২১. হিউম

২১. হিউম

…তাহলে তা ছুঁড়ে ফেলে দাও আগুনে…

মাথা নিচু করে এক দৃষ্টিতে টেবিলটার দিকে তাকিয়ে রইলেন অ্যালবার্টো। শেষে মাথা ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন তিনি।

আকাশে মেঘ জমেছে, সোফি বলল।

হ্যাঁ, বেশ গুমোট পড়েছে।

তা, আপনি কি বার্কলে সম্পর্কে কিছু বলবেন এবার?

তিনিই হলেন তিন ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকদের মধ্যে পরের জন। কিন্তু তিনি যেহেতু অনেক দিক থেকেই আলাদা আমরা তাই প্রথমে নজর দেবো ডেভিড হিউম-এর (David Hume) দিকে, যার জন্ম ১৭১১-তে, মৃত্যু ১৭৭৬-এ। অভিজ্ঞতাবাদীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। মহান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টকে তাঁর দর্শনের পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রেও হিউমের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

কিন্তু আমি যে আগে বার্কলের দর্শনের কথা শুনতে চাইছি সেটার কি কোনো গুরুত্বই নেই আপনার কাছে?

সেটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা শহরের কাছে বড় হয়েছিলেন হিউম। পারিবারিকভাবে আশা করা হয়েছিল তিনি আইনজীবী হবেন, কিন্তু দর্শন আর শিক্ষা ছাড়া অন্য সব কিছুর ব্যাপারেই এক অদম্য অরুচি বোধ করেছিলেন তিনি। ফরাসী চিন্তাবিদ ভল্টেয়ার এবং রুশোর মতো আলোকপ্রাপ্তি (Enlightenment) যুগের মানুষ ছিলেন তিনি; আর, জীবনের শেষ ভাগে এডিনবরায় ফিরে থিতু হওয়ার আগে সারা ইউরোপ জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। তাঁর প্রধান কাজ এ ট্রীটি অভূ হিউম্যান নেচার যখন প্রকাশিত হয় হিউমের বয়স তখন আঠাশ, যদিও তিনি দাবি করেছেন যে বইটির আইডিয়া তিনি পেয়েছিলেন মাত্র পনেরো বছর বয়েসে।

আমার তো দেখছি নষ্ট করার মতো সময়-ই নেই।

তুমি তো এরিমধ্যে শুরুই করে দিয়েছ।

কিন্তু আমাকে যদি আমার নিজের দর্শন দাঁড় করাতে হয় তাহলে তা হবে এ পর্যন্ত আমি যা কিছু শুনেছি সে-সব থেকে একেবারেই ভিন্ন কিছু।

সে-রকম বিশেষ কিছু বাদ পড়েছে কি?

এই তো, প্রথমেই ধরুন, এ-পর্যন্ত আপনি যত দার্শনিকের কথা বলেছেন তারা সবাই পুরুষ আর পুরুষরা যেন সবসময় তাদের নিজেদের জগতে বাস করে। আমি বরং বাস্তব জগতের ব্যাপারে আরো বেশি আগ্রহী, যেখানে ফুল, পাখি, জীব-জন্তু আর শিশু জন্মায়, বড় হয়। আপনার দার্শনিকেরা সবসময় পুরুষ আর মানুষ। নিয়ে ভাবে আর এবার পাওয়া গেল মানুষের প্রকৃতি বিষয়ক আরেকটা প্রবন্ধ। ভাবখানা যেন মানুষ মাঝ বয়েসী। মানে, আমি বলতে চাইছি, জীবন তো শুরু হয় গর্ভাবস্থা আর জন্ম দিয়ে, অথচ এ-পর্যন্ত ডায়াপার বা কান্নাকাটি করা বাচ্চা কাচ্চা সম্পর্কে কিছুই শুনলাম না। তাছাড়া, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এ-সব বিষয়েও প্রায়ই কিছুই না।

ঠিকই বলেছ তুমি। কিন্তু হিউম এমন একজন দার্শনিক যাঁর চিন্তাধারা একেবারে অন্যরকম। দৈনন্দিন জগৎ থেকে তিনি তার যাত্রা শুরু করেছেন, যা খুব কম দার্শনিকই করেছেন। আমার তো এমন-ও মনে হয় যে জগতের নতুন নাগরিকেরা অর্থাৎ শিশুরা যেভাবে জীবনটার মুখোমুখি হয় সে-ব্যাপারে হিউমের একটা গভীর আকর্ষণ ছিল।

তাহলে তো তার কথা শুনতে হয়।

একজন অভিজ্ঞতাবাদী হিসেবে হিউম এই সব পুরুষ দার্শনিকের আবিষ্কার করা ধোয়াটে ধারণা আর চিন্তার বুনন পরিষ্কার করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। মধ্য যুগ আর সপ্তদশ শতকের বুদ্ধিবাদী দর্শন থেকেই লিখিত আর কথ্যরূপে তূপাকার হয়ে জমে উঠেছিল নানান পুরনো ধ্বংসাবশেষ। জগতের ব্যাপারে আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অভিজ্ঞতার কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব রাখেন হিউম। তিনি বললেন, কোনো দার্শনিকই কখনো আমাদেরকে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার পেছনে নিয়ে যেতে পারবেন না, বা এমন কোনো আচরণবিধি প্রদান করতে পারবেন না যা আমরা দৈনন্দিন জীবনের অনুচিন্তন থেকে পাই না।

এ-পর্যন্ত তো বেশ আশাব্যঞ্জকই মনে হচ্ছে। দুএকটা উদাহরণ দিতে পারেন?

হিউমের সময়ে লোকে দেবদূত অর্থাৎ ডানাঅলা মানুষে বিশ্বাস করত খুব। তুমি কি কখনো এ-রকম কোনো প্রাণী দেখেছ, সোফি?

না।

কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই মানবদেহ দেখেছ?

 এটা কোনো প্রশ্ন হলো?

তাছাড়া, তুমি ডানাও দেখেছ?

আলবাৎ, তবে মানুষের শরীরে নয়।

কাজেই, হিউমের মত অনুযায়ী দেবদূত একটি যৌগিক ভাব (complex idea)। এটা এমন দুটো অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরি যারা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু তারপরেও এটা মানুষের কল্পনার সঙ্গে জড়িত। অন্য কথায় বলতে গেলে, এটা একটা মিথ্যে ধারণা যা কিনা অবিলম্বে পরিত্যাজ্য। আমাদের বই-এর সংগ্রহের মতো আমাদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা আর ধ্যান-ধারণাও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হবে। আমাদেরকে। কারণ হিউমের ভাষায় কোনো বই হাতে নিয়ে আমরা চলে প্রশ্ন করি। …এর মধ্যে কি পরিমাণ বা সংখ্যা বিষয়ক কোনো বিমূর্ত যুক্তিবিন্যাস (abstract reasoning) আছে? না। এর মধ্যে কি বাস্তবাবস্থা বা অস্তিত্ব বিষয়ক কোনো পরীক্ষামূলক যুক্তিবিন্যাস রয়েছে? না। তাহলে তা ছুঁড়ে ফেলে দাও আগুনে, কারণ এতে কূটতর্ক (sophistry) আর বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই থাকতে পারে না।

 এটা তো শুরু দণ্ড হয়ে গেল।

তারপরেও কিন্তু জগষ্টা টিকে আছে। অন্য যে-কোনো সময়ের চেয়ে তরতাজা আর স্পষ্টভাবে। হিউম জানতে চেয়েছিলেন একটি শিশু জগৎকে কী চোখে দেখে, জগৎ সম্পর্কে কী তার অভিজ্ঞতা। একটু আগে তুমি বললে না যে, যে-সব দার্শনিকের কথা তুমি শুনেছ তারা সবাই তাদের নিজস্ব জগতে বাস করেছেন, অথচ তুমি বাস্তব জগৎ সম্পর্কেই বেশি আগ্রহী?

হ্যাঁ, এ-রকমই কিছু একটা। হিউম-ও হয়ত একই কথা বলতেন। যাই হোক, চলো তার চিন্তার সূত্রটি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করা যাক।

আমি আপনার সঙ্গে আছি।

গোড়াতেই হিউম এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে মানুষ ইন্দ্রিয় সংবেদন (impression) আর ভাব নামক দুটো ভিন্ন প্রত্যক্ষণ-এর (perception) অধিকারী। ইন্দ্রিয় সংবেদন বলতে তিনি বাহ্যিক বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সংবেদনের কথা বুঝিয়েছিলেন। আর ভাব বলতে বুঝিয়েছেন এ-ধরনের ইন্দ্রিয় সংবেদনের অনুস্মৃতিকে।

একটা উদাহরণ দেবেন?

গরম চুলায় নিজের গা পুড়লে তুমি একটা তাৎক্ষণিক ইন্দ্রিয় সংবেদন লাভ করো। এরপরে কোনো সময় নিজের শরীর পুড়িয়ে ফেলার সেই ঘটনাটার কথা তুমি হয়ত মনে করলে। তো, স্মৃতি সেই ইন্দ্রিয় সংবেদন-এর যতটুকু ফিরিয়ে আনতে পারল সে-টুকুকেই হিউম বলছেন একটা ভাব। তফাক্টা হচ্ছে, ইন্দ্রিয় সংবেদন সেই ইন্দ্রিয় সংবেদনের অনুস্মৃতির চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী আর জীবন্ত। তুমি এ-রকমও বলতে পারো যে সেই সংবেদনটা হচ্ছে মৌলিক বা আসল আর ভাবটি বা অনুস্মৃতিটি নেহাতই এক আবছা অনুকরণ। ইন্দ্রিয় সংবেদনটিই মনের ভেতর সংরক্ষিত ভাবটির প্রত্যক্ষ কারণ।

এ-পর্যন্ত আপনার কথা বুঝতে অসুবিধে হয়নি।

হিউম এরপর জোর দিয়ে বলছেন যে ইন্দ্রিয় সংবেদন আর ভাব এই দুটোই সরল হতে পারে আবার যৌগিক-ও হতে পারে। লক-এর প্রসঙ্গে আপেলের কথা বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই। একটা আপেল সম্পর্কিত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যৌগিক ইন্দ্রিয় সংবেদন-এর এক মোক্ষম উদাহরণ।

বাধা দেয়ার জন্যে দুঃখিত, কিন্তু এ-সব কি নিতান্তই জরুরি?

জরুরি? কী যে বলো! তবে দার্শনিকেরা যে মাঝে মাঝে কিছু ছদ্ম সমস্যা নিয়ে সময় নষ্ট করেন না তা নয়, কিন্তু তাই বলে একটা যুক্তি দাঁড় করানোর ব্যাপারে হাল ছাড়াটা তোমার মোটেই উচিত হবে না। হিউম সম্ভবত দেকার্তের সঙ্গে এই বিষয়ে একমত প্রকাশ করতেন যে, কোনো চিন্তন প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে তা একেবারে গোড়া থেকে শুরু করা ভাল।

ঠিক আছে, ঠিক আছে।

 হিউমের বক্তব্য হলো, মাঝে মাঝে আমরা এমন কিছু যৌগিক ভাব পোষণ করি বাস্তব জগতে যে-সবের অনুরূপ কোনো বস্তু নেই। দেবদূতের ব্যাপারটা তো বললাম। তার আগে বলেছি ক্ৰকোফ্যান্ট-এর কথা। আরেকটা উদাহরণ হলো পেগাসাস, ডানাঅলা ঘোড়া। এই তিন ক্ষেত্রেই একটা বিষয় আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের মন নিজে নিজেই কাটা আর জোড়া দেয়ার একটা চমৎকার কাজ করেছে। এসবের প্রত্যেকটা উদাহরণই কোনো এক সময় প্রত্যক্ষ করা হয়েছিল এবং সেগুলো মনের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেছিল সত্যিকারের একটি ইন্দ্রিয় সংবেদন হিসেবে। মন আসলে কোনো কিছু আবিষ্কার করেনি। মন নানান জিনিস এক সঙ্গে জুড়ে দিয়ে মিথ্যে ভাব তৈরি করে।

হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। বিষয়টা আসলেইজরুরি।

 বেশ। তো, প্রতিটি ভাব হিউম আলাদা আলাদা করে খতিয়ে দেখতে চেয়েছেন, বাস্তবের সঙ্গে মেলে না এমন কোনো উপায়ে সেটা তৈরি হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। তাঁর প্রশ্ন হচ্ছে: কোন ইন্দ্রিয় সংবেদন থেকে এই ভাবটি এসেছে? প্রথমে তাকে খুঁজে বার করতে হয়েছে কোন কোন একক ভাব থেকে একটি যৌগিক ভাব সৃষ্টি হয়েছে সেটা। এটা তাকে আমাদের ভাবগুলোকে বিশ্লেষণ করার একটা সমালোচনামূলক পদ্ধতি দান করেছে এবং তাতে করে তিনি আমাদের চিন্তা-ভাবনা আর ধ্যান-ধারণাগুলোকে সাজাতে গোছাতে পেরেছেন।

দুএকটা উদাহরণ দেয়া যায়?

 হিউম-এর সময়ে অনেকেই স্বর্গ বা নতুন জেরুজালেম সম্পর্কে খুব স্পষ্ট একটা ধারণার অধিকারী ছিল। তোমার বোধকরি মনে আছে যে দেকার্ত কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট ভাবগুলো নিজেরাই এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে যে বাস্তবে অস্তিত্ব রয়েছ এমন জিনিসের সঙ্গে সেগুলোর মিল রয়েছে।

আগেই তো বলেছি আমি অতোটা ভুললামন নই।

তো, আমরা খুব শিগগিরই উপলব্ধি করি যে স্বর্গ সম্পর্কিত আমাদের ধারণা অসংখ্য উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি। মুক্তোর মতো গেট, সোনার রাস্তা, শত সহস্র দেবদূত আর এ-রকম অগুনতি জিনিস দিয়ে স্বর্গ তৈরি। এরপরেও কিন্তু আমরা সবগুলোকে একক উপাদানে ভেঙে ফেলতে পারিনি। কারণ, মুক্তোর মতো গেট, সোনার রাস্তা, দেবদূত, ইত্যাদি সবই নিজেরাই যৌগিক ভাব। যখন আমরা উপলব্ধি করব যে স্বর্গ সম্পর্কিত আমাদের ধারণা মুক্তা, গেট, রাস্তা, সোনা সাদা পোষাক পরা দেহমূর্তি আর ডানা-র মতো একক ভাব দিয়ে গড়া, কেবল তখনই আমরা নিজেদেরকে জিগ্যেস করতে পারব সত্যিই কখনো আমরা এ-ধরনের সরল ইন্দ্রিয় সংবেদন লাভ করেছিলাম কিনা।

তা করেছিলাম। কিন্তু আমরা এই সমস্ত সরল ইন্দ্রিয় সংবেদন-কে কোট আর জোড়া লাগিয়ে একটা ভাব তৈরি করে নিয়েছি।

হ্যাঁ, ঠিক তাই করেছি আমরা। কারণ কোনো কিছু মনের চোখে দেখার সময় আমরা মানুষেরা যে-জিনিসটি করি তা হলো এই কাটা আর জোড়া লাগানে। কিন্তু হিউম যে-বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছেন তা হলো, আমাদের ভাবগুলোতে আমরা যে-সব উপাদান এনে জড়ো করি তার সবই কোনো একসময় সরল ইন্দ্রিয় সংবেদন হিসেবে মনের মধ্যে ঢুকেছিল। যে-লোক কোনোদিন সোনা দেখেনি সে কখনো সোনার তৈরি রাস্তার কথা মনের চোখে দেখতে পারবে না।

বড্ড চালাক লোক ছিলেন হিউম। তা, ঈশ্বর সম্পর্কে দেকার্তের সেই স্বচ্ছ আর স্পষ্ট ভাবটার কী হবে?

সে-ব্যাপারেও একটা উত্তর দিয়েছেন হিউম। ধরা যাক, ঈশ্বরকে আমরা যারপরনাই রকমের বুদ্ধিমান, জ্ঞানী আর ভালো সত্তা হিসেবে ভাবছি। এতে করে আমরা এমন একটা যৌগিক ভাব পাচ্ছি যা তৈরি হয়েছে একটা যারপরনাই রকমের বুদ্ধিমান, যারপরনাই রকমের জ্ঞানী আর যারপরনাই রকমের ভালো কিছু দিয়ে। বুদ্ধি, প্রজ্ঞা এবং ভালোত্ব কী তা যদি আমরা না জানতাম তাহলে কস্মিনকালেও ঈশ্বর সম্পর্কে এ-রকম একটা ধারণা আমাদের হোতো না। আবার ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা হয়ত এ-রকম যে তিনি একজন কঠোর কিন্তু ন্যায়পরায়ণ পিতা; তার মানে, সেটা কঠোরতা, ন্যায়পরায়ণতা আর পিতা দিয়ে তৈরি একটা ধারণা। ধর্মের অনেক সমালোচক হিউমের এই কথার সূত্র ধরে দাবি করে আসছেন যে ঈশ্বর সম্বন্ধে এ-ধরনের ধারণা ছোটবেলায় আমরা আমাদের নিজেদের বাবাকে যেভাবে পেয়েছি তার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। বলা হয়েছে যে, একজন পিতা সম্পর্কিত ধারণাই স্বর্গীয় পিতা-র ভাবের জন্ম দিয়েছে।

কথাটা হয়ত সত্যি। কিন্তু এই ব্যাপারটা আমি কখনোই মেনে নিইনি যে ঈশ্বরকে পুরুষই হতে হবে। মা মাঝে মাঝে গডকে গডাইভা (Godiva) বলে, ব্যাপারটার মধ্যে নেহাতই একটা ভারসাম্য আনার জন্যে।

সে যাই হোক, মোদ্দা কথা হলো যে-সব চিন্তা আর ভাবের উৎসে গিয়ে অনুরূপ ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণ পাওয়া যায় না, হিউম সে-সব চিন্তা ও ভাবের বিরোধিতা করেছেন। হিউম বলেছেন তিনি চেয়েছেন এ-ধরনের যে-সব অর্থহীন বাগাড়ম্বর দীর্ঘদিন ধরে অধিবিদ্যাগত চিন্তার (metaphysical thought) রাজ্যে আধিপত্য চালিয়ে এটাকে দুর্নামের ভাগীদার করেছে তার সব বাতিল করে দিতে।

কিন্তু তারপরেও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক যৌগিক ভাব ব্যবহার করি, সেগুলো যুক্তিপূর্ণ কিনা তা ভেবে না দেখেই। এই যেমন, আমি (1) বা অহং-এর (ego) প্রশ্নটাই ধরো। এটাই ছিল দেকার্তের দর্শনের ভিত্তিমূল। এটাই ছিল এক স্বচ্ছ আর সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষণ যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল তার সমস্ত দর্শন।

আশা করি হিউম এটা অস্বীকার করার চেষ্টা করেননি যে আমিই হচ্ছি আমি। তাহলে কিন্তু বড় বাড়াবাড়ি হয়ে যেতো।

সোফি, এই কোর্স-এর মাধ্যমে তোমাকে আমি যদি মাত্র একটা জিনিস-ও শেখাতে চাই তো সেটা হলো হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া।

দুঃখিত। বলে যান।

না, তার চেয়ে বরং নিজেই হিউমের পদ্ধতিটা ব্যবহার করে চিন্তা করে দেখো তুমি তোমার অহং-কে কীভাবে প্রত্যক্ষ করো।

প্রথমে আমাকে বের করতে হবে অহং সরল না যৌগিক ভাব সেটা। তা, কী সিদ্ধান্তে আসছো তুমি?

স্বীকার করতেই হচ্ছে যে ব্যাপারটা বেশ জটিল বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। এই যেমন আমি একেবারেই স্থিরমতি নই। কোনো ব্যাপারে মনস্থির করতে বেশ সমস্যা হয় আমার। তাছাড়া, একই লোককে পছন্দ-অপছন্দ দুটোই করা সম্ভব আমার পক্ষে।

অন্য কথায় বলতে গেলে তাহলে অহং-এর ধারণা একটা যৌগিক ভাব।

ঠিক আছে। কাজেই এখন তাহলে বোধহয় আমাকে অবশ্যই এটা বের করতে হবে আমার নিজের অহং-এর সঙ্গে মিল রয়েছে এমন কোনো যৌগিক ইন্দ্রিয় সংবেদন (complex impression) আমার রয়েছে কিনা। আমার ধারণা, রয়েছে। সত্যি বলতে কী, সব সময়ই ছিল।

তাতে কি তুমি চিন্তিত?

আমি খুবই অস্থির প্রকৃতির। প্রথম কথা, আমার বয়স যখন চার ছিল তখনকার আমি আর আজকের আমি এক নয়। আমার মেজাজ-মর্জি আর আমি নিজেকে কীভাবে দেখি তা ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। হঠাৎ করেই আমার মনে হয় যে আমি এক নতুন মানুষ।

কাজেই অপরিবর্তনীয় এক অহং-এর অধিকারী হওয়ার অনুভূতিটি মিথ্যে প্রত্যক্ষণ ছাড়া কিছু নয়। অহং-এর প্রত্যক্ষণ আসলে সরল ইন্দ্রিয় সংবেদন-এর এক দীর্ঘ শৃঙ্খল আর এই সংবেদনগুলো আমরা কখনোই এক সঙ্গে লাভ করি না। হিউমের ভাষায় অহং আর কিছুই না, নানান প্রত্যক্ষণ-এর একটা বান্ডিল মাত্র, যে সব প্রত্যক্ষণ এক অচিন্তনীয় দ্রুততায় একের পর এক এসে হাজির হয়, তাছাড়া সেগুলো থাকে নিরন্তর পরিবর্তন আর গতিশীলতার মধ্যে। মন এক ধরনের থিয়েটার যেখানে অসংখ্য প্রত্যক্ষণ একের পর এক আবির্ভূত হয়; আসে, আবার আসে, পিছলে যায়, বিন্যাস আর অবস্থার এক অন্তহীন বৈচিত্র্যে মিশে যায় একে অন্যের সঙ্গে। হিউম বলতে চান, যে-সব প্রত্যক্ষণ ও অনুভূতি আসে আর যায়। সেগুলোর পেছনে বা নিচে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় থাকে না। এটা ঠিক মুভি স্ক্রীনের ওপরের ছবিগুলোর মতো। ছবিগুলো এতো তাড়াতাড়ি বদলে যায় যে আমরা ঠিক বুঝতে পারি না চলচ্চিত্রটি আসলে অসংখ্য একক ছবি দিয়ে তৈরি। আসলে ছবিগুলো জোড়া লাগানো নয়। চলচ্চিত্রটি আসলে বেশ কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।

আমি হাল ছেড়ে দিচ্ছি।

তার অর্থ কি এই যে একটি অপরিবর্তনীয় অহং থাকার ধারণাটি তুমি ত্যাগ করছ?

সে-রকমই বোধ হচ্ছে।

একটু অগে কিন্তু তুমি এর উল্টোটাই বিশ্বাস করতে। এই সঙ্গে আমার যোগ করা উচিত যে হিউম-এর এই মানব মন বিশ্লেষণ আর অপরিবর্তনীয় অহং-এর ধারণা পরিত্যাগ-এর বিষয়টি ২,৫০০ বছর আগেই পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আলোচিত হয়েছে।

কার মাধ্যমে?

বুদ্ধ। দুজন কতটা একই রকম চিন্তা করতে পারেন তা দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে প্রায়। বুদ্ধ জীবনকে দেখেছেন মানসিক আর শারীরিক প্রক্রিয়ার এক অখণ্ড পরম্পরা হিসেবে যা মানুষকে রাখে এক নিরন্তর পরিবর্তনশীল অবস্থার মধ্যে। শিশু আর বয়স্ক মানুষটি এক নয়, আজকের আমি আর গতকালকের আমি এক নই। বুদ্ধ বলছেন, এমন কিছু নেই যেটাকে আমি বলতে পারি যে এটাই আমার এবং এমন কিছু নেই, যেটা সম্পর্কে আমি বলতে পারি যে এটাই অমি। অতএব, আমি বা অপরিবর্তনীয় অহং বলতে কিছু নেই।

হ্যাঁ কথাগুলো, একেবারে হিউমের মতো।

 অপরিবর্তনীয় অহং-এর ধারণার ধারাবাহিকতায় বুদ্ধিবাদী অনেকেই এই বিষয়টি নিশ্চিত বলে ধরে নিয়েছেন যে মানুষ একটি শাশ্বত স্যার অধিকারী।

ওটাও কি একটা মিথ্যে ধারণা?

হিউম আর বুদ্ধের মত অনুযায়ী তো অবশ্যই। মৃত্যুর ঠিক আগে বুদ্ধ তাঁর অনুসারীদের কী বলেছিলেন জানো?

না, কীভাবে জানবো?

সমস্ত যৌগিক জিনিসের ভেতরেই ক্ষয় নিহিত রয়েছে। কীসে তোমাদের নিজেদের মোক্ষ বা নির্বাণ তা তোমরা নিজেরাই খুঁজে বের করে নাও অধ্যবসায়ের সঙ্গে। হিউমও ঠিক একই কথা বলতে পারতেন। কিংবা, ডেমোক্রিটাস। আর অমরত্ব বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের কোনো প্রচেষ্টাই হিউমের কাছে স্বীকৃতি পায়নি। তার অর্থ এই নয় যে তিনি এ-দুটো সম্ভাবনার কোনোটিকে নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ভাবতেন ধর্মীয় বিশ্বাস মানবীয় প্রজ্ঞা দিয়ে প্রমাণ করাটা একটা বুদ্ধিবৃত্তিক ভাঁওতাবাজি। হিউম খ্রিস্টান ছিলেন না, তাই বলে যে তিনি পাঁড় নাস্তিক ছিলেন তা-ও নয়। আমরা যাকে বলি অজ্ঞাবাদী (agnostic) তিনি ছিলেন তাই।

সেটা আবার কী?

অজ্ঞাবাদী তিনি যিনি মনে করেন যে ঈশ্বরের বা কোনো দেবতার অস্তিত্ব প্রমাণ বা অপ্রমাণ কিছুই করা যায় না। হিউম যখন মৃত্যুশয্যায় তখন তাঁর এক বন্ধু তাঁকে জিগ্যেস করেছিলেন তিনি পরকালে বিশ্বাস করেন কিনা। হিউম নাকি তাঁকে জবাবে বলেছিলেন।

আগুনের ভেতর এক টুকরো কয়লা ফেললে সেটা না-ও জ্বলতে পারে।

আচ্ছা।

উত্তরটি তার নিঃশর্ত ভোলা মানসিকতারই আদর্শ প্রকাশ। তিনি কেবল তা-ই গ্রহণ করতেন যা তাঁর ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রত্যক্ষ করতেন। অন্য সমস্ত সম্ভবনার দরজা খোলা রাখতেন। খ্রিস্টধর্ম বা অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসের কোনোটিকেই তিনি বাতিল করে দেননি। কিন্তু এর দুটোই বিশ্বাসসংক্রান্ত বিষয়, জ্ঞান বা প্রজ্ঞা সংক্রান্ত নয়। এক অর্থে তুমি বলতে পারো যে হিউমের দর্শন-ই বিশ্বাস আর জ্ঞানের মধ্যে শেষ যোগসূত্রটি ছিন্ন করে দেয়।

আপনি বলতে চান অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে এটা তিনি অস্বীকার করেননি?

তার অর্থ এই নয় যে তিনি নিজে অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করতেন। বরং তার উল্টোটাই ঠিক। আমরা আজ যাকে অতিপ্রাকৃত (supernatural) ঘটনা বলি সাধারণ মানুষের কাছে যে সে-সবের একটা বড়সড় প্রয়োজন রয়েছে এই বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ করেছেন। ব্যাপার হচ্ছে, যে-সব অলৌকিক ঘটনার কথা তুমি শোনো তার সবগুলোই কোনো না কোনো দূর স্থানে বা অনেক অনেক আগে ঘটেছে। সত্যি বলতে কী, অলৌকিক ব্যাপার-স্যাপারে হিউম যে বিশ্বাস করতেন না তার সবচেয়ে সহজ কারণ হচ্ছে সে-রকম কোনো ঘটনা তিনি ঘটতে দেখেননি। কিন্তু সেই সঙ্গে এ-কথাও ঠিক যে ওসব যে ঘটে না তা-ও তাঁর অভিজ্ঞতায় নেই।

ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করে বলতে হবে আপনাকে।

হিউমের কথা হচ্ছে, অলৌকিক ঘটনা প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম আমরা প্রত্যক্ষ করেছিবা আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে এ-কথা বলারও কোনো মানে হয় না। আমরা দেখি যে হাত থেকে ছেড়ে দিলে পাথর মাটিতে পড়ে যায়, কিন্তু যদি তা না পড়ে তখনই না ব্যাপারটি আমাদের অভিজ্ঞতার ভেতর এলো।

আমি বলব ওটা একটা অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা।

তাহলে তুমি বিশ্বাস করছ বা বলছ দুটো প্রকৃতি রয়েছে একটি প্রাকৃতিক আরেকটি অতিপ্রাকৃতিক। তুমি কি সেই পুরনো বুদ্ধিবৃত্তিক ভাঁওতাবাজির মধ্যে পড়ে যাচ্ছ না?

হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি যতবারই আমি পাথরটাকে ছেড়ে দেবো ততবারই সেটা মাটিতে পড়বে।

কেন?

এইবার কিন্তু বড় বাড়াবাড়ি করছেন আপনি।

আমি বাড়াবাড়ি করছি না, সোফি। প্রশ্ন জিগ্যেস করে একজন দার্শনিক কখনোই অন্যায় বা ভুল করেন না। সম্ভবত, হিউমের দর্শনের সবচেয়ে জটিল জায়গাতে এসে পড়েছি আমরা। আচ্ছা বলতো, কী করে তুমি এতো নিশ্চিত হলে যে পাথরটা সব সময় মাটিতে পড়বে?

ব্যাপারটা আমি এতোবার ঘটতে দেখেছি যে আমি একদম নিশ্চিত।

 হিউম হলে বলতেন তুমি একটা পাথরকে অসংখ্যবার মাটিতে পড়তে দেখেছ। কিন্তু তুমি কখনোই দেখোনি যে ওটা সব সময় মাটিতে পড়ে। এটা বলাই স্বাভাবিক যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই পাথরটা মাটিতে পড়ে। কিন্তু এ-ধরনের কোনো সূত্র আমাদের অভিজ্ঞতায় নেই। আমরা স্রেফ দেখেছি যে জিনিস-পত্র মাটিতে পড়ে যায়।

ব্যাপারটা কি একই হলো না?

পুরোপুরি নয়। তুমি বলছ তুমি বিশ্বাস করো পাথরটা মাটিতে পড়বে তার কারণ তুমি বহুবার ঘটনাটা ঘটতে দেখেছ। ঠিক এটাই হিউমের বক্তব্য। একটা জিনিসের পর আরেকটা জিনিস দেখতে তুমি এতোটাই অভ্যস্ত যে একটা পাথর ছেড়ে দেবার পর প্রতিবারই তুমি একই ঘটনা ঘটবে বলে আশা করো। এভাবেই, আমরা যাকে প্রকৃতির অলঙ্নীয় সূত্র বলতে ভালোবাসি তার জন্ম হয়।

তিনি কি সত্যি সত্যিই ভাবতেন যে পাথরটা না পড়া সম্ভব?

সম্ভবত তিনি তোমার মতোই নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি যতবারই ওটা ছেড়ে দেবেন ততবারই পাথরটা মাটিতে পড়ে যাবে। কিন্তু তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে কেনঘটনাটা ঘটে সেটা তার অভিজ্ঞতায় নেই।

ছোট ছোট শিশু আর ফুলের কাছ থেকে আবার কিন্তু মেলা দূরে চলে এসেছি আমরা।

মোটেই না, বরং ঠিক তার উল্টো। হিউমের কথার সত্যতা যাচাই-এর জন্যে তুমি সচ্ছন্দে শিশুদের শরণ নিতে পারো। পাথরটা যদি এক বা দুঘন্টা শূন্যে ভেসে থাকে তাহলে কে বেশি অবাক হবে বলে মনে হয় তোমার, তুমি না একটা শিশু?

বোধকরি আমি।

কেন?

কারণ ব্যাপারটা যে কতটা অস্বাভাবিক তা বাচ্চাটার চাইতে আমি ঢের বেশি জানবো।

কিন্তু বাচ্চাটার কাছে ঘটনাটা অস্বাভাবিক বলে ঠেকবে না কেন?

কারণ প্রকৃতি কী রকম আচরণ করে সেটা এখনো বাচ্চাটা শিখে উঠতে পারেনি।

অথবা হয়ত কারণটা এই যে প্রকৃতি একটা অভ্যাসে পরিণত হয়নি।

আমি বুঝতে পারছি আপনি কী বলতে চাইছেন। হিউম চেয়েছিলেন মানুষ যেন তার সচেতনতা তীক্ষ্ণ রাখে।

বেশ, এবার তাহলে এই এক্সারসাইজটা করো: ধরা যাক, তুমি আর একটা ছোট্ট বাচ্চা একটা ম্যাজিক শো-তে গিয়েছ যেখানে জিনিস-পত্র শূন্যে ভাসিয়ে রাখার, খেলা দেখানো হয়। তো, সেখানে তোমাদের মধ্যে কে বেশি মজা পাবে?

সম্ভবত আমি।

কেন?

কারণ আমারই জানা থাকবে ব্যাপারগুলো কত অসম্ভব।

কাজেই … প্রকৃতির নিয়মগুলো কী সে-কথা জানার আগে সেগুলো লংঘিত হওয়ার ঘটনায় একটি শিশুর জন্যে মজার কিছুই থাকে না।

বোধকরি কথাটা সত্যি।

আমরা কিন্তু এখনো হিউমের অভিজ্ঞতার দর্শনের সবচেয়ে জটিল জায়গাতে আছি। তিনি হয়ত এসবের সঙ্গে এ-কথা যোগ করতেন যে বাচ্চাটি এখনো অভ্যাসের প্রত্যাশার দাস হয়ে যায়নি; কাজেই তোমাদের দুজনের মধ্যে বাচ্চাটিই বেশি ভোলা মনের। আমি তো ভাবি বাচ্চাটি একই সঙ্গে আরো বড় দার্শনিক কিনা। কোনোরকম পূর্বজাত ভাব নিয়ে আসেনি সে। আর এটাই হচ্ছে একজন দার্শনিকের সবচেয়ে অসাধারণ গুণ। জগত্তা যেমন সেভাবেই সেটাকে দেখে শিশুটি, তার অভিজ্ঞতায় যা কিছু ঘটে তার বেশি সে সে-সবের মধ্যে আরোপ করে না।

কোনো ব্যাপার সম্পর্কে ভালো করে না জেনেই যখনই সে-সম্পর্কে ভালো-মন্দ একটা ধারণা করে বসে থাকি তখনই আমার কেমন যেন খারাপ লাগে।

অভ্যাসের শক্তি নিয়ে আলোচনার সময় কার্য-কারণ সম্বন্ধের সূত্র-র ওপর জোর দিয়েছেন হিউম। এই সূত্র বলে যে, যা কিছু ঘটে তার প্রত্যেকটিরই কোনো না কোনো কারণ থাকতে হবে। হিউম তার উদাহরণ দেবার জন্যে দুটো বিলিয়ার্ড বলের সাহায্য নিয়েছেন। স্থির অবস্থায় থাকা একটি সাদা বিলিয়ার্ড বলকে যদি কালো একটি বিলিয়ার্ড বল গড়িয়ে দিয়ে ধাক্কা মারা যায় তাহলে সাদা বলটা কী করবে?

কালো বলটা সাদাটার গায়ে গিয়ে আঘাত করলে সাদা বলটা চলতে শুরু করবে।

আচ্ছা, কিন্তু কেন ওটা তা করবে?

কারণ কালো বলটা ওটাকে ধাক্কা দিয়েছে।

কাজেই আমরা সচরাচর বলি যে কালো বলটার আঘাতই সাদা বলটার চলতে শুরু করার কারণ। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, আমরা ঠিক ততোটাই বলতে পারি যতটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

এই ব্যাপারটা আমি অনেকবার দেখেছি। জোয়ানার বেসমেন্টে একটা পুল টেবিল আছে।

হিউম বলবেন, তুমি কেবল যে-জিনিসটি প্রত্যক্ষ করেছ তা হলো সাদা বলটা টেবিলটার ওপর দিয়ে গড়াতে শুরু করেছে। ওটার গড়াতে শুরু করার আসল কারণ তুমি প্রত্যক্ষ করোনি। তুমি প্রত্যক্ষ করেছো যে একটা ঘটনা আরেকটা ঘটনার পরে ঘটেছে, কিন্তু তুমি এটা প্রত্যক্ষ করোনি যে অন্য ঘটনাটা প্রথম ঘটনাটার কারণে ঘটেছে।

ব্যাপারটা কি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

না, বরং এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হিউম জোর দিয়ে বলছেন যে একটা ঘটনার পরে আরেকটা ঘটনা ঘটার প্রত্যাশাটা বস্তুগুলোর মধ্যে নিহিত নেই। আছে আমাদের মনে। আর আমরা দেখলাম, প্রত্যাশা অভ্যাসের সঙ্গে জড়িত। সেই শিশুটির প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে বলতে হয়, একটা বল আরেকটা বলকে আঘাত করার পর দুটোই যদি একদম স্থির থাকে তাহলে সে অবাক হয়ে চেয়ে থাকবে না। আমরা যখন প্রকৃতির নিয়ম বা কারণ আর ফলাফল-এর কথা বলি, তখন কোন ব্যাপারটি যুক্তিসঙ্গত তা বলার বদলে আমরা আসলে বলি কী আশা করি সে কথা। প্রকৃতির নিয়মগুলো যৌক্তিকও নয় অযৌক্তিকও নয়, সেগুলো কেবলই নিয়ম। কালো বিলিয়ার্ড বলটা আঘাত করলে সাদা বলটা চলতে শুরু করবে এই প্রত্যাশাটা অতএব সহজাত নয়। জগৎটা কেমন বা জগৎ-এর কোন জিনিসটা কী রকম আচরণ করে সে-সম্পর্কে একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে আমরা জন্মগ্রহণ করিনি। জগন্টা ঠিক সেটারই মতো আর এটাকে আমাদের চিনতে হবে।

আমার মনে হচ্ছে আমরা আবার অন্য দিকে সরে যাচ্ছি।

আমাদের প্রত্যাশা যদি আমাদেরকে হুট করে কোনো সিদ্ধন্তে নিয়ে আসে তাহলে নয়। হিউম অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম-এর অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করেননি, কিন্তু তিনি মনে করতেন খোদ সেই প্রাকৃতিক নিয়মগুলো প্রত্যক্ষ করার মতো অবস্থায় যেহেতু আমরা নেই তাই আমরা খুব সহজেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারি।

যেমন?

এই যেমন কালো ঘোড়ার একটা পাল দেখার অর্থ এই নয় যে সব ঘোড়াই কালো।

না, অবশ্যই না।

আবার আমি যেহেতু আমার জীবনে কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙের কাক দেখিনি তার অর্থ এই নয় যে সাদা কাক বলে কিছু নেই। দার্শনিক আর বিজ্ঞানী দুজনের জন্যেই সাদা কাক খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাটা বাতিল না করাটাই হয়ত ভালো হবে। তুমি এমনকী প্রায় এ-রকমও বলতে পারো যে সেই সাদা কাকটাকে খোঁজাই বিজ্ঞানের আসল কাজ।

হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।

কারণ আর ফলাফলের প্রশ্নে এমন অনেকেই থাকতে পারে যারা মনে করে বিদ্যুচ্চমকই বজ্রের কারণ কেননা বিদ্যুচ্চমকের পরেই বজ্রের গর্জন শোনা যায়। এই উদাহরণ আর বিলিয়ার্ড বলের উদাহরণের মধ্যে কিন্তু আসলে সে-রকম কোনো পার্থক্য নেই। এখন বলো, বিদ্যুচ্চমকই কিবজের কারণ?

ঠিক তা নয়, আসলে দুটো ব্যাপারই ঠিক একই সময় ঘটে।

বিদ্যুচ্চমক আর বজ্র দুটোরই কারণ বৈদ্যুতিক ডিসচার্জ। কাজেই দেখা যাচ্ছে প্রকৃত পক্ষে তৃতীয় একটা উপাদানই এ-দুটোর কারণ।

ঠিক।

আমাদের এই শতাব্দীর একজন অভিজ্ঞতাবাদী বার্ট্রান্ড রাসেল দিয়েছেন আরো উদ্ভট একটা উদাহরণ। একটা মুরগির বাচ্চা যদি প্রতিদিন দেখে যে চাষী বৌ মুরগির খোপের কাছে এলেই সে খাবার পায় তাহলে শেষ পর্যন্ত সেটা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে যে চাষী বউ-এর আসা আর গামলার মধ্যে ওটার খাবার রাখার মধ্যে কার্য-কারণঘটিত একটা সম্পর্ক রয়েছে।

তাহলে কি একদিন মুরগির বাচ্চাটা খাবার পায় না?

না, একদিন চাষী বউ আসে ঠিকই, কিন্তু তারপর ঘাড় মটকায় মুরগির … বাচ্চাটার।

ওয়াক, কী জঘন্য

একটা ঘটনার পরে আরেকটা ঘটনা ঘটলেই এটা ধরে নেবার কারণ নেই যে সেখানে কার্য-কারণঘটিত কোনো সম্পর্ক আছে। দর্শনের অন্যতম প্রধান উদ্দিষ্ট হচ্ছে হুট করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে দেয়া। সত্যি কথা বলতে কী, এই হুট করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারটা অনেক ধরনের কুসংস্কারের জন্ম দিতে পারে।

কী করে?

কালো একটা বিড়ালকে রাস্তা পার হতে দেখলে তুমি। সেদিনই পরে কোনো এক সময় পড়ে গিয়ে হাতটা ভেঙে ফেললে তুমি। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে এই ঘটনা দুটোর মধ্যে কার্য-কারণঘটিত কোনো সম্পর্ক আছে। বিজ্ঞানে এই বিষয়টা বিশেষ জরুরি যে হুট করে যেন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো না হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিশেষ একটা ওষুধ খেয়ে অনেক লোক সুস্থ হয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে সেই ওষুধ খাওয়ার কারণেই সবাই ভালো হয়ে গেছে। এই কারণে নির্দিষ্টসংখ্যক রোগীর বিশাল একটা দলকে দরকার যাদেরকে এই ধারণা দেয়া হবে যে তাদেরকেও একই ওষুধ দেয়া হয়েছে, কিন্তু আসলে যাদেরকে দেয়া হয়েছে স্রেফ ময়দা আর পানি। এই রোগীরাও যদি ভালো হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে নিশ্চয়ই তৃতীয় একটা ফ্যাক্টর রয়েছে –এই যেমন, এই বিশ্বাস যে ওষুধটা কাজ করে এবং সেটাই তাদের সারিয়ে তুলেছে।

আমার মনে হচ্ছে অভিজ্ঞতাবাদ কী জিনিস সেটা আমি বুঝতে শুরু করেছি।

নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবাদী চিন্তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন হিউম। বুদ্ধিবাদীরা সব সময়ই মনে করে এসেছেন যে ন্যায় আর অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষমতা মানুষের প্রজ্ঞার মধ্যেই আছে সহজাতভাবে। সক্রেটিস থেকে লক পর্যন্ত অনেক দার্শনিকের দর্শনের ভেতরেই এই তথাকথিত স্বাভাবিক ন্যায় (natural right)-এর দেখা পেয়েছি আমরা। কিন্তু হিউম বলছেন, আমরা যা বলি আর করি তা প্রজ্ঞা ঠিক করে না।

তাহলে কে করে?

আমাদের ভাবাবেগ (sentiment)। অসহায় কাউকে যদি তুমি সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নাও, সেটা তুমি করো তোমার অনুভূতির কারণে, প্রজ্ঞা বা যুক্তির কারণে নয়।

আর আমি যদি সাহায্য করার কথা না ভাবি?

সেটাও হবে তোমার অনুভূতির কারণে। অসহায় কাউকে সাহায্য না করাটা যৌক্তিকও নয় আবার অযৌক্তিকও নয়। তবে তা নিষ্ঠুর হতে পারে।

কিন্তু একটা সীমা তো থাকতে হবে কোথাও। সবাই জানেখুন করা খারাপ।

 হিউমের মত হচ্ছে, অন্য লোকজনের ভালো-মন্দের ব্যাপারে প্রত্যেকটি মানুষেরই একটা সহানুভূতিপূর্ণ মনে রয়েছে। অর্থাৎ আমরা সবাই সহানুভূতিশীল, কিন্তু এর সঙ্গে প্রজ্ঞার সম্পর্ক নেই।

ঠিক বুঝতে পারছি না একমত হবে কিনা।

কাউকে সরিয়ে দেয়াটা সব সময়ই যে খারাপ তা কিন্তু নয়, সোফি। কোনো কিছু অর্জন করার জন্যে এটা কিন্তু চমৎকার একটা আইডিয়া।

এ্যাই দাঁড়ান, দাঁড়ান। আমি প্রতিবাদ করছি!

তা, বেশ তো: একজন উটকো, ঝামেলাপূর্ণ লোককে খুন করাটা উচিত হবে না কেন সেটা ব্যাখ্যা করে বোঝাও তো আমাকে।

সেই লোকটাও তো বাঁচতে চায়। কাজেই তাকে আপনার মারা উচিত হবে না।

সেটা কি যুক্তি হিসেবে ঠিক হলো?

আমি জানি না।

তুমি যা করেছ তা হচ্ছে একটা বর্ণনামূলক বাক্য– সেই লোকটাও বাঁচতে চায়– থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌঁছেছ আমরা যাকে আদর্শমূলক বাক্য (normative sentence) বলি সেটাতে: কাজেই তাকে আপনার মারা উচিত হবে না। যুক্তির দিক থেকে এটা নিতান্তই অর্থহীন একটা কথা। কারণ তাহলে তুমি এ-ও বলতে পারো যে, অনেক লোকই কর ফাঁকি দেয়, কাজেই আমারও উচিত আমার কর ফাঁকি দেয়া। হিউম বলছেন, ইজ (is) বাক্য থেকে তুমি কখনোই অট (ought) বাক্যের সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারো না। তারপরেও কিন্তু এটা মাত্রাতিরিক্তভাবে দেখা যায়, বিশেষ করে খবরের কাগজের বিভিন্ন লেখায়, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীতে আর বক্তৃতায়। দুএকটা উদাহরণ চাও?

প্লীজ।

দিন দিন আরো বেশি মানুষ আকাশপথে ভ্রমণ করতে চাইছে। কাজেই আরো বিমানবন্দর নির্মাণ করা উচিত। তোমার কি ধারণা সিদ্ধান্তটা সঠিক?

মোটেই না। কোনো মানেই হয় না এ-কথার। পরিবেশের কথা ভুললে চলবে না আমাদের। আমার মনে হয়, তার বদলে আরো বেশি করে রেলরোড বানানো উচিত আমাদের।

অথবা ওরা বলে, নতুন নতুন অয়েলফিল্ড-এর বৃদ্ধি জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান শতকরা দশভাগ বাড়িয়ে দেবে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব নিত্য নতুন অয়েলফিল্ড তৈরি করা উচিত আমাদের।

অবশ্যই না। এবারো পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে আমাদের। আর তাছাড়া, নরওয়ের জীবনযাত্রার মান এমনিতেই যথেষ্ট উঁচু।

মাঝেমধ্যে বলা হয়, সিনেট-এ এই আইন পাশ করা হয়েছে। কাজেই দেশের সব নাগরিকেরই এই আইন মেনে চলা উচিত। কিন্তু এ-ধরনের গতানুগতিক প্রথা মেনে চলাটা মানুষের গভীরতম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চলে যায় প্রায়ই।

হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।

অর্থাৎ এ-কথা আমরা প্রতিষ্ঠিত করলাম যে আমরা কেমন আচরণ করব সে ব্যাপারে যুক্তিকে আমরা মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি না। দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করা আমাদের যুক্তিকে শক্তিশালী করার কোনো ব্যাপার নয়, বরং অন্যের মঙ্গলের জন্য আমাদের অনুভূতিকে আরো প্রগাঢ় করার বিষয়। হিউম বললেন, আমার আঙুলের চুলকানির চেয়ে গোটা দুনিয়ার ধ্বংস চাওয়াটা মোটেই অযৌক্তিক নয়।

এটা কিন্তু রীতিমত গায়ের লোম খাড়া করে দেবার মতো একটা কথা হলো।

ব্যাপারটা আরো লোম-খাড়া করা হবে যদি অন্য দিকে তাকাও। তুমি জানো যে নাৎসীরা লক্ষ লক্ষ ইহুদীকে খুন করেছিল। তা, তুমি কী বলবে? নাৎসীদের যুক্তিতে কোনো গণ্ডগোল ছিল, নাকি গদের ইমোশনাল লাইফে কোনো গোলমাল ছিল?

অবশ্যই তাদের আবেগ-অনুভূতিতে কোনো গণ্ডগোল ছিল।

তাদের অনেকেই কিন্তু অত্যন্ত পরিষ্কার মাথার লোক ছিল। সবচেয়ে নির্মম সিদ্ধান্তের পেছনে বরফ-শীতল হিসেব নিকেশ খুঁজে পাওয়াটা এমন কোনো বিরল ব্যাপার নয়। যুদ্ধের পর নাৎসীদের অনেকেরই বিচার হয়েছিল, কিন্তু অযৌক্তিক আচরণের জন্যে তাদের কাউকেই অভিযুক্ত করা হয়নি। তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল জঘন্য খুনী হিসেবে। এমনও দেখা যায়, যারা মানসিকভাবে সুস্থ নয় তাদেরকে তাদের অপরাধ থেকে খালাস দেয়া হয়। আমরা বলি তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য দায়ী নয়। নিষ্ঠুর হওয়ার জন্যে কখনো কাউকে তার অপরাধ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি।

দেয়া উচিতও নয় আমার ধারণা।

কিন্তু তাই বলে যত সব উদ্ভট উদ্ভট উদাহরণ নিয়েই থাকতে হবে এমন কোনো মানে নেই। বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়লে তাদের আমরা সাহায্য করবো কিনা সেটা ঠিক করে দেয় আমাদের অনুভূতি-ই। নিষ্ঠুর হলে আর পুরো ব্যাপারটাই শীতল প্রজ্ঞা-র ওপর ছেড়ে দিলে আমরা হয়ত ভাবতে পারি যে ব্যাপারটা ঘটেছে আসলে যাতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে কম্পমান এই পৃথিবীতে লাখ লাখ লোক মারা যায় সেজন্যে।

আপনি যে এভাবে চিন্তা করতে পারছেন এ-কথা ভাবতেই পাগল মনে হচ্ছে আমার নিজেকে।

খেয়াল করে দেখো, এখানেও তোমার প্রজ্ঞা কিন্তু পাগল হচ্ছে না। ঠিক আছে, বুঝতে পেরেছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *