বেন স্টারডিভ্যান্ট ও জিম বোয়ি

বেন স্টারডিভ্যান্ট ও জিম বোয়ি

১৮২৬ খ্রিস্টাব্দ। টেক্সাস অঞ্চলে একটি পানাগারের ভিতর বসে তাসের জুয়া খেলা খেলছে একটি অল্পবয়সি কিশোর ও জনৈক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। পূর্বোক্ত পুরুষটি ওই এলাকার একটি কুখ্যাত জুয়ারি ও দুর্ধর্ষ গুণ্ডা—নাম, বেন স্টারডিভ্যান্ট। কিশোরটির নাম—ল্যাটি মোর।

খেলা চলছে, ছেলেটি হেরে যাচ্ছে বার বার। তীব্র উত্তেজনায় তার বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত; বার বার বাজি হারছে বটে কিন্তু খেলা ছেড়ে ওঠার নাম করছে না।

হঠাৎ পানাগারের দরজা ঠেলে একটি লোক ভিতরে প্রবেশ করল। খেলোয়াড়দের উপর একবার নজর বুলিয়ে নিয়ে আগন্তুকএকটু চমকে উঠল–কিশোরের পিতার সঙ্গে সে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত। ছেলেটি তাকে চিনতে না-পারলেও নবাগত মানুষটির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বন্ধুপুত্রকে শনাক্ত করতে পেরেছিল। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আগন্তুক বুঝল ল্যাটি মোরকে অসভাবে ঠকিয়ে বাজির টাকা জিতে নিচ্ছে জুয়াড়ি বেন। অনভিজ্ঞ কিশোরের চোখে পাকা জুয়াড়ির জুয়াচুরি ধরা পড়ছে না, পরমানন্দে ল্যাটি মোরকে ঠকিয়ে তার টাকাগুলো পকেটস্থ করছে বেন স্টারডিভ্যান্ট।

নবাগত মানুষটি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে খেলা দেখল, তারপর ধীরপদে এগিয়ে এসে কিশোর ল্যাটি মোরের কাঁধে হাত রাখল :তুমি চিনতে পারবে না, কিন্তু তোমার বাবা পারবেন। আমি তোমার পিতৃবন্ধু। তোমার তাস নিয়ে আমাকে একটু খেলতে দাও।

ল্যাটি মোর সম্মত হয়ে জায়গা ছেড়ে দিল, তার স্থান গ্রহণ করল নবাগত মানুষ। কিছুক্ষণ খেলার পর দেখা গেল বেন জুয়াচুরি করে যে-টাকাগুলো ল্যাটি মোরের কাছ থেকে জিতে নিয়েছিল, সেই টাকা আবার নবাগত মানুষটি জিতে নিয়েছে। শুধু তাই নয়–সর্বসমক্ষে বেন স্টারডিভ্যান্টের অসাধু আচরণের কথা প্রকাশ করে দিল আগন্তুক। টাকাগুলো অবশ্য সে পকেটস্থ না-করে ল্যাটি মোরকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেইসঙ্গে কিছু উপদেশ, সাবধান! ভবিষ্যতে কখনো জুয়া খেলবে না।

মুখের শিকার ছিনিয়ে নিলে বাঘ যেমন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, বেন স্টারডিভ্যান্টের অবস্থাও হল সেইরকম। ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে সে ছোরা বার করে আগন্তুককে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানাল।

বেচারা স্টারডিভ্যান্ট! সে ভাবতেও পারেনি, যে-লোকটিকে ছোরার ডুয়েললড়তে চ্যালেঞ্জ করেছে সেই লোকটি হচ্ছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা জিম বোয়ি! ছোরার লড়াইতে জিমের সমকক্ষ কোনো যোদ্ধা সে সময়ে ছিল না।

জিম আত্মপরিচয় দিল না। ছোরা নিয়ে সে দ্বন্দ্বযুদ্ধের উদযোগ করল। লড়াই শুরু হল মেক্সিকান ডুয়েল নামক রীতি অনুসারে। তখনকার দিনে ছোরা হাতে দ্বন্দ্বযুদ্ধ লড়ার যেসব পদ্ধতি ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর মেক্সিকান ডুয়েল। আগে যোদ্ধাদের বাঁ-হাত দুটি শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় এবং লড়াই শুরু করার নির্দেশ পাওয়ামাত্র খোলা ডান হাতে ছোরা নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরকে আঘাত করতে থাকে নির্মমভাবে।

পূর্বোক্ত রীতি অনুসারে লড়াই চলল কিছুক্ষণ ধরে। কয়েকবার নিজের ছোরা দিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাত প্রতিহত করল জিম, তারপর হঠাৎ বিদ্যুদবেগে আঘাত হানল শত্রুর ডান হাতের উপর। শানিত ছুরিকা মুহূর্তের মধ্যে বেন স্টারডিভ্যান্টের দক্ষিণ হস্তে বিদ্ধ হল, দারুণ যাতনায় ছুরি খসে পড়ল স্টারডিভ্যান্টের হাত থেকে। জিমের হাতের ছোরা আবার ঝলসে উঠল, কিন্তু না প্রতিদ্বন্দ্বীর দেহে নয়–দুই যোদ্ধার বাঁ-হাত আটকে যে দড়ির বাঁধনটা শক্ত হয়ে বসেছিল সেই দড়িটাকেই দংশন করল জিমের অস্ত্র।

অসহায় বেনকে অনায়াসে হত্যা করতে পারত জিম, কিন্তু তা না-করে সে উদারভাবে শত্রুর হাতের দড়ি কেটে তাকে মুক্তি দিল।

জিমের সঙ্গে যারা ছোরা হাতে দ্বন্দ্বযুদ্ধে নেমেছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র বেন ছাড়া কোনো মানুষই পৃথিবীর আলো দেখার জন্য জীবিত ছিল না।

বেন স্টারডিভ্যান্ট ছিল ভাগ্যবান পুরুষ।