ঋগ্বেদ ০৭।০৩২

ঋগ্বেদ ০৭।০৩২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল  সূক্ত ০৩২

ইন্দ্র দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১। হে ইন্দ্র! এই যজমানগণও যেন আমা হইতে দূরে তোমার সহিত আমোদ না করে। তুমি দূরে থাকিলেও আমাদের যজ্ঞে আগমন কর। এই স্থানে আসিয়া শ্রবণ কর।

২। যেমন মধুতে মধুমক্ষিকা উপবেশন করে, সেইরূপ স্তোত্রকারিগণ তোমার জন্য সোম অভিযুত হইলে উপবেশন করে। রথে যেমন পদক্ষেপ করে, ধনকাম স্তোতাগণ সেই রূপ ইন্দ্ৰে স্তুতি সমর্পণ করে।

৩। পুত্র যেরূপ পিতাকে আহ্বান করে, আমি ধনাভিলাষী হইয়া সুন্দর দানবিশিষ্ট ইন্দ্রকে সেইরূপ আহ্বান করি।

৪। এই সকল দধিমিশ্ৰিত সোম ইন্দ্রের জন্য অভিযুত হইয়াছে। হে বজ্রহস্ত! আনন্দের জন্য সেই সোম পান করণার্থ অশ্বের সহিত যজ্ঞ সদনাভিমুখে আগমন কর।

৫। শ্রবণশীল কৰ্ণবিশিষ্ট ইন্দ্রের নিকট ধন যাচঞা করিতেছি। তিনি বাক্য শ্রবণ করুন, যেন নিষ্ফল না করেন। যে ইন্দ্র সদ্যই সহস্র ও শত দান করেন, দানাভিলাষী সেই ইন্দ্রকে যেন কেহ বারণ না করে।

৬। হে বৃত্রহন! যে তোমার জন্য গভীর সোম অভিষব করে ও তোমার অনুগমন করে, সে বীর। কেহ তাহার বিরুদ্ধে কথা কহিতে পারে না, সে পরিচারকগণ কর্তৃক বেষ্টিত হয়।

৭। হে মঘবন ইন্দ্র! তুমি হবিষ্মানগণের বর্মস্বরূপ হও। তুমি উৎসাহশীল শক্রগণকে বিনাশ কর। তুমি যে শত্রুকে বিনাশ করিয়াছ, তাহার ধন আমরা বিভাগ করিয়া লই। তোমাকে কেহ নাশ করিতে পারে না। তু্মি আমাদের জন্য ধন আহরণ কর।

৮। বজ্রযুক্ত সোমপাতা ইন্দ্রের উদ্দেশে সোমাভিষবাকর। ইন্দ্রের তৃপ্তির জন্য পক্তব্য পাক কর ও কর্তব্য কার্য্য সম্পাদন কর। ইন্দ্র সুখ প্রদান করতঃ হব্য পূর্ণ করেন।

৯। সোমবিশিষ্ট যজ্ঞ হিংসা করিও না। উৎসাহবান হও, মহান ও শত্রুবিনাশক ইন্দ্রের উদ্দেশে ধন লাভার্থ কৰ্ম্ম কর। ত্বরাবান ব্যক্তিই জয় করে, নিবাস করে ও পুষ্ট হয়।কুৎসিতক্রিয়াকারীর দেবতা নাই।

১০। সুদানশীল ব্যক্তির রথ কেহ দূরে নিক্ষেপ করিতে পারে না এবং কেহ রোধ করিতে পারে না। ইন্দ্র যাহার রক্ষক, মরুৎগণ যাহার রক্ষক, সে গোযুক্ত গোষ্ঠে গমন করে।

১১। হে ইন্দ্র! তুমি যে মর্ত্যের রক্ষক হইবে, সে তোমাকে বলবান করতঃ অন্ন প্ৰাপ্ত হইবে। হে শূর! আমাদের রথের রক্ষক হও, আমাদের পুত্রাদিরও রক্ষক হও।

১২। যে হরিবান ইন্দ্র! সোমযুক্ত ব্যক্তিকে বল প্রদান করেন এবং শত্রুরা যাহাকে হিংসা করিতে পারে না, সেই ইন্দ্রের ভাগ জয়শীল ব্যক্তির ভাগের ন্যায় সর্বাপেক্ষা অধিক।

১৩। দেবগণের মধ্যে ইন্দ্রকেই অনল্প, সুবিহিত, শোভনস্তোত্র অর্পণ করে। যে ব্যক্তি কৰ্ম্মম্বারা ইন্দ্ৰের চিত্ত আকর্ষণ করিতে পারে, বহু প্রকার বন্ধনাদি তাহার নিকট যাইতে পারে না।

১৪। তুমি যাহাকে ব্যাপ্ত কর, কোন মনুষ্য তাহাকে ধর্ষণা করিতে পারে? হে মেঘবন! তোমার প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া যে হবিষ্মান হয়, সে দ্যুলোকে ও দিবসে ধন লাভ করে।

১৫। হে ইন্দ্র! তুমি মঘবন, যাহারা তোমার প্ৰিয় ধন প্রদান করে, তাহাদিগকে সংগ্রামে প্রেরণ কর। হে হৰ্য্যশ্ব! তোমার উপদেশমত স্তোতৃগণের সহিত সমস্ত দুরিত হইতে উত্তীর্ণ হইব।

১৬। হে ইন্দ্র! অধম ধন তোমারই। তুমি মধ্যম ধন পোষণ কর। তুমি সমস্ত উৎকৃষ্ট ধনের কর্তা একথা সত্য। গো বিষয়ে কেহই তোমাকে বারণ করিতে পারে না।

১৭। তুমি সকলের ধনদাতা বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই যে যুদ্ধ সকল হয় ইহাতেও ধনদাতা বলিয়া প্রসিদ্ধ। হে পুরুহূত! এই সমস্ত পার্থিব লোক রক্ষাভিলাষে তোমার নিকট অন্ন ভিক্ষা করে।

১৮। হে ইন্দ্র! তুমি যত ধনের ঈশ্বর, আমি যেন তত ধনের ঈশ্বর হই। হে ধনব! আমি স্তোতাকে প্রতিপালন করিব। পাপের জন্য ধন দান করিব না।

১৯। যে কোন স্থানে বিদ্যমান পূজাকারী লোকের উদ্দেশে প্রত্যহ ধন দান করিব। হে ইন্দ্র! তুমি ভিন্ন আমাদের বন্ধু প্রশস্য পিতা নাই।

২০। ত্বরাবান ব্যক্তিই মহৎ কর্মের বলে অন্ন ভজনা করে। ত্বষ্টা যেমন উত্তম কাষ্ঠবিশিষ্ট নৈমিকে নমিত করেন, সেইরূপ স্তুতিদ্বারা পুরুহূত ইন্দ্রকে নমিত করিব।

২১। মর্ত্য মন্দ স্তুতিদ্বারা ধন লাভ করিতে পারে না। ধন হিংসাকারীর নিকট যায় না। হে মঘবন! দ্যুলোকে ও দিবসে মৎসদৃশ লোকের প্রতি তোমার যাহা দাতব্য আছে, তাহা সুকর্মা ব্যক্তিই লাভ করে।

২২। হে শূর! তুমি এই জগতের অর্থাৎ জঙ্গম পদার্থের ঈশ্বর, স্থাবর পদার্থের ঈশ্বর ও সৰ্ব্বদশী, অথবা অশুদ্ধ ধেনুর ন্যায় তোমার স্তুতি করিতেছি।

২৩। হে মঘবন! তোমার মত কেহ স্বৰ্গে বা পৃথিবীতে জন্মে নাই ও জন্মিবে না। আমরা অশ্ব, অন্ন ও গাভী অভিলাষী, তোমাকে আহ্বান করিতেছি।

২৪। হে ইন্দ্র! তুমি জ্যেষ্ঠ ও আমি কনিষ্ঠ হইয়াছি। আমার জন্য সেই ধন আহরণ কর, তুমি চিরকাল হইতে বহুধনবান এবং প্রত্যেক যুদ্ধে হব্য লাভ যোগ্য।

২৫। হে মঘবন! শত্রুদিগকে পরাঙ্মুখ করতঃ প্রেরণ কর। আমাদের ধন সুলভ কর। সংগ্রামে আমাদিগের রক্ষক হও। আমরা সখা, আমাদের বর্ধয়িতা হও।

২৬। হে ইন্দ্র! আমাদের কৰ্ম্ম আহরণ কর, পিতা পুত্রকে যেরূপ দান করে, সেইরূপ তুমি আমাদিগকে ধন দান কর। হে পুরুহূত! আমরা যজ্ঞের জীব, আমরা যেন প্রত্যহ সূৰ্য্যকে প্ৰাপ্ত হই।

২৭। হে ইন্দ্র! হিংসক, দুষ্প্রসাদ্য, অমঙ্গলময় শত্রু যেন অজ্ঞাতসারে আমাদিগকে আক্রমণ না করে। হে শূর! আমরা তোমার নিকট নম্র হইয়া অনেক কার্য্যে উত্তীর্ণ হইব।