সাহিত্যিকের ব্রত (১৩৫৮/১৯৫১)
সাহিত্যের স্থূল অর্থ একজনের চিন্তা অনেককে জানানো। বিষয় অনুসারে সাহিত্য মোটামুটি তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম শ্রেণী তথ্যমূলক, তার উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিদ্যার আলোচনা, স্থান কাল ঘটনা বা পদার্থের বিবরণ, বিজ্ঞান, ইতিহাস, জীবনচরিত ইত্যাদি। দ্বিতীয় শ্রেণী প্রচারমূলক, তার উদ্দেশ্য ধর্ম সমাজ রাজনীতি প্রভৃতি সংক্রান্ত মতের অথবা পণ্যদ্রব্যের মহিমা খ্যাপন। তৃতীয় শ্রেণী ভাবমূলক, রসোৎপাদন বা চিত্তবিনোদনই মুখ্য উদ্দেশ্য, কিন্তু তার সঙ্গে অল্পাধিক তথ্য আর প্রচারও থাকতে পারে। প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যের বিষয় ও ক্ষেত্র নিরূপিত, তাতে অবান্তর বিষয় আলোচনার স্থান নেই। দ্বিতীয় শ্রেণীরও প্রতিপাদ্য ও ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ, কিন্তু পাঠকের বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য অবান্তর প্রসঙ্গেরও সাহায্য নেওয়া হয়। তৃতীয় শ্রেণীর উদ্দেশ্য রসোৎপাদন, কিন্তু ক্ষেত্র সুবিস্তৃত, উপজীব্য অসংখ্য, সাধনের উপায়ও নানাপ্রকার। কাব্য নাটক গল্প এবং belles letters জাতীয় সন্দর্ভ এই শ্রেণীতে পড়ে। সেকালে কাব্য বা সাহিত্য বললে এইসব রচনাই বোঝাত। আজকাল কাব্যের অর্থ সংকুচিত হয়েছে, সাহিত্যের অর্থ প্রসারিত হয়েছে। এখনও সাহিত্য-শব্দ প্রধানত পুরাতন অর্থে চলে, তথাপি শেষোক্ত শ্রেণীর একটি নূতন দ্ব্যর্থহীন সংজ্ঞা হলে ভাল হয়। বোধ হয় ললিত সাহিত্য চলতে পারে।
সাধারণত রচনার প্রকৃতি বা বিষয় অনুসারে রচয়িতার পরিচয় দেওয়া হয়, যেমন কবি, নাট্যকার, গল্প লেখক, ইতিহাস লেখক, শিশুসাহিত্য লেখক ইত্যাদি। এককালে কদাচিৎ জাতি অনুসারে লেখককে বিশেষিত করা হত, যেমন মহিলা কবি, মুসলমান কবি; কিন্তু এখন আর তা শোনা যায় না। জীবিকা অনুসারেও লেখককে চিহ্নিত করার রীতি নেই। বঙ্কিমচন্দ্র অন্নদাশংকর আর অচিন্ত্যকুমারকে হাকিম-সাহিত্যিকের শ্রেণীতে এবং তারক গঙ্গোপাধ্যায় কোনান ডয়েল আর বনফুলকে ডাক্তার-সাহিত্যিকের শ্রেণীতে ফেলা হয় না।
যিনি ললিত সাহিত্য লেখেন তাঁর বিশেষ বিশেষ মতামত থাকতে পারে, কিন্তু তার জন্য তাকে কোন মার্কামারা দলভুক্ত মনে করার কারণ নেই। লেখক নিরামিষ ভোজনের পক্ষপাতী বা ফলিত জ্যোতিষে বিশ্বাসী হতে পারেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে যোগবলের প্রভাব মানতে পারেন, বিলাতী সভ্যতার পরম ভক্ত বা সোভিএট তন্ত্রের একান্ত অনুরাগী হতে পারেন, কিন্তু এই সব লক্ষণ অনুসারে ললিত সাহিত্যের উৎকর্ষ মাপা হয় না। লেখকের রচনায় তার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উল্লেখ থাকতে পারে, কিন্তু রসবিচারের সময় তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
সেকালের তুলনায় একালে ললিত সাহিত্যের উপজীব্য অনেক বেড়ে গেছে। স্বদেশী, রাজদ্রোহ, অসহযোগ, অগস্ট-বিপ্লব, পঞ্চাশের মন্বন্তর, স্বাধীনতা লাভ ও দেশভাগের আনুষঙ্গিক হত্যাকাণ্ড, বাস্তুত্যাগীর দুর্দশা, দেশব্যাপী অসাধুতা–সমস্তই কাব্য গল্প ও প্রবন্ধে স্থান পেয়েছে। সহৃদয় লেখক নরনারীর সাহস ও বীরত্ব দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, অন্যায় দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, নির্যাতন দেখে কাতর হয়েছেন, এবং বিগত ও বর্তমান ঘটনাবলী থেকে বীর করুণ বীভৎস ও ভয়ানক রসের উপাদান নিয়ে নিজের উপলব্ধিকে সাহিত্যিক রূপ দিয়েছেন। এ প্রকার রচনার সঙ্গে লেখকদের রাজনীতিক মনের কোনও সম্বন্ধ নেই।
ললিত সাহিত্যের এই নিরপেক্ষতা সম্প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রায় দশ বৎসর পূর্বে ফাঁসিস্ট-বিরোধী লেখক-সংঘের উদ্ভব হয়েছিল। তার কিছুকাল পরে কংগ্রেস-সাহিত্য-সংঘ গঠিত হয়। কমিউনিস্ট লেখক ও শিল্পীদেরও সংঘ আছে। হিন্দু-মহাসভা, সমাজতন্ত্রী দল এবং প্রজা-পার্টি থেকে লেখক-সংঘ গঠনের চেষ্টা হচ্ছে কিনা জানি না।
কাব্য নাটক বা গল্প অবলম্বন করে মতপ্রচারের রীতি নূতন নয়। এদেশের অনেক প্রাচীন কাব্যে দেবতা বিশেষের মাহাত্ম প্রচারিত হয়েছে। টমকাকার কুটীর এবং নীলদর্পণ একাধারে ললিত সাহিত্য ও প্রচারগ্রন্থ। বসন্তের টিকা না নেওয়ার পরিণাম কি ভয়ানক হতে পারে তা রাইডার হ্যাঁগার্ড ব্রিটিশ সরকারের ফরমাশে লেখা একটি উপন্যাসে দেখিয়েছেন। এমিল ব্রিও যৌন ব্যাধি সম্বন্ধে নাটক লিখেছেন। ইওরোপ আমেরিকার অনেক গল্প আর নাটকে সামাজিক ও রাজনীতিক মতের প্রচার আছে।
কোনও কাব্য নাটক বা গল্পে যদি মতবিশেষের সমর্থন থাকে তাতে আপত্তি করবার কিছু নেই। ললিত সাহিত্যের লেখক অবসরকালে চা সিগারেট বা কেশতৈলের বিজ্ঞাপন লিখতে পারেন, কিংবা তার গল্পের মধ্যেই অহিংসা কংগ্রেসনিষ্ঠা হিন্দুজাতীয়তা বা কমিউনিস্ট আদর্শের প্রশংসা করতে পারেন। লেখক অলেখক নির্বিশেষে রাজনীতিক সংঘ, গোষ্ঠী বা ক্লাব গঠনের অধিকারও সকলের আছে। কিন্তু যাঁরা মতের লেবেল দিয়ে লেখক-সংঘ গঠন করেন, সাধারণে তাদের একটু সন্দিগ্ধভাবে দেখে, মনে করে এঁদের চোখে রাজনীতির ধুলো লেগেছে, এঁরা সত্যসন্ধানী নিরপেক্ষ দৃষ্টি হারিয়েছেন।
রাজনীতিক নাম দিয়ে সাহিত্য-সংঘ গঠনের উদ্দেশ্য ঠিক বোঝ না গেলেও কিছু কিছু অনুমান করা যায়। সাহিত্যসেবীর দলবদ্ধ হয়ে রাজনীতিক লেবেল ধারণ একরকম ব্রত। এই ব্রতধারীদের সংকল্প–এঁরা নিজ নিজ রচনার দ্বারা যথাসম্ভব দলীয় মতের প্রচার এবং বিপক্ষ মতের খণ্ডন করবেন। দল না বেঁধেও এঁরা এই কাজ করতে পারতেন, কিন্তু সংঘের অনুশাসন না থাকলে একনিষ্ঠ সমক্রিয়তা আসে না।
এই দলবন্ধনের ফলে প্রচারের সুবিধা হতে পারে। কিন্তু ললিত সাহিত্যের রচয়িতা পাঠক ও বিচারকের পক্ষে যে নিরপেক্ষতা অত্যন্ত আবশ্যক তা লেবেলের জন্য ব্যাহত হয়। সাহিত্যে বিজ্ঞাপনের গন্ধ এসে পড়ে, মনে হয় লেখকের স্বাধীনতা নেই, তিনি দলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। যে পাঠক কমিউনিস্ট তন্ত্রের অনুরাগী তিনি কংগ্রেসী লেখকের রচনায় বুর্জোয়া স্বার্থবুদ্ধি দেখতে পান। যিনি কংগ্রেসী পন্থায় বিশ্বাসী তাঁর কাছে মার্কামারা কমিউনিস্ট লেখকের রচনা অবোধ্য বা দুষ্ট অভিসন্ধি যুক্ত মনে হয়। যে লেখক দলভুক্ত না হয়ে স্বতন্ত্রভাবে নিজের মত প্রকাশ করেন তিনি পাঠকবর্গের কাছে অধিকতর সুবিচার পেয়ে থাকেন।
রাজনীতি ছাড়াও অনেক বিষয় আছে যাতে দলগত বিবাদ নেই, যার সঙ্গে দেশের মঙ্গলামঙ্গল অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত, যার গুরুত্ব অন্য সমস্ত বিষয়ের চেয়েও বেশী। কালোবাজার, প্রতারণা, অমানুষিক স্বার্থপরতা ইত্যাদি সম্বন্ধে অনেক লেখা হয়েছে, কিন্তু তা ছাড়াও ছোট বড় যেসব পাপ আমাদের বর্তমান সমাজে মহামারীর মতন ব্যাপ্ত হচ্ছে তার প্রতিবিধানের জন্য সকল সাহিত্যিকই চেষ্টা করতে পারেন।
পূর্বে শোনা যেত যে আমাদের জাতিগত যত দোষ তার মূল হচ্ছে পরাধীনতা, দেশ স্বাধীন হলেই সকল দোষ ক্রমশ দূর হবে। স্বাধীনতা এসেছে কিন্তু দোষ আগের চেয়ে বেড়েই চলেছে, যা পূর্বে ছিল না তাও দেখা দিয়েছে। এই দোষবৃদ্ধির এক কারণ আমাদের রাষ্ট্রশাসনে অভিজ্ঞতার অভাব, তার চেয়ে বড় কারণ যুদ্ধজনিত জগদ্ব্যাপী বিপর্যয়। যে সব পাশ্চাত্ত্য জাতি বহুকাল স্বাধীনতায় অভ্যস্ত তাদেরও নৈতিক অধধাগতি হয়েছে, কিন্তু আমাদের মতন হয় নি। আসল কথা, আমরা যতই ধর্মপ্রাণ জাতি বলে গর্ব করি, আমাদের ধর্মবোধ অর্থাৎ সামাজিক কর্তব্যবোধ বহুকাল থেকেই ক্ষীণ, যেটুকু ছিল যুদ্ধের ধাক্কায় তাও নষ্ট হয়েছে, অনভ্যস্ত প্রভুশক্তি আর নব নব ব্যবস্থার সুযোগ পেয়ে দেশের অনেকে নিরঙ্কুশ স্বার্থসর্বস্ব হয়েছে, অনেক সাধু লোকও অভাবের তাড়নায় বা অপরের দৃষ্টান্তে অসাধু হয়েছে।
সকলের চোখের সামনে নিত্য যে সব অন্যায় ঘটছে তার প্রতিরোধের প্রয়োজন আজ সমস্ত রাজনীতিক বিবাদের উপরে। কংগ্রেস রাজত্বের বদলে সমাজতন্ত্রী হিন্দুমহাসভা কিষান-মজদুর-প্রজা বা কমিউনিস্ট শাসন এলেই আমাদের চরিত্র শুধরে যাবে এমন মনে করবার কোনও কারণ নেই। আমাদের বর্তমান দুর্দশার অনেকটার জন্য আমরা দায়ী নই তা ঠিক, কিন্তু যে দোষ আমাদের প্রকৃতিগত, তার প্রতিকার আমাদেরই হাতে, কোনও সরকারের তা দূর করার শক্তি নেই।
ধর্মের অর্থ সমাজহিতকর বিধি, ধর্মপালনের অর্থ সামাজিক কর্তব্যপালন। এই ধর্মবোধ লুপ্ত হওয়ায় সমাজ ব্যাধিগ্রস্ত হয়েছে, অসংখ্য বীভৎস লক্ষণ সমাজদেহে ফুটে উঠেছে। ধনপতির তোষণ, দরিদ্রের শোষণ, কালোবাজারের প্রসার, সরকারী অর্থের অপব্যয়, উচ্চস্তরের কলঙ্ক চেপে রাখা, ইত্যাদি বড় বড় অপকীর্তির কথা অনেক পত্রিকায় থাকে, লোকের মুখে মুখেও রটনা হয়। কিন্তু যে সব অনাচার জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়েছে তার দিকে বিশেষ মন দেওয়া হয় না। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি। অনেকে সজ্ঞানে এবং আরও অনেকে ভেড়ার পালের মতন অজ্ঞানে দুষ্ট লোককে ভোট দেয়। যে লোক দুষ্কর্ম করে ধনী হয়েছে তার সঙ্গে কুটুম্বিতা করবার জন্য সাধু লোকেও লালায়িত। অমুক অমুক দুষ্কর্ম করে বড়লোক হয়েছে, তুমিই বা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির হয়ে থাকবে কেন–এই রকম প্ররোচনা অনেক গৃহস্থ তার। পরিবারবর্গের নিকট পেয়ে থাকেন। ঘুষ দেওয়া আর নেওয়া চিরকালই ছিল কিন্তু এখন সহস্রগুণ বেড়ে গেছে। ছাত্রেরা না পড়েই পাস করতে এবং গায়ের জোরে ডিটেটর হতে চায়। সরস্বতী পূজা আর দোলের সময় যে কদর্য উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যায় তাতে মনে হয় আমরা বন্য জাতির সগোত্র। শহরের অনেক রাস্তা নৈশ পায়খানায় পরিণত হয়েছে। বাড়ির উপরতলা থেকে কাগজে মোড়া ময়লা অকস্মাৎ পথচারীর গায়ে এসে পড়ে। বোম্বাই আর মাদ্রাজের সঙ্গে কলকাতার রাস্তা বাজার খাবারের দোকান ইত্যাদি মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যায় আমাদের পৌর নিগম কত অক্ষম, শহরবাসীর পরিচ্ছন্নতা বোধ কত অল্প। যে সব খ্যাতনামা পুরুষের মূর্তি দেশবাসী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিজ্ঞাপনের কাগজ এঁটে তার অপমান করা হয়, আমরা তাতে দৃপাত করি না; অবশেষে যখন স্টেটসম্যান কাগজে এই অনাচারের খবর ছাপা হয় তখন আমাদের হুঁশ হয়। ভদ্র গৃহস্থ ঔষধ আর প্রসাধন দ্রব্যের আধার অতি সাবধানে লেবেল নষ্ট না করে তুলে রাখে এবং জালিয়াতের প্রতিনিধি ফেরিওয়ালার কাছে তা বেশী দামে বেচে। জাল ভেজাল আর নকল দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গুরুতর অপকীর্তির তুলনায় উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলি হয়তো তুচ্ছ, কিন্তু এইসব সামান্য লক্ষণ থেকেই বোঝা যায় যে সমাজের আপাদমস্তক ব্যাধিত হয়েছে।
আমরা এখনও নিজের অক্ষমতার জন্য ইংরেজ, কেন্দ্রীয় সরকার আর অন্যপ্রদেশবাসীকে গাল দিয়ে মনে করি আমাদের কর্তব্য শেষ হয়ে গেল। ছেলেবেলায় একটি দেশপ্রেমের কবিতা পড়েছিলাম, তার কেবল প্রথম লাইনটি মনে আছে–মহাপাপী সাবুদ্দিন রাহু-গ্রাসে যেই দিন। তারপর যা আছে তার ভাবার্থ-সেই রাহুগ্রাসের পরেই ভারতের সুখসূর্য অস্তমিত হল। সাবুদ্দিন মহাপাপী হতে পারে, কিন্তু আত্মরক্ষায় অসমর্থ সংহতিহীন ভারতবাসীর পাপ কত বড় লেখক তা বলেন নি। কয়েক বৎসর আগে পর্যন্ত আমাদের রক্ষার ভার বিদেশীর হাতে ছিল, এখন আমরা ভারত সরকারের উপর নির্ভর করে নিশ্চিন্ত হয়ে আছি। আত্মরক্ষা সকলকেই শিখতে হবে, আমাদের জোরেই সরকারের জোর–এই সত্য এখনও দেশবাসীর বোধগম্য হয় নি। আমাদের যে খ্যাতি আছে তা প্রতিঘাতসমর্থ শান্ত অহিংস বীরের খ্যাতি নয়, কাপুরুষের খ্যাতি। হিন্দু অতি নিরীহ, মার খেতেই জানে, বাঙালী কাঁদতেই জানে–তর্ক করে এইসব অপবাদ দূর করা যায় না, আচরণ দ্বারা খণ্ডন করতে হবে।
ব্যক্তিগত রাজনীতিক মত যাই থাকুক, আমাদের সকল লেখকই তাদের রচনা দ্বারা দেশব্যাপী মোহ আলস্য আর দুষ্পবৃত্তি দূর করার চেষ্টা করতে পারেন। এর চেয়ে বড় ব্রত এখন আর কিছু নেই। জনকতক রাজনীতি নিয়ে বিতণ্ডা করুন, কিন্তু রাজনীতির চেয়ে মনুষ্যত্ব আর সমাজধর্ম বড়। দেশের সাহিত্যিকরা সামাজিক কর্তব্য-বুদ্ধি জাগরিত করবার চেষ্টা করুন। আমাদের প্রয়োজন–হ্যারিয়েট বীচার স্টো এবং দীনবন্ধু মিত্রের ন্যায় শক্তিশালী বহু লেখক–যাঁরা সামাজিক পাপের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে উত্তেজিত করতে পারবেন।.দু-তিন বৎসর পূর্বে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ছোট প্রবন্ধে বিলাসী বাঙালীকে কিছু কড়া কথা শুনিয়েছিলেন। মনে হয় প্রমথনাথ বিশীরও এই ধরনের লেখা পড়েছি। সম্প্রতি কবিশেখর কালিদাস রায় বর্তমান অবিনয় অসংযম আর অসামাজিকতা সম্বন্ধে একটি সার্থক প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধটি প্রধানত ছাত্র আর অল্পবয়স্কের উদ্দেশে লেখা, কিন্তু তার মৃদু বেত্রাঘাত আবালবৃদ্ধবনিতা আমাদের সকলেরই পিঠে পড়েছে।