ঋগ্বেদ ০৮।০৪৭

ঋগ্বেদ ০৮।০৪৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৪৭
আদিত্য দেবতা। আপ্ত্যত্রিত ঋষি।

১। হে মিত্র! হে বরুণ! হব্যদায়ীকে তোমরা যে রক্ষা কর, তাহা মহৎ, তোমরা যে যজমানকে শত্রু হস্ত হইতে রক্ষা কর, পাপ তাহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

২। হে আদিত্যগণ! তোমরা কি প্রকারে দুঃখ নিবারণ করিতে হয়, তাহা জান। পক্ষিগণ যেমন আপনাদের শিশুদের উপরে পক্ষ বিস্তার করে, সেইরূপ আমাদিগকে সুখ প্রদান কর। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৩। পক্ষিগণের পক্ষের ন্যায় তোমাদের যে সুখ আছে, তাহা আমাদিগকে প্রদান কর। হে সৰ্ব্বধনবান আদিত্যগণ! সমস্ত গৃহের উপযুক্ত ধন তোমার নিকট যাচঞা করিতেছি। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৪। প্রকৃষ্টচিত্ত আদিত্যগণ যাহার উদ্দেশে গৃহ ও জীবনোপযোগী অন্ন প্রদান করেন, তাহার জন্য ইহারা সমস্ত মনুষ্যের ধনের অধিপতি হন। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৫। রথগামী লোকে যেমন দুৰ্গম প্রদেশ পরিত্যাগ করে, সেইরূপ আমরা পাপ পরিত্যাগ করিব, আমরা ইন্দ্রদত্ত সুখ ও আদিত্যদত্ত রক্ষা লাভ করিব। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৬। মনুষ্যগণ ক্লেশ দ্বারাই তোমাদের ধন প্ৰাপ্ত হয়। হে দেবগণ! তোমরা শীঘ্র গমনশীল, তোমরা যে যজমানকে প্ৰাপ্ত হও, সে অল্প ধন লাভ করে। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৭। হে আদিত্যগণ! যাহার উদ্দেশে বিস্তীর্ণ সুখ প্রদান কর, সে ব্যক্তি তীক্ষ্ণ হইলেও ক্রোধ তাহার বিঘ্ন করিতে পারে না, অপরিহার্য দুঃখও তাহার নিকট গমন করে না। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৮। হে আদিত্যগণ! আমরা তোমাদের আশ্রয়েই থাকিব, যোদ্ধাগণ এইরূপে বৰ্ম্মের আশ্রয়ে অবস্থিতি করে। তোমরা আমাদিগকে মহা অনিষ্ট ও অল্প অনিষ্ট হইতে রক্ষা কর। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

৯। অদিতি আমাদিগকে রক্ষা করুন, অদিতি আমাদিগকে সুখপ্রদান করুন। তিনি ধনবান, মিত্র, বরুণ ও অর্য্যমার মাতা। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১০। হে আদিত্যগণ! তোমরা আমাদিগকে শরণীয়, ভজনীয়, রোগরহিত, ত্রিগুণযুক্ত গৃহযোগ্য সুখ প্রদান কর। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১১। হে আদিত্যগণ! চর সকল যেমন কুল হইতে দর্শন করে, সেইরূপ তোমরা উপর হইতে নিম্নমুখে আমাদিগকে দর্শন কর। অশ্বকে যেমন ভাল ঘাটে লইয়া যায়, সেইরূপ আমাদিগকে ভাল পথে লইয়া চল। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১২। হে আদিত্যগণ! এই জগতে আমাদের হিংসক বলবান ব্যক্তির সুখ যেন না হয়। গোসমূহের সুখ হউক, ধেনুসমূহের সুখ হউক, অন্নাভিলাষী বীরের সুখ হউক। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১৩। হে আদিত্য দেবগণ! যে সকল পাপ আবির্ভূত হইয়াছে ও যে সকল পাপ অন্তর্হিত রহিয়াছে, আমি আপ্তাত্রিত, আমার যেন তাহা্র কোনটাই না হয়। উহাদিগকে দূরে স্থাপন কর। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১৪। হে স্বর্গের দুহিতা ঊষা! আমাদের গোসমূহে যে দুঃস্বপ্ন আছে ও আমাদের যে দুঃস্বপ্ন হইয়াছে। হে বিভাবরী! আপ্ত্যত্রিতের জন্য তাহা দূর করিয়া দাও। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১৫। হে স্বর্গের দুহিতা! আভরণকারীর অথবা মাল্যকারীর (১) যে দুঃস্বপ্ন আছে, আপ্ত্যত্ৰিতের নিকট হইতে তাহা দূর হউক। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১৬। হে উষাদেবী! স্বপ্নে অন্নকৰ্ম্ম এবং ভাগ পাইলে আপ্ত্যত্রিত হইতে দুঃস্বপ্নজনিত কষ্ট দূর কর। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১৭। যে প্রকারে যজ্ঞার্থ পশুর হৃদয়াদি এবং তাহার শৃঙ্গাদি ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হয়, ঋণ যেমন ক্রমে ক্রমে শোধ করিতে হয়, সেইরূপ আপ্ত্যত্রিতের সমস্ত দুঃস্বপ্ন ক্রমে ক্রমে দূর করিব। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

১৮। আমরা অদ্য জয় করিব, আমরা অদ্য সুখ লাভ করিব, আমরা অদ্য অপাপ হইব। হে ঊষাদেবী! যেহেতু আমরা দুঃস্বপ্ন হইতে ভীত হইয়াছি, অতএব সেই ভয় অপগত হউক। তোমরা রক্ষা করিলে উপদ্রব থাকে না, তোমাদের রক্ষাই সুরক্ষা।

————

(১) মূলে “নিষ্কং…কৃণবতে স্রজং বা” অর্থাৎ স্বর্ণকার বা মালাকার।