১৬.
ওয়াশিংটনে দুটো শহর আছে। একটা শহরের মধ্যে অসাধারণ সৌন্দর্য আছে, আছে স্থাপত্যশৈলী, পৃথিবীর বিখ্যাত জাদুঘর, স্ট্যাচু, অসাধারণ স্মারকচিহ্ন। লিংকন, জেফারসন, ওয়াশিংটন, আছে সুন্দর বাগান, ফুটন্ত ফুলের সারি, বাতাসের মধ্যে এক তীক্ষ্ণতা।
আর একটা ওয়াশিংটন ডিসি, সেখানে গৃহহীন মানুষদের বসবাস। সেখানে অপরাধের মাত্রা অত্যন্ত বেশি, সেখানে শুধুই জোচ্চোরদের ঘোরাঘুরি। বাতাসে খুনের আর্তনাদ!
মনরো আমর্স- একটি সুন্দর বুটিক হোটেল। সাতাশ নম্বর এবং গ্রে স্ট্রিটের মধ্যে তার অবস্থান। কয়েক বছর আগে এক মহিলা এই হোটেলটা তৈরি করেন। তিনি হলেন লারা ক্যামেরন।
হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার জেরেমি রবিনসন, সন্ধ্যাবেলা কাজ শুরু হবে। তিনি গেস্ট রেজিস্টারের দিকে তাকালেন। তার মুখে একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি ফুটে উঠল। নামগুলোর ওপর নজর দিলেন। টেরেস স্যুইটে কারা আছে?
৩২৫ নম্বর সুইট, একটা আবছা ঠিকানা চোখে পড়ল। কিন্তু কেন? ওয়াশিংটন পোস্টে খবর প্রকাশিত হয়েছে এই মহিলার সম্পর্কে। উনি এক বিশিষ্ট অভিনেত্রী, ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনয় করতেন। হারিয়ে গিয়েছিলেন। এখন আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছেন।
৪২৫ নম্বর সুইট, অস্ত্রব্যবসায়ী, মাঝে মধ্যে ওয়াশিংটনে আসেন। রেজিস্টারে লেখা আছে জে. এল. স্মিথ। চেহারা দেখে মনে হয়, উনি বোধহয় মধ্য প্রাচ্যের বাসিন্দা।
১৭৫ নম্বর সুইট, উইলিয়াম কোয়েন্টের নামে বুক করা হয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতা, ড্রাগবিরোধী অভিযানের অন্যতম নায়ক।
৬২৫ নম্বর সুইট, সফটওয়ার সেলসম্যানের নাম লেখা আছে। মাসে একবার করে। ওয়াশিংটনে আসেন।
৭২৫ নম্বর স্যুইট, ব্যাটমার্কের নাম লেখা আছে। ইনিও এক সমাজসেবী।
এত অব্দি সব ঠিকই আছে, জেরেমি রবিনসন ভাবলেন। এই সকলকে তিনি চেনেন।
৮২৫ নম্বর সুইট, এটি হল সব থেকে ওপর তলার স্যুইট। একে ইমপিরিয়াল স্যুইট বলা হয়। হোটেলে এত সুন্দর ঘর আর একটাও নেই। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের জন্য এই ঘরটা সবসময় সংরক্ষিত রাখা হয়। এর একটা নিজস্ব এলিভেটর আছে, যেখান থেকে পথ সোজা গ্যারেজের দিকে চলে গেছে, তাই এখানকার বাসিন্দা নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন।
জেরেমি রবিনসন অবাক হয়ে গেলেন। নামটা তার চেনা চেনা লাগছে না। ইউজিন গ্র্যান্ট। ভদ্রলোক কী করেন?
ডে ক্লার্কের সঙ্গে কথা বললেন। গ্ল্যান্টের পরিচয় জানার চেষ্টা করলেন। উনি কয়েক ঘণ্টা আগে বেরিয়ে গেছেন। কোথায় আছেন, জানা যাচ্ছে না। রবিনসন রহস্য ভালোবাসেন না। কিন্তু এই গ্র্যান্ট কে? কেন তাকে ইমপেরিয়াল সুইট দেওয়া হয়েছে? এই দুটো প্রশ্ন ভদ্রলোককে তাড়া করল।
.
৩২৫ নম্বর সুইট। চারতলাতে, ড্যামের নামে বুক করা হয়েছে। ড্যামে এক অভিনেত্রী, অসাধারণ রূপবতী বলা যায় না। কিন্তু এককালে তিনি সুন্দরী ছিলেন। এখন বয়স ষাটের কোঠায় পৌঁছে গেছে। একদা লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড থেকে মানহাট্টনের ব্রডওয়ে পর্যন্ত তাঁর নাম সকলের মুখে মুখে ফিরত। এখনও তার মুখের কোণে হারানো সৌন্দর্যের কিছু চিহ্ন লেগে আছে। তবে আছে একটা তিক্ততা। অভিজ্ঞতা প্রসূত কিছু অভিব্যক্তি।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনটা তিনি পড়ছিলেন। ওয়াশিংটনে এসেছেন জীবন যুদ্ধে জয়লাভ করতে। এটা আমার আবার ফিরে আসা বলা যেতে পারে। ড্যামে ভাবলেন, আমি কখনও তো এই জগত থেকে চলে যাইনি? তবে? এভাবে কেন বলা হচ্ছে?
কুড়ি বছর আগে শেষবারের মতো থিয়েটারে অবতীর্ণা হয়েছিলেন।, এককালে ছিলেন এক মহান অভিনেত্রী। তারপর এক পরিচালক হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত প্রোডিউসার। তারা সত্যিকারের থিয়েটারের অর্থ বুঝতে পারে না। আহা, কী দিন না গেছে, ইংল্যান্ডের বিশিষ্ট। প্রযোজকদের কথা, সবসময় মনে পড়ে বেচারী ড্যামের। সব চলে গেছে, এখন আর কেউ নেই। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একাধিক প্রযোজক ছিলেন। যারা সত্যিকারের অভিনয় বুঝতেন। এখনকার থিয়েটারে কিছু বেনো জল ঢুকে পড়েছে। কিছু কিছু মানুষের আনাগোনা, যাদের কোনো জ্ঞান গম্যি নেই। বস্তাপচা চিত্রনাট্য, লোককে সহজে মাতিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। ড্যামে ভাবলেন কী করা যায়? কিন্তু কিছু একটা করতেই হবে।
সমালোচকরা কীভাবে আমার অভিনয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে? না, ভালো লাগছে না। অনেক কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। আহা, বার্নাড শ-এর হান্টেড হাউস, কী অসাধারণ নাট্যরূপ। এখন কি আর তা হবে কোনোদিন? বার্নাড শ-এর সাথে ড্যামের ভালো পরিচয় ছিল। রোমান্টিক আইরিশ। মাঝে মধ্যে লাল গোলাপ পাঠাতেন। ভদ্রলোক খুবই লাজুক, হয়তো ভেবেছিলেন, আমি তাকে প্রত্যাখান করব।
লেডি ম্যাকবেথ, এক অসাধারণ চরিত্র। যদি এই চরিত্রের মাধ্যমে আমি আবার ফিরে আসি, তাহলে কেমন হয়? কিন্তু কে সেই সুযোগ দেবে?
ড্যামে ফাঁকা দেওয়ালের সামনে একটা চেয়ার রাখলেন। সেখানে বসে বাইরের দৃশ্য অবলোকন করবেন। বসলেন, অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, শেক্সপীয়ারের সেই মহান চরিত্রের সংলাপ তখন তার কণ্ঠে বিধৃত হচ্ছে
এসো হে আত্মা
-হে নৈতিক চিন্তাবলী, এসো আমার কাছে।
আমার মাথা থেকে এই মুকুটটা সরিয়ে দাও।
নির্মমতা, প্রিয়তম, আমার রক্তের মতো গাঢ়।
এগিয়ে যাও, এই পথ দিয়ে, দূরবর্তী প্রান্তে।
প্রকৃতির সাথে আর কখনও বন্ধত্ব করো না।
আমার সমস্ত চেতনার মধ্যে জ্বালিয়ে দাও আগুন।
আমি যেন প্রজ্বলিত হই।
হায় ঈশ্বর, এমন একটা অভিনয়? কীভাবে হবে?
শব্দগুলো খোলা জানলা দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
.
৪২৫ নম্বর সুইট, জে. এল. স্মিথ অস্ত্রব্যবসায়ী, চিৎকার করে ওয়েটারকে ডাকলেন। আমি কখন বেলিজার অর্ডার দিয়েছি, এখনও পাচ্ছি না কেন? খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।
–আমি দুঃখিত মিঃ স্মিথ, আমি এখনই কিচেনে যাচ্ছি।
জে. এল. স্মিথ তাকালেন ওই ছেলেটির দিকে। তারপর দেখলেন তার হীরকখচিত রোলেক্স ঘড়ির দিকে না, একদম সময় নেই। একটা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপয়ন্টমেন্ট আছে।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। দরজা দিকে এগিয়ে গেলেন। তাকে এখনই অ্যাটর্নির অফিসে পৌঁছতে হবে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটা অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি নাকি উৎকোচ দিয়েছেন। অভিযোগের জবাব দিতে হবে। তা না হলে? তিনবছর ধরে রুদ্ধকারায় বন্দি থাকতে হবে। দশ লক্ষ ডলার জরিমানা হবে।
.
১৭৫ নম্বর স্যুইট, কংগ্রেসম্যান উইলিয়াম কোয়েন্ট এখন তার বাসিন্দা। তাকে আমরা তৃতীয় প্রজন্মের এক বিখ্যাত নেতা বলতে পারি। তিনজন বিশিষ্ট ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপনে মত্ত।
এই শহরের ড্রাগস সমস্যা সমাধান করতেই হবে। কোয়েন্ট বললেন, তা না হলে ব্যাপারটা হাতের বাইরে চলে যাবে।
তিনি এক সহকর্মীর দিকে তাকালেন এ ব্যাপারে ডালটন, আপনি কী ভাবছেন?
রাস্তার মস্তানদের নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। তা না হলে এই সমস্যাটা সমাধান করা সম্ভব হবে না। গতমাসে তারা পাঁচজনকে মেরে ফেলেছে।
কোয়েন্ট অধৈর্য হয়ে বললেন–এটা কিছুতেই চালানো উচিত নয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা খারাপ বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু ব্যবসা কেন, মার্কিন সমাজজীবন সম্পর্কে আমরা কী ধারণা করব।
–আপনি কী ভাবছেন?
–আমরা আরও তদন্ত করব। তিনি তার আর এক সহকারীর দিকে তাকিয়ে বললেন এখুনি অধিবেশনের ব্যবস্থা করুন। সব রকম সাহায্য দেওয়া হবে। দরকার হলে সশস্ত্র প্রহরা। গত মাসে কত খরচা হয়েছিল?
–এখানে এক কোটি ডলার, বাইরে আরও এক কোটি।
–আমরা এটা দ্বিগুণ করে দেব। হ্যাঁ, খরচ করতে হবে, আসল সত্যটা জানতে হবে।
.
৬২৫ নম্বর ঘর, নরম্যান হক বিছানার ওপর শুয়ে আছেন। একেবারে উলঙ্গ। হোটেলের ক্লোজসার্কিট চ্যানেলে পর্ণছবির প্রদর্শন। ধূসর তার চেহারা, পেটটা ফুলে উঠেছে। শরীরের এখানে সেখানে জমেছে মাংস। তিনি তার শয্যাসঙ্গিণীর স্তনবৃন্তে হাত রাখলেন।
–ইরমা, দেখো-দেখো, ওরা কী অসভ্যতা করছে।
কণ্ঠস্বর এখন ফিসফিসানি–তুমি কি এই খেলা আমার সাথে খেলবে?
আঙুলগুলো অবহেলায় খেলা করছে। মেয়েটির পেটের চারপাশে। আহা চোখ দুটি বিস্ফোরিত। পর্দায় দেখা যাচ্ছে, একটি মেয়ে তার প্রেমিককে পাগলের মতো ভালোবাসছে।
বেবি, তোমাকে এই ছবিগুলি উত্তেজিত করছে না? দেখো, আমি কেমন ঘেমে গেছি।
উনি ইরমার দুপায়ের ফাঁকে দুটি আঙুল ঢুকিয়ে দিলেন। আমি তৈরি। গোঙানির শব্দ শোনা গেল।
ধীরে ধীরে মেয়েটিকে আকর্ষণ করলেন। তারপর? মেয়ে কোথায়? ব্যাটারি পরিচালিত একটি নিষ্প্রাণ পুতুল। তার যোনিদেশ খুলে গেল। ভদ্রলোক পুংদণ্ড সেখানে ঢুকিয়ে দিলেন। প্রবল চাপ দিলেন। আরও জোরে আরও জোরে।
আঃ, আর পারছি না, ওনার চিত্তার, না, এবার হয়েছে।
তিনি ব্যাটারিটার সুইচ অফ করে দিলেন। শুয়ে থাকলেন। অনুভূতিটা চমৎকার। ইরমার দিকে আবার চোখ পড়ল। তাকে স্যুটকেসের ভেতর পুরে রাখলেন।
নরম্যান একজন সেলসম্যান। বেশিরভাগ সময় তাকে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়। সাহচর্যবিহীন পুরুষ। কয়েক বছর আগে ইরমাকে আবিষ্কার করেছিলেন। আহা, এই মেয়েটির সাহচর্য আমার চাই। যেসব সেলসম্যানরা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়, তারা বাজারি বেশ্যার কাছে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু নরম্যান শেষ হাসিটা হেসেছেন।
ইরমা কখনও তাকে কোনো অসুখ দেবে না, এ ব্যাপারে তিনি সুনিশ্চিত।
.
৭২৫ নম্বর সুইট। প্যাট মারফির পরিবার এইমাত্র ডিনার থেকে ফিরে এসেছেন। বারো বছরের টিম মারফি, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পার্কের দিকে তাকিয়ে আছে।
সে বলল–ড্যাডি, কাল আমরা মনুমেন্টের ওপর যাব, তাই তো?
ছোটো ভাই বলল–না, আমরা স্মিথ সুনিয়েন ইনস্টিটিউটে যাব।
বাবা ছেলেদের দিকে তাকালেন।
এই প্রথম বাচ্চা দুটি দেশের রাজধানীতে পা রেখেছে। বাবা কিন্তু বছরের ছমাস এখানেই থাকেন। প্যাট মারফি এক বিশিষ্ট আইনজ্ঞ। রাজনীতির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। ওয়াশিংটনের এক অন্যতম ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
ওহিওর একটি ছোটো শহরের মেয়র ছিলেন। প্যাট ছোটো থেকেই রাজনীতির ব্যাপারে অভিজ্ঞ। জো নামে একটি ছেলের সাথে তার দারুণ বন্ধুত্ব। তারা একসঙ্গে স্কুলে যেতেন। একই সামার ক্যাম্পে যেতেন। সবকিছু একসঙ্গে ভাগ করতেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্যাট এই ব্যাপারটা মানতে পারেননি। তিনি জো-কে তাঁর জীবন থেকে বাতিল করে দেন।
সমকামিতা? প্যাটের কাছে একটা দুর্বিষহ ধারণা। সমকামীরা ঈশ্বরের অভিশাপ বহন করে। সাধারণ মানুষকে বিপথে চালনা করে। সারা জীবন তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। বলেছেন, এই জাতীয় মানুষকে কখনও আইনসভায় নির্বাচিত করা উচিত নয়। সমকামিতার কুফল কী হতে পারে, তা নিয়ে ধারাবাহিক ভাষণ দিয়েছেন।
এর আগে তিনি একাই ওয়াশিংটনে আসতেন। এবার স্ত্রী খুব করে ধরেছিলেন। তাই স্ত্রীকে সঙ্গে এনেছেন। সঙ্গে দুই ছেলেকেও।
স্ত্রী আবদার করলেন–আমরা দেখতে চাই, তুমি ওয়াশিংটনে কীভাবে দিন কাটাও।
শেষ পর্যন্ত প্যাট মত দিতে রাজী হলেন।
স্ত্রী এবং ছেলেদের দিকে তাকালেন- আঃ, এমন ভুল আমি কী করে করব? কালকের জন্য সুন্দর একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে। কিন্তু সেটা কি হবে? ওদের ঘুম ভাঙানোর আগেই আমি ব্রাজিলের পথ ধরব।
অ্যালান আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
.
৮২৫ নম্বর সুইট, এটাকেই বলে ইমপিরিয়াল সুইট। এখানে এখন বিরাজ করছেনীরবতা। নিঃশ্বাস-উনি মনে মনে বললেন, আরও আস্তে আস্তে। প্রচন্ড ভয় পেয়েছেন। মেঝের ওপর একটা শীর্ণ শরীর পড়ে আছে। সম্পূর্ণ ল্যাংটো, ভাবলেন, এটা তো আমার কোনো দোষ নয়, মেয়েটি পড়ে গেছে।
তার মাথা ফেটে গেছে একটা লোহার টেবিলে ধাক্কা লেগে। কপাল থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। উনি নীচু হলেন। কবজিতে হাত দিলেন নাঃ, কোনো স্পন্দন নেই। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য। একটু আগে মেয়েটি জীবন্ত ছিল, প্রচণ্ড ভাবে জীবন্ত। আর এখন কী না…
আমাকে এখনই এখান থেকে পালাতে হবে। উনি ওই দেহটার দিকে তাকালেন। তাড়াতাড়ি পোশাক পরতে শুরু করলেন। আর একটা কলঙ্ক? না, এই কলঙ্ক প্রকাশিত হলে সারা পৃথিবী কেঁপে উঠবে। ওরা এই সুইটে এসে আমার টিকিটিও পাবে না। পোশাক পরা হয়ে গেল। ভদ্রলোক বাথরুমে গেলেন। তোয়ালে ভেজালেন। যেখানে যেখানে হাতের চিহ্ন, সব মুছে দিতে হবে।
শেষ পর্যন্ত উনি সুনিশ্চিত হাতের চিহ্ন কোথাও নেই, তাহলে? এবার যাওয়া যেতে পারে? মেয়েটির পার্স? কৌচ থেকে পার্সটা তুলে নিলেন। অ্যাপার্টমেন্টের এক কোণে চলে গেলেন। এখানে প্রাইভেট এলিভেটর অপেক্ষা করছে।
তিনি ভেতরে ঢুকলেন। আর নিঃশ্বাস চেপে রাখতে পারছেন না, গ্রাউন্ডফ্লোর বোতামে হাত দিলেন। কয়েক সেকেন্ড কেটে গেল। এলিভেটর কাজ করতে শুরু করেছে। তিনি গ্যারেজে পোঁছে গেছেন। সেখানে কেউ নেই। গাড়ির দিকে তাকালেন। এ কী? কী যেন মনে পড়ল। আবার ফিরে এলেন এলিভেটরে। রুমাল বের করলেন। এলিভেটরের বোম টিপে হাতের ছাপ তুলতে হবে। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকলেন। না, কেউ কোথাও নেই। হ্যাঁ, এ ব্যাপারে উনি সুনিশ্চিত। গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। দরজা খুললেন। গাড়িটা গর্জন করতে শুরু করল। গ্যারেজ থেকে এগিয়ে চলল অনির্দেশের যাত্রাপথে।
মৃত মেয়েটির দেহ আবিষ্কার করেছিল ফিলিপিনা। সে একজন ঝি।
সে চিৎকার করে উঠেছে, বুকে ক্রুশ চিহ্ন এঁকেছে, ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসেছে, সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করেছে।
তিন মিনিট কেটে গেছে, হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার এবং প্রধান নিরাপত্তার রক্ষী যথাক্রমে জেরেমি রবিনসন আর থম পিটার ছুটে এসেছে। ভাবাই যাচ্ছে না। ইমপিরিয়াল সুইটে এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে। রক্তাক্ত এক মেয়ে, উলঙ্গ দেহ!
থম বলেছে- জেসাস, ষোলো সতেরো বছর বয়স, সে ম্যানেজারের কথা ভেবেছে, আমরা পুলিশে যাব।
দাঁড়াও, পুলিশ, সংবাদপত্র এসব হলে কী হবে? না, এভাবে ব্যাপারটা বলা উচিত হবে না।
থম পিটার তার পকেট থেকে একটা রুমাল বের করেছে। টেলিফোনের রিসিভারটা ধরেছে।
রবিনসন জানতে চেয়েছে–এটা কোনো হত্যার ঘটনা নয়। এটা একটা অ্যাকসিডেন্ট।
পিটার বলেছে আমরা এখনও জানি না, কী করে সুনিশ্চিত হব?
সে একটা নাম্বার ডায়াল করেছে। তারপর অপেক্ষা করেছে।
.
ডিটেকটিভ নিক রেসি একটা পত্রিকার পেপারব্যাক পড়ছিলেন। লম্বা, নাকটা ভেঙে গেছে। এক সময় বক্সার ছিলেন। এখন ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অফিসার। ধীরে ধীরে আরও উঁচুতে উঠেছেন। মাস্টার পেট্রল অফিসার থেকে সার্জেন, লেফটেন্যান্ট, তাকে উঁচু পদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি চারিদিকে তাকালেন, জিজ্ঞাসা করলেন মেয়েটিকে কেউ স্পর্শ করেছে কি?
রবিনসনের উত্তর–না, স্যার।
–মেয়েটির পরিচয়?
–আমি জানি না।
রেসি হোটেল ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার ইমপিরিয়াল স্যুইটে এক কিশোরী কন্যার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। আপনি কি বলতে পারেন তার পরিচয়? তার নাম কি গেস্ট লিস্টে লেখা আছে?
-হ্যাঁ, ডিকেটটিভ। কিন্তু এক্ষেত্রে…..
–বলুন এক্ষেত্রে?
–ওই সুইটটা ইউজিন গ্র্যান্টের নামে বুক করা হয়েছিল।
–এই ভদ্রলোক কে?
–আমি বলতে পারব না।
ডিটেকটিভ রেসি অধৈর্য হয়ে উঠেছেন- দেখুন, কেউ যদি কোনো স্যুইট বুক করে, তাকে টাকা দিতে হয়, নগদে হোক, ক্রেডিট কার্ডে হোক, যেভাবেই হোক। তাহলে? কে ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করেছে?
–আমাদের ডে ক্লার্ক গরম্যান।
–আমি এক্ষুনি তার সঙ্গে কথা বলব।
–সে তো এখন সম্ভব নয়।
–কেন?
–সে ছুটিতে চলে গেছে।
–এক্ষুনি তাকে ডেকে পাঠান।
রবিনসনের দীর্ঘশ্বাস সে বলেনি কোথায় গেছে।
কবে ছুটি কাটিয়ে চলে আসবে?
দুসপ্তাহ বাদে।
আমি দু-সপ্তাহ অপেক্ষা করব না। কিছু তথ্য আমাকে এখনই দিতে হবে। নিশ্চয়ই কেউ তাকে দেখেছে। সুইটে ঢুকতে এবং বেরোতে।
না, রবিনসন বললেন, এই সুইটের একটা প্রাইভেট এলিভেটর আছে। সেটা সোজা বেসমেন্ট গ্যারেজে চলে যায়। আমার মনে হচ্ছে, এটা নেহাতই একটা অ্যাকসিডেন্ট। মেয়েটি বোধহয় বেশিমাত্রায় পান করেছিল। অথবা ওষুধ খেয়েছিল, পড়ে গেছে। টাল রাখতে পারেনি।
আর একজন গোয়েন্দা এগিয়ে এলেন–আমি ক্লোসেটগুলো পরীক্ষা করেছি। গ্যাপ থেকে তার পোশাক কেনা হয়েছে। উইলবেয়ার থেকে জুতো। না, কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে না।
–মেয়েটিকে কি চেনার কোন উপায় নেই?
–না, যদি একটা পার্স থাকত, তাহলে হত।
ডিটেকটিভ রেসি আবার দেহটা দেখলেন। তিনি এক পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন–কিছু সাবান দিন তো। একে ভেজাতে হবে।
পুলিশ অফিসার বললেন–আমি দুঃখিত।
-সাবান আছে?
পুলিশ অফিসার কাজ শুরু করলেন।
ডিটেকটিভ রেসি হাঁটু মুড়ে বসলেন। মেয়েটির হাতে আংটি পরানো ছিল। বললেন—মনে হচ্ছে স্কুল রিং।
এক মিনিট কেটে গেছে। পুলিশ অফিসার ভেজা সাবান নিয়ে এলেন।
রেসি ধীরে ধীরে সাবান ঘষতে থাকলেন। মেয়েটির আঙুলে। তারপর সেই আংটিটা বের করে নিলেন। তাকালেন সে দিকে।
–ডেনভার হাই, পি. ওয়াই লেখা আছে। পার্টনারের দিকে তাকালেন। ভালোভাবে দেখুন তো। স্কুলে লোক পাঠাতে হবে। দেখা যাক, পরিচয় বার করতে পারা যায় কিনা?
ডিটেকটিভ এড নেলসন, ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যাপারে অত্যন্ত অভিজ্ঞ। তিনি ডিটেকটিভ রেসির কাছে এসে বললেন–না, নিক, কোথাও কোনো হাতের দাগ নেই। কেউ বোধহয় সব মুছে দিয়েছে। দরজার হাতলেও দাগ পাচ্ছি না।
তার মানে ওই মেয়েটির সঙ্গে এখানে কেউ একজন ছিল। কেন সে ডাক্তারকে ডাকল? কেন সে হাতের ছাপ মুছে দিল? ওরা এখানে কী করছিল? এত দামী একটা স্যুইটে?
উনি রবিনসনের দিকে তাকিয়ে বললেন–কীভাবে এর দাম দেওয়া হয়েছিল?
আমাদের রেকর্ড বলছে ক্যাশে দেওয়া হয়েছিল। একজন এসে একটি এনভেলাপ দিয়ে যায়। আর সংরক্ষণ করা হয়েছিল টেলিফোন মারফত।
করোনার বললেন–আমরা কি এখন শরীরটা সরিয়ে ফেলব?
–এক মিনিট অপেক্ষা করুন। কোনো হিংসাত্মক ঘটনা? মারামারি? হৈ-হট্টগোল?
না, মেয়েটির মাথায় চোট আছে। এখন অটোপসি করতে হবে।
অন্য কোনো চিহ্ন?
না, হাত-পা পরিষ্কার।
–ওকে কি ধর্ষণ করা হয়েছে?
–সেটা পরীক্ষা করতে হবে।
ডিটেকটিভ রেসি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তার মানে ডেনভার থেকে এক স্কুলের মেয়ে এখানে এসেছিল। সে অত্যন্ত দামী হোটেলে মারা গেল। কেউ তার হাতের ছাপগুলো মুছে দিয়েছে। হাওয়া হয়ে গেছে। ব্যাপারটা অবাক লাগছে, আমি জানতে চাইছি, এই স্যুইটটা কে ভাড়া নিয়েছিলেন?
উনি করোনারের দিকে তাকালেন–হ্যাঁ, লাশটা নিয়ে যান। তারপর তাকালেন ডিটেকটিভ নেলসনের দিকে। প্রাইভেট এলিভেটরে আঙুলের ছাপ আছে কি?
–হ্যাঁ, এলিভেটরটা সোজা বেসমেন্টে নেমে গেছে। সেখানে দুটো বোম আছে। দুটো বোতামকেই মুছে ফেলা হয়েছে।
গ্যারেজ দেখেছেন।
–হ্যাঁ, সেখানেও কিছু চোখে পড়ছে না।
-আমি কিছু বুঝতে পারছি না।এ ঘটনা কেঘটিয়েছে?হয় সে একজন নামকরা ক্রিমিনাল, অথবা এমন একজন ভিআইপি, যে স্কুল মেয়েদের নিয়ে এই জঘন্য খেলা খেলতে ভালোবাসে।
তিনি রবিনসনের দিকে তাকিয়ে বললেন–এই সুইটটা সাধারণত কারা ভাড়া নিয়ে থাকেন?
রবিনসন বললেন–এটা গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের জন্য সংরক্ষিত। কোনো দেশের রাজা, প্রধানমন্ত্রী, এমন কী প্রেসিডেন্ট।
–গত চব্বিশ ঘণ্টায় এখান থেকে কোনো ফোন করা হয়েছে?
আমি বলতে পারব না।
ডিটেকটিভ রেসি অধৈর্য হয়ে বললেন–কেন আপনার তো সবকিছু রেকর্ড থাকে?
-হ্যাঁ, বলছি।
ডিটেকটিভ রেসি একটা টেলিফোন তুলে নিলেন অপারেটর, আমি নিক রেসি বলছি। ইমপিরিয়াল সুইট থেকে গত চব্বিশ ঘণ্টায় কোনো ফোন হয়েছিল কি? হ্যাঁ, দেখে বলুন তো, আমি অপেক্ষা করছি।
তিনি সাদা পোশাক পরা করোনারের দিকে তাকালেন। উলঙ্গ মেয়েটির ওপর প্লাস্টিকের সিট চাপা দেওয়া হয়েছে। তাকে একটা স্ট্রেচারে তোলা হল। হায় যিশু, মেয়েটি পৃথিবীকে দেখতেই পেল না। তার আগে মৃত্যুর সংকেত।
অপারেটরের কণ্ঠস্বর- ডিটেকটিভ রেসি?
–হ্যাঁ, বলুন।
–ওই সুইট থেকে গতকাল একটা মাত্র ফোন করা হয়েছিল, লোকাল কল।
রেসি নোটপ্যাড নিলেন এবং পেন্সিল।
–কোন নাম্বারে? ৪২১৭০৪১ তাইতো?
রেসি নাম্বারটা লিখে নিলেন তারপর থেমে গেলেন। হঠাৎ কী যেন মনে পড়ে গেল তার।
ডিটেকটিভ নেলসন জানতে চাইনেল–কী হয়েছে?
রেসি বললেন–এটা তো হোয়াইট হাউসের নাম্বার।
.
১৭.
পরের দিন সকালবেলা ব্রেকফাস্টের আসর। জ্যান প্রশ্ন করল–অলিভার, গতরাতে তুমি কোথায় ছিলে?
অলিভারের হৃদস্পন্দন শুরু হয়েছে–কী ঘটেছে সেটা তিনি ভালোই জানেন। কেউ জানে না, কেউ দেখেনি। আমতা আমতা করে তিনি বললেন–একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল।
জ্যান বললেন মিটিংটা বাতিল হয়ে গেছে, কিন্তু তুমি সকাল তিনটের আগে বাড়িতে আসোনি। আমি তোমাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছি। তুমি কোথায় ছিলে?
হ্যাঁ, তোমায় কি জানতেই হবে? কিছু কি হয়েছে?
না, জ্যান বলল, অলিভার, তোমার আচরণ আমাকে দুঃখ দিচ্ছে। শুধু আমাকেই নয়, এইভাবে নিজের রাজনৈতিক সত্তার ওপর আঘাত হানছ। তুমি ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গেছে। এখন তোমার পতন আমি দেখতে পারব না।
জ্যানের দু-চোখে জলের ইশারা।
অলিভার জ্যানের দিকে হেঁটে গেলেন।হাতে হাত রাখলেন–জ্যান, সবই তো ঠিক আছে, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুও কমেছে কী?
এবং আমি আমার কাজ করব। অলিভার ভাবলেন, গতকাল রাতে যে ঘটনা ঘটে গেছে, সেটা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মেয়েটি আমাকে ডেকেছিল। আমি তার সঙ্গে কখনও দেখা করতাম না। সবরকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। আমি পরিষ্কার, অলিভার ভাবলেন।
.
পিটার ট্যাগার অলিভারের জন্য চিন্তিত। অলিভারের এই ভাবকে নিয়ন্ত্রিত করতেই হবে। শেষঅব্দি তিনি অলিভারের ওপর নজর রাখার চেষ্টা করলেন। মাঝে মধ্যেই কল্পিত মিটিং এর ব্যবস্থা করেন। হোয়াইট হাউস থেকে দূরে।সিক্রেট সার্ভিসের এসকট কক্ষে।
পিটার ট্যাগার সেনেটর ডেভিসের অভিযোগ শুনেছেন।
সেনেটর বলেছেন- অলিভার কিন্তু রাগী মানুষ, পিটার। নিজের আবেগকে সে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। আমি তোমার নৈতিকতাকে শ্রদ্ধা করি। আমি জানি, তুমি পারিবারিক সম্পর্ককে কত সম্মান দাও। প্রেসিডেন্টের ব্যবহার কী এমন হওয়া উচিত? ওর ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। দেখো, অলিভার যেন বুঝতে না পারে।
.
ডিটেকটিভ নিক রেসি ভাবতেই পারছেন না, কীভাবে ঘটনাটা ঘটল। অটোপসি শুরু হয়েছে। নিক রেসি এর রেজাল্ট জানার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। ফরমাল ডিহাইড্রেডের গন্ধ, মৃত্যুর গন্ধ। দরজার দিকে হেঁটে গেলেন। করোনার হেলেন নামী এক সুন্দরী মহিলা তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
রেসি বললেন–মর্নিং, অটোপসি কি শেষ হয়েছে?
হ্যাঁ, প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। স্যার, আঘাতের জন্য মেয়েটি মারা যায়নি। টেবিলের সঙ্গে আঘাত লাগার আগেই তার হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে যায়। তাকে একটা নিষিদ্ধ ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। একে আমরা জীবনের উন্মাদনা বলে থাকি।
ডিটেকটিভ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন- হেলেন ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন তো?
রাস্তাঘাটে এই নিষিদ্ধ ওষুধটা পাওয়া যায়, একে জীবনের উন্মাদনা বলা হয়।
তিনি করোনারের রিপোর্টটা ডিটেকটিভের হাতে তুলে দিলেন।
অটোপসি প্রোটোকল।
মৃতার নাম জেনডো।
ফাইল নাম্বার সি. এল. ৯৬১।
রিপোর্টের ওপর চোখ মেলে দিলেন ডিটেকটিভ।
তার মানে? যদি এই শব্দগুলোকে আমরা ইংরাজিতে অনুবাদ করি, তাহলে বুঝতে পারব, মেয়েটি উত্তেজক তরল পান করে মারা গেছে, তাই তো?
–হ্যাঁ।
–তাকে কি শারীরিকভাবে নির্যাতিত করা হয়েছিল?
–তার শরীরের ভেতর বীর্যের চিহ্ন পাওয়া গেছে। স্ত্রী অঙ্গটাকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তার মানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
–আমার তা মনে হচ্ছে না।
–তাহলে আপনার কী মনে হচ্ছে? কেনই বা মনে হচ্ছে?
–হিংসা অথবা অত্যাচারের কোনো চিহ্ন নেই।
ডিটেকটিভ রেসি মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন–আপনি কি বলতে চাইছেন?
–আমার মনে হচ্ছে জেনডো সর্বার্থে কুমারি ছিল। এটাই তার প্রথম যৌন সংসর্গ।
ডিটেকটিভ রেসি উঠে দাঁড়ালেন, এই তথ্যটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে হবে। তার মানে? কেউ একজন কুমারি কন্যাকে নিয়ে ইমপিরিয়াল স্যুইটে উঠেছিলেন। তার সাথে যৌনতার খেলা খেলেছিলেন। এই ভদ্রলোক কে? কে তিনি? বিখ্যাত, নাকি কুখ্যাত?
টেলিফোন বেজে উঠল- হেলেন চাহান ফোনটা ধরলেন- করোনারের অফিস, এক মুহূর্ত শুনলেন, তারপর ফোনটা রেসির হাতে তুলে দিয়ে বললেন–এটা আপনার ফোন।
নিক রেসি ফোনটা নিলেন তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ও মিসেস হলরুক, আমার ফোনের উত্তর দিয়েছেন বলে, আমার খুবই ভালো লাগছে। তাঁ, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পি, ওয়াই, এ দুটো শব্দ পাওয়া গেছে। এই নামে কোনো মহিলা ছাত্রী কি আছে–আপনার স্কুলে? অনেক-অনেক ধন্যবাদ।
তিনি করোনারের দিকে তাকালেন–আপনি বলছেন মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়নি?
–না, অত্যাচারের কোনো চিহ্ন নেই।
মৃত্যুর পরে কি তার যৌনদেশে লিঙ্গ স্থাপন করা হয়েছিল?
–আমি তা বলতে পারব না।
মিসেস হলবুকের কণ্ঠস্বর আবার ফোনে ফিরে এসেছে ডিটেকটিভ নিক?
-হ্যাঁ।
আমাদের কম্পিউটার অনুসারে আমরা এক মহিলা ছাত্রীর নাম পাচ্ছি, তার নাম পাওলিন ইয়ং।
–মিসেস হবুক অনুগ্রহ করে বলবেন, তাকে দেখতে কেমন?
–হ্যাঁ, পাওলিনের বয়স আঠারো, উচ্চতা খুব একটা বেশি নয়। কালো চুল আছে।
–আমি দেখছি। না, ভুল হয়ে গেছে।
–আর কিছু?
–না, এই আদ্যাক্ষরে আর কোনো মেয়ের নাম তো নেই।
উনি ফোনটা ধরে বললেন কোনো ছেলে? আদ্যাক্ষর পি. ওয়াই?
–পল ইয়ারবাই। সত্যি কথা বলতে কী, এই মুহূর্তে পল ওয়াশিংটন ডিসিতে আছে।
ডিটেকটিভ রেসির হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়েছে–পল এখানে আছে?
–হ্যাঁ, ডেনভার হাই স্কুলের অনেকে ওয়াশিংটনে গেছে। তারা হোয়াইট হাউস পরিদর্শন করবে। কংগ্রেসের সঙ্গে যোগ দেবে।
তারা কি শহরে আছে?
–ঠিক বলেছেন।
–তারা কোথায় উঠেছে কিছু জানেন কি?
–হোটেল লমবার্ডোতে।
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মিসেস হলবুক।
রেসি রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন। করোনারের দিকে তাকিয়ে বললেন–হেলেন, অটোপসি শেষ হলে আমাকে জানাবেন।
–নিশ্চয়ই। ভালো থাকবেন নিক, কেমন?
.
হোটেল লমবার্ডো। পেনসিলভেনিয়া এভিনিউতে অবস্থিত। ওয়াশিংটন সার্কেল থেকে দুটি ব্লক দূরে। হোয়াইট হাউস থেকে হাঁটা পথে সেখানে যাওয়া যায়। বেশ কয়েকটা স্মারক চিহ্ন আছে। আছে একটা সাবওয়ে স্টেশন।
ডিটেকটিভ রেসিং পুরোনো আমলের একটা লবির দিকে হেঁটে গেলেন। ডেস্কের পেছনে যে ক্লার্ক বসেছিলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করলেন–পল ইয়ারবাই নামে কেউ কি এখানে এসেছে?
–আমি দুঃখিত, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি কী চাইছেন?
রেসি তার ব্যাচ দেখিয়ে বললেন, আমার খুব তাড়াতাড়ি আছে, বন্ধু।
সঙ্গে সঙ্গে ক্লার্ক গেস্ট রেজিস্টারটা পরীক্ষা করে বললেন–হ্যাঁ, ৩১৫ নম্বর ঘরে একজন ইয়ারবাই আছে। তাকে আমি ডাকব?
না, তাকে আমি অবাক করে দেব।
রেসি এলিভেটরে উঠলেন। চারতলায় গিয়ে এলিভেটরটা থেমে গেল। তিনি করিডর দিয়ে হেঁটে গেলেন। ৩১৫ নম্বর ঘর। জ্যাকেটের বোম খুললেন, দরজায় শব্দ করলেন। একটি ছেলে, আঠারো উনিশ বছর বয়স।
-হ্যালো।
–পল ইয়ারবাই?
–না, ছেলেটি আর একজনের দিকে তাকিয়ে বলল, পল কেউ তোমাকে ডাকছেন।
নিক রেসি ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লেন। একটি রোগা চেহারার ছেলে, জিন্স আর সসায়েটার পরা, বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
–পল ইয়ারবাই?
–হ্যাঁ, আপনি?
নিক তার ব্যাচ দেখিয়ে বললেন, আমি ডিটেকটিভ নিক রেসি, হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট থেকে আসছি।
ছেলেটির মুখের রং পাল্টে গেছে–আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?
নিক রেসি বুঝতে পারলেন ছেলেটি ভয় পেয়েছে। তিনি মৃত মেয়েটির আংটি পকেট থেকে বের করে বললেন–পল, ঠিক করে বলল তো, এই আংটিটা তুমি কোথাও দেখেছ কিনা?
না, ইয়ারবাই সঙ্গে সঙ্গে বলল।
–এর ওপর তোমার নামের আদ্যক্ষর আছে কেন?
–হ্যাঁ, এক মুহূর্তের চিন্তা, আমার, এটা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
–ঠিক করে বলল, কাউকে উপহার দিয়েছিলে?
ছেলেটি জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল–হ্যাঁ, আমি দিয়েছিলাম।
চলো, আমরা ডাউন টাউনে যাব পল।
ছেলেটি রেসির দিকে তাকিয়ে বলল–আমাকে কি অ্যারেস্ট করা হল?
ডিটেকটিভ রেসি জানতে চাইলেন, তুমি কি কোনো অন্যায় করেছ? তোমাকে কেন অ্যারেস্ট করা হবে?
না, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। শব্দগুলো বাতাসে ভেসে গেল।
–তাহলে? মিছিমিছি তোমাকে কেনে অ্যারেস্ট করব?
–আমি বুঝতে পারছি না, কেন আমাকে ডাউন টাউনে যেতে বলছেন?
ডিটেকটিভ রেসি পলের হাত ধরলেন। বললেন, তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
রুমমেট বলল–পল, তোমার মাকে ডাকব? অন্য কাউকে?
পল ইয়ারবাই মাথা নাড়ল–কাউকে ডাকতে হবে না।
তার কণ্ঠস্বর তখন অস্পষ্ট ফিসফিসানিতে পারিণত হয়েছে।
.
হেনরি ডালি বিল্ডিং, ৩০০ নম্বর ইন্ডিয়ানা এভিনিউ। এটি হল ওয়াশিংটনের ডাউন টাউন। ছতলা এই বাড়িটি, এই অঞ্চলের পুলিশের হেড কোয়ার্টার। চারতলায় হোমিসাইড ব্রাঞ্চের অফিস। পল ইয়ারবাইয়ের ছবি তোলা হল। হাতের ছাপ নেওয়া হল।
ডিটেকটিভ রেসি ক্যাপ্টেন অটো মিলারের কাছে গেলেন। বললেন–মনরো আর্মসের ব্যাপারটা কী হল?
মিলার বললেন–বসুন।
–আমি ওই মেয়েটির বয়ফ্রেন্ডেকে ধরে এনেছি। তাকে প্রশ্ন করা হবে। আপনিও কি থাকবেন?
ক্যাপ্টেন তার সামনে স্তূপীকৃত ফাইলের দিকে তাকালেন। বললেন–না, আগামী কয়েক মাস আমাকে দারুণ ব্যস্ত থাকতে হবে। ঠিক সময়ে রিপোর্ট দিও কিন্তু।
–ঠিক আছে। ডিটেকটিভ রেসি উঠে দাঁড়ালেন।
নিক, দেখো কোনো সূত্র বের করতে পারো কিনা?
.
পল ইয়ারবাইকে নির্দিষ্ট ঘরে নিয়ে আসা হল, ঘরটা ছোটো, নফুট চওড়া, বারো ফুট লম্বা, কতগুলি ডেস্ক আছে, চারটি চেয়ার এবং একটি ভিডিও ক্যামেরা। আর আয়না লাগানো আছে, পাশের ঘর থেকে যাতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়।
.
নিক রেসির উল্টোদিকে পল ইয়ারবাই বসে আছে। দুজন ডিটেকটিভকে দেখা গেল, ডগ পোগান এবং এডগার বানস্টাইন।
–তুমি কি জানো এই সংলাপের ভিডিও টেপ করে রাখছি।
ডিটেকটিভ নিক জানতে চাইলেন।
ইয়েস স্যার।
–তুমি একজন অ্যাটর্নির কাছে যেতে পারবে। অ্যাটর্নি রাখার মতো যদি পয়সা না থাকে, তা হলে আমাদের কেউ তোমায় সাহায্য করবে।
ডিটেকটিভ বার্নস্টাইন জানতে চাইলেন–তুমি কোনো লইয়ারকে ডাকবে?
না, আমার কোনো লইয়ারের দরকার নেই।
–তুমি প্রশ্নের জবাব নাও দিতে পারো। যদি মনে করো জবাব দেওয়া উচিত তা হলে হ্যাঁ বলবে। তবে এই ব্যাপারগুলো আইনের চোখে খুব এটা বড়ো হয়ে দাঁড়াবে না। আশা করি আমার কথা বুঝতে পারছ।
-হ্যাঁ, স্যার।
–তোমার আসল নাম কী?
–পল ইয়ারবাই।
তোমার ঠিকানা?
–২৩, মেরিয়ান স্ট্রিট, ডেনভার, কলোরাডো। আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি কিন্তু…
-কেউ বলেনি তা। আমরা কিছু তথ্য বের করার চেষ্টা করছি পল। আমরা আশা করব, তুমি আমাদের সাহায্য করবে। করবে না?
–হ্যাঁ, কিন্তু আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না।
–তোমার কোনো অনুমান?
না, স্যার।
–তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে পল?
–হ্যাঁ, আপনারা তো জানেন।
না, আমরা সব জানি না। তুমি কেন বলছ না?
–হ্যাঁ, আমি বলছি, আমি মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করেছি।
–হ্যাঁ, তুমি মেয়েদের সাথে ডেটিং করতে, তাদের নিয়ে বাইরে যেতে।
হ্যাঁ।
–কোনো একটি বিশেষ মেয়ের সাথে ডেটিং করেছ?
এক মুহূর্তের নীরবতা।
–বলল, তোমার বিশেষ কোনো বান্ধবী ছিল কিনা?
হ্যাঁ–।
তার নাম কী?
–চোলি কী?
ডিটেকটিভ নিক জানতে চাইলেন–চোলি হাউসটন। রেসি নোট নিয়ে বললেন, তার ঠিকানা পল?
–৬০২, ওক স্ট্রিট, ডেনভার।
তার মা বাবার নাম?
–সে তার মায়ের সঙ্গে থাকে।
–তার মায়ের নাম?
জ্যাকি হাউসটন। তিনি হলেন কলোরাডোর গভর্নর।
ডিটেকটিভ পুরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন, এটাই তো আমাদের দরকার।
রেসি একটা আংটি দেখিয়ে বললেন পল, এটাই কি তোমার আংটি?
পল এক মুহূর্ত দেখল, তারপর উদাসীনভাবে বলল–হ্যাঁ।
–তুমি কি চোলিকে এই আংটিটা দিয়েছিলে?
চিন্তিত মুখে পল বলল–হ্যাঁ, আমি দিয়েছিলাম।
-ঠিক মনে করতে পারছ না?
–হ্যাঁ, এখন মনে পড়েছে, আমি দিয়েছিলাম।
–তুমি তোমার কয়েকজন ক্লাসমেটের সঙ্গে ওয়াশিংটনে এসেছিলে তো, এক ধরনের ছুটি কাটাতে?
–ঠিকই বলেছেন।
–চোলি কি এই দলে ছিল?
–হ্যাঁ, স্যার।
–চোলি এখন কোথায় পল?
বার্নস্টাইন জানতে চাইলেন।
–আমি জানি না।
–তাকে তুমি কখন শেষ দেখেছো?
ডিটেকটিভ পোগানের প্রশ্ন।
কয়েকদিন আগে।
–দুদিন আগে? ডিটেকটিভ নিক জানতে চাইলেন।
–হ্যাঁ।
–তখন সে কোথায় ছিল?
ডিটেকটিভ বার্নস্টাইনের প্রশ্ন।
–হোয়াইট হাউসে।
এই কথা শুনে ডিটেকটিভরা আবার অবাক হয়ে গেলেন।
নিক আবার জানতে চাইলেন–ঠিক বলছ, হোয়াইট হাউসে?
-হ্যাঁ, আমরা সবাই হোয়াইট হাউস দেখতে গিয়েছিলাম। চোলির মা এটা ব্যবস্থা করেছিল।
-চোলি তোমার সঙ্গে ছিল? পোগানের প্রশ্ন।
–হ্যাঁ।
–ওই সময়ে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল কি? ডিটেকটিভ বার্নস্টাইনের প্রশ্ন।
-কী বলতে চাইছেন?
তোমরা কি কারও সঙ্গে কথা বলেছিলে? ডিটেকটিভ বার্নস্টাইনের প্রশ্ন।
-হ্যাঁ, গাইডের সঙ্গে।
–আর কারও সঙ্গে? ডিটেকটিভ নিকের প্রশ্ন।
না, আর কারও সঙ্গে নয়।
–চোলি কি তখন তোমাদের সঙ্গে ছিল? পোগানের প্রশ্ন।
ইয়ারবাই কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায় সে লেডিস রুমে চলে গিয়েছিল। সেখানে প্রায় পনেরা মিনিট ছিল, তারপর ফিরে আসে
কথা বলতে বলতে ইয়ারবাই থেমে গেছে। অভিজ্ঞ ডিটেকটিভরা বুঝতে পারলেন, ইয়ারবাই কোনো কিছু একটা গোপন করার চেষ্টা করছে।
নিক জানতে চাইলেন–কী হয়েছিল বলো?
-না, কিছুই না, মেয়েটি ফিরে এসেছিল।
এই ছেলেটি মিথ্যে কথা বলছে পরিষ্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে।
-শোনো, ডিটেকটিভ রেসি বললেন, তুমি কি জানো, চোলি হাউসটন মারা গেছে?
–না-না, হায় ঈশ্বর, কী করে?
সমস্ত চেহারাতে ভয়ের ছাপ পড়েছে।
ডিটেকটিভ বার্নস্টাইন বললেন, তুমি কি সত্যিই জানো না?
না, আমি কিছু জানি না, বিশ্বাস করতে পারছি না।
–এই মৃত্যুর সঙ্গে তোমার কোনো যোগ নেই তো? ডিটেকটিভ পোগানের প্রশ্ন।
-না, তা কী করে সম্ভব? আমি চোলিকে ভীষণ-ভীষণ ভালোবাসতাম।
–কখনও তার সাথে বিছানায় শুয়েছ?
কঠিন কঠোর প্রশ্ন।
-না, আমরা অপেক্ষাতে ছিলাম, আমরা পরস্পরকে বিয়ে করতাম।
–তোমরা মাঝে মধ্যে একসঙ্গে ড্রাগ নিয়েছ? ডিটেকটিভ রেসির প্রশ্ন।
না, আমরা কখনও ড্রাগ নিইনি।
দরজাটা খুলে গেল। আর এক ডিটেকটিভ প্রবেশ করলেন। তার নাম হ্যারি কারটার। তিনি রেসির কাছে এগিয়ে গেলেন। কানে কানে কিছু একটা বললেন। রেসি ঘাড় নাড়লেন। ভদ্রলোক পল ইয়ারবাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
-চোলি হাউসটনের সঙ্গে তোমার শেষ কবে দেখা হয়েছে?
–আমি তো বলেছি, হোয়াইট হাউসে। ছেলেটি বলল।
ডিটেকটিভ নিক ঝুঁকে পড়ে বললেন–তোমার সমস্যা হবে পল। ইমপিরিয়াল স্যুইটে তোমার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। মনরো আর্মস হোটেলে। তুমি সেখানে কী করে গিয়েছিলে?
পল ইয়ারবাইয়ের মুখ সাদা হয়ে গেছে।
–তুমি মিথ্যে বলতে পারবে না, তোমাকে আমরা ধরে ফেলেছি।
–আমি কিছুই জানি না।
–তুমি কি মনরো আর্মসের সুইট বুক করেছিলে? ডিটেকটিভ বার্নস্টাইন জানতে চাইলেন।
-না, আমি কিছুই জানি না, পল আমি শব্দটার ওপর জোর দিল।
ডিটেকটিভ রেসি জানতে চাইলেন–তুমি কি জানো কে বা কারা ওই সুইটটা বুক করেছিল?
–না। অত্যন্ত দ্রুত এই শব্দটা ছুটে এল।
–তুমি বলছ তোমরা ওই স্যুইটে ছিলে? ডিটেকটিভ পোগানের প্রশ্ন।
–হ্যাঁ, কিন্তু আমি যখন চলে আসি, তখন চোলি বেঁচেছিল।
–তুমি কখন চলে এসেছিলে? ডিটেকটিভ পোগানের প্রশ্ন।
–ও আমাকে চলে যেতে বলেছিল। ও বলেছিল, কেউ একজন আসবে।
-ঠিক আছে পল, আমরা জানতে পেরেছি তুমি ওকে হত্যা করেছ। ডিটেকটিভ বার্নস্টাইন। জোর দিয়ে বললেন।
-না, ছেলেটি ভয়ে কাঁপছে। আমি শপথ করে বলছি, আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি মেয়েটির সাথে ওই স্যুইটে গিয়েছিলাম, আমি একুটখানি ছিলাম। তারপর চলে আসি।
কারণ মেয়েটি কারও জন্য অপেক্ষা করছিল। তাই তো? ডিটেকটিভ রিসের প্রশ্ন।
–হ্যাঁ, সে খুবই উত্তেজিত ছিল।
কার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। মেয়েটি বলেছে কী?
প্রশ্নটা দ্রুত বেরিয়ে এল ডিটেকটিভ পোগানের মুখ থেকে।
পল ঠোঁট চেটে বলল –না।
–তুমি মিথ্যে কথা বলছ, তোমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, আর এই কথাটা বলবে না। তাই কী হয়?
–তুমি বলেছ, মেয়েটি খুবই উত্তেজিত ছিল, কেন? ডিটেকটিভ রেসি জানতে চাইলেন।
পল ঠোঁট চেটে বলল–গুরুত্বপূর্ণ একজন তাকে ডিনার খাওয়াবে বলেছিলেন।
–কে এই লোকটি পল? ডিটেকটিভ বার্নস্টাইন জানতে চাইলেন।
–আমি বলতে পারব না।
–কেন? ডিটেকটিভ পোগানের প্রশ্ন।
–আমি চোলির কাছে শপথ নিয়েছিলাম, এই কথা কাউকে বলব না।
–চোলি মরে গেছে।
পল ইয়ারবাইয়ের চোখে জল। এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।
–নামটা বলো। ডিটেকটিভ রেসির প্রশ্ন।
আমি বলতে পারব না, আমি চোলির কাছে শপথ নিয়েছিলাম।
-দেখো তোমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। তোমাকে আজ রাতে জেলে কাটাতে হবে। কাল সকালে তুমি যদি নামটা বলল, তা হলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তা না হলে তোমার বিরুদ্ধে হত্যার অপরাধে অভিযোগ আনা হবে। ডিটেকটিভ রেসি বললেন।
ডিটেকটিভরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। সেখানে বিরাজ করছে থমথমে নীরবতা।
নিক রেসি বার্নস্টাইনকে বললেন–ছেলেটিকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও।
.
ডিটেকটিভ রেসি ক্যাপ্টেন মিলারের অফিসে ফিরে এসেছেন।
খারাপ খবর, আরও খারাপ খবর।
-নিক, এসব খবর শোনার মতো সময় আমার নেই।
-বুঝতে পারছি না, কীভাবে ড্রাগ পাচারের চক্র কাজ করছে। এটাই হল একটা খারাপ খরব। আরও খারাপ খবর শুনবেন? মৃতা মেয়েটির মা হলেন কলোরাডোর গভর্নর!
–হায় ঈশ্বর, খবরের কাগজ মুখিয়ে বসে আছে, ক্যাপ্টেন মিলার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন তোমাদের কি মনে হচ্ছে ছেলেটি অপরাধী?
–ও স্বীকার করেছে ও হোটেলের স্যুইটে গিয়েছিল। কিন্তু ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। মেয়েটি কারও জন্য অপেক্ষা করছিল।
–আমার মনে হচ্ছে ছেলেটি খুব চালাক। কোনো একটা গল্প বানাতে চাইছে। আমার মনে হয় ও জানে চোলি হাউসটন কার জন্য অপেক্ষা করছিল। ও সেই কথাটা বলতে চাইছে না।
-কিছু ভাবলে কী?
–মেয়েটি এই প্রথম ওয়াশিংটনে এসেছে। তারা হোয়াইট হাউসে গিয়েছিল। মেয়েটি এখানকার কাউকে চেনে না। সে লেডিস রুমে চলে যায়। হোয়াইট হাউসে পাবলিক রেস্ট রুম নেই, সে বোধহয় ভিজিটারস প্যাভেলনে চলে গিয়েছিল, হোয়াইট হাউস ভিজিটারস কলসেন্টারে, সেখানে পনেরো মিনিট ছিল। তার মধ্যে কী হল?কারও সঙ্গে দেখা হল?কাউকে সে চিনতে পেরে ছিল? কাউকে সে হয়তো টিভিতে দেখে থাকবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ওই ভদ্রলোক তাকে প্রাইভেট ওয়াচরুমে নিয়ে যায়। তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। মনরো আর্মসে ডিনারের আমন্ত্রণ জানায়।
ক্যাপ্টেন মিলার শান্তভাবে শুনলেন হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দেখো, সেখান থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা? নামটা জানতেই হবে।
আপনি ঠিকই বলেছেন, স্যার।
ডিটেকটিভ নিক দরজা খুলে বাইরে এলেন। ক্যাপ্টেন মিলার টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন। একটা নাম্বারে ফোন করলেন। কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। তিনি বললেন–ইয়েস স্যার, আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাকে ইন্ডিয়ানা এভিনিউর পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখা হয়েছে। না, স্যার, মনে হচ্ছে আগামীকাল ওই ছেলে আসল নামটি বলে দেবে। আমি বুঝতে পারছি।
ক্যাপ্টেন মিলার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, টেবিলে পড়ে থাকা ফাইলগুলোর দিকে তাকালেন। না, এখন অনেকদিন তাকে মুখ বুজে কাজ করতে হবে।
.
পরের দিন সকাল আটটা। ডিটেকটিভ নিক রেসি পল ইয়ারবাইয়ের সেলে হাজির হয়েছেন। চোখের সামনে দৃশ্যটা দেখে তিনি অবাক হলেন। এ কী? ফাঁসির মঞ্চে ঝুলছে। ছেলেটির দেহ। তার মানে? কীভাবে সে আত্মহত্যা করল?
.
১৮.
কলোরাডো গভর্নরের ষোলো বছরের মেয়ের মৃত্যু।
তার বয়ফ্রেন্ড পুলিশ কাস্টডিতে আত্মহত্যা করেছে।
পুলিশ এই রহস্যের কিনারা করতে পারছে না।
হেডলাইনগুলো সাবধানে পড়া হল। ষোলো বছর, আরও বেশি মনে হয়, কিন্তু কেন? হত্যা? ধর্ষণ? আরও কিছু কী?
বাথরুম থেকে সে বেরিয়ে এসেছিল। তার মুখে ছিল হালকা হাসির টুকরো। সে বলেছিল আগে কখনও এমনটি হয়নি।
একটু আগে তারা দুজন পরস্পরকে আকর্ষণ করছিল। পুরুষ বলেছিলেন–ভারী ভালো লাগছে, এই প্রথম, হনি।
একটু আগে মেয়েটির সাথে তিনি এক গ্লাস উত্তেজক পানীয় পান করেছিলেন। বলেছিলেন, এটা খাও, ভালো লাগবে। সমস্ত শরীরে অনাস্বাদিত উত্তেজনা।
তারপর ভালোবাসাবাসির অবুঝ খেলা। মেয়েটি বলেছে–আমার ভালো লাগছে না। মাথা ঘুরছে। বিছানাতে শুয়ে পড়েছে। তার সমস্ত শরীর থরথর করে কেঁপেছে। সে টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। নেহাতই একটা দুর্ঘটনা। পুলিশ কোনো কিছুই বুঝতে পারবে না। না, কোনো কিছু বোঝা সম্ভব নয়।
.
পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে। অফিসের ভেতর বসেও তার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের বাইরে পৃথিবী ঘটনাবহুল। তিনি চারপাশের সবকিছুসম্পর্কে ওয়াকিবহাল। একটু বাদেই ক্যাবিনেটের মিটিং শুরু হবে। ভালোভাবে তাকালেন।হারানোশক্তি আবার কেন্দ্রীভূত হল।
.
ওভাল অফিসে সকলে এসেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মেলভিন উইকস, লমবার্ডো এবং পিটার ট্যাগার।
অলিভার ডেস্কে গিয়ে বসলেন–শুভ সকাল।
সম্ভাষণ বিনিময়ের পালা চলল।
পিটার ট্যাগার বললেন–ট্রিবিউন পত্রিকাটা পড়েছেন মিঃ প্রেসিডেন্ট।
না, সময় পাইনি।
মনরো আর্মস হোটেলে যে মেয়েটির মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়েছে, তার পরিচয় পাওয়া গেছে। এটা খুবই খারাপ খবর।
অলিভার বললেন–হ্যাঁ?
তার নাম চোলি হাউসটন, সে হল জ্যাকি হাউসটনের মেয়ে।
–হায় ঈশ্বর।
শব্দগুলো প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে ছিটকে এল।
এই প্রতিক্রিয়াতে সকলে অবাক হয়ে গেছেন। অলিভার বললেন আমি জ্যাকি হাউসটনকে চিনতাম, অনেক দিন আগে। খবরটা সত্যি দুঃখজনক।
সিমলমবার্ডো বললেন–ট্রিবিউন এই ঘটনাটা নিয়ে বারবার জনসাধারণের মধ্যে বিক্ষোভ সঞ্চারণের চেষ্টা করবে।
মেলভিন উইকস বললেন–লেসলি স্টুয়ার্ট কি এর সঙ্গে যুক্ত?
অলিভার ভাবলেন, আহা, লেসলির সঙ্গে কাটানো সেই সুন্দর স্মৃতি।
না, তিনি বললেন, এটা হল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
পিটার ট্যাগার প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে বললেন–গভর্নরের ব্যাপারটা কী হবে?
–আমি এটার ব্যবস্থা করছি, ইন্টারকমের দিকে তাকিয়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, এখনই গভর্নর হাউসটনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
-হ্যাঁ, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। পিটার ট্যাগারের মন্তব্য, এইভাবে দেশে একটার পর একটা অপরাধ সংঘটিত হবে, আমরা কিছু করতে পারব না। তুমি কংগ্রেসকে বলল, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ করতে।
নিজের কানে এই শব্দগুলো কেমন ঠেকছে পিটার ট্যাগারের।
–সময়টা সত্যি খারাপ যাচ্ছে। মেলভিন উইকস মন্তব্য করলেন।
ইন্টারকমের শব্দ হচ্ছে। অলিভার টেলিফোনটা নিলেন–হ্যাঁ, এক মুহূর্ত কী যেন শুনলেন। রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন।
তিনি বললেন–গভর্নর ওয়াশিংটনের পথে যাত্রা করছেন। কোন প্লেনে উনি আসছেন সেটা দেখতে হবে। তাকে এক্ষুনি এখানে নিয়ে আসতে হবে।
-ঠিকই বলেছ, ট্রিবিউনের সাথে যে সম্পাদকীয় আছে, সেটা দেখেছ। যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করা হয়েছে।
পিটার ট্যাগার অলিভারের হাতে সম্পাদকীয় পৃষ্ঠাটা তুলে দিলেন। বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট রাজধানী শহরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
–লেসলি স্টুয়ার্টই এইসব ঘটনার অন্তরালে, সিম লমবার্ডো বললেন, তার সঙ্গে কথা বললে ভালো হত।
.
ওয়াশিংটন ট্রিবিউনের অফিস। ম্যাক বেকার সম্পাদকীয়টা ভালোভাবে পড়ছেন। প্রেসিডেন্টকে তীব্রভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। ফ্রাঙ্ক লনেরগান ঢুকলেন। বছর চল্লিশ বয়স। এক ঝকঝকে চেহারার জার্নালিস্ট। একসময় পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাকে অন্ততদন্তের অন্যতম সেরা সাংবাদিক বলা হয়।
–ফ্রাঙ্ক, এই সম্পাদকীয়টা আপনি লিখেছেন?
–হ্যাঁ, স্যার।
–আপনার খবরটা একেবারে ভুল, এখানে ক্রাইমের হার পঁচিশ শতাংশ কমে গেছে। আপনি শুধু মিনিসোটার কথা কেন লিখেছেন?
ফ্রাঙ্ক বললেন–এটা, লেসলি স্টুয়ার্টের ব্যক্তিগত আদেশ।
–ব্যাপারটা হাস্যকর। ম্যাক বেকার চিৎকার করে বললেন, ঠিক আছে আমি ওর সাথে কথা বলব।
.
লেসলি স্টুয়ার্ট টেলিফোনে কথা বলছিলেন। ম্যাক বেকার ঢুকে পড়লেন।
-হ্যাঁ, ব্যাপারটা ভালোভাবে আলোচনা করতে হবে। ওনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। সত্যি কথা বলতে কী, সেনেটর এমব্রাইকে আজ আমরা লাঞ্চের জন্য ডেকেছি। অনেকগুলো নাম ওনার হাতে তুলে দেব। অনেক ধন্যবাদ।
রিসিভার নামিয়ে লেসলি বলল–ম্যাক?
মাক ডেস্কের কাছে হেঁটে গেলেন। আমি এই সম্পাদকীয় সম্পর্কে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।
সম্পাদকীয়টা দারুণ হয়েছে, তাই না?
-লেসলি, এটা শুধুই একটা প্রচার পরিকল্পনা। প্রেসিডেন্টকে অকারণে ছোটো করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে কী পরিমাণ ক্রাইম হচ্ছে, সেটা দেখার দায়িত্ব কি একা প্রেসিডেন্টের? মেয়রই তো এই কাজটা করবেন। পুলিশ ফোর্স আছে। মিনিসোটায় ক্রাইমের পরিমাণ পঁচিশ শতাংশ কমে গেছে? এই তথ্যটা কে তোমাকে দিয়েছে?
লেসলি স্টুয়ার্ট ঘাড় ঝাঁকালেন এবং শান্তভাবে বললেন–ম্যাক, এটা আমার কাগজ, আমি যা বলব, তাই ছাপা হবে। অলিভার রাসেলকে ওই পদ থেকে সরাতেই হবে। গ্রেগরি এমব্রাইকে আমরা জেতাব। গ্রেগরির কাছ থেকে আমরা অনেক সাহায্য পাব, তাই নয় কী?
লেসলি দেখল এই কথাগুলো ম্যাকের মুখকে কোন্ অভিব্যক্তিতে ভরিয়ে তুলেছে।
লেসলি আবার বলল–ম্যাক, শুনুন, ট্রিবিউন সবসময় বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করে। এমব্রাই জিতলে সেটা ভালোই হবে। আপনি কি আমাদের সঙ্গে লাঞ্চে যাবেন?
–না, মিথ্যুকদের সাথে আমি লাঞ্চ খেতে ভালোবাসি না।
বোঝা গেল, উনি বেশ রেগে গেছেন।
উনি বাইরে এলেন, করিডর দিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকলেন, সেনেটর এমব্রাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় গেল। সেনেটরের বয়স বছর পঞ্চাশ। এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
-সেনেটর, অনেক ধন্যবাদ।
সেনেটর এমব্রাই তাকালেন- কীসের জন্য?
–আপনার স্টেটে আপনি ক্রাইমের পরিমাণ পঁচিশ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন।
ম্যাক বেকার হেঁটে গেলেন। সেনেটর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন, তার মুখে শূন্য অভিব্যক্তি।
.
লেসলি স্টুয়ার্টের সাজানো ডাইনিং রুমে লাঞ্চের আসর, ভারী সুন্দর খাবার রান্না হয়েছে। লেসলি এবং সেনেটর এমব্রাই ঘরে ঢুকলেন। ক্যাপ্টেন এগিয়ে এলেন, বিখ্যাত শেফ, তিনি দুজনকেই স্বাগত সম্ভাষণ জানালেন।
মিস স্টুয়ার্ট, খাবার কিন্তু, তৈরি। আগে কি ড্রিঙ্ক নেবেন?
–আমার জন্য নয়, সেনেটর আপনি খাবেন?
–আমি সাধারণত দিনের বেলা ড্রিঙ্ক নিই না। কিন্তু একটু মারটিনি পাওয়া যাবে?
লেসলি স্টুয়ার্ট জানে, সেনেটর এমব্রাই সারাদিন যথেষ্ট ড্রিঙ্ক করে থাকেন। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব তথ্য লেসলি স্টুয়ার্ট ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছে। স্ত্রী আছে, পাঁচটি ছেলেমেয়ে, এক জাপানি উপপত্নী আছে। মাঝে মধ্যেই তিনি প্যারা মিলিটারী গ্রুপকে অর্থ সাহায্য করেন। এই ব্যাপারগুলো লেসলির কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে ব্যাপারটা লেসলিকে অবাক করে দিয়েছে, তা হল গ্রেগরি এমব্রাই বড়ো ব্যবসা একা করতে ভালোবাসেন। ওয়াশিংটন ট্রিবিউন এন্টারপ্রাইজ একটা মস্ত বড়ো প্রতিষ্ঠান। লেসলি এটাকে আরও বড়ো করতে চাইছে। এমব্রাই যখন প্রেসিডেন্ট হবেন, তখন তার কাছ থেকে অনেক অযাচিত সাহায্য পাওয়া যাবে।
তারা ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি বসলেন। সেনেটর এমব্রাই দ্বিতীয় মারটিনিতে চুমুক দিয়ে বললেন–এই অর্থ সাহায্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, লেসলি।
লেসলির ঠোঁটে হাসি আপনাকে সাহায্য করতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত বলে মনে করছি। অলিভার রাসেলকে হারাতে হবে, তার জন্য আমি সর্বস্ব পণ করব।
মনে হচ্ছে, এবার বোধহয় একটা ভালো সুযোগ আসবে।
–আমারও তাই মনে হচ্ছে। রাসেল সম্পর্কে জনগণের মোহভঙ্গ হয়ে গেছে। একটির পর একটি কলঙ্ক আর কেচ্ছা কতদিন সহ্য করা যায় বলুন তো? আমার মনে হচ্ছে, আরও অনেক কলঙ্কিত ঘটনা ঘটবে, নির্বাচনের আগে। এই ঘটনাগুলি রাসেলকে হোয়াইট হাউস থেকে দূরে ফেলে দেবে।
সেটেনর এমব্রাই হাসলেন- তাই কি আপনার মনে হচ্ছে?
লেসলি বলল–হ্যাঁ, এটা আমার অনুমান নয়, বিশ্বাস।
লাঞ্চটা সত্যি অসাধারণ হয়েছিল!
অ্যান্টেনিওর কাছ থেকে একটা কল এসেছে। করোনার অফিসের সহকারী।
-চোলি হাউসটনের কেস সম্পর্কে আপনি সর্বশেষ খবর চাইছেন, তাই তো?
হ্যাঁ।
-পুলিশ এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছে। কিন্তু আপনি যখন আগ্রহী তখন তো খবর দিতেই হবে।
–চিন্তা করবেন না, আপনার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। অটোপসি রিপোর্টের ব্যাপারে বলুন।
–ম্যাডাম, মৃত্যুর অন্তরালে একটা উত্তেজক পানীয় কাজ করছে।
–সে কী? হ্যাঁ, মেয়েটি এক্সকাসি নামে একটা ড্রাগ নিয়েছিল। তরল অবস্থায়।
কথাগুলো মনে পড়ে গেল, কতদিন আগে রাসেল বলেছিল, এটা খেয়ে দেখতে পারো, তোমার সমস্ত স্নায়ুপুঞ্জ আনন্দে পরিপূর্ণ হবে। আমার এক বন্ধু দিয়েছে।
কেনটাকি রিভারের পাশে যে মেয়েটিকে পাওয়া গেছে, তারও মৃত্যু হয়েছে ওই উত্তেজক পানীয়তে!
লেসলি বসে রইল, তার হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়েছে।
ঈশ্বর আছেন, আগামী দিনেও থাকবেন।
.
লেসলি ফ্রাঙ্ক লনেরগানকে ডেকে পাঠাল- চোলি হাউসটনের রিপোর্টটা ভালো করে করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এর সাথে যুক্ত আছেন।
ফ্রাঙ্ক অবাক হয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট।
–হ্যাঁ, আমি ঠিক বলছি। যে ছেলেটাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাকে হত্যা করা হয়। আপনি প্রেসিডেন্টের কার্যধারার ওপর নজর রাখুন। দেখুন তো যেদিন মেয়েটি মারা যায় সেদিন প্রেসিডেন্ট কোথায় ছিলেন? বিকেল থেকে মাঝরাত অব্দি? ব্যাপারটা খুব সাবধানে করতে হবে। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে রিপোর্ট দেবেন না।
ফ্রাঙ্ক বললেন তার মানে?
–মানে কী বুঝিয়ে বলতে হবে? এখনই শুরু করুন।
–হ্যাঁ, শুরু করছি।
ইন্টারনেটে দেখুন তো এক্সকাসি নামে ড্রাগটা সম্পর্কে কী খবর পাওয়া যায়? দেখুন তো এই ড্রাগের সাথে অলিভার রাসেলের কী সম্পর্ক আছে।
.
একটা মেডিকেল ইন্টারনেট আছে, সেখান থেকে বিভিন্ন ড্রাগের খবর পাওয়া যায়। ফ্রাঙ্ক মিরিয়াম হুইটল্যান্ডের গল্পটা জানতেন। অলিভার রাসেলের প্রাক্তন সেক্রেটারি ফ্রাঙ্কফুর্টের একটা হাসপাতালে তিনি ভর্তি আছেন। সেখানে ফোন করলেন। ডাক্তার বললেন–উনি মারা গেছেন, দুদিন আগে, কোমা থেকে কখনও আর জীবনের স্পন্দনে ফিরে আসতে পারেন নি।
ফ্রাঙ্ক ফোন করলেন গভর্নর হাউসটনকে।
–আমি দুঃখিত, সেক্রেটারী বললেন, গভর্নরহাউসটন ওয়াশিংটনের পথে যাত্রা করেছেন।
দশ মিনিট কেটে গেছে। ফ্রাঙ্ক এগিয়ে চলেছেন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দিকে। কিন্তু তখন বড্ড বেশি দেরী হয়ে গেছে।
.
প্লেন থেকে প্যাসেঞ্জাররা নামছেন। ফ্রাঙ্ক দেখতে পেলেন, পিটার ট্যাগার এগিয়ে চলেছেন, এক সুন্দরী স্বর্ণকেশিনীর হাতে হাত রাখলেন। ভদ্রমহিলার বয়স বছর চল্লিশ। তারা দুজন এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে কথা বললেন। ট্যাগার ভদ্রমহিলাকে নিয়ে লিমুজিনের ভেতর ঢুকে গেলেন।, দুর থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখলেন ফ্রাঙ্ক। আঃ, এই ভদ্রমহিলার সাথে যে করেই হোক কথা বলতে হবে। তিনি শহরে ফিরে এলেন। ফোন করার চেষ্টা করলেন। বোঝা গেল, ওই ভদ্রমহিলা কোথায় উঠেছেন। তাকে ফোরসিলিন হোটেলে পাওয়া যাবে।
.
জ্যাকি হাউসটন প্রাইভেট স্টাডিতে ঢুকলেন। ওভাল অফিসে। অলিভার রাসেল তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি জ্যাকি হাউসটনের হাতে হাত রেখে বললেন–এই দুর্ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। শোক প্রকাশের কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না জ্যাকি।
সতেরো বৃছর আগে এই মহিলার সঙ্গে অলিভারের দেখা হয়েছিল। চিকাগোর এক আইনজীবীদের সম্মেলনে।
তখন জ্যাকি সবেমাত্র লসকু থেকে পাশ করেছেন। এক বুদ্ধিমতী তরুণী। তাদের ইতিমধ্যে বন্ধুত্বের প্রহর রচিত হয়েছিল।
সতেরো বছর কেটে গেছে। চোলির বয়স ষোলো বছর।
অলিভার চোলি সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে সাহস পেলেন না। তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ঘরে বিরাজ করছে থমথমে নীরবতা।
অলিভার ভাবলেন, জ্যাকি বোধহয় অতীতের স্মৃতিচারণ করবেন। তিনি তাকালেন বাইরের দিকে।
জ্যাকি হাউসটন বললেন–পুলিশের অনুমান পল ইয়ারবাইয়ের সঙ্গে চোলির মৃত্যু একটা যোগাযোগ।
–পুলিশ ঠিকই অনুমান করেছে।
–না।
না কেন?
–পল চোলিকে খুবই ভালোবাসত। পল চোলির এই ক্ষতি কখনওই করতে পারবে না। ভদ্রমহিলার গলা ভেঙে গেছে। তারা আজ অথবা আগামীকাল বিয়ে করত।
–আমার তথ্যানুসারে জ্যাকি, হোটেলের ঘরে ওই ছেলেটির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে, যে হোটেলের ঘরে ওই মেয়েটির মৃত্যু হয়।
জ্যাকি হাউসটন বললেন–খবরের কাগজে লেখা আছে, মনরো আর্মস হোটেলে ইমপিরিয়াল স্যুইটে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
–আপনি ঠিকই বলেছেন।
–অলিভার, চোলির হাতে সামান্য পয়সা দেওয়া হয়েছিল। পলের বাবা একজন, অবসরপ্রাপ্ত কেরানী। চোলি কীভাবে এত টাকা পাবে?কীভাবেইমপিরিয়াল সুইট বুক করবে? ব্যাপারটা আমার কাছে অবাক লাগছে।
… কেউ এর অন্তরালে আছে। আমি বুঝতে পারছি না, কে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে? তার পরিচয় না জানা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না।
তিনি বললেন–আপনার সাথে চোলি দেখা করতে এসেছিল? দেখা হয়েছিল?
থমথমে নীরবতা- না, আমাকে শেষ মুহূর্তে ওই ব্যাপারটা বাতিল করতে হয়।
.
শহরের শেষ প্রান্তে আর একটি অ্যাপার্টমেন্ট, বিছানায় শুয়ে আছে দুটি নগ্ন শরীর। একজন অন্যজনকে পাগলের মতো আদর করছে।
বেশ বুঝতে পারা যাচ্ছে, যে কোনো কারণেই তোক মেয়েটি যথেষ্ট চিন্তিত।
-তুমি ভালো আছো জো?
–আমি ভালো আছি অ্যালেক্স।
–মনে হচ্ছে তোমার মনটা অনেক দূরে চলে গেছে। তুমি কী চিন্তা করছ?
–কিছুই না। জোয়ান ম্যাগরা জবাব দিল।
সত্যি কিছু না?
-তোমাকে সত্যি কথা বলব? আমি ওই ছোট্ট মেয়েটার কথা ভাবছি, যাকে হোটেলে হত্যা করা হয়েছে।
–হ্যাঁ, আমি পড়েছি, সে কোনো এক গভর্নরের কন্যা।
–হ্যাঁ।
–পুলিশ কি জানতে পেরেছে ওই মেয়েটি কার সঙ্গে ছিল?
না। তারা সকলকেই প্রশ্ন করেছে।
–তোমাকেও?
–হ্যাঁ, আমি বলেছি, ওই টেলিফোন কলের ব্যাপারে।
–কোন টেলিফোন?
–কেউ ওই সুইট থেকে হোয়াইট হাউসে ফোন করেছিল।
তার সমস্ত শরীরটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। সে শান্তভাবে বলল, এটাতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। হোয়াইট হাউসে কত ফোন আসে। আঃ, তুমি কি আর একটু ম্যাপল সিরাপ খাবে?
.
ফ্রাঙ্ক তার অফিসে ফিরে এসেছেন, এয়ারপোর্ট থেকে। টেলিফোনের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
-হ্যালো ফ্রাঙ্ক, আমি শ্যালে গ্রুট বলছি।
ওয়াটার গেটের সঙ্গে সংযুক্ত।
–এখনও কি তুমি হট টিপস পাবে?
কতটা হট তার ওপর নির্ভর করছে।
–পাঁচ হাজার ডলার দরকার।
–গুডবাই।
–এক মিনিট অপেক্ষা করো। তুমি কি জানো, যে ছেলেটি মনরো আর্মসে মারা গেছে তার সম্পর্কে খবর।
ফ্রাঙ্কের হৃৎপিন্ড দ্রুত হয়েছে- কী বলছ?
–তুমি কি আমার সঙ্গে কোথাও দেখা করবে?
–আধ ঘণ্টার মধ্যে আমি রিকোতে আসছি।
.
দুটো বেজেছে, ফ্রাঙ্ক এবং অ্যালেক্সকে রিকোতে দেখা গেল। অ্যালেক্স এক পাতলা চেহারার মানুষ। ফ্রাঙ্ক এ জাতীয় মানুষদের ঘেন্না করে। কথায় কথায় শুধু টাকার আবদার। কিন্তু কী করা যাবে? মাঝে মধ্যে অ্যালেক্স এক-একটা এমন গোপন খবর তুলে দেয়, তখন তাকে সাবাস বলতেই হয়।
কোথা থেকে এই খবরগুলো আসে অ্যালেক্স কুপার তা ভাঙেন না।
আগেও অ্যালেক্স এমনভাবে অনেক খবর ফ্রাঙ্কের হাতে তুলে দিয়েছেন।
ফ্রাঙ্ক বললেন–তুমি আমার সময় নষ্ট করছ না তো?
অ্যালেক্স বললেন–না, আমি তোমার সময় নষ্ট করছি না। তুমি কী জানো, এই মেয়েটির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সংযোগ আছে।
তার মুখে দুষ্টু হাসির চিহ্ন।
ফ্রাঙ্ক কোনোরকমে উত্তেজনা দমন করে বললেন–বলে যাও, বলতে থাকো।
-পাঁচ হাজার ডলার।
–এক হাজার।
দুই।
কথা বলো, দিচ্ছি।
–আমার এক গার্লফেন্ড মনরো আর্মসের টেলিফোন অপারেটর।
–তার নাম কী?
–জোয়ান ম্যাগরা।
–তাতে কী হয়েছে?
–ইমপিরিয়াল স্যুইট থেকে কেউ একজন ফোন করেছিল। তখন ওই মেয়েটি স্যুইটে ছিল।
লেসলি স্টুয়ার্টের কথা মনে পড়ে গেল–আমি সুনিশ্চিত প্রেসিডেন্ট এই ব্যাপারের সঙ্গে সংযুক্ত।
-তুমি কোথা থেকে এই খবরটা পেয়েছ?
ঘোড়ার মুখ থেকে।
–আমি এটার সত্যতা নির্ধারণ করব। যদি এটা সত্যি হয়, তা হলে তুমি টাকা পাবে। তুমি কি এই কথাটা আর কাউকে বলেছ?
–না, ঈশ্বরের দোহাই।
–ঠিক আছে, ফ্রাঙ্ক বললেন, আমরা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রাখব।
–আর একটা কথা। কুপার বললেন।
ফ্রাঙ্ক বললেন–বলো।
–তুমি আমাকে এই ব্যাপারে বাইরে থাকতে বলেছ? মনে হয় জোয়ান হয়তো কাউকে বলেনি।
–এতে কোনো সমস্যা নেই।
অ্যালেক্স কুপার এখন একা। দু-হাজার ডলার কীভাবে খরচ করবেন? জোয়ানকে ভাগ দেওয়া যাবে না।
.
মনরো আর্মসের সুইচবোর্ড। কিউবিক্যালের পাশে, রিসেপশন ডেস্কের আড়ালে। ফ্রাঙ্ক হেঁটে গেলেন। জোয়ান ম্যাগরাকে ডিউটিতে দেখা গেল।
জোয়ান বলল–আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম।
কাউকে মাউথপি্সে কথা বলছেন।
তিনি ফ্রাঙ্কের দিকে তাকিয়ে বললেন–স্যার, আপনাকে কীভাবে সাহায্য করব?
–আমি টেলিফোন কোম্পানি থেকে এসেছি। আমাদের একটা সমস্যা হয়েছে।
জোয়ান ম্যাগরা তাকালেন কী ধরনের সমস্যা?
–কেউ বলেছে, আপনারা নাকি মিথ্যে মিথ্যে কলের জন্য চার্জ নিচ্ছেন? অক্টোবরের পনেরো তারিখ, জার্মানিতে একটা কল করা হয়েছিল, তার চার্জ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জার্মানিতে কোনো কল হয়নি। এটা ভালো নয়।
আমি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখছি। জোয়ান বললেন, গতমাসে জার্মানিতে কোনো কল না, আমার তো ঠিক মনে পড়ছে না।
–পনেরোই অক্টোবর তারিখে, রেকর্ড আছে?
অবশ্যই।
–আমি সেটা একবার দেখব।
–দেখুন।
জোয়ান একটা ফোল্ডার তুলে দিল। সুইচবোর্ডে শব্দ হচ্ছে। আবার কারও কল পেয়েছে।
ফ্রাঙ্ক পরপর দেখল। অক্টোবর, ১২, ১৩, ১৪, ১৬।
আশ্চর্য, ১৫ তারিখটাকে কে যেন সেখান থেকে ছিঁড়ে নিয়েছে।
.
ফ্রাঙ্ক লবিতে অপেক্ষা করছেন। জ্যাকি হাউসটন হোয়াইট হাউস থেকে ফিরে আসবেন–এই প্রত্যাশায়।
–গভর্নর হাউসটন।
উনি পেছন দিকে তাকালেন ইয়েস।
–ফ্রাঙ্ক, আমি ওয়াশিংটন ট্রিবিউন থেকে আসছি। আপনার এই ঘটনার জন্য আমরা খুবই মর্মাহত গভর্নর।
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনি কি এক মিনিট আমার সঙ্গে কথা বলবেন?
আমার মনের অবস্থা এখন ভালো নয়।
–হয়তো আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি, তিনি মেন লবির লাউঞ্জের দিকে ইঙ্গিত করলেন। ওখানে একটু যাবেন কি?
–ঠিক আছে যাচ্ছি।
তারা লাউঞ্জের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে পাশাপাশি বসলেন।
–আমি জানি, আপনার মেয়ে হোয়াইট হাউসে এসেছিল, যেদিন তার..
ফ্রাঙ্ক কথা শেষ করলেন না।
–হ্যাঁ, সে তার স্কুলের বন্ধুদের সাথে ওয়াশিংটন ভ্রমণে এসেছিল, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার জন্য সে খুব উত্তেজিত ছিল।
ফ্রাঙ্ক বললেন তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রাসেলের দেখা হয়েছিল কি?
-হ্যাঁ, আমি এর ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রেসিডেন্ট আমার অনেক দিনের বন্ধু।
সত্যি দেখা হয়েছিল, গভর্নর হাউসটন?
–না, প্রেসিডেন্ট সময় দিতে পারেননি।
ভদ্রমহিলার কণ্ঠস্বর বুজে গেছে। একটা ব্যাপারে আমি সুনিশ্চিত।
-কী ব্যাপার, ম্যাডাম?
–পল ইয়ারবাই তাকে খুন করতে পারে না। তারা একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসত।
কিন্তু পুলিশের তাই অনুমান। পুলিশ কী বলছে আমি তা বিশ্বাস করি না। তারা একটা অসহায় ছেলেকে গ্রেপ্তার করল। সে ছেলেটি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করল। ব্যাপারটা ভাবতেই খারাপ লাগছে।
ফ্রাঙ্ক ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকালেন- যদি পল ইয়ারবাই আপনার মেয়েকে হত্যা না করে থাকে। তাহলে কি আপনি বলতে পারেন সম্ভাব্য হত্যাকারী কে? ওয়াশিংটনে সে আর কার সঙ্গে দেখা করেছিল?
–না, আমি জানি না। এখানে কাউকে সে চিনত না। সে কোথায় বা যাবে?
ভদ্রমহিলার চোখে জল–আমি দুঃখিত, এবার কি আমি ছুটি পাব?
-হ্যাঁ, আপনি আমাকে যেটুকু সময় দিলেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ গভর্নর হাউসটন।
.
ফ্রাঙ্কের পরবর্তী পদক্ষেপ হল মর্গ। হেনেল চুহান অটোপসি রুম থেকে বেরিয়ে আসছেন।
–কে?
–হাই ডক্টর।
–ফ্রাঙ্ক, তুমি এখানে কেন এসেছ?
–পল ইয়ারবাই সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে পারবে?
হেলেন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন- ব্যাপারটা ভাবতেই খারাপ লাগছে, ছেলেটি এত বাচ্চা।
–ছেলেটি আত্মহত্যা করল কেন?
হেলেন চুহান কাঁধ ঝাঁকানি দিয়ে বললেন–কে জানে?
–তুমি কি ঠিক বলছ, সে আত্মহত্যা করেছে?
–যদি না করে থাকে তাহলে কী? বেল্টটা তার গলায় ফাঁস দেওয়া ছিল। এমন জোরে সে ফাঁস দিয়েছে যে গলায় রক্তের দাগ।
আর কোনো দাগ আছে তার শরীরে? হয়তো কোনো এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র?
অবাক চোখে তাকালেন হেলেন কেন?
ফ্রাঙ্ক মাথা নাড়লেন- ঠিক আছে, তোমার হাতে এখন অনেক কাজ, তাই তো?
.
আউটসাইড করিডরে একটা ফোনবুথ–ডেনভার ইনফরমেশন অপারেটরকে চাওয়া হল। ফ্রাঙ্ক পল ইয়ারবাইয়ের মা-বাবার নাম্বার পেয়ে গেছেন।
শ্রীমতী ইয়ারবাই কথা বললেন, গলার শব্দে বিষণ্ণতা ধরা পড়েছে।
–হ্যালো?
মিসেস ইয়ারবাই? আমি আপনাকে বিরক্ত করছি বলে দুঃখিত, আমি ফ্রাঙ্ক, আমি ওয়াশিংটন ট্রিবিউনের সাথে যুক্ত।
–আমি কিছু বলব না।
এক মুহূর্ত কেটে গেছে।
মিঃ ইয়ারবাই ফোন ধরলেন–আমি দুঃখিত। আমার স্ত্রী কথা বলার মতো অবস্থাতে নেই। সংবাদপত্রের লোকেরা বারবার বিরক্ত করছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছি না।
–এক মিনিট মিঃ ইয়ারবাই, ওয়াশিংটনের কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করছে যে আপনার ছেলে চোলি হাউসটনকে মেরে ফেলেছে।
-না, এ ব্যাপারে তার কোনো দোষ নেই। ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর আরও তীক্ষ্ণ, কখনওই সে এই কাজ করতে পারে না।
–ওয়াশিংটনে তার কোনো বন্ধু আছে, মিঃ ইয়ারবাই?
না, ওয়াশিংটনে সে কাউকে চেনে না।
–ঠিক আছে, পরে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
–মিঃ রিপোর্টার, আপনি একটা কাজ করতে পারবেন? আমরা পলের মৃতদেহটা ফেরত পেতে চাইছি। আমি জানি না, কীভাবে এটা পাওয়া যায়, আপনি কি জানেন, কোথায় যোগাযোগ করতে হবে?
–হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমি সমাধান করব।
–অসংখ্য ধন্যবাদ।
.
হোমিসাইড ব্রাঞ্চ অফিস, যে সার্জেন ডিউটিতে ছিলেন, তিনি পল ইয়ারবাইয়ের ফাইল ঘেঁটে দেখছিলেন।
তিনি বললেন–কিছুই নেই এই কভারের মধ্যে। একটা কিশোরের জামাকাপড়, আর একটা ক্যামেরা।
ফ্রাঙ্ক সেখানে এগিয়ে গেলেন। একটা কালো চামড়ার বেল্ট পাওয়া গেল।
বেল্ট পরিষ্কার আছে, কোথাও কাটার চিহ্ন নেই।
.
ফ্রাঙ্ক প্রেসিডেন্ট রাসেলের অ্যাপয়ন্টমেন্ট সেক্রেটারির কাছে পৌঁছে গেলেন। তিনি লাঞ্চে যাচ্ছিলেন।
–ফ্রাঙ্ক, তোমার জন্য আমি কী করতে পারি?
ডেবরো, আমার একটা সমস্যা হয়েছে।
–বলল, কী সমস্যা?
ফ্রাঙ্ক তাকালেন- অক্টোবরের পনেরো তারিখে প্রেসিডেন্টের একটা গোপন মিটিং ছিল। চিন থেকে কোনো প্রতিনিধি এসেছিলেন। তিব্বতের ব্যাপারে আলোচনা করতে।
–আমি এমন কোনো মিটিং-এর কথা শুনিনি।
–তুমি কি একবার চেক করে বলবে?
–কোন্ তারিখ বলছ?
পনেরোই অক্টোবর।
ডেবরো অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকটা নিয়ে এলেন ড্রয়ার থেকে। দেখলেন, অক্টোবর পনেরো, ছটার সময় মিটিং অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।
দশটার সময় ওভাল অফিসে।
ভদ্রমহিলা মাথা নাড়লেন–দশটার সময় প্রেসিডেন্ট জেনারেল হোয়াইটম্যানের সঙ্গে মিটিং-এ ব্যস্ত ছিলেন।
ফ্রাঙ্ক রেগে গেছেন–একথা তো আমি শুনিনি, আমি কি একবার এই খাতাটা দেখব?
–সরি, এটা অত্যন্ত গোপনীয় ফ্রাঙ্ক।
–ঠিক আছে। পরে দেখা হবে কেমন? ধন্যবাদ, ডেবরা।
.
তিরিশ মিনিট কেটে গেছে। ফ্রাঙ্ক জেনারেল স্টিভ হোয়াইটম্যানের সঙ্গে কথা বলছেন।
–জেনারেল, ট্রিবিউন আপনার সম্বন্ধে একটা কভারেজ ছাপাতে চাইছে। আপনি অক্টোবরের পনেরো তারিখে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটা গোপন বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে নিশ্চয়ই কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
জেনারেল মাথা নাড়লেন–আমি তো এই ব্যাপারটার কিছুই বুঝতে পারছি না। সাংবাদিক, এই খবরটা কোথায় পেলেন? শেষ পর্যন্ত মিটিংটা বাতিল করে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্টের আর একটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট ছিল।
–আপনি কি ঠিক বলছেন?
–হ্যাঁ, আমার কোনো ভুল হবে না।
–আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জেনারেল।
.
ফ্রাঙ্ক হোয়ইট হাউসে ফিরে এলেন। তিনি ডেবরো ক্যানারের অফিসে আবার গেলেন।
ফ্রাঙ্ক, আবার কী আবদার?
–একটা ব্যাপার, অক্টোবর পনেরো তারিখে প্রেসিডেন্ট রাত দশটার সময় চিনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। আমি গোপন সূত্র থেকে খবর পেয়েছি।
ভদ্রমহিলা এবার বিরক্ত হয়ে ফ্রাঙ্কের দিকে তাকালেন।
উনি বললেন আমি কতবার বলব, এমন কোন মিটিং-এর ব্যবস্থা করা হয়নি।
ফ্রাঙ্ক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন কী করব বুঝতে পরেছি না। আমার বস এই ব্যাপারে একটা প্রতিবেদন চাইছেন। খবরটা বিরাট। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?
–আচ্ছা এক মুহূর্ত অপেক্ষা করো। এই খবরটা কোথাও দিও না, প্রেসিডেন্ট রেগে যাবেন।
এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়।
ডেবরো ইতস্তত করে বলতে থাকেন–ওই সময় প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুইটম্যানের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। তুমি এটা কী করে ভুলে যাচ্ছো?
না, আমি ভুলব না। ডেবররা আবার অ্যাপয়মেন্ট বুকটা বার করলেন। তারিখটা দেখলেন। এখানে প্রেসিডেন্টের সব অ্যাপয়ন্টমেন্ট লেখা থাকে। দেখো, অক্টোবর পনেরো।
ডেবররা দশটার সময় কী ঘটেছিল, দেখলেন।
–দেখো, পরিষ্কার লেখা আছে।
–তুমি ঠিকই বলেছ। ফ্রাঙ্ক বললেন।
ফ্রাঙ্ক পাতাগুলো দেখলেন। রাত তিনটের সময় একটা এনট্রি দেখা যাচ্ছে।
চোলি হাউসটন?