অশ্লীল ও অনিষ্টকর

অশ্লীল ও অনিষ্টকর (১৮৮০/১৯৫৮)

আমরা সিনেমার কবলে পড়েছি। শহরের দেওয়াল অভিনেত্রীদের ছবিতে ছেয়ে গেছে, সমস্ত খবরের কাগজে সিনেমার বড় বড় বিজ্ঞাপন আর বিবরণ ছাপা হচ্ছে। মোটা মোটা মাসিক পত্রিকায় বিখ্যাত লেখকদের গল্পের ফাঁকে ফাঁকে সিনেমা-সুন্দরীদের ছবি গিজগিজ করছে। পূজার মণ্ডপে হিন্দী ফিল্ম সংগীত নিনাদিত হচ্ছে। তারকাদের লীলাভূমি বোম্বাই এখন সিনেমাক্রান্ত ছেলেমেয়ের মক্কা-বারাণসী।,

সম্প্রতি আমাদের হুঁশ হয়েছে সিনেমা শুধু চিত্ত-বিনোদন করে না, অনেক ক্ষেত্রে চিত্তবিক্ষোভও করে। আপত্তিজনক ছবি আর বিজ্ঞাপন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। পুলিসের কর্তারা নাকি বলেছেন তাদের হাত-পা বাঁধা, সেনসর বোর্ড যা পাস করেন তার উপর কথা চলে না। শুধু এদেশে নয়, বিলাতেও অশ্লীল ছবির বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছে। গত নভেম্বরের World Digest পত্রিকায় Sidney Moseleyর একটি প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে–

By film, by television, by picture in the Press, we stir sexual emotions which are already astir in the normal human being. Do you wonder then, that some men, unable to resist the effect of the glamorous presentations of sex which are continually thrust before them, go berserk and that all sorts of tragedies result? When you tempt men with drink or doxies the result is inevitable.

এর চাইতে কড়া সমালোচনা বোধ হয় এদেশে কেউ করেন নি। পাশ্চাত্ত্য দেশে কি রকম ছবি দেখানো হয় বা বিজ্ঞাপিত হয় তা ঠিক জানি না, তবে তার যেসব পোস্টার এখানে দেখা যায়, তা থেকে অনুমান করতে পারি যে ভারতীয় ছবির তুলনায় তা ঢের বেশী প্রগতিশীল। এদেশের লোকমত এখনও পাশ্চাত্তের মতন উদার আর নির্লজ্জ হয় নি। আমাদের আদর্শ কি হওয়া উচিত তাও স্থির করা সহজ নয়, কারণ অশ্লীলতার কোনও বহুসম্মত মানদণ্ড নেই। লোকমত কালে কালে বদলায়, দেশে দেশেও বিভিন্ন। স্ত্রী পুরুষ অল্পবয়স্ক আর পূর্ণবয়স্কের পক্ষে কি অবদ্য বা অনবদ্য তারও বিচার এক পদ্ধতিতে করা যায় না।

প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে কিছু অশ্লীলতা আছে। তার দোষ ক্ষালনের জন্য Horace Heyman Wilson বহুকাল পূর্বে লিখেছেন

These men wrote for men only; they never think of a woman as a reader. What is natural, cannot be vicious; what everyone knows, surely everyone may express; and that mind which is only safe in ignorance or which is only defended by decorum, possesses but a very feeble and impotent security.

অর্থাৎ যে বিষয়ের আলোচনা নারীর পক্ষে অশোভন, তা পুরুষের পক্ষে বিহিত হতে পারে। যা স্বাভাবিক, তা মন্দ হতে পারে না। যা সকলেই জানে, তা সকলেই প্রকাশ করতে পারে। যে মনকে অজ্ঞতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়, সে মন অত্যন্ত দুর্বল, তার আত্মরক্ষার শক্তি নেই।

ভক্ত বৈষ্ণবের দৃষ্টিতে গীতগোবিন্দ উপাদেয় গ্রন্থ, কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র প্রভৃতি অনেক মনীষী তার বিলাস বর্ণনায় কুরুচি পেয়েছেন। ভারতচন্দ্রের রচনায় এবং প্রাচীন বাঙলা কাব্যে যে আদিরস আছে, তা আধুনিক শিক্ষিত পাঠকের দৃষ্টিতে অশ্লীল, কিন্তু সেকালে কেউ তার দোষ ধরত না। পাঁচালি তরজা কবির লড়াই প্রভৃতির অশ্লীলতা ইতর ভদ্র সকলে উপভোগ করত। প্রাচীন পাশ্চাত্ত্য লেখকদের অনেকে নিরঙ্কুশ ছিলেন। শেক্সপীয়রের Venus and Adonisএর তুলনায় কালিদাস জয়দেব ভারতচন্দ্র প্রভৃতির আদিরসাত্মক রচনা যেন শিশুপাঠ্য। Don Quixote গ্রন্থে একটি সরাইএর বর্ণনায় যে কুৎসিত বীভৎসতা আছে তা প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায় না।

বিলাতে ভিক্টোরীয় যুগের ভদ্ৰশ্রেণী কিছু prude বা শুচিবায়ুগ্রস্ত ছিলেন, সাহিত্যে আর প্রকাশ্য সামাজিক আচরণে তার প্রভাব পড়েছিল। ইংরেজের শিষ্য বাঙালী লেখকেরা সেই ভিক্টোরীয় শুচিতা আদর্শরূপে মেনে নিয়েছিলেন। আধুনিক ইংরেজী সাহিত্য থেকে লজ্জা প্রায় অন্তর্হিত হয়েছে, বাঙলা সাহিত্যও কিছু অসংবৃত হয়েছে, কিন্তু ইংরেজীর তুলনায় পিছিয়ে আছে। খ্যাতনামা জনপ্রিয় ইংরেজ লেখকদের রচিত লোকসাহিত্যে এমন বর্ণনা দেখা যায়, যা আধুনিক বাঙলা গ্রন্থে থাকলে লেখক আর প্রকাশককে আদালতে দণ্ড পেতে হবে।

উপরে উইলসনের যে অভিমত দিয়েছি তা যুক্তিসম্মত হলেও সকল সমাজে গ্রহণীয় হবার সম্ভাবনা নেই। অশ্লীলতার মোটামুটি লক্ষণ–যা কামের উদ্দীপক অথবা উদ্দীপক না হলেও যা প্রচলিত রুচিতে কুৎসিত বা অশালীন গণ্য হয়। সামাজিক প্রথার সঙ্গে শালীনতার নিবিড় সম্বন্ধ আছে। ভিক্টোরীয় যুগে ভদ্র নারীর decollete সজ্জা (অর্ধমুক্ত বক্ষ) ফ্যাশনসম্মত ছিল (এখনও আছে) কিন্তু অনাবৃত ankle বা পায়ের গোছ, অশ্লীল গণ্য হত এবং পুরুষের লুব্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করত। এখন ankle প্রদর্শন রুচিসম্মত হয়েছে, পুরুষের লোভও প্রায় লোপ পেয়েছে। আমাদের দেশে নারীচরণের নিম্নভাগ কোনও কালেই কামোদ্দীপক গণ্য হয় নি। প্রাচীন ভারতীয় কবিরা পুরুষের দেহসৌষ্ঠব বর্ণনায় যেমন ব্যুঢ়োরস্ক বৃষস্কন্ধ শালপ্রাংশু মহাভুজ লিখেছেন তেমনি সুন্দরীর রূপ বর্ণনায় পীনপয়োধরা ক্ষীণমধ্যা নিবিড়নিতম্ব করভোরু প্রভৃতি বিশেষণ দিয়েছেন। দেবীস্তোত্রেও এই সব লক্ষণ বর্জিত হয় নি। What is natural cannot be vicious-Wilsonএর সিদ্ধান্ত আমাদের প্রাচীন কবিরা বিলক্ষণ মানতেন। কিন্তু কালক্রমে এদেশে রুচির পরিবর্তন হয়েছে, নারীর রূপবর্ণনা এখন প্রাচীন রীতিতে করলে চলে না, একটু রেখে ঢেকে সংবৃতভাবে করতে হয়।

অনাত্মীয় পুরুষকে ভদ্র নারীর মুখ দেখানো নিরাপদ নয়, অর্থাৎ তা। অশ্লীল–এই ধারণা থেকে ঘোমটা বোরখা অবরোধ অসূর্যম্পশ্যতা ইত্যাদির উদ্ভব হয়েছে, কিন্তু তাতে অভীষ্ট ফল লাভ হয় নি। লোকে বহুকাল থেকে যা অনাবৃত দেখে তার সম্বন্ধে দুষ্ট বা morbid কৌতূহল হয় না, যা আবৃত তার প্রতিই আকৃষ্ট হয়। ৬০। ৭০ বৎসর আগে অতি অল্প বাঙালী মেয়ে স্কুল-কলেজে যেত। তাদের সম্বন্ধে অল্পবয়স্ক পুরুষদের দুষ্ট কৌতূহল ছিল। কিশোরী আর যুবতী নূতন ধরনে শাড়ি পরে জুতো পায়ে দিয়ে হাতে বই নিয়ে খুটখুট করে চলেছে–এই অভিনব দৃশ্যে অনেকের চিত্তবিকার হত, সেজন্য মেয়েদের পায়ে হেঁটে যাওয়া নিরাপদ গণ্য হত না। এখনকার পুরুষেরা পথচারিণীদের সহজভাবে দেখতে অভ্যস্ত হয়েছে। কিন্তু নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ সর্বকালে সর্বদেশেই আছে, তাই মাঝে মাঝে মেয়েদের অপমান সইতে হয়। শিস, অশ্লীল গান বা ঠাট্টা, অঙ্গভঙ্গী ইত্যাদি ধর্ষণেরই অনুকল্প।

অনিষ্টকর না হলেও অনেক বিষয় শিষ্ট রুচির বিরোধী বা কুৎসিত গণ্য হতে পারে। ভাতার শব্দ ভর্তার অপভ্রংশ মাত্র, অর্থে গৌরব আছে, কামগন্ধ নেই। তথাপি শিষ্টজনের রুচিতে অশ্লীল। এই রকম অনেক শব্দ আছে, যার সংস্কৃত রূপ বা ডাক্তারী নাম শিষ্ট কিন্তু বাঙলা গ্রাম্য রূপ অশ্লীল গণ্য হয়। অনেক সময় অল্পবয়স্করা (এবং অনেক বৃদ্ধও) নিজেদের মধ্যে অশ্লীল আলাপ করে। বোধ হয় তাতে তারা নিষেধ লঙ্ঘনের আনন্দ পায়। যারা এরকম করে, তাদের দুশ্চরিত্র মনে করার কারণ নেই। মাতা ভগিনী কন্যা সম্পর্কিত কুৎসিত গালি যাদের মধ্যে চলিত আছে তারা অসভ্য হলেও দুবৃত্ত না হতে পারে। অশ্লীল বিষয়ের প্রভাবও সকলের উপর সমান নয়। এমন লোক আছে যারা সুন্দরী নারীর চিত্র বা প্রতিমূর্তি দেখলেই বিকারগ্রস্ত হয়। আবার এমন লোকও আছে যারা অত্যন্ত অশ্লীল দৃশ্য দেখে বা বর্ণনা শুনেও নির্বিকার থাকে।

সামাজিক সংস্কার অনুসারে অতি সামান্য ইতরবিশেষে শ্লীল বিষয়ও অশ্লীল হয়ে পড়ে। কোথায় পড়েছি মনে নেই–এক পাশ্চাত্ত্য চিত্রকর একটি নগ্ন স্ত্রীমূর্তির sketch এঁকে তার বন্ধুকে দেখান। বন্ধু বললেন, অতি অশ্লীল। চিত্রকর বললেন, তুমি কিছুই বোঝ না, অশ্লীল কাকে বলে এই দেখ। এই বলে চিত্রকর মূর্তির পায়ে জুতো এঁকে দিলেন। বন্ধু তখন স্বীকার করলেন, চিত্রটি আগে নির্দোষ ছিল, এখন বাস্তবিকই অশ্লীল হয়েছে।

অনিষ্টকর না হলেও অনেক বিষয় কেন কুৎসিত গণ্য হয় তার ব্যাখ্যান নৃবিজ্ঞানী (anthropologist) আর মনোবিজ্ঞানীরা করবেন। আমাদের শুধু মেনে নিতে হবে যে নানারকম taboo সব সমাজেই আছে এবং তা লঙ্ঘন করা কঠিন, যদিও কালক্রমে তার রূপান্তর হয়। রবীন্দ্রনাথ যখন শান্তিনিকেতনে মেয়েদের অভিনয় আর নাচের প্রবর্তন করেন তখন তাকে বিস্তর গঞ্জনা সইতে হয়েছিল। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে রুচি আর শালীনতার ধারণাও বদলায়। ২৫। ৩০ বৎসর আগে কেউ ভাবতেও পারত না যে উচ্চশ্রেণীর বাঙালী কুলললনা বক্ষ আর পৃষ্ঠ অর্ধমুক্ত আর কক্ষ প্রকটিত করে পরপুরুষের বাহুলগ্না হয়ে বল নাচে মেতেছে। ভদ্র পুরুষের নটবৃত্তিতে আমরা বহুকাল থেকে অভ্যস্ত। কিন্তু ভদ্র নারী সিনেমায় নেমে বহুজনপ্রিয়া রূপবিলাসিনী হবে এবং প্রচুর প্রতিপত্তি পাবে–এও ২৫/৩০ বৎসর আগে কল্পনাতীত ছিল। অচির ভবিষ্যতে বাঙালীর হোটেলে বা রেস্তোরাঁতে হয়তো cabaretএর ব্যবস্থা হবে এবং তাতে মেয়েরা নাচবে।

প্রায় দু শ বৎসরের ব্রিটিশ রাজত্বে আমাদের সমাজে ধীরে ধীরে বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে। স্বাধীনতা লাভের পর যেন পরিবর্তনের প্লাবন এসেছে, দেশের লোক অত্যন্ত আগ্রহে বিলাতী আচার-ব্যবহারের অনুকরণ করছে। ভবিষ্যৎ বাঙালী তথা ভারতীয় সমাজ পাশ্চাত্ত্য সমাজের নকলেই গড়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের প্রগতিতে অর্থাৎ সাহেবীভবনে যে বিলম্ব হচ্ছে, তার প্রধান কারণ দারিদ্র, প্রাচীন সংস্কার নয়। যারা ধনী তাদের অনেকে বহুদিন পূর্বেই ইঙ্গবঙ্গ সমাজ স্থাপন করেছেন। জাপানে যা হয়েছে ভারতেও তা না হবে কেন? পাশ্চাত্ত্য বীর্য উদ্যম কর্মনিষ্ঠা প্রভৃতি সদ্গুণ না পেলেও ক্ষতি নেই, পাশ্চাত্ত্য রীতি নীতি ফ্যাশন ব্যসন যথাসাধ্য আত্মসাৎ করতেই হবে, তাই আমাদের পরম পুরুষার্থ।

মহা বাধা আমাদের দারিদ্র। টাকার জোরে এবং শখের প্রাবল্যে অল্প কয়েকজন ভাগ্যবান শীঘ্রই পূর্ণমাত্রায় সাহেব হয়ে যেতে পারবে, কিন্তু মধ্যবিত্ত আর অল্পবিত্ত সকলকেই লোভের মাত্রা কমিয়ে নিজের সামর্থ্যের উপযোগী আধা বা সিকি-সাহেবী সমাজে তুষ্ট হতে হবে। আমাদের রুচি আর শালীনতাও এই মধ্যাল্পবিত্ত সমাজের বশে নিরূপিত হবে।

এদেশের যাঁরা নিয়ন্তা, অর্থাৎ বিধানসভা ইত্যাদির সদস্য, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত বা অল্পবিত্ত। অশ্লীলতা দমন এঁদেরই হাতে। এঁদের দৃষ্টিভঙ্গী পূর্ণমাত্রায় পাশ্চাত্ত্যভাবাপন্ন নয়, ইওরোপ আমেরিকার রুচি এঁরা অন্ধভাবে মেনে নিতে পারবেন না। অতএব আশা করা যেতে পারে, অধিকাংশ শিক্ষিত ভারতবাসীর রুচি অনুসারেই এঁরা শ্লীলতা বা অশ্লীলতা, নিরাপত্তা বা অনিষ্টকারিতা বিচার করবেন এবং তদনুসারে সিনেমার ছবি আর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রিত করবেন।

কোনও সাহিত্যিকের রচনা ভাল কি মন্দ তার বিচার সমালোচকরা ধীরে সুস্থে করেন। তাঁদের মানদণ্ড অনির্দেশ্য, সকলে তা প্রয়োগ করতে পারে না। যদি বিদগ্ধতার খ্যাতি থাকে তবে পাঠক-সাধারণ তাদের অভিমতই মেনে নেয়। মত প্রকাশে দেরি হলেও ক্ষতি হয় না। কিন্তু সিনেমা-ছবির নির্বাচন অবিলম্বে করতে হয়, সেনসর-বোর্ড বেশী সময় নিতে পারেন না। তারা কিরকম মানদণ্ড অনুসারে শ্লীলতা-অশ্লীলতা বিচার করবেন?

সেনসর-বোর্ডের সদস্যদের রুচি যদি মোটামুটি একরকম হয় তবে বিচার কঠিন হবে মনে করি না। তাদের অতিমাত্রায় উদার না হওয়াই উচিত। যদি তারা মনে করেন, কোনও ছবি দেখে এক শ দর্শকের মধ্যে দশজনের চিত্তবিকার হতে পারে তবে সে ছবি মঞ্জুর করবেন না। মনোবিজ্ঞানীরা যাকে psychosomatic effect বলেন, অর্থাৎ মানসিক উত্তেজনার ফলে দৈহিক বিকার (পূর্বে উদ্ধৃত Sydney Moseleyর উক্তিতে তারই ইঙ্গিত আছে)–তার সম্ভাবনা থাকলে সে ছবি অবশ্যই বর্জন করবেন। বিদেশে সে ছবি দেখানো হয় কিনা, ভারতের অন্য প্রদেশের সেনসর-বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে কিনা–তা ভাববার দরকার নেই। যা তাদের নিজের বিচারে অবাঞ্ছিত, এখানকার সেনসর-বোর্ড তা অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন।

সম্প্রতি শ্ৰীযুক্ত চপলাকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, পরিবারের সকলে যে ছবি একসঙ্গে দেখতে পারে শুধু সেই ছবিই মঞ্জুর করা উচিত, প্রাপ্তবয়স্ক আর অল্পবয়স্কর জন্য ভেদ রাখা অন্যায়। এই প্রস্তাব অতি সমীচীন। কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য–এই কথা বিজ্ঞাপনে লিখলেই অল্পবয়স্কদের লোভ বাড়ানো হয়।

আর্টের অসংখ্য উপাদানের মধ্যে কিঞ্চিৎ কামকলার প্রয়োজন থাকতে পারে। সিনেমা আর সাহিত্যে তার প্রয়োগ যদি সংযত করা হয় তবে আর্ট আর সংস্কৃতি চর্চার কিছুমাত্র ক্ষতি হবে না।

[এই প্রবন্ধের সাত বৎসর আগে (১৯৫১) একই কথা লিখেছেন পরশুরাম-রামধনের বৈরাগ্য গল্পে। তাতে বোধহয় আধুনিক অশ্লীল বাঙলা সাহিত্যের ইন্ধন ছিল! –স:।]