স্যার টমাস দ্য লা মার্চে ও স্যার জন দ্য ভিকঁৎ

স্যার টমাস দ্য লা মার্চে ও স্যার জন দ্য ভিকঁৎ

১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে স্যার টমাস দ্য লা মার্চে নামক একজন ফরাসি নাইট স্যার জন দ্য ভিকঁৎ নামে জনৈক সম্ভ্রান্ত সাইপ্রিয়টের অধিবাসীকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। একদল খ্রিস্টান সৈন্য তুর্কিদের হাতে বিপন্ন হয়েছিল এবং স্যার টমাসের মতে ওই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী স্যার জন দ্য ভিকৎ। অভিযোগ শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকঁৎ তার হাতের লৌহ-দস্তানা খুলে টমাসের সামনে ফেলে দিলেন। তখনকার দিনে ওইভাবেই একজন আর একজনকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করত–অতএব টমাস ও জনের মধ্যে যুদ্ধ হয়ে পড়ল অবধারিত।

ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনিস্টার নামক স্থানে রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের সামনে পূর্বোক্ত দ্বৈরথ সংঘটিত হয়। প্রচলিত রীতি অনুসারে বিপরীত দুই দিক থেকে সবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দুই যোদ্ধা শূল হাতে পরস্পরকে আক্রমণ করলেন। কিন্তু প্রথম সংঘর্ষেই শূল দুটি গেল ভেঙে এবং যোদ্ধারাও আঘাতের বেগ সামলাতে না-পেরে ঘোড়ার পিঠ থেকে ছিটকে পড়লেন মাটির উপর। উভয় যোদ্ধারই দেহ ছিল লৌহবর্মে আবৃত, শূলের ফলক ওই বর্ম ভেদ করতে পারেনি; কিন্তু প্রচণ্ড আঘাতে অশ্বারোহী যোদ্ধাদের ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে পদাতিকে পরিণত করে দিয়েছিল। অশ্বারোহীর পদ থেকে পদাতিক যোদ্ধার অবনত স্থানে নেমে আসলেও যোদ্ধাদের উৎসাহ একটুও কমেনি, কোষ থেকে তরবারি টেনে নিয়ে দুই বীর আবার রণরঙ্গে মেতে উঠলেন। তলোয়ারের খেলায় দুই পক্ষই সিদ্ধহস্ত, সংঘাতে সংঘাতে তীব্র ঝংকার-ধ্বনি তুলে ঝকমক জ্বলতে লাগল দুটি ঘূর্ণমান তরবারি কিন্তু যুযুধানরা কেউ সুবিধা করতে পারলেন না। অবশেষে হঠাৎ প্রচণ্ড সংঘর্ষে দু-খানা তলোয়ারই ভেঙে গেল। তলোয়ার ভাঙল, কিন্তু যুদ্ধ থামল না। লৌহ-দস্তানায় আবৃত বজ্রমুষ্টি তুলে দুই যুযুধান পরস্পরকে আক্রমণ করলেন। দুজনেরই সর্বাঙ্গ ছিল লৌহবর্মে ঢাকা, কিন্তু দূরদর্শী ফরাসি বীর যুদ্ধের বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন; তার ডান হাতের দস্তানার বহির্ভাগে বসিয়ে দিয়েছিলেন ধারালো লোহার কাটা। তীক্ষ্ণ কণ্টক-সজ্জিত সেই লৌহময় বজ্রমুষ্টির প্রহার যখন স্যার ভিকঁতের মুখের উপর বৃষ্টিধারার মতো পড়তে লাগল, তখন তিনি পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হলেন। মুখের লৌহ-আবরণ ভিকঁৎকে ওই ভয়াবহ দস্তানার বজ্রমুষ্টি থেকে বাঁচাতে পারল না। পরাজিত ভিকঁৎ হলেন ফরাসি বীর টমাসের বন্দি। এসব ক্ষেত্রে বিজয়ী যোদ্ধারা পরাজিত বন্দির কাছ থেকে মোটারকম মুক্তিপণ দাবি করতেন এবং ওই অর্থ না-পেলে বন্দিকে মুক্তি দিতেন না। কিন্তু স্যার দ্যা লা মার্চে কোনো মুক্তিপণ দাবি না-করেই উদারভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীকে বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।