের ছেলে ছাড়া পেয়েছে আমি জানি। 

শঙ্কর চুপ করে রইলো। 

কাশীনাথ বললে, তাই করুন, বুঝলেন? 

—না। 

শঙ্করের কণ্ঠ থেকে এমন দৃঢ়তা কাশীনাথ প্রত্যাশা করেনি। সে চমকে উঠলো।

বললে, না কেন? এ কষ্ট কি আপনি সইতে পারবেন? 

—দু’দিনে সয়ে যাবে। তোমরা সইছ কি করে? 

বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে কাশীনাথ বললে, কী যে বলেন বাবু! আপনার সঙ্গে আমাদের তুলনা! আমাদের হোল খেটে-খাওয়া শরীর। 

উত্তেজনায় কাশীনাথ একটা বিড়ি ধরালে। 

জিজ্ঞাসা করলে, আপনি বিড়ি খান না কি বাবু? 

—না। 

জ্বলন্ত দেশলাইটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে কাশীনাথ সেটা এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিলে। তারপর একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বললে, আমি ভালো পরামর্শই দিচ্ছি। শুনুন বাবু। কাল সকালেই আপনি মাপ চেয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যান। 

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শঙ্কর বললে, ঘরে আর আমি ফিরবো না কাশীনাথ। তোমার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালই হোল। জেল থেকে বেরিয়ে আমি তোমারই মতো খেটে খেতে চাই। 

—ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হবেন আমার মতো? 

—ক্ষতি কি? তোমার কাজ আমাকে শিখিয়ে দিও। 

—দেখি আপনার হাতখানা। 

শঙ্কর একখানা হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিলে। সে হাতের তালুটা টিপে কাশীনাথ হো হো করে হেসে উঠলো। 

বললে, এই তুলোর মতো নরম হাতে যন্ত্র ধরা যায় না বাবু। তারপর বললে, বাপ-মার সঙ্গে রাগারাগি করে এসেছেন বুঝি? 

—না। 

—তবে আর কেন? তাঁরা কত ভাবছেন দেখুন তো। 

শঙ্কর আর কোন কথা বললে না। বোধ করি বাপ-মায়ের ব্যথিত উদ্বিগ্ন মুখ তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো এবং কল্পনার স্রোতে তাকেও ভাসিয়ে নিয়ে গেল। 

.

শঙ্করের মাথায় যেন সর্বক্ষণ আগুন জ্বলছে। কিছুতে যেন সে স্বস্তি পাচ্ছে না। পুলিস লক-আপ থেকে সবাইকে জেল হাজতে নিয়ে এসেছে। ঘর এখানে অন্ধকার নয়। স্নানাহারের অব্যবস্থাও পুলিস-লক-আপের মতো অতখানি নয়। একটুখানি হাওয়াও আছে। তবু সমস্তক্ষণ ওর মাথায় যেন আগুন জ্বলছে। 

ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই। বেড়াতে গল্প করতে ভালো লাগে না। শুধু ভাবে। কিন্তু কি যে ভাবে, তা সে নিজেও জানে না। কোনো একটা জিনিসই বেশীক্ষণ ধরে স্থির ভাবে ভাববার শক্তি তার নেই। শরতের মেঘের মতো হালকা ভাবনা এলোমেলো ভেসে চলেছে–একটার পর একটা,- তার যেন আর শেষ নেই। 

শেষ পর্যন্ত কি সে পাগল হয়ে যাবে? 

দেবধান। 

সবাই বলছে দেবধামে ফিরে যেতে। ধনীর দুলাল সে, জেলের এই অপরিসীম কষ্ট, এ কি সে সহ্য করতে পারে? 

কিন্তু কোথায় দেবধান? 

অস্ত-গগনের বর্ণচ্ছটা মহাকালের হাতের ছোঁয়ায় যেমন অতি দ্রুত মুছে যেতে থাকে, দেবধামের ঐশ্বর্যও তেমনি দ্রুত মুছে আসছে। বাইরে থেকে ওরা তার কী জানে? 

ওরা দেখছে, মস্ত বড় থাম-ওলা বাড়ি, গেটে তকমাপরা দারোয়ান, প্রকাণ্ড বড় মোটর গাড়ি। ওরা কি করে জানবে, বাইরে থেকে যে বিরাট বনস্পতি দেখা যাচ্ছে, ভিতরে ভিতরে পোকায় তা জীর্ণ করে ফেলেছে। শিকড় গেছে ক্ষয়ে, মাটির বাঁধন গেছে আলগা হয়ে। মাটির থেকে ও আর নতুন করে রস টানতে পারে না। 

এর মধ্যে অন্ধকার রাত্রে কখন উঠবে ঝড়। ছন্নছাড়া প্রভাতে উঠে প্রতিবেশীরা সবিস্ময়ে দেখবে, বিরাট মহীরুহ আশেপাশের অনেকখানি জায়গা জুড়ে অতিকায় দৈত্যের মতো মরে পড়ে রয়েছে। 

তার আগে ‘দেবধান’ ছাড়তে হবে। 

এই কথা যদিও এমন স্পষ্ট করে নয়, তবুও কেমন করে যেন জেগেছে শঙ্করের মনে। তাকে অহরহ খোঁচার মত বিঁধছে। তার মাথায় জ্বালিয়েছে আগুন। 

দেবধাম ছাড়তে হবে। একটা অদৃশ্য শক্তির তাড়ায় তারই জন্যে যেন সে প্রস্তুত হচ্ছে। 

কাশীনাথ সকাল থেকে কোথায় ঘুরছিলো। জেলে এসেও বেশ আছে ওরা। খাচ্ছে- দাচ্ছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চিন্তাও নেই। ভাবনাও নেই। কিন্তু শঙ্কর পারে না। ওরা তাকে সঙ্গে আসবার জন্যে ডাকে। তবু পারে না। নিঃশব্দে জানালার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে কী যে এলোমেলো ভাবে, তার সব সে নিজেও জানে না। 

বিছানার উপর গায়ের পাঞ্জাবীটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কাশীনাথ হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলে, কি ভাবছেন বাবু? একটু পরে কোর্টে যেতে হবে মনে আছে তো? 

—সে আজ বুঝি? 

—বেশ! আজ ২৩শে না? জামা-টামা খুলে স্নান করে নিন। দেরি করবেন না। এখনি খাবার আসবে। 

—নিই। —পরম উদাসীনভাবে শঙ্কর উত্তর দিলে। তার যেন কোর্টে যাবার গা নেই।

বললে, একটা বিড়ি দাও তো কাশীনাথ। 

—খাবেন?—কাশীনাথ খুশি হয়ে একটা বিড়ি বার করলে। বললে, জেলে বিড়ি যে কী অমূল্য বস্তু! এক পয়সায় একটি, তাও কত সাধ্যসাধনা করে! 

সে আর একবার হাসলে। 

কাশীনাথের তাড়ায় শঙ্কর তাড়াতাড়ি স্নান করে খেয়ে নিলে। তখনই ওয়ার্ডার এসে ওদের নিয়ে গেল। জেলের বাইরে ‘ভ্যান’ প্রস্তুত। ওরা একটি দল চলেছে তাইতো। ‘ভ্যান’ ছুটলো কোর্টের দিকে। সমস্ত রাস্তা পথচারী জনতাকে চকিত করে ওরা থেকে থেকে ‘বন্দেমাতরম্’ ধ্বনি করে। তারের জাল দিয়ে ঘেরা কালো বন্দী-গাড়ি। জনতার বুঝতে বিলম্ব হয় না ওরা কারা। তারাও প্রতিধ্বনি করে ওদের উৎসাহিত করে। 

শঙ্করও উৎসাহিত হয়ে ওঠে। 

কোর্টে প্রথমেই ওদের ডাক হোল। মিনিট কয়েকের ব্যাপার। কাশীনাথদের সবারই মামলার দিন ঘুরলো। শুধু শঙ্কর ছাড়া পেয়ে গেল। 

 শঙ্করের বিস্ময়ের অবধি রইলো না। এত লোক থাকতে হঠাৎ সে ছাড়া পেলে কেন?

তার বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো প্রমাণ নেই। বরং অনুসন্ধানে পুলিস জেনেছে সে নির্দোষ। এর বিরুদ্ধে তর্ক করার কিছু নেই। 

শঙ্কর মুক্ত! 

অনিশ্চিত পদে বাইরে এসে দেখে তাদের বড় গাড়িখানা দাঁড়িয়ে আছে। স্থিরচিত্তে কোনো কিছুই ভাববার শক্তি তার নেই। কিছুই না ভেবে, কিছুই না বুঝে চিরদিনের অভ্যাসমতো সে নিঃশব্দে মোটরে গিয়ে উঠলো। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *