বুধবার সকালে ড্যানা যখন প্রাতঃরাশ করতে ব্যস্ত তখন শব্দ শুনে জানলার সামনে গিয়ে দেখল তাদের বিল্ডিং-এর সামনে মালবাহী গাড়িতে আসবাবপত্র তোলা হচ্ছে। ড্যানা অবাক হয়ে ডরোথির ফ্ল্যাটে নক করল। ডরোথি বলল ড্যানা, আজ আমি আর হাওয়ার্ড রোমে চলে যাচ্ছি। হাওয়ার্ড ওখানে একটা চাকরি পেয়েছে যাতে তিনগুণ বেতন পাবে। কোম্পানির নাম ইতালিয়ানো রিপ্রিস্টিনো।–
–আমি তোমাদের মিস করব।–আমরাও।– জেফ আধঘন্টা পরে ড্যানার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল, এতে তুমি যা জানতে চেয়েছিলে সব আছে। ইউরোপের বিরাট কোম্পানি।
ফেনালকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে ড্যানা দেখল চশমা পরা একটা লোক ডরোথিদের ফ্ল্যাটের সামনে যোরাফেরা করছে। সন্দেহটা জেগে উঠল।
বৃহস্পতিবার এল। রজার হাডসনের সঙ্গে দেখা করার দিন। সেদিন রবার্ট ফেনউইক বলল,–আয়ারল্যান্ডে আমাদের স্টুডিওর কলাকুশলীরা যে ফিল্ম তুলতে গিয়েছিল তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ব্যাঙ্কারের কাহিনী, যার বিরুদ্ধে প্রতারণার চার্জ আনা হয়েছে। খুনের কেসে আমাদের একমাত্র সাক্ষী, সে আসবে না।– ড্যানা প্রায় ককিয়ে উঠল। পর মুহূর্তেই ভাবল আগে রজার হাডসনের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
অফিসে ফিরে এসে ড্যানা বাইরে তাকাল–আবার বরফ পড়ছে। কোট এবং স্কার্ট গায়ে চাপিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতে যায়, ফোনটা বেজে উঠল তখনই। ড্যানার ফোন ফেনালের স্কুল থেকে করছে। ড্যানা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন ধরল। –মিস ইভান্স, ফেনালকে আমরা স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।–কেন? কী করেছে সে?–আপনি যদি এখনই এখানে আসেন তবে ভাল হয়।–ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
সকালে ফেনালকে স্কুলে ছেড়ে এসেছিল ড্যানা। রিকির পাশ দিয়ে ফেনাল যেতে গেলে রিকি তাকে বলেছিল,–তোমার মা নিশ্চয়ই নিরাশায় ভুগছে। তোমার মাত্র একটা হাত। সেই হাতের বিশ্রী আঙুল দিয়ে তুমি যদি তার সঙ্গে…– ফেনাল একথায় রিকির পেটে লাথি মারল। রিকি পাল্টা আঘাত হানতে যেতেই তার নাকে হাঁটু দিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করল। নাক ভেঙে গেল।
ড্যানা তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে স্কুলে পৌঁছলে থমাস হেনরি তাকে সব ঘটনা বললেন। ড্যানা সব শুনে বলল–নিজের থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার মত ছেলে সে নয়। নিশ্চয়ই ওকে আগে কোনও ভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়েছিল।– হেনরি বললেন, মিস ইভান্স, আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারব না।–
–ঠিক আছে। ওকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারে, এরকম কোন স্কুলে ওকে দেব। ফেনাল চলে এসো।– গাড়িতে উঠে ফেনালের কাছে ঘটনাটা জানতে চাইল। কিন্তু নোংরা কথাটা ফেনাল বলতে পারল না। তাই বলল আমারই দোষ।– ড্যানা বুঝল ফেনাল আসল ঘটনাটা চেপে গেল। তবুও চাপ দিল না। ফেনালকে সঙ্গে নিয়েই রজার হাডসনের সঙ্গে দেখা করতে গেল।
জর্জটাউনে পাঁচ একর পাহাড়ি জমিতে হাডসন এস্টেট। জর্জিয়ান স্টাইলে তিনতলা ম্যানাল, ড্যানা বাড়ির সামনে এসে ফেনালকে বলল,–তুমি ভদ্র হয়ে থাকবে।–ঠিক আছে।– দরজায় বেল টিপতেই একজন খুব লম্বা লোক দরজা খুলে দিল। বাবুর্চির পোশাক পরা। বলল,–আপনিই তো মিস্ ইভান্স? আমার নাম সিজার। মিঃ হাডসন আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।– লম্বা হলঘর পেরিয়ে বৈঠকখানা। সোফা, কোরাটর চেয়ার ও টেবিল দিয়ে সাজানো। পঞ্চাশোর্ধ্ব রজার হাডসন ও তার স্ত্রী সেখানে ছিলেন। চোখের দৃষ্টি শীতল, সতর্ক হাসি। পামেলা হাডসন সৌন্দর্যের আধার। –আমি ড্যানা ইভান্স। এ আমার ছেলে ফেনাল।–আমি রজার হাডসন। উনি আমার স্ত্রী পামেলা।– ফেনালকে সঙ্গে আনার জন্য ক্ষমা চাইল ড্যানা। পামেলা হাডসন বললেন,–ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। আমরা কাগজে ওর সম্বন্ধে পড়েছি। আপনি তো একটা মহৎ কাজ করছেন।–
রজার হাডসন রুক্ষভাবে বললেন–মিস ইভান্স। আপনি কেন যে এখানে এসেছেন তা জানি না।–টেলর উইনথ্রপের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।–কী জানতে–চান?–আপনি তাকে চিনতেন বলে শুনেছি।–হ্যাঁ। উনি যখন রাশিয়ায় আমাদের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তখন ওঁর সঙ্গে দেখা হয়। সেই সময় আমি আর্মড সার্ভিস কমিটির প্রধান ছিলাম।–ওঁর সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?–উনি খুব যোগ্য লোক ছিলেন। একথা আমি ওঁর বংশমর্যাদা বা বাইরের চাকচিক্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলছি না।
কিন্তু উনি কি রাশিয়ায় কোন গোলমালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন যাতে তার শত্রু তৈরি হয়েছিল যারা তাকে খুন করতে পারে?– রজার হাডসন হতভম্বের মত তাকালেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন,–টেলরের জীবন তো জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এমন কিছু হলে সবাই জেনে যেত।– ড্যানা বলল, আমি ভেবেছিলাম মিঃ উইনথ্রপ এমন কিছু একটা করেছিলেন কারও বিরুদ্ধে যাতে সে তার পুরো পরিবারকে খুন করার পরিকল্পনা করে। –আপনার এই অনুমানের কারণ কী?–তেমন প্রমাণ কিছু নেই।–আমিও শুনেছি। যে…– পামেলা বললেন,–কী বলতে যাচ্ছিলে তুমি?– হাডসন বলতে যাচ্ছিলেন,–আমি যখন মস্কোয় ছিলাম তখন গুজব রটেছিল যে রুশদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কারবারে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে গুজবে আমি কান দিই না। আপনিও নিশ্চয় দেন না।–
ড্যানা কিছু বলার আগেই সংলগ্ন লাইব্রেরি থেকে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ হল। সবাই ছুটে গেল। মেঝেতে নীল রঙের ভাস-টা ভেঙে পড়ে রয়েছে। পাশেই রুমাল।
ড্যানা লজ্জিতভাবে বলল–আমি খুবই দুঃখিত। আমি এর দাম দিয়ে দেব। কেন ভাঙলে ফেনাল?–এটা একটা দুর্ঘটনা।–
পামেলা বললেন,–আমাদের কুকুরটা আরও খারাপ কাজ করে থাকে।
রজার হাডসনের মুখটা গম্ভীর।
তিনি ফেনালকে বললেন,–তোমার হাতটা হারালে কী করে?–বোমার আঘাতে।–তোমার মা, বাবা?–মা, বাবা, বোন বোমাবর্ষণে নিহত হন।–এই যুদ্ধ কবে যে শেষ হবে?– সিজার এসে বলল,–মধ্যাহ্নভোজ তৈরি।–
খেতে খেতে পামেলা বললেন–আপনি এখন কীসের ওপর কাজ করছেন?–ক্রাইম লাইনের উপর একটা নতুন শো-এর ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। যারা অপরাধ করেও জেলের বাইরে রয়েছে, তাদের বিচারের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা আছে। আবার যে সব নির্দোষ মানুষ জেল খাটছে তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করব।–
রজার হাডসন বললেন,–ওয়াশিংটনে এখনও সৎ মানুষের বাস বেশি। ওখান থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন। পামেলা গর্বিত ভাবে জানালেন, রজার বিভিন্ন সংস্কার কমিটিতে রয়েছেন। রজার বললেন,–আমাদের স্কুলগুলো নিশ্চয়ই সঠিক আর ভালর তফাতটা বোঝে না, তাই আমাদেরই সঠিক ভাবে শিক্ষা দিতে হবে।–
পামেলা ড্যানাকে বললেন,–আগামী শনিবার রাতে আমরা পার্টি দিচ্ছি। আপনি আমাদের সঙ্গে যোগ দিলে ভাল লাগবে।–
–নিশ্চয়ই আসব।
আপনার কোন ছেলে বন্ধু আছে?–
–হ্যাঁ জেফ কনর্নাস।
রজার বললেন,–আমি ওঁর সঙ্গে মিলিত হতে চাই।–
ড্যানা ফেনালকে নিয়ে চলে আসার আগে হাডসন বললেন,–মিস ইভান্স, উইনথ্রপদের ব্যাপারে চক্রান্তের ব্যাপারটা ফ্যান্টাসি বলেই মনে হচ্ছে। তবুও আমি যাচাই করে দেখব আর সেটা সত্যি বলে প্রমাণ করা যায় কীনা তাও দেখব।– ড্যানা তার কথাগুলো টেপে তুলে নিল।
.
সকালে তাদের আলোচনা করার কথা ক্রাইম লাইনের উপর। অফিসে ঢুকতেই অলিভিয়া বলল,–মিঃ, বেকার তোমার সঙ্গে দেখা করতে চান।– ম্যাট বেকারের ঘরে ঢুকতেই তিনি বললেন–রজার হাডসনের সঙ্গে তোমার আলোচনার খবর কী?–উনি বোধহয় ব্যাপারটা ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়েই দিতেন, তবে পরে উনি আমাদের কাজেও লাগতে পারেন। ওঁর স্ত্রীর সৌজন্যেই সেটা সম্ভব হয়েছে।–
এক্সিকিউটিভ ডাইনিং রুমে ইলিয়ট ক্রমওয়েল বললেন,–তোমার ছেলে কেমন আছে?–ওকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করেছে। তবে ওর নিজের কোন দোষ নেই। ওকে সবাই উত্যক্ত করত। তাই ও একটা ছেলের নাক ফাটিয়ে দেয়। ছেলেটিকে হাসপাতালে দিতে হয়।– ক্রমওয়েল তার সমর্থনে বললেন,–ওর পক্ষে এটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। ও কোন্ গ্রেডে পড়ছে?–
–সেভেন্থ–। |||||||||| –লিঙ্কন প্রিপারেটরি স্কুল সম্বন্ধে তোমার কি ধারণা?
সে তো খুব ভাল স্কুল। তবে সেখানে ভর্তি করানো তো খুব কঠিন।
–আমার ঐ স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তুমি বললে কথা বলতে পারি।
–তাহলে তো ভালই হয়।–
পরদিনই ইলিয়ট ক্রমওয়েল বললেন,–লিঙ্কন প্রিপারেটরি স্কুলের প্রিন্সিপাল ফেনালকে ট্রায়ালে ভর্তি করতে রাজি হয়ে গেছেন।–আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
লিঙ্কন প্রিপারেটরি স্কুলটা বিরাট। এডওয়ার্ডিয়ান বিল্ডিং, তিনটি অ্যানেক্স, খেলার মাঠ নিয়ে তৈরি।
ড্যানা ফেনালকে নিয়ে প্রিন্সিপাল রাওয়ানো ট্রটের অফিসে গিয়ে ঢুকল। তিনি বেশ বন্ধুভাবাপন্ন। ফেনালকে তিনি বললেন,–সুস্বাগতম। তোমার সম্বন্ধে আমি অনেক ভাল কথা শুনেছি।–
ফেনাল নিরুত্তর দেখে ড্যানা বলল,–ফেনালও এখানে আসার জন্য মুখিয়ে আছে।–ভাল।– এক বয়স্কা মহিলা এলেন। তিনি বিকি। তাঁকে মিসেস ট্রট নির্দেশ দিলেন স্কুলটা ফেনালকে ঘুরিয়ে দেখাতে আর কিছু টিচারের সঙ্গে পরিচয় করাতে।
ড্যানার ইশারায় ফেনাল বিকির সঙ্গে গেল। ড্যানা বলতে শুরু করে–আপনাকে তো…– মিসেস ট্রট বললেন,–আপনাকে কিছু বলতে হবে না। ইলিয়ট ক্রমওয়েল সব বলেছেন আমাকে। আমরা ওর দুঃখের ব্যাপারটা বুঝেছি। ওকে একটু ছাড় দেব।–ধন্যবাদ। ও ছাত্র হিসাবে বেশ ভাল।–তা তো হবেই। অঙ্কে গ্রেড এ পাওয়া তাই প্রমাণ করে।
ফেরার পথে ড্যানা বলল,–চমৎকার স্কুল তাই না?–
ফেনাল বলল, কিন্তু আমার খুবই কষ্ট হবে এখানে। টেনিস কোর্ট আর ফুটবল মাঠ থাকা সত্ত্বেও আমি খেলতে পারব না।
ড্যানা তাকে দুহাতে জড়িয়ে বলে,–আমি দুঃখিত।–
শনিবার রাতে হাডসনের বাড়িতে বেশ জমকালো পার্টি হল। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি হাজির ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রতিরক্ষা দফতরের সেক্রেটারি, কংগ্রেসের বহু সদস্য, ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান, জার্মানির রাষ্ট্রদূত। ড্যানা এবং জেফ সেখানে পৌঁছল। ড্যানা জেফ-এর সঙ্গে রজার ও পামেলার পরিচয় করিয়ে দিল। হাডসন বললেন,–মিঃ জেফ, আমি আপনার স্পোর্টস কলাম ও টিভি সম্প্রচার খুব উপভোগ করি।–
–ধন্যবাদ।–
পামেলা অতিথিদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। বেশির ভাগ অতিথিই ড্যানা অথবা জেফ-এর ভক্ত। জেনারেল ভিক্টর বুস্টার এবং জ্যাক স্টোন এগিয়ে এলেন। ড্যানা বলল,–শুভ সন্ধ্যা।– বুস্টার রুক্ষস্বরে বললেন,–আপনি এখানে কেন?– ড্যানা চমকে উঠল। বুস্টার বললেন–এটা একটা সামাজিক ব্যাপার। এখানে যে প্রচার মাধ্যম আমন্ত্রিত হবে তা তো জানা ছিল না।– জেফ রাগত ভাবে বলল, আপনাদের মত আমাদেরও এখানে আসার অধিকার আছে।– বুস্টার তাকে পাত্তা না দিয়ে ড্যানার দিকে তাকিয়ে বললেন আমি বলছিলাম কিনা যে আমার নিষেধ সত্ত্বেও আপনি উইনথ্রপদের ব্যাপারে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে অসুবিধায় পড়বেন?– বলে তিনি চলে গেলেন। জ্যাক স্টোন লজ্জিতভাবে বললেন,–আমি অত্যন্ত দুঃখিত। উনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেছেন।– ঠান্ডা গলায় জেফ বলল,–তাই তো দেখছি।–
নৈশভোজ খুব ভাল হোল। পামেলা, বললেন, লিঙ্কন প্রিপারেটরি স্কুলে ফেনালকে ভর্তি করা হয়ে গেছে?– ড্যানা বললেন,–ইলিয়ট ক্রমওয়েল ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি মহান মানুষ। রজার হাডসন সায় দিলেন। তারপর দ্বিধাগ্রস্ত স্বরে বললেন, রাশিয়ায় টেলর উইনথ্রপ আমাদের রাষ্ট্রদূত হবার আগে বলেছিলেন জনগণের জীবন থেকে তিনি অবসর নেবেন। ড্যানা বলল, আর তারপরই তিনি রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূতের পদটা গ্রহণ করেছিলেন তো?–হা।– ড্যানা ভাবল কী অদ্ভুত ব্যাপার।
জেফকে ড্যানা বলল ফেরার পথে, বুস্টার চান না আমি উইনথ্রপদের মৃত্যুর তদন্ত করি।–কেন করবে না?–উনি কারণটা বলেন নি।–ওর চিৎকারের চেয়ে মনে রাখা উচিত এই কথাটা যে উনি ফেডারেল রিসার্চ এজেন্সির প্রধান।–জানি। আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার সাহায্যে তারা অনুন্নত দেশগুলির কারিগরির মান উন্নত করতে চায়।–ওটা এ সব লোক দেখানো ব্যাপার। ওদের আসল কাজ হল ফরেন ইনটেলিজেন্সি এজেন্সির ওপর গুপ্তচরগিরি করা এবং তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা।– ড্যানা বলল,–টেলর উইনথ্রপ একসময়…FRA-এর প্রধান ছিলেন। কেমন সন্দেহজনক ব্যাপার না?– জেফ বলল–তাই আমি বলছি তুমি এই বুস্টারের থেকে যতই দূরে থাকো ততই তোমার মঙ্গল। তুমি যদি আগে বাড়ি যেতে চাও…–না, তোমার বাড়িতে যেতে চাই। জেফ হাসল, বলল,–তাই চলো।– ম্যাডিসন স্ট্রিটের চারতলা বাড়ির একটা অ্যাপার্টমেন্টে জেফ থাকে। জেফ ড্যানাকে তার শয়নকক্ষে নিয়ে গেল। জড়িয়ে ধরে বলল,–তুমি যে কত সুন্দর তা তুমি নিজেই জান না।– ড্যানা হাসল, সব পুরুষরাই এই একই কথা বলে থাকে। তারা ঘনিষ্ট হতে যাবে এমন সময় সেলফোনটা বেজে উঠল। জেফ ফোন তুলল–বলল,–হ্যাঁ এগিয়ে যাও…চিন্তা কোর না…এটা বোধহয় তোমার মানসিক চাপের জন্য…চমৎকার…শুভ রাত্রি।– জেফ ফোন অফ করল। –কার ফোন?–র্যাচেলের। বড্ড বেশি কাজ করে তো, ওর একটু বিশ্রামের দরকার।– বাড়ি ফিরে ড্যানা দেখল হাউসকীপার অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছে–সে বলল,–রাত দেড়টা বাজে।– ড্যানা তাকে কিছু টাকা দিয়ে বলল–তুমি বরং ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাও।– হাউসকীপার বলল,–মিস ইভান্স, সারা সন্ধ্যা ফেনাল বারবার খোঁজ নিচ্ছিল আপনি কখন বাড়ি ফিরবেন।–আচ্ছা, শুভ রাত্রি।–
ড্যানা এবার ফেনালের ঘরে গিয়ে দেখল সে তখনও জেগে। তাকে দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। –তোমার তো এখন ঘুমিয়ে পড়া উচিত।–আমি তোমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম।–এবার থেকে আমি আরও বেশি করে তোমাকে সঙ্গ দিতে চেষ্টা করব।–
.
সোমবার সকালে একটা ফোন এল। চিলড্রেন্স ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত ডাঃ জোয়েল হিরসবার্গ-এর কাছ থেকে। তিনি বললেন, ইলিয়ট ক্রমওয়েল তাকে বলেছেন যে ড্যানা তার ছেলের জন্য একটি প্রসথেটিক হাত পেতে চায়। এ ব্যাপারে ড্যানা যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঐ দিনই ড্যামা ফেনালকে নিয়ে তাদের কাছে গেল। ডাঃ জোয়েল হিরসবার্গ-এর বয়স চল্লিশোর্ধ্ব, খুবই আকর্ষণীয়। ড্যানা তাকে বলল,–ফেনালের এখন স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। পরে এই হাত ছোট হয়ে যাবে। তার আবার নতুন করে বানানোর খরচ…–মিস ইভান্স, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলির শিশুদের সাহায্যের জন্যই আমাদের ফাউন্ডেশন গঠিত হয়েছে। তাই আপনাকে কোন খরচ করতে হবে না।– ড্যানা বলল–ধন্যবাদ।– তারপর ঈশ্বরের কাছে ইলিয়ট ক্রমওয়েলের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা জানাল। ডাঃ জোয়েল এবার ফেনালকে পরীক্ষা করলেন। তারপর ড্যানাকে বললেন, আমাদের কাছে দুধরনের হাত আছে, মিইলেকট্রিক শিল্পসমৃদ্ধ আর কেবল অপারেটেড হাত। মিও ইলেকট্রিক হাতটা প্লাসটিক দিয়ে তৈরি এবং হাতের মত গ্লাভস দিয়ে মোড়ান। এটা একেবারে আসলের মত দেখতে। ডাঃ জোয়েল এবার ফেনালকে বুঝিয়ে দিলে–তুমি যখনই এই নকল হাতটা ব্যবহার করবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিইলেকট্রিক ইঙ্গিত দিতে থাকে। এবং মাংসপেশিগুলি সংস্কুচিত হয়। একটা আকন দিয়ে হাতটা আটকানো। পাতলা একটা নাইলনের মোজা দিয়ে আটকানো হাতটা। সাঁতার ছাড়া আর সব কাজই তুমি করতে পারবে।– ফেনাল জানতে চাইল,–এটা ঠিক আসল হাতের মত দেখাবে তো?– হা, তোমাকে একজন থেরাপিস্টের সঙ্গে দেখা করতে হবে কীভাবে মিইলেকট্রিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা শেখার জন্য। ফেনাল আর ড্যানার চোখ দিয়ে আনন্দে জল গড়িয়ে পড়ল।
পরদিন ড্যানা অফিসে আসতেই অলিভিয়া একটা খাম আর ফুলের তোেড়া দিল। খামের ভেতর একটা কার্ড–প্রিয় মিস ইভান্স, আমদের বন্ধুর চিৎকার কামড়ানোর চেয়ে খারাপ।– ফুলগুলো উপভোগ করবেন। জ্যাক স্টোন।–
ড্যানা হাসল। জেফ বলেছিল,–জেনারেল বুস্টারের কামড়ানো তার চিৎকারের চেয়েও খারাপ। তাহলে ঠিক কোন্টা? ড্যানার মনে হল স্টোন তার কাজ এবং বসকে ঘৃণা করে।–
FRA-এর জ্যাক স্টোনকে ফোন করল ড্যানা। বলল,–ফুলের জন্য ধন্যবাদ।–আপনি কি অফিস থেকে কথা বলছেন?–হ্যাঁ।–আমি পরে ফোন করছি।– এর পরেই ডায়াল টোনের শব্দ ভেসে এল। এর মিনিট তিনেক পরেই জ্যাক স্টোন ফোন করল। মিস ইভান্স আমরা যে ফোন করছি একথা কেউ না জানলেই মঙ্গল। আমি বুস্টারকে জানি। উনি বড় একরোখা। আপনি বরং আমার ব্যক্তিগত সেলফোনের নম্বরটা নিয়ে রাখুন। –ধন্যবাদ।– সে নম্বরটা লিখে নিল।
সেদিন সকালে জ্যাক স্টোনের সঙ্গে দেখা করে জেনারেল বুস্টার বললেন,–আমার মনে হয় ইভান্স একজন দুশ্চরিত্রা। ওর ওপর একটা ফাইল খুলে ফেল আর আমাকে সব খবর জানিও।–ঠিক আছে।– মনে মনে জ্যাক স্টোন বলে আমি মোটেই তা করব না।
টেলিফোনে স্টেশনের এক্সিকিউটিভ ডাইনিং রুমে বসে জেফকে ড্যানা বলল,–ফেনালের নকল হাতের ব্যাপারে আমি খুবই উত্তেজিত। এতদিন সে যে হীনমন্যতায় ভুগত তা এবার কাটিয়ে উঠবে।– জেফ বলল,–তা তো ঠিকই।– জেফ-এর সেলফোনটা বেজে উঠল। জেফ ফোন ধরল। চকিতে একবার ড্যানার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলল,–..না, তুমি এগিয়ে যাও। তুমি একজন চিকিৎসকের কাছে যাও…নিজের যত্ন নিও…বিদায়।–
ড্যানা বলল–র্যাচেলের ফোন ছিল?
হ্যাঁ-ওর কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রিওয় শুটিং বাতিল করে দিয়েছে।
–ও তোমাকেই কেন ফোন করতে গেল?
–কারণ ও একেবারে একা। আর কেউ নেই।–
.
সেদিন সকালে র্যাচেল আমেরিকান এক্সপ্রেসওয়ের হয়ে ইপানেমা বিচে শুটিং করছিল। দুপুরে পরিচালক তাকে বলেন,–শেষ দৃশ্যটা আরও একবার তোলা যাক।– র্যাচেল বলল–আমি দুঃখিত, পারব না।– পরিচালক অবাক হয়ে তাকালেন,–আমি খুব ক্লান্ত।– বলে সে হোটেলের দিকে যেতে গেল। কাঁপছিল সে। মাথা ঝিমঝিম করছে। জেফকে তখনই সে ফোন করে। জেফ খুব ভাল। সুখের সংসার ছিল তাদের। কিন্তু একটা ফোনকে কেন্দ্র করে সব ওলোটপালট হয়ে গেল–হ্যালো, র্যাচেল স্টিভেন্স?–হ্যাঁ।– হলিউডের নামকরা পরিচালক রডরিক মার্শাল আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। –ফোনে তার গলা পাওয়া যায়।– আমি আপনার ফোটোগ্রাফ দেখেছি মিস স্টিভেন্স। আপনি আমার আগামী ছবিতে কাজ করবেন? স্ক্রিন টেস্টের জন্য আসতে পারবেন হলিউডে?–কিন্তু আমি তো কোনদিন অভিনয় করিনি।–তা নিয়ে ভাববেন না। আমি শিখিয়ে পড়িয়ে নেব। আপনার সব খরচও বহন করব।– র্যাচেল একটু ভেবে বলল,–সপ্তাহ তিনেকের মধ্যেই যেতে। পারব।– রিসিভারটা নামিয়ে রেখে ভাবল জেফ-এর সঙ্গে পরামর্শ করা হোল না। জেফ বলল,–যাও হলিউডে মজা করে এসো।–তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে?–না। আমার এখন অনেক জায়গায় খেলা আছে। র্যাচেল বলল–খুব খারাপ। আমরা কি আর একসঙ্গে মিলিত হতে পারব জেফ?–প্রায়ই পারব না।– র্যাচেল কিছু বলল না।
লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দরের সামনে স্টুডিওর একজন কর্মচারী লিমুজিন গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বলল, আমার নাম হেনরি ফোর্ড। সবাই আমাকে হ্যাঁঙ্ক বলে ডাকে। গাড়িতে যেতে যেতে সে জানাল,–সেটিউ ম্যারমন্টে একটা ঘর আপনার জন্য বুক করেছি। পাশেই সূর্য অস্ত যায় প্রতিদিন। আজ দুপুর দুটোয় আমি স্টুডিওয় নিয়ে যাব।–
দুপুর ঠিক দুটোর একটু পরে রডরিক মার্শালের অফিসে গিয়ে হাজির হল র্যাচেল।
তিনি বললেন,–আমি আপনাকে এক বড় মাপের অভিনেত্রী করে তুলব। এন্ড অব এ ড্রিম ছবির জন্য আপনার স্ক্রিনটেস্ট নেওয়া হবে কাল সকালে। আজ সন্ধ্যায় আমরা একসাথে নৈশভোজ সারতে পারি কি?–নিশ্চয়ই।–তাহলে রাত আটটায় আমি আপনাকে তুলে আনব।– সন্ধ্যায় তিনি বললেন, লস এঞ্জেলস এমন জায়গা যেখানে আপনি প্রতি মুহূর্তে উষ্ণতার পরশ পাবেন।– সন্ধ্যার শেষে পরিচালক বলল–রাতে ভাল করে ঘুমোবেন। কাল আপনার জীবনটা একেবারে বদলে দেব।–ধন্যবাদ।–
এরপর দিন তাকে মেকআপ করে ও পোশাক পরিয়ে সাউন্ড স্টেজে নিয়ে গেল। –আমরা আপনাকে ক্যামেরার বাইরে কিছু প্রশ্ন করব প্রথম পর্যায়ে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যামেরায় কিছু ছোট ছোট দৃশ্য তোলা হবে।–গুডমর্নিং।–গুডমর্নিং।–আপনি তো মডেল?–হ্যাঁ।–কীভাবে শুরু করলেন?–আমার তখন পনেরো বছর বয়স। মায়ের সঙ্গে এক মডেল এজেন্ট রেস্তোরাঁয় আমাকে দেখতে পেয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। আর আমি মডেলের কাজ শুরু করি। র্যাচেল সহজভাবেই মিনিট পনেরো সাক্ষাৎকার দেয়।–কাট।– একটা ছোট চিত্রনাট্য র্যাচেলের হাতে তুলে দিয়ে রডরিক বললেন,–এখন একটু বিরতি। এটা পড়ে দেখুন। তৈরি হলে আমরা শুটিং শুরু করব।– র্যাচেলের বিপরীতে নায়কের ভূমিকায় যে অভিনয় করবে তার সঙ্গে র্যাচেলের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হোল। কেভিন ওয়েবস্টার। একটু পরে শুটিং শুরু হল। র্যাচেল নায়কের দিকে তাকিয়ে বলল–আজ সকালে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি।–আমি সে কথা শুনেছি। তবে তার আগে আমার সঙ্গে কথা বলা কি তোমার উচিত ছিল না?–বছর খানেক আগেই তো তোমায় সঙ্গে কথা বলেছি জেফ। তুমি তখন কান দাওনি।–কাট। ওর নাম ক্লিফ। জেফ নয়।–দুঃখিত।– ঠিক আছে আর একবার শুটিং শুরু করা যাক।
র্যাচেল শুটিং-এর পরে ভাবল তার আর জেফ-এর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকার কোন মানে হয় না। কদাচিৎ তারা একসঙ্গে থাকে।
এখন অসুস্থ র্যাচেল ভাবল আমি ভুল করেছি বিবাহবিচ্ছেদ করে।
নকল হাতটা দেবার সময় ডাক্তার ড্যানাকে বলল,–শারীরিক এবং মনস্তত্ব উভয় দিক দিয়েই এটা ব্যবহার করা কঠিন। ফেনালকে বোঝাতে হবে এটা দেহেরই একটা অঙ্গ। এতে অভ্যস্ত হতে দুতিন মাস সময় লাগবে।
পরের দিন সকালে হাতটা না লাগিয়েই ফেনাল স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে দেখে ড্যানা বলল–ফেনাল তোমার হাতটা কোথায়?–
–ওটা একটা তামাশা। ওটা আমি লাগাব না।
–ওটা তোমাকে পরতেই হবে। ওটার সুযোগ তোমাকে নিতেই হবে।–
ড্যানা আবার গোয়ন্দা মার্কাস আব্রাহামের সঙ্গে দেখা করতে গেল। অটোপসি রিপোর্টের ফলাফল জানতে।
–জোয়ান সিনিসির অটোপসি রিপোর্টে মদ বা ড্রাগের কোন সন্ধান মেলেনি। তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।–
ড্যানা এবার গোয়েন্দা ফোনিক্স উইলসনের অফিসে গেল।
–নতুন কোন খবর নেই গ্যারি উইনথ্রপের খুনের ব্যাপারে। পেন্টিংগুলোরও খোঁজ পাইনি।– চোরেরা একেবারে হাত ধুয়ে মুছে বসে আছে। শিল্পীসামগ্রীর চোর খুব বেশি নেই। তবে এদের মোটিভ সাধারণত অন্য অপরাধীদের মত হয়ে থাকে। কিন্তু এদের মোটিভ একেবারে আলাদা।–কিভাবে?–শিল্প সামগ্রীর চোরেরা কখনও নিরস্ত্র মানুষকে খুন করে না। তোমার কি এই কেসে আগ্রহ আছে?–
না-স্রেফ কৌতূহল।– ড্যানা মিথ্যে বলল।
নির্ধারিত FRA হেডকোয়ার্টারে জেনারেল বুস্টারের অফিসে মিটিং শেষ হতেই জ্যাক স্টোনকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,–কী ব্যাপার বলো তো ড্যানা ইভেন্স-এর? একের পর এক কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে।–তার কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল। তাই প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। এতে তো দোষের কিছু নেই।–ওকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা কোর।–
ড্যানা যখন পরবর্তী সম্প্রসারণের জন্য তৈরি হচ্ছিল তখন বেকার তাকে বললেন,–FRA থেকে তোমার ব্যাপারে একটা ফোন এসেছিল। তারা চায় তুমি উইনথ্রপের খুনের ব্যাপারে তদন্ত বন্ধ করো।–
ড্যানা বলল,–আমি যে তদন্তে নেমেছি তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি সরে আসব না। কারণ এমন কিছু সরকারী এজেন্সি আছে তারা চায় আমি এই তদন্ত চালিয়ে যাই।
অ্যাসপেন–যেখানে টেলর ও তার স্ত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান সেখান থেকেই এই রহস্যের শুরু। সেখান থেকে সন্দেহজনক কিছু পেলে সেটা হবে ক্রাইম লাইনে প্রথম লাথি মেরে ফুটবল খেলার মত।–ঠিক আছে এগিয়ে যাও।–
ফ্লোরিডার বাড়িতে স্রেফ একটা ঘর থেকে আর একটা ঘরে পায়চারি করতে করতে সে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তার এত ক্লান্ত হওয়া কবে থেকে যে শুরু হল বুঝতে পারে না। র্যাচেল ভাবে সম্ভবত তার ফ্লু হয়েছে। সে মৃদু উষ্ণ গরম জলের টবে স্নান করছিল। তার হাতটা হঠাৎ বুকে গিয়ে পড়ে এবং সেখানে সে একটা পিণ্ড অনুভব করে। সে ভয় পেয়ে যায়। তারপরে নিজেই ভয় কাটাতে চাইল। সে ধূমপান করে না। শরীরের যথেষ্ট যত্ন নেয়। ক্যান্সার তার হতে পারে না। তবু ডাক্তার দেখাতে হবে। ফোন করল র্যাচেল বেটি রিকম্যানের মডেল এজেন্সিতে। যে আবার কাজ শুরু করতে চায়। বেটি রিকম্যান জানাল পরবর্তী শুটিং শুক্রবার। পরের সপ্তাহে শুরু হচ্ছে। বিস্তারিত খবর তোমাকে পরে পাঠাচ্ছি।–
পরের দিন বিকেলে ডাঃ গ্রাহাম এলগিনের সঙ্গে দেখা করল র্যাচেল। বলল,–আমার ডানদিকের স্তনে ছোট্ট একটা পিণ্ড দেখা দিয়েছে। আমি মাইক্রোসার্জারি করাতে চাই। আমি একজন মডেল। তাই আমার দেহের সৌন্দর্য বজায় রাখা খুব জরুরি।–ঠিক আছে। তবে আগে বায়োঙ্গি করে দেখি অপারেশন করতে হবে কিনা।– হসপিটাল গাউন পরিয়ে নার্স ব্যাচেলকে তৈরি করিয়ে দিল। ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করলেন। টিস্যু বার করলেন। বললেন,–এটা ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হবে। কাল সকালে সাইটোলজি রিপোর্টটা পাব।–
পরের দিন সকাল নটায় ডাঃ এলগিন র্যাচেলকে ফোন করলেন।–মিস স্টিভেন্স, এইমাত্র সাইটোলজির রিপোর্টটা পেলাম, মনে হয়…–বলুন, নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।–আমার মনে হয় আপনার ক্যান্সার হয়েছে।–
জেফ স্পোর্টস কলামের জন্য যখন লিখছে তখন ফোন বেজে উঠল।
–জেফ…– র্যাচেল কাঁদছিল।
–কী ব্যাপার…কাঁদছ কেন?
–আমার ব্রেস্ট ক্যানসার হয়েছে।
–সে কী? খুব মারত্মক?
–এখনও জানি না। আমাকে ম্যানোগ্রাম করাতে হবে।
–জেফ তুমি একবার আসবে?
–শোন…আমি বোধহয়…
–স্রেফ একটা দিনের জন্য…
–ঠিক আছে আমি চেষ্টা করব।–
প্রোডাকশান মিটিং থেকে ফিরে ড্যানা বলল–অলিভিয়া, আমার সকালের বিমানে অ্যাসপেন আর কালোরাডোর টিকিট লাগবে।–
–ঠিক আছে। জেফ তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
–ধন্যবাদ।– ঘরে ঢুকে জেফকে দেখল ড্যানা।
জেফ-এর মুখের অভিব্যক্তি দেখে ড্যানা জিজ্ঞেস করল,–তুমি ঠিক আছ তো?
— দীর্ঘশ্বাস ফেলে জেফ বলল,–র্যাচেলের ব্রেস্টে ক্যানসার হয়েছে।
— ড্যানা দুঃখিত হয়ে বলল,–ও ঠিক হয়ে যাবে তো?–
–ডাক্তার এখনও তা জানাতে পারেনি, র্যাচেল বড় নিঃসঙ্গ। খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ড্যানা বলল,–তুমি অবশ্যই ওর কাছে যাবে।–
দুএকদিনের মধ্যেই আমি ফিরে আসব।
— দুঘণ্টা পরে জেফ মিয়ামিগামী বিমানে উঠল।
ড্যানার সমস্যা হল ফেনালকে নিয়ে। কেননা বিশ্বাসযোগ্য লোকের কাছে তাকে না রেখে সে অ্যাসপেনে যেতে পারবে না। পামেলা হাডসনকে ফোন করতেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। তিনি হাউসকিপার মেরি রোয়ানি ভ্যালেকে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দিলেন।
পরদিন সকালে সাতটায় মেরি ভ্যালে এসে হাজির এল। পঞ্চাশ বছর বয়স হবে। ফেনালের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দিল ড্যানা।
ড্যানাকে ফেনাল জিজ্ঞেস করল,–তুমি তো আবার ফিরে আসবে, তাই না?
— ড্যানা তার পিঠে হাত রেখে বলল,–নিশ্চয়ই।–
স্টুডিওয় ফিরে ড্যানা ডেস্কের ওপর ছোট্ট সুন্দর মোড়ক পড়ে থাকতে দেখল। সেটা খুলল ড্যানা, তাতে একটা সোনার পেন এবং কার্ড। কার্ডে লেখা–প্রিয় ড্যানা, যাত্রা নিরাপদ হোক। দ্য গ্যাং।– ব্যাপারটা চিন্তার। যাই হোক, কার্ডটা সে পার্সে ঢুকিয়ে দিল।
ঠিক তখনই একজন শ্রমিকের সাজে হোয়ারটনের আগের অ্যাপার্টমেন্টে বেল বাজাল। নতুন ভাড়াটে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। লোকটা এবার ড্যানার অ্যাপার্টমেন্টে গেল। –ম্যাডাম আমাকে তার টেলিভিশন সেটটা মেরামত করবার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন।–
–আসুন।– মিসেস ভ্যালে তাকে ভেতরে ডাকল।
.
মিয়ামি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে র্যাচেল স্টিভেন্সকে দেখে জেফ অবাক হয়ে গেল। এত সুন্দর হয়েছে সে। র্যাচেল তাকে জড়িয়ে ধরে বলল–জেফ তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।–এত সুন্দর হয়েছে তুমি। তোমার ক্যান্সার হয়নি,– বলে জেফ একটা লিমুজিন গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। র্যাচেল বলল,–তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক।– গাড়িতে যেতে যেতে র্যাচেল বলল,–ড্যানা কেমন আছে?–
–ঐ আছে একরকম।–আগামী সপ্তাহে অরুবায় আমার শুটিং করবার কথা– র্যাচেল বলল। এই অরুবায় তাদের অনেক সুখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে তারা মধুচন্দ্রিমা যাপন করেছিল।
জেফ বলল,–অরুবায় অরানজেস্টার হইবার্গ পাহাড়ের ওপর আমরা মধুচন্দ্রিমা যাপন করেছিলাম তোমার মনে আছে র্যাচেল?– র্যাচেল বলল,–সেটা ছিল আমাদের কাছে একটা স্বর্গ তাই না?–ঠিক বলেছ।– রাচেল বলল–সকালে আমার ম্যানোগ্রাম করার কথা আছে। তুমি কি তখন আমার সঙ্গে থাকবে :–অবশ্যই।– মিয়ামির টাওয়ার ইমাজিং এ ম্যানোগ্রাম করার ব্যবস্থা । নার্স ব, মিনিট পনেরো সময় লাগবে। রিপোর্ট পেতে আগামীকাল হয়ে যাবে।–
পরদিন অনকোলজিস্ট স্কট ইয়ং-এর কাছে গিয়ে হজির হল জেফ এবং র্যাচেল।
ডাক্তার র্যাচেলের দিকে তাকিয়ে বললেন। –আমি দুঃখিত মিস স্টিভেন্স। আপনার : খুব মারাত্মক ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার হয়েছে। এখনই অপারেশন দরকার।– জেফ চেঁচিয়ে উঠল–ওফ, না। এ হতে পারে না। আচ্ছা ডাক্তারবাবু অন্য কোন উপায় আপনি জানেন না অপারেশন ছাড়া?– নম্রভাবে ডাক্তার বললেন,–রোগটা অনেক বেড়ে গেছে। তা আর সম্ভব নয়।– র্যাচেল বলল,–তা আমি পারব না। আগামী সপ্তাহে অরুবায় শুটিং আছে।–
জেফ বলল–ডাঃ ইয়ং, আপনি কবে অপারেশন করতে চান?–যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।–
র্যাচেল বলল,–আর একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে চাই।–
–নিশ্চয়ই।– অন্য চিকিৎসক ডাঃ অ্যারন ক্যামেরন বললেন,–আমি ডাঃ ইয়ং-এর সঙ্গে একমত। তাড়াতাড়ি অপারেশন করিয়ে নেওয়াই ভাল।–
র্যাচেল বলল,–আপনারা যখন তাই বলছেন তবে তাই হোক।– ডাঃ ইয়ংকে র্যাচেল বলল,–আমি অপারেশন করাতে রাজি।– ডাঃ ইয়ং বললেন, আপনি ইচ্ছে করলে প্লাস্টিক সার্জনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আপনার স্তন পুনর্গঠনের ব্যাপারে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
.
ম্যাট বেকারের অফিসে ইলিয়ট ক্রমওয়েল এসে হাজির হলেন। বললেন,–আজ রাতে ড্যানা দূরদর্শনে খবর সম্প্রচার করছে না?–হ্যাঁ, সে এখন অ্যাসপেনে।–উইনথ্রপের খুনের ব্যাপারে কতটা সে অগ্রসর হতে পারল জানাবেন। আমি আগ্রহী।–
বিমান থেকে নেমে কার রেন্টাল কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল ড্যানা। টার্মিনালের ভেতরে তখন ডাঃ কার্ল র্যামসে কাউন্টারের পেছনে একজন ক্লার্ককে বলছিলেন, কিন্তু এক সপ্তাহ আগে আমি সে গাড়ি বুক করেছিলাম।– ক্লার্ক বললেন–সব কেমন গণ্ডগোল হয়ে গেছে। এখন আমাদের হাতে একটাও গাড়ি নেই।– ডাক্তার গজগজ করতে করতে বাইরে বেরিয়ে এল। ঠিক সেই সময় এয়ারপোর্ট লবির রেন্টাল ডেস্কের দিকে ড্যানা এগিয়ে গেল। বলল,–আমার একটা গাড়ি বুক করা ছিল।– ক্লার্ক বলল,–আমরা আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। গাড়ির চাবি তাকে দিয়ে বলল, এটা সাদা লেক্সাস গাড়ি, পার্ক করা আছে।–ধন্যবাদ। লিটল নেল হোটেলে কীভাবে যাব?–টাউনের ঠিক মাঝখানে। ৬৭৫ নম্বর ইস্ট ডুরান্ট অ্যাভিনিউ, আপনি সেখানে আরামে থাকবেন।–ধন্যবাদ।– ক্লার্ক ড্যানা র চলে যাবার দৃশ্য নিরীক্ষণ করল।
হোটেলটা ভাল। হোটেলের পিছনে চিত্রবৎ অ্যাসপেন পাহাড়। চব্বিশ ঘন্টা অগ্নিকুণ্ড জ্বলছে। জানালা দিয়ে বরফ পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। অতিথিরা স্কী পোশাকে বসে রয়েছে।
ড্যানা ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করল,–টেলর উইনথ্রপের বাড়িটা কোথায়?– ক্লার্ক বিস্মিত হয়ে বলল, সেটা তো আগুনে পুড়ে গেছে।–
–জানি। আমি শুধু জায়গাটা দেখতে চাই।
–সেটা কানিড্রাম ক্ৰীক ভ্যালির পূর্বদিকে।
–ধন্যবাদ।– ড্যানা তার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।
কননিড্রাম ক্ৰীক ভ্যালিতে টেলর উইনথ্রপের বাড়ির চারপাশটা ন্যাশনাল ফরেস্টের জমি দিয়ে ঘেরা। বাড়িটা একতলা। নিরিবিলি পরিবেশ। নদীর খাঁড়ি রয়েছে। চমৎকার জায়গা। ড্যানা জায়গাটার চারদিক ঘুরে দেখল। কিন্তু প্রশ্ন হল সেই বাড়িটা থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উইনথ্রপ দম্পতি পালিয়ে আসতে পারেন নি। ড্যানা ফায়ার স্টেশনে গেল। বছর তিরিশ বয়সের দীর্ঘদেহী তামাটে রঙের মল্লবীরের মত চেহারার একটি লোক এগিয়ে এল। ড্যানা তাকে বলল,–টেলর উইনথ্রপের বাড়ি পুড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমি কিছু জানতে চাই।–
–সে প্রায় এক বছর আগের ঘটনা। মাঝরাতে বোধহয় তিনটের সময় আমরা খবর পাই। আমাদের দমকলবাহিনী গিয়েও কিছু করতে পারেনি। তবে আগুন নেভানোর পরে আমরা দুটি মৃতদেহ সেখানে পড়ে থাকতে দেখি।–আগুন কী কারণে লেগেছিল?–
–বৈদ্যুতিক গোলযোগের জন্য। আগুন লাগার আগের দিন একজন ইলেকট্রিসিয়ানকে ডাকা হয়েছিল।–কী ধরনের সমস্যা হয়েছিল বলে মনে হয়?–
–ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেমে কোন সমস্যা দেখা দিয়ে থাকতে পারে।–যে ইলেট্রিসিয়ান সেখানে গিয়েছিল তার নাম কী?–আমি জানি না। তবে পুলিশ রেকর্ডে তার নাম আছে।–
–ধন্যবাদ।– লোকটি এবার কৌতূহলী হয়ে বলল,–এ ব্যপারে আপনার এত আগ্রহ। কেন?—
ড্যানা বলল,–সারা দেশে স্কী রিসর্টে আগুন লাগার ব্যাপারে আমি একটা প্রবন্ধ লিখছি।–
ড্যান, এবার অ্যাসপেন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হল। সেখানে অফিসার টার্নার বললেন,–আপনি তো টিভি লেডি ড্যানা ইভান্স।–
–হ্যাঁ।–আমি ক্যাপ্টেন টার্নার। বলুন কী দরকার?–
টেলর উইনথ্রপের বাড়ির আগুনের ব্যাপারে আমার খুব কৌতূহল। –এখানকার গ্রামবাসীরা দৃশ্যটা মনে করলে এখনও কেঁপে ওঠে।–
–শুনেছি বৈদ্যুতিক সমস্যার দরুন আগুনটা লেগেছিল?–হ্যাঁ।–অন্য কেউ আগুন লাগায়নি তো?–অন্য কেউ নয়। বৈদ্যুতিক সমস্যার জন্যই আগুন লেগেছিল।–আগুন লাগার আগের দিন যে ইলেকট্রিসিয়ান সেখানে গিয়েছিল তার নাম কী?–
রেকর্ড ঘেঁটে টার্নার বললেন,–বিল কেলি। আল লারগন ইলেকট্রিক্যাল কোম্পনি।–ধন্যবাদ।–ওটা এই রাস্তারই একেবারে শেষ প্রান্তে।–অনেক ধন্যবাদ।–এ আমার সৌভাগ্য।–
ড্যানা পুলিশ স্টেশন থেকে বেরোতেই একটা লোক সেলফোনে কথা বলতে লাগল রাস্তার উল্টো দিকে। ড্যানা সেই কোম্পানিতে গিয়ে বিল কেলির খোঁজ করতেই ডেস্কে বসে থাকা লোকটি জানাল–এক বছর হল বিল কেলি নিরুদ্দেশ।– ড্যানা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল–ঠিক কবে থেকে সে নিরুদ্দেশ?–
–যেদিন উইনথ্রপের বাড়িতে আগুন লাগে সেদিনই সকাল থেকে সে নিরুদ্দেশ।– ড্যানার শরীরে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল।
দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে এক প্রান্তের একটা দ্বীপে একদিন সারা সকাল জেট বিমান নামার শব্দে মুখর হয়ে উঠল। এখন মিটিং-এর সময়, কুড়িজন অংশগ্রহণকারী কড়া প্রহরায় সদ্য নির্মিত একটা বিল্ডিং-এর কাঠামোয় বসে আছে। স্পিকার ঘরের সামনে এল। –সুস্বাগতম। এখানে আমাদের কাজ শুরু করবার আগে দেখা যাচ্ছে যে একটা সমস্যা উদ্ভুত হয়েছে। একজন বিশ্বাসঘাতক রয়েছে যে আমাদের সব কিছু প্রকাশ করে দিতে চায়। আমি আশা করি তাকে খুব শিগগির ধরতে পারব। আর তাকে উপযুক্ত শাস্তিও দেওয়া হবে। এখন আমরা আমাদের ডাক শুরু করি। ষোলটা জিনিস রয়েছে। দুই বিলিয়ন ডলার দিয়ে শুরু করা যাক। দুই…–আমি ডাক দিচ্ছি তিন…–।
.
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ড্যানা হাউসকীপার মিসেস ভ্যালির কাছে খবর পেল ফেনাল কোন অবাধ্যতা করেনি। ড্যানা শুনে খুব খুশি হল। শুতে যাবার সময় জেফ-এর ফোন এল। –তোমাকে ছাড়া এতদিন যে আমি কি কষ্ট পেয়েছি।–আমিও কষ্ট পেয়েছি জেফ। তুমি এখন ফ্লোরিডায় তো?–হা কাল র্যাচেলের ব্রেস্ট অপারেশন হবে।–আমি দুঃখিত।–ফেনালের খবর কী?–সে এখন নকল হাত লাগিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। নতুন হাউসকীপারকে তার খুব পছন্দ হয়েছে।–খুব ভাল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা মিলিত হতে চাই।–আমিও, তবে এখন তোমার র্যাচেলের কাছে থাকা উচিত। শুভরাত্রি।–শুভরাত্রি। তুমি নিজের যত্ন নিও।–
ড্যানা পরেরদিন ম্যাট-এর অফিসে গেল, অ্যাসপেন থেকে যা দেখে এসেছে তা বলবার জন্য। ম্যাট অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়েছিলেন। ড্যানা বলল,–আগুন লাগার পরের দিনই ইকেট্রিসিয়ান লোকটা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সে উইনথ্রপের বাড়িতে আগুন লাগার আগের দিন সেখানে ছিল।
ম্যাট বললেন,–এ যেন ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যালিসের মত।–ম্যাট, উইনথ্রপ পরিবারের পরবর্তী বংশধর পল এরপর নিহত হল মোটর দুর্ঘটনায়। আমি সেখানে গিয়ে দেখতে চাই কোন প্রত্যক্ষদর্শী আছে কিনা?–
–ঠিক। ইলিয়ট ক্রমওয়েল তোমাকে সাবধানে থাকতে বলেছেন।–তাহলে আমাদের দুজনেরই সাবধানে থাকতে হবে।– ড্যানা তার আনা উপহার ফেনাল স্কুল থেকে ফিরলে তাকে দিল। বলল,–আমাকে আবার কিছুদিনের জন্য বাইরে যেতে হবে।–
–যাও।– ফেনাল অনেক শান্ত হয়ে গেছে। ড্যানা তার কাছে স্কুলের কথা জানতে চাইল। স্কুল তার পছন্দ। তার নতুন হাতটা ছেলেরা ভাল বলেই মনে করে। লিজি বলে একটি মেয়েকে তার ভাল লাগে।
–লিজিও কি তোমাকে পছন্দ করে?—
হ্যাঁ।– অস্ফুটে বলে ফেনাল।
ফেনাল কত বড় হয়ে গেল। ড্যানা ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে মিসেস ভ্যালিকে বলল,–ফেনালের এই পরিবর্তন আমায় যে কতখানি আনন্দ দিয়েছে তা বোঝাতে পারব না।–এ আপনার অনুগ্রহ। ফেনালকে আমি আমার নিজের ছেলের মতই দেখি।–ধন্যবাদ।
ড্যানা মাঝরাত পর্যন্ত জেফ-এর ফোনের আশায় রইল। ওদিকে পাশের অ্যাপার্টমেন্টের লোকটি রিপোর্ট করল,–সব শান্ত।–
ড্যানার সেলফোনটা বেজে উঠল।
জেফ ফ্লোরিডা থেকে ফোন করছে। –র্যাচেলের অপারেশন হয়ে গেছে। তবে আরও কিছু পরীক্ষা বাকি। তাই আমি ওর কাছে আরও কিছুদিন থাকতে চাই। তোমার মত আছে তো?–
–কি বলছ জেফ! তুমি নিশ্চয়ই এখন র্যাচেলের কাছে থাকবে।–
তোমার তদন্ত কতদূর এগোল?–
জেফকে বলতে গিয়েও বলল না যে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। শুধু বলল,–এখানে সব শান্ত।–
–ফেনালকে আমার ভালবাসা জানিও। আর তোমার জন্য রইল অনেক অনেক ভালবাসা।–
জেফ রিসিভার নামিয়ে রাখতেই একজন নার্স এসে বলল,–ডাঃ ইয়ং আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।– জেফকে দেখে ডাঃ ইয়ং বললেন–অপারেশন ভালই হয়েছে। ওঁর এখন আবেগপূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন। ওঁকে বোঝাতে হবে আর পাঁচটা মেয়ের মতই উনি স্বাভাবিক। এরপর যখন রেডিয়েশন চিকিৎসা শুরু হবে তখন ওঁর ভয় ও হতাশা আরও বেড়ে যাবে। ওঁর যত্ন নেবার মত কেউ কী আছে?–
–আমি আছি।– জেফ বলল।
–ড্যানা এবার ফ্রান্সে যাচ্ছে। নাইসগামী এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইটে সে উঠেছে। তবুও নিশ্চিত হতে সে পাশের লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, এটা তো নাইস ফ্লাইট? –হ্যাঁ।–এই আমার প্রথম যাওয়া।–তাহলে বেড়াতে যাচ্ছেন? এটা একটা ঐন্দ্রজালিক দেশ। ঘুরিয়ে দেখানোর মত কোন বন্ধু আছে সেখানে?– না। আমার স্বামী আর তিন সন্তানের কাছে যাচ্ছি। ড্যানা মিথ্যে কথা বলল। ড্যানা বিবাহিতা জেনে লোকটি আর আগ্রহ দেখাল না। লোকটি ম্যাগাজিন পড়তে লাগল। ড্যানা কমপিউটারে চোখ রাখেন। সেখানে মোটর দুর্ঘটনায় নিহত পল উইনগ্রুপের একটা ছবি ছিল। –রেসিং কার।–
নাইস এয়ারপোর্টে নেমে ড্যানা প্রথমেই কার রেন্টাল অফিস থেকে তার বুক করা গাড়ি আর দক্ষিণ ফ্রান্সের ম্যাপ সংগ্রহ করে বেরিয়ে এল। অফিস ক্লার্ক তার যাওয়ার রাস্তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
WNT-এর এক্সিকিউটিভ টাওয়ারে ইলিয়ট ক্রমওয়েল বলছিলেন,–ড্যানা এখন কোথায়?–
–ফ্রান্সে।– ম্যাট বললেন।
–তার কি কোন অগ্রগতি হয়েছে?–এত তাড়াতাড়ি?
–আমি তার জন্য চিন্তিত। এত ঘোরাঘুরি করাটা বিপজ্জনক।–
বিউশোলেইলের উত্তরে রকব্রুন ক্যাম্প মার্টিনে দুর্ঘটনাটা ঘটেছিল। সামনেই একটা রিসর্ট থেকে ভূমধ্যসাগর দেখা যায়। ড্যানা গ্রামের দিকে এগিয়ে গেল। ভাবল কোন পথ দিয়ে এবং কেন পল উইনথ্রপ এখানে এসেছিলেন। রকব্রুন ক্যাম্প মার্টিন মধ্যযুগীয় একটা গ্রাম। সেখানে প্রাচীন প্রাসাদ, গির্জা, ঐতিহাসিক গুহা এবং বিলাসবহুল ভিলা ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর মাঝে। ড্যানা তার গাড়িটা পার্ক করে একজন পথচারীর কাছ থেকে পুলিশ স্টেশনের হদিশ জেনে নেয়।
পুলিশ স্টেশনটা জরাজীর্ণ। সে ঢুকে একজন পুলিশকর্মীকে বলল,–আমি এখানকার ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলতে চাই।–
লোকটি বিহ্বলভাবে তাকাল। তারপর হেসে উঠে বলল,–কমান্ডার ফ্রেসিয়ারের সঙ্গে? এক মিনিট।– ফোনে কার সঙ্গে কথা বলল। তারপরে ড্যানার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল–ওই ঘরে যান।– হাত দিয়ে ঘরটি দেখিয়ে দিল সে।
ফ্রেসিয়ার একজন কর্মতৎপর মানুষ। ড্যানা ঘরে ঢুকে বলল,–শুভ অপরাহ্ন।–
–শুভ অপরাহ্ন। বলুন।–আমি ড্যানা ইভান্স। ওয়াশিংটনের WTN স্টেশনের জন্য আমি উইনথ্রপ পরিবারের একটা কাহিনী তৈরি করছি। শুনেছি পল উইনথ্রপ এখানে নিহত হন।–
–সে এক ভয়ংকর ঘটনা। পাহাড়ি অঞ্চলে সাবধানে গাড়ি চালানো উচিত। সেদিন এখানে আদৌ কোন রেসই ছিল না। আমি সেদিন ডিউটিতে ছিলাম।–
–মিঃ উইনথ্রপ কি গাড়িতে একা ছিলেন?
–হ্যাঁ।
–ওঁর অটোপসিতে কি অ্যালকোহল বা ড্রাগের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল?
–না, কিছুই পাওয়া যায়নি।
–সেদিন আবহাওয়া কেমন ছিল?
–বৃষ্টি হচ্ছিল।
–কোন সাক্ষী নিশ্চয়ই ছিল না?
–হ্যাঁ ছিল। উইনথ্রপের গাড়ির ঠিক পিছনেই সে গাড়ি চালাচ্ছিল।
— ড্যানা উত্তেজিত হয়ে বলল,–আপনি তার ঠিকানাটা আমায় দিতে পারেন?
–নিশ্চয়ই।–
সে সহকারীকে ডাকল। সহকারী আলেকজান্ডার এল। –উইনথ্রপের দুর্ঘটনার কেস ফাইলটা নিয়ে এসো তো।– ড্যানাকে বলল ফ্রেসিয়ার–আপনি কি একা?–না, আমার স্বামী আর ছেলেমেয়েরা আছে। একটু পরেই কাগজের শিট নিয়ে ফিরে এল আলেকজান্ডার। ফ্রেসিয়ার ড্যানাকে বলল,–সাক্ষী একজন আমেরিকার ট্যুরিস্ট। নাম র্যালফ বেঞ্জামিন। একটা কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে পল গাড়ির স্টিয়ারিং অন্যত্র ঘুরিয়ে দেন ফলে তাঁর গাড়িটা খাদে পড়ে যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।–,
ড্যানা বলে,–বেঞ্জামিনের ঠিকানা জানেন?
–হ্যাঁ, আমেরিকার রিচফিল্ড, উটাহ-তে সে থাকে। ৪২০ নম্বর টার্ফ স্টিটে।– কাগজে ঠিকানা লিখে সে ড্যানার হাতে তুলে দিল। ড্যানা ধন্যবাদ জানাল। ড্যানার বিয়ের আংটি পরা হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে সে বলল,–আপনার স্বামীকে হ্যালো বলবেন।–
ড্যানা ফোন করল ম্যাটকে। বলল–পল উইনথ্রপের দুর্ঘটনার একজন সাক্ষীর সন্ধান পেয়ে আমি তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।–
–সে তো খুব ভাল কথা। এদিকে জেফ তার প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে ফ্লোরিডায় আছে।– এভাবে দীর্ঘদিন বাইরে থাকলে আমি তাকে ছুটি নিতে বলব।–
কিন্তু মেয়েটি খুবই অসুস্থ।–
–থাক। তোমার শুভ কামনা করি।
–ধন্যবাদ ম্যাট।–
মনরো পর্বতমালার মাঝে একটা আরামদায়ক বসত বাড়ির টাউন এই রিফিল্ড উটাহ। একটা ফিলিং স্টেশনের সামনে গাড়ি থামাল ড্যানা এবং বেঞ্জামিনের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বার করল। তার বাড়িটা একতলা। দরজা খোেলা। একজন মাঝবয়সী সাদা চুলের মহিলা দাঁড়িয়েছিল দরজার ওপারে। তার পরনে ছিল অ্যাপ্রন। ড্যানা বলল,–আমি র্যালফ বেঞ্জামিনের সঙ্গে দেখা করতে চাই।–উনি কি আপনাকে আশা করছেন?–না এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।– র্যালফের ঘরে ড্যানাকে নিয়ে গিয়ে মহিলাটি বলল,–র্যালফ, একজন মহিলা তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।–
র্যালফ তার রকিং চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ড্যানার দিকে এগিয়ে গেল। বলল,–হ্যালো, আমি কি আপনাকে জানি?–
ড্যানা হতবাক হয়ে দেখল র্যালফ বেঞ্জামিন অন্ধ। পরে জেনেছে সে নাকি জন্মান্ধ।